"থমথমে পরিবেশ, জিসান চোখমুখ শক্ত করে,রাগান্বিত লুকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি তার দিকে তাকাতেই পারছি না।তার রক্তিম চোখের দৃষ্টি আমার ছোট্ট রুহটা কেপে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে।হাতের দুআঙ্গুলে ওড়নাটা প্যাচ করছি আর খুলছি।জিসানের দৃষ্টি এখনো আমার দিকে।
আর আমার দৃষ্টি সাদা টাইলস করা মেঝের মধ্যে ছুটে চলা ছোট ছোট পিপিলিকার দিকে।কিভাবে চারদিকে ছুটাছুটি করছে।আমারও এখন মন চাইছে, পিপিলিকা হয়ে যেতে,তাহলে হয়তো জিসান নামক এই যমরাজ থেকে রক্ষা পেতাম ক্ষনিকের জন্য হলেও।"
---স্টোপ দিস নোনসেন্স তিশা।
"আমি তার চিল্লানিতে কিছুটা কেঁপে উঠলাম।জিসানকে আমার দিকে আসতে দেখে,আমি ভয়ে পিছাতে নিলে।আমাকে ইশারায় সামনে আসতে বলে।"
---রাইট নাউ।
"আমি কচ্ছপের মতো আস্তো আস্তে পা ফেলে তার সামনে দাঁড়াই।জিসান আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দু'সাইডের হাতলে নিজের দু'হাত রেখে আমাকে আটকে ফেলে।আমার দিকে একটু ঝুকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে।"
---ছেলেটা কে তিশা?দাঁতেদাঁত চেপে।
"আ আআ আবি র ভাই য়য়া।আমি কাপাকাপা গলায়।"
---কে এই আবির ভাইয়া,যাকে আমি চিনি না।কি হয় তোর।কি সম্পর্ক তোর সাথে।স্পিক আপ ডেম। আই কান্ট হেনডেল মাইসেল্ফ।স্পিক!-----চিল্লিয়ে।
"জিসানের এমন ভয়ার্ত লুকে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।এখনি মনে হয় কলিজাটা ফেটে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।ভয়ে জিসানকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম।
'-আ আবির ভভাই য়া নননিলুর কা জিন।নিলুর ব্যাপারে কথা বলতেই গিয়েছিলাম আ আবির ভাইয়ার সাথে।
নিলু আবির ভাইকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আবির ভাই নাকি অন্য কাউকে ভালো বাসে।আর সেই মেয়েটির বিয়েও হয়ে গিয়েছে।"
(তিশা নিজের কথা জিসানকে বলতে চায়না কারন জিসান এতে আরো রেগে যাবে।তাই কথাটা লুকিয়ে ফেললো।জিসান যদি জানে আবির যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ না তিশা।তাহলে কিছু চিন্তা না করেই আবিরকে কিছু করে ফেলবে)
---তাই তাকে বুঝাতে গিয়েছিলাম।নিলুও তাকে খুব করে চায়।সে যেনো নিলু আর তার সম্পর্ক কে একটা সুযোগ দেয়।
নিলু আজকাল খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে।তাই জাস্ট তার সাথে………তিশাকে আর কিছু বলতে দিলো না জিসান।
"তিশার দিকে আরো একটু ঝুকে গালটা খুব রুডলি ভাবে হাতদিয়ে চেপে ধরে।
সাহস কি করে হলো তোর,আমার সাথে মিথ্যা বলার।তাও আবার বান্ধবীর প্রেমিকের সাথে দেখা করার জন্য।
কলিজাটা মনে হয় বেশ বড় হয়ে গিয়েছে।কি ভেবেছিলি,আমি জানতে পারবো না।নাকি আমাকে বোকা ভাবিস।আমার চোখ যে সবসময় তোকে দেখে তাও ভুলে গিয়েছিস মনে হয়।তাইতো এতোটা স্পর্ধা দেখিয়েছিস।
এতোবড় Business Empire চালাই আমি,আমার পিঠপিছে কোন Employee কি করে না করে সব আমার কানে আশে।আর সেখানে আমার বউয়ের খবর রাখাটাতো আমার কাছে খুবই সামান্য একটা ব্যাপার...তাই না।
কান খুলে মগজে ঢুকিয়ে রাখ,
----তোর এমন সমাজ সেবা আমার একদম পছন্দ না।সেবা যদি করতেই বেশি মন চায়,তাহলে আমাকে বলবি,আমি চব্বিশ ঘন্টা তোর জন্য হাজির থাকবো।কিন্তু বান্ধবীর মনের কস্ট দূর করার জন্য,বান্ধবীর প্রেমিকের সাথে লুকিয়ে মিথ্যা বলে দেখা করা আমি মোটেও সহ্য করবো না।এটাই ফাস্ট আর লাস্ট ওয়ার্নিং তোর জন্য।
এর পরও এমন কিছু হলে আমার খারাপ রুপটা দেখাতে কিন্তু বাধ্য হবো।আর আমি কি কি করতে পারি,তাতো নিশ্চয়ই তোর ধারনা আছে।"
"-তাই 'জান 'আমাকে রাগাইশ না।তোর জন্য ভালো হবে না।আমি যথেষ্ট শান্ত হতে চাই তোর ব্যাপারে।কিন্তু তুই এসব করতে থাকলে,আর আমার কথা না শুনলে আগের জিসান আবার ফিরে আসবে।জিসানের ভয়ংকর রুপটা দেখতে চাস।"
---তিশা মাথা নাড়ায়, না।
"আসা করি আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস।"
---তিশা আবার হালকা করে মাথা নাড়ালো।তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান তিশার গালে একটা কিস করে চলে গেলো।
•
ফ্লাশ ব্যাক____
"নিলুর ডাইরীটা পরে জানতে পারলাম,নিলু আবির ভাইকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে।কিন্তু আবির ভাই নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে।আবির ভাইয়ের ভালোবাসা পাবেনা যেনেও নিলু আবির ভাইকে একতরফা ভালোবেসে যাচ্ছে।কি অদ্ভুত মেয়ে।
নিজের কস্টটা ফ্রেন্ডের সাথেও শেয়ার করেনি।আর করবে বা কি করে।ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আমি।আর ওর ভালোবাসার মানুষটি আর কাউকে না ওরই বেস্ট ফ্রেন্ড মানে আমাকে ভালোবাসে।
এটা জানার পর যেমন আমি শোকড হলাম,তেমনি নিলুও।তাইতো কিছুদিন যাবৎ নিলু আমাকে এড়িয়ে চলছে।হয়তো মনের অজান্তে আমি ওকে কস্ট দিয়ে ফেলেছি।"
---নিলুদের বাসায়ই আমার আবির ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে।নিলু পরিচয় করে দেওয়ার পর টুকটাক কথা বলা হতো।কথা বলার পর বুঝতে পারলাম,তার কথায় একটা যাদু আছে।খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলে ছেলেটি,দেখতেও বেশ।তার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগতো।
তার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে তার মুখের হাসি,যা দিয়ে যে কোনও মেয়েকে পাগল করতে পারবে।শুধু আমাকে ছাড়া।কারণ আমার লাইফে তো no entry আগে থেকেই লিখা।
"এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের কথা বারে।দেখা সাক্ষাত আমাদের মাঝে তেমন হতো না।শুধু নিলুর বাসায় ছাড়া।কিন্তু ফেসবুক, ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে।তাও শুধু তার আগ্রহের কারনে।
আর জিসান বাংলাদেশে আসার পরতো আমি তার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছি।ফেসবুক থেকে ব্লক ও করে দিয়েছি।কারন যমরাজ জানতে পারলে আমার পিঠের ছাল তুলে ফেলবে।"
---তিনি নাকি আমাকে ফ্রেন্ড ভাবেন।আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।তার মনে যে আমার প্রতি কোনও অনুভূতি আছো তা তো আমি জানতেই পারতাম না,যদি নিলুর ডাইরীটা না পড়তাম।
আর এই নিলু গাধী আমার জিসানের সম্পর্ক জানার পরও আবিরকে কিছুই বলেনি,কস্ট পাবে বলে।কি দরদ!দরদ একদম উৎলিয়ে পড়ছে।আর এদিক দিয়ে নিজে পারু সেজে বসে আছে।দেবদাস কে হারিয়ে।
-তাই আমি তাদের এক করার জন্য আবির ভাইকে কল করলাম দেখা করার জন্য।কোচিং এর নাম করে বের হয়েছি।আবির ভাইকে একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে আসতে বললাম।"
---আমার সামনের চেয়ারে আবির ভাই বসে আছে।দু'জনেই নিরব আমরা।আসলে শুরু করবো কি করে বুঝতে পারছি না।যখন থেকে জানতে পারলাম,তার মনে আমার জন্য কি অনুভূতি।এর পর তার সামনে আসাটা খুবই অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।আমার মনের কথাটা কিভাবে জানলো বুঝলাম না,তাই নিরবতা কাটিয়ে নিজেই বলা শুরু করলো।
"এতোদিন পর মনে পড়লো আমায়।তুমিতো অমোবশ্যার চাঁদের মতো গায়েবই হয়ে গেলে।সব কিছু থেকে একেবারে আমাকে ব্লক করে দিলে,অথচ দোষটা কি তা বললে না।আমি কি জানতে পারি কি অপরাধ আমার।
আমি কি কোনও ভাবে তোমাকে কস্ট দিয়েছি বা আমার কোনও কাজে তোমার পছন্দ হয়নি।প্লিজ বলো তিশা।আমি জানতে চাই।"
---আবির ভাইয়ের কথায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে,আমারি ভুল ছিলো।তার সাথে এতো মিশাটা হয়তো ঠিক হয়নি।তাকে আগেই আমার অতীতটা বলে দেওয়া উচিৎ ছিলো,তাহলে হয়তো তার মনে আমার জন্য এমন কিছু উদ্ভব হতো না।
আমি আবির ভাইকে আমার আর জিসানের কথা খুলে বললাম।আবির ভাই কথাগুলো শুনে, যে কস্ট পেয়েছে তা তার চেহারায় স্পষ্ট বুঝতে পারছি।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আশ্চর্য বিষয় হলো,উনি কোনও রিয়েক্ট করেনি,খুব শান্ত ভাবে আমার কথাগুলো শুনলো।
"আমাকে আগেই বলতে পারতে তুমি।এভাবে লুকিয়ে রাখার মতো কিছুই নেই।যেখানে তোমার পরিবারও রাজি সেখানে তুমি কেনো তোমাদের সম্পর্কটা এভাবে আড়ালে করতে চাও।তোমার কথা শুনে বুঝতে পারলাম,ছেলেটা (জিসান)তোমাকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো ক্রেজি ফোর ইউ।
একটা কথা মনে রেখো তিশা,তুমি দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। তাই তোমার প্রেমে যে কেউ পড়তে পারবে স্বাভাবিক।
কিন্তু সবাই তোমার জন্য হিমালয়ের পাহাড়টা ভাঙ্গতে পারবে না।কিন্তু এই ছেলেটি পারবে।তোমার জন্য সব কিছু করতে পারবে।তাই বলবো তুমি খুব লাকি।এমন একটা সাথী পেয়ে।এমনকি সেও লাকি তোমাকে পেয়ে নিঃসন্দেহে।
তাই নিজেদের পবিত্র সম্পর্কটা লুকিয়ে রেখো না।জানোই তো ভালোবাসা মরিচিকার মতো।কারো কাছে ধরা দেয়,কেউ আবার ধরতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে।সবার কপালে প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা জোটে না।কিছু কিছু মানুষ আমার মতো অভাগাও হয়।
কিন্তু আমি তোমার উপর নারাজ না বরং খুশি।কারণ তোমার পাশের মানুষটি সত্যিই অসাধারণ। তাইতো তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়াবার আগে তোমাদের সম্পর্কটাকে পবিত্র একটা নাম দিয়ে দিয়েছে।"
---আমি আশ্চর্য হলাম আবির ভাইয়ের কথায়।খুব অবাক লাগলো,তার এমন বিহেভিয়ার দেখে।একজন মানুষ কতোটা ভালো হলে,এমন মুহুর্তেও শান্ত থাকতে পারে।অন্য কেউ হলে,এতোক্ষন আমাকে ধুয়ে দিতো।অথচ উনি আরো জিসানের গুণগান গাইছে।
'আচ্ছা তুমি কি আমাকে এসবের জন্যই ডেকেছো।নাকি আরো কিছু বলবে।'
---একচুয়েলি ভাইয়া।আমি নিলার ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি।
'নিলা!! ওর আবার কি হয়েছে।সব ঠিক আছেতো।'
---না কিছু ঠিক নেই,নিলা কাউকে খুব ভালোবাসে।আজ থেকে নয়,সেই ছোট থেকে।অনেক বছরের ভালোবাসা।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় কি জানেন,যাকে এতো বেশি ভালোবাসে সে এতো কাছে থেকেও নিলার মনের কথাটা জানতে পারেনি।আর নিলা তাকে হারানোর ভয়ে বলতেও পারেনি।
'আচ্ছা কে সেই অপদার্থ।যে নিলার মতো মেয়েকে এভাবে কস্ট দিয়েছে।'
---যদি বলি আপনে।নিলা আপনাকে অনেক ভালোবাসে আবির ভাইয়া।ও খুব কস্টে আছে।হয়তো এতোদিনের জমানো সুপ্ত ভালোবাসা গুলো জমিয়ে রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
'আবির ভাইয়া কথাটা মনে হয় হজম করতে পারেনি।খুব আশ্চর্য হলো।কারন নিলার বাসায় প্রায়ই আবির ভাইয়ের আসা যাওয়ার হয়।কিন্তু নিলার মনের কথা সে বুঝতে পারেনি।এসব কি বলছো তিশা।নিলা,আমাকে!কিভাবে সম্ভব।'
---কেনো সম্ভব না বলুন তো।ভালোবাসাতো আগে থেকে বলে আসে না,নাহি অনুমতি নিয়ে আসে।ব্যাস হয়ে যায়।
আমি বলবো না, ওকে ভালোবাসেন। কারন ভালোবাসা জোড় করে হয়না।আমি চেয়েছি আপনে জানেন,কেউ দূর থেকে আপনাকে ভালোবেসে যাচ্ছে।
আপনার একটু ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষা করছে।এসব জেনে আপনে কি ডিসিশন নিবেন তা আপনার ইচ্ছা।শুধু বলবো মন ভাঙ্গার কস্টটা আপনে জানেন,তাই নিলার কস্টটাও আপনে বুঝবেন।
'আবির ভাইয়া এখনো চুপ।শোকড হলো নাকি কি কিছুই বুঝতে পারলাম না।কিছু একটা চিন্তা করছে।আমি আর কথা বাড়ালাম না।'
---বিদায় নিয়ে বের হতে যাবো,ঠিক তখনি জিসানের ফোন আসে।আর আমি তাকে ভয়ে মিথ্যা কথা বলে ফেলি।কিন্তু কে জানতো।যমরাজ যে আমার সামনে হাজির হয়ে যাবে।
"জিসানও মিটিং এর জন্য একই রেস্টুরেন্ট এ এসেছিলো।ওয়েটারকে ডাকার জন্য পিছনে ঘুড়তেই তিশাকে আবিরের সাথে দেখে ফেলে।জিসানের মাথাটা গরম হয়ে যায়।এসময় তিশার কোচিং এ থাকার কথা।এখানে কি করছে।আর ছেলেটা কে?
ক্লাইন্টরা না থাকলে হয়তো তিশাকে সবার সামনে কষে একটা দিতো।কিন্তু চুপচাপ দাঁতেদাঁত চেপে বসে রইলো।এর পর ফোন দিলে তিশার মিথ্যা কথাটা জিসানের রাগটা আরো বাড়িয়ে দেয়।
তিশার সামনে এসে তিশার হাত ধরে টানতে টানতে নিজের গাড়ীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে।জিসানকে এসময় এখানে দেখে তিশার প্রাণ পাখিটা মনে হয় উড়ে গেছে।মনে মনে যতো দোয়া দরুদ যতো ছিলো সব পড়ে ফেলেছে।"
•
"কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম।বাড়ীর নিচ থেকে কেউ হর্ণ বাজিয়ে মাথাটা গরম করে তুলছে।এটা আর কারো কাজ না,হিটলার সাহেবে ছাড়া।আমি তারাতারি করে ব্যাগটা কাধে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম।
সাহেব গাড়ীতে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছে,পারে না মোবাইলের ভেতর ডুকে পড়বে।কি এমন মধু লেগে আছে মোবাইলে আল্লাহই জানে।তাইতো আমার দিকে তাকাবার সময়ও নেই।"
---যা খুশি তাই করুক আমার কি,আমি তার কালকের ব্যবহার ভুলি নাই।এতো সহযে ভুলবো না মিস্টার জিসান।হঠাৎ গাড়ীর সামনের সিট থেকে একজন অপরিচিতা নেমে আসলো।ওয়েস্টার্ন ড্রেসআপে মেয়েটাকে কি সুন্দর না লাগছে।সাধারণত বাঙ্গালি মেয়েদের শাড়ীতে মানায়,কিন্তু এই মেয়েকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।মনে হলো,অন্য কোনও ড্রেস তার জন্য মানানসই নয়,এটাই বেস্ট তার জন্য।এটা কি তাহলে সেই মেয়ে যার কথা নিশি কাল রাত ফোন করে বলছে।
মেয়েটা নাকি প্যারিস থেকে এসেছে।জিসানের সাথে দেখা করতে এসেই জরিয়ে ধরেছিলো সবার সামনে।জিসানের ফ্রেন্ডস +বিজনেস পার্টনার।কিন্তু বিলাতি ম্যাম এখানে কেনো এতো সকাল সকাল।
"উফ! জিসান এখানে কেনো গাড়ী থামালে।জিসানের হাতের মাঝে নিজের হাতটা ডুকিয়ে।"
---নিশা গাড়ী থেকে বলে উঠলো,আমার বান্ধবীকে পিক করবো তাই।ওই তো ও এসে পড়েছে।নিশা গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছে আসলো।কিন্তু আমার দৃষ্টি আপাতত জিসানের হাতের দিকে।যেটাকে মেয়েটি নিজের দু'হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে,জিসানের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।
জিসান এবার মোবাইল থেকে মাথাটা তুলে তিশার দিকে তাকালো।তিশার ফেস দেখে বুঝতে পারলো,ব্যাপারটা কি।তাই জিসান নিজেই লাবনি থেকে হাতটা ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
"নিশি তিশাকে লাবণির সামনে এনে,তিশা উনি লাবনি দি।প্যারিস থেকে এসেছে।ভাইয়ার ফ্রেন্ড। "
---ও তিশা ইউ আর সো কিউট।একদম ডানা কাটাপরী।তিশার গালদুটো টেনে।
"কিছুক্ষণ পর রায়হান আসলে জিসান রায়হানের সাথেও পরিচয় করে দেয়।
লাবণি ও হলো রায়হান।তোমাকে বলেছিলাম না।"
-ও ইয়া রায়হান। নাইস টু মিট ইউ।হ্যান্ডসেক করে।তোমার গল্প এতো শুনেছি জিসানের মুখে কি বলবো।আমারতো খুব হিংসা হতো।মেয়ে হলে নির্ঘাত জিসান তোমার প্রেমে পরে যেতো।
---বাই দা ওয়ে তিশা কিন্তু রায়হানের বোন।আর নিশির বেস্ট ফ্রেন্ড।
