সোহেল সারাদিন সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছে।আজ দেড় মাসের বেশি হয়ে গেছে,ভিনার কোনো খোঁজ পায়নি সোহেল।মুনাকে বিয়ের পর যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিলো,সেটার মাঝে ভিনার সাথে দূরত্ব হয়ে গিয়েছিলো।বছর পেরোলেও,শিউলির শোক ঘিরে রেখেছিলো সোহেলকে।ফলাফল,মেয়ের জীবন সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিলো না তার। কলেজে কার সাথে চলত,বন্ধু কে ছিলো,কিছুই জানা নেই।এখন হুট করে এসব নিয়ে মাতামাতি করলে,কথা উঠবে নানা ধরনের,যেটা ভিনার জন্যই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
এর মাঝে প্রচন্ড ঘৃণা থাকা সত্ত্বেও মুনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে। কথা বন্ধ থাকলেও যত্ন করতে হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা এমন দ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছে যে,চাইলেও সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
ফোনের ডায়াল লিস্টে রুপিনের নাম্বার এ চার পাঁচ বার কল করতে গিয়েও পারেনি সোহেল।দ্বিতীয় বিয়ের সময় অনেক চেষ্টা করেছিলো বিয়েটা আটকানোর।নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে ভিনার ভালো হবে না এতে।আজ,এত বছর পর সেই কথার প্রতিফলন চোখের সামনে দেখে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।কীভাবে জানাবে রুপিনকে?কী ই বা জানাবে?তবুও কাজটা করতে হবে।কারণ ভিনা যদি কখনো যোগাযোগ করে,রুপিনের সাথেই করবে।সেটাও অনিশ্চিত।এত কিছুর পর হয়ত ওর খোঁজ পাওয়ার কোনো উপায়ই রাখবে না ভিনা।
-হ্যালো?রুপিন?
-হ্যাঁ সোহেল,বলো।
-দেশে কবে আসলে?
-আমি বাইরে কবে ছিলাম?আমি গত চার মাসে দেশের বাইরে যাইই নেই।
-আচ্ছা।
সোহেলের ইচ্ছা করছে মুনাকে মেরে ফেলতে।মুনা কত নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলেছিলো।
-কিছু হয়েছে?আসলে আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম বেশ কিছুদিন।এরপর কিডনির সমস্যা নিয়ে হস্পিটালে ভর্তি ছিলাম।ভিনার সাথেও মাঝখানে অনেকদিন হলো কথা হয়নি।কেমন আছে ও?
-ভিনা....আমি আসলে....ভিনাকেই খুঁজছি....
-খুঁজছি মানে?ও কোথায়!
সোহেল একটা লম্বা দম নিয়ে শুরু থেকে সব বললো।সব শুনে রুপিন কোনো কথাই বলতে পারলো না।সোহেলের এমন অকল্পনীয় আচরণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
-হ্যালো রুপিন?
-হুমম...
-তোমার আশে পাশে ভিনার খোঁজ করো। অথবা কখনো ভিনা তোমার কাছে আসলে,যোগাযোগ করলে,আমাকে জানিয়ো।
-তোমাকে জানানোর কোনো মানেই হয় না সোহেল।তুমি কীভাবে পারলে এমন করতে?শিউলির কথাও মনে পরলো না?
-পাপ করেছি।প্রায়শ্চিত্ত ও করতে চাই।
-জানাবো আমি।
রুপিন ফোন রেখে দিয়ে তোহাকে ডাক দিলো। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে এক কাপ কফি নিয়ে বসে ভাবতে লাগলো পুরো ব্যপারটা।
•
আজ চারদিন হয়ে গেছে যাবির আসছে না ভিনার হোস্টেলে। ফোনে সামান্য কথা বললেও পুরো কথা হয়নি।আসন্ন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ভিনা বিষয়টাকে আমলে নিলো না।কারণ একটা জিনিস খুব ভালোমত জেনে গেছে,আকড়ে ধরে রাখলেও যে যাওয়ার,সে চলে যাবেই।যদিও যাবির চলে যাবে,এমন কোনো ইঙ্গিত ভিনা পায়নি,তবুও নিজেকে ভালোমত তৈরি করে রেখেছে।আর কত ভালোবাসা পাওয়ার জন্য লড়াই করবে?প্রাপ্য ভালোবাসা,অধিকারের ভালোবাসাই যেখানে কপালে জোটেনি,ভাগ্য নির্ভর ভালোবাসার আশা করা সেখানে বোকামি।এসব চিন্তা করতে করতে ডায়রির কথা মনে পড়ে গেলো ভিনার।এত সব প্রয়োজনীয় জিনিসের মাঝে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটাই আনা হয়নি।পাশে রাখা ফোন বাজছে,যাবির ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো
-একটু নিচে নামবা?
-আসছি।
ভিনা গায়ে চাদর জড়িয়ে নিচে নামলো।দেখলো যাবির ঠিক দরজার নিচেই দাঁড়ানো।কেমন জানো অমনোযোগী। ভিনা যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে,খেয়ালই করেনি।
-কী ব্যাপার যাবির?কিছু হয়েছে?
-না.... এমনি।তোমাকে দেখতে আসলাম।
-এমন লাগছে কেন?আমাকে বলো,কী হয়েছে?
-মার শরীর ভালো না।
-কী হয়েছে উনার?
-আর্থাইটিসের ব্যাথা বেড়ে গিয়েছে।
-আর কোনো সমস্যা?
-বাসায় প্রিতি আপু আছে?
-না
-আচ্ছা,একটু পানি খাবো....
-যাবির?কী হয়েছে?
-না কিছু না,তুমি কি পিল নিয়েছিলে?
হটাৎ এই প্রশ্নে অবাক হলো ভিনা,কিছুটা ইতস্তত ও।
-হ্যাঁ,নিয়েছিলাম।
-কখন?
-যেদিন এখানে উঠেছি,তার পরেরদিন রাতে।
-আচ্ছা।
-তুমি কী নিয়ে ভয় পাচ্ছো যাবির?
-কিছু নিয়ে না।এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
-আচ্ছা।আর কিছু?
-ভালোমত পড়াশোনা করো। আমি আবার কালকে আসবো।
-ঠিক আছে।তোমার মার খেয়াল রেখো।
-হুমমম..... আসি।
-সাবধানে যেয়ো।
ভিনা ভালোমত তাকিয়ে দেখছে যাবিরকে।ভেতরে খুব ছটফট লাগছে।
-অন্তত তুমি যেয়ো না যাবির। কোনো অজুহাতেই যেয়ো না।এর চেয়ে বেশি একা হয়ে গেলে,পৃথিবী অর্থহীন হয়ে যাবে আমার কাছে।
.
.
.
চলবে.....................................................