সারারাত তিশা নির্ঘুম কাটালো।এক তো নতুন জায়গা।তার উপর বিয়ের পর এই প্রথম জিসানকে ছাড়া রাতটা জেনো কাটছিলো না তিশার,সারারাত চোখের পানি ও জেনো কোনো বাধ মানলো না।
"
"
"
ভালোবাসাটা কেনো এতো কস্টের হয় বলতে পারবেন জিসান।কেনো এসেছিলেন আমার জীবনে,কেনো আমাকে ভালোবাসার মানে বুঝিয়েছিলেন।দেখুন আপনাকে ভালোবেসে আমি আজ নিশ্য হয়ে গিয়েছি।আপনার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম,আপনার সাথী হয়ে পাশাপাশি হাটতে চেয়েছিলাম।কিন্তু কেনো পারলাম না বলতে পারবেন।কি দোষ ছিলো আমার, কেনো করলেন।ধোকা যদি দেওয়ার কথাই ছিলো তাহলে এতো ভালোবাসা কেনো দিলেন প্রথমে।আজ যে আমার বিষণ কস্ট হচ্ছে,আমি যে পারছিনা আপনাকে ভুলতে,আপনাকে ঘৃণ্যা করতে।আমি কিভাবে থাকবো এখন।বলুন জিসান, বলছেন না কেনো।
"
"
(তিশা জিসানের একটা ছবি বুকে রেখে কথা গুলো বলছে,আর কান্না করছে,কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে তিশার।অসুস্থতার কারনে শরীল ও বিষণ ক্লান্ত হয়ে পরেছে কিন্তু চোখের জল জেনো শেষ হচ্ছে না।)
"
"
সারারাত নির্ঘুম কাটলো তিশার,ফজরের আজানের ধ্বনি শুনে উঠে নামাজ পরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল তিশা।
"
"
চাচার বাড়িটা,দোতালাবিশিষ্ট ।বাড়ির সামনে ছোট একটা বাগান করা,এতে অনেক রকম ফুলগাছ দেখা যাচ্ছে।অনেক যত্ন করে দেখে বুজা যায়।বাম পাশে বিরাট বড় একটা পুকুর। পুকুরের সামনে বসার ব্যবস্হাও আছে।বাড়ির ডান পাশে কিছু বড় বড় গাছপালা।অনেক ধরনের গাছ আছে,কিছু কিছু গাছের নামও জানি না আমি।বাড়ির পেছনে শাকসবজি চাষ করে।বাড়িটা দেখতেও ভালো লাগে।খুব শৌখিনতার আভাস ভেসে উঠছে।
"
"
চাচা উঠানে বসে চা খাচ্ছে।এই বাড়ির সবাই খুব সকাল সকাল উঠে যায়।তাই আমিও নিচে চলে গেলাম।নিচে গিয়ে দেখি চাচী আর রুপা নাস্তা রেডি করছে,আর একজন মহিলা, যতো সম্ভব কাজের লোক হবে,ঘর মুছছে। আমাকে দেখে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমি কোনো ভূত।
আমি তার চাওনীর দিকে তোয়াক্কা না করে পাকের ঘরের দিকে গেলাম।
"
চাচী আমাকে বলো,আমিও কিছু করি।
"
আরে তিশা তুই এতো সকালে কেনো উঠতে গেলি।আর তোর সাহসতো কম না,এসেই পাকের ঘরের দিকে নযর দিলি।তুই ভাবলি কি করে তোকে দিয়ে কাজ করাবো।
"
"
কেনো চাচী,আমি কি তোমার মেয়ে না।
"
"
আমি কি বলছি তুই আমার মেয়ে না।তুই ও আমার মেয়ে। কিন্ত এই মেয়ে এতোদিন পর মার বাসায় এসেছে,আমি কি তাকে দিয়ে কাজ করাতে পারি।আর কোনো কথা না,তুই টেবিলে গিয়ে বস,আমি নাস্তা দিচ্ছি।
"
"
আচ্ছা......।~তিশা।
"
"
আফা ও আফা।রুপক বাবাকি বিইা করছে।(কাজের মহিলাটি)
রুকাইয়া বেগম(রূপকের মা) একটু বিরক্ত চোখে মহিলার দিকে তাকালো,কি আবোলতাবোল বলছিস।
"
"
তাইলে এই ছেমড়িটা কে।
"
"
ও রুপকের চাচার মেয়ে।ঢাকা থেকো আসছে বেড়াতে কাল।কিছুদিন আমাদের সাথেই থাকবে।আর তুই কেনো এতো কথা জিঙ্গেস করছিস।
"
কমুনা,দেখতে তো মাশআল্লাহ কোনও পরী থেকে কম না।রুপকবাবার লগে বেশ মানাইবো।ভাইবা দেখেন আপনে।
"
রুকাইয়া বেগম একটু মুছকি হাসলো।আর চিন্তা করতে লাগলো সব কিছু ঠিক থাকলে আজ তিশা হয়তো আমার ঘরের বউ ই হতো।
"
"
"
এদিক দিয়ে রুপক খাবার টেবিলে এসে দেখে তিশা মনমরা হয়ে বসে আছে।কি রে তিশা তুই এতো সকালে, সারারাত ঘুমাসনি, ঠিক তো।
"
"
ওমা তুমি কি করে জানলে।~তিশা।
"
"
তোর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে, কেমন বাংলা পাঁচ এর মতো করে রেখেছিস।
"
"
তিশা রুপকের কথা শুনে হেসে দিলো।
"
"
এভাবেই হাসবি,তোকে এভাবেই ভালো লাগে।আর শোন আমার কিছু কাজ আছে আমি এসে তোকে মার্কেটে নিয়ে যাবো।তুই রেডি থাকিস।
কেনো!!!!~তিশা।
মেডাম আপনে কি এই মুরব্বিয়ানা কাপড় পরে থাকবেন।আপনাকে মুরব্বি মুরব্বি লাগছে। আমার সাথে যাবেন আর সোপিং করবেন।বুজলেন।
"
রুপক নাস্তা করে তিশাকে বায় বলে চলে গেলো।
"
আমি কিছুক্ষন চাচা আর রুপার সাথে গল্প করলাম, এর পর রুপকদার সাথে সোপিং করতে চলে গেলাম।এভাবে বেশ কিছুদিন ভালোই কাটলো।কিন্তু্ু আসার পর থেকে বমি ও মাথা ব্যাথা, বেশি বেড়ে গেলো।তাই একদিন রুপকদা জোর করেই ডক্টর এর কাছে নিয়ে গেলো।ডক্টর কিছু টেস্ট দিলো।রিপোর্ট পরের দিন পাবো।
"
"
"
পরের দিন রিপোর্ট নিয়ে পুনোরায় ডক্টর এর কাছে গেলাম।ডক্টর হঠাৎ রুপকদা কে জিঙ্গেস করলেন আপনে কি উনার হাসবেন্ড। ডক্টরের এ কথা শোনার জন্য আমি মোটেও রেডি ছিলাম না।
"
"
কিন্তু রুপকদা খুব সুন্দর করে উত্তর দিলো,,,,,না আমি ওর ভাই।আর ওর হাসবেন্ড এখানে নেই,বাংলাদেশর বাহিরে আছে। আপনে আমাকে বলতে পারেন।বিনা সংকোচন করে।
"
"
একচুয়েলি উনি পেগনেন্ট। তিন মাসের উপরে চলছে।
কথাটা শুনে রুপকদা তো অনেক খুশি।কিন্তু আমি...
আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে কথাটা শুনে।কতো স্বপ্ন ছিলো জিসানের আমাদের সন্তান নিয়ে।কিন্তু আজ যখন ওর স্বপ্ন পুরোন হচ্ছে কিন্তু ওই আমার সাথে নেই।ও তো জানেই না আমার পেগনেন্সির কথা।
"
"
"
দেখুন আপনারা একটু শান্ত হোন।আমি সাজেশন করবো আপনে বাচ্চাটা এবোশন করে ফেলেদিন।
"
"
"ডক্টরের কথায় আমার মাথা গরম হয়ে গেছে।কি বলছেন এসব।কি করে বলতে পারলেন আপনে এসব।
"
"
তিশা আগে শান্ত হো,এমন সময় তোর এতো উত্তেজিত হওয়া ঠিক না।তুই বস আগে,এই নে পানি খা।আমি
ডক্টরের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলাম সমস্যা কি।~রুপকদা।
"
"
"
দেখুন পেসেন্ট এর শরীল খুব দূর্বল,দিন দিন আরো দূর্বলতা বাড়বে,রক্ত শূন্যতার অভাব।উনার পেগনেন্সিতে অনেকটা রিস্ক আছে।হয়তো পরে মা বাচ্চার মধ্যে একজন বাঁচবে।তাই ডক্টর হিসেবে আমার প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে পেসেন্ট কে আগে সেভ করা।
"
"
আমি তার কথা গুলো শান্ত হয়ে শুনলাম,আপু হায়াতের মালিক আল্লাহ, আল্লাহ চাইলে হয়তো আমি আর আমার সন্তান দুজনেই ভালো থাকবো।আর আল্লাহ না চাইলে আপনে আর আমি কিবা করবো বলুন।~তিশা।
"
"
তা ঠিক বলছো।একজন ডক্টর হিসেবে আমার জা বলার আমি বলে দিলাম।তোমাকে এখন নিজের অনেক খেয়াল রাখতে হবে।মি: রুপক আপনে যেহেতু উনার গার্ডিয়ান হিসেবে এসেছেন।তাই আপনে পেসেন্ট এর খেয়াল রাখবেন,কোন প্রকার টেনশন করতে দিবেন না।আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি টাইম মতো খাওয়াবেন।সামনের মাসে আবার আসবেন।
এর পর তিশা ও রুপক বের হয়ে আসলো।আসার সময় রুপক তিশাকে,,,তিশা আবার একটু ভাব,ডক্টর এর কথা।
"
"
না ভাইয়া,আর কোনো ভাবাভাবি নাই,আল্লাহ কপালে যা লিখছে তাই হবে।এসব নিয়ে নিজে টেনশন করো না,আর আমাকেও করতে বলো না।
"
"
আর জিসান, ওকে কি বলবি।~রুপকদা।
"
"
আপাতোত কিছু বলা যাবে না।তুমি জানো না ভাইয়া ও যদি জানে এ বাচ্চার কারনে আমার জীবনের ঝুঁকি আছে, তাহলে এই বাচ্চাটাকে ও আসতেই দিবে না।আমি ওকে এতোটুকু তো জানি।
"
"
এতোই যদি ও তোকে ভালোবাসে,তাহলে ছেড়ে চলো আসছিস কেনো।কি এমন হলো,এতো বড় ডিশিশন নিয়েছিস।
"
"
বলবো ভাইয়া সব বলবো।একটু সময় দেও আমাকে প্লিস।
"
"
ঠিক আছে তোর যখন মন চায় বলিস।আমি অপেক্ষা করবো।এখন চল বাসায় যাওয়া যাক।তার আগে সবার জন্য মিস্টি নিয়ে যাই কি বলিস।
"
"
হা হা চলো।~তিশা।
"
"
তিশার পেগনেন্সির খবর শুনে রুপকের পরিবার অনেক খুশি।সবাই তিশাকে অনেক যত্নে রাখা শুরু করে দিলো।তিশা সেদিনই নিলুকে ফোন করে পেগনেন্সির কথাটা বলে দিয়েছিলো।
"
"
তিশার দিনগুলো ভালোই চলছিলো।রুপকদা তিশার অনেক খেয়াল রাখছিলো।ওর চাওয়ার আগেই সব কিছু এনে দেওয়া হতো।সারাদিন ওকে কোনও না কোন ভাবে ব্যস্ত করে রাখতো।যাতে ও কোন টেনশন না করে।কিন্তু রাতটা তিশার কাছে অভিশাপ লাগতো।মনটা জিসানকে স্মরন করে বার বার ছুটে জেতে চাইতো।ফোন হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো কিন্তু সাহস হতো না জিসানকে ফোন দেওয়ার।
"
"
আচ্ছা জিসান কি আমাকে এখনো স্মরন করে.....
"
"
আমার নির্ঘুম রাত কাটে তোমাকে ভালোবেসে
তুমি কি এখনো ভালোবাসবে আমার কাছে এসে।
আমি যতোটা স্মরন করি তোমাকে,
তুমিও কি এতোটা ভালোবাসো এখনো আমাকে।
আজও তোমার পথ চেয়ে থাকি,
তোমাকে খুঁজে কেনো আমার এই দুটো আঁখি।
এভাবে তিনমাস কেটে যায়।সবই ভালো চলছিলো কিন্তু গ্রামের মানুষের কটুক্তি তিশার জীবনকে আবারও দূর্ভিসহ করে তুলে।রুপকের তিশার প্রতি এতো কেয়ার নেয়াটা গ্রামের মানুষের চোখে পরে।যার ফলে তিশাকে অনেকে অনেক কথাই বলে,কেউ কেউ বলে কারো সাথে আকামকুমাম করে পেট বাজিয়ে চাচার বাসায় মুখ লুকিয়েছি, আবার কেউ কেউ তো এই বাচ্চা রুপকদার বলেও দাবি করে।কারন সে আমাকে ডক্টরের কাছে নেয়া হতে শুরু করে আমার পছন্দ অপছন্দ সব খেয়াল রাখছে।সকালে আমাকে নিয়ে কিছুটা হাটায়,এমনকি কেউ কেউ এসে দেখেছে রুপকদা আমার পায়ের পাতা মালিশ করছে।এসময় আমার পায়ের পাতা খুব জ্বালাপুরা করত,রাতে ঘুমাতেও কস্ট হতো।তাই রুপকদা প্রতিদিনই আমার পায়ের পাতা মালিশ করে দিতো।আমি অনেক নিশেধ করতাম কিন্তু শুনতো না।মাঝে মধ্যে খারাপ লাগতো,কারন আমার কারনে তাকেও অনেক কুকথা শুনতে হতো।রুপকদা আমি চলে যাই এখান থেকে।
"
আমি চলে গেলে তোমাকেও এসব মানুষদের আর কথা শুনতে হবে না।
"
"
কি বললি তুই,আরেকবার বলতো।আমি তোকো কখনো কিছু বলেছি।তাহলে তুই কেনো এসব কথা বলছিস।দেখ যারা বলার তারা বলবেই,তুই থাকলেও বলবে,তুই চলে গেলেও বলবে।একদিন এই সব লোকের মুখে তালা পরবে, তুই শুধু ধৈর্য ধর।
"
"
রুপকদা কথা শুনলে আমার জিসানের কথা মনে পরে যায়।জিসানও থাকলে সেও এসব কথা বলতো।কতো না সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো জিসানের সাথে।আমার প্রতিটা না বলা কথা সে জেনে যেতো।আজও মনে পরে আমার জজন্মদিনের রাতে কেককেটে দুজনেই ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম।হালকা হালকা মৃদ বাতাসে পরিবেশটা জেনো আরো রোমান্টিক হয়ে পরেছে।জিসান আমাকো পেছন দিয়ে জরিয়ে আমার কাদে তার থুতনি রেখে আমার সাথে চাঁদকে দেখছিলো।
"
"
তিশাশশশা....
"
"
হুমমমমম। ~তিশা।
"
"
তোর কি চাই আর।
"
"
কিছু না। এতো কিছুতো করলেন এতেই আমি অনেক খুশি।
"
"
তাইইই.....। কিন্তুু আমার একটা জিনিস চাই তোর কাছ থেকে।সে আমার ঘাড়ে একটা ডিপ কিস করে।তার স্পর্শে আমার শরীলে কম্পন সৃষ্টি হয়।
"
"
কি চান,আমি পারলে দিয়ে দেবো।বলুন।
"
"
আমার যে একটা ছোট তিশা চাই।ঠিক তোর মতো।জিসান কথাটা আমার কানের কাছে এসে বলে।
জিসান এধরনের আবদার করবে আমি আসলেই বুজতে পারিনি।আমার বিষন লজ্জা লাগছিলো।আমি মাথানিচু করে হা বলে দাঁড়িয়ে ছিলাম।আর উনি আমার লজ্জা দেখে সেদিন আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিলো।তার পর আমরা সেদিনও একে অপরের মাঝে ডুবে গিয়েছিলাম।
"
"
আমার মাঝে অলরেডি জিসানের একটি অংশ বেড়ে উঠছিলো, তা না আমি জানতাম,নাহি জিসান।জানলে হয়তো এভাবে আলাদা হতাম না দুজন।কিন্তুু দুজনে একসাথে স্বপ্ন বুনেছিলাম সেদিন।
"
"
এর পরই সব আস্তে আস্তে এলোমেলো হয়ে গেলো।মাঝে মাঝে মনে হয় কেনো সেদিন সেই পার্টিতে গেলাম।
.
.
.
চলবে..................................................