অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৬৬ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-যাবির!আমার না মানে.....

ভিনা কথা বলতে পারছে না।পুরো শরীর কাঁপছে।ক্যালেন্ডারের দিকে তাকানোর পর খেয়াল হয়েছে,প্রায় তিন মাস ধরে ওর পিরিয়ড হচ্ছে না।আগে থেকেই পিরিয়ড নিয়ে বরাবরই উদাসীন ছিলো ভিনা।প্রথম পিরিয়ড হয়েছিলোও দেরিতে,ততদিনে শিউলি চলে গেছে।প্রোপার গাইডেন্স পাওয়া সম্ভব হয়নি,তাই পিরিয়ড ওর কাছে ছিলো বিভীষিকা। অন্য মেয়েদের মত ডেট নিয়ে কখনো ভাবেনি ও।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে,বেশ বড় ভুল হয়ে গেছে।

-কী ব্যাপার? কী হয়েছে?

-আমার না গত তিন মাসে পিরিয়ড হয়নি।

-হোয়াট!তুমি পিল খাওনি?

-খেয়েছি। কিন্তু সেদিন না।পরের দিন খেয়েছিলাম।তুমি তো সরাসরি দাওনি।ব্যাগে ভরে দিয়েছিলে।

-তোমার লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছে?

-এক্সাক্টলি মনে নেই ডেট।কিন্তু এর মাঝে আর হয়নি।

-আমি ভেবেছিলাম তোমাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবো।কিন্তু পরে করা হয়নি।তোমার কি আগে কখনো এমন হয়েছে?

-মনে তো হয় না হয়েছে।

-কী আশ্চর্য, হয়ত,মনে হয় না,এসব কী কথা?শিওরলি বলতে পারছো না?

-আমি এসব নিয়ে আগে ভাবিনি।কিন্তু যদ্দুর মনে পরে এত লং টাইম কখনো বন্ধ ছিলো না পিরিয়ড। 

-এখন?তোমার কি মনে হয়?

-আমি জানি না।বমি তো হয়নি।কিন্তু শরীর সবসময় ক্লান্ত থাকে।

-তুমি আধা ঘন্টা পর নিচে নামবা।যেভাবেই হোক।

যাবির কল কেটে দেয়ার পর ভিনা ঘড়ি দেখলো।সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।এ সময়ে বাইরে যাওয়া সহজ না।নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।এমন ও হতে পারে সোহেল নিজেও বের হতে পারে ভিনার সাথে।ঘর থেকে বের হয়ে মাস্টার বেডের কাছে গেলো।মুনা ফ্লোরে বসে আছে।শাড়ি ঠিক নেই,চোখ লাল।সোহেল পাশে বসে স্যুপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।এ সময়ে মুনার নিজের মার সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো।মা ছাড়া একজন মেয়ের জীবন দূর্বিষহ হয়ে যায়।বাবারা যতই ভালো হোক,তাদের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে।চাইলেও সেই সীমার বাইরে যেয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে পারে না।মা যে কখনো স্বার্থপর হতে পারে,মুনার মা লতিফাকে না দেখলে ভিনা জানতে পারত না। 

-আমি কখনো এমন হবো না!!

নিজেকে বললো ভিনা।পরক্ষণেই মনে পরলো,অবিবাহিত কম বয়সি একজন মেয়ের মাতৃত্ব বাস্তবতার কাছে হেরে যায় সবসময়। আবেগ ঠুনকো হয়ে পরে,বাচ্চার ভবিষ্যৎ ভালো হবে না অযুহাতে,তাকে নির্মম মৃত্যু বরণ করতে হয়,যেখানে বাচ্চার শেষ জায়গাটাও হয় ডাস্টবিনে।

সোহেলকে ব্যস্ত দেখে ভিনা কিছু বললো না।শুধু একবার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো।একজন অপ্রকৃতস্থ মানুষকে এক বাটি স্যুপ খাওয়াতে কেমন সময়ে লাগতে হিসাব করে দেখছে।যদি ভিনা বের হওয়ার পর সোহেল রুম থেকে বের হয়ে ভিনাকে না পায়,তখন আরেক সমস্যা হয়ে যাবে।

নানাদিক ভেবে ভিনা সিদ্ধান্ত নিলো,সোহেলকে জানিয়েই বের হবে।

-আমার বাচ্চাকে কোথায় কবর দিয়েছো?বলো না,কোথায় কবর দিয়েছো?একটু নিয়ে যাবা?বিশ্বাস করো,আমি তোমার বাসায় থাকবো না আর।চলে যাবো। ওর কবরের কাছে পরে থাকবো।

-শান্ত হও।স্যুপ খাও,আমি নিয়ে যাবো।

-শিউলি অনেক কষ্ট পেয়েছে তাইনা?আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না তাই না?আচ্ছা,আমার বাচ্চাটা যদি শিউলিকে বলে,ও মাফ করবে না আমাকে?

-শিউলি অনেক ভালো।ও ক্ষমা করে দিয়েছে তোমাকে।স্যুপ খাও,আমি নিয়ে যাবো বাচ্চার কাছে।

-বাচ্চা বাচ্চা বলছি কেন আমরা?ওর একটা নাম রেখেছিলাম আমি,ভিনার সাথে মিলিয়ে।মাহভিন।ওকে মাহভিন বলে ডেকো।

-ঠিক আছে।যা বলবে সব করবো।

-ভিনা?ও আমাকে ক্ষমা করেছে? ক্ষমা করবে?

-করে দিয়েছে।

-জানলে কীভাবে?

-আমাকে নিজেই বলেছে।

-ভিনা শিউলির মত হয়েছে তাইনা?শিউলি অনেক ভালো ছিলো দেখেই ভিনার মত মেয়ে পেয়েছে।আমি অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলাম,এর জন্যই আমার কাছে আসেনি।

-আর কিছু বলো না।খেতে বলছি খাও।

মুনার দাপাদাপি দেখে ভিনা থমকে গেলো।সামনে যেয়ে অনেক বলতে ইচ্ছে হলো আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তু বলতে পারলো না।কারণ,আজকে যদি ভিনা যা ভয় পাচ্ছে তাই হয়,এর পেছনে মুনা অনেকাংশে দায়ী।

-আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।

-কোথায়?

-কিছু জিনিস কেনা লাগবে।

-আমাকে বল,আমি নিয়ে আসি। 

-না,পার্সোনাল জিনিস কেনা লাগবে।

-ঠিকাছে।

সোহেল কি ভেবেছে ভিনা জানে।আসলেও যদি,এটাই কিনতে যেত!

নিচে যেয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর যাবিরকে দেখতে পেলো।অস্থির হয়ে পায়চারি করছে।ভিনাকে দেখেই ছুটে আসলো।হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো-

-জলদি বাসায় যাও।যেয়ে টেস্ট করে আমাকে জানাও।ওকে?

-মানে?

-প্রেগন্যান্সি কিট আছে এটায়।

-আচ্ছা....

-জলদি জানিয়ো ভিনা।এর উপর অনেক কিছু ডিপেন্ড করে।

-কী ডিপেন্ড করবে?

-এত কথার সময় কীভাবে পাচ্ছো?যাও জলদি।

-যাবির....

-একটু বোঝার ট্রাই করো ভিনা।প্লিজ....

ভিনা যাবিরের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে উপরে চলে গেলো।রেজাল্ট এখনো জানেনি,কিন্তু যাবিরের আচরণে বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে ওর।বাথরুমের ফ্লোরে বসে কল ছেড়ে কান্না করছে।চাপা কান্নায় শ্বাস আটকে যাচ্ছে যেন।কোনোমতে কিট বের করে টেস্ট করলো।রেজাল্ট আসার অপেক্ষা এখন। প্রতিটা মূহুর্ত শতাব্দির মত মনে হচ্ছে।নির্দিষ্ট সময় রেজাল্ট চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
.
.
.
চলবে................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন