সোহেল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট ঠিক করছে।কানের দুই পাশে কাচা পাঁকা চুল দেখা যাচ্ছে,মধ্যবয়সের একটা ছাপ।এই বয়সে প্রেগন্যান্ট ওয়াইফকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি খুব একটা কাম্য না।বিষয়টা আরো জটিল হয়ে গেছে সদ্য তরুণি হওয়া মেয়ে থাকার কারণে।শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে নানা চিন্তায় ডুবে থাকা সোহেলের ভাবনায় ছেদ পরলো মুনার কর্কশ ডাকে।
-কথা আছে আমার।
-বলো,শুনছি।
-ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আমাকে বলো,এই বাচ্চা তুমি নিবে নাকি নিবে না।
অধিকার আর আধিপত্য দুটোই প্রকাশ পাচ্ছে মুনার কথায়,যেটা সোহেলের পছন্দ হচ্ছে না।এ দুটো ব্যাপার ই শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষের গলায় মানায়,শুধু মানায় না,সুমধুর ও লাগে।নিজের বিরক্তি যথাসম্ভব না প্রকাশ করে সোহেল ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলো
-রাখার হলে রাখবো
-মানে?
-মানে এখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছো,এমনিই তো কিছু সমস্যা ছিলো,যদি বলে না রাখতে,সেক্ষেত্রে কীই বা করার থাকবে।
-সোজাসুজি বলে দাও,তুমি এই বাচ্চা চাচ্ছো না।
-অহেতুক তর্ক আমার পছন্দ না।এই সময়ে তোমার হাইপার হওয়াও উচিৎ না।
-যেখানে আমার বাচ্চার বেঁচে থাকাই মুশকিল,সেখানে হাইপার না হয়ে উপায় আছে?
-আবার কী হলো।
-ভিনা আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে...
-একদম বাজে কথা বলবা না মুনা।ধৈর্যের সীমা থাকে একটা।তোমার প্রথম প্রেগন্যান্সি হলেও আমি এর আগেও নিজের ওয়াইফের প্রেগন্যান্সির সময় ছিলাম,তাও ও মাত্র পঁচিশ বছরের ছিলো,এত ড্রামা তো করেনি,তোমার প্রবলেম টা কোথায়?
-আমার বাচ্চার জন্য কনসার্নকে ড্রামা বললে সোহেল?
-বাচ্চার জন্য সবারই চিন্তা থাকে।তোমার বাচ্চা জন্ম নেয়নি,তাই এত মায়া,আর ভিনা?ভিনা আমার প্রথম সন্তান,ওকে নিয়ে এসব শুনলে আমার কেমন লাগে?সবসময় নিজের চিন্তা কেন করো?
-বলতে বাধ্য হচ্ছি!তোমার মেয়ের কান্ড কারখানার জন্য।
-কী করেছে আবার ও?
-সিড়িতে পানি ফেলে রেখেছিলো,শুধু তাই না,তোমার আম্মা বললো ডাক্তারকে ফোন লাগিয়ে দিতে,সে বলে পারবে না।সারাদিন মোমেনার সাথে কীসব নিয়ে কথা বলে। একদিন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম,মোমেনা কে বলছে,আর কয়দিন,এরপর কোনো ঝামেলা থাকবে না।এসবের মানে কী বলো।
-আমি তো নিয়ে যাচ্ছিই।ডাক্তার সোমার কাছে সিরিয়াল পাওয়া যায় না দেখে দেরি করে যাচ্ছো,এতদিন ডাক্তার না দেখায়ে বাসায় বসে ছিলে,কোনো সমস্যা হলে ভিনার দোষ দিও না।
-তুমি এত অবুঝ কেন?ভিনা কি ছোট?ইন্টার দিবে এবার,এতটাও ইনোসেন্ট ভেবো না ওকে।
-রেডি হও,দেরি হচ্ছে।পরে না দেখাতে পারলে ঝামেলা হবে।
•
ডাক্তার সোমা ঢাকার অন্যতম নামকরা গাইনিকোলজিস্ট।এর প্রমাণ পাওয়া গেলো তার চেম্বারে গিয়েই।মানুষ গিজগিজ করছে।বেশিরভাগেরই সাত আট মাস চলছে।মুনার সিরিয়াল আটচল্লিশ।রাত একটা পর্যন্তও রোগী দেখেন সোমা।এখন বাজে রাত সাড়ে নয়টা,প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে বসে আছে।রাত দশটার দিকে ডাক পড়লো মুনাদের।খুব সিম্পল সুতির শাড়ি আর চশমা পড়া একজন ডাক্তার।কাধ পর্যন্ত চুল,এক হাতে ঘড়ি আরেক হাতে ব্রেসলেট পড়া।খুবই ধীর স্থির।প্রথমে বেসিক কিছু কোয়েশ্চেন জিজ্ঞেস করলো।মেডিকেল হিস্ট্রি,লাস্ট পিরিয়ড কবে,হস্পিটালে প্রেগন্যান্সি টেস্ট হয়েছে কিনা এসব।এরপর কথা না বাড়িয়ে হস্পিটাল থেকে দ্বিতীয় বার প্রেগন্যান্সি টেস্ট আর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে দিলো। বলে দিলো নেক্সট ভিজিটে রিপোর্ট নিয়ে আসতে,এরপর ফার্দার ট্রিটমেন্ট হবে। বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় সেদিন আর টেস্ট করানো গেলো না।পরেরদিন বিকালে ড্রাইভারকে আসতে বলে দিলো সোহেল,টেস্টে করানোয় আর দেরি করবে না।
•
ভিনা প্রতিদিন রাতে যাবিরের সাথে কথা বলে।দিন দিন কথা বলার সময় বাড়ছে,ঘুম কমিয়ে সেটা আবার এ্যডজাস্ট ও করে ফেলছে।দিনের বেশিরভাগ সময়ই ঘরে কাটায় ভিনা।শুধু মোমেনা খালা আসলে বের হয়ে তার সাথে গল্প করে।মোমেনাকে বের করা নিয়ে মাঝখানে ইস্যু হয়েছে অনেক।নানা তর্ক বিতর্কের পরে রাখা হয়েছে তাকে,শর্ত একটাই,মুনার কোনো কাজ সে করতে পারবে না।নতুন একটা কম বয়সি মেয়ে রাখা হয়েছে তার কাজের জন্য।ভিনা ক্যালেন্ডারে দাগ কাটে আর দিন গুনে।কিন্তু জানে না যে তার বিরুদ্ধে কী পৈচাশিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে নিজ বাড়িতে।
.
.
.
চলবে................................................