সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত চারজন মিলে গল্প করলো।এর পর রায়হান ও নিলয় চলে গেলো।তাওহিদ আর জিসানও নিজেদের রুমে চলে গেলো।জিসান তিশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষন, এর পর তিশাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।কেনো জানি জিসানের ঘুম আসছে না হয়তো তিশাকে হারাবার ভয়টা একটু বেশিই পেয়েছে আজ।তাইতো নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে কিছু নোনা পানি তিশার কপালে পরছে।তিশা যদি জাগনা থাকতো তাহলে হয়তো দেখতে পারতো জিসানের কস্টটা আজ।
কেনো তোকে হারানোর ভয়টা আজকাল আমায় তাড়া দেয় বেশি।কোনো মনে ভয় তকে ছেড়ে দিলে হয়তো আর পাবো না।বড্ড ভালোবাসি তোকে, আমি পারবো না তোকে ছাড়া থাকতে,আমি পারবো না।বলেই তিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলে মনে হয় কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে।মাথাটা উঠিয়ে তাকে দেখতে লাগলাম, কেনো জানি তাকে নিজের থেকে আজ ভালোবাসতে মন চাইছে,তাই লজ্জা শরম ভুলে তার কপালে গালে কিস করে,তার বুকে ও একটা কিস করে নিজের থেকে জরিয়ে ধরে শুয়ে রইলাম।~তিশা।
কিছুক্ষন পর জিসান, ঘুম কেমন হলো ম্যাডামের।আমাকে জরিয়ে ধরেই প্রশ্ন করলেন।
হুমমমম.... ভালো।কখন উঠলেন।~তিশা।
যখন তুই চোরের মতো আমাকে কিস করছিলি।আর ঘুমের মধ্যে আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছিলি।~জিসান।
আমি মাথাটা উঠিয়ে আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে আপনে তো ঘুমিয়ে ছিলেন জানলেন কি করে।
কারন আমার ঘরে একটা চোর আছে,আর সে চোর আমি ঘুমিয়ে থাকলেই আসে,আর এই সুযোগে ওই চোরটা আমাকে আদর করে,জাগনা থাকলে সাহস পায় না,কেমন ভিতু বলতো।
হঠাৎ তিশা জিসানের উপর উঠে পরে,আর জিসানের কলার ধরে একদম কাছে এসে বলে,ওই কি বললেন, আমি চোর, ভিতু।
আমি কি তোকে বলছি,আমাকে যে কিস করছে আমি তাকে বলছি।
ওই হিটলার এই ঘরে আমি ছাড়া আর কোন চুন্নি আছে,আর কার এতো বড় সাহস আপনাকে কিস করবে।একদম কাছে গিয়ে কথাগুলো বললাম,এতে আমার গরম নিশ্বাস জিসানের মুখের উপর পরছে।আর জিসান নেশাভরে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে,একটা বাকা হাসি দিলো।কি হলো,হাসছেন কেনো।
সর আমার উপর থেকে,আমি বিশ্বাস করিনা....তুইতো একটা আনরোমান্টিক মহিলা।
কিকিকিকিকি এতো বড় ইনসাল্ট,আমি নাকি মহিলা।আমি জিসানের মুখটা ধরে ওর ঠোঁটটি নিজের ঠোঁট দিয়ে আবদ্ধ করে নিলাম। জিসান হয়তো ভাবতেও পারেনি আমি এমন কিছু করবো,তাই প্রথমে শোকড হলো ব্যাচারা।
জিসানের এক হাত আমার চুলগুলো আকড়ে ধরে আছে,আরেক হাতদিয়ে আমার পিঠে স্লাইড করছে।এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর আমি উঠতে চাইলে আমার কোমড় কে আকড়ে ধরে ফাজিল টা।আমাকে ছাড়ার নামই নাই,তাই আমি একটা কামড় দিয়ে দি।
আআআআআ তিশা কি করলি,ব্যাচারার ঠোঁটটা কেটে গেলো।আমাকেও ছেড়ে দিলো,আমিতো হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি।
কি হলো মি:জিসান বউ নাকি রোমান্টিক না।বেশি রোমান্টিক হলে এমন দশাই হবে।আমি হাসছি আর জিসান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন পর আমি দেখি উনি এখনো তাকিয়ে আছে।কি দেখেন এভাবে।
তোকে.....!!তোর হাসিটা অনেক সুন্দর,নিজের যতো কস্ট আছে সব জেনো শেষ হয়ে যায় এই হাসির সামনে।
হয়েছে আর পাম্প মারতে হবে না উঠুন অফিস এ যাবেন না।আমিও উঠে দাঁড়ালাম।আর তখনি জিসান আমার হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে তার দুহাত দিয়ে আমাকে আবদ্ধ করে ফেললো।আজ অফিসে যাবো না।
