শেষ থেকে শুরু - পর্ব ০১ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


____ওয়েটিং রুমে বসে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে প্রাপ্তি।কয়েকদিন থেকে শরীরটা তার ভালো নেই।প্রচন্ড শরীর খারাপ তার।তাই আজ এসেছেন ডাক্তার আয়ানের কাছে।তবে আয়ান নামটা শুনলেই প্রাপ্তির মনে এলোপাতাড়ি ঝড় বইতে থাকে।কিন্তু কিছু করার নেই।এই নামে পৃথিবীতে একজন মানুষ নেই, আছে হাজার জন।
প্রাপ্তির পাশে বসে আছে তার মেজো খালা রুবিনা বেগম।খালার সাথেই তাকে ডাক্তার কাছে আসতে হয়েছে।
তার খালার কাঁধে মাথা রাখতেই একজন সিস্টার এসে,প্রাপ্তি কে আছেন? ভিতরে আসুন।

রুবিনা বেগম তড়িঘড়ি করে উঠে, চল উঠ আমাদের ডাকছে।শুন যাবার আগেই বলে দিচ্ছি ডাক্তারকে সব সমস্যা খুলে বলবি।সব জাগায় চাপা স্বভাবের হয়ে থাকিস না।শুন মা ডাক্তারদের কাছে কিছু লুকাতে নেই।অনেক কষ্ট করে এই ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলাম।এখনকার সময় বড় ডাক্তারদের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়াটা খুবি কষ্টের ব্যাপার। 
'কি হলো আসছেন না কেনো? আপনাদের জন্য কি অন্য রোগীরা বসে থাকবে নাকি? তাড়াতাড়ি আসুন দেরি হলে তো স্যার আমাকেই বোকা দিবেন।'
সিস্টারের কথা শুনে প্রাপ্তি চলে গেল ডাক্তারের কেবিনে।সাথে ওর মেজো খালাও।

ডাক্তার নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা লিখছিল।প্রাপ্তি যেতেই ডাক্তারের দিকে চোখ পড়তেই যেন তার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।শরীর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে তার।কারণ ডাক্তার আর কেউ নয় সেই আয়ান।
আয়ান নিচ থেকে মাথা উঠিয়ে প্রাপ্তিকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
প্রাপ্তির পুরোটা শরীর থরথর করে কাঁপছে।সেটা দেখে তার খালা তাকে কি করবে বুঝতে পারছেনা।
আয়ান সিস্টারকে বললো,তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তাড়াতাড়ি ওকে ধরে বেডে শুয়ে দাও।

সিস্টার প্রাপ্তিকে তড়িঘড়ি করে বেডে শুয়ে দিল।
আয়ান তার খালাকে বাহিরে যেতে বলে,প্রাপ্তিকে দেখে সিস্টারকে ইনজেকশনের নাম লিখে দিল নিয়ে আসার জন্য।ইনজেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই প্রাপ্তির কাঁপনিটা একটু বন্ধ হয়েছে।কিন্তু মেয়েটার জ্ঞান নেই।তাই আয়ান চুপচাপ বসে আছে প্রাপ্তির পাশে।
কত বছর পর মেয়েটাকে দেখছে সে।আগের মতো তেমন সৌন্দর্যটা নেই। কিন্তু তবু্ও মুখে একচিলতে মায়া যেন জমে আছে।চোখের নিচে কালি পড়েছে।মনে হচ্ছে কয়েকটা বছর না ঘুমিয়ে আছে সে।আয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে আর বার বার প্রাপ্তির দিকে তাকাচ্ছে।

আয়ান সিস্টার মিনুকে বলল, আজ আর রোগী দেখবেনা।সবাইকে কথাটা জানিয়ে দিতে।

-স্যার আপনি রোগীগুলো না দেখলে হবেনা।তাও আবার আপনি আজ রাতেই দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছেন।এইসব মানুষগুলো অনেক আশা নিয়েই আপনার কাছে এসেছে স্যার।

আয়ান মিনুর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে,তুমি মাঝে মাঝে এতো ভাগ বকো কেনো? আমাকে একটু বলবে? ইমার্জেন্সি রোগীগুলো রেখে বাকী গুলোকে যেতে বলো।আর হ্যাঁ আমি কাল সকালেও রোগী দেখবো।এইটা জানিয়ে দাও।

'কিন্তু স্যার,আপনি দেশের বাহিরে যাবেন না?

কথাটা শুনেই আয়ান মিনুর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই মিনু দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।

আয়ান মুগ্ধ চোখে প্রাপ্তিকে দেখছে।ইচ্ছে করছে তার কপালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে বলতে, পাগলী তোমার আয়ান এখনো তোমার আশায় বসে আছে।এখনো তুমি আসবে সেই অপেক্ষায় বসে আছে।
কিন্তু সেটা হয়তো আর কখনো বলা হবে না।

মিনুকে দেখে রুবিনা বেগম হড়বড় করে দাঁড়িয়ে, মেয়েটা ঠিক আছে তো? হঠাৎ ডাক্তারকে দেখে কেনো যে এমন করলো কিছু বুঝতেছিনা।

'আপনি চিন্তা করবেন না।স্যার ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছে।আর স্যার আপনাদের রোগী দেখছেন বলেই ইমার্জেন্সি রোগী বাদে সবাইকে চলে যেতে বলেছে।

কথাটা শুনেই রুবিনা বেগম আশ্চর্য হলেন।এতো বড় ডাক্তার আর সে কিনা প্রাপ্তির জন্য,,,,, 
নাহ্ এইটা কীভাবে সম্ভব। কিছু তো একটা আছেই।
কিন্তু সেটা কি?নাকি আমিই সব কিছুতে সন্দেরের গন্ধ খুঁজে বেড়াই?

প্রাপ্তি চোখ খুলেই দেখে সিস্টার মিনু পাশে দাঁড়িয়ে, আয়ান নিজের চেয়ারেই বসে আছেন।তার সামনে মুরুব্বি একজন মানুষ বসে আছেন।হয়তো কোনো রোগের ব্যাপারেই কথা বলছেন।আয়ান হাসি হাসি মুখ করে রোগীকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তির দিকে চোখ পড়লো।
একজোড়া করুন টলমলে চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে,এখন কেমন লাগছে? 
প্রাপ্তি নিজে নিজে উঠে বসতে চেষ্টা করতেই আয়ান মিনুকে ইশারা দিল বসিয়ে দিতে।

প্রাপ্তি বসেই এদিক সেদিক তাকালো।রুবিনা বেগমকে না দেখতে পেয়ে,আন্টি কোথায়? 
আয়ান ইশারায় দরজার বাহিরে দেখিয়ে,ও তোমার মেজ খালা?
প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের ।

'ফ্লোর তিন বেলা মুছে দেওয়া হয় এখানের লোকজনেরা।এইভাবে সরকারি দলের লোকের মতো যাচাই করার কিছু নাই।সো আপনি আমার দিকে তাকান।
আয়ানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালো 

'মিনু, ওকে চেয়ারে বসাও।ওনার প্রবলেম কি বলতে বলো।
কথাটা বলেই আয়ান নিজের চেয়ারে এসে বসলো।
মিনু প্রাপ্তিকে চেয়ারে বসিয়ে, স্যার আপনি কী উনাকে চিনেন?

'মিনু তুমি বেশি কথা বলো।কথাটা একটু গম্ভীর হয়ে বলল আয়ান।

মিনু আর কিছু না বলে চুপ করে আছে।

'বলুন আপনার সমস্যা কী?

প্রাপ্তি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, অনেক দিন থেকেই জ্বর,খালা ঔষধের দোকান থেকে ঔষধ নিয়ে দিয়েছিল কিন্তু কিছুতেই কমছে না।সাথে প্রচন্ড পেট ব্যথা।
কথাগুলো বলে প্রাপ্তি একটু থামলো।

আয়ান চুপ করেই গালে হাত দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিল।প্রাপ্তি থামতেই,পেট ব্যথা কতদিন?

প্রাপ্তি আস্তে করে বলল, ১ বছরেও বেশি।

'আগে কোনো ডাক্তার দেখিয়েছেন এই পেট ব্যাথার জন্য?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।

'আপনার হ্যাজবেন্ডকে ডাকুন। আর হ্যাঁ আমি কিছু টেষ্ট দিয়ে দিচ্ছি সেইগুলো করুণ।আপনি যেহেতু বলছেন পেট ব্যাথা অনেক দিন থেকে তাহলে নিশ্চয়ই কোনো কারণ থাকতে পারে।

আয়ান প্রেসক্রিপশনে কলেমের খোঁচা গুলো দিচ্ছে ঠিকে প্রাপ্তির কানে শব্দটা বেশ জোরালো ভাবেই আসছে।কিন্তু আয়ানকে কীভাবে বলবো আমার বিয়ে হয়নি? আমি কারো বাসায় আশ্রিত হয়ে আছি।

'কি হলো চুপ করে আছো কেনো?মিনু তুমি যাও তো বাহিরে ওর হ্যাজবেন্ড আছে কিনা দেখো?  

মিনু পা বাড়াতেই, প্রাপ্তি তড়িৎ ভাবে বলল,এই যে শুনুন,বাহিরে আমার হ্যাজবেন্ড নেই।মানে আমার এখনো বিয়ে হয়নি।আমার আন্টি আছে ওনাকে ডেকে নিয়ে আসতে পারেন।

আয়ান মাথা নাড়িয়ে মিনুকে যেতে বলে,প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, বিয়ে করোনি কেনো?
অবশ্য বড় লোকের মেয়েরা এমনি হয়।সহজে বিয়ে করতে চায়না।গরিব ছেলেদের সাথে প্রেম করে পরে সময় বুজে কেটে পড়ে।যাইহোক, নিশ্চয়ই আগে থেকে বুঝতে পারোনি এখানে এসে আমাকে দেখতে পাবে? কি ঠিক বলছি তো?
আসলে তুমি হয়তো ভাবতেই পারোনি। ছোট্টো একটা গ্রামের সেই আয়ান আজ এইখানে,,,
কি এটাও ঠিক বলছি তো?
.
.
.
চলবে.................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন