ছোট মামা তিতাসকে ডেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে প্রশ্ন করলেন, পাত্রী পছন্দ হয়েছে কি না?
তিতাস এদিক সেদিক তাকিয়ে উত্তর দিলো, 'মামা। মেয়েটা ভালোই কিন্তু আমরা একজন আরেকজনের জন্য না।'
- সেটা আমিও আন্দাজ করছিলাম। বিয়ে তো আর হচ্ছে না, তখন আর এদের বাড়িতে থেকে লাভ কি?
- আমার আরেকজনকে ভালো লেগে গেছে মামা।
- ওই শিউলি ফুলের মেয়েটা?
- হুমম।
- ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিস?
- না। আমার ফোনটাই দিয়ে এসেছি।
- কিহ?
মামা যেন ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলেন। প্রথম দর্শনেই সে তার আইফোন একটা মেয়েকে দিয়ে এসেছে, এ আবার কেমন তাজ্জব কথা! অবিশ্বাসের সুরে বললেন, 'পাগলে কামড়িয়েছে? তুই জানিস তুই কি বলছিস?'
- জ্বি মামা।
- তুই দিলি আর মেয়েটা ফোনটা নিলো?
- হুম। কারণ আমি ইচ্ছেকৃতভাবে ওটা ফেলে এসেছি। মেয়েটাকে দেইনি।
তিতাস হাসলো। কায়েস পুকুরে সমানে ঢিল ছুঁড়ছে। পানিতে গোল তরঙ্গ খেলা করতে করতে মিলিয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পানি অতিরিক্ত সবুজ। চারিদিকে গাছগাছালি থাকায় গাছের পাতা পড়ে গাছরঙা পুকুর হয়ে গেছে। কোনো ঘাট নেই। সাধারণত কেউ এখানে গোসল করে না তাই ঘাট বাঁধানো হয় নি। কায়েস পানিতে ঢিল ছুঁড়ছে আর পা নাচাচ্ছে। তিতাস এসে পাশে বসলো। কায়েস বললো, 'ওয়ামিয়া নাহার, কি অবস্থা?'
- এ আবার কি ডাক কায়েস মিয়া?
- ওয়ামিয়া আর কায়েস মিয়া, দারুণ মিল না?
- হ্যাঁ। এক কাজ কর, তুই বিয়ে করে ফ্যাল।
- করা যায়। যেহেতু পাত্রী আমাকেই পছন্দ করে ফেলেছে।
- শিওর?
- প্রথমে আমাকে পাত্র ভেবেছিল। ওর ছোটবোন আমাকে হাসতে হাসতে বললো সে কথা।
- দোস্ত, প্লিজ তাহলে তুইও ওকে পছন্দ করে ফেল। আমাকে দিয়ে হবে না।
কায়েস জোকারের ভঙ্গিতে হাসতে লাগলো। বন্ধুর মাথাটা বোধহয় গেছে। হাসির তালে তালে পানিতে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো ও। তিতাস বলল, আমার এই গ্রামের আরেকজনকে ভালো লেগেছে রে।
এতক্ষণে ঢিল বন্ধ করে তিতাসের দিকে তাকালো কায়েস। অবাক হয়ে জানতে চাইলো, কি বলিস? কে সে?
- নাম রূপসা। তোর চোখে হয়তো ওয়ামিয়াকেই ওর চেয়ে বেশি সুন্দর মনে হবে। কারণ ওয়ামিয়া বেশি ফর্সা। তুই আবার ফর্সা মেয়েদের ভক্ত।
কায়েস তিতাসের বুকে একটা ছোট্ট ঘুষি বসিয়ে দিয়ে বললো, ফাজলামো রাখ। কাহিনিটা কি বল?
তিতাস সবিস্তারে বর্ণনা করলো রূপসার ব্যাপারটা। কথাগুলো শোনার পর কায়েস কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আবার অনবরত পুকুরের পানিতে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো। কায়েসের সামনে অসংখ্য ছোট বড় ইটের টুকরা। ঢিলের অভাব হচ্ছে না। তিতাসও উত্তরের অপেক্ষা না করে উঠে পুকুরের চারদিকে পায়চারি করতে করতে ভাবতে লাগলো। রূপসার সাথে আরো কিছু কথা বলা দরকার। অন্তত এমন কিছু করতে হবে যাতে রূপসার মনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়। যা করার আজকেই করতে হবে। আগামীকাল আবার চলে যেতে হবে।
রূপসা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে বরাবরের মতই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। তিতাস অনুমতি দিয়েছে। ওর ফোনের গ্যালারিতে প্রবেশের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সে অনুমতি না দিলেও নির্ঘাত প্রবেশ করতো রূপসা।
গ্যালারিতে অসংখ্য এলবাম। বেশিরভাগই 'ন্যাচার ফটোগ্রাফি'। হাজার হাজার ছবি রয়েছে ফোনটাতে। এলবামের নামগুলোও ভারি সুন্দর। “জংগল কাব্য”, “অরণ্যে একদিন”, “গাছপাখালির বাড়ি”, “আমার চোখে আকাশ”, “সুনীলের কবিতা বাড়ি” এরকম অসংখ্য এলবাম। একেকটা ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কি ভালোবাসা নিয়ে যত্ন করে তোলা হয়েছে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ছেলেটা যে ফটোগ্রাফির পাগল প্রেমিক তা স্পষ্ট। সে সকালে রূপসার ছবি নয়, শিউলী গাছের ছবিটাই তুলতে চেয়েছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার চিৎ হয়ে শুয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগলো রূপসা। ফটোগ্রাফি এলবাম থেকে বেরিয়ে এসে অন্যান্য ছবি দেখা আরম্ভ করলো। একজন মহিলার সাথে তিতাসের বেশ কিছু ছবি। মহিলার চেহারা সুন্দর, খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তারচেয়েও আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ওনার জামাকাপড় গুলো এত বেশি সুন্দর যে স্বাভাবিক ভাবেই যেকোনো মেয়েই তার কাপড় দেখে একবার মুগ্ধ হবে। অতি রুচিশীল মহিলা। নিশ্চয়ই তিতাসের কাছের কেউ হবেন। মা, খালা কিংবা অন্যকেউ। তবে ওনার চেহারার সাথে তিতাসের চেহারার কোনো মিল নেই। তিতাসের ঝাঁকড়া চুল, চিকন ঠোঁট, শ্যামলা গাত্রবর্ণ। আর ওনাকে দেখেই মনে হচ্ছে, রূপকথা থেকে উঠে আসা কোনো মেয়ে যে দূর্ঘটনাবশত বুড়ি হয়ে গেছে।
.
.
.
চলবে.....................................................................