-এখন রেস্ট নাও।পরে কথা হবে।
-কত পরে?
-একটা বাচ্চা অনেক বড় ব্যাপার ভিনা।আমাকে তিন-চারদিন সময় দাও।এই কয়দিন তুমি কোনো যোগাযোগ করো না।আমি জানাবো।
-জানাবে তো?
-হ্যাঁ ভিনা,জানাবো।আমাকে ভাবার সময় দাও কয়দিন।
-ঠিকাছে,অপেক্ষায় থাকবো।
ফোন রেখে ভিনা আয়নার সামনে গেলো।পরিবর্তন এখনো দৃশ্যমান না হলেও হবে খুব শীঘ্রই।শুধু তাইনা,চরিত্রহীনার যে দাগ লেগেছিলো,সেটাও সত্যি প্রমাণ হবে।ঠোঁট চেপে কান্না চেপে রাখলো। যেদিন রাতে ঘর থেকে বের করে দেয়া হলো,সেদিন ও এতটা অসহায় লাগেনি,আজকে যতটা লাগছে।জীবনে খারাপ কোনটা,কেউ জানে না।যে অবস্থায় নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছে,কেউ জানে না এর চেয়েও অসহায় পরিস্থিতিতে জীবন তাকে ফেলতে পারে।নিজের জীবন নিয়েই যেখানে অনিশ্চয়তায় ছিলো,সেখানে আরেকজনের দায়িত্ব এসেছে।বিয়ে নামক বৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে একে দায়িত্ব বলা যেত,কিন্তু এখন বলা যাচ্ছে না।বরং বোঝা হয়ে গেছে এটা। এতে একটা বিষয় বুঝলো ভিনা,জীবনে কারো সাথে খুব খারাপ হলে তার মানে এই না মানুষটা খারাপ।জীবনের বিভিন্ন সময় নিজেকে নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিলো ভিনা।কোনো কারণ ছাড়াই নিজের বিবেকের কাছে বাঁধা পরে যাচ্ছিলো।মনে হত মুনার এই দূর্ব্যবহারের জন্য কোনো না কোনোভাবে ভিনা নিজেই দায়ী।কিন্তু এই বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বুঝলো কারো বিদ্বেষ বা বোঝার কারণ হতে পাপ করা লাগে না।যার এখনো অস্তিত্ব ই পূর্ণতা পায়নি,তাকেও অভিশপ্ত হতে হয়,তাকেও ক্ষতবিক্ষত করা হয়,মেরে ফেলা হয়।
চোখ মুছে পর পর দেড় গ্লাস পানি খেলো,যেন কতদিনের তৃষ্ণার্ত।এরপর ধীরে সুস্থে টেবিলে বসলো।রুটিন বের করে দেখলো কোনো সাব্জেক্টের আগে ছুটি আছে।সে অনুযায়ী সাজিয়ে নিলো সব।পরশুদিন এ্যডমিট কার্ড দিয়ে দিবে।এর দুইদিন পরই পরীক্ষা।জীবন অনেক কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছে,এর মাঝে এই পরীক্ষা কিছুই না।পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও কেউ বুঝতে পারবে না ও প্রেগন্যান্ট। পরীক্ষা দিয়ে এরপর কোথায় যাবে সিদ্ধান্ত নিবে।মনে ক্ষীণ আশা আছে,যাবির ওকে নিজের ঘরে তুলবে।ছোট সংসার হবে ওদের।কিন্তু যাবিরের জন্য এটা খুব চাপ হয়ে যাবে।চব্বিশ বছরের একটা ছেলে,যার এখনো পুরো পড়াশোনা শেষ হয়নি,এর উপর পারিবারিক কোনো সাপোর্ট ও নেই,তার পক্ষে হুট করে এত বড় দায়িত্ব নেয়া খুব সাহসিকতার কাজ হবে।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলো ভিনা।এতটুকু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই বাচ্চা ও এ্যবোর্ট করবে না।তাই পরীক্ষা ঠিকমত দিয়ে যা হবার হবে।ততদিনে যাবির ও একটা উপায় খুঁজে নিবে।
রাতে খাবারের শেষে জানালার পাশে দাঁড়ালো ভিনা।যাবির ওকে ফোন দিতে মানা করেছিলো,কিন্তু তারপরো ওকে ফোন দিলো।
' আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে এই মূহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না,অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।The number you dialed is currently switched off,please try later.'
ভিনা গুণে গুণে বিশবার ফোন দিলো শুধু এই একটা কথা শোনার জন্য।প্রতিবার ই শোনার পর তীব্র হাহকার জেকে বসছে,তবুও ডায়াল করে যাচ্ছে।যদি একবার হলেও রিং হওয়া শুরু করে,একবার ওপাশ থেকে কেউ হ্যালো বলে উঠে,সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর।আস্তে করে কান থেকে ফোন নামিয়ে ভিনা ড্রয়ারে রেখে দিলো।এই ফোন নাম্বার কারো কাছে নেই।ফোন আসলে যাবিরেরই আসবে।ও যখন দুই তিনদিন সময় চেয়েছে,নেক সময়।ভিনা যেমন কঠিন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে,যাবির ও যাচ্ছে,এটাও বুঝতে হবে।
কোথায় গিয়েছিলো এই বুঝ যখন ওর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলো?কোথায় গিয়েছিলো এই বুঝ যখন ও যাবিরের বাসায় গিয়েছিলো?কোথায়?
-পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমি করবোই।
•
মুনা সারাদিন নিজের ঘরে শুয়েছিলো।সোহেল মোমেনার সাহায্য নিয়ে অনেক কষ্টে মুনার জামা বদলে দিয়েছে।যখন মোমেনা জামা বদলাতে গেছে তখন মুনা হটাৎই তার পা ধরে পাগলের মত কান্না শুরু করে দিয়েছে।
-মাফ করে দেন,প্লিজ,মাফ করে দেন আমাকে।আমি আর পারছিনা।জানেন আমার অনেক যন্ত্রণা হয় ভেতরে।আমি অনেক বেশি পাপ করে ফেলেছি।আমাকে ক্ষমা করে দেন।
-আপা পা ছাড়েন,করতাসেন টা কী?কোনো রাগ নাই আমার আপনের উপরে।মাফ কইরা দিসি আমি।
-বুঝাতে পারবো না যন্ত্রণা,আমার বাচ্চাটা কত অভিমান করেছে যে চলেই গেলো।আমাকে মাফ করে দেন।
-সাহেব,আপা রে উঠান।এমন ক্যান করতাসে।কীসব কয় এগুলা।
সোহেল এগিয়ে এসে মুনার হাত ছাড়িয়ে নিলো।মুনাকে আগলে বললো-
-সবাই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে,তুমি এমন করোনা।
-তাহলে কষ্ট কমছে না কেন?
-কমবে।যদি তুমি কমে যেতে দাও তাহলে।নিজেকে ক্ষমা করো মুনা।যতদিন না পর্যন্ত নিজেকে ক্ষমা করবে, তোমার এই যন্ত্রণা কমবে না।
-কীভাবে ক্ষমা করবো বলো তো সোহেল?তার জন্য আমার প্রায়শ্চিত্ত করা লাগবে।
সোহেল কোনো কথা আর বললো না।কিছুক্ষণ মুনার ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে উঠে গেলো।
-অফিসে যাইনি অনেকদিন হয়ে গেছে।আজকে যেতেই হবে।সন্ধ্যায় এসে কথা বলবো তোমার সাথে।
.
.
.
চলবে..................................................