শ্রীঘর
পর্ব ০৯
আতিয়া আদিবা
.
.
.
"একদিন সন্ধ্যার দিকে ভার্সিটিতে আমাকে ডেকে পাঠায় সাহিল। সন্ধ্যার আগ দিয়ে স্টুডেন্টদের আনাগোনা অনেকাংশেই কমে যায়। বেশ কিছু কাপলদের দেখা যায় যারা হয়তো গ্রাউন্ডে বসে আড্ডা দেয়। আমরা আগেও সারা বিকাল জুড়ে আড্ডা দিয়েছি। তাই আমার কাছে অন্য কিছু মনে হয় নি। সেদিন ভার্সিটিতে অন্যদিনের তুলনায় স্টুডেন্ট আরো কম ছিলো। আমরা ভার্সিটির বিভিন্ন ব্লকে হেটে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ ফাঁকা জায়গা পেয়ে সাহিল আমার পিঠ দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে..."
পিয়া নাকি কান্না জুড়ে দেয়। পুরো কোর্টে পিন পতন নীরবতা। দিবা ঝাপসা চোখে তাঁকিয়ে আছে সাহিলের দিকে। সাহিল ছলছল চোখে দিবার দিকে তাঁকিয়ে মাথা নাড়লো।
রুশা জিজ্ঞেস করলো,
" পিঠ ঠেকিয়ে কি করেছে? বলুন। বলুন মিস পিয়া। কি করেছে?"
পিয়া ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,
"আমাকে কিস করার ট্রাই করেছে।"
সাহিল চিৎকার করে বললো,
"কেনো মিথ্যা বলছো পিয়া? তুমি আমাকে ফোর্স করেছো। তুমি আমার সাথে শারিরীকভাবে জড়াতে চেয়েছো! আমি না করেছি। আমি বাঁধা দিয়েছি। মাই লর্ড! আমাকে প্লিজ কিছু বলার অনুমতি দিন। প্লিজ!"
জজ বললেন,
" অনুমতি দেওয়া হলো।"
সাহিল দিবার দিকে তাঁকিয়ে বলা শুরু করলো,
" আমার জীবনে ভালোবাসা একবারই এসেছে। আর যাকে ভালোবেসেছি, সে আজ আমার স্ত্রী। হ্যাঁ, আমি অনেক মেয়ের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু কখনো কারো হাত পর্যন্ত স্পর্শ করি নি! কাউকে কখনো কোনো ওয়াদা দেই নি। আর পিয়া! পিয়ার প্রতি কখনো আমার ভালোবাসা ছিলোই না। ওকে আমি আমার ভালো বন্ধু হিসেবে দেখতাম। একটা সময় পিয়া আমার ওপর দুর্বল হয়ে পড়ে। আমাকে শারিরীক সম্পর্কের জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি ওকে আটকিয়েছি। ও যে কথাগুলো বলেছে, সেগুলো সত্যি। কিস করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা আমি করি নি। পিয়া করেছে। She pushed me! She tried to kiss me."
রুশা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
" একজন মেয়ে একজন ছেলেকে কিস করতে চেয়েছে? "
তিয়াস এবার উঠে দাঁড়ালো।
" কেনো মিস রুশা? বিষয়টা কি খুবই অস্বাভাবিক? মনে হচ্ছে আজকাল কেস চর্চা খুব কম করা হয়?"
" কেস চর্চা ঠিকই করা হয় তিয়াস বাবু! "
" তাহলে তো বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দেওয়ার কথা নয়।"
"কোন বিষয়?"
" মানে, এই যে মিস পিয়া সাহা সিডিউস করার বিফল চেষ্টা করেছেন। তাই না, ম্যাডাম?"
পিয়া ভ্রঁ কুঁচকে বললো,
" এসব কি বলছেন? আমি একটা মেয়ে হয়ে এসব করবো?"
তিয়াস উদাস কন্ঠে বললো,
" মেয়েরাও কখনো কখনো এমনটা করে মিস. পিয়া।"
রুশা হেসে বললো,
" করে কিন্তু এক্ষেত্রে মিস. পিয়া করেন নি। আর কেনো করেন নি তা আমি খুলে বলছি।"
পিয়া টেবিলের ওপর থেকে একটা পেপার নিয়ে জজের কাছে গেলো।
"এখানে ২৫ জন মেয়ের নাম, এড্রেস এবং মোবাইল নাম্বার আছে। এদের সবার সাথেই সাহিল সাহেবের সম্পর্ক ছিলো। তার চরিত্র কেমন তা বোঝার জন্য এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?"
তিয়াস বললো,
" মানছি উনার চরিত্র খুব খারাপ। কিন্তু তারা কি এটা বলেছে যে তাদের সাথেও শারিরীক ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছে?"
" না। বলে নি। তবে এদের দিয়ে সব সম্ভব। এরা ক্রিমিনাল। এদের দ্বারাই রেপ হয়, এরাই ভবিষ্যৎ ধর্ষক।"
দিবা মুখ চেপে কান্না আঁটকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।
তিয়াস এবার উঁচু গলায় বললো,
" মিস. রুশা! যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি অভিযুক্তকে পুরোপুরি ভাবে গিলটি প্রুভ করতে পারেন, তাকে আসামি বলার কোনো অধিকার আপনার নেই।"
রুশা কিছু একটা বলতে চাইলো তার আগেই কোর্টের সময় শেষ হয়ে গেলো। তাদের আরো এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো। এর মধ্যে তিয়াস কিছু করতে না পারলে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত সাহিলকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়।
রাত ১০ টা। বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে দিবা। কিছুক্ষণ পর শাওয়ার বন্ধ করে নগ্ন অবস্থায় আয়নার সামনে দাঁড়ালো সে। উষ্ণ গরম পানির স্টিমে আয়না ঘোলা হয়ে আছে। সেই ঘোলা আয়নার মধ্যে আঙুল দিয়ে সে লিখলো, "সাহিল + দিবা।"
লিখার দিকে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে দিবা হারিয়ে গেলো অতীতে।
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে দিবা। এমন সময় টুং করে মেসেঞ্জারে টেক্সট আসলো। সাহিল কোনো ছবি পাঠিয়েছে। টেক্সট ওপেন করতেই দিবা দেখলো। আয়নার মধ্যে লিখা 'সাহিল + দিবা।'
দিবা মুচকি হেসে রিপ্লাই দিলো,
"গোসল করতে গিয়েও এসব?"
ওপাশ থেকে উত্তর আসলো,
" সারাদিন মাথায় চড়কির মতো ঘুরে বেড়াও এটা আমার দোষ?"
" ইস! খুবই সস্তা জোক মারলে।"
" আমার সস্তা জোকে আর কেউ না হাসলেও তুমি তো হাসো! এটাই অনেক।"
বাথরুমের দরজায় নক করার শব্দে দিবা বাস্তবে ফিরে এলো। দিবার মা এসেছে।
" কিরে মা? গোসল হয় নি? ঠান্ডা লেগে যাবে যে।"
" এইতো মা আসছি। তুমি যাও।"
" তাড়াতাড়ি আয়। খেতে হবে।"
" আসছি। তুমি ঘরের দরজা ভিড়িয়ে যাও।"
" ঠিকাছে।"
দিবার মা চলে গেলো। দরজা লাগানোর শব্দ পাওয়া গেলো। দিবা আয়নার লিখার দিকে তাঁকিয়ে গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলো। কোনো এক অজানা কারনে মেয়েরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে খুব পচ্ছন্দ করে।
সাহিল দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে শ্রীঘরের সেই ছোট্ট জানালা দিয়ে আকাশ দেখছে। এমন সময় একজন পুলিশ স্টাফ আসলো।
" আপনার সাথে উকিল সাহেব দেখা করতে এসেছেন।"
সাহিল কোনো উত্তর দিলো না।
তিয়াস আসলো। সাহিল তিয়াসের দিকে তাঁকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। ফর্মাল কথাবার্তার পর তিয়াস বললো,
" কিছু প্রশ্ন করবো আপনাকে। একটু ভেবে উত্তর দিবেন। আমি আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। এই একটা সুযোগই আছে আপনাকে বেকসুর প্রমান করার।"
সাহিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
" শুরু করো।"
তিয়াস ফোনের রেকোর্ডার অন করলো। সাহিল সোজা হয়ে বসলো। কেনো জানি আজ সে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। সে দেখতে পাচ্ছে, সে আবার ফিরে গিয়েছে তার আর দিবার ছোট্ট সাজানো সংসারে। বিশ্বাস আর ভালোবাসায় ঘেরা তাদের ছোট্ট দুনিয়ায়।
.
.
.
চলবে........................