___শিরিনের শরীর আগের থেকে এখন একটু উন্নতি হয়েছে। আরিয়া শিরিনের কাছে বার বার স্যরি বলে নিয়েছে আয়ানের কথায়। কিন্তু শিরিন উল্টো আরিয়াকে আদর করে, নিজের ভালোবাসাকে উজাড় করে দিয়েছে। আয়ান আরিয়ার কাছে নয়নার সব কথা মিথ্যা প্রমাণ করে প্রাপ্তির মেয়ে বলেই বিশ্বাস যুগিয়েছে।
আয়ান আজ তাড়াতাড়িই হসপিটালে চলে গেল। কখন ফিরবে তাও বলে যায়নি। নিলিমা বেগম ড্রইংরুমে বসে পেপারে চোখ বুলাচ্ছেন। পাশেই আরিয়া বসে বসে খেলছে। নিলিমা বেগম আরিয়াকে চোখে চোখে রাখার জন্যই ড্রইংরুমে বসে সময় কাটানো।
- আসতে পারি?
আওয়াজটা কানে আসতেই নিলিমা বেগম সামনের দিকে তাকালেন।
- জ্বি আসুন।
কথাটা বলে নিলিমা বেগম পেপারে আবার চোখ বোলাচ্ছ, তিনি ভালো করে না দেখেই পারভীন বেগমকে ভিতরে আসতে বললেন।
উপরে দিকে না তাকিয়ে আবার বললেন, ডাক্তার সাহেবের কাছে এসেছেন তাই তো? কিন্তু ও বাসায় নেই। আপনারা বসুন, হয়তো এখন আসতে পারে।
মাহবুব শান্ত গলায় বলল, আমরা উনার মায়ের কাছে এসেছি। ওনাকে যদি একটু ডেকে দেন তাহলে খুব ভালো হয়। পারভীন বেগম এতোক্ষণ নিলিমা বেগমের দিকেই বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে ছিলেন। মাহবুব কথাটা বলতেই, পারভীন বেগম আস্তে করে বলল, ইনিই আয়ানের মা!
নিলিমা বেগম এইবার চোখ উঠাতে উঠাতে, হাসি মুখে বলল, আমিই ওর মা...
আর কোনো কথার জবাব দিলেন না তিনি চুপ হয়ে তাকিয়ে নিরব আর স্থির হয়ে ছিলেন।
কিছুক্ষণ নিরব থেকে নিজেকে সংযত করে, আপনি?
পারভীন বেগমে বলল, হ্যাঁ আমি।
নিলিমা বেগম মুচকি হেসে, বসেন। আপনাকে আমার মতো গরিবের দরজায় দেখে খুব ভালো লাগছে। নিজেরে মনের ভিতরে প্রশান্তি অনুভূতি হচ্ছে।
পারভীন বেগম লজ্জিত ভাব নিয়ে নিলিমা বেগমের সামনে বসলেন।
আরিয়া উঠে এসে দাদীর পাশে দাঁড়িয়ে, কানের কাছে এসে বলল, দাদী তুমি কী চেনো ওদের?
নিলিমা বেগম ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে, হুম দাদুভাই আমি চিনি। শিরিন, এই শিরিন।
শিরিনকে ডাকতেই শিরিন হাত আঁচলে মুছতে মুছতে এগিয়ে, খালা তোমার কিছু লাগবে?
পারভীন বেগমকে দেখে সালাম দিয়ে নিলিমা বেগমের দিকে তাকাতেই, ওনাদের নাশতা দে। আর হ্যাঁ দুপুরের খাওয়ারও ব্যবস্থা কর।
শিরিন মাথা নাড়িয়ে চলে গেল, নিলিমা বেগম বলল, তারপর এই গরিবের বাড়ির কথা কীভাবে মনে পড়লো?
পারভীন বেগম করুণার গলায় বললেন, আমাকে আপনি লজ্জা দিবেন না বোন। আপনি একদিন আমার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন এক দয়াময়ী মা হয়ে। যে ছেলের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো। আর আজ আমিও এসেছি আমার মেয়ের জন্য। যে অন্যায় আর যে ভুল আমি করেছিলাম সেটা শুধরাতে। দিবেন আমাকে শুধরাতে? কথাটা বলে পারভীন বেগম অঝোরে কাঁদছেন।
নিলিমা বেগম গম্ভীর হয়ে কথাগুলো শুনছিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে, পারবেন আমার পা দুটো আপনি ফিরিয়ে দিতে?
পারভীন বেগম আচমকা কথাটা শুনেই সোজা হয়ে বসে, মানে?
- আমি কয়েকটা বছর থেকে যে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি পারবেন ফিরিয়ে দিতে? পারবেন না।
নিলিমা বেগম তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, তবে আমি চাই না আপনার করা ভুলের জন্য আমার ছেলেটার আবারও জীবন নষ্ট হোক। আমি জানি আপনি এখানে কেনো এসেছেন। আপনি বিয়ের আয়োজন করুন। আমার ছেলের বউকে আমি সসম্মানে ঘরে নিতে চাই।
পারভীন বেগম যেন স্বস্থি খুঁজে পেলেন।
নিলিমা বেগমের হাত টেনে নিজের হাতের সাথে চেপে ধরে, আপনিই মহান মা, আপনিই এই জগতে শ্রেষ্ঠ মা। যে নিজের সন্তানের জন্য সব করতে পারে।
শিরিন নাশতা নিয়ে এলো। হাসি মুখে আপ্যায়ন করছে সে। পারভীন বেগম আরিয়াকে ডেকে কাছে নিয়ে কোলে বসালেন।
নিলিমা বেগম হয়তো পারতেন নিজের উপর অভিশপ্ত জীবনের প্রতিশোধ নিতে। হয়তো এটাই ছিল সেই সুযোগ। কিন্ত না কুকুর কামড় দিলে কখনো কী কুকুরকে কামড়ানো যায়? যদি যায় তাহলে মানুষ আর কুকুরের ভেদাভেদ থাকতো না। অহংকার জীবনে কখনো সুখ আনতে পারে না। আমার হয়তো দুটো পা অচল, কিন্তু আমি সুখে ছিলাম। আমার ছেলের ভালোবাসায় আমায় পরিপূর্ণ রেখেছে। আমার ছেলে আজ পর্যন্ত আমায় বুঝতে দেয়নি আমার দুটো পা নেই। এরচেয়ে ভালো থাকা আর কী হতে পারে?
নয়না আজ দুইদিন থেকে বাহিরে যায় না। ব্যাপারটা আশেক সাহেবের কাছে মোটেও বোধগম্য নয়। যে মেয়ে সারাটা দিন বাহিরে নাচিয়ে বেড়ায় সেই মেয়ে কিনা ঘরে? হঠাৎ পুরনো স্মৃতি মাথায় নাড়া দিতেই, ইয়াসমিন' ইয়াসমিন 'কোথায় গেলে?
ইয়াসমিন বেগম সাড়া না দিয়ে একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালেন।
- এতোক্ষণ যে ডাকলাম শুনতে পাও নাই?
তিনি তখনও চুপ করে আছেন।
- তোমার মেয়ে কই?
- নিজের রুমে। কেনো হঠাৎ মেয়ের জন্য এতো দরদ উথলায় উঠলো কেনো?
- না উঠলে যে ক্ষতি তো আমারই হবে। তোমার মেয়ে যে দুইদিন থেকে ঘরে আমার তো তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না ব্যাপারটা। আবার কোন অঘটন ঘটিয়ে এসেছে?
ইয়াসমিন বেগম বিরক্ত হয়ে, তুমি মেয়েটাকে সহ্য করতে পারো না। এইটা ঠিক তাই বলে নিজের মেয়েকে এইসব বলতে তোমার লজ্জা লাগে না? তুমি বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে... ছিঃ আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে।
আশেক সাহেব ঝাঁঝালো গলায় বলল, উউহু! সম্মান তো যায় আমার, বাহিরে যেতে তো হয় আমাকে। লোকের কথা শুনতে তো হয় আমাকে, তাই আমাকেই বলতে হবে।
যাও তো যাও। মেয়েকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো আবার কিছু ঘটিয়েছে কিনা?
ইয়াসমিন বেগম আর কিছু বললেন না। চুপচাপ নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
প্রাপ্তি আর আয়ানের বিয়ে কিছুক্ষণ আগে সম্পূর্ণ হলো। পারভীন বেগম মেয়েকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও মনকে শান্তনা দিয়েছেন নিজের ভুলগুলোকে শুধরাতে পেরে। যার ঘরে প্রাপ্তিকে দেওয়া হচ্ছে মানুষটাই যে আলাদা। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস তার কাছে প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি পারভীন বেগমকে জড়িয়ে ধরে আছে। পারভীন বেগম নিরবে কেঁদে যাচ্ছেন। এই ফাঁকে অনেকেই আরিয়াকে নিয়ে অনেক কথায় বলছে। অনেকে তো পারভীন বেগমকে সরাসরি জিজ্ঞেস করছে বড় লোক ডাক্তার পেয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো কিন্তু এই কথাটা ভাবলা না মেয়ের জামাইয়ের আগে বউয়ের ঘরে মেয়েও আছে। তবে এই নিয়ে পারভীন বেগম কোনো কথা বললেন না। সমাজের মানুষগুলোই এইরকম, একটু কিছু শুনলে হাজারটা কথা বানিয়ে বসে থাকবে না জেনে শুনে।
প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, অনেক ধৈর্য ধরেছিস। আজ তোর ধৈর্যের ফল আল্লাহ তোকে অল্প সময়েই দিয়েছেন। প্রাপ্তি কান্না করেই যাচ্ছে। কিছু বলছে না। আয়ান স্থির হয়ে রাফির সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান সুমনাকে চোখ দিয়ে ইশারা দিতেই সুমনা গিয়ে প্রাপ্তির কাঁধ জড়িয়ে ধরে, প্রাপ্তি সব মেয়েকেই যেতে হয় নিজের সব কিছু ছেড়ে। আল্লাহ মেয়েদের সম্মান এতোটাই উঁচু স্থান দিয়েছেন যে সবখানেই তাদের অধিকার। তুমি পর কোনো বাড়িতে যাচ্ছ না। তুমি তোমার নিজের বাড়িতেই যাচ্ছ। এক মাকে ছেড়ে গিয়ে তুমি অন্য একটা মা পাচ্ছ। স্যারের মতো স্বামী পাচ্ছ। আরিয়ার মতো একটা মেয়ে পাচ্ছ। তাহলে কেনো কাঁদছো?
প্রাপ্তি কোনো কথাই বলছে না। কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে
উঠেছে। পারভীন বেগম নিজে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে, আয়ানের হাত ধরে আজ তোমাকে আমার কিছুই বলার নাই। কারণ আমার থেকে কেউ যদি আমার মেয়েটাকে ভালোবাসে সেটা হলে তুমি। কথাটা বলেই ঘরের ভিতর চলে গেলেন। মাহবুব সবাইকে বিদায় দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
নিলিমা বেগম ড্রইংরুমে বসে আছে। প্রাপ্তিকে নিজে ঘরে তুলবেন বলে। শিরিন মিষ্টির প্লেট এনে টেবিলের উপর রেখে, খালা'এইবার তো কিছু খেয়ে নাও। ছেলের বউ আসছে সে আনন্দে খাওয়াও খাচ্ছো না। তুমি অসুস্থ হলে আয়ান ভাইয়া আমার খবর করে ছাড়বে।
নিলিমা বেগম হাসতে হাসতে বলল, আমি এখন এতো সহজে অসুস্থ হচ্ছি না। আমার ঔষধ ঘরে নিয়ে আসছে আমার ছেলে। এখন আমার কিছু হলে আমার ঔষধ আছে না?
শিরিন মুচকি হেসে, আচ্ছা ঠিক আছে ঔষধ এলে খেও।
বাহিরে গাড়ির হর্ণ শুনে এতো আমার ঔষধ এসে গেছে। আমাকে একটু নিয়ে চল না শিরিন। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে আমার মেয়েকে হাতে ধরে ঘরে তুলবো।
শিরিন নিলিমা বেগমকে নিয়ে দরজার সামনে গেল। সুমনা প্রাপ্তিকে নিয়ে এসে, আন্টি আপনি বসে আছেন আমাদের জন্য?
নিলিমা বেগম প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আজ আমার ঘরে লক্ষ্মী এসেছে, আমি কি না অপেক্ষা করে পারি? প্রাপ্তি সুমনার হাত ছেড়ে দিয়ে, নিলিমা বেগমকে সালাম করে প্রাপ্তি নিলিমা বেগমকে নিয়েই ঘরে ঢুকলো। আয়ান সেটা দেখে, রাফি জীবনে আমি অনেক ভুল করেছি। তবে আজ থেকে হয়তো আর ভুল হবে না। কারণ ভুল ধরার বা শুধরে দেওয়ার মানুষ এসে গেছে।
সব ধকল কাঁটিয়ে প্রাপ্তি আর আয়ানকে রুমে দেওয়া হলো। আয়ান রুমে যাওয়ার পর আরিয়া বায়না ধরেছে আজ বাবাই আর মায়ের সাথেই ঘুমাবে।
নিলিমা বেগম আর সুমনা রাজি হয়নি। সুমনা আরিয়াকে আদর করে, না মা, আজ তুমি আমার সাথে ঘুমাবে আরিয়া কারোই কোনো কথা শুনলো না। গিয়ে আয়ানের দরজা ধাক্কাতেই আয়ান দরজা খুলে একটু অবাক হলো, নিচে হাঁটু গেড়ে বসে কী হয়েছে মা?
আরিয়া কিছু না বলেই পাশ কেটে রুমে গিয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, বাবাই' মা কোথায়?
আয়ান এগিয়ে এসে আরিয়াকে কোলে নিয়ে, তোমার মা ফ্রেশ হচ্ছে। কথাটা শেষ করতেই সুমনা এসে, স্যার আরিয়াকে আমার কাছে দিন।
আরিয়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, না আমি যাবো না। আমি বাবাইয়ের সাথে ঘুমাবো।
আয়ান সুমনাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো কিছু না বলতে।
প্রাপ্তি এসে আরিয়া আর সুমনাকে দেখে, কি ব্যাপার আমার মামণির ঘুম আসেনি?
আরিয়া করুণ গলায় বলল, আমি তোমাদের সাথে ঘুমাবো মা!
প্রাপ্তি মুচকি হেসে, ঠিক আছে আমার লক্ষ্মী মেয়েটা আমার সাথেই ঘুমাবে।
- কিন্তু প্রাপ্তি' আজকের রাতটা ও আমার কাছে থাকুক।
- সুমনা' সমস্যা নেই ও আমাদের সাথেই ঘুমাক। তুমি যাও।
- জ্বি স্যার।
আরিয়াকে নিয়ে এসে আয়ান খাটের উপর বসে আরিয়াকে শুয়ে এইবার ঘুমাও মামণি।
প্রাপ্তি এসে অন্য পাশে বসে, আজ আরিয়ার সাথে আমরা অনেক গল্প করবো। কী বলো তুমি?
- হুম ঠিক বলেছো। আরিয়ার মা এসে গেছে এখন থেকে আরিয়া প্রতিরাতেই গল্প শুনবে তার মায়ের কাছ থেকে।
রাত দুইটা, আরিয়া ঘুমিয়ে গেছে। প্রাপ্তি উঠে লাইট বন্ধ করে পিছনে ফিরেই ভয়ে পেয়ে গেল, চিৎকার দিতেই আয়ান মুখ চেপে ধরে, আরে আমি। তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো?
প্রাপ্তি অভিমানি স্বরে বলল, তুমি? এইভাবে কেউ ভয় দেখায়? আমি অন্ধকার ভয় পাই এটা তুমি ভালো করেই জানো।
- স্যরি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ছাদে যাবে?
আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি ফিসফিস করে, এতো রাতে?
- হুম। প্রাপ্তি আর কিছু বলল না। এরই মাঝে আয়ান তাকে কোলে উঠিয়ে নিলো। প্রাপ্তির পুরোটা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে, অন্ধকারে আবছা আলোই আয়ানকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আয়ান প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে ছাদে উঠে এলো। প্রাপ্তিকে নামিয়ে দিয়ে, চোখ দিয়ে উপরের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।
পূর্ণিমা চাঁদের আলো চারদিকে ঝলমল করছে। আর সেই আলো আয়ান প্রাপ্তিকে মুগ্ধ চোখে দেখছে আর প্রাপ্তি চাঁদ দেখছে। হালকা হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আয়ান প্রাপ্তিকে কাছে টেনে এনে চুলগুলো খুলে দিয়ে, পরীকে বাঁধা চুলে মানায় না। পরীকে মুক্ত স্বাধীনতা দিতে হয়।
প্রাপ্তি কানের কাছে চুলগুলো গুজে নিয়ে, ফিসফিস করে বলল, এতোটা ভালোবাসো কেনো আমায়?
আমার কপালে সইবে তো? সইবে তো এতো সুখ? সারাটা জীবন আমি বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারবো তো? জানো আমার খুব ভয় হচ্ছে। কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি তোমাকে যদি কোনো কারণে হারিয়ে ফেলি?
এরই মাঝে কালো মেঘে চাঁদ ঢেকে গেছে!
আয়ান প্রাপ্তিকে বুকের সাথে মিশিয়ে, কেনো ভাবছো এইসব? এইসব উদ্ভট কথাবার্তা আর কখনো বলবে না। আয়ান তোমার, সারাজীবন তোমারই থাকবে।
প্রাপ্তি কোনো কথা বলছে না। আয়ানের বুকে মুখ গুজে পড়ে আছে। আয়ান নিজের থুতনিটা প্রাপ্তির মাথার উপর রেখে, প্রাপ্তি' আজ তোমার অনেক খারাপ লাগছে তাই না? খুব রাগ হচ্ছে?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ন্যাকামি করে, কেনো?
- এইযে আজকের রাতটা হয়তো আমাদের অন্য ভাবেও কাটতে পারতো৷ কিন্তু আরিয়ার কারণে তা আর হয়নি। হয়তো আজকের রাতটা নিয়ে তোমার আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। কতটা দিন পর আমরা একে অপরকে এইভাবে কাছে পেয়েছি। কিন্তু...
আয়ানকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে, ও শুধু তোমারই মেয়ে? আমার কিছু হয়না? বলো আমার কিছু হয় না?
আয়ান নিস্তব্ধ, কথাটা বলা ঠিক হয়নি প্রাপ্তিকে। প্রাপ্তির হয়তোবা খারাপ লেগেছে।
আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে, আমি ওকে পেটে ধরিনি ঠিক তাই বলে আমি ওর মা নয়? কী হলো তুমি চুপ করে আছো কেনো?
- স্যরি। আসলে আমি ওই ভাবে কিছু বলতে চাইনি।
- ডাক্তার সাহেব তাহলে আপনি কী বলতে চাইছেন?
আয়ান প্রাপ্তির কপালে ভালোবাসা পরশ দিয়ে, আজ রাত কোনো অভিমান নয়। চলো ওইপাশটায় গিয়ে বসি।
প্রাপ্তি কথাটা শুনে বিস্মিত হয়ে, মানে? সারারাত এইখানে কাটিয়ে দিবে নাকি? আরিয়া রুমে একা আছে চলো কাল এসে বসা যাবে।
আয়ান ভাবলো প্রাপ্তি ঠিক বলেছে। আরিয়া ঘরে একা আছে। দুজনেই রুমে এসে দেখে লাইট জ্বলছে কিন্তু আরিয়া নেই। আয়ান আর প্রাপ্তি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে, আয়ান রুম থেকে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠলো।
আয়ান কাছে এসে ফোন হাতে নিয়ে, রাফি!
- কিরে ছাদ থেকে তাহলে নেমে আসলি?
- রাফি তুই...
- হুম আমি আরিয়াকে নিয়ে এসেছি। তোরা ছাদে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আরিয়া উঠে বাবাই বলে ডাকছিল। পরে আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম। ও এখন ঘুমাচ্ছে। তোরাও বাসররাতের সময়টা আর ব্যয় করিস না।
কথাটা বলে রাফি ফোন রেখে দিলো।
প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে, তোমার মেয়ে রাফির কাছে। প্রাপ্তি কথাটা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে, প্রাপ্তির কাছে এসে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলো। দুজনেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে লাগলো অন্য এক ভালোবাসার জগতে।
.
.
.
চলবে...............................