মাহভিন।ভিনার ছোট্ট মাহভিন।
সেদিন ওটিতে ফুটফুটে এক মেয়ের জন্ম দিয়েছিলো ভিনা,যাকে দেখার আগেই রুপিন নিয়ে এসেছিলো নিজের কাছে।যদিও ভিনার বাবা সোহেল রুপিন কে বলেছিলো মাহভিনকে একবার ভিনার কাছে দেয়ার জন্য,কিন্তু রুপিন ছিলো অনড়।সোহেল বুঝতে পেরেছিলো,রুপিন বাচ্চাটাকে নিজের হিসেবেই বড় করতে চাচ্ছে,তাই এই অধিকারে সামান্যতম হস্তক্ষেপ সে মানতে নারাজ।ব্যাপারটা সোহেলের ভালো লাগেনি।
কেবিনে ভিনার হাহাকার যেকারো বুকে যেয়ে লাগার মত ছিলো।মেয়ের এমন করুণ অবস্থায় নিজেকে ভীষণ অসহায় লেগেছিলো সোহেলের।এছাড়াও এই ভিনার বাচ্চার উপর রুপিনের অযাচিত অধিকার ও মনের ভেতরে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছিলো।ভিনার দাপাদাপি দেখে সোহেলের বারবারই মুনার দৃশ্য চোখে ভাসছিলো।সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সব মায়েদের এক,হোক সেটা মৃত বা জীবিত।
-রুপিন,একটাবারের জন্য হলেও বাচ্চাকে ভিনার কাছে দাও।আমার মেয়েটা ছটফট করছে।কোনো মা কে এভাবে কষ্ট দিও না।
-আনরিয়েলিস্টিক কথা বলছো,ভিনার বয়স কত?তোমার কি মনে হয় এই বাচ্চাকে কাছে রাখলে ও আর আমাকে নিয়ে যেতে দিবে?
-নিয়ে যখন যাবে,ভিনার আর তো দেখার সুযোগ রাখবে বলে মনে হয় না আমার।তাহলে একটাবার দেখতে দিলে কীই বা হয়।ও তো নয় মাস পেটে ধরেছেই,যা মায়া জন্মানোর জন্মে গেছে,ক্ষণিকের এই সাক্ষাতে খুব একটা পার্থক্য হবে না।
-হবে।আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।কম বয়সের আবেগ বলা যায় না,যদি জিদ করে বসে বাস্তবতার কথা না ভেবে,তখন কী করবে?
-করবে না।ওর এই বুঝ আছে।
-ওর যদি সত্যিই বুঝ থাকত,তাহলে বিয়ের আগে বাচ্চা হত না।
রুপিনের শেষ কথা সোহেলের বুকে তীড়ের মত লাগলো।মনে হলো কেউ যেন গলা চেপে ধরে আছে।নিজের আদরের মেয়ের ব্যাপারে এইসব কথা বর্ণনাতীত কষ্টের।
অতি কষ্টে নিজের প্রচন্ড রাগ চেপে রেখে সোহেল বললো -
- আমার মেয়ে তো,আমি বুঝবো।বাচ্চাকে একবার ভিনার কাছে দাও।
-তোমার এই মেয়ে আমার কাছেই ছিলো সোহেল,আমিই ওর খেয়াল রেখেছি এই কয়মাস,তুমি রাখোনি।
রুপিনের যুক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে সোহেল চুপ হয়ে গেলো।সাদা টাওয়ালে জড়ানো ছোট পুতুলের দিকে তাকিয়ে পুরোনো দিনের কথা মনে পরছে।ভিনার মেয়ে দেখতে হুবুহু ভিনার মতই হয়েছে।রুপিন দুই হাত দিয়ে শক্ত করে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আছে।পাশে থাকা তোহা ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছে।তোহার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে পুরো ব্যাপারটায় ব্যথিত,সেও চাচ্ছে ভিনা একবার নিজের বাচ্চাকে দেখুক।
ভেতরের কেবিনে ভিনা চিৎকার করে কান্না করছে। এই দিন দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।এই বাচ্চাকে নিজে বড় করবে দেখেই সে পৃথিবীতে এনেছিলো। এই বাচ্চাকে নিয়েই বাকী জীবন কাটাবে ভেবে রেখেছিলো,কিন্তু ভাগ্য এমনই,যাকে বুকে আগলে রাখতে চেয়েছিলো সারাজীবন,তাকে একবার দেখার সুযোগ ও নেই!
ভোরের এই সময়ে শূণ্য করিডোরের কোণায় থাকা এক রুমে সদ্য মা হওয়া কম বয়সী এই মেয়ের চিৎকার কারো কাছে পৌঁছালো না।
•
ডাক্তার সোমা আগেই বলে দিয়েছিলেন ভিনাকে অন্তত চারদিন বেড রেস্টে থাকতে হবে।কিন্তু ভিনা ভেতরে টের পাচ্ছিলো,ওর বাচ্চাকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।তাই পরেরদিনই বেশ জোর করেই বাসায় যায় ভিনা।হস্পিটালে ভিনাকে না পেয়ে তোহা ফোন দেয় সোহেলের মোবাইলে,সবকিছু জানার পর,তোহা রুপিনের কাছে যায়।
-ম্যাম,একটা কথা বলতাম।
-কী কথা?
-ভিনাকে কি একবারের জন্য ও বাচ্চাটা দেখতে দেয়া যায় না?
-ইদানিং ভিনার জন্য দেখি দরদ উথলে উঠছে তোহা।এত দরদ ভালো না।বাচ্চার ভালো ভবিষ্যতের জন্যই আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
-নিয়ে যাচ্ছি মানে?
-আমি কানাডায় চলে যাচ্ছি,ওখানেই সেটেল হবো।
-আর এখানে?এই হস্পিটাল আর বাকী এসেট?
-বাচ্চার দুই বছর না হওয়া পর্যন্ত আমি আসবো না।এই দুই বছর তুমি এখানে থাকবে।আমি তোমাকে পুরো বিশ্বাস করি।আমি জানি তুমি বিশ্বাস ভাঙবে না।কখনো,কোনো ক্ষেত্রেই ভাঙবে না।
রুপিন তোহার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।তোহা এর অর্থ ভালোমত বুঝে গেলো।মাথা নিচু করে তাই দাঁড়িয়ে রইলো।এরপর অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
-কবে যাবেন ম্যাম?
-ওর পাসপোর্ট হলেই চলে যাবো।ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করতে দিয়েছি।
-কতদিন লাগবে পাসপোর্ট হতে।
রুপিন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো,ভেবে দেখলো তোহাকে বলা কতটুকু নিরাপদ ।এরপর উত্তর দিলো-
-আগামী বুধবার সকালে ফ্লাইট।
-তাহলে তো বেশি সময় নেই। আপনার তো অনেক কিছু গোছানো লাগবে।
-হ্যাঁ,এইসব ব্যাপারের জন্য তুমি তো আছোই।
তোহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে সৌজন্যের মেকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।এরপর ফোন দিলো সোহেলকে।
-স্যার,ভিনাকে একটু দেয়া যাবে?
-ভিনার শরীর তো ভালো না।ওকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে,রুমে শুয়ে আছে।
-তবুও ওকে একটু দিন,প্লিজ।
-আচ্ছা।
সোহেল ফোন নিয়ে ভিনার রুমে গেলো।ভিনা বিছানায় হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।কোনো শব্দ হচ্ছে না,কিন্তু অনবরত চোখ দিয়ে পানি পরছে।এতটুক মেয়েটা পৃথিবীর সব কষ্ট যেন নিজের মাঝে বয়ে বেড়াচ্ছে।অকালে মা হারা,সৎ মায়ের যন্ত্রণা,বাবার অবহেলা,প্রিয় মানুষ হারানো,সন্তানহারা!কীভাবে সহ্য করবে এত কিছু?
-ভিনা,মা,তোহা একটু কথা বলবে।
ভিনা চোখ মুছে ফোন নিলো।
-হ্যালো,তোহা আপু?
-ভিনা।আমি জানি তুমি ভালো নেই। তাও তোমাকে একটা কাজ করতে বলবো,করবে?
-বলো...
-তুমি আগামী বুধবার সহ,আরো তিনদিন ম্যামের বাসায় আসবে।আর বুধবার বেশি সকালে আসবে।ঠিকাছে?
-কেন?
-আসবে শুধু।হয়ত দারোয়ান বলবে ম্যাম চলে গেছে,দেশে নেই।তবুও হাল ছাড়বে না।অপেক্ষা করবে।
-আসলেই দেশের বাইরে যাবে?
-এতকিছু বলতে পারছি না।শুধু আসবে।ওকে?
-আমার বাচ্চাকে দেখতে পারবো তো তোহা আপু?
-জানি না ভিনা।এখন তোমার বাবাকে দাও।
-ঠিকাছে।
ভিনা সোহেলকে মোবাইল টা এগিয়ে দিলো।
সোহেল ফোনে হ্যালো বলতেই তোহা বললো-
-স্যার,আপনি একটু অন্য রুমে যাবেন?কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো।
-এখন বলো।আমি অন্য রুমে।
-কিছু মনে করবেন না,একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-হুমম...করো।
-মুনা কোথায় আছে?কেমন আছে?
-মুনা এসাইলামে আছে।অবশ্যই ভালো নেই।
-কেন ভালো নেই?কী হয়েছিলো?
-ওর বাচ্চা মারা গিয়েছিলো।
-একটা বাচ্চার জন্যই উনি এমন করছেন,তাই না?
সোহেল এই প্রশ্নে বেশ হকচকিয়ে গেলো।
-তুমি কী বলতে চাচ্ছো তোহা?
-ভিনার বাচ্চাকে আপনার কাছে নিয়ে আসুন স্যার।মুনার হাতে তুলে দিন।আমার বিশ্বাস,একজন সন্তানহারা মা এই বাচ্চাকে পেলে যত্নে কোনো ত্রুটি রাখবে না।আপনার কাছে এই একটা সুযোগ নিজের আর ভিনার সম্পর্ক ঠিক করার,নিজের ভুল শুধরে ফেলার।আমি জানি মুখে বলা যত সহজ,বাস্তবে সেটা ততই কঠিন।তবুও আপনাকে অনুরোধ করবো।
তোহার কথা শুনে সোহেলের চোখে পানি এসে পরলো।বাচ্চাটাকে দেখার পর থেকেই সোহেলের বারবার মনে হচ্ছিলো এই বাচ্চাটা নিজের কাছে রাখার কথা।কিন্তু ভীষণ দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছিলো।তোহার কথা শুনে এখন ভেতরে সাহস এসেছে।
-অনেক ধন্যবাদ তোহা।তুমি জানো না আজকে এই কথাটা বলে তুমি তিনজন মানুষের জীবন সুন্দর করে দিচ্ছো।অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
-আরেকটা কথা,ভিনা যেন কখনো না জানে,আমি আপনাকে এসব করতে বলেছি।
তোহা সাথেসাথেই ফোন রেখে দিলো।মন থেকে যেন এক বোঝা নেমে গেছে।কোনো একদিন করা বিরাট এক ভুলের কারণে তিনজনের জীবন নষ্ট হয়েছিলো।আজকে সেই ভুলেরই সামান্য প্রায়শ্চিত্ত যেন হয়েছে।
•
সিজারের সেলাই নিয়েই ভিনা প্রতিদিন সোহেলকে নিয়ে রুপিনের বাসায় যাওয়া শুরু করলো।তোহার বর্ণনানুসারে দারোয়ান জানিয়ে দিলো রুপিন দেশে নেই।তবু ভিনা হাল ছাড়লো না।ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে গেলো।
ভেতরে রুপিন রাগে আগুন হয়ে আছে।কিছুক্ষণ পরপরই পানি খাচ্ছে।
-ভিনার সমস্যা কী। এই বাচ্চাকে ও পালতে পারবে?দেখে করবে কী ও?এত ঝামেলা করছে কেন?
-বয়স কম তো ম্যাম,এর জন্য।
-বয়স কম তো কী হয়েছে?বাচ্চা তো হয়ে গেছে এখনি।এখন তো একটু লজ্জা করতে পারে। এতটাদিন ওর যত্ন নিলাম।এছাড়াও ছোটবেলা থেকে কম আদর করেছি?মেয়েটা কেন কিছু বুঝছে না?
তোহা উত্তর দিলো না।শুধু মনে মনে দোয়া করলো ভিনার যেন ধৈর্য্য থাকে কয়দিন।
এভাবে দেখতে দেখতে বুধবার এসে গেলো।রুপিন ভোর থেকে ছটফট করছে কীভাবে বের হবে।আজকে দারোয়ান কেন যেন ডিউটি তে আসেনি। ভিনা আর সোহেল একদম ভেতরের দরজা পর্যন্ত এসে পরেছে। এরপর ঘরের নতুন কাজের লোকটা বোকার মত দরজাও খুলে দিয়েছে। আজকেই এমন হওয়া লাগলো!
বিশাল ড্রয়িং রুমে ভিনা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অস্থিরভাবে পায়চারি করছে।তলপেটে ভীষণ ব্যাথা,তবুও একজায়গায় বসতে পারছে না।অবশেষে রুপিন এলো।রুপিনকে দেখেই ভিনা দৌড়ে গেলো-
-আন্টি!
-এখানে কী করছিস?
রুপিনের এই রুক্ষতায় ভিনা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
-আন্টি....আমাকে একবার আমার বাচ্চাকে একটু দেখতে দাও,প্লিজ,আমি তোমার পায়ে পরি!
ভিনা সত্যি সত্যি নিচে উবু হয়ে রুপিনের পা ধরলো। রুপিন সরে এসে পাশে দাঁড়ালো।সোহেল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে,ভিনাকে কিছু বলছে না।এই মুহূর্তে না করা সম্ভব না।রুপিন ভাবলো,শুধু দেখবেই তো।এই বাচ্চার দায়িত্ব তো নিতে পারবে না।শেষমেষ রুপিনকেই বাচ্চা দিতে হবে।সব ভেবে রুপিন তোহাকে ইশারা করলো বাচ্চা নিয়ে আসার জন্য।তোহা এক মুহূর্ত দেরি না করে বাচ্চাকে নিয়ে আসলো।
ভিনা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের মেয়েকে কোলে নিলো।
-মেয়ে!আমার মেয়ে হয়েছে!
খুশিতে কেঁদে দিলো ভিনা।বাচ্চাকে পুরো শরীর চুমোতে ভরিয়ে দিলো।আঙ্গুল দিয়ে ছোট হাতটা ধরলো।
ভিনা কান্না থামাতে পারছে না।ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।কান্নার শব্দে বাচ্চা ঘুম থেকে উঠে গেলো।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সে কাঁদলো না,বরং চোখ বড় বড় করে ভিনার দিকে তাকালো।
ভিনা এই মায়াবি মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।কীভাবে থাকবে ও এই বাচ্চা ছাড়া?
রুপিন পাশ থেকে ভরাট গলায় বলে উঠলো-
-আমাদের দেরী হচ্ছে ভিনা।বাচ্চাটাকে দিয়ে দাও।
-দেরী হচ্ছে মানে?কোথায় যাচ্ছে আপনারা?
-দেশের বাইরে।
ভিনা চিৎকার করে উঠলো।
-কোন দেশে?দেশের বাইরে কেন?ওকে এত দূরে কেন নিয়ে যাচ্ছেন আন্টি?
-সেটা আমার ব্যাপার ভিনা।তোমার দেখার শখ ছিলো,দেখতে দিয়েছি।এখন বাচ্চাকে তোহার কাছে দিয়ে দাও।
-না আন্টি।এমন করবেন না।এত দূরে নিয়ে যেয়েন না ওকে।আমি কখনো ওর মা হওয়ার দাবি নিয়ে আপনার কাছে আসবো না।ওকে এত দূরে নিয়েন না।
-দেরী হচ্ছে ভিনা।
ভিনা নিজের অসহায়ত্বের কাছে হার মানলো।যখনি তোহার কাছে বাচ্চা দিতে নিবে পেছন থেকে সোহেল কাঁধে হাত রাখলো-
-আমাকে একটু কোলে দে তো।
সোহেল ভিনার কাছ থেকে বাচ্চাকে নিলো।এরপর ভরাট গলায় বললো,
-চল,বাসায় যাই।
ভিনা সোহেলের দিকে তাকিয়ে রইলো।বুঝতে পারলো না কী হচ্ছে।
-কী রে,চল।
রুপিন বিস্ফোরিত চোখে সোহেলের দিকে তাকালো।এরপর চাপা রাগ নিয়ে বললো-
-এসব কী হচ্ছে?এই বাচ্চাকে নিয়ে তুমি কী করবে?
-আমার মেয়ে ভুল করেছে।তুমি কেন সেটার কম্পেনসেট করবে?
-মানে?
-মানে,এই বাচ্চা আমার কাছেই থাকবে।এটাই শেষ কথা। এটাকে বাইরে পর্যন্ত নিতে চাচ্ছি না।
সোহেল বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।রুপিন আটকানোর চেষ্টা করেও কোনো ফল পেলো না।
ভিনা তখনো দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে।রুপিন ছলছল চোখে ভিনার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো-
-এটা কি ঠিক হলো ভিনা?উত্তর দে!
-আমি জানি না আন্টি।আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-বের হয়ে যা এখান থেকে!নষ্টা মেয়ে তুই!এক্ষনি বের হয়ে যা।বেশ্যা!
ভিনা পেছনে ফিরে তাকালো না।দৌড় দিয়ে বাইরে চলে এলো।আসার সময়ে বুঝলো,আরেকটা সম্পর্ক ভেঙে গেছে,যেটা কোনোদিন জোড়া লাগবে না।
বাসায় আসার পর ভিনা সোহেলকে জড়িয়ে ধরলো।দুইজনের কেউই কথা বললো না।একসময় সোহেল ভিনার হাত নিজের হাতে নিলো-
-ভিনা।আমাকে কথা দে।এই বাচ্চাটা তোর সামনে,একি বাড়িতে থাকলেও কখনো তুই এর মা হওয়ার চেষ্টা করবি না।তুই ভুলে যাবি,তোর একটা বাচ্চা আছে।আমাকে কথা দে,এখন থেকে তুই শুধু নিজের জীবন নিয়ে ভাববি,নিজেকে নিয়ে ভাববি,অন্য দশটা স্বাভাবিক ছেলে মেয়ের মত নিজের জীবন গুছাবি।
-কথা দিলাম বাবা.....আমাকেও একটা কথা দিতে হবে তোমার...
- কী কথা?
-মা কে এসাইলাম থেকে কালকেই নিয়ে আসবে যেভাবেই হোক।
সোহেল সন্তুষ্টির হাসি দিলো কথাটা শুনে।যদিও সে এটাই করত,কিন্তু ভিনা নিজ থেকে এই কথা বলায়,তার মনে যে প্রশান্তি এসেছে,সেটা বলে বোঝানো যাবে না।
দুইদিন পর,নানারকম ফর্মালিটিস শেষ করে মুনাকে ঘরে আনা হলো। শরীরে যে কোনো মাংস নেই।হাড্ডির উপর যেন চামড়া বসানো।কেউ প্রথম দেখায় চিনবে না মুনাকে।এদিক ওদিক তাকিয়ে মুনা ছটফট করছে।কিন্তু ভিনা একটুও ভয় পাচ্ছে না।বরং মুনার কাছে বাচ্চা নিয়ে গেলো।এরপর মুনাকে বললো-
-কোলে নিবে না?
-কা...কাকে?
-তোমার বাচ্চাকে....
-আমার বাচ্চা?আমার মাহভিন কে?মাহভিন কে কোলে নিতে বলছো?
-হ্যাঁ, মাহভিন কে....
.
.
.
চলবে.........................................................