ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ০৯ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


আজ তাওহীদ ভাইয়ার গায়ে হলুদ। সকাল হতে-ই মা তাড়া দিচ্ছে জিসান ভাইদের বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি বুঝি না, এত সকাল সকাল আমি ওখানে গিয়ে কী করব? আরে ভাই, বিয়ে তো আর আমার না, তাহলে অন্যের বিয়ের জন্য আমি আমার এত সাধের ঘুম কেনো নষ্ট করব। ঠিক এ সময় আমার ঘরে মায়ের ভূতের মত আগমন হলো।

'তিশা তুই কী উঠবি না?'

আমি চোখ দুটো হালকা খুলে, উফ! মা, এমন কেন করছ? গায়ে হলুদ রাতে, আর এখন সকাল। এত তাড়াতাড়ি আমাকে কেন ঐ বাসায় যেতে হবে।
কাজের মেয়ের কী অভাব পরেছে। না-কী আমার বাসায় খাবারের অভাব পরেছে।

'দেখ, তিশা! বাজে কথা বলিস না। নিশি, জিসান আর তোর আন্টি বেশ কয়েকবার কল করেছে, তোকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।'

আমি আবার চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললাম, 'আন্টিকে বলো আমি বিকেলের দিকে চলে আসব।'

'ঠিক আছে! এই নে..... বলে, আমার হাতে মা তার ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগও দিল না কে ফোন দিয়েছে। যতসব!'

নাম্বার চেক না করে, ফোনটা কানে দিয়ে, ঘুম ঘুম কন্ঠে, হ্যা...লো বললাম। কিন্তু কেউ কেনো কথা বলছে না দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল। বিরক্ত কন্ঠে গড়গড়িয়ে বলে ফেললাম, 
'আরে ভাই চুপ করে বসে কী ধ্যান করছেন। কথা বলছেন না কেন? সকাল সকাল ফোন করে আমার ঘুম নষ্ট করেন, যতসব আজাইরা পাবলিক বলে ফোনটা কাটতে নিলে...

'তিশা!......খুব মায়াভরা কন্ঠে কেউ ডেকে উঠল আমায়।'

'আমি'তো শকড! এত সুন্দর করে কে ডাকছে আমায়? কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে, তিতা করলার কন্ঠ না এটা। বাট এই মানুষটি কখনো আমাকে এমন মধুর কন্ঠে ডাকেনি। অলওয়েজ চিল্লিয়ে ডাকে। হঠাত এত চেঞ্জ। '
হুম! অস্পষ্ট স্বর বের হলো।

'কয়টা বাজে এখনো ঘুম থেকে কেন উঠিস নিই? উঠ তাড়াতাড়ি। আর রেডি হয়ে চলে আস বাসায়।'

'আরও একটু ঘুমা-ই না জিসান ভাইয়া। আমি এখন এসে কী করব? বিয়ে'তো আর আমার না যে, না আসলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। যার বিয়ে সে থাকলে-ই চলবে। বাকি মানুষের কী কাজ ওখানে?'

'কেন? তোর কী বিয়ে করার শখ জেগেছে? বিয়ে করবি? রাজি থাকলে তোর বিয়েটাও করিয়ে দেব।আমি কিন্তু এক পায়ে রাজি।'

'আমি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ি। আরে..রে কী বলছেন? ব্রেক মারুন, আমি কখন বললাম আমি বিয়ে করব, আমি তো জাস্ট………। আমাকে আর বলতে দিল না হিটলার।'

'এক ঘন্টা সময় আছে তোর কাছে, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নে, আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। ভদ্র মেয়ের মত চলে আসবি। রাতে আমাদের সাথে-ই সেন্টারে যাবি। আমি কিছু বলতে যাব, তার আগে-ই ফোনটা কেটে গেল। হিটলার কোথাকার! কথাও শুনলো না আমার।'

আমার আর কী করার, চলে গেলাম তাদের বাসায়।আমি না গেলে এই ব্যক্তি আমার কান ধরে নিয়ে যেত।তার থেকে ভালো নিজের পায়ে হেঁটে যাই। মানসম্মান তো কিছুটা হলে বাঁচবে। 


রাতে যথা সময় গায়ে হলুদ আড়াম্ভ হলো। আমি ও নিশি সবার পরে সেন্টারে গেলাম। রেডি হবার সময় বুঝতে পারলাম,আমার শপিং এর রহস্য। জিসান নামের পাবলিকের কারসাজি এটা। আমার আর নিশির সব কিছু-ই এক, শুধু কালার আলাদা।

এক এক করে সবাই তাওহীদ ভাইকে হলুদ দিয়ে দিল।হলুদের পর নাচ গানের আয়োজনও করা হয়েছে। আর এতে সবাই খুব ইনজয়ও করছে।
আমিও এক পাশে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম। হঠাত একটা অচেনা ছেলে এসে আমার পাশে দাঁড়াল। আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। সে আবার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল_____

hello bab, I'm Orko... what's your name.... !

আমি তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, চিনি কী-না!
 নাহ! আমি চিনি না। কিন্তু ছেলেটা যে আমাকে অনেকক্ষন ধরে ফলো করছে তা বুঝতে পেরেছি। এখন একা পেয়ে কথা বলতে এসেছে।
সে আমার নাম জিজ্ঞেস করায়, ভদ্রতার খাতিরে আমিও বলে দিলাম। আমি তো আবার একটু বেশি ভদ্র মেয়ে।
তিশা...! মাই নেম ইজ তিশা। বলে আমি চলে যেতে নিলে ছেলেটা আমার হাতটা ধরে ফেলে। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকা-ই। ভরকে বলি, হাত কেন ধরেছেন?

'why are you shouting, clam down.I am coming to talk to you.you look so hot.Read in any class.... bab..'

ছাড়ুন আমার হাত। আমি কিন্তু এখন ঠিক-ই চিত্কার দেব। এটা বলার পর অর্ক আমার হাতটা আরও জোরে চেপে ধরল। বলল,
'ওয়াও! তোমার দেখি রুপের সাথে তেজও আছে। পিচ্ছি হলে কী হবে? কিন্তু এটিটিউট তো বড়োদের মত।'

তুমি জানো, আমি কে? মিনিস্টারের ছেলে। যে মেয়ের গায়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করব সাথে সাথে আমার কাছে এসে পড়বে। আর আমি সেধে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি, তুমি আমাকে এভয়েড করছ! সাহস তো তোমার কম না দেখি!

'খুব জোরে গান বাজছে, তাই এদিকে কী হচ্ছে কেউ শুনতেও পাচ্ছে না।'

হাত না ছাড়লে, থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলে দেব ফাজিল ছেলে। সাহস কী করে হলো, আমার হাত ধরার। ছাড় বলছি, এক ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে ফেলি। তুই কে আমি জেনে কী আচার বানাব। দূরে থাক আমার থেকে।

'ও রিয়ালি! আমার সাহস দেখতে চাও। তাহলে চল।আমার হাতটা আবার ধরতে নিলে। আমি পেছনে সরে যাই, আর পেছনে দাঁড়ান ব্যক্তিটার সাথে ধাক্কা খাই।তাকিয়ে দেখি জিসান ভাই, অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।'

---আমি জিসান ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে____ভাইয়া দেখুন না, এই ছেলেটা কতক্ষন ধরে আমার সাথে অসভ্যতামী করছে।

জিসান ভাইয়া চুপ কিছু-ই বলল না, আমি কিছু'টা শকড!
উনি নিশিকে কল করে আমাকে ওর সাথে নিয়ে যেতে বলল। আর জিসান ভাই অর্কের কাঁধে হাত রেখে সেন্টারের বাহিরে চলে গেল। আমি এখনো তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। অদ্ভুত বিষয়! জিসান ভাই এত শান্ত কিভাবে! নাকি ঝড় আসার পূর্বাভাষ যেন।

---আমি আর কিছু না ভেবে নিশির সাথে চলে গেলাম। কিছুক্ষন পর উনিও কি সুন্দর মত ফাংশনে এসে হাজির হলেন। বিহেভ এমন যেন কিছু-ই হয়নি। অবশ্য পুরো অনুষ্ঠানে অর্ককে আমি আর দেখি নাই।

'পরের দিন বিয়েটাও ভালো মত হয়ে গেল, তানজিলা ভাবি'কে সবাই স্বযত্নে বরন করে নিল বাসায়। আমি অবাক হলাম যখন তানজিলা ভাবির আমাকে দেখার আগ্রহ যেনে।
আরে আমি'তো এই বাড়ি'র কেউ না, তাহলে আমাকে দেখার জন্যও এত আগ্রহ কেন, ওয়াই!
তার আবার ভাইটাইয়ের গলায় আমাকে জুলিয়ে দেবার প্লানিং করছে না'তো। খুবই কনফিউজড আমি। আজ কাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই।'

বিয়ের পর বেশ কিছুদিন কেটে গেল, আমি সেদিনের ঘটনাটাও মন থেকে মুছে ফেললাম। কিন্তু বলে না, কিছু ঘটনা আপনার পুরো জীবনকে চেঞ্জ করে ফেলে। আমার সাথেও তাই ঘটল। আমি ভুলে গেলেও একজন মানুষ ভুলে নিই, আর সে হলো অর্ক। সেদিন জিসান ভাই বাহিরে নিয়ে অর্ককে অনেক মারে, পরে রায়হান ভাই ও তাদের ফ্রেন্ড রনি এসে জিসান ভাইকে আটকায়।

'তবে তৌফিক আংকেল খুব রেগে যায়, জিসান ভাইয়ের উপর। কারন অর্ক কোন সাধারন ছেলে ছিল না। মিনেস্টারের ছেলে। খুব কৌশলে এই ঘটনাটা দামা চাপা দেন আংকেল। আর জিসান ভাইকে ওয়ার্নিং!'


দেখতে দেখতে আমার এইটের ফাইনাল পরীক্ষা শেষের দিকে। আমি অনেক আকাশ পাতাল চিন্তা করে রেখেছি। আরে বাবা, পরীক্ষা শেষ হলে-ই তো নাইনে উঠে যাব। নিজের মধ্যে একটু বড়ো বড়ো ফিলিংস আসা শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকে-ই। এতদিন তো আমি পিচ্ছির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম।"

---কিন্তু আমার এই খুশিটা ছিল একদম ক্ষণস্থায়ী।আমার কপালে হয়তো অন্য কিছু লিখাছিল। বলে না আমরা অনেক কিছু চিন্তা করে রাখলে কী হবে, আমাদের চাবিকাঠি'তো অন্যের হাতে। সে যেভাবে চাইবে তাই হবে। অনেক দিনের তিলে তিলে গড়া কুড়ের ঘড়টাও হঠাত আসা ঝড় হাওয়ায় ভেঙে যায় তার-ই হুকুমে।

আমার জীবনেও এমন এক ঝড় এসে পরে, সেদিন আমার লাস্ট পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বের হলাম খুশি মনে। ফ্রেন্ডসদের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। মনটা অনেক খুশি।এবার রিলেক্স হবার পালা, নতুন নতুন কত সুন্দর মুভি এসেছে তা সব দেখব। মাকে বলব সীমা আপুদের বাসায় নিয়ে যেতে, অনেক দিন হলো তাকে দেখি না।

---এসব চিন্তা করতে করতে হাটছিলাম। হঠাত একটা মাইকো এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আমি কিছু'টা ভয় পেয়ে গেলাম।মাইকো'টাকে দেখে আমি আমার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা পেলাম না।
মাইকো থেকে অর্ক ও আরো দুজন ছেলে নেমে এসে আমাকে জোড় করে তুলে নিল। চিত্কার দেওয়ার আগে-ই মুখ চেপে ধরল। অনেক চেষ্টা করেও ছুটতে পারছিলাম না। আমার ছুটাছুটির কারনে অর্ক রুমাল দিয়ে নাকে মুখে চেপে ধরলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

যখন আমার জ্ঞান ফিরে, নিজে'কে একটা রুমে আবিষ্কার করি। মাথাটা এখনো ধরে আছে। চোখে এখনো কেন জানি ঘুম ঘুম ভাব আছে। আমি কোথায় আছি ভাবতে লাগলাম।
মনে পড়ে গেল আমাকে'তো অর্ক তুলে এনেছে এখানে।হঠাত দরজা খুলার শব্দে আমি আতকে উঠলাম। চেয়ে দেখি অর্ক ও আরো দুজন ছেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। আমি অর্ককে দেখে চিত্কার করে উঠলাম আমাকে এখানে কেন এনেছেন। কী ক্ষতি করেছি আমি আপনার?

---অর্ক হাসতে লাগল। আমার সামনে মুখ এনে বলতে লাগল-তোর অনেক তেজ তাই না। সেই তেজ আমি দূর করতে নিয়ে এসেছি।
আর তোর ওই আশিককেও তো শিক্ষা দিতে হবে।আমার গায়ে হাত তুলার পরিণাম কত'টা ভয়ানক হতে পারে এটা এখন বুঝবে। সে আচানক আমার চুলের মুঠি ধরে বলে, 'তোর এমন অবস্থা করব আজ, যাতে আয়না দিয়ে নিজের চেহারা দেখতেও ভয়ে আতকে উঠবি। আর তোর আশিক তোর এ অবস্থা দেখে বেঁচে থেকেও মরে যাবে। আমি অর্কের কথার আগামাথা কিছু-ই বুঝলাম না। কোন আশিক এর কথা বলছে তিনি। আমার এমন কেউ নেই।'
আমি ওর হাত থেকে চুল ছুটাবার চেষ্টা করে বলছি। আপনার হয়তো ভুল হচ্ছে, আমার এমন কোনও আশিক নেই। প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। আমি বাসায় যাব।

'আমার কথা শুনে অর্ক সহ বাকি দুছেলে হেসে উঠল।'
বলল, 'ব্রো যাই বলিস না,মালটা কিন্তু****।'

'হুম ঠিক বলছিস।'

'তাহলে আজ জমিয়ে পার্টি হবে, ভাগে কী আমরাও পাব।'

'অফকোর্স! তা আবার বলতে হবে।'

আমি এদের কথা শুনে বুঝতে পাড়লাম ,আজ আমার সাথে ভয়ানক কিছু হবে। যার কথা হয়তো আমি কোনও দিন কল্পনাও করিনি। এসব কী সত্যি আমার সাথে হচ্ছে। না-কী এখনো আমি ঘুমিয়ে আছি। আর মা কিছুক্ষন পর আমাকে ডাকতে আসবে। তিশা তিশা করে চিল্লাবে।

আজ মাকে খুব মনে পড়ছে। মা প্লিজ আমাকে ডাক, আমি আর এই স্বপ্ন দেখতে চাই না, মা তুমি কোথায়? আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মাথার চুলগুলো মনে হয় ছিঁড়ে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে।

'বাকি দুটো ছেলে চলে গেল, আর অর্ক আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। নিজের শার্ট খুলতে লাগল। আমি এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কোথায় পালানো যায় কী না! অর্ক আমার দিকে এগোতে থাকলে আমি দৌঁড় দিয়ে বারান্দায় চলে যেতে নিলাম।উদ্দেশ্য গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেব। কিন্তু আমি বারান্দায় যাবার আগে-ই অর্ক আমাকে ধরে ফেলে।
ছুটতে চাইলে, আমাকে জোড়ে কয়েকটা থাপ্পর মারে, থাপ্পরের কারনে আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।আমি অনেক'টা দূর্বল হয়ে পড়ি। শরীরে মনে হয় আর শক্তি নেই। আমাকে ধাক্কা দিয়ে আবার বিছানায় ফেলে দেয়।'

এখন আর উঠার শক্তি পাচ্ছি না, মাথাটাও ভো ভো করছে। চিত্কার করে কাঁদতে মন চাইছে। রায়হান ভাইকে খুব বেশি মনে পড়ছে। আমি কোথাও যেতে চাইলে রায়হান ভাই মানা করলে, রাগ করে বসে থাকতাম। তখন রায়হান ভাই এসে বলতো তিশা বাহিরের জগত'টা অনেক খারাপ। কখনো এর আসল চেহারা দেখলে তুই সহ্য করতে পারবি না বোন। আর আমি তোকে হারাতে চাই না।

"তিশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, বার বার একটা কথা মনে পড়ছে, ভাই তুই কোথায়? আমি যে সত্যি সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ ভাই আমাকে নিয়ে যা।"
.
.
.
চলবে……........................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp