ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ২৮ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


♦এভাবে জিসান আর তিশার বিবাহ জীবন ভালোই কাটছিলো।তিশা ও অনেকটা বুজতে পারছে জিসানকে,জিসানের ভালো মন্দো সবই এখন খেয়াল রাখে।জিসান যেমন তিশার পছন্দ অপছন্দ সব জানে তিশাও জানার চেস্টা করছে।

এমনি একদিন ড্রয়িংরুম এ বসে গল্প করছে বাড়ীর সব লেডিসরা মিলে।আমি ও তাওহিদ ভাইয়া অফিস শেষ করে বাড়ীর ভেতরে ডুকে দেখি সবাই অনেক খুশি।সোপিং এর কথা বলছে আর কে কি নিবে,কে কি পরবে তাই ডিশকাশন চলছে।আমি ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করলাম হচ্ছেটা কি।আর এতো আয়োজন কিসের জন্য।এরি মধ্যে নিশি দৌড়ে এসে বলতে লাগলো,ভাইয়া আমাদের কালই সোপিং এ নিতে হবে।

কেনো....এতো কিসের সোপিং। ~জিসান

তাওহিদ দুঃখের খবর তোমার ঝুমুরের বিয়ে টিক হয়ে গেছে।~তানজিলা। 

এটা আমার জন্য দুঃখের খবর কেমনে হলো,আর আমার ঝুমুর মানে।আমি কি ঝুমুর কে দত্তক নিয়েছি।

ছি তাওহিদ এসব কি বলছিস।~মা

দেখোনা মা তানজিলা কিভাবে পিনছ মারছে আমাকে।

আচ্ছা বাদ দে ওসব, শুন আমাদেরকে বিয়ের তিনদিন আগেই জেতে বলছে,তাই সবাই সবার গোছগাছ করে নে হাতে সময় নেই।কাল সোপিং করে পরশু চলে যাই আমরা কি বলিস।

মা আমিতো জেতে পারছি না,কাল আমাকে অফিসের কাজে চিটাগাং যেতে হচ্ছে।আমি একেবারে বিয়ের দিনই যাবো তোমরা যাও~ তাওহিদ।

♦ভাইয়া চিটাগাং গেলে অফিসের সব চাপ আমার উপর পরবে,তাই আমি আর তিশা একেবারে গায়ে হলুদের দিনই যাবো,এ কথা বলে জিসান রুমে জেতে নিলো।

তিশা এখানে একলা থেকে কি করবে জিসান, ও আমাদের সাথেই চলুক।~তানজিলা।

না ভাবি,ও আমার সাথেই যাবে।তোমরা যাও।

কিন্তু জিসান....

প্লিস ভাবি আর কিছু বলো না।সবাই চুপ হয়ে গেলো।

আর....
আমি,, আমি আর কি বলবো,জিসান যেহেতু মানা করেছে,তাহলো ও যা বলবে তাই হবে।তাই আমি সেখান থেকে উঠে চলে গেলাম।

জিসান এমন কেনো,তিশাকে কি একলা যাবে,আমরা তো সাথেই থাকবোই তাহলে এতো কিসের ভয়।,,, ~তানজিলা।

 ভাবী তুমিও না,,, জানোনা ভাইয়া ভাবীকে বাপের বাড়ীতে একদিন থাকতে দেয় না,সকালে দিয়ে আসে,আবার রাতে আসার সময় নিয়ে আসে,তাহলে 
এখন কিভাবে দিবে।

ঠিকই বলছো.....~তানজিলা।

আমি চা নিয়ে রুমে গেলাম,জিসান মাত্রই ফ্রেস হয়ে বের হলো,আমার হাতটা থেকে চাটা নিয়ে আমাকে কাছে বসিয়ে আমার হাতটা তার মুঠিতে নিলো।

♦তিশা আমি জানি তুই রাগ করে আছিস আমি তোকে জেতে মানা করেদিছি বলে,কিন্তু আমার এসব একদম পছন্দ না,বিয়ে বাড়ীতে তিনদিন আগে গিয়ে কি হবে।তার উপর অনেক মেহমান আসবে,সবাইকে গাদাগাদি করে রুমে এডজাস্ট করতে হবে,আর তা আমার পছন্দ না।এসব আমার কাছে জামেলা মনে হয়।আমি নিজে তোকে গায়ে হলুদের দিন নিয়ে যাবো।পরের দিন বিয়ে খেয়ে চলে আসবো আমরা।ওকে।

আমার কোন সমস্যা নেই।আর আমি রাগও করেনি।তাই এতো চিন্তা না করে চা খান।আমি হেসেই বললাম।
জিসানও হেসে দিলো।

♦পরের তিন সবাই সোপিং করতে গেলো,কিন্তু আমি যাইনি,কারন জিসান নিজে আমাকে সোপিং করতে নিয়ে যাবে বলেছে।তাই আমি যাই নি।

পরেদিন সবাই চলে গেলো বিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে,আর আমি বাড়ীতে একা।দুজন কাজের মহিলা আছে,তবে এর মধ্যে একজন সকালে কাজ করে চলে যায়।আরেক জন এখানেই থাকে।আজ সারা দিন খুব বোরিং কাটলো,কারন বাসার কেউ নেই বলে,তবে জিসান কিছুক্ষন পর পর ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করে আমি কি করছি।খেয়েছি কিনা,ব্লা ব্লা ব্লা....।আমি একা বলে বেচারা আজ অফিস থেকেও তারাতারি আসছে।আমি কাপড়গুলো ভাজ করছিলাম এমন সময় আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে বলে,ভালোই হইছে সবাই তিনদিন আগে চলে গেছে।কি বলিস....

আমি একটু বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে বললাম।কেনো,এতে ভালোর কি হইছে।

♦উনি একটু দুস্ট চোখে তাকিয়ে,আমার ঘাড়ে একটা কিস করে বললো,তিনদিন মন মতো হানিমুন করতে পারবো।হানিমুনে এ তো যাওয়া হলো না,তাই বাসায় হানিমুনের প্লানিং করলে মন্দ কিসের।

আমি উনার মতলোব সব বুজতে পারছি।এই ছারুন আমায়,শখ কতো হানিমুন করার।আমার কোনো ইচ্ছা নেই ওসব করার।আমি পিচ্ছি মানুষ,আমার হানিমুন করার বয়স হয়নি।

তাই চলতো দেখি আমার বউটা কোনদিক দিয়ে এখনো পিচ্ছি আছে।বলেই আমায় বিছায় ফেলে আমার হাত দুটো বিছানায় চেপে ঠোঁটে ঠোঁট নিয়ে নেয়।আমি বাঁচতে চাইলেও সেদিন বাঁচতে পরিনি,এর পর দুজনি শাওয়ার নিয়ে ডিনার করে ছাদে বসে চাঁদের আলোয় দেখেছি অনেক রাত জেগে গল্প করলাম।এই রাতটা আমার স্মরণী রাতের মধ্যে একটি।

পরের দিন জিসান সকালে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো।আমিও কাজ শেষ করে দুপুরে গোসল করে যোহর এর নামাজ টা আদায় করলাম,কিছুদিন ধরে নামায শুরু করলাম,বিয়ের আগে রেগুলার পরা হতো,কিন্তু বিয়ের পর কিভাবে জেনো বন্ধ হয়ে গেলো।শয়তানে পাইছে মনে হয়।তাই আবার নামাজ টা শুরু করলাম।বিকেলে হঠাৎ কাজের মহিলাটা কান্না করতে করতে আমার কাছে আসলো।

কি হলো খালা কান্না করছেন কেনো।

মাগো আমার মাইয়া....বলেই কেঁদে দিলো।

কি হইছো খালা বলুন, আর কান্না বন্ধ করুন।

আমার মাইয়াডার নাকি এক্সিডেন্ট হইছে।কে জানি ফোন দিছে।আমারে এহোনি যাওয়া লাগবে।

তাইনি ঠিক আছে আপনে এখনি জান।দাঁড়ান আমি কিছু টাকা দিয়ে দিচ্ছি।আরো লাগলে বলবেন।
আমি কিছু টাকা দিলে খালা তারাতারি চলে যায়।আমিও দরজা লাগিয়ে জিসানকে কল করলাম।ফোন ধরলো না।কিছুক্ষন পর সে নিজেই কল দিলো।

হ্যালো....আমি।

কল করেছিস।

হুমমমমম।

কেনো আমাকে মিছ করছিস।

আরে দুস্টমি বন্ধ করুন,আর বাসায় তারাতারি আসার চেস্টা করবেন,আমি একা বাসায়।

কেনো, খালা কই।

তারপর আমি সব বললাম।

ঠিক আছে,তুই না দেখে দরজা খুলবি না।আমিও তারাতারি আসার চেস্টা করছি।

ওকে।বলে ফোনটা কেটে দিলাম।বসে বসে একা একা কি করবো তাই টিভি দেখছিলাম।

♦হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবলাম এমন সময় কে আসলো।তাই দরজায় গিয়ে দেখার চেস্টা করলাম।কিন্ত কাউকে দেখতে পেলাম না।তাই চলে জেতে নিলে আবার কলিংবেল বেজে উঠে।আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।মেইন গেটের সিকিউরিটি কে কল করলাম কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না আজব।আর এদিক দিয়ে কলিংবেল বেজেই চলছে।

♦আমি তারাতারি অফিসের কাজ গুলো শেষ করার চেস্টা করছি।জাতে বাসায় যেতে পারি।হঠাৎ নিলয়ের কল আসছে ফোনে।আমি বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিচ্ছি।কিন্ত ও বার বার কল দিচ্ছে।এতো কল দিচ্ছে সহ্য করতে না পেরে কলটা রিসিভ করলাম।

প্রোভলেম কি তোর এতো কল কেনো করছিস।আমি কল কেটে দিচ্ছি দেখতে পারছিস না।

ইউউউ..... ফুল।দরকার না থাকলে কেউ এতো কল করে না জানোস না।খুব চিল্লিয়ে।~নিলয়

কি হয়েছে নিলয়।

তিশা কোথায় জিসান।~নিলয়

আবার শুরু করবি না নিলয় আগেই বলেছি।

জাস্ট শেট আপ জিসান,তিশার বিপদ।বল তিশা কোথায়।~নিলয়

কেনো কি হয়েছে।তিশাতো বাসায়।

বাসাতে কে আছে ওর সাথে।~নিলয়

কেউ নাই ও একা।কেনো।কি হয়েছে।

জিসান বাসায় ফোনদে,রনি আজ কিছু করবে।ও নাকি কি প্লান করেছে।তিশাকে বল সেভ থাকতে।~নিলয়।

মানে কি বলছিস,আর তুই কিভাবে জানলি।

আরে এগুলো পরে বলবো।আগে তিশুকে ফোন দিয়ে দেখ ও ঠিক আছে কিনা।~নিলয়।

জিসান কথাটা শুনেই তিশাকে ফোন দিলো কিন্তু তিশা ফোন ধরছে না।বাড়ীর লেন্ডলাইনে ফোন দিলো কেউ ধরছে না,এখন জিসানের ও টেনশন হতে লাগলো।নিলয় এখনো লাইনে আছে।

হ্যালো জিসান, জিসান।কি হলো~নিলয়।

তিশা ফোন ধরছে না,আমি বাসায় যাচ্ছি এখনি বলেই অফিস থেকে রওনা দিলো জিসান।নিলয়ও রাস্তায় ছিলো,ও জিসানের বাড়ীর দিকে গাড়ী বাড়ালো।
রায়হানও খবর পেলো।তাই ও বের হয়ে গেলো তড়িঘড়ি করে।উদ্দেশ্য সবার এক,যেই আগে জেতে পারে।

♦এদিক দিয়ে বাড়ীর কলিংবেল বারবার বাজছে,আমি আবার লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখলাম কে,এখন দেখি একজন কুড়িয়ার ম্যান দরজার সামনে কিম্তু চেহারা দেখা যাচ্ছে না,আমি তবুও জিঙ্গেস করলাম কে।

ম্যাম আপনার পারসেল আসছে।প্লিস ছেক করে বুঝে নিন।

কিন্ত আমি কিছু ওর্ডার করিনি।

ম্যাম আমি তা বলতে পারবো না।প্লিস পারসেলটা কালেক্ট করেনিন।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

হয়তো বাসার কেউ কিছু ওর্ডার করেছে ভেবে,দরজাটা খুলি।পারসেলটা দিন বলে,লোকটার দিকে তাকালাম।এতোক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে কি জেনো লিখছিলো।এখন আমার দিকে তাকালো।আমি লোকটাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম,এতো রনি ভাই।আপ,,,,নে।আর লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিলো।আমি তারাতারি দরজা বন্ধ করতে নিলে রনি দরজাটা জোরে ধাক্কা দিলো আর আমি ছিটকিয়ে অনেক দূরে ফ্লোরে পরে গেলাম।

আমি এমন একটা দিনের জন্য কতো ওয়েট করছিলাম। আর এতো সহযে পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।এখন কে বাঁচাবে তোমাকে।

রনি আমার দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে আর বলছে।আমি পরে অনেকটা ব্যাথা পেয়েছি।তবুও শরীলের সব শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়াই, প্লিস ভাইয়া আপনে এখান থেকে জান।জিসান জানতে পারলে আপনাকে খুন করে ফেলবে।তবুও রনি আমার দিকে আসছে,আর আমি পেছনে যাচ্ছি।

তোমার জিসানকে শায়েস্তা করার জন্যই তো আসছি।ওকে মারলে ওর ওতো কস্ট পাবে না কিন্তু তোমার কিছু হলে ও বেছে ও মরে যাবে।হা হা হা....

আমার এতোটা রাগ উঠলো, সামনে একটা ফুলদানি ছিলো রনির দিকে মারলাম।কিন্তু শয়তানটার গায়ে লাগলো না ও আমাকে ধরতে আসলে আমি দৌড়ে একটা রুমে গিয়ে গেট লাগাতে নি,আর ও তখনি ওর একহাত দিয়ে গেট আটকে ফেলে।আমি বাচাঁও বাচাঁও বলে চিল্লাতে থাকি।আশেপাশের কেউ শুনেছে কিনা জানি না, একসময় রনি খুব জোরে দরজা ধাক্কা দিলে আমি আবার ছিটকে পরি।আর এবার গিয়ে খাটের সাথে মাথা লেগে প্রচণ্ড ব্যাথা পাই। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে,আর সাথে সাথে আমার মাথাও ঘুরাতে থাকে।আমি নিচের ফ্লোরে পরে যাই।আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।লাস্টবার শুধু দেখতে পেলাম।রনি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আমার সামনে আসছে।আর আমি হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো,,,,,জিসান বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
.
.
.
চলবে........................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন