**আজ সীমার বিয়ে,চারদিকে অনেক মানুষের আগমন। অতিথি আপ্যায়ন এ সবাই ব্যস্ত। জিসান ও রায়হানও খুব ব্যস্ত।কিছুক্ষন পর বর ও আসবে।তাই এই সময় সবাই যে যার কাজ নিয়ে মগ্ন,এদিক দিয়ে সীমা অনেক চেস্টা করেও তিশাকে রেডি করতে পারলো না,সে ঘরের বাহিরে কিছুতেই যাবে না। ঘর ভর্তি মানুষ বলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে আছে সে কখন থেকে।আর বাড়ীর চারপাশের লাইটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
**কতো আনন্দ করবে বোনের বিয়েতে,কতো কিছু করবে,সীমার হবু হাসবেন্ড কে কিভাবে ঝালাবে সবই ভাবা ছিলো,কিন্তুু এখন সব শেষ....!একটা ঝড় এসে মনে হয় তিশার সব স্বপ্নকে লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে।তিশা কিছুতেই লোকজনের সামনে যেতে চায় না,মনে হয় সবাই ওর দিকে আর চোখে দেখছে,আর হাসছে।এসব মনে মনে ভেবেই চলছে**
**সীমা বার বার রায়হানকে ফোন দিচ্ছে কিন্তুু রায়হান মানুষের ভিড়ে ফোনের শব্দ শুনতে পেলো না।তাই বাধ্য হয়ে জিসানকে ফোন দেয়।
**হে মা আমরা কালই রওনা দেবো। তুমি চিন্তা করো না।এসে তোমাকে ফোন দেবো।ওকে মা এখন রাখি।পরে কথা বললো।আল্লাহ হাফেজ,বলে ফোনটা কাটার সাথে সাথে ই সীমার ফোনটা এলো।
**হ্যালো সীমা বলো....(জিসান)
**হ্যালো ভাইয়া আপনে কি ব্যস্ত।
**না বলো কিছু লাগবে।(জিসান)
**আসলে ভাইয়া তিশাকে কিছুতেই রেডি করাতে পারছি না,ও নাকি বেরই হবে না,মন খারাপ করে ছাদে বসে আছে।রায়হান ভাইকে ফোন দিলাম সে মনে হয় ব্যস্ত তাই ফোন ধরছে না,আপনে একটু দেখুন না ওকে রাজি করাতে পারেন কিনা।।।প্লিস ভাইয়া।
**তুমি চিন্তা করো না, আমি দেখছি।
**জিসান ছাদে গিয়ে দেখে তিশা ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে আছে।এখনো বিয়ের শাড়িটা পড়ে আছে।দেখতে অপরূপ লাগছে তিশাকে।কিন্তু চোখ মুখ ফুলে আছে,হয়তো কাদার কারনে।
**তিশা কি করছোস এখানে।এখনো রেডি হোসনি কেন।(জিসান তিশার পাশে গিয়ে কথাটা বললো)
**তিশা এখনো চুপ।
**কি রে কথা বলবি না।আমি কি খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছি। আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না।দেখ আমি জেনে এটা করেনি।অনেক কস্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে।আই এম সরি তিশা। রাগ করিস না আমার উপর,দেখ....এ কথা বলে জিসান তিশাকে নিজের দিকে ঘুরালে। তিশা জিসান কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে।আর জিসানের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কাদতে থাকে।
জিসানও হতোভম্ভ হয়ে যায়।এই প্রথম তিশা নিজ ইচ্ছায় জিসানকে জড়িয়ে ধরেছে।জিসানের বুঝতে বাকি নেই,তিশা খুব ভেঙ্গে পড়েছে,আজকের এই ঘটনার কারনে।যতো তারাতারি সম্ভব তিশাকে এই কস্ট থেকে মুক্তি দিতে হবে।
**আমি নিচে যাবো না,ওই লোক গুলো আমাকে নিয়ে আাবার খারাপ খারাপ কথা বলবে।আমাকে নোংরা চোখে দেখবে।আমি আর নিতে পারবো না।আমার কি দোষ ছিলো।আমি কিছু করিনি।তাহলে কেনো ওরা আমাকে খারাপ বলছে।আমি সত্যি বলছি আমি কিভাবে ওখানে গেলাম আমার কিছুই মনে নেই।ওরা আমার সাথে খারাপ কিছু করেছে কিনা তাও জানি না।এ কথা গুলো বলছে আর জিসানের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরছে।
**জিসান বার বার তিশাকে সামলানোর চেস্টা করছে।কিন্তু তিশার মনের কস্টটা একটু বেশিই ছিলো।চিৎকার করে কাঁদতে চাইছিলো কিন্তুু সারা দিন ঘরবর্তি মানুষ থাকায় তিশা তার মনের কস্টে গুলো প্রকাশ করতে পারে নি।তাই এখন জিসানকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি,চোখের পানির বাধ জেনো ভেঙ্গে গেছে।
**জিসান ও তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে।জিসানের চোখ দিয়ে দুফোটা নোনাজল তিশার কপালে এসে পড়ে।তিশা বুঝতে পারে জিসানও কাঁদছে। তাই নিজেকে সামলিয়ে জিসানকে ছেড়ে দেয়।কিন্তুু জিসান তিশাকে ছাড়ে না।ওকে বুকের মধ্যে শক্তকরে এখনো জড়িয়ে আছে।জিসান ছাড়ছে না বলে,আমি টিক আছি এখন প্লিস ছাড়ুন আমাকে।তিশার কথায় জিসানের ধ্যান ভাঙ্গে।
**কিছুক্ষনের জন্য সীমা আর মামা-মামীর জন্য নিজের কস্ট টাকে একটু ভুলে যা।কথা দিলাম যাদের কারনে তোকে কস্ট পেতে হলো, তারা সবাই কঠোর শাস্তি পাবে।।শুধু কিছু ক্ষনের জন্য হলেও রেডি হয়ে নিচে আস।কেউ তোকে কিছু বলবে না,আর যদি বলেও তাহলে তাদের সব প্রশ্নের উত্তরও আমি দেবো।আমি থাকতে তোর গায়ে কেউ একটা আঙ্গুল ও তুলতে পারবে না।আমার উপর বিশ্বাস আছে।
**তিশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা জবাব দিলো।
**যা সীমা বসে আছে তোর জন্য,তোকে ছাড়া ও বের হবে না।আমি ও আসছি একটু পর।
**তিশা নিচে নেমে সীমার রুমে চলে গেলো
**আর জিসান একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়ায় নিজের কস্টটা উড়িয়ে দিচ্ছে আজকের রাতের জন্য।কারন তিশার চোখের পানি জিসানকে কুড়িয়ে খাচ্ছে।তাদের সবাইকে জিসান শাস্তি দিবে কিন্তু আজ না কাল।যাদের কারনে তিশার আজ এ অবস্থা, কাউকে মাপ করবে না।
**সিগারেট শেষ করে জিসান নিচে গেলো তিশার জন্য,তিশা আজ লেহেঙ্গা পড়েছে,হালকা সাজেও খুব সুন্দর লাগছে।তিশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে তিশার হাতটা ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো।এতোক্ষনে বরপক্ষও এসে পরেছে।তিশা ও জিসানকে এক সাথে দেখে সবাই তাকিয়ে আছে,কারন তাদের এক সাথে অনেক সুন্দর লাগছে।তিশার পাশে জিসানকে দেখে কেউ কোন কথাই বলেনি।আর সারা অনুষ্ঠানে জিসান তিশাকে এক সেকেন্ড এর জন্যও ছাড়েনি।সারাক্ষন ওর সাথেই ছিলো।এক সময় সীমার বিদায়ের সময় এসে পরলো।সবাইকে ধরে সীমা কানছে।তিশার জন্য সীমার সবথেকে বেশি কস্ট পাচ্ছে।কারন ওর বিয়েতে না আসলে হয়তো এমন কোন কিছুই হতো না।
সীমাকে বিদায় দিয়ে সবাই ঘরে এসে বসলো।তিশার
মামা মামী এখনো কাঁদছে, তিশা সবাইকে সান্তনা দিয়ে রুমে পাটিয়ে দিলো।
** তিশা,জিসান ও রায়হান ড্রয়িংরুম এ বসে আছে।তিশা সব গুছিয়ে রাখিস আজিই,কাল সকাল হলেই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।এই গ্রামে আর একদিনও থাকতে চাই না।রায়হান তিশাকে বলছে।এখন গিয়ে ঘুৃমা,কাল আবার অনেক জার্নি করতে হবে।
**ভাইয়ের কথা শুনে তিশাও রুমে চলে গেলো।
**জিসান বসে বসে কি জেনো ভাবছে।রায়হানের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো।
**কি রে ঘুৃমাবি না,চল।কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।
***হুমমমমম।চল।(জিসান)
আজ সকাল.......
**রায়হান ঘুম থেকে উঠে দেখে জিসান নাই।তাই ফ্রেস হয়ে বাড়ীর উঠানে বসে জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে।ফোনটাও সাথে নেয়নি।
হঠাৎ বাড়ীর মেন গেট এ নজর পরলে জিসানকে দেখতে পায়।জিসান বাড়ীর দিকেই আসছে দেখে, রায়হান জিসানের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
**আমাকে নিলি না কেন?
**কস্ট যেহেতু আমাকে দিয়েছে তাই শাস্তি আমি নিজেই দিয়েছি।
**তোকে একা দেয়নি আমার বোনকেও ওরা অনেক কস্ট দিছে,অপমান করছে তাই আমারো অধিকার আছে ওদের শাহেস্তা করানোর।
**তুই ভুলে গেছিস রায়হান তোর বোন এখন আমার বউ,আর আমার বউয়ের অপমানের বদলা আমি নিজেই নিতে পারি, আর কাউকে দরকার পরেনি বলে, তোকে নি নাই।
**তিশা ব্রাশ করতে করতে বাড়ীর বাহিরে এসে দেখে রায়হান ও জিসান কথা বলছে।কি বলছে শুনার জন্য একটু কাছে আসলে হঠাৎ জিসানের শার্টের দিকে চোখ পরে তিশার।রক্ত.....!!!এতো রক্ত কেনো শার্ট এ।
**রায়হান ও জিসান দুজনেই বিচলিত হয়ে পড়ে তিশাকে দেখে।
মুরগীর রক্ত এগুলো।মামা মুরগী কাটতে দিছিলো,জিসান মুরগী ধরতেই পারেনা জানস,ছেড়ে দিছে কাটতে গিয়ে।তাই মুরগীর রক্ত ওর শার্টে এ পরেছে।
**তিশা ভ্রুটা কুচকিয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর বিশ্বাস হচ্ছে না রায়হান এর কথা।
**জিসান তিশার সামনে গিয়ে বললো,ব্রাশটা টিক মতো কর,তা না হলে মুখের গন্ধে বাসের সবাই পলাবে।কথাটা বলেই জিসান রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।
**ভাইয়ায়য়য়য়শ দেখছোস কি বলে।
**দেখ আমাকে তোদের ঝগড়ার মাঝে ডাকবি না।(রায়হান)
**জিসান ফ্রেস হয়ে, রক্ত মাখা শার্টটা ব্যাগে ভরে নেয় আর নতুন একটা শার্ট পরে নেয়।পেছনে ঘুরে দেখে তিশা দাড়িয়ে আছে,চোখে ওর অনেক প্রশ্ন।
কি,,,, রে। কিছু বলবি।
**এগুলো মুরগীর রক্ত না,মামা কে আমি জিঙ্গেস করেছি।সত্যিই করে বলুন এগুলো কার রক্ত।
**জিসান প্যান্টের পকেটে হাত রেখে তিশার দিকে আঘাতে থাকে।তিশাও ভয়ে পেছনে ফিরতে ফিরতে দেয়ালে গিয়ে আটকে যায়।
***জিসান দেয়ালের দুদিকে হাত রেখে তিশাকে আটকে দেয়, জাতে তিশা পালাতে না পারে।
কি জানতে চাস,রক্তগুলো কার।বলেছিলাম না, তোকে কেউ টাচ করলে তার হাত দুটা ভেঙে দিবো।আর ওই কুকুর গুলোর কতো বড় সাহস তোর দিকে নযর দিছে,তোকে বেহুঁশ করে ওখানে নিয়ে গেছে।তাই হাত ও পা দুটাই ভেঙ্গে দিছি।আর হা ওরা তোর সাথে উলটা পালটা কিছুই করেনি তাই তাদের জানে মারেনি।কিন্তুু তোকে কস্ট দেয়ার শাস্তি তো ওদের পেতে হবে তাই না।
**তাই বলো আপনে এভাবে শাস্তি দিবেন।(তিশা)
**হ্যা,তোর দিকে কেউ নজর দিলে তাকে এভাবেই শাস্তি পেতে হবে।তাই তুই ও এখন উল্টা পাল্টা চিন্তা করা বন্ধ করে দে।স্বপ্নেও অন্য কারো স্বপ্ন দেখিস না,তাহলে তোকেও জ্বালিয়ে দেবো,আমার ভালোবাসার আগুনে।মনে রাখিস তুই এখন শুধুই আমার।
তিশার মুখে ভয়ের ছাপ দেখে জিসান তিশার কপালে একটা ভালবাসার পরশ দিয়ে দিলো।
যা তারাতারি রেডি হয়ে নে।কিছুক্ষন পর আমরা রওনা দেবো।তিশাও এক দৌড়ে ওর রুমে চলে গেলো।।
.
.
.
চলবে.................................................