অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৭১ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


ভিনা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ভোর হতে আর বেশি নেই।পুরো রাত বসে এই কয় মাসে হয়ে যাওয়া সব ঘটনা এক এক করে মনে করলো।প্রতিদিন হিসাব মেলানোর চেষ্টা করে।এই নাতিদীর্ঘ জীবনে কাকে এত কষ্ট দিয়েছে যে পাপের শাস্তি পাচ্ছে।আর যদি এটা পরীক্ষা হয়েই থাকে,তাহলে এত কঠিন কেন?ভালো কিছুর জন্য?কিন্তু সে ভালো দেখতে হলে তো বেঁচে থাকতে হবে।বেঁচে থাকাই তো এখন দায় হয়ে গেছে।যেখানে সামান্য সন্দেহের বশে সোহেল ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে অবিশ্বাস করে,সেখানে এই প্রেগন্যান্সির খবরে কী প্রতিক্রিয়া হবে,ভেবেই ভিনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।এখন সাড়ে চার মাস,এ্যবোরশনের সুযোগ নেই।যেভাবেই হোক,এই ছোট মানুষ টা পৃথিবীতে আসবে।পৃথিবীতে আসার পরে কী হবে,সেটাই মূল ভাবনার বিষয়। 

এত অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই বই নিয়ে বসলো ভিনা।আর একটামাত্র পরীক্ষা বাকী।এরপরই জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিবে। আপাতত দুইদিন এসব নিয়ে ভাবতেই চাচ্ছে না।ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে।কত পরিকল্পনা ছিলো জীবন নিয়ে।ঠিকমতো পড়াশোনা করে একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবে,এরপর এই জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে নিজেকে। নিজেকে ঠিকমতো গুছিয়ে নিয়েই,যাবিরের হাত শক্ত করে ধরবে। যাবিরের এক রুমে দুজনের সংসার হবে।বই খাতার ছড়াছড়ি থাকবে।পড়াশোনা,টিউশনি শেষ করে বিকেলে চা খাবে কলোনির সেই টং এ।রাতে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এক বালিশে ঘুমাবে।কী এমন স্বপ্ন ছিলো যেটা পূরণ হলো না।এতদিন এই স্বপ্নকে আগলে রেখেই তো বেঁচে ছিলো।বেঁচে থাকার অবলম্বন কেড়ে নিয়ে মানুষকে বেঁচে থাকতে কেন বলা হয়?এত প্রশ্ন,এত আক্ষেপ মাঝে মাঝে কমে যায় নিজের বাচ্চার দিকে তাকালে।জন্মের আগেই হারালো বাবাকে।জন্মের পর ও কেউ মেনে নিবে না।কোনোকিছু না করেই পৃথিবীতে ওর নামের আগে ট্যাগ লাগবে নাজায়েজ এর।কী নির্মম,তাইনা?আচ্ছা,ও কি আসলেও নিজের বাচ্চাকে নিজের রাখতে পারবে?কেই বা আছে ওর এই বাচ্চা ছাড়া,একেও যদি বুক থেকে কেড়ে নেয়া হয়,তাহলে বেঁচে থাকার আদৌ কোনো মানে থাকবে?চোখে পানি নিয়ে ভাবনার জগতে ডুবে থাকে ভিনা। এ পানিও শুকিয়ে গেছে,গড়িয়ে পরে না।


আজকে শেষ পরীক্ষা।বোর্ড পরীক্ষার চেয়েও বড়,আজকে ভিনা সিদ্ধান্ত নিবে,এরপর কী করবে।পরীক্ষার হলে বসে আশে পাশে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।এদের সবাই ভর্তি যুদ্ধে নামবে এরপর।কারো আবার বিয়ে হবে,কেউ বিদেশ পাড়ি দিবে।সবার চোখ ভর্তি এক ঝাক স্বপ্ন।দুশ্চিন্তা আছে,হতাশা নেই।কারোই ভাবতে হচ্ছে না কোথায় থাকবে,কার সাথে,অন্তত একজন বাচ্চা নিয়ে।কত সাধারণ ওদের জীবন,এমন সাধারণ জীবনই তো চেয়েছিলো।কতদিন হয়ে গেছে মন খুলে হাসা হয় না।হাসিও যে এমন দুর্লভ হবে জীবনে,কেই বা জানত।পরীক্ষার প্রতিদিনই আরশি সময় দিয়েছে ভিনাকে।সময় বলতে ঘন্টা না,পরীক্ষা শেষে শুধু একটু কথা বলেছে,খোঁজ নিয়েছে,মন খারাপের কারণ জিঘেস করেছে।কখনো যাওয়ার আগে জড়িয়ে ধরেছে,কখনো এমনিই চলে গেছে।এটাই অনেক এখন ভিনার জন্য।আজকের পর এটারও সৌভাগ্য হবে না।ভিনা চাচ্ছে সব শেষ হয়ে যাক,পুড়ে যাক,ছাই হয়ে যাক।এরপর নতুন কিছু শুরু হোক।যার শুরুটা হবে শুভ্র,স্বপ্নময়।আবার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে,আবার জীবন নিয়ে পরিকল্পনা করতে ইচ্ছে করে।খুব ইচ্ছে করে।

পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।পেন্সিল ব্যাগ গুছিয়ে ভিনা চুপচাপ বসে আছে।আজকে সবার সাথেই দেখা করে যাবে।এদের সাথে হয়ত আর কখনোই দেখা হবে না।বছর খানেক পর কে কোথায় থাকবে,কে জানে।কিছুক্ষণ পরেই কথা আসলো। ভিনার হাত ধরে রুমের বাইরের করিডোরে নিয়ে গেলো।ওয়াসিম,সাদ,আবির সবাই দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।

-পরীক্ষা শেষ হলো তাহলে! (সাদ)

-না,হয় নাই,তোর আরো দেয়ার শখ থাকলে দে।(আবির)

-তোরাও না পাগল।আসল পরীক্ষা তো সামনে ওৎ পেতে আছে।ভর্তি পরীক্ষা। (কথা)

-খুব ভাব নিচ্ছিস মনে হয়।ঠিকি তো দুইদিন পর একটা পাব্লিক মেডিকেলে সাদা ভূত হয়ে ঘুরবি।(আবির)

-ডাক্তারি মনে হয় খুব সোজা।পরীক্ষা দিলাম আর হয়ে গেলো,তাইনা?(কথা)

-তুই চান্স না পেলে কেউ পাবে না।লিখে রাখ।(সাদ)

-ওয়াসিম কই?(আবির)

-এই ছেলের কী যে হলো!ইদানিং কেমন উদাসীন থাকে।প্রেম ট্রেম করে নাকি?কিছু তো বলে না।(কথা)

-ও করবে প্রেম!ওর মা ওকে ছেঁচে না ফেলবে।(সাদ)

-সিরিয়াসলি?আন্টি এত স্ট্রিক্ট?(কথা)

-জ্বি ম্যাডাম।(আবির)

-ভিনার আবার কী হয়েছে,কথা বলিস না কেন?(কথা)

-কথাই সব কথা বলে ফেলছে,ভিনা কী কথা বলবে?(সাদ)

-চুপ থাক তুই,বান্দর!(কথা)

ভিনা মলিন হাসি দিলো,আরশিকে খুঁজছে ও।আজকেই কি চলে যেতে হলো আরশির?অস্থিরতা নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো করিডোরের শেষ মাথায় এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।ইশারায় বললো না ডাক দিতে।ভিনা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।কিছুক্ষণ পরে ওয়াসিম আসলো। দেখে মনে হলো দৌড়ে এসেছে।

-কীরে,কই ছিলি তুই?(কথা)

-আরশিকে তোরা দেখেছিস কেউ?(ওয়াসিম)

-না রে।ও থাকেই বা কখন আমাদের সাথে?(সাদ)

-চলে গেলো না বলে?(ওয়াসিম)

-কিছু হবে না।ঠিকি পাবি ওকে।(ভিনা)

বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই চলে গেলো।যাওয়ার আগে ইমোশনাল একটা পরিবেশ তৈরি হলো।কথা ভিনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।সাদ,ওয়াসিম,আবির জোর দিয়ে বললো সবার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য।ভিনা মাথা নাড়িয়ে গেলো শুধু।বলার যে কিছুই নেই।

সবাই চলে যাওয়ার পরে আরশি আসলো।ভিনার পাশে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।আরশিই কথা শুরু করলো।

-ওদের মনে কত রং,তাইনা?

-হুমম..

-জানিস,এখন মানুষের এত আনন্দ আমার দেখতে ভালো লাগে না।হিংসা হয় অনেক।

-হিংসা না,কারণ তুই চাস না ওদের ক্ষতি হোক। কিন্তু নিজের জীবনের প্রতি আরো বিতৃষ্ণা জাগে।

-হায়রে জীবন!বাদ দে এসব।

-জীবনকে যদি সত্যিই বাদ দেয়া যেত,কত ভালো হিত না আরশি?

আরশি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।ভিনার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বললো-

-ভিনা....তুই কি প্রেগন্যান্ট? 

ভিনা পুরো শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো-

-বুঝা যায়?পেট কি বড় লাগছে?

-তার মানে আমার ধারণা ঠিক।ঐযে একটা ছেলে প্রায়ই আসত।একটু লম্বা করে,ফর্সা করে,ওরই বাচ্চা না এটা?

ভিনা মাথা নামিয়ে উত্তর দিলো-

-হ্যাঁ 

-ছেড়ে চলে গেছে?

ভিনা ঠোঁট চেপে ধরলো।অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখে উত্তর দিলো,

-হ্যাঁ রে।চলে গেছে।

-কয় মাস?

-সাড়ে চার মাস।

আরশি চমকে উঠলো।

-সাড়ে চার মাস!এখন তো তাহলে...

-না রে।আমি এই বাচ্চা রাখবো।এখন ও ছাড়া আমার কেউই নেই আপন।

-অনেক বড় সিদ্ধান্ত এটা।

-আমি জানি।যত সমস্যাই হোক,সেগুলোকে মানুষ খুন করার জাস্টিফিকেশন হিসেবে নেয়া যায় না।

-বুকের পাটা আছে তোর।

-পাপ যখন করেছিই,প্রায়শ্চিত্ত ও করবো।

-পাপের প্রায়শ্চিত্ত মেয়েদেরই করতে হয়।দুনিয়া এমনই।

-মেয়ে তো আর নেই,মা হচ্ছি।

আরশি ভিনার দিকে তাকালো।হটাৎ করে চিনতে পারছে না ভিনাকে।কে বলবে,কয়মাস আগেও কলেজ বাঙ্ক দিয়ে এ মেয়ের সাথে ঘুরেছে।হাসতেই ভুলে গেছে।আরশিকে চুপ দেখে ভিনা কথা শুরু করলো।

-তুই বুঝলি কীভাবে আমি প্রেগন্যান্ট?

-প্রথম দিনই বুঝছি যখন তোকে জড়িয়ে ধরেছি। তুই আগের মত শক্ত করে ধরিস নাই।এরপর যতবারই এমন করেছি,দেখলাম পেটের দিক তুই সবসময় আলগা করে রাখছিস। এছাড়াও তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,কিছু হয়েছে।

-আমার কী হবে আরশি?আমার কারণে আমার বাচ্চা কষ্ট পাবে। 

-তুই যে এই বাচ্চা দুনিয়ায় আনবি,এটাই অনেক বেশি।কারণ বেশিরভাগ 'মা' বাচ্চার কষ্ট হবে ভাবা তো দূর,মেরে ফেলে দেয়।একবার যখন এত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিস,দেখবি,জীবন তোকে আর ভাঙতে পারবে না।

-কী হবে ওর? আমি কি পারবো ওকে নিজের কাছে রাখতে?

