___আশরাফুল ইসলামের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। সেজন্য হসপিটালের অনেক ডাক্তার আয়ানকে অভিনন্দন জানালো।
পনেরো দিন চেন্নাইতে থেকে আজ আয়ানের দেশে ফেরার পালা। আয়ান নিজের বিয়ের জন্য অনেক শপিং করেছে সুমনা সহ। সুমনা এখন আয়ানের শুধু এসিস্ট্যান্ট নয়, ছোটো বোনের মতই।
আয়ান আরিয়ার পছন্দ মতো অনেক খেলনা নিয়েছে।
আসার সময় আশরাফুল ইসলাম আয়ানের জন্য মন খারাপ করে ছিলেন। আয়ানকে যেন নিজের একটা অংশ মনে হয় উনার কাছে।
হালিমা বেগম আয়ান আর সুমনার সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এসেছে। আয়ানকে যেন তার ছাড়তেই ইচ্ছে করে না। এই কয়েকদিনে ছেলেটার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে তারা।
এয়ারপোর্ট থেকে এসে স্বামী- স্ত্রী দুজনেই আয়ানের জন্য মন খারাপ করে আছেন। মাঝে মাঝে হালিমা বেগম কান্নাও করছেন। নিজেদের মেয়েটা কয়েকবছর থেকেই লন্ডনে থাকে। কিন্তু কিছুদিনের জন্য আয়ানকে পেয়ে যেন নিজেদের ছেলে ঘরেই ফিরে এসেছে। তাই মেয়ের কথাটাও তেমন একটা মনে পড়েনি। কিন্তু আজ বুকের ভেতর যেন সব দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আবার নতুন করে ফাঁকা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে মনে।
আয়ান দেশে এসে এয়ারপোর্ট থেকে সুমনাকে বাড়িতে দিয়ে নিজের বাড়িতে এসেছে।
সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই চিৎকার দিয়ে,
আরিয়া! আরিয়া! কোথায় তুমি? তোমার বাবাই তোমার কাছে ফিরে এসেছে।
সবকিছু যেন নিরব হয়ে আছে।
কিন্তু কারো সাড়া না পেয়ে আয়ান ব্যাগগুলো ড্রইংরুমে রেখে, নিলিমা বেগমের রুমে গিয়ে দেখে নিলিমা বেগম শুয়ে আছে। আয়ান মায়ের পায়ের কাছে বসে আস্তে করে ডেকে, মা'
নিলিমা বেগম চোখ খুলে আয়ানকে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসার চেষ্টা করছে আর হাসফাস গলায় বলছে, কেমন আছিস বাবা? এই তোর বাড়ি আসার সময় হলো?
আয়ান নিলিমা বেগমে মাথার পাশে গিয়ে বসে নিলিমা বেগমকে উঠিয়ে বসালো।
- মা আমি তো যাওয়া সময় বলেছি আমার কয়েকটা দিন থাকা লাগবে। আমি পনেরো দিন থেকেই তো চলে আসলাম।
- হু! কিন্তু আমার যে মনে হচ্ছে পনেরোটা বছর।
- মা কাউকে তো দেখছি না বাড়িতে। আরিয়া কোথায়? আমি এতো ডাকার পরেও তো আসলো না। শিরিন, ও কই?
নিলিমা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আরিয়া কারো কথাই শুনে না বাবা। নয়না যা বলে সে তাই করে। দুপুরের আরিয়া শিরিনকে গ্লাস ছুড়ে মেরেছিলো,গ্লাস গিয়ে কপালে লাগে। মেয়েটার রক্তাক্ত অবস্থায় আমি রাফিকে ফোন দিলাম। রাফি নিজে এসেই শিরিনকে নিয়ে গেল হসপিটাল।
আর ওই নয়না মেয়েটা, আরিয়াকে কই নিয়ে যায় কি করে আমাকে কিছুই বলে না। আমার তো আর সেই শক্তি নেই মেয়েটার কাছ থেকে নিজের নাতনিকে কেড়ে নিবো।
আয়ানের সন্দেহটা ঠিক। তীর যেন নিশানায় গিয়েই লেগেছে।
আয়ান নিলিমা বেগমকে উঠিয়ে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।
নিলিমা বেগমকে বসিয়ে ফ্রেশ হতে গিয়ে সে আরও অবাক হলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মেয়েদের জামা- কাপড় কসমেটিকস পুরোটা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মদের বোতল নিচে পড়ে আছে। এমন ভাবেই বোতল পড়েছে যেন অনেকক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে নিজের বাসস্থান খুঁজে নিয়েছে।
নিজের আলমারি খুলে চোখ যেন এইবার আগুনের মতো হয়ে গেল। তার জামাকাপড়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। সবগুলোকে সরিয়ে নয়নার জামা কাপড় রাখা। এককথা আয়ানের পুরো রুমটা যেন তারই।
আয়ান নিজেকে সামলিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে ড্রইংরুমে এসে, নিলিমা বেগমের পাশে বসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে, মা'নয়না আমার রুমে থাকছে এই নিয়ে তুমি ওকে কিছু বলোনি?
নিলিমা বেগম কিছু বলার আগে শিরিনকে আসতে দেখে, আয়ান স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে।
রাফি এসে আয়ানকে দেখে, কিরে আমার বউটাকে পৌঁছে দিয়েছিস তো?
- হু শিরিনের কী অবস্থা এখন?
- অনেক খারাপ কিছু হতে পারতো। কিন্তু ভাগ্য ভালো তেমন কিছু হয়নি। আমি নিজে দেখেই মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি।
শিরিনের দিকে আয়ান তাকিয়ে, তুমি গিয়ে বিশ্রাম নাও।
- ভাইয়া তুমি এসেছো আমি তো তোমার রুমটাও গুছিয়ে দিতে পারিনি।
- শিরিন তোমার গোছানো লাগবে না। তুমি যাও বিশ্রাম নাও।
আয়ান নিজে গিয়েই রাফির জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসলো দুজনে আর নিলিমা বেগম মিলে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে রাফি চলে গেল।
নয়না ফিরে আসলো রাত আটটা। এসেই আয়ানকে দেখে একটু অবাক হলো।
- আয়ান তুই কখন এসেছিস?
- বিকেলেই আসলাম। তোর জন্য অপেক্ষা করছি। আরিয়া দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, বাবাই তোমার এতো দেরি হয়েছে কেনো? আমি তোমাকে কতো মিস করেছি তুমি জানো?
- জানি মামনি। আমিও তো তোমায় অনেক মিস করেছি।
নয়না কিছু না বলেই আয়ানের রুমে গিয়ে দেখে সব কিছু গোছানো। নয়নার মনে ভয়ে যেন চেপে ধরেছে। সে যদি জানতো আয়ান আজ আসবে তাহলে তো বাহিরে না গিয়ে সবকিছু নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখতো
আয়ান এসে দরজায় দাঁড়িয়ে, চিন্তা করিস না, আমি নিজেই সব গুছিয়েছি।
কথাটা শুনে নয়না পিছনে ফিরে ভয়ে ভয়ে বললো, আ... আয়ান!
- হু বল?
- আসলে
- তুই নেশা করিস তাই তো?
- না মানে...
- আমার আগেই সন্দেহ হয়েছে তোর উপর। যাই হোক আমি তোকে কিছু বলবো না। তবে আমি এটাও চাই না তুই আমার মেয়ের সাথে আর দেখা করিস, এবং কি এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি।
নয়না আমতা আমতা করে কিছু বলতেই আয়ান থামিয়ে দিয়ে, আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। তুই এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে চলে যা। কথাটা বলে আয়ান ড্রইংরুমে আসার জন্য পা বাড়িয়ে আবার পিছনে ফিরে, আর হে এইরুমে কারো থাকার অধিকার নাই। আমার প্রাপ্তি ছাড়া। আর আমার প্রাপ্তির জায়গা যে বসতে চায় সে কখনো আমার বন্ধু হতে পারে না। কথাটা শেষ করে আয়ান হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
নয়না নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচে আসতেই আরিয়া হাত টেনে ধরে, মা তুমি কোথায় যাচ্ছো?
আরিয়ার কথা শুনে আয়ান আচমকা পাশে ফিরে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো।
- মা!
- হ্যাঁ বাবাই ও আমার মা।
কথাটা শুনে আয়ানের বুকের ভেতর কাঁপনি শব্দটা যেন আরও বেড়ে গেল , আস্তে করে বলল, ও তোমার মা কে বলল? তোমার মা তো তোমার মায়ের বাড়িতে।
- না বাবা, ওই আন্টি আমার মা নয়। মা তুমি কথা বলো না কেনো? বাবাই তোমাকে ভুল বুঝেছে। তাই তোমরা এক সাথে থাকো না। তাই না মা?
বাবাই তুমি এতোটা খারাপ কেনো? তুমি অন্য একটা মেয়েকে আমার মা বলো। আর আমার মাকে তুমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে বলছো?
আয়ানের আর বুঝতে দেরি হলো না নয়না তার নিজের গতিতে আরিয়াকে চালিয়ে নিচ্ছে।
আয়ান গম্ভীর হয়ে বসে হাত দিয়ে নিজের মুখ বার বার মুছে যাচ্ছে। চোখগুলো লাল আগুনের শিখার মতো রূপ নিয়েছে।
আরিয়া আয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে, বাবাই তুমি কথা বলো না কেনো? আমার মাকে বাড়ি থেকে কেনো বের করে দিচ্ছো? বল? আনসার দাও?
কথাগুলো আয়ানের কাছে অস্বস্তি লাগছে, বারবার কপাল মুছে নিচ্ছে। আরিয়ার কাছে কী সে এতোটাই খারাপ হয়ে গেল? প্রাপ্তি! এইসব শুনলে সেই বা মেনে নিবে কী করে? আরিয়াকে আমি ভালোবাসি, কিন্তু প্রাপ্তি আমার জীবনের সব। একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, “গাছ তোর পরিচয় কী? গাছ তখন বলে, আমার ফলই আমার পরিচয় বহন করে। ” আরিয়াও আজ তাই প্রমাণ করে দিচ্ছে। ছোটো বেলা থেকে আমার ভালোবাসা তাকে নাড়াতে পারিনি, আর নয়নার কয়েকদিনের ভালোবাসা যেন পাথর গলে নরম তুলো হয়ে গেছে। লোহা গলে তরল পদার্থ তৈরি হয়েছে। আমাকে বিশ্বাস না করে নয়নার বলা কথাগুলোই তার কাছে সব হয়ে গেল? আমার ভালোবাসার মাঝে কি এতোটাই খুঁত ছিল? আমার ভালোবাসা এতটাই তুচ্ছ? উঁহু আর ভাবতে পারছি না। কলিজাটা যেন আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে। এই আগুন কী থামানো যাবে?
আয়ানকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে, বাবাই তুমি কিছু বলছো না কেনো? মা তো চলে যাচ্ছে।
আয়ান মুখ থেকে হাত নামিয়ে,
তুমি কী চাও? তোমার বাবার ভালোবাসা? নাকি দুইদিনের জন্য আসা এক আন্টির স্নেহ? আরিয়া' তুমি তোমার বাবাকে বিশ্বাস না করে এই আন্টিটা যা বলল তাই মেনে নিলে?
- বাবাই নয়না আন্টি যদি আমার মা না হয় তাহলে কই আমার মা তো আমায় একটা বার দেখতে এলো না। নয়না আন্টিই তো এলো। মাই তো আমার কাছে থাকবে তাই না?
আয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে, আমার মেয়েটাকে তুই এসব কী কথা বুঝিয়েছিস? ও ছোটো বাচ্চা নয়না, এতোকিছু সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই। তুই যদি আরিয়াকে চাস নিয়ে যায় কিন্তু উল্টোপাল্টা কথায় ওর ব্রেনওয়াশ করিস না।
আরিয়া চুপ করে আছে। নয়না আয়ানের কথায় আর কিছু না বলেই রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
আয়ান রাফিকে নিয়ে প্রাপ্তিদের বাড়িতে এসেছে ওদের সাথে দেখা করার জন্য।
আয়ানকে দেখে প্রাপ্তির যেন নিশ্বাস ফিরে পেলো। পারভীন বেগম মাহবুবকে খবর দিয়েছে, আজকেই বিয়ের কথা বলবে আয়ানকে। আয়ান দেশে ছিল না বলে মাহবুর আর তাদের বাড়ি যায়নি আয়ান যখন নিজে থেকে এই বাড়িতে এসেছে তাহলে তো এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না।
পারভীন বেগম আয়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। চেন্নাই গিয়ে সে কি করেছে না করেছে সেইসব নিয়েও কথা হলো। আয়ান রাফিকে পারভীন বেগমের সাথে বসিয়ে ওয়াশরুমে যাবে বলে উঠে করিডরে এসে কাজের মেয়েটাকে দেখে প্রাপ্তির রুমের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে দেখিয়ে দিলো।
প্রাপ্তিও রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখে আয়ান সামনে দাঁড়িয়ে।
পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে দুজনেই। আয়ান আস্তে আস্তে প্রাপ্তির সামনে এসে প্রাপ্তির পিছন দিকে হাত নিয়ে, প্রাপ্তির চুলের ক্লিপটা খুলে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আয়ানের যেন এতো দিনে প্রাণ ফিরে এলো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
অনেকটা সময় দুজনে এভাবে থেকে, প্রাপ্তি মাথা উঠিয়ে, এই যে মশাই' এতো দিন মনে পড়েনি আপনার এই বউটাকে?
আয়ান খাটের কিনারায় বসে প্রাপ্তিকে পায়ের উপর বসিয়ে, আয়ানের এই নিশ্বাস যতোদিন চলবে ততদিন তার প্রাপ্তির নামটাও তার নিশ্বাসের সাথে প্রসারিত হবে। আয়ান আবার উচ্চস্বরে বলতে লাগলো,
সূর্য যতদিন দিবে আলো,
চাঁদ যতদিন অন্ধকারকে হারিয়ে নিজেকে স্পষ্ট করে পৃথিবীকে আলো দিয়ে যায়,
প্রতিটি রাতকে হারিয়ে দিন, দিনকে হারিয়ে রাত।
আয়ান বেঁচে আছে যতকাল, প্রাপ্তি তার মনে থাকবে চিরকাল।
প্রাপ্তি নিজের চেহারায় আশ্চর্যের ভাব ফুটিয়ে তোলে, ডাক্তার সাহেব আপনি কবি হলেন কবে? কথাটা বলেই প্রাপ্তি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আর সেই হাসি আয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিজের মাঝে ঘায়েল করে নিচ্ছে। বুকের ভিতরটা যেন ধুপধাপ শব্দ উঠানামা করছে। প্রাপ্তি কী সেটা বুঝেনা? কতোটা ভালোবাসি আমি ওকে? প্রাপ্তি আয়ানের কোল থেকে উঠে তুমি এইখানে আছো মা জানে?
আয়ান অভিমানী স্বরে বলল, না!
- তাহলে চলো, কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
- প্রাপ্তি আমি তোমার স্বামী। আমার যখন খুশি আমি আমার বউয়ের কাছে আসবো। তাতে কার কী?
প্রাপ্তি আয়ানকে আস্তে কথা বলতে বলে, এইবার চলো। তোমার বাড়ি গেলে যা ইচ্ছে কর এখন এইখানে এভাবে আমার ভালো লাগছে না।
- কথাটা মাথায় থাকে যেন। আমার বাড়ি গেলে আমি যা ইচ্ছে করবো আর তুমি চুপ করে থাকবা। ওকে?
- প্রাপ্তি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে, হু।
পারভীন বেগম মাহবুবের সাথে কথা বললেন, আজকেই বিয়ের তারিখ ফেলার জন্য।
দরকার প্রয়োজনে আয়ানের মায়ের কাছে যাবেন তিনি।
আয়ান এসে বসতেই মাহবুবকে সালাম দিয়ে, কেমন আছেন?
- জ্বি ভালো। ডাক্তার সাহেব আমার বোনের বাড়িতে ভাবতেই অবাক লাগছে।
- মামা আপনি ভুল বললেন, আপনারা যেহেতু মেয়ের পরিবার আপনাদের কাছে তো আসতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা কী জানেন? এই যুগে যার ঘরে লক্ষ্মীমন্তর একটা মেয়ে আছে, সেই এখন বড় লোক।
আয়ানের সাথে রাফিও একমত জানিয়ে হাসলো।
মাহবুব বিয়ের কথা তুলতেই আয়ান গম্ভীর হয়ে বলল, আমি আজ এইখানে বিয়ের কথা বলতে আসিনি। আমি এসেছি আপনাদের সাথে দেখা করতে।
পারভীন বেগম মুখে বিষন্নতার রেখা ফুটিয়ে, তাহলে প্রাপ্তিকে তুমি বিয়ে করবে না?
আয়ান মুচকি হেসে, আমি কিন্তু তা বলিনি, আমি বলেছি আপনাদের সাথে আমি বিয়ের কথা আজ বলতে পারছি না। আপনারা কাল আমার বাড়ি যাবেন, আমার মা কে বলবেন আমার মা যা বলে তাই হবে।
আসলে এই পৃথিবীতে আমার মা ছাড়া এখন আপন বলতে কেউই নেই। তবে হ্যাঁ ডাক্তার হওয়ার পর অনেকেই আপনজন সেজে আসে। কিন্তু সে মানুষগুলোকে আমার মোটেই ভালো লাগে না।
কথাটা বলে আয়ান দাঁড়িয়ে পড়লো। সাথে মাহবুব আর পারভীন বেগমও।
আয়ান আবার বলল, আপনারা চাইলে কাল আমার বাড়িতে গিয়ে আমার মায়ের সামনে প্রস্তাব দিবেন। আমার মা যদি বলে, বউ আমি এক্ষুনি চাই। আমি আয়ান সাথে সাথেই বউ ঘরে তুলে নিবো।
কথাটা বলে আয়ান প্রাপ্তির চোখে চোখ পড়তেই, ভালো থেকো। আমি এইভাবে বলতে চায়নি। কিন্তু এটাই একমাত্র সুযোগ তোমার মাকে আমার মায়ের কাছে পাঠিয়ে ক্ষমা চাওয়ানোর। আমি তো বিয়ের কথা মাকে সেদিনই বলেছি। এখন শুধু তোমার বউ হওয়ার অপেক্ষা।
তবে তোমার মা যে ভুলটা নিজের পিছনে ঘটেছে সেটা চোখের সামনে নিয়ে আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরের দিন প্রাপ্তিদের বাড়ির কেউ আয়ানদের বাড়ি যায়নি। পারভীন বেগম অনেক ভেবে চিন্তে দুই দিন পর মাহবুবকে নিয়ে গেলেন আয়ানদের বাড়ি। বিশাল বাড়ি দেখে প্রাপ্তি মা একটু অবাকই হলো। তিনি যা ভেবেছিলেন তার থেকেও বেশি।
পারভীন বেগম গাড়ি থেকে নেমে গেটের সামনে দাঁড়িয়েই ছিলেন কিছুক্ষণ। দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই বাড়িতে ঢুকে গেলেন।
.
.
.
চলবে..................................