শেষ থেকে শুরু - পর্ব ২১ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


___প্রাপ্তিকে নিয়ে আসা হলো আয়ানের বাড়িতে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি সেই প্রথম দিনের মতো তাকিয়ে আছে। সবাই প্রাপ্তি এসেছে শুনে দৌড়ে বাহিরে আসলো। আরিয়া এসে প্রাপ্তিকে জাপটে ধরে, কান্না শুরু করলো। প্রাপ্তি আরিয়ার মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। ঘরে ঢুকেই ড্রইংরুমে নিলিমা বেগমকে দেখে তাকিয়ে আছে। প্রাপ্তি এসেছে শুনে শিরিন ড্রইংরুমে নিয়ে এসেছে তাকে। নিলিমা বেগম কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করছে কাছে আসার জন্য। প্রাপ্তিও ধীরে ধীরে এগিয়ে নিলিমা বেগমের সামনে বসলো।

প্রাপ্তি নিজ থেকেই হঠাৎ করে বলল, মা!

আয়ান অবাক হয়ে, তুমি মাকে চিনতে পেরেছো?

প্রাপ্তি কোনো কথা বলল না। নিলিমা বেগমের কোলে মাথা রেখে, কেমন আছো মা?

- তোকে পেয়ে আমি এখন খুব ভালো আছি, খুব।

- প্রাপ্তি তুমি আমাকে কেনো চিনতে পারছো না? প্রাপ্তি আমি তোমার আয়ান। তুমি মাকে চিনতে পারছো কিন্তু আমাকে চিনলে না। এইটা কেমন হয়ে গেল না?

প্রাপ্তি কিছু বলল না। আরিয়াকে কাছে টেনে, নতুন মা অনেক ভালো তাই না?

আরিয়া প্রাপ্তিকে জড়িয়ে, তুমিই তো আমার মা। নতুন পুরাতন সবই তো তুমি।

প্রাপ্তি মুচকি হেসে, পুরোই বাবার মতো কথা বলতে শিখে গেছিস। চিন্তা করিস না, তোর নতুন মা আমার থেকেও তোকে অনেক ভালোবাসবে। আয়ানের কাছে প্রাপ্তির কথাগুলো সুবিধার লাগছে না। তার মানে প্রাপ্তি ইচ্ছে করে তাকে না চিনার অভিনয় করছে?

আয়ান পারভীন বেগমকে কল করেছে আসার জন্য।

মেয়ের কথা শুনে যেন নিজেকে আর আটকাতে পারলো না। তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মেয়ের কাছে আসার জন্য।

প্রাপ্তি দোতলায় গিয়ে নিজের রুমের দরজা খুলে নিশ্বাস নিয়ে, কতদিন পর সে চিরচেনা জায়গায়। মুক্ত পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করছে। রুমে এসেই দক্ষিণ পাশের জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে নিশ্বাস টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

আয়ান পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরতেই, চোখ খুলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে বহুদূরে ।

- আমি জানি তুমি আমায় চিনতে পেরে না চেনার অভিনয় করছো। কেন করছো এইসব?

প্রাপ্তিকে ঘুরিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনি প্রাপ্তি হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে, এখানে এখন অন্য একজনের জায়গা হয়েছে। আমার জায়গা ফুরিয়ে গেছে। কোনো এক গুণী ব্যক্তি বলেছিলেন, যদি তুমি প্রথম জনকে ভুলে দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসো তাহলে প্রথমটা তোমার ভালোবাসা ছিল না। কারণ যদি তুমি প্রথম জনকে ভালোবাসতে তাহলে দ্বিতীয় জনকে কখনোই ভালোবাসতে না।

- প্রাপ্তি আমি বুঝেছি তুমি কেনো কথাগুলো আমায় বলছো। প্রাপ্তি তুমি আমায় ভুল বুঝছো। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। শুধু তোমাকে।

- সেটা তো কাল নিজের চোখেই দেখলাম। যেখানে আমার থাকার কথা সেখানে অন্য একটা মেয়ে, ছিঃ আমি ভাবতেও পারছি না। এতো সহজে আমার জায়গাটা পূর্ণ হয়ে যাবে।

- তার মানে কাল তুমি আমায় দেখেছিলে? তাহলে কেনো তুমি আমার ডাকে সাড়া দাওনি?

প্রাপ্তি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে, কার ডাকে সাড়া দিবো? যে মানুষটা কনফারেন্সে শত শত মানুষের সামনে বলতে পারে, তার জীবন নতুন ভাবে শুরু করবে। তাহলে সেখানে আমার কিছু করার থাকে না।

আমি ভেবেছিলাম আমার আয়ান আমারই আছে। কারণ আমি মনে করতাম পৃথিবীর সব ভালোবাসা একত্রিত করলেও আমার প্রতি তোমার ভালোসার সমান হবে না। আমি বেশি ভেবেছিলাম তাই না?

কথাটা বলেই প্রাপ্তি কাঁদতে শুরু করলো।

আয়ান জোর করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে, আমার পাগলির এতো অভিমান আমার উপর?

তুমি তোমারগুলো বললে আমারগুলো শুনবে না?

কাল শুধু জড়িয়ে ধরাটাই দেখলে? আর কিছু দেখলে না?

কথাটা বলে প্রাপ্তিকে বসিয়ে চোখ মুছে দিয়ে, ওর নাম আরমিন। আজ তোমার আয়ান তোমার সামনে বসে আছে সেটা ওই মেয়েটার কারণেই। তোমার মনে আছে চেন্নাইয়ের আশরাফুল আংকেলের কথা। মনে আছে? সে আংলের মেয়েই আরমিন।

প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকালো।

আয়ান আবার বলল, আমাদের এক্সিডেন্টের এক মাস পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি তখন জানতে পারি আমি চেন্নাইতে। সেখান থেকে এসে কয়েকদিন পর জানতে পারি তুমি সত্যিই আমাকে একা রেখে চলে গেছো। আর তোমার আয়ান তোমাকে ভুলতে পারে না। তুমি এই রুমের দিকে তাকিয়ে দেখো তো। কোনো পরিবর্তন আছে কিনা? পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখো। কোথাও পরিবর্তন পাবে না। আরমিন অনেক ভালো একটা মেয়ে। আয়ান প্রাপ্তিকে ধীরে ধীরে সব বলে শেষ করলো। প্রাপ্তি সব শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রাপ্তি এবার নিজেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু আমার বাচ্চা? আমার বাচ্চা কোথায়?

আয়ান প্রাপ্তিকে আস্বস্ত দিয়ে, কাল ওই হসপিটাল গিয়ে সব জেনে নিবো। আমাদের বাচ্চাকে কী করেছে তাও জেনে আসবো। তুমি ভেঙ্গে পড়ো না।

পারভীন বেগম মেয়েকে জড়িয়ে বসে আছে অনেকক্ষণ। ছাড়লেই যেন আবার হারিয়ে যাবে। নিলিমা বেগম আর আয়ান কথা বলছে সে দিকেও খেয়াল নেই।

ইমতিয়াজ সকাল সকাল এসেছে আয়ানের বাড়িতে। তার মনের লাবনীকে কাল থেকে দেখতে না পেয়ে মন ছটফট করছে। তাই রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে সকালেই চলে এসেছে। কিন্তু এসে শুনলো, সে এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আচ্ছা লাবনী কী আয়ান স্যারের সাথেই ঘুমিয়েছে নাকি অন্য রুমে?
তার কী সব মনে পড়েছে এখানে এসে?

লাভনী এতটা দিন আমাদের কাছে ছিল একবারের জন্যও আমাদের কথা ভাবলো না? আমার কথা বাদই দিলাম কিন্তু আমার মা! মায়ের কথা তো ভাবতে পারতো। তবে ওর পরিবার ফিরে পেয়েছে মা জানলে নিশ্চয়ই খুশি হবে।

মিজান সাহেব উঠে ড্রইংরুমে এসে ইমতিয়াজকে দেখে, আপনি কে বাবা?

ইমতিয়াজ উঠে সালাম দিয়ে, আমি ইমতিয়াজ। স্যারের সাথে দেখা করতে আসছি। স্যার আসতে বলেছেন।

- ওহ্, আচ্ছা বাবা বসো। আসলে বাড়ির লক্ষ্মী ফিরে এসেছে। তাই ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে গেছে। শিরিন মা?

শিরিন এগিয়ে এসে, জ্বি চাচা বলুন?

- আয়ানকে ডেকে দাও। বলো ওর সাথে একজন লোক দেখা করতে এসেছে।

সূর্যের লাল রঙের আভা দেওয়ালে এসে লেপ্টে আছে। আয়ানের বুকে ভেতর গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে প্রাপ্তি। মনে হলো কতশত যুগ পার হয়ে দুজন একসাথে হয়েছে। শিরিন দরজার সামনে গিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে। আজ আয়ান কে ডাকতে তার লজ্জা লাগছে। ভাইয়া যদি খারাপ কিছু ভাবে। অবশ্য ভাববে বা কেনো? আমি তো ইচ্ছে করে ডাকতে আসিনি। চাচা বলল তাই আসছি।

শিরিন দরজায় সামান্য থাপ্পড় দিয়ে, ভাইয়া নিচে আপনার জন্য একজন লোক অপেক্ষা করছে। কথাটা বলেই শিরিন আর দাঁড়ালো না। আয়ান ঘুমঘুম চোখে শিরিনের কথার আওয়াজ পেয়ে উঠতে যাবে, কিন্তু প্রাপ্তির দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হাসলো। চুল এলোমেলো হয়ে আছে। চুলগুলোকে মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মায়াবি পরী নিজেই যেন তার ঘরকে আলোকিত করে রেখেছে।

আয়ান উঠতেই প্রাপ্তিও চোখ খুলে হসপিটাল যাবে নাকি?

আয়ান উঠে তোয়ালে হাতে নিয়ে বাথরুমের ঢুকতে ঢুকতে, না! আমার বউ ফিরে এসেছে এইকয়েটা দিন হসপিটাল যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। শিরিন কী বলে গেল জানি না। তাই উঠে গেলাম।

প্রাপ্তি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটা বেজে গেছে। আরিয়ার কথা মনে পড়তেই নিজেও উঠে গেল।

দুজনে ফ্রেশ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথা বলছে। ইমতিয়াজ অবাক হয়ে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। যে মেয়ে কাল পর্যন্ত দেখলাম কিছুই মনে নেই আর সেই মেয়ে আজ কী সুন্দর হাসি মুখে কথা বলছে। এই প্রথম ইমতিয়াজ প্রাপ্তির হাসি দেখতে পেলো। এতটা সুন্দর হাসি কারো হতে পারে? নাকি আমি প্রথম দেখেছি বলে এমন লাগছে? প্রাপ্তির হাসিতে ডুবে গেলেও ইমতিয়াজের মনে হলো, তাহলে কী এইবাড়িতে আসার পর ওর সব মনে পড়ে গেছে?

আয়ান ইমতিয়াজকে দেখে, কেমন আছো? বসো।

প্রাপ্তিও হাসি মুখে বলল, কেমন আছেন? কাল আসার সময় আপনাকে তেমন কিছুই বলে আসতে পারিনি। ভালো করেছেন সকাল সকাল চলে এসেছেন। আপনার মায়ের সাথে কথা বলবো। ওনার নাম্বারটা দিয়ে যাবেন।

প্রাপ্তির কথায় ইমতিয়াজ পুরোই হতভম্ব হয়ে আছে। এই দুই বছরে এই প্রথম প্রাপ্তি তার সাথে এতো সুন্দর হাসি মুখে কথা বলেছে।

ইমতিয়াজকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আয়ান প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ইমতিয়াজ তুমি কিন্তু না খেয়ে একদম যাবে না।

ইমতিয়াজ প্রাপ্তির থেকে চোখ সরিয়ে, না স্যার অন্য একদিন।

আয়ান মনে মনে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলছে, খাবি না ভালো কথা, তাই বলে আমার বউয়ের দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? তোকে আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য বেতন দিয়ে রাখছি নাকি?

আয়ানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, স্যার কিছু বলবেন?

আয়ান চমকে উঠে, না, না,

আরিয়া এসে প্রাপ্তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, মা আমি কিন্তু আজ স্কুলে যাবো না। আজ সারাদিন আমি তোমার সাথেই থাকবো।

প্রাপ্তি আরিয়ার কপালে চুমু দিয়ে, মেয়ে আমার বড় হয়েছে ঠিক কিন্তু বাচ্চামি এখনো যায়নি। আচ্ছা ঠিক আছে আজ স্কুলে যেতে হবে না।

ইমতিয়াজ দৃশ্যটা দেখে, আয়ানের দিকে তাকিয়ে, আপনাদের মেয়ে?

- হু।

- আপনাদের বিয়ের তো তাহলে কম সময় হয়নি স্যার।

তার মানে কাল আপনি যে কথাটা বলেছেন সেটা লাভনীর, স্যরি প্রাপ্তির দ্বিতীয় সন্তান ছিলো?

আয়ান মুচকি হেসে, হুম।

ইমতিয়াজ আর কিছু বলল না। সবাই এক সাথে নাশতা করে আয়ান ইমতিয়াজকে নিয়ে সেই হসপিটাল চলে গেল যেখানে প্রাপ্তিকে ইমতিয়াজ পেয়েছিল।

আরমিন সুমনার কাছ থেকে জানতে পেরেছে প্রাপ্তি বাড়িতে ফিরে এসেছে। তাই সে হসপিটাল না গিয়ে আয়ানের বাড়িতেই আসলো।

আরিয়া, শিরিন, আর প্রাপ্তি মিলে নানান গল্প জুড়ে বসলো। আরমিনকে দেখে প্রাপ্তি উঠে দাঁড়িয়ে, আপনি?

- প্রাপ্তি কেমন আছো?

প্রাপ্তি মুচকি হেসে, ভালো। কিন্তু ও তো বাসায় নেই। আপনি নিশ্চয়ই আয়ানের কাছে এসেছেন?

- না, আমি তোমাকে দেখতেই ছুটে এসেছি।

আরিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে, আরিয়া মাকে পেয়ে আন্টিকে ভুলে গেলে?

আরিয়া আরমিনের দিকে ফিরে, না আন্টি। আপনাকেও আমি ভালোবাসি।

প্রাপ্তি আর আরমিন অনেক কথায় বললো। আরমিন যে জায়গা আয়ানের মনে পেয়েছিলো সেটা এক রাতেই শেষ। আরমিন আর চায় না। নিজের মনেও আয়ানের জন্য কোনো জায়গা থাকুক। আয়ান যেভাবে শেষ থেকে শুরু করে, আজ থেকে আমিও সেই অনুসরণ করেই হাঁটবো ও পারলে আমি কেনো পারবো না। আমারই ভুল হয়েছে উনার কথা ভেবে সময় পার করার। কিন্তু আর না। আব্বুর মনে আমি আর কষ্ট দিবো না। নিজের মনের মতো কাউকে পেলে ঠিক প্রাপ্তির মতো চুটিয়ে সংসার করবো। নিজের স্বামীর ভালোবাসাকে আপন করে নিবো।

হসপিটাল এসে আয়ান ইমতিয়াজের কথামতো ডাক্তার ইকবালে খোঁজ করে তার সাথে দেখা করলেন।

চেম্বারের সামনে এসে আয়ান দাঁড়িয়ে, আসতে পারি?

ইকবাল আয়ানকে দেখে, আরে আসুন আসুন। গরিবের দরজায় হাতীর পা!

আয়ান এগিয়ে এসে, বেশি বলে ফেলেছেন।

- আমি ঠিক কথায়ই বলছি, বসুন। তা কী মনে করে আমার এইখানে?

ইমতিয়াজ পাশ থেকে বললো, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?

ইকবাল কপাল ভাঁজ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, হে এখন মনে পড়েছে। কী অবস্থা আপনার? আর যাকে এখান থেকে নিয়ে গেছেন সে মেয়েটার? কেমন আছে ও?

- খুব ভালো আছে।

- সব কিছু মনে পড়েছে?

ইমতিয়াজ আয়ানকে দেখিয়ে আমার থেকে ওনি ভালো বলতে পারেন। কারণ আমি যাকে নিয়েছিলাম সে আয়ান স্যারের স্ত্রী।

ইকবাল আয়ানের দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে, আপনার স্ত্রী?

আয়ান ভারী গলায় বললো, জ্বি। আমি এসেছি আপনাকে ওর ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করতে।

আমার স্ত্রী আপনার এই হসপিটালে কীভাবে আসে? মানে কে নিয়ে এসেছে ওকে?

ইকবাল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে এসেছিলো। তখন রাত সাড়ে বারোটা। আমি সব গুছিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চেম্বার থেকে বের হতেই আমাদের এখানের একজন সিস্টার এসে বললো, স্যার একজন ইমার্জেন্সি রোগী আছে। সেদিন আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। মেয়েটার এতোটাই অবস্থা গুরুতর ছিলো যে বাঁচবে কিনা সেটাও নিশ্চিত ছিলাম না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই আমরা দুইজন ডাক্তার ওর চিকিৎসা করলাম।

আপনার স্ত্রী তো তখন প্রেগন্যান্ট ছিলো তাই না মিস্টার আয়ান?

আয়ান গম্ভীরমুখে বলো, জ্বি।

- কিন্তু আমরা বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি।

ইকবাল এইকথাটা বলেই কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর আবার বললো, আপনার স্ত্রী কোমায় চলে গেছে। কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরলো কিছুই মনে করতে পারছিলো না। আর যারা আপনার স্ত্রীকে এখানে নিয়ে এসেছে, ছেলেটা পরে আর কখনোই আসেনি। আর মেয়েটা তিন চার মাসের মতো এসেছে। পরে আর সেও আসেনি। তারপর এই ছেলেটাই আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। এখন কেমন আছে ও?

আয়ান স্থির গলায় বললো, ভালো।

আয়ান বাড়ি ফিরে একটা কথাই বুঝতে পারলো না। সেদিন কে ছিলো এই মেয়েটা? ছেলে! ছেলেটাই বা কে? আয়ানের মাথায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে। কে হতে পারে?

প্রাপ্তি এসে পাশে বসে, কোনো খবর পেলে?

প্রাপ্তি কথাটা বলতেই আয়ান চমকে উঠে, কিছু বলেছো?

- বলেছি হসপিটাল থেকে কিছু জানতে পারলে?

আয়ান প্রাপ্তিকে কাছে টেনে বুকের সাথে মিলিয়ে, প্রাপ্তি আমাদের বাচ্চাটাকে তাঁরা বাঁচাতে পারেনি। তুমি চিন্তা করো না। তুমি বেঁচে আছো আমার এতেই সব। বাচ্চা দুনিয়াতে আবার আসবে। কিন্তু তুমি যদি হায়িয়ে যেতে তাহলে?

প্রাপ্তি কিছু না বলে গম্ভীর হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে, কী করে পারো? শত কষ্টে নিজেকে সামলে রাখতে? আমি তো পারি না। আমার কষ্ট হয়। আমি যে তোমার মতো ধৈর্যশীল নয় আয়ান। আমি মাতৃত্বের স্বাদ খুঁজে পেতে চাই। তুমি জানো যেদিন আমার সব মনে পড়ে ছিলো সেদিন থেকেই নিঃশব্দে কেঁদেছি। বারবার নিজের পেটে হাত বুলিয়ে অনুভব করে চোখের অশ্রæ ঝরিয়েছি। এর কী কোনো মূল্য নেই?

আয়ান প্রাপ্তিকে জড়িয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। প্রাপ্তিকে এইভাবে দেখতে তার মোটেও ভালো লাগছে না।
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন