তিশার মা মিসেস রেণু, কখন ধরে তিশাকে ডাকছে।কিন্তু তিশা বিছানা থেকে ওঠার নামই নিচ্ছে না। আজ না-কী এই রুম থেকেই বের হবে না, হলুদেও যাবে না।তিশা জিসানের উপর জেদ করেই শুয়ে আছে। আজ জিসানের সামনেই আর যাবে না। কী মনে করে লোকটা আমাকে, খেলার পুতুল। যেমনে নাচাবে তেমনেই নাচব আমি, একদম না! আমার নামও তিশা.....হুম!
'তিশাকে ওঠাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে রেণু বেগম চলে গেল।'
'এদিক দিয়ে ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করতে বসেছে।'
জিসান এসে দেখে সবাই আছে কিন্তু তিশা নেই। তাই নিশিকে জিজ্ঞেস করে তিশা কোথায়?
'ভাইয়া ও এখনও ঘুমায়। আমরা অনেক ডেকেছি কিন্তু ও আসবে না।'
জিসানের মেজাজ গরম হয়ে গেল। তিশাকে ডাকার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে নিলে, আশা এসে বাঁধ সাধে।
'আরে কোথায় যাচ্ছেন____? আপনি আগে নিজে নাস্তা করে নিন। ও বাচ্চা মানুষ যখন খিদে লাগবে দেখবেন নিজেই দৌড়ে চলে আসবে। আশা আপু জিসানকে নাস্তা বেড়ে দিতে দিতে বলল কথাটা।'
জিসান নাস্তার প্লেটটা হাত দিয়ে সরিয়ে____ থ্যাংকস্, বাট আমি তিশাকে সাথে নিয়েই নাস্তা করব। আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না, বলেই জিসান ওঠে চলে গেল। আশার মুখটা দেখার মত ছিল তখন।
আর ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগল আশার এমন অবস্থা দেখে।
'জিসান সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় পথিমধ্যে রেণু বেগমের সাথে দেখা হয়। আরে জিসান বাবা____ভালই হলো তোমার সাথে দেখা হয়েছে।'
জিসান স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, 'কেন আন্টি?'
'এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারছি না। দেখ কাল রাতেও কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর এখনও না-কী কিছু খাবে না। আজ না-কী রুম থেকেই বের হবে না। গৃহবন্দি বাসিন্দা তিনি আজ।
বুঝছ কিছু!'
জিসানের মাথাটা সকাল সকালই গরম হয়ে গেল। ওর মন চাইছে তিশাকে এখন মাথায় তুলে এক আছাড় মারতে। এতে হয়তো মনটা একটু শান্তি পেত। এই মেয়েটা আমাকে জ্বালাতে খুব মজা পায়। পরক্ষণে নিজেকে শান্ত করে রেণু বেগমকে বলে_____আপনি চিন্তা করবেন না, আমি এখনি ওকে নিয়ে আসছি।
'আচ্ছা যাও? দেখ উঠাতে পারো কী-না!'
'ঘুমকাতুর তিশা কোলবালিসকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।হঠাত পেছন দিয়ে কেউ ওকে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিটার হাত তিশার পেটের উপরে।'
'তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাতটা সরিয়ে দেয়। আসলে ও ভেবেছে হয়তো নিশি। কারন নিশিই তিশাকে ঘুমাতে দেখলে প্রায়ই পেছনে দিক দিয়ে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে।'
'কিন্তু হাতটি আবারও তিশার পেটকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আরও চেপে ধরে।'
এবার তিশা ঘুম থেকেই বলে উঠে..এসব কী নিশি! সব সময় ভালো লাগে না। আমি কী তোর বর নিই? তুই আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবি। জড়িয়ে ধরার এত শখ থাকলে আন্টিকে বোল একটা বিয়ে করিয়ে দিবে। এসব বলে হাতটা আবার সরিয়ে দেয়।
'এবার তিশা অনুভব করে কেউ ওকে আবারও জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবাচ্ছে গভীর ভাবে।'
তিশার এবার মেজাজ গরম হয়ে যায়। লাফ দিয়ে উঠে একদম দাঁড়িয়ে যায়। জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিটাকে না দেখেই বলে ফেলে____ওই তোরা ভাই বোন এত লুচু কেন? এ কথা বলে যে না পেছনে ঘুরে, তিশা মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে জিসানকে সামনে দেখে।
'আ...পনি এখানে ক...কী করছেন?'
জিসান মাথার নিচে দুহাত দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে আরামে শুয়ে বলল__'কী করছি মানে! তোর সাথে ঘুমাতে আসছি।'
'এ কথা বলেই আমার হাত ধরে টান দিলে আমি বেসামাল হয়ে তার বুকের উপর গিয়ে পরি। উনিও সুযোগ পেয়ে আমাকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।'
শুনলাম তুই না-কী নাস্তা করবি না, হলুদে যাবি না, এমনকি এই ঘর থেকেই আজ বের হবি না। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাবি। তাহলে আয় দু'জনে এক সাথেই ঘুমিয়ে থাকি, তুই একলা গৃহবন্দি থাকবি কেন? এতে বোর ফিল করবি। দুজনে একসাথে থাকলে আরও ভালো হবে। এই বাহানায় তোর সাথে আমি একটু রোমান্সও করতে পারব। কী বলিস!
"এই নাহ! নাহ.....!"
আমি জিসান থেকে ছুটেই বলি ____আমার আর দু'দিনও ঘুম আসবে না। থাক!
আমি ছুটে ওয়াসরুমের দিকে দৌঁড় দিলাম। কিন্তু!
'আর কত পাগলী পাগল করবি আমায়, তোর দিওয়ানা হয়ে অবশেষে পাগলাগারদে না যেতে হয়।'
'জিসানের কথায় থমকে যাই। পেছনে তাকাতেই _____উনি কাছে এসে আমার ওড়নাটা আমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়।
হায় আল্লাহ! এতক্ষন ধরে তার সামনে ওড়না ছাড়াই ছিলাম। আমার তো লজ্জায় এখন এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরে যেতে মন চাইছে। উফ!
ফ্রেস হয়ে আমি নিচে চলে আসি। ওখানে জিসান এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি জিসানের পাশের চেয়ারটা ছেড়ে অন্য চেয়ারে বসতে নিলে জিসান আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের পাশে বসায়।
আমি ভীষন অবাক জিসানের এমন আচরণে। কারন তখন আশেপাশে অনেক আত্মীয় স্বজন ছিল। তারা যে ব্যাপারটা দেখেনি এমন না, সবাই দেখেছে।
'জিসান উনার প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, খাও!'
আমি এত খেতে পারব না। আপনিই খান, আপনারটা!
'তুই খাবি? না-কী আমি খাইয়ে দিব। জিসানের হুমকি স্বর, আর স্থির দৃষ্টি আমার দিকে।'
আমি জিসানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, আশেপাশে চোখ বুলালাম। আশেপাশে অনেক মানুষ।এখন না খেলে এই লোকটা সত্যিই সবার সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে। কোনও বিশ্বাস নেই। তার চেয়ে ভালো নিজের হাতেই খাই।
আর এসব দূর থেকে দাঁতেদাঁত চেপে আশা আপু দেখছিল আর জ্বলছিল।
•
আমরা সব কাজিনরা মিলে রুপকদা দের উঠানে বসে গল্প করছিলাম। আজ রুপকদার হলুদ সন্ধ্যা। তাই সবাই মিলে আলোচনা করছে কে কী পড়বে? কে কী করবে?
আমিও বসে বসে নিশির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাত চোখ গেল বাড়ির গেটের দিকে। জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
রুপকদা ও তার কিছু ফ্রেন্ডসরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই রুপকদাকে টিজ করছে। হয়তো সুরভি ভাবীর কথা বলছে, তাই তো ভাইয়ার মুখটা টমেটোর মত লাল হয়ে যাচ্ছে।
'এসবের মাঝে আমার চোখ গেল জিসানের উপর। স্কাই ব্লু কালারের একটা শার্ট পড়া তবে কালারটা বেশ মানিয়েছে তাকে।
হাতের দু আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট টা চেপে রেখে কপালে আসা সিল্কি চুলগুলোকে বার বার হাত দিয়ে সরাচ্ছে। অদ্ভুত বিষয় আজ কেন জানি তাকে দেখতে আমার ভীষন ভালো লাগছে। সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও মনে হয় ক্লান্ত হবো না। উফ!....এমন কেন হচ্ছে।'
হঠাত জিসানের চোখ পরে আমার ওপর। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলি।
ছি! কী লজ্জার বিষয়। কিন্ত ব্যাটা খাটাইশ কী বুঝে গিয়েছে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।
'হঠাত নিলুর চিতকারে আমার আত্মা কেঁপে উঠে, আর আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। জমিলা কিছুক্ষন আগে আমার হাতে মুড়ির একটা ঝুড়ি দিয়ে গিয়েছে। গ্রামের ভাজা মুড়ি, একটু অন্যরকম টেস্ট। কিন্ত কথার ঝুড়ির মাঝে মাঝে খেতে ভালোই লাগে।'
আসলে আমি জিসান কে দেখতে, এত টাই মগ্ন ছিলাম যে মুড়ির কথা ভুলেই গিয়েছি।
হঠাত নিলু এসে পেছন থেকে ভো বলায় হাতের সব মুড়ি ঝুড়িসহ নিশুর শরীরে উপর পরে যায়। নিশিকে দেখে মনে হচ্ছে ও এই মাত্র মুড়ি দিয়ে গোসল করেছে।ঝুড়িটাও ওর মাথায়।
'নিশি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর রাগ দেখে আমি কানে ধরে সরি বলি, ইশারা করে।'
ঠিক ওই সময় রায়হান ভাই ওখান দিয়ে যাচ্ছিল। নিশির এই অবস্থা দেখে সামনে এসে দাঁড়ায়।
'নিশির পুরো শরীরে মুড়ির ছড়াছড়ি। এমনকি ওর হাতের কফিটাও মুড়িতে ভরে গিয়েছে।'
'রায়হান ভাই কিছু মুড়ি মুখে নিয়ে বলে ____টেস্ট তো ভালোই। তবে সাথে পেয়াজ, মরিচ, টমেটো আর চানাচুর হলে ভালোই হতো কী বলিস! তিশা ওগুলো বাদ রাখলি কেন?
একথা বলে হনহন করে চলে গেল। আর এদিক দিয়ে বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি নিশির অবস্থা দেখে।'
আমিতো আবাক! ভাইয়া এসময় এ কথা কীভাবে বলল। এমনেই নিশি ভীষন রেগে আছে। এখনতো সব জ্বাল আমার উপর তুলবে। আমি নিশির দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম।
কিন্তু ব্যর্থ হলাম নিশি এতক্ষনে তেরে আসতে লাগল আমার দিকে। আমি ভয়ে দিলাম দৌঁড়।
'কীভাবে যেন পুকুরপাড়ে চলে আসলাম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে। রুপকদা দের এই পুকুরটা অনেক গভীর আর বড়ো। আমি আবার সাঁতার জানি না তাই রুপকদা আমাকে এটার সামনে আসতে মানা করেছিল। আমি চলে যেতে নিব ঠিক তখনি কেউ আমাকে ধাক্কা দিলে আমি পানিতে পড়ে যাই।'
.
.
.
চলবে……......................................................