কেনো....।~তিশা।
আজ তোকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো, সোপিং করবো।তার পর কাল আমরা ঝুমুর আপুর গায়ে হলুদে যাবো। ওকে,,,তাই ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে রেডি হো তারাতারি।
ওকে....বলেই ওয়াসরুম এর দিকে দৌড় দিলাম আমি।~তিশা।
আরে দাঁড়া, দেখ চলো গেলো।যাক ভালোই হলো কালকের কোনও কথা মনে না পরলেই ভালো।তাই আজকের দিনটা সারাক্ষন তোর সাথেই কাটাবো।~জিসান।
তিশা ও জিসান নাস্তা করে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।সোপিং শেষ করে দুজনে বাহিরেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো।এর পর জিসান তিশাকে শহর থেকে একটু দূরে একটা ঝিলের সামনে নিয়ে গেলো,চারদিকে সবুজ, কিছু দূরে কাশফুলও দেখা যাচ্ছে অনেকেই এই জায়গাটা চিনেনা বলে লোকজনও কম আসে,কিন্তু জায়গাটা সুন্দর, তিশার খুব পছন্দ হয়েছে।
ওরা একটা গাছের ছায়ায় গিয়ে বসলো।চারদিকে সুন্দর বাতাস বইছে,আর বাতাসে তিশার চুলগুলো উড়ছে।তিশা সামনের ঝিলের দিকে তাকিয়ে আছে আর জিসান তার মায়াবী তিশার দিকে।
জায়গাটা অনেক সুন্দর, আপনে এখানে আগে এসেছেন।~তিশা।
জিসান সামনের দিকে তাকিয়ে,হুমমমম,আমি রায়হান আর কিছু ফ্রেন্ডস যখনি সময় পেতাম এখানে এসে আড্ডা দিতাম।পছন্দ জায়গা গুলোর মধ্যে এটি।
এভাবে অনেকক্ষন থাকার পর জিসান ও তিশা সন্ধ্যার দিকে রওনা দেয়।রাতের ডিনার ও বাহিরে করে বাসায় চলে আসে।
পরের দিন.....
তিশা সব গুছিয়েনে মনে করে।আমরা কিছুক্ষন পরই রওনা দেবো,ঝুমুর আপু ফোন দিয়ে পেরেশান করে ফেলছে।
আমার হয়ে গেছে,শুধু শাড়ীটা চেন্জ্ঞ করে আসি।আমি শাড়ীটা নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতে নিলেই জিসান আমার হাতটা ধরেই কাছে টেনে আনে,উনার বুকে আমার পিঠ ঠেকিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে,আমার কাধে নিজের থুতনি টা রেখে,কোথায় যাস।
শাড়ী চেন্জ্ঞ করতে,ছাড়ুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।~তিশা
তাহলে ওয়াসরুম এ কেনো যাচ্ছিস।~জিসান
ওয়াসরুম এ না গেলে কোথায় করবো।~তিশা।
কেনো এখানে।ভ্রু কুচকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।~জিসান।
ঠিক আছে তাহলে আপনে বাহিরে জান।~তিশা।
কেনো.....!!!~জিসান
কেনো আবার আপনে না বললেন,তাহলে রুম থেকে বের হন আমি রুমেই শাড়ী চেন্জ করি।
আমি পারবো না বাহিরে জেতে,এখানেই আমার সামনে কর।~জিসান।
কিকিকি,আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।~তিশা।
কি আবার কি,আমি মনে হয় পর কেউ যেভাবে রিয়েক্ট করছিস।আর কি এমন আছে যা আমি দেখিনি এখনো। জিসান তিশার দিকে একটু আড়চোখে তাকিয়ে,তুই কি এমন কিছু লুকিয়ে রেখেছিস যা আমি দেখিনি।কি রে....।
উফফফফ এই লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।কি সব আবোলতাবোল বলে।আমি কি লুকাবো আর।লুকানোর জিনিসতো দেখেই ফেলেছেন। ছারুন,,,,, নতুন করে দেখানোর কিছু নাই আমার কাছে।
তাইইই,তাহলে এতো লজ্জা কিসের আমার সামনে চেন্জ করতে, শাড়ী খোল বলেই জিসান তিশার শাড়ীটা একটান দিয়ে খুলে ফেললো।অবশেষে তিশাকে নিজের সামনেই চেন্জ্ঞ করালো জিসান।জিসানের জিদের কাছে তিশার লাজ শরম হার মানলো।
তিশা চুল আছড়াচ্ছে আর আয়না দিয়ে জিসানকে দেখছে।জিসান খাটে বসে আধোশোয়া হয়ে মোবাইল টিপছিলো।তিশা মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে জিসানকে।আর রাগে নিজের চুল আছড়াচ্ছে কম ছিঁড়ছে বেশি।
গালাগালি কম কর আর ,আমার রাগ চুলের উপর কেনো দেখাচ্ছিস।আর একটা চুল যদি ছিড়ে মনে রাখিস কি করবো কল্পনাও করতে পারবি না।জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে।
বদমাইশ ব্যাটা, আমার চুল আমি ছিড়লে তোর কি।এমন হাজারো কথা তিশা শুধু মনে মনেই করতে পারে।বলতে আর পারে না।যা আর আছড়াবো না।তিশা চুলগুলো একটা কাটা দিয়ে বেধে নিলো।
জিসান আর চোখে দিয়ে সব দেখছে,আর মনে মনে হাসছে।তিশাকে মাঝে মাঝে রাগাতে ভালোই লাগে।তাইতো আজ এমন করলাম।
এর পর দুজনেই রওনা দিলো।বিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে।সারা রাস্তায় জিসান টুকটাক কথা বললেও তিশা তেমন কিছু বলেনি একটু অভিমান করে।
পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে গেলো।তিশা এই প্রথম জিসানের কোন আত্মীয়র বিয়েতে এসেছে।আর অনেকেই তাকে দেখেনি,তাই বিয়ে বাড়ীতে আসতেনা আসতেই তিশা ব্যস্ত হয়ে পরলো,তিশার শ্বাসুড়ী এর সাথে ওর সাথে কতো মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,ব্যাচারী এসে বিশ্রাম ও নিতে পারছে না।হঠাৎ ঝুমুড় এসে সবার সামনে থেকে তিশাকে হাত ধরে নিয়ে জেতে লাগলো,,,,
আরেরেরে আপু কি করছেন।এভাবে গরুর মতো টানছেন কেনো।উনারা কি ভাববে বলুনতো।
ঝুমুড় একটা রুমের সামনে এসে বলে,দেখো তিশা কে কি ভাবছে, আমার যায় আসে না।কিন্তু তোমার কারনে আমার ভাই জিসান যদি চলে যায় এখান থেকে তাহলে আমি তোমাকে এই রাতের বেলায় পুকুরে ফেলে দেবো।
কেনো আপু আমি কি করলাম।
কি করলে মানে, এসেই তুমি ব্যস্ত হয়ে পরলে,আমার ভাই যে তোমার কারনে না খেয়ে আছে তা খেয়াল করছো।
কেনো না খেয়ে আছে, আমি কি খেতে মানা করেছি তাকে,নাকি এখন তাকে আমার খাইয়ে দিতে হবে।
হে তাইই দেও,যাও। ও তোমার জন্য এখনো না খেয়ে আছে,বলে তুমি নাকি সারাদিন কিছু খাওনি তাই তোমার সাথেই খাবে।
আমি রুমে গেলে আপু বাহির থেকে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।জাতে কেউ এই রুমে না আসে।আমি গিয়ে দেখি সাহেব শোফায় বসে মুখ ফুলিয়ে মোবাইল টিপসে।
আমি তার সামনে বসে জিঙ্গেস করলাম সমস্যা কি।
উনি আমার দিকে একবার তাকালো আবার সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললো।
কি হলো কথা বলছেন না কেনো,আর এখনো খাবার খাননি কেনো।সোজা হয়ে বসুন আমি খাবার বেরে দিচ্ছি।
আমি খাবো না, তুই যা তোর কাজে।আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।মুখটা ফুলিয়ে।~জিসান।
তাইইই,আমি ভাববো না তো কে ভাববে বলুন।নাকি এসেই কোন শাঁকচুন্নি কে পেয়ে গেছেন।
জিসান আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে,মনে হয় চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবে।
আমি ভাতটা মেখে তার মুখের দিকে ধরলাম,নিন খান।কি হলো।কিন্তু সে মুখ খুললো না।
আমি নিরাশ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,আমি কি করবো বলুন তো,মা আমাকে বাড়ীর মুরুব্বিদের মাঝখানে বসিয়ে দিয়েছে।আমি তাকে কি করে বলবো তার পাগল ছেলে যে আমাকে সামনে না পেলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে।বলুনতো কি ভাববে তারা।
আমারও অনেক ক্ষুধা পেয়েছে কেউ যদি না খায় তাহলে আমি আর খাবোনা।কেউ যদি মনে করে তার একাই জিদ আছে, তাহলে ভুল আমিও তার বউ আমারও কম জিদ না।এই বলে উঠে চলে জেতে নিলে,আমার হাতটা ধরে ফেলে।আমার দিকে ঘুড়ে হ্যা করলে আমি খাইয়ে দি।এবং নিজেও খেতে থাকি।
ঝুমুর আপু এসে,আআআআ কি রোমান্টিক দৃশ্য। তোদের দেখে তো আমারি হিংসা হচ্ছে।
তাহলে আমাদের দেখো কেনো,নিজের হবু বরকে গিয়ে দেখো।
.
.
.
চলবে.........................................................