-তারপর?
-তারপর কী,ও হটাৎ সব বন্ধ করে চলে গেলো।কেন গেলো বললো ও না,অথচ ভালোবাসতে ত্রুটি রাখিনি,সব দিয়ে ভালোবেসেছিলাম,সব দিয়ে...
-কখনো খোঁজ করোনি?
-করে লাভ কী?কষ্টই তো বাড়বে,তাইনা?
-তবুও...কখনো কি ইচ্ছা হয়নি?
-আরো দূরে রেখেছি নিজেকে।যে একবার ছাড়তে পারে,সে বারবার হাত ছাড়তে পারবে।আসল প্রেমিক জোকের মত হয়।জীবন ত্যানা বানায় দিলেও,হাত ছাড়বে না।বুঝলি?
-বুঝলাম,এরপর নিজেকে কীভাবে সামলিয়ে নিলে?
-মরে গেলে লাভ কী বল?জীবন আর পাবি?পাবি না।তবে প্রেম আবার পাইতেও পারিস।তাই বেঁচে আছি।
-নতুন প্রেমের অপেক্ষায়?
-বলতে পারিস...
প্রিতি বিরিয়ানির প্যাকেট ভিনার হাতে ধরিয়ে চলে গেলো।আজকে নাকি ওর বাবার জন্মদিন।যদিও ওর বাবা কোথায় আছে,প্রিতি আজো বলেনি,তবুও ধরে নেয়া যায় আছে হয়ত বেঁচে।প্রতিদিন এত কথা বলে ভিনার সাথে,কিন্তু কখনোই নিজের বাবাকে নিয়ে কিছু বলেনি।ভিনা বুঝে,প্রিতি যে ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চায়।এর জন্য নিজেও কিছু আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে না?
-এতই সোজা?
হটাৎ নিজেকে প্রশ্ন করে ভিনা।ভালোবাসা ভুলে যাওয়া আসলে জীবনে অন্যতম পরিহাস গুলোর একটা।একি কথায় ভালোবাসাও বলে,আবার ভুলে যাওয়াও বলে।পাগল রে,ভালোবাসা কেউ ভুলে?আর ভুলে গেলে সেটা আবার ভালোবাসা হয়?
নানা সমীকরণে ডুব দেয়ার পর ভিনার খেয়াল হলো আজকে যাবির ফোন দেয়নি সকাল থেকে।দুই সপ্তাজ ধরে কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে আছে।প্রতিদিন আসে,এটা ওটা কিনে দিয়ে যায় নিজের সাধ্যমত। কিন্তু কথা বলে না তেমন একটা।এ নিয়ে বেশি একটা প্রশ্ন করেনি ভিনা।আজকে মনে হলো,নিজের থেকে ফোন দেয়া উচিৎ। দুইবার ফোন দেয়ার পর ও যাবির ধরলো না।সারারতে আর কল ব্যাক ও করলো না।ভিনা পড়াশোনা করে ভোরের দিকে ঘুমোতে গেলো,ঘুমানোর আগেও মোবাইল হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।এত কষ্ট লাগছে কেন?