-তুই তোর দায়িত্ব পালন করে ফেলেছিস।বাকীটা উপর ওয়ালাই দেখবে,সে এতটাও নির্মম না।দেখবি তোর বাচ্চা তোর থেকে হাজার গুণে ভালো জীবন পাবে।বিশ্বাস রাখ।

-কার উপরে রাখবো?

-বললাম না,উপর ওয়ালার হাতে ছেড়ে দে।বিশ্বাস ভাঙা মানুষের স্বভাব,তার না।যদি সেদিন আমি এই কথাটা বুঝতাম,তাহলে আমার বাচ্চাটাও থাকত।

-ম...মানে?

-আমার বিয়ে হয়েছিলো,মাহতাবের সাথে। 

-মাহতাব কে?

-তুই জানিস কে।ওয়াসিম নিশ্চয়ই বলেছে?

-হ্যাঁ... নাম জানতাম না।

-ওয়াসিম ও জানে না। ও এটাও জানে না আমার বিয়ে হয়েছিলো,শুধু তাই না,আমি প্রেগন্যান্ট ও ছিলাম।এর জন্যই আমি সবসময় দূরে থাকি।ওর এটা কম বয়সের আবেগ ছাড়া কিছুই না।

-ওয়াসিম এমন না আরশি।

-যেমনই হোক,আমার ভাবার বিষয় না।তোর মনে হতে পারে তুই অনেক কষ্টে আছিস,কিন্তু একদিন সব ঠিক হবে। আমার বেলায় মাহতাবের মা জোর করে আমার এ্যবোরশন করিয়েছিলো।অনেক ভুগতে হয়েছে,এখনো হচ্ছে।আর সারাজীবনের যে অপরাধবোধে ভুগতে হবে,সেটার যন্ত্রণা তুই কখনো টের পাবি না।আমার প্রায়শ্চিত্তের ও সুযোগ নেই।

-মাহতাবের মা!তুই কী বলছিস এসব?

-হ্যাঁ। আমাদের সম্পর্ক অনেক আগে থেকে ছিলো।বিয়ে হয়েছিলো পারিবারিক ভাবেই।একদম ছোট অনুষ্ঠান করে কাবিন হয়েছিলো।কথা ছিলো পরে বড় অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিবে।এরপরে বাবা মারা গেলো।তখন আমি প্রেগন্যান্ট। 

-তারপর?

-তারপর কী।মাহতাবের মা ডাক্তার দেখানোর কথা বলে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।এ্যবোরশন করালো।এটা নিয়ে মাহতাবের কাছে আমাকে খারাপ বানালো,ডিভোর্স দিয়ে দিলো।শেষ। খুব ছোট গল্প।

-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!

-আমার বয়স খুব কম না।আমি বড় তোদের থেকে।ওয়াসিমের থেকেও।ওই ছেলে জানেও না ও কাকে পছন্দ করে।বাদ দে।

-আবার কবে দেখা করবি?

-আর করবো না।এখানেই শেষ।যাওয়ার আগে কিছু কথা বলি,দেখ ভিনা,মেয়ে মানুষের জীবন খুবই ছোট হয়।যদি কখনো শুনিস কোনো মেয়ের জীবনে অনেক সমস্যা,ধরে নিবি সেটা বিয়ে অথবা বাচ্চা ঘটিত ব্যাপার।হয়ত ফ্যামিলির টাকা নাই,মেয়েকে আগে বিয়ে দিবে,নয়ত প্রেম করে দেখে বিয়ে দিবে।আবার প্রেম করে বাচ্চা এসে পরেছে বয়ফ্রেন্ড বিয়ে করবে না,অথবা বিয়ের পরে বাচ্চা হচ্ছে না।বেশিরভাগ মেয়েদের জীবনে এই সমস্যাই থাকে।তাই এই বাচ্চা হওয়ার পর,তুই ছক থেকে বের হয়ে আসবি।সহজে এই ইস্যু গুলো আসতে দিবি না জীবনে।ছেলেদের জীবনে এগুলা শুধু কিছু ঘটনা,আর মেয়েদের,পুরো জীবনটাই এটা।মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি।হাজার জন লাখ কথা বললেও শক্ত থাকবি।নিজে মাথায় রাখবি,তোর জীবন এত ছোট না।তোর জীবন অনেক বড়।অনেক কিছু আছে এর মাঝে।মনে থাকবে?

-থাকবে। 

-আসি তাহলে।অনেক ভালো থাকিস।

-আরশি,তোর বাসার ঠিকানা টা দিয়ে যা।বাচ্চা হওয়ার পর দেখবি না?

-না।কষ্ট হবে অনেক আমার।আর এসব বলে লাভ নাই।আমি সবার থেকে হারাতে চাচ্ছি।

-কেন?একটু বল আমাকে।

-আজকে সময় নাই রে। 

-আমার অনেক কষ্ট হবে। কিছু একটা তো দে,যাতে তোকে আবার খুঁজে পাই?

-দরকার নেই ভিনা।কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস,জীবনে অনেক সুখ পাবি সামনে তুই।ধৈর্য্য রাখিস শুধু।

কথাটা বলেই চোখের পলকে আরশি দৌড় দিয়ে চলে গেলো।ভিনা পেছন থেকে ডাকতে যেয়েও ডাকলো না।পুরো কলেজ খালি হয়ে গেছে।নিচে দুইজন কে দেখা যাচ্ছে।ওয়াসিম আর আরশি।ওয়াসিম এতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলো। আরশি ইচ্ছামত ধমক দিচ্ছে ওকে। ওয়াসিম মাথা নিচু করে শুনছে।ভিনা অন্তর থেকে দোয়া করলো যেন আরশি জীবনে অনেক সুখ পায়।আর বিশ্বাস ও আছে,ও পাবে।


ছুটির পর বাসায় এসে ঘুম দিলো ভিনা।শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে ভীষণ। বিকেলের দিকে উঠে হালকা কিছু খেয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়।পুরো শহর দেখতে পায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি ছাড়ার।এত বড় শহরে কোথাও না কোথাও তো জায়গা হবে ঠিকি।নিজের ঘরে যেয়ে প্রথমে রুপিনকে ফোন দেয়,কারণ এরপর আর কারো সাথেই যোগাযোগ করবে না। রুপিন বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলো কল পেয়ে।কান্নাভরা গলায় ভিনা কথা শেষ করে একটা বড় চিঠি লিখলো সোহেলের কাছে।যার মর্মার্থ হলো -

আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।আমাকে ক্ষমা করে দিও।কখনো খোঁজ করো না।ধরে নাও আমি মারা গেছি।

চিঠি রাখতে ভিনা মাস্টার বেডে গেলো।দেখলো মুনা ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে আছে।ভালোমত খেয়াল করে দেখলো পায়ে শেকল পড়ানো।একবার ভিনার দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে বললো-

-আমাকে মাফ করে দাও না ভিনা।

ভিনা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।এখন এই মুহূর্তে ক্ষমা করা যাচ্ছে না নিজের পক্ষে।ব্যাগ গুছিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলো।ভোরে,সবার জেগে উঠার আগে ঘর ছাড়বে ভিনা।নিজের ঘরের জন্য খুব মায়া লাগছে।প্রতিটা জিনিস ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে।আজকে ঘুম ও আসছে কেন যেন।নিজের ঘরে শেষ বারের মত ঘুমিয়ে ভোরের দিকে উঠে গেলো ভিনা।সামনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া বাকী..
.
.
.
চলবে.................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন