___আয়ান নয়নাকে ফোন দিতে বলে চলে গেল।
নয়না সেখানে দাঁড়িয়ে আয়ানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ান চোখের আড়াল হতেই নয়না তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিয়ে,আয়ান তুই আজও বোকাই রয়ে গেলি।
আমার হ্যাজবেন্ডকে আমি এক সাথে ছেড়েই বাহিরে থেকে দেশে এসেছি।তুই সেদিন আমার বাবা মাকে বলেছিলি তুই আমার সন্তানের বাবা হবি।কিন্তু আয়ান,মা ছাড়া বাবা হওয়া যায় না।
পারভীন বেগম হসপিটালের বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, এইবার সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে প্রাপ্তির ভুল ভাঙিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।এতো বড় বাড়ি, শুধু আমি আর কাজের মেয়েটা।আমার যা কিছু আছে সব তো তোরই।আমি তোর মা সবসময় তোর ভালো চেয়েই এসেছি।আয়ান যেহেতু নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে তাহলে আমিও তোকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে নিজেকে পাপের হাত থেকে মুক্ত করবো।তোর বাবা সেইদিন আমায় ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল।মানুষটা বড্ড বেঈমান।বড্ডই বেঈমান।
না হয় রাগের মাথায় দুই একটা কথা বলেছিলাম। তাই বলে আমায় একা ফেলে চলে যেতে হবে?
মুহূর্তের মধ্যে সুমনা আসতেই ভাবনার থেকে ফিরে এলো পারভীন বেগম।
-কী আন্টি কী ভাবছেন?
-না মা কিছুই না।
-আপনার মেয়ে এসেছিল কাল,দেখে অনেক ভালোই লাগলো।
কথাটা শুনে পারভীন বেগম যেন হটাৎই উতলা হয়ে উঠলেন,আমার মেয়ে এসেছিল?কিন্তু তুমি আমার মেয়েকে চিনো নাকি?
সুমনা মুচকি হেসে স্যালাইন ঠিক করে দিয়ে বলল,আয়ান স্যার চিনেয়েছে।
-আয়ান চিনিয়েছে?
কথাটা কেমন জানি লাগলো।তার মানে প্রাপ্তির সাথে আয়ানের দেখা হয়েছে?
পারভীন বেগম সুমনাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।প্রাপ্তি তাকে দেখতে এসেছে কথাটা ভেবেই স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো পারভীন বেগম।
প্রাপ্তি রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে আয়ানের রুমে গেল।
আয়ান খাটে বসে পা দুটো মেলে তার উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে।
প্রাপ্তি দারজার সামনে দাঁড়াতেই, ভিতরে আসো।ওই খানে দাঁড়িয়ে আছ কেনো?
প্রাপ্তি আস্তে আস্তে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, তুমি কী করে বুঝলে আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম?
আয়ান মুচকি হাসলো।কিছুক্ষণ চুপ করে ল্যাপটপটা অপ করে দিয়ে পায়ের উপর থেকে সরিয়ে, প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে বসিয়ে,তোমার গায়ের গন্ধটায় আমাকে বুঝিয়ে দেয় তুমি আমার কাছেই আছো।
-তাই বুঝি?
-হু,,,আয়ান কিছু আর মুখ ফু্ঁটে বলল না।প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে,আমার জীবনটা যখন শেষ হয়ে আবার শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এইজীবনে তোমাকে আর পাবো না।ভালোবাসাগুলো বোধহয় এমনি।মন থেকে চাইলে কখনো হারিয়ে যায় না।আমাদের ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতিগুলো এইবার আমি সাজাতে চাই। তোমার মা সুস্থ হয়ে গেলেই আমি প্রস্তাব পাঠাবো বিয়ের।তুমি কী বলো?
-কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে একবার। তাহলে এখন কেনো আবার বিয়ে?
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটিয়ে, তুমি কী আমাকে অনুমতি দিয়েছিলে দূরে থাকার জন্য?