"ও তাই নাকি।তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বোন,তোমার বোনের বেস্ট ফ্রেন্ড।ওয়াও সো এমেজিং।"
---তিশার খুব খারাপ লাগলো।কারণ জিসান শুধু ওর পরিচয়টা নিজের ফ্রেন্ডের বোন বলে দিয়েছে।
কিন্তু কেনো!তিশার তো খুশি হবার কথা।তিশা নিজেও চাইতো,ওর আর জিসানের সম্পর্কটা পাবলিক না করতে।তাহলে আজ যখন জিসান নিজে তাদের সম্পর্ক টা লুকালো তখন তিশার এতোটা খারাপ কেনো লাগছে।নিজের অজান্তে চোখের কোনায় জল জমে গেলো।
গাড়ীতে আজ তিশার জায়গায় লাবণি বসেছে।আর তিশা নিশির সাথে পেছনে।পুরো রাস্তায় তিশা আর কোনও কথা বললো না।জিসান লাবণির সাথে কথা বলতে বলতে আর চোখে মিরর দিয়ে তিশাকে দেখলো।
"তিশার বিষণ্ণতা মাখা মুখখানি জিসানের বুকে তীরের মতো লাগছে।এমন হাজারো কস্ট জিসান পেয়েছে তিশার থেকে।তাইতো আজ ইচ্ছা করেই নিজের আর তিশার সম্পর্কটা লাবণির সামনে তুলে ধরেনি।
তিশাকে কস্ট দিতে চায়নি,শুধু নিজের কস্টটা বুঝাতে চাইছে।
কারন তিশাও তাদের সম্পর্কটা সবার থেকে লুকিয়ে রাখে। কারণ টা কি জিসানের আজও জানা নেই।"
•
" মনটা ভালো নেই,বিষণ্ণতা ভর করেছে মনের মধ্যে,হাহাকার করছে কারো জন্য।কেনো জানি মনে হচ্ছে কি যেনো হারিয়ে ফেলছি জীবন থেকে।লাবণির সাথে জিসানকে দেখে আমার মনটা কেনো এতো জ্বলছে।কেনো আমার সহ্য হচ্ছে না।
একদলা কালোমেঘ যেনো আমার আকাশটাকে অন্ধকার করে তুলছে।আর আমি হাতছানি দিয়ে কিছু খোঁজার চেস্টা করেও পাইনি।উনাকে হারানোর কথায় মনটা কেমন কেঁদে উঠছে বার বার।আশ্চর্য! আগে তো এমন হয়নি,তাহলে আজ কেনো।
তাহলে কি আমি জিসানকে ভালোবেসে ফেলছি।হুম!জিসান আমায় তার মায়ায় জরিয়ে ফেলেছে,তার ভালোবাসার বাঁধনে আমাকে বেধে ফেলেছে।নিজের অজান্তেই তিশার মুখে হাসি আর চোখে জল এসে পড়ছে।"
---ক্লাশেও মন নেই তিশার।নিশি ও নিলু ব্যাপারটা খেয়াল করলো।কিন্তু তবুও কিছু বললো না।ভাবলো তিশার মন ভালো হলে তিশাই বলবে সমস্যা কি।ছুটি হবার আগ পর্যন্ত তিশা ছটপট করতে লাগলো।তিশার এমন বিহেভিয়ার দেখে নিলু কয়েকবার জিঙ্গেস করেছে,কিন্তু কোনও উত্তর পেলো না।
'-ছুটির পর নিশি ও তিশা গাড়ীতে উঠতে নিবে ঠিক তখনি জিসানের ড্রাইভার রফিক গাড়ী নিয়ে তাদের সামনে আসলো।'
---আরে রফিক ভাই,আপনে এখানে কি করেন।আমরাতো গাড়ী নিয়ে এসেছি।
'রফিক গাড়ী থেকে নেমে,
আসলে নিশি আপু আমাকে ভাই পাঠিয়েছে,ভাবীকে নিতে।
তিশা খুব অবাক হয়ে রফিকের দিকে তাকালো।কেনো?আর কোথায়।'
---ভাই অফিসে,আপনাকেও অফিসে নিয়ে যেতে বলেছে।
'তিশার মেঝাজ গরম হয়ে গেলো,কি চায় লোকটা।কাল বকেছে,আজ ইগনোর করেছে।তাহলে এখন আর কি বাকি।অপমান করার বাকি আছে তাইতো।না হলে অফিসে আমার কি কাজ।ভাইয়া আমি কোথাও যাবো না,আপনে চলে যান।আমি এখন বাসায় যাবো।'
'আপনে না গেলে,ভাই খুব রাগ করবে আমার উপর।আমার চাকরী থাকবে না।
তিশাও জানে জিসানের রাগ সম্পর্কে।তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলো।'
.
.
.
চলবে.............................................................