•
সোহেল নানাভাবে চেষ্টা করেও ভিনার খোঁজ পায়নি।রুপিন আশ্বাস দিয়েছে,সে যেভাবেই হোক ভিনাকে খুঁজে দিবে।দুই মাস হয়ে গেছে,নিজের মেয়েকে দেখেনি সোহেল।মাঝে মাঝে চিন্তা করে, এত কষ্ট পেয়ে মেয়েটা বেঁচে আছে তো?এদিকে মুনার শরীর তেমন ভালো না,ডাক্তার পুরো বেড রেস্ট দিয়েছে।শরীরে পানি এসে পরেছে।মুনা যতই অন্যায় করুক,নিজের সন্তান কে তো দূরে ঠেলে দিতে পারবে না সোহেল।অন্তত এখন না,যখন এক সন্তান হারিয়ে ফেলেছে প্রায়।বাচ্চা হওয়ার পর মুনার সাথে কী করবে,ঠিক জানে না সোহেল।নিজের রক্তের সাথে যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে,এর যন্ত্রণা যে কী তীব্র,কেউ বুঝবে না।
-ভালোমত মালিশ কর।একটা কাজ ও ঠিকমত করতে পারিস না।
মুনা নতুন কাজের মেয়েকে ধমক দিয়ে পা মালিশ করাচ্ছে তেল দিয়ে।এই মেয়ে বেশ ছোট,বারো তেরো বয়স হবে হয়ত।চুমকিকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।লতিফা দুই মাসে দশ হাজার টাকা দেয়ার কথা বললেও পরে ছয় হাজার টাকা দিয়েছে।এ নিয়ে চুমকি অনেক চেচামেচি করেছিলো।যাওয়ার আগে সোহেলকে বলেছিলো-
-কখনো যদি ভিনা আপা ফিরা আসে,আমার মারে একটা ফোন দিয়েন,আমি আইসা তার পায়ে ধইরা মাফ চামু।
কথাটা শোনার পর সোহেলের চোখে পানি এসে পরেছিলো।এত বড় অন্যায় কীভাবে করলো,ভেবে পায় না।যে ছেলেটার কথা লিখেছিলো সেই ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি।
আগামী সপ্তাহে মুনার আল্ট্রাসনোগ্রাফি আছে।মুনা কোন আর্টিকেলে যেন পড়েছিলো যে প্রেগন্যান্সিতে নাকি বার বার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে নেই।প্রথমবার করানোর পর তাই আর করায়নি।ডাক্তার দেয়ার পর ও না।কিন্তু এবার করাবে,কারণ পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেছে।এখন জানা যাবে যে বাচ্চা ছেলে নাকি মেয়ে।যদিও সোহেলের এসবে কিছুই যায় আসে না,কিন্তু জমিরা বিবির যেন ধৈর্য্য হচ্ছে না।মুনাও আশায় আছে,ছেলেই হবে হয়ত।জীবনে একবার যখন ভালো হওয়া শুরু হয়েছে,তখন আশা করাই যায়।
•
বিকেলের দিকে যাবিরের ফোন পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ভিনা।কিন্তু গলা শুনে খুব আশ্চর্য হলো।
-গলা ভারি লাগছে কেন?
-এমনি।আচ্ছা শোনো,তোমার মায়ের গয়নাগুলো কি এখনো তোমার কাছে?
-হ্যাঁ..... কেন?
-এত দামী জিনিসগুলো নিজে কাছে রেখো না।এগুলা বাসায় দিয়ে দাও।
-আমার মায়ের জিনিস এগুলা...
-এসব নিয়েও কথা হতে পারে।গয়নাগুলো দিয়ে দিলে তোমার বাবা অন্তত বুঝবে তোমার কোনো দোষ নেই এতে।
-এতদিন পর কীভাবে যাবো আমি?
-ওটা তোমার নিজের বাড়ি,এটা ভুলে যেয়ো না ভিনা।
-কীভাবে তুমি এটা বললা? ঐ বাড়ির কে আমার আপন?
-ওর জন্যই দিয়ে দাও।
-যদি আসতে না পারি আর?আটকে ফেলে?
-আপন না হলে আটকাবেও না।তাই না?
-আমার যেতে ইচ্ছে করে না।কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেই?
-না,তুমি নিজে যাবে।
-যাবির?তুমি কি আমাকে ঐ বাড়িতেই থাকার কথা বলছো?ইন্ডিরেক্টলি?
-না তো.....
-কী হয়েছে তোমার? বলো না কী হয়েছে?আমি বুঝতে পারছি কিছু হয়েছে।প্লিজ,আমাকে এভাবে কষ্টে রেখো না।খুব যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।
-আমি রাখি।প্লিজ।
যাবির ফোন রেখে দিলো।ভিনা বুঝতে পারছে কিছু হতে যাচ্ছে,এবং সেটা অবশ্যই ভালো কিছু না।
.
.
.
চলবে................................................