শ্রীঘর - পর্ব ০৭ - আতিয়া আদিবা - ধারাবাহিক গল্প

শ্রীঘর 
পর্ব ০৭ 
আতিয়া আদিবা 
.
.
.
কাজের মেয়ে জমিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত সাহিলকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তার বিপরীতে জমিলা দাঁড়ানো। তিয়াস তার গাউনটা একটু ঝাঁকি দিয়ে নিলো। তারপর জজের কাছে অনুমতি চেয়ে জেরা করা শুরু করলো।
" জমিলা বানু। কি নাম তো ঠিক বলেছি তাই না?"
" জ্বি। ঠিক বলেছেন।"
" আচ্ছা, তাহলে আমার নিজেকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কি বলেন?"
জমিলা চুপ করে রইলো। তিয়াস হেসে বললো, 
" সমস্যা নেই। এই প্রশ্নের উত্তর আপনার না দিলেও চলবে। তবে এখন থেকে যে প্রশ্নগুলো করবো আশা করি সবগুলো প্রশ্নের সঠিক জবাব আমি পাবো।"
জমিলা এবারো কিছু বললো না। তার চোখ মুখ ক্রমশ শুকিয়ে আসছে। 
"আপনি আগে এটা বলুন সাহিল সাহেবের বাসায় কাজ করছেন কয় মাস ধরে?"
" এইতো প্রায় এক বছর। "
" এই এক বছরে বাসার মালিক আপনার গায়ে হাত দাওয়ার চেষ্টা করে নি?"
" জ্বি না।"
" তাহলে কবের থেকে চেষ্টা করছে?"
" এইতো এক দুই মাস!"
" আচ্ছা। সে কি করে? মানে কিভাবে শরীরে হাত দাওয়ার চেষ্টা করে। একটু খুলে বলতে হবে তো জমিলা বানু! কোর্টে খোলামেলা কথা বলতে হয়।"
জমিলা চেয়ারে বসে থাকা পিয়ার দিকে একবার আঁড়চোখে তাঁকালো তারপর বললো,
" দিবা আফা যেদিন সকাল সকাল ভার্সিটি যায় পড়াইতে তখন সাহিল ভাই বাসায় থাকে। আর ওই সময়ই আমার শরীরে....."
এটুকু বলে জমিলা মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। 
" শরীরের কোথায় হাত দেয়?"
একথা বলার সাথে সাথে বাদী পক্ষের আইনজীবী অবজেকশন জানালো। জজের পক্ষ থেকেও ওয়ার্নিং আসলো। তিয়াস কথা ঘুরিয়ে বললো,
" না, আসলে মানুষ অনেক কারণে ধরতে পারে। এই যেমন জমিলার হাতে যে পোড়া দাগ। এই দাগটা কিন্তু গরম পানি পড়ার জন্য হয়েছিলো। কি ভুল বলছি আমি?"
জমিলা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো। তিয়াস বললো,
"সেদিনও অভিযুক্তের স্ত্রী বাড়ি ছিলো না। জমিলার হাতে সাহিল সাহেব বার্নল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই স্পর্শ নিয়ে জমিলার কোনো অভিযোগ নেই। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে, তার শরীরের কোন অংশে স্পর্শ করেছে যা অভিযোক্তার ভালো লাগে নি!"
এবার জমিলার দিকে তাঁকিয়ে তিয়াস বললো,
" আপনি মিথ্যা বলছেন। সাহিল সাহেব আপনাকে কোনো বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে কোনোদিন স্পর্শ করেন নি। আপনি সত্যিটা কোর্টের কাছে স্বীকার করুন।"
জমিলা ক্রুদ্ধ গলায় বললো,
" আমি মিথ্যা বলছি না। উনি আমাকে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়া ধরছে।"
"কোথায় ধরেছে? আপনার হাতে? বার্নল লাগানোর সময়?"
" না, আফা যখন বাসায় থাকতো না তখন।"
তিয়াস এবার জজের সামনে গিয়ে বললো,
" ইওর অনার, আমি কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তের স্ত্রীকে কাঠগড়ায় আসার অনুরোধ করছি।"
জজ বললেন, " অনুমতি দেওয়া হলো।"

দিবা কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালো। সাহিলের দিকে তাঁকাতেই তার বুকে শূন্যতা অনুভব হতে লাগলো। এই দুইদিনে ছেলেটার মুখের অবস্থা হয়েছে কি! চোখ বসে গেছে, চাপা লেগে এসেছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাতে ঘুম হয় নি। দিবার খুব ইচ্ছা করছে, দৌঁড়ে গিয়ে সাহিলের চুলগুলো ঠিক করে দিতে। কিন্তু সবসময় সব ইচ্ছে পূরণ করা সম্ভব হয় না। 
তিয়াস দিবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইঙ্গিতে দিবাকে আশ্বাস দিলো। তারপর প্রশ্নপর্ব শুরু করলো।
" মিসেস, খন্দকার। আপনি তো একটি বেসরকারি ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে আছেন তাই না?"
দিবা মুখে কিছু না বলে মাথা ঝাঁকালো।
" ক্লাস শুরু হয় কয়টা থেকে?"
" ৮:৩০ থেকে।"
" আপনি যান কখন?"
" আমি আটটার মধ্যে বের হয়ে যাই। কারণ ভার্সিটি আমার বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়।"
" আচ্ছা আচ্ছা! তা বেশ। সাহিল সাহেবের অফিস কয়টা থেকে?"
" দশটা থেকে।"
" উনি বের হয় কয়টার সময়?"
" সময়মতো পৌঁছাতে চাইলে ৯ টার মধ্যে বের হওয়ার কথা। কারন, ওর অফিস আমাদের বাসা থেকে তুলনামূলক দূরে। ট্রাফিক না থাকলে যেতে ২৫ মিনিটের মতো লাগে। আর এই শহরে ট্রাফিকের কথা চিন্তা করে এনাফ টাইম হাতে নিয়ে বের হতে হয়।"
তিয়াস বললো,
" এক্স্যাক্টলি, ইওর অনার। ম্যাথটা অনেক সিম্পল। মিসেস খন্দকার বের হয়ে যাবার পর হাতে ১ ঘন্টা সময় নিয়ে সাহিল বাবু ফ্রেশ হোন, নাস্তা করেন তারপর অফিস চলে যান। এইটুকু সময়ের মধ্যে আবার শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করেন! না মানে বিষয়টা একটু কেমন না?"

এবার বাদী পক্ষের আইনজীবী দাঁড়িয়ে গেলো। 
" এটার উত্তর আমি আপনাকে দেই?"
তিয়াস এডভোকেট রুশার গলার স্বর শুনে থেমে গেলো। 
" অবশ্যই!"
একথা বলে তিয়াস নিজের আসন গ্রহণ করলো। রুশা হেসে বললো,
" কাউকে স্পর্শ করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগে না, ইওর অনার! কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট। আর অভিযুক্তের এই ধরনের স্বভাবের চর্চা তো ভার্সিটি লাইফ থেকেই হয়ে আসছে। কি মিস্টার সাহিল খন্দকার?"
সাহিল অবাক হয়ে বললো,
" এসব কি বলছেন?"
রুশা হেসে বললো,
" উত্তর আপনার সহধর্মিণীই দিয়ে দিবে। একটু অপেক্ষা করুন।"
এবার রুশা দিবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
" মিসেস খন্দকার। আপনাদের বিয়ে তো প্রেমের বিয়ে তাই না?"
দিবা অস্বস্তি নিয়ে মাথা নাড়লো।
" আপনিই কি আপনার স্বামীর জীবনের প্রথম প্রেম?"
দিবা মাথা নিচু করে রইলো। সাহিলের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। 
রুশা রুক্ষভাষায় বললো,
" কোর্টের সময় সীমিত, মিসেস দিবা। আপনাকে কিছু জিজ্ঞাস করা হয়েছে।"
দিবা ইতস্তত করে বললো, " না।"
রুশা জয়ী ভঙ্গিতে বললো,
"আপনি এখন যেতে পারেন।"
দিবার নিজের আসন গ্রহণ করার আগে আরেকবার সাহিলের দিকে তাঁকালো। সাহিল চোখ নামিয়ে নিলো। দিবার চোখ ভিজে উঠেছে। সে শাড়ির আঁচল গুটিয়ে কাঠগড়া থেকে নেমে গেলো। 
রুশা জজের সামনে গিয়ে বললো,
" মাই লর্ড, এবার আমি এমন একজন সাক্ষীকে হাজির করবো যার কথা শুনলেই আপনি বুঝতে পারবে অভিযোক্তার অভিযোগ সত্যি।...."
.
.
.
চলবে...........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন