__আরিয়া প্রাপ্তির কোল থেকে নামছেই না।বায়না করে করে প্রাপ্তিকে জ্বালিয়ে মারছে। প্রাপ্তি আরিয়াকে কোলে নিয়ে নিলিমা বেগমের রুমে এসে,কেমন আছেন মা?
-আরে,,আমার মাটা কখন এলো?শিরিন আমায় ডাকেনি কেনো? বললেইতো আমি আস্তে আস্তে হুইলচেয়ারটা চালিয়ে যেতে পারতাম।ওরা কেনো যে আমায় এতো অবহেলা করে বুঝি না।
প্রাপ্তি আরিয়াকে খাটের উপর বসিয়ে,নিলিমা বেগমের পায়ের কাছে বসে,আমার জন্য আজ আপনার এই অবস্থা।আমি নিজেকে যে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না।জানেন মা, প্রতিটি রাত আপনাদের কথা ভেবেই কাটিয়েছি।সারাক্ষণ মাথায় একটা কথাই ঘুরতো,মা এখন কেমন আছে? মা কী আমায় ক্ষমা করেছে?
-শুধু আমার কথাই ভাবিস? আমার ছেলের কথা কিছু ভাবিস না? প্রাপ্তি কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে, তুমি আমার মা?
-ওমা,,সত্যি কথা বললেই দোষ তাই না?স্বীকার কর পাগলি,স্বীকার কর।এইযুগের মেয়েদের ওতোশতো লজ্জাটজ্জা নেই।
প্রাপ্তি এ-ব্যাপারে আর কিছু না বলে।মা আমি তাহলে এখন যাই?
কথাটা শুনে আরিয়া দৌড়ে এসে, তুমি কোথাও যাবে না।মা তুমি কোথাও যাবে না।কথাটা বলেই ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে দিল। প্রাপ্তি পড়েছে মহাএক বিপদে।কিছু বলতেও পারছে না।বাচ্চা মানুষ সেতো আর বুঝে না।
নিলিমা বেগম আরিয়ার অবস্থা দেখে,
-থেকে যা না কিছুটা সময়। তুই চলে গেলে আমরা কেউই এখন ওকে সামলাতে পারব না আয়ান ছাড়া।আয়ান এখন বাড়িতেও নেই।তুই আয়ান আসলে পরে যাস মা।
প্রাপ্তি রাজি হলো থাকতে।কয়েক ঘন্টারই তো ব্যাপার।
-তবে আমার একটা শর্ত আছে।
-কী শর্ত মা?
আরিয়া কত সুন্দর করে তাকে মা ডাকছে।প্রথমে লজ্জা লাগলেও এখন ভালো লাগছে।ইচ্ছে করছে আরিয়াকে সারাক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখতে।
-আজ আমি আর তুমি মিলে রান্না করব চলো।আর হ্যাঁ সব তোমাদের পছন্দের খাবার রান্না করব।
আরিয়া হাতে তালি বাজিয়ে,ওহ্ কি মজা, কি মজা,মা রান্না করবে।
নিলিমা বেগম মন ভরে দেখছেন।তিনি তো এটাই চান প্রাপ্তি তাদের মাঝে ফিরে আসুক।সংসারটাকে সামলাবে।নাতিনাতনি দিয়ে ঘর ভরিয়ে তুলবে।কতো হৈচৈ হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে পানি এসে জমে আছে।
প্রাপ্তি আরিয়াকে কোলে নিয়ে রান্নাঘরে গেল।শিরিন তরকারি কাটছে। প্রাপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে,আপু ফ্রিজে কী কী আছে রান্না করার মতো?
শিরিন বলল,কেনো ভাবি আপনি রান্না করবেন?
-হুম আজ তুমি বসো আমি রান্না করি।
আরিয়া নিচে নেমে,
জানো শিরিন ফুফি, মা বলেছে আজ সবার পছন্দের রান্না করবে।আচ্ছা মা বাবাই কী খেতে পছন্দ করে বলো তো?
আরিয়ার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে, পাকনামি করা হচ্ছে আমার সাথে?
-তোমার সাথে করবো না তো কার সাথে করবো? তুমিই তো আমার মা তাই না?
প্রাপ্তি হেসে বললো,হুম আমিই তোমার মা।আরিয়াকে রান্নাঘরে একটা চেয়ার দিয়ে বসিয়ে, এইখানে চুপচাপ বসো।মা রান্না করছি।কোনো ডিস্টার্ব করবা না।
আরিয়া বামে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝলো।
আয়ানের গরুর মাংসের ভুনা খিচুড়ি আর মুরগীর রোস্ট পছন্দ করে।এর ছেয়ে সহজ রান্না প্রাপ্তির জানা নেই।নিলিমা বেগম আর আরিয়ার জন্যও মোটামুটি রান্না করলো সে।রান্না শেষ করে ফ্রেশ হওয়ার কথা বলতেই আরিয়া টেনেটুনে আয়ানের রুমে নিয়ে গেল।
-তুমি বাবার ওয়াশরুমে যাও।
প্রাপ্তি রুমে ঢুকে একটু অবাক হলো।রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো।হয়তো শিরিনই এইসব করে।
অবশ্য অগোছালো আয়ান সব কিছু গুছিয়ে রাখবে এইটা ভাবা যায় না।
-মা,এই মা তুমি কি ভাবছো।ফ্রেশ হয়ে নিবা না?
-এতো মা যাচ্ছি,আমি জাস্ট হাতমুখ ধুয়েই চলে আসবো।
আয়ান এসে অস্থির হয়ে ড্রইংরুমে কপালে হাত দিয়ে বসে আছে সে।শিরিন পানির গ্লাস এগিয়ে, ভাইয়া আপনার পানি।
আয়ান পানি নিয়ে মুখে দিতেই, ভাইয়া ভাবি আসছে।
কথাটা বলতেই আয়ান বিষম খেলো।
-কে এসেছে?
-ভাবি।
-কোথায়কার ভাবি? কার ভাবি?
-আমি জানি না।আপনি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
কথাটা বলেই শিরিন চলে গেল।আয়ান পানির গ্লাস রেখে,এদেরকে সকালের ভূত এখনো ছাড়েনি।না আমি গিয়ে গোসলটা সেরে নিই।
আয়ান রুমে এসে আরিয়াকে দেখে একটু চমকিয়ে,আরে মা'মণি,তুমি এখানে একা একা কী করছো?
-কিছুনা।
কথাটা বলেই আরিয়া দৌড়ে চলে গেল।আয়ান চেইঞ্জ করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখে প্রাপ্তি,ফ্রেশওয়াশ দিয়ে মুখে ফেনা করে মালিশ করছে।আয়ান দরজা খুলতেই,আরিয়া, নো দুষ্টামি।আরিয়া তুমি পানির কলটা বন্ধ করে দিলে?
এখন আমি খুঁজে পাবো তো?
আরিয়া কেনো তুমি এই দুষ্টুমিটা করলে বলো তো।কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে সামনে এগুতেই আয়ানকে ছুয়ে একটু অবাক হয়ে ভালো করে ধরে,আরিয়া তুমি এতো বড় হয়ে,,,,,কথাটা শেষ না করেই চোখ খুলে, আপ আপ নি?
আয়ান মুচকি হেসে পানির কল আবার ছেড়ে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো মুখ ধুয়ে নিতে।
আয়ান তাকিয়ে আছে,ভালো লাগছে তার।তার বেডরুমে প্রাপ্তি? হ্যাঁ এইটা তো তারই।আমার যা আছে সব তো ওর।
প্রাপ্তি মুখধুয়ে, স্যরি।আসলে আরিয়া আমাকে এইখানে নিয়ে আসলো।
আমি না জেনেই ভুল করে ফেলেছি।আসলে আমার এইভাবে আসা,,,,,,
আয়ান প্রাপ্তিকে একঝাটকায় কাছে টেনে এনে বুকের সাথে লাগিয়ে নিয়ে উপরের ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে, রাগে যেন তার শরীর কাঁপছে।প্রাপ্তি বুজতে পারলো না সে কি এমন বলেছে যার কারনে আয়ান গম্ভীর হয়ে গেলো।আর এইভাবে তাকে টেনে,,,,
একি আমি ওর বুকে? কথাটা ভেবেই আবার আয়ানের দিকে তাকালো।এইদিকে দুজনেই ভিজে যাচ্ছে।আয়ান কিছু বলছে না।প্রাপ্তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি কিছু বলতে যেতেই আয়ান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।
প্রাপ্তির নিশ্বাসটা যেন ভারী হয়ে আসছিল।বুকের ভিতর ধুপধাপ শব্দ যেন আয়ানের কানে এসে ঠেকছে। আয়ান ধীরে ধীরে প্রাপ্তির দিকে ঠোঁটে আলতো করে ভালোবাসা এঁকে দিয়ে প্রাপ্তির চোখের দিকে তাকালো।প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে।পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যেন নিজেরা সাজিয়ে নিয়েছে নতুন এক জীবন।স্বপ্ন নাকি বাস্তব বিশ্বাস হচ্ছেনা দুজনের। যেন ঘুম ভাঙ্গলেই আবার দুজন আলাদা জগতের মানুষ হয়ে যাবে।আয়ান প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজে ঠোঁট দুটো আবার এগিয়ে প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে মিলাতেই,
খিলখিল হাসি দিয়ে,বাবাই তুমি মাকে কি করছো?
আয়ান তড়িৎ ভাবে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, আরিয়া!
-মা, তুমিতো পুরোই ভিজে গেছো।এখন কী হবে?
আচ্ছা দাঁড়াও আমি দাদীকে বলে আসছি মা বাবার কিসি হয়ে গেছে। এখন আর মা আর বাবাই ঝগড়া করবে না।একসাথেই থাকবে।কথাটা বলে আরিয়া আবার দৌড়ে চলে গেল।
আয়ান মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে দিকে নিতে নিতে, এই মায়েটা এতো দুষ্টু যা ভাষা প্রকাশ করা যাবে না।প্রাপ্তি কোনো কথা বলছে না, নিরব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-আয়ান কাঁধে হাত দিয়ে,শান্ত গলায় বলল, কী হয়েছে? মন খারাপ?
প্রাপ্তি তবুও নিশ্চুপ।
-স্যরি।
কথাটা বলতেই প্রাপ্তি পিছনে ফিরেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে,কেনো করলে এইরকম? যখন তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল তখনও তো কখনো আমার হাতটা পর্যন্ত ধরোনি। আর আজ? ছিঃ ছিঃ।
-আমি খারাপ কিছু করিনি।আমার বউকে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে তোমার দাদার কী?আচ্ছা আমি তো খারাপ কিছু করেছি,তাহলে তুমি এখন আমার বুকে কী করছো?
প্রাপ্তি মাথা উঠিয়ে,আমার দাদা কী করব থেকে আসবে ডাক্তার সাহেব? পারেন নাকি ডাক্তারি করে মিরাক্কেল কিছু ঘটাতে?
-পারি। সব থেকে বেশি পারি হারানো জিনিস ফিরে পাবার পর তাকে আরও কাছে কীভাবে আগলে রাখতে হয়।
- ধ্যাৎ, এখন আমি কি পরবো বলো তো? আমি তো এইখানে আসতে জামা কাপড় নিয়ে আসেনি তাই না?
-ওয়েট আমি গোসলটা সেরেনি।
আরিয়া গোসল করার মাঝখানে আবার আসলো।মা,এই নাও তোমার শাড়ি দাদী দিয়েছে। বলেছে এইটা পরে নিতে।
প্রাপ্তি এইবার ন্যাকা কান্না জুড়ে বসলো।
আয়ান গোসল সেরে এসে,কি হয়েছে তোমার আবার?
-দেখো মা শাড়ি পাঠিয়েছে।মা কি ভেবেছে আল্লাহই ভালো যানে।আমি আর এইখানে থাকবো না।আমি এখুনি চলে যাবো।
প্রাপ্তি কথাটা বলে পা বাড়াতেই,আয়ান পিছন থেকে হাত ধরে ফেলে,পাগল হয়েছো? এইভাবে তুমি রাস্তা দিয়ে যাবে?
-হুম,যাবো।
-ছেলেরা তাকিয়ে মজা নিবে।
-নিক।
-পায়ের টেংরি ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। আমার বউ রাস্তায় এইভাবে হেঁটে যাবে?
আরিয়া, মা তুমি দাদীর কাছে যাও বাবাই আসছি।
-বাবাই,সামথিং সামথিং। কথাটা বলে খিলখিল হাসি দিয়ে দৌড়ে পালালো।
-যেমন বাবা তেমনি তার মেয়ে।
-হুম ঠিক বলছো এইবার শাড়িটা পরে নাও। হসপিটাল থেকে একটা ফোন আসছে আমি আসছি।
হঠাৎ আয়ানের মনে হলো, প্রাপ্তির মা হসপিটালে, কিন্তু প্রাপ্তি এইখানে?
.
.
.
চলবে.............................