প্রাপ্তি ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
আয়ান প্রাপ্তির হাত টেনে নিজের হাতে শক্ত করে চেপে ধরে, ইসলামে বলা হয়েছে একজন স্বামী তার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া চার থেকে ছয় মাস দূরে থাকা যায়।এর বেশি কিন্তু থাকা যাবে না।স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে দুই তিন বছর থাকলে কোনো সমস্যা নেই।এখন কথা হলো আমি তো তোমার অনুমতি নিয়ে দূরে যাইনি।বলতে গেলে আমি দূরে যাওয়াতে তোমার মনে রাগ,অভিমান,সবই ছিল।কী ছিলো না?
প্রাপ্তি নিরব হয়ে আছে।আয়ানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
আয়ান আবার বলতে লাগলো,তাই আমাদের উচিত বিয়েটা আবার করা।আর পরিবারে কেউ যেহেতু জানে না আমাদের বিয়ের কথা তাহলে সেটা আর না ঘাটাঘাটি করাই ভালো। আমরা পুরোনো সব ভুলে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো।
এখন আর আমাদের কোনো বাঁধা নেই।তুমি, আমি, আরিয়া, মা, আমাদের এই ছোট্ট সংসারে আরেকজন নতুন অতিথি এলেই চলবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে, তুমিও না।আচ্ছা নয়না আপুর হ্যাজবেন্ড তো এলো না।চলো নিচে আসো। আপুকে জিজ্ঞেস করো উনার হ্যাজবেন্ড আসবে না? না আসলে তোমরা খেয়ে নাও।তোমার তো আবার হসপিটালে যেতে হবে।
আয়ান দুষ্টামী করে চিন্তিত মুখে বলল,হুম,,,বউ আমার পুরোই সংসারি।কত যত্ন নিচ্ছে সবার।
প্রাপ্তি আয়ানের কথার তোয়াজ না করে উঠে যেতেই,আয়ান হাত টেনে ধরে আরেকটু বসো না?
দেখি তোমাকে একটু মন ভরে।
নয়না নিচে ড্রইংরুমে আরিয়ার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।এর মাঝে বাহিরে গিয়ে আরিয়ার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে এসেছে সে।
হঠাৎই নয়না আরিয়াকে বলল,আচ্ছা আরিয়া, তোমার বাবার সাথে যে মেয়েটা আছে।কে বলেছে ওই তোমার মা?
আরিয়া গালে আঙুল দিয়ে একটু খানি ভাবনা চিন্তা করে, দাদী বলেছিল।কিন্তু ও তো আমার মা।তাই না?
নয়না অনেক কষ্ট করে হাসি ফুটিয়ে, হুম।
-আচ্ছা যদি এইটা জানো যে আমিই তোমার মা?
আরিয়া খিলখিল করে হেসে, না তুমি আমার মা হতেই পারো না।
-কেনো?
-আমার মা তো বাবাইয়ের রুমে। গিয়ে দেখো বাবাই আর মা,,,
সেই সময়টা আয়ান এসে, আরিয়া আন্টির সাথে কী এমন কথা হচ্ছে? বাবাই আর মা কী করেছে?
-ওইযে সেইদিন ওয়াশরুমে,,,,তুমি মাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে,,কথাটা বলেই আরিয়া খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আয়ান নয়নার দিকে লজ্জিত ভাব নিয়ে তাকিয়ে আরিয়াকে কোলে নিয়ে,ছিঃ মা এইসব বলে না।
চলো খেতে চলো।তোমার মা খেতে ডাকছে।নয়না তোর হ্যাজবেন্ড তো এখনো এলো না।ফোন দিয়ে দেখ কতদূর আসলো।
-আসলে আয়ান,ও আসতে পারবে না।বলল কোনো একটা কাজ পড়ে গেছে।
-ওহ্।
শিরিন নিলিমা বেগমকে নিয়ে আসলেন। সবাই খেতে বসেছে।নয়না খাবার নিয়ে এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে কোনো খাবারই মুখে তোলার মতো না।প্রাপ্তি আরিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। আয়ান কিছুক্ষণ নয়নার দিকে তাকিয়ে তার নাক ছিটকানো দেখে,নয়না প্রাপ্তি খুব ভালো রান্না করে।অবশ্য প্রাপ্তি