আমি জিসানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি,মনে হচ্ছে জীবনের সবথেকে সুখের স্থান এটা আমার কাছে।কেনো যে এতো ভালো লাগে উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে,জানি না।এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।জীবনের শেষ পর্যন্ত আমি এই বুকেই মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।এই স্থানটি শুধু আমার।আর উনিও পরম আবেশে আমার চুল গুলোতে হাত ভুলাচ্ছে।মন তো চাইছে এই সময়টাকে ধরে রাখি।
"
"
"
-তিশা.......।~জিসান।
হুমমমমম....।
-আমি এখানে কে বলছে।
রায়হান ভাই।
-তাহলে তো তোর ভাইকে একটা ধন্যবাদ দেয়া দরকার, কি বলিস।~জিসান।
তাইনি.....কেনো।
-ওর কারণেই তো আজ তুই আর আমি সব ভুলে এতো কাছে আসতে পারলাম। (জিসান আমাকো জরিয়ে ধরে কথাটা বললো)আমার বউটাকে আজ কতো দিন পর আদর করলাম।এ সবি তোর ভাইয়ের কৃতিত্ব।
"
"
"
শয়তান কোথাকার,এভাবে কেউ চলে আসে।আমি বাদে বাড়ীর সবাই রিলেক্স ছিলো।আমিতো কিছুতেই বুজতে পারছিলাম না।
"
"
-কারন ম্যাডাম আপনে বাদে সবার সাথেই আমার কথা হইছে।
"
"
কিকিকি, এই নি কথা।বাসায় চলেন তার পর দেখাবো মঝা।
"
"
-হুমমম, চল।ঈশান একা।তুই ফ্রেস হয়ে নে আলমারীরতে তোর কাপড় আছে।
"
"
আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকালাম।
"
"
-কি হলো আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।আরে বাবা।আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন এই বাড়ী আসবি, তাই তোর জন্য কিছু কাপড় এখানে রাখা আছে।এখন যান তারাতারি করেন।
"
"
আমি উঠে সাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলাম।
-তিশা তোকে রায়হান নিয়ে এসেছে।~জিসান।
না,নিলয় দিয়ে গেছে।
নিলয়.... কেনো।~জিসান।
ভাইয়া বের হচ্ছিলো আমাকে নিতে।কিন্তু হঠাৎ ভাইয়ার খুব দরকারি কাজ এসে পরেছে।সেই সময় নিলয় ভাইকে ফোন দিলো,আপনার ফোন বন্ধ কেনো জানার জন্য।তার পর রায়হান ভাই সব খুলে বললো।ভাইয়া নিলয় কে রিকুয়েস্ট করলো,তাই নিলয় নিয়ে আসে এখানে।
"
"
-ওওওও,,,ওকে।তুই বস আমি ফ্রেস হয়ে আসি তার পর রওনা দেবো।
"
"
ঘন্টাখনিকের মধ্যে আমরা বাসায় এসে পরলাম।জিসান এসেই ঈশানে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।দুদিন পর ছেলেকে দেখছে বলে।এ দুদিন নাকি নিশু ভিডিও কলে ঈশানকে দেখাতো।অথচ আমি কিছুই জানি না।আমি বোকা বলে এরা সবাই মিলে বোকা বানালো।
রাতে সবাই ডিনার করে রুমে চলে গেলো।কিন্তু আমি, ভাবী আর নিশু জমিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম।এর পর ভাবীও চলে গেলো,ভাইয়া ডাকছে বলে।আমি ভাবলাম এই সুযোগ নিশির সাথে কথা বলার।
নিশি কিছু জিঙ্গেস করলে,সত্যি করে বলবে।
"
"
এ কেমন কথা ভাবী,তোমাকে কবে আমি মিথ্যা বললাম।বলো...কি জানতো চাও।
"
"
তুমি কাউকে পছন্দ করো।সত্যি করে বলবে।
"
"
আমি সত্যি বলবো ভাবী।হুমমম,আমি একজনকে পছন্দ করি,শুধু পছন্দ না আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।আমি অনেকদিন ধরেই তোমাকে বলতে চাইছিলাম, কিন্তু তোমার লাইফে এতো কিছু চলছে,তাই তোমাকে আর বলা হয়নি।ভাবী প্লিস আমাকে সাহায্য করো।বাবা মা আর ভাইকে তুমি রাজী করাতে।
"
"
নাম কি,কিভাবে চিনো।আর সে কি তোমায় বিয়ে করবে বলেছে।
"
"
নাম আদি,এতো বছর বাহিরে ছিলো,একবছর হলো বাংলাদেশে আসছে।এখন বাবার ব্যবসা দেখছে।আর আমরা আয়নীর জম্মদিনে গেলাম না,সেখানে ও আমাকে দেখেছে।তার পর কিভাবে জেনো আমার ফোন নাম্বারটা জোগার করে আমাকে কল করে।প্রথমে আমাদের মধ্যে কিছু ছিলোনা।কিম্তু আস্তে আস্তে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি।আমাদের সম্পর্কের ছয়মাস চলছো।ও বার বার বিয়ের জন্য বলছে।আদি ওর পরিবারকে পাঠাতে চাইছে আমাদের বাসায়।কিন্তু ভাইদের ভয়ে আমিই বার বার মানা করছি।তুমি বলো আমি এখন কি করবো।
"
"
তুমি চিন্তা করোনা।আমি তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।সব ঠিক হয়ে যাবে।
"
"
ও ভাবী,তুমি বেস্ট।
"
"
হইছে,এবার ঘুমাও।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
আমি নিশিকে গুড নাইট বলে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে আমার চোখদুটো ছলচ্ছল হয়ে গেলো।ঈশান জিসানের বুকের উপর শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।এ যেনো আমার চোখে সব থেকে সুন্দর একটা মুহুর্ত।আমি আস্তে করে জিসানের পাশে বসে উনার চুলগুলো হাতাতে লাগলাম।আমার স্পর্শে উনি ঘুমঘুম চোখে আমার দিকে তাকালো।
"
"
আসতে মন চাইছে,তোর।আমি তো ভাবলাম,আমাদের বাপ ছেলেকে আজ একাই থাকতে হবে।
"
"
তাই,দুজন থাকার পরও আপনারা একা।হা হা হা করে আমি হেসে দিলাম।
"
"
চুপ,ঈশান ঘুম থেকে উঠে যাবে।দেখোস না,কি আরামে ঘুমিয়ে আছে।আমার বুকে।
"
"
হুমমম,ও বুঝে এখানে অনেক শান্তি।
"
"
জিসান আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুসকি হাসি দিলো।
"
"
আমি ঈশানকে সুন্দর করে বিছানায় শুয়ে দিলাম।ঘুম আসছিলো না তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আজ আকাশে চাঁদ উঠে নাই।কিন্তু সুন্দর বাতাস বইছে।বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে।হঠাৎ জিসান এসে পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।গলায় একটা কিস করে,
-ঘুমাবি না।~জিসান।
ঘুম আসছে না।
-কেনো....।~জিসান।
এমনেই।আপনে ঘুমান না কেনো।
-তোকে ছাড়া ঘুম যে চোখে আসে না।
আমিও জিসানের হাতে হাত রেখে বললাম, তাইই।
-হুমমম,ম্যাডাম।তুই কিছু ভাবছিস।
হুমমম।আপনে কিভাবে জানলেন।
-তোকে যে আমি তোর থেকে বেশি চিনি।এখন বল কি ভাবছিস।
একটা কথা জিঙ্গেস করবো,রাগ করবেন নাতো।
-আমি জানি তুই কি জানতে চাইছোস।রোজ সম্পর্কে জানতে চাস তাই তো।
হুমমমম।
তাহলে শোন.....
রোজ আমাদের সাথে ভার্সিটি তে পরতো।বাবার বন্ধুর মেয়ে বলে,আমাকে একটু দেখে রাখতে বলেছিলো,কারন ও নতুন ছিলো,আর কাউকে চিনে না।আমি ভার্সিটিতে কোন মেয়ের সাথে তেমন কথা বলতাম না।রোজকে জানতাম বলে ওর সাথে টুকটাক কথা বলতাম।প্রয়োজন হলে।প্রথম কিছুদিন ভালোই ছিলো।কিন্তু আস্তে আস্তে রোজ একটু বেশিই গায়ে পরে কথা বলতো,যখন তখন হাত ধরে টেনে নিয়ে জেতো।ছোটখাটো জিনিস নিয়ে আমার কাছে আবদার করতো।প্রথমে মনে করতাম ওর এখানে আপন কেউ নেই বলে হয়তো এমন করে।আমি একজন ফ্রেন্ড হিসেবে ওর সাহায্য করতাম।কিন্তু ও আমার সাহায্যকে ভালোবাসা মনে করে।ও ভার্সিটিতে বলে বেড়াতে লাগলো ও আমার লাভার।যেহেতু রোজ এর সাথে আমাকে সবাই প্রায় দেখতো।মাঝে মাঝে আমি রোজকে ওর বাসাও ড্রপ করে দিতাম।তাই সবাই বিশ্বাস করতে লাগলো।
ব্যাপারটা আমার কানে তখনো আসে নি।একদিন ক্যাম্পাসে বসে ফ্রেন্ডস দের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম,এমন সময় আমার একজন ফ্রেন্ড এসে আমাকে সব বলে।আমার খুব রাগ উঠেছিলো তখন।রায়হান আমাকে শান্ত হতে বললো।রোজকে বুঝাতে বললো।আমি রোজকে বুঝালাম কিন্তু রোজ কোন কিছু বুঝতেই চায়না।বার বার এক কথা বলা শুরু করলো আমাকে ভালোবাসে।
অনেক বুঝানোর পরও যখন ও বুঝতে চাইছিলো না তখন আমি ওকে এভোয়েড করা শুরু করলাম।ওর থেকে যতোটা পাড়তাম দূরত্ব বজায় রাখতাম।কিন্তু একদিন সহ্যেরসীমা অতিক্রম করে ফেলেছিলো।ক্যাম্পাসে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো।অনেক মানুষ ও ছিলো।হঠাৎ রোজ কোথা থেকে এসে আমাকে সবার সমনে জরিয়ে ধরে।আমি সেদিন নিজের রাগটাকে আর সামলাতে পারলাম না।সবার সামনে ওকে কষে একটা থাপ্পর মারলাম।আর সেদিন অনেক অপমানও করেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম এতো অপমানের পর হয়তো ও আর আমার সামনে আসবে না।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।এর পর ও এমন এক কান্ড করলো যা আমি ভাবতেই পারিনি।
একদিন আমি ফোনে কথা বলতে বলতে লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছিলাম। ক্লাশ গুলো সব খালি ছিলো তখন।হঠাৎ কেউ আমাকে টান দিয়ে একটা খালি ক্লাসে ডুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।কে সে দেখার জন্য পেছনে ঘুরে দেখি রোজ।
"
"
রোজ,তুমি। তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই।আর আমাকে এভাবে টেনে আনছো কেনো।
"
"
তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো,ভাবলে কিভাবে।আমার যেটা চাই তো চাই।আর আজ এমন ব্যবস্থা করবো,যাতে তুমি সারা জীবনের জন্য আমার হয়ে যাও।
"
"
এসব কি বলছো।আর সরো আমাকে জেতে দেও।
"
"
কিন্তু ও আমার দিকে এগোতে থাকে,আর নিজের কাপড় নিজেই ছিড়ে ফেলতে লাগলো।আর চিৎকার করতে লাগলো।ঘটনা আকষ্মিক ঘটায় আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।রোজ চিৎকার দিতে দিতে রুম থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেলো।আমিও ওর পেছন পেছনে ছুটতে লাগলাম।
ক্যাম্পাস এর সবাই ঝড়ো হয়ে গেলো।টিচার রাও এসে পড়লো,রোজ এর চিৎকারে।রোজ সবাইকে বললো আমি নাকি ওকে খালি রুমে নিয়ে ওর সাথে খারাপ কিছু করতে চাইছিলাম।সবাই আমার দিকে সন্দেহ নযরে তাকালো।আমি সবাই কে বুঝাতে লাগলাম।কিন্তু রোজ মেয়ে বলে সবাই ওকেই বিশ্বাস করতে লাগলো।আর আমার কাছে কোনও প্রমান ও ছিলো না।ঘটনাটা অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়লো আমার জন্য।আমাকে কলেজ থোকে বের করে দেবার কথা চলছিলো।তখনি রায়হান আসে।আসলে তখন ফোনে রায়হান এর সাথেই কথা বলছিলাম।যখন রোজ আমাকে টান দিয়ে রুমে ডুকায়,তখন ফোনটা হাতের থেকে পরে যায়।কিন্তু রায়হান লাইনে ছিলো বলে ও সব শুনতে পারে আর রেকর্ড ও করে ফেলে।আর সেই রেকর্ডটা সবাইকে শোনায়।এর পর রোজকে অনেক অপমান করে পুরো কলেজ এর সবাই।রোজ কে কলেজ থেকে বের করে দেয়।আংকেল এসব শুনে লজ্জায় রোজকে নিয়ে বিদেশ চলে যায়।
"
"
এর পর তো জানিস ও এতো বছর পর আবার প্রতিশোধ নিতে এসেছিলো।আমাদের কম্পানিতে ডিল সাইন করা,আমাকে এভাবে ফাঁসানো সব কিছুই ওর প্লান ছিলো।আসলে ওর টার্গেট তুই ছিলি।ও আমার কাছ থেকে তকে কেড়ে নেওয়ার প্লান করেছে।রোজ এর হ্যাসবেন এসব কিছুই জানতো না।সে দিন ঐ ঘটনার পর ওর হাসবেন্ড কে সব খুলে বলি।উনি খুব ভালো মানুষ ছিলো।তাই রোজকে নিয়ে আবার বিদেশে চলো যায়।আমি ভেবেছিলাম ও যাবার পর তোকে সব বলবো।কিন্তু এর আগেই আপনে ফুড়ুৎ হয়ে গিয়েছেন।
"
"
আমি গুড়ে জিসানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি।সরি তখন আসলেই আমার চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছিলো।~তিশা।
"
"
থাক আমরা আগের সব কথা ভুলে যাই।যে অতীত কস্টের সে অতীত মনে না করাই ভালো।
"
"
আমি জিসানকে ছেড়ে উনার পান্জাবীর বুতামটা বার বার খুলছি আর লাগাচ্ছি।
"
"
কি ম্যাডাম আজ একটু বেশিই রোমান্টিক মনে হচ্ছে।
আমার কোমড় টা ধরে টান দিয়ে কাছে টেনে কথা গুলো বলছে।
"
"
ফাজিল কোথাকার,সব সময় মাথায় এসব চিন্তা ছাড়া কি আর কোনও কথা নেই।
"
"
তাহলে তুই এমন করছিস কেনো।কিছু বলবি।
"
"
হুমমম,আগে বলেন রাগ করবেন না।ওয়াদা করেন।
"
"
জিসান কিছু একটা ভেবে,ওকে রাগ করবো না বল।
"
"
নিশি একজনকে ভালো বাসে।এ কথা বলার সাথে সাথে আমার সাহেবের চেহারার রং পালটে গেছে।
আপনে রাগ করবেন না বলেছেন।
"
"
জিসান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,ছেলেটা কে।
"
"
তার পর আমি সব ডিটেলস বলি।উনি কালই আদির পরিবারের সব খোঁজ নিবেন আগে।তার পর সবাইকে জানাবেন।
"
"
রাত অনেক হয়েছে চল ঘুমাতে চাই।
"
"
পরের দিন জিসান আদির পরিবারের সব খবর নিতে থাকে।আদির পরিবারের কোনও খারাপ কিছু পায়নি।তাই বিষয়টি জিসান বড় ভাই ও নিজের বাবাকে বলে।জিসানের পরিবারের সবাই রাজি হয়ে যায়।তাই নিশি ও আদিকে কল করে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলে।
.
.
.
চলবে.........................................................