শ্রীঘর
পর্ব ০৮
আতিয়া আদিবা
.
.
.
"তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতো অভিযুক্ত সাহিল। তার সাক্ষী হিসেবে আমি সাহিলের প্রাক্তন প্রেমিক পিয়া সাহাকে কাঠগড়ায় আনার অনুমতি চাইছি, মাই লর্ড।"
রুশার দিকে তাঁকিয়ে জজ বললেন, " অনুমতি দেওয়া হলো।"
পিয়া ধীর পায়ে কাঠগড়ার দিকে এগোতে লাগলো। দিবা অবাক চোখে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটাকে সে চিনে না। মেয়েটার সম্পর্কে সে মোটেও অবগত নয়। সাহিল কখনো বলে নি। তার ওপর আবার পিয়া সাহা! মেয়েটা হিন্দু। সাহিল অসহায় দৃষ্টিতে দিবার দিকে তাঁকিয়ে আছে। তার চোখে ভয়।
পিয়া কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ালো। রুশা তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
" আপনি সাহিলের প্রাক্তন প্রেমিকা?"
পিয়া নিচু গলায় বললো, " জ্বি।"
" কিন্তু আপনাদের ধর্ম তো ভিন্ন!"
" কেনো? আমাদের দেশে কি ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকতে পারে না?"
রুশা হেসে বললো, " পারে। অবশ্যই পারে। ভালোবেসে বিয়েও করতে পারে! কিন্তু আপনাদের বিষয়টা কিন্তু আলাদা। আপনাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সাহিল সাহেব এর ভালোবাসা হিসেবে সমাজে সবাই মিসেস দিবা খন্দকার কেই চিনেন।"
" এখন সমাজে চলতে গেলে তো একজনকেই অফিসিয়ালি চেনাতে হবে! কারন বিয়ে তো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, সামাজিক জীবনের জন্যও বটে।"
" আপনি কি বলতে চাইছেন? শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের জন্য হলে অভিযুক্তের একাধিক বিয়ের সম্ভাবনাও ছিলো?"
" সাহিল নারী ভিন্নতা পচ্ছন্দ করে। ওর কাজই ছিলো মেয়েদের নিজের নোংরা জালে ফাঁসিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো আর তারপর তাদের সাথে ইন্টারকোর্স করা। যেমনটা ও আমার সাথে করার চেষ্টা করেছে।"
সাহিল এতক্ষণ সব চুপ করে শুনছিলো। পিয়ার বক্তব্যের শেষ লাইন শুনে সে হতভম্ব হয়ে গেলো। আক্রমণাত্মক কন্ঠে বললো,
" পিয়া! কি বলছো তুমি এসব? আমি তোমার সাথে শারিরীক সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছি! কেনো মিথ্যে বলছো?"
জজ সাহিলকে থামিয়ে দিলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,
" আপনাকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে। আপনি বলতে থাকুন মিস পিয়া।"
পিয়া জড়ানো কন্ঠে বললো, "ধন্যবাদ ইওর ওনার।"
রুশা এবার জিজ্ঞেস করলো,
" তো, মিস পিয়া। আপনি কি একটু খুলে বলবেন? আপনাদের সম্পর্কের শুরুটা?"
পিয়া ছলছল চোখে সাহিলের দিকে তাঁকিয়ে বললো,
" জ্বি অবশ্যই। বলবো। সব বলবো।"
দিবা একবার অবাক হয়ে সাহিলের দিকে তাকাচ্ছে, একবার পিয়ার দিকে। তার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরছে। আরো একবার সাহিলের প্রতি তার বিশ্বাসের স্তম্ভ নড়ে উঠেছে। এতদিন পর্যন্ত দিবা জেনে এসেছে সাহিলের সম্পর্কে সে সব জানে। তাহলে কে এই পিয়া সাহা? এই মেয়েটাকে নিয়ে সাহিল কেনো কোনোদিনও তাকে কিছু বলে নি? দিবা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
পিয়া লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
" আমি তখন ফ্রেশার। ভার্সিটিতে সিনিয়রদের একটি গ্রুপ ছিলো যারা সবসময় ফ্রেশারদের র্যাগ দিতো। সাহিল সেই গ্রুপে ছিলো। আমাদের পরিচয়ের সূচনা এই র্যাগিং থেকেই। ওর ফ্রেন্ডরা আমাকে র্যাগ দিলেও কোনো এক অজানা কারনে সাহিল আমাকে র্যাগ দেয় নি। উল্টো আমাকে র্যাগিং এর হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
কারনটা সেদিন আমার কাছে অজানা থাকলেও ধীরে ধীরে আসল কাহিনী ঠিক বুঝতে পারি।
সেদিনের পর আরো বেশ কয়েকবার সিনিয়দের কাছে র্যাগিং এর শিকার হতে নেই কিন্তু সাহিল আমাকে সাহায্য করে। সে নিজের থেকেই আমাকে তার ফোন নাম্বার দেয় এবং প্রয়োজনে কল করতে বলে। আমিও তাকে আমার ফোন নাম্বার দেই। সেদিন রাতেই সাহিল আমাকে কল করে। আমাকে বন্ধুত্বের অফার করে। যেহেতু আগেও সে আমাকে হেল্প করেছে তাই আমি তার এই বন্ধুত্বের অফারটা খুব সাধারণ ভাবে নিয়েছি। প্রথমদিকে মাঝে সাঝে কথা হলেও একটা সময় আমাদের প্রতিদিনই কথা বলা হতো। একদিন সাহিল হঠাৎ প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। আমি তাকে বলি, এটা সম্ভব নয়। আমাদের ধর্ম ভিন্ন। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা!"
সাহিল ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো,
" এসব কি বলছো পিয়া? আমি প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি? মিথ্যা বলছো কেনো তুমি?"
জজ আরো একবার সাহিলকে সাবধান করে দিলো।
" আপনি কিন্তু কোর্টের নিয়ম ভঙ্গ করছেন মিস্টার সাহিল খন্দকার।"
সাহিল কাঠগড়ায় নিজের হাত দিয়ে জোরে বাড়ি দিলো। তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। সে দিবার দিকে তাঁকিয়ে দেখলো দিবা তার দিকেই উদাস দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটার চোখে হাজারো প্রশ্ন। যেনো দিবা তাকে প্রশ্ন করছে,
" কেনো আমায় মিথ্যে বলেছো সাহিল? কেনো আমায় ঠকিয়েছো তুমি?"
আচ্ছা দিবা কি তার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে? সাহিল দিবাকে ঠকায়নি। মিথ্যে বলেনি। শুধু কিছু কথা বলা থেকে বিরত থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু সেই কথাগুলো এতবড় ইস্যু হয়ে তার জীবনে হানা দিবে সাহিল বুঝতে পারে নি।
রুশা কোর্টের নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
" আপনি শেষ করুন মিস পিয়া সাহা।"
পিয়া আবার বলতে শুরু করলো,
" সাহিল নানাভাবে আমাকে বুঝাতে চাইতো সে আমাকে কতটা ভালোবাসে। প্রথম দিকে পুরো বিষয়টা আমি সিরিয়াসলি না নিলেও ওর নাটকের কাছে হার মেনে যাই। আমিও ভালোবাসতে শুরু করে দেই। মনে হতে থাকে ধর্ম ভিন্ন তো কি হয়েছে? আমাদের ভালোবাসা তো সত্যি! দেশে আইন আছে। আইন আমাদের ঠিক সহায় হবে। তখনো বুঝি নি আইন আমার সহায় হবে ঠিকই কিন্তু সেটা আমাদের ভালোবাসার জন্য নয়, একজন ভুল ও পার্ভার্ট মানুষকে ভালোবাসার অপরাধে যে মানসিক অশাস্তি আমি ভোগ করছিলাম, যে কষ্ট আমি পাচ্ছিলাম তা থেকে আমায় মুক্তি দিতে। আমায় জাস্টিস দিতে।"
রুশা বললো,
"এটাই আইনের কাজ মিস পিয়া সাহা। আপনি বলুন আপনাদের সম্পর্কে চিড় কেনো ধরলো?"
পিয়া সাহিলের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,
" ধরবেই তো। বিয়ের আগে শারিরীক সম্পর্ক করতে চাইতো আমার সাথে। আমি রাজি ছিলাম না। একদিন ভার্সিটিতে....."
.
.
.
চলবে...........................