___তিন তিনটা বছর কেটে গেল। আরিয়া এখন অনেক কিছুই শিখেছে। নিজের সবকিছু নিজে করতেই অভ্যস্ত। নিলিমা বেগম এখন পুরোটাই বিছানায় পড়ে আছে। আয়ান শিরিনের আবার বিয়ে দিয়েছে। নতুন সংসার নিয়ে সে এই বাড়িতেই থাকে। আরমিন এখন তার বাবাকে নিয়ে দাদার বাড়িতেই বেশি থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে আয়ানের বাড়িতেও আরিয়ার বায়নাতে থাকতে হয়।
সকাল নয়টায় রাফি সুমনা আর আরমিন এসেছে আয়ানের সাথে যাওয়ার জন্য। আয়ানের প্রেস কনফারেন্স আছে। তাই সবাই সেখানে যাওয়া জন্য অপেক্ষায় বসে আছে। আয়ান নীল রঙের একটা শার্ট আর কোট পরে নিচে নেমে এলো সাথে আরিয়াও। আরমিন আয়ানকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে, আচ্ছা স্যার আপনার দিন দিন বয়স এতো কমে যাচ্ছে কেনো? যে কোনো মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে। আমি পড়ে এখনো উঠতে পারছি না আর বাকীদের যে কী অবস্থা হয়?
আরমিনের দিকে তাকিয়ে সবাই অট্ট হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আয়ান হালকা কাশি দিয়ে, আরমিন এইটা আমার বাসা। তাই স্যার বলতে হবে না। আর হ্যাঁ তোমার মাথা থেকে এসব উদ্ভট কথাবার্তা সরানোর ব্যবস্থা আমি পাকাপাকি ভাবে করছি।
তোমরা যাও আমি মায়ের থেকে বলে আসছি।
এতো এতো প্রশ্ন আয়ান সবগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। যখন নিজের গুরুত্বপূর্ণ মানুষটার কথা জিজ্ঞেস করা হলো, তখন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল কনফারেন্স রুম। আয়ান নিজেকে সংযত করে, প্রশ্নটা আবার করুন।
ইমতিয়াজ নামের একজন উৎকন্ঠে বলল, স্যার আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা তো আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন কী কাউকে নিয়ে নতুন করে ভাবছেন? শেষ থেকে কীভাবে শুরু করবেন?
আয়ান মুচকি হেসে, আপনি খুব সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। আমার জীবনের যদি ইতিহাস লিখা হয় তাহলে আপনাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি এই কথাই ইতিহাসের পাতায় লিখতে হবে সেটা হলো আমি প্রতিবারই সবকিছু শেষ থেকেই শুরু করেছিলাম। আমি কখনো হেরে যায়নি। হেরে যাওয়াটাকে যখনি ভাগ্য বলে মেনে নিতাম তখন আবার নতুন করে শুরু করার পথের দেখা পেতাম। আর সেটাকে কখনো আমি হারিয়ে যেতে দেইনি। আমি শুরু করেছি বারবার। কখনো নিজেকে নিঃশ্ব ভাবতে নেই। আমি হেরে গেছি আমার দ্বারা কিছু হবে না। সেটাও কখনো ভাবতে নেই। আমি পারবো এই বিশ্বাস নিয়ে যদি আপনি টিকে থাকতে পারেন তাহলে আপনি শেষ থেকে শুরু করতে পারবেন।
কথাটা বলে আয়ান মাইক্রোফোন থেকে সরতে যাবে এমন সময় আরেকজন সাংবাদিক বলে উঠলো, আরেকটা আনসার বাকী রয়ে গেল। নতুন করে কাউকে নিয়ে ভাবছেন কিনা বললেন নাতো?
আয়ান আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে, এতোদিন ভাবিনি। ভেবেছিলাম আমার স্ত্রীর স্মৃতিগুলো নিয়েই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবো। কিন্তু একজনের ভালোবাসা আমায় আটকিয়ে ফেলেছে। একদিন সে আমায় বলেছিল আমার মনের অন্যপ্রান্তে সে একটু খালি জায়গা চায়। সেদিন তাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আজ বলছি আপনি জিতে গেছেন। আর আমি হেরেছি আপনার অপেক্ষা আর সত্য ভালোবাসার কাছে।
কথাটা শুনে সবাই হাতে তালি দিতে লাগলো। এখানে চারদিকে যেন হৈচৈ উল্লাসে ভরা। এর মাঝে মাইকে আয়ানের শেষ কথাগুলো শুনে আরমিন যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। এতোক্ষণ সুমনা আর আরমিন কনফারেন্স হলের বাহিরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলো। কিন্তু আয়ানের কথা শুনেই আরমিন হাত থেকে চা ফেলে দিয়ে সুমনাকে জড়িয়ে ধরে, আজ আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আয়ান আমাকে ভালোবাসে।
সুমনা আরমিনের পাগলামি দেখে হাসছে। আর দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে।
আয়ান বেরিয়ে আসতেই আরমিন দৌড়ে গিয়ে আয়ানের বুকে ঝাপিয়ে পড়তেই আয়ান অবাক হলো। মুচকি হেসে আয়ান নিজেও হাত দুটো উঠিয়ে জড়িয়ে ধরতে যাবে কিন্তু মনে হলো পিছন থেকে যেন কেউ তাকে ডাকাছে। আয়ান আরমিনকে না ধরে পিছনে ফিরে তাকাতেই যেন তার মাথায় বিদ্যুৎ চমকিয়ে উঠলো। পুরোটা আকাশ যেন তার মাথায় ঘুরছে। কিছু বলতে পারছে না। হতভম্ব নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে সে। এইদিকে আরমিনের বলা কথাগুলো যেন তার কানে যাচ্ছেই না।
সে তাকিয়ে দেখছে তার প্রাপ্তিকে। দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে সে। আয়ান আরমিনকে বুক থেকে সরিয়ে কাছে যেতেই আরমিন হাত টেনে ধরে, আরে তুমি এমন করছো কেনো? এইতো বললে তোমার মনে আমার জন্য একটুখানি জায়গা হয়েছে আর এখন দেখছি মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো মুখ করে রেখেছো।
আরমিন শুনো, আমি তোমাকে পরে সব বুঝিয়ে বলছি। কথাটা না বলতেই প্রাপ্তি একজনের সাথে গাড়িতে উঠে যাচ্ছে দেখে আয়ান আরমিন কে ছেড়ে দৌড়ে, প্রাপ্তি, প্রাপ্তি, প্লিজ শুনো।
রাফি আর সুমনাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরমিনও আয়ানের পিছন পিছন এগিয়ে যাচ্ছে।
আয়ান বারবার ডাকার পরেও সে একবারে জন্য পিছনে ফিরে তাকালো না। চলে গেল সে। রাফি আয়ানের কাছে দৌড়ে গিয়ে, আয়ান প্রাপ্তি!
- হে হে প্রাপ্তি।
- কিন্তু প্রাপ্তির সাথে এই লোকটা কে? প্রাপ্তির সাথে ওর কিসের সম্পর্ক?
রাফিকে কিছু না বলে আয়ান দৌড়ে আবার কনফারেন্স হলে গেল। সেখানে গিয়ে সাংবাদিকদের লিস্ট দেখতে লাগলো।
রাফি আয়ানের অবস্থা দেখে, তুই সাংবাদিকদের লিস্ট দেখছিস কেনো? এখন কী লিস্ট দেখার সময়?
আয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ওইলোকটা সাংবাদিক কারণ ওলোকটা আমাকে অনেকগুলো প্রশ্নও করেছিলো।
আয়ান লিস্ট দেখে জানলো, ছেলেটার নাম ইমতিয়াজ আহমেদ। আয়ান নাম্বার সংগ্রহ করে বাড়িতে চলে এলো। অনেক বার কল দিয়েছে কিন্তু ছেলেটা কল রিসিভ করছে না।
আরমিন চুপচাপ বসে আছে। কিছুটা খারাপ লাগলেও এইভাবে ভালোলাগছে আয়ানের মনে তার একটুখানি জায়গা হয়েছে। সে জায়গাটা ক্ষণিকের জন্য হয়েছে আরমিন ভালো করেই বুঝেছে।
আয়ান রাত দশটায় আবার কল দিলো।
ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে, কে বলছেন?
ফোনের ওপাশের কন্ঠ আয়ানের অনেক চেনা। তবুও চুপ করে শুনছে। চোখকে যেন মানাতে পারছে না সে। পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে নিচে পড়ছে।
- আপনি কথা বলছেন না কেন? কে বলছেন?
আয়ান তখনও নিশ্চুপ।
আয়ান কথা বলছে না দেখে, এই যে শুনছেন? আপনার ফোন অনেকক্ষণ থেকে বেজেই যাচ্ছে। আমি রিসিভ করেছি কথা বলছে না। আপনি দেখুন তো কে?
ইমতিয়াজ টেবিলের উপর ফাইলগুলো গুছিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে, কে বলছেন?
আয়ান তখন নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত।
ইমতিয়াজ বলল, দেখুন আপনার যদি অফিসিয়াল কথা থাকে সেটা কাল অফিসে এসে বলবেন। এইভাবে কাউকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করা উচিত না।
আয়ান গলাটা পরিষ্কার করে, আমি আয়ান মাহমুদ। যার কনফারেন্সে আজ আপনি এসেছিলেন।
ইমতিয়াজ ভড়কে যাওয়া অবস্থা। সালাম দিয়ে বলল, স্যার আপনি?
- ফোনটা আগে রিসিভ করলো কে?
আয়ানের প্রশ্ন শুনে ইমতিয়াজ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কী বলবে? ভেবে পাচ্ছিলো না।
কিছুক্ষণ ভেবে নিঃসংকোচে বলল, আমার ওয়াইফ।
কথাটা শুনে আয়ানের মনে হলো পুরোটা ছাদ ভেঙ্গে তার মাথায় এসে পড়েছে।
তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল, আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
- জ্বি স্যার বলুন।
- ফোনে নয়। আমি সরাসরি বলতে চাই।
- ঠিক আছে স্যার। কাল আমি আপনার হসপিটালে চলে আসবো।
আয়ান তড়িৎ গতিতে বলল, না। আমিই আপনার বাসায় আসবো। আপনি ঠিকানা এসএমএস করে পাঠিয়ে দিন আমি চলে আসবো।
ইমতিয়াজ কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু না করতে পারলো না।
পরের দিন আয়ান চলে আসলো রাফিকে নিয়ে ইমতিয়াজের বাসায়।
আয়ান বসে আছে ইমতিয়াজের সামনে। ইমতিয়াজ চুপ করে আছে। কি থেকে শুরু করবে সেটাই হয়তো চিন্তা করছে। আয়ান সরাসরি প্রশ্ন করে বসলো ইমতিয়াজ কে।
- ও আপনার সত্যিই স্ত্রী?
ইমতিয়াজ আয়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, স্যার আপনি কী বলছেন?
- আমি যা বলছি সোজাসাপ্টা উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করুন।
রাফি আয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে, প্লিজ উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। যা বলবি শান্ত হয়ে কর।
- আপনার স্ত্রীর নাম কী?
- লাভনী।
- মিথ্যা বলছেন। আপনাদের বিয়ে হয়েছে কতদিন?
- ছয় বছর।
- এটাও তো মিথ্যা।
- কী বলতে চাইছেন আপনি? আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেনো?
আয়ান উত্তেজিত হয়ে বলল, কারণ ও আপনার স্ত্রী হতেই পারে না। ওকে ডাকুন। আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
ইমতিয়াজ প্রথমে রাজি হলো না। রাফি সহ জোরাজোরি করাতেই, লাবনী, এইদিকে আসেন।
প্রাপ্তি আস্তে আস্তে ইমতিয়াজের পাশে এসে দাঁড়ালো।
- ওনাকে আপনি চিনেন?
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানও উঠে প্রাপ্তির সামনেই দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি তুমি তোমার আয়ানকে চিনতে পারছো না?
প্রাপ্তি আমি তোমার আয়ান।
প্রাপ্তি অসহায় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় বলল, কে আপনি?
ইমতিয়াজ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, লাভনী আপনি যান। আমি কথা বলছি উনার সাথে। প্রাপ্তি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে চলে গেল আয়ান সেদিকে তাকিয়ে, রাফি আমার চোখ কী এতোটাই ভুল? আমি আমার প্রাপ্তিকে চিনি না?
রাফি আয়ানকে বসিয়ে, তুই শান্ত হয়ে বস। আমি কথা বলছি। মিস্টার ইমতিয়াজ, দেখুন আপনিই কিন্তু কাল ওকে বলেছেন ও নতুন করে কিছু ভেবেছে কিনা?
দেখুন ওর নতুন করে যখন ভাবতে ইচ্ছে করছে তখন যদি তার পুরোনো ভালোবাসার মানুষটাকে সে ফিরে পায় তাহলে সে নতুন করেই ঠিক শুরু করবে কিন্তু নতুন কাউকে নিয়ে নয়, পুরোনো মানুষকে নিয়ে নতুন ভাবে।
আয়ান ইমতিয়াজের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে, তুমি আমার অনেক ছোটো হবে। তাই তুমি করেই বলছি। আমার পাগলীটাকে আমায় ফিরিয়ে দাও। তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিবো।
দরকার প্রয়োজনে আমার সমস্ত সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে দিবো। তুমি শুধু আমার পাগলিটাকে আমাকে ফিরিয়ে দাও।
ইমতিয়াজ এতোক্ষণ চুপ করেছিলো। লাভনী অন্য দিন আয়ান স্যারকে পেপার বা টিভিতে দেখলে কেমন চটপট করতো কিন্তু আজ সরাসরি দেখার পর তার কোনো রেসপন্স নেই কেনো?
ইমতিয়াজ শান্ত গলায় বলল, ও যে আপনার স্ত্রী তার কোনো প্রমাণ আছে? স্যার দেখুন আমি এইকথাটা বলতাম না। আপনি ঠিক বলেছেন উনি আমার স্ত্রী নয়। আমি উনাকে চিনিও না। তবে আজ দুই বছর ও
উনি আমার বাড়িতেই থাকেন।
- দুই বছর মানে?
- হুম, দুই বছর। আমি দুই বছর আগে আমার মাকে নিয়ে ঢাকায় আসি ডাক্তার দেখানোর জন্য। ঢাকাতেও আমার অফিস এবং বাসা আছে। আমার বেশির ভাগ রাজশাহীতেই থাকতে ভালো লাগে। আর আমি যখন গিয়েছিলাম তখন উনি কোমায় থেকে ফিরেছে দুই দিন হয়েছিলো। একজন ডাক্তার ওনাকে সবকিছু মনে করাতে চাইছে কিন্তু উনি চুপ করেই থাকতেন।
আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখছিলাম। নিজের মাঝেও কেমন কৌতুহল জেগেছে। এগিয়ে গেলাম দেখার জন্য।
তখন ডাক্তার ইকবাল আমায় দেখে মুচকি হেসে, আর বলবেন না। এই দেড় বছর আমাদের হসপিটালে কোমাতে ছিলো। প্রথম একজন মেয়ে এসে দেখে যেতো। এখন আর কেউ আসে না। হসপিটালের বিল হয়েছে অনেক। ফ্যামিলির লোকেরও কোনো খোঁজ নেই।
কথাগুলো শুনে আমি উনার দিকে তাকাতেই আমার মায়া লাগছিলো। সেদিন হসপিটালের সব বিল দিয়ে আমাদের সাথে রাজশাহীতে নিয়ে গেলাম। উনার কিছু মনে নেই। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো উনি আপনাকে পেপার বা টিভিতে দেখলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কাল আপনার কনফারেন্স ছিলো বলে আসার সময় তাই উনাকে নিয়ে আসলাম। উনাকে ডাক্তারও দেখানো প্রয়োজন। তাই সাথে করে কাল নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি আমার সাথে কাল গিয়েছে ঠিক তবে নিজের মতো করে বাহিরেই বসে ছিলো।
কিন্তু আজ আপনাকে সরাসরি দেখেও কিছু বলছে না। পুরোটা স্বাভাবিক ভাবেই আছে।
আয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে, আমার বাচ্চা? আমার বাচ্চা কোথায়?
ইমতিয়াজ অবাক হয়ে, বাচ্চা!
রাফিও একি স্বরে বলল, বাচ্চা! কার বাচ্চা আয়ান?
- আমার। রাফি, এক্সিডেন্টের সময় ও দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিল।
কথাটা শুনে রাফি ভ্রু কুঁচকে, প্রাপ্তি প্রেগন্যান্ট ছিল?
- হু, আমি কাউকে বলতে পারিনি কথাটা। কারণ মা জানলে মা সহ্য করতে পারতো না।
- কিন্তু স্যার আমি তো কোনো বাচ্চার কথা জানি না। আমি উনাকে নিয়ে আসার পর থেকে তো উনি বেশি কথা বলে না। তবে আমার মায়ের সাথে দুই একটা কথা বলে। সে জন্য আমি উনাকে অনেক ডাক্তারও দেখিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। উনি আমার সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।
আয়ান ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে, আচ্ছা ইমতিয়াজ তুমি যে হসপিটাল থেকে প্রাপ্তিকে নিয়ে এসেছো আমরা কাল তাহলে ওই হসপিটাল যাবো।
কথাটা বলে আয়ান উঠে প্রাপ্তি যে রুমে আছে সে রুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ইমতিয়াজ একটু অবাক হলেও কিছু বলল না। কারণ তার এখানে বলার কোনো অধিকার নেই। কিন্তু হ্যাঁ লাবনীকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। তবে ডাক্তার আয়ান মাহমুদের স্ত্রী প্রাপ্তিকে নয়। বুকের ভেতর ছিন ছিন ব্যথা অনুভব করছে সে কিন্তু নিজেকে সামলাতে একচুল ছাড় দেয়নি।
আয়ান দরজা বন্ধ করতেই প্রাপ্তি স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। তার কোনো অনুভূতি আসছে না।
আয়ান এগিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আজও অভিমান করে থাকবে? তুমি কী ভেবেছো, আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে আছি? তুমি কী ভাবোনি তোমার আয়ান তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। প্রাপ্তি আমি শেষ কবে ভালো করে ঘুমিয়েছি আমার মনে পড়ছে না। প্রাপ্তি তোমার মনে আছে আমাদের বাচ্চার কথা?
প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান প্রাপ্তির কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে, তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারছো না? প্রাপ্তি তোমার মেয়ে আরিয়া, তার কথা তোমার মনে নেই? আরিয়া অনেক বড় হয়ে গেছে। তোমার জন্য এখনো সে অপেক্ষা করে।
প্রাপ্তি কিছু না বলে আস্তে করে নিজের কাঁধ থেকে আয়ানের হাত সরিয়ে চুপচাপ নিজেকে সরিয়ে নিলো।
আয়ান আর জোর করলো না। দরজাটা খুলে বেরিয়ে এসে, রাফি' প্রাপ্তি আমাকেই ভুলে গেছে। ওর মেয়ের কথাটাও ওর মনে নেই। ইমতিয়াজ, তোমার কাছে আমার অনুরোধ। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাই।
আমি তোমার সব টাকা পরিশোধ করে দিবো আজই। আমি জানি তোমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমি সম্পূর্ণটা তোমাকে দিয়ে দিবো।
ইমতিয়াজ অনিচ্ছুকভাবে মুখে হাসি ফুটিয়ে, স্যার আপনি ভুল ভাবছেন। আমার টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার মতো আর লাভনীর মতো স্যরি প্রাপ্তি, আপনাদের জন্য কিছু করাটাও ভাগ্যের ব্যাপার। আপনি যেহেতু নিয়ে যেতে চান আমি বাঁধা দিবো না। কারণ আমার কোনো অধিকার নেই। কথাগুলো শেষ করে ইমতিয়াজ উঠে নিজের রুমে এসে চোখের অশ্রুগুলো লুকানোর চেষ্টা করছে। এই দুই বছরের একটু একটু জায়গা করে নিয়েছে লাভনী। কিন্তু আজ সে এইভাবে চলে যাবে ইমতিয়াজ ভাবতেই পারিনি।
.
.
.
চলবে.................................