ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪২ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


আজ আদি তার পুরো পরিবার নিয়ে আসছে,নিশিকে দেখতে।আদিকে জিসানের পরিবারের সবাই খুব পছন্দ করেছে।নিশিকেও আদির পরিবারের ভালো লেগেছে।তাদের সবার সম্মতিতে সামনের মাসেই বিয়ের ডেট ফ্রিক্সড করা হলো।সবাই খুশি।আদি আর নিশিকে পাশাপাশি বসালো,দুজনকে বেশ মানিয়েছ। আদির মা নিশিকে আংটি,আর হাতে দুইজোড়া চুড়ি পড়িয়ে দিলো ডায়মন্ড এর।পরিবারের সবাই খুব খুশি বাড়ীর মেয়ের বিয়ে বলে কথা।আদির পরিবার সব কিছু ঠিকঠাক করে রাতে সবাই ডিনার করে চলে যায়।বিয়ে যেহুতু এক মাস পর, তাই বিয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পরে জিসান ও তাওহিদ ভাইয়ের উপর।
"
"
"
"
বাড়ীর একমাত্র মেয়ের বিয়ে,কোন কিছুতে কমতি রাখতে চাইছে না জিসান ও তাওহিদ ভাইয়া।নিশির জন্য সোপিং হতে শুরু করে কোন কিছুতে ত্রুটি নেই।পুরো বাড়ীতে এক উৎসবের আমেজ এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।মেহমানদের বিয়ের দাওয়াত দেয়া শেষ।বিয়ের সব প্রস্তুতিও প্রায় শেষ।বিয়ের এ সপ্তাহ আগে থেকেই মেহমান আসা শুরু হয়ে গিয়েছে।পুরো বাড়ী মেহমান দিয়ে গিজগিজ করছে।এতো মানুষের মাঝেও জিসান কিছুক্ষন পর পর আমাকে খুঁজে,মনে হয় আমি কোন ছোট বাচ্চা,মেলায় ঘুড়তে এসে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাবো।এই নিয়ে বড় ছোট সবাই হাসাহাসি করা শুরু করে দিয়েছে ইতি মধ্যে।আমিতো রাগে তার দিকে তাকালে,সে ডোন্ট কেয়ার একটা লুক দেয়।আশ্চর্য!! এই লোকটার পাগলামি যে আমাকে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হয় সে কি বুঝে না।।
"
"
"
"
আজ নিশির গায়ে হলুদ,সবাই রেডি হয়ে নিচে চলে গেছে,অথচ আমি এখনো রেডি হতে পারিনি।ঈশান আজকাল খুব বেশি দুষ্ট হয়ে গেছে,একদম বাপের মতো।ওর কারনে আমিও রেডি হতে পারিনি।ওকে আগে রেডি করিয়ে ওর ফুফুর কাছে দিয়ে আসলাম।এখন যদি একটু শান্তি মতো রেডি হতে পারি।না তা কি আমার কপালে আছে।
রুমে এসে দেখি জিসান ওয়াসরুম থেকে চিল্লাচ্ছে।তিশা এই তিশা করে....।উফফ উনার আবার কি চাই।কি হলো এমন ষাঁড়ের মতো চেচামেচি করছেন কেনো।

=কি বললি.......তুই

না কিছুনা,আমি বলছিলাম কি,কিছু লাগবে।

=হুমমম,তোয়ালটা দে,আমি নিতে ভুলে গেছি।

উফফ,এই লোকটাও আমাকে শান্তি দিবে না,আমি তোয়াল টা নিয়ে দাঁড়ালাম, এই নিন।উনি তোয়াল সহ আমাকে ও টান দিলো, আমি নিজেকে সামলাতে না পেড়ে জিসানের উপর পরি।আর নিজেও ঝরনার পানিতে কাক ভিজা হয়ে পরি।এটা কি হলো।

জিসান আমার কোমড় জরিয়ে ধরলো।ছাড়ুন আমায়,আমাকে কেনো টেনে আনলেন।

=রোমান্স করবো বলে,জিসান আমার ঘাড়ে কিস করতে থাকলো।

এটা কি রোমান্স করার জায়গা।

=কি করবো বল,সারা দিন ব্যস্ততায় চলে যায়।আর রাতে ক্লান্তে ঘুম এসে পরে।তাই চিন্তা করলাম শাওয়ার নেওয়ার সময় রোমান্স করলে কেমন হয় বল।

আমার এতো শখ নেই,এমনেই আপনার ছেলের জন্য,রেডি হতে পারিনি।আর এখন আবার আপনে,আমি সাজবো কখন, রেডি হবো কখন।

=এমনেই তোকে দেখলে, চোখ সরাতে পারিনা,তার উপর আজ এতো বেশি সাজলে আমিতো ঘায়েল হয়ে যাবো।তখন কিন্তু আবার আমাকে আটকাতে পারবি না।

এই ছাড়েন আমায়,আপনে দিনদিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছেন।একবাচ্চার বাবা হয়েও এতো রোমান্স কোথা থেকে আসে।

=মাত্র একটা বাচ্চা, আমার তো হাফ ডজন বাচ্চার প্লানিং চলছে,কল্পনা কর দুটো বেবি তোর কলে,আর একটা তোর আঁচল ধরে,মা মা বলে চিল্লাচ্ছে।আর বাকি গুলোরে আমি সামলাবো নি।

জিসান এর কথা শুনে আমার চোখ কপালে।লোকটা কি...আমার তো মাঝে মধ্যে মন চায় লোকটার মাথায় একটা বারি মারি।মাথায় কিছু সমস্যা আছে মনে হয়।হইছে থাক,আমার এ ধরনের কল্পনা স্বপ্নেও আসে না।তাই আপনার কল্পনার গাড়ী এখানেই থামান।

=জিসান আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে, যাই বলস না কেনো।আমার কিন্তু একটা ছোট তিশা চাই,আর যে পর্যন্ত ছোট্ট একটা তিশা না পাই,আমার প্রসেসিং থামবে না।

আল্লার এই কোন পাগলের পাল্লায় আমায় ফালাইলা,উফফ,এবার বের হোন আপনে।নিচে সব মেহমান এসে পরছে... আর উনি ওয়াসরুম এ রোমান্স করছে,,,,এই জানতো আপনে এখন।আমি ধাক্কা দিয়ে জিসানকে সরিয়ে দিলাম।

=এখন ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু পরে এর উসুল উঠাবো।মনে রাখিস।
"
'
"
"
জিসান চলে গেলো, আমি তারাতারি বের হয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম।হলুদের আয়োজন বাড়ীর সামনে খোলা জায়গায় করা হয়েছে।খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।নিশিকেও খুব সুন্দর লাগছে আজ।আমার বাড়ী থেকেও রায়হান ভাই ও,বাবা মা এসেছে।কিছুক্ষন পর গায়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেলো।আমাকে কোন কাজ দেওয়া হয়নি,কারন ঈশানকে সামলাতে হয় বলে।আমার শ্বাসুড়ীর নির্দেশ আমি জাতে নিজেকে একটু দেখে রাখি,সাথে ঈশানকেও।তা না হলে তার ছেলেকে সে সামলাতে পারবে না।আআআ কি ভালোবাসা।তাই তারা আমাকে কোনও কাজই করতে দেয়নি।এক এক করে সবাই গায়ে হলুদ দিয়ে দিলো নিশিকে।এর পর কিছু নাচ গানের আয়োজন করা হলো।রাত অনেক হয়ে গিয়েছে।ঈশানেরও ঘুমের সময় হয়ে গিয়েছে।আমি জিসানকে খুঁজতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর পেয়েও গেলাম।কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।কিছুক্ষন আগেও তো খুব খুশি ছিলো।এখন কি হলো।আমি সামনে যেতেই ফোনটা রেখে দিলো।

কি হয়েছে,কোনও সমস্যা।

=জিসান আমার দিকে একটা মুসকি হেসে বললো।কিছু না।তুই এখানে কেনো।

আমি ভেতরে চলে যাচ্ছি,ঈশান খুব ঝালাচ্ছে, মনে হয় ঘুমাবে।আপনে ঠিক আছেন তো।

=হুমমম,সব ঠিক আছে।তুই ঈশানকে নিয়ে চলে যা।ভেতরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তুইও ঘুমিয়ে যাস।আমার লেট হবে আজ।

আমি চলে গেলাম,কিন্তুু আমার মন বলছে কিছু একটা ঘটতে চলছে।পিছে ফিরে দেখি জিসান আবার ফোনে কথা বলছে,আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
"
"
"
"
ঈশানকে নিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পরেছিলাম।গায়ে হলুদের পর জিসান কখন আসছে আমি বুঝতেও পারিনি।ফজরের আজানে আমার ঘুম ভাঙ্গে।উঠে দেখি জিসান নেই।আমার খুব ভয় হলো।দেরি হবে আসতে তা বলেছে।কিন্তু এখন দেখি উনি সারা রাতে আসেনি।আমি উঠে আগে নামাযটা পরে নিলাম।এর পর বাহির হয়ে সারা বাড়ী জিসানকে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু্ু জিসান বাসায় নেই।তাই দেরি না করে উনাকে ফোন দিলাম।কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে।কেনো জানি আমার কিছু ভালো লাগছে না।মনটা খুব অশান্ত হয়ে পরেছে।আমি রায়হান ভাইকে কল করলাম।ভাইয়া কল ধরলো।আমি কিছু বলার আগেই ভাইয়া বলা শুরু করে দিলো।

হ্যালো তিশা।জিসান আমার সাথে আছে তুই চিন্তা করিস না।আমরা একটা কাজে আসছি।জিসানের ফোনে চার্জ নেই।ওকে....এখন রাখ।পরে কথা বলবো।

আমি কিছুটা টেনশন ফ্রি হলাম।কিন্তু মন থেকে কেনো জানি ভয়টা দূর হচ্ছে না কোনও মতে।
"
"
"
"
আমরা সবাই বিয়ের হলরুমে উপস্থিত হয়েছি।কিন্তু জিসান আর রায়হান ভাই এখনো আসেনি।মেহমানও এক এক করে এসে পরেছে।নিশিকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।প্রিয় মানুষটির সাথে বিয়ে হবে বলে নিশিকেও খুব খুশি লাগছে।এদিক দিয়ে তাওহিদ ভাই বর পক্ষকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু আশ্চর্য কেউ ফোন ধরছেনা।কিছুক্ষন পর জিসান ও রায়হান ভাই কে দেখতে পেলাম।তাদের গায়ে এখনো কাল রাতের হলুদের পোষাক।আর চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে।
"
"
"
"
পুরো পরিবার রেস্ট রুমে।বর পক্ষ আসবে না।জিসান নিজে বিয়ে ভেঙ্গে আসছে।সবাই বিষ্ময় হয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে,কারন জানার জন্য।নিশির চোখের পানি মনে হয় কোনও বাধ মানছে না।জিসান নিশির কাছে গিয়ে হাটুভাজ করে বসে নিশির হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলো।

কাল রাত....বাহির থেকে নিলয় কল করেছিলো।নিলয় এতোদিন জানতো না,আদির সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমি ওদের বাসায় কার্ড দিয়েছিলাম।কিন্তু নিলয়ে বাংলাদেশ এর বাহিরে ছিলো বলে এ কয়দিন ওর সাথে কোনও কথা হয়নি।কিন্তু কাল ও ফোন করে যা বললো।তা শুনার পর আমার নিজের প্রতিই খুব রাগ হয়েছিলো।কেনো আমি আরো ভালো করে আদির খোঁজ নিলাম না।আদির কোন ও খারাপ রেকর্ড এখানে পাইনি কারন আদি পাঁচ বছর ধরে বাহিরে ছিলো।কিন্তু ওখানে আদির অতীত খুব জঘন্য ছিলো।আর ওর অতীত তোর বর্তমানকে ধ্বংস করে দিতো।তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে হয়েছে।
"
"
"
বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিস, কেনো?এতো মেহমান যে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তাদের আমি কি জবাব দেবো।আমার এতো বছরের মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলি।কেনো করলি, আমাদের সাথে কিছু না জিঙ্গেস করে। কারনটা কি,বল....তৌফিক। 
"
"
"
আদি লিভিং রিলেশন এ ছিলো এতো বছর, তা আবার একজনের সাথে নয়।অনেক মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক ছিলো।এদের মধ্যে একটা মেয়ে পেগনেন্ট হয়ে পরেছে।যখন আদি জানতে পারে,ও ওখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ এ এসে পরে।আদি মনে করেছে এসব কিছু এখানে কেউ কোনদিন জানতে পারবে না।আর এখানে আসার পর ওর বাবা মা বিয়ের জন্য জোরাজোরি করছিলো বলে ও নিশিকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।তা না হলে ও নিশিকে কখনো বিয়ে করতোই না।আর এসব ও নিজে স্বীকার করেছে।পুলিশের কাছে।কারন কাল রাত নিলয় ওই মেয়েটাকে নিয়ে বাংলাদেশ এ আসে প্রমাণ সহ।সারারাত আমরা এয়ারপোর্ট এ অপেক্ষা করতে থাকি,নিলয় সেই মেয়েটাকে নিয়ে এলে,আমরা থানায় যাই।মেয়েটা ওখানে সব প্রমান দেয়।মেয়েটার নাম এলিনা।এলিনা সব খুলে বলে।এর পর পুলিশ আদিকে গ্রেফতার করে জিঙ্গেসা করলে ও সব স্বীকার করে।এবার বলো বাবা এর পরও কি এই ছেলের সাথে শুধু মান সম্মান এর ভয়ে বিয়ে দিয়ে দেবো।চোখের সামনে নিজের বোনের জীবন কিভাবে নষ্ট হতে দিবো।
"
"
সবাই চুপ।কারো মুখে কোনও কথা নেই।নিশিও কেমন জানি চুপ হয়ে গেলো।চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
"
"
এখন কি করবো বাবা।মেহমানদের কিছু একটা বলতে তো হবে।~তানজিলা। 
"
"
সবাইকে বলে দেও বউ মা এই বিয়ে হবে না।সবাই কে চলে জেতে বলো।কথাটা বলতে গিয়ে আমার শ্বসুড়ের চোখে জল এসে পড়লো।

সবাই কিছুক্ষন নিরব হয়ে গেলো।
.
.
.
চলবে........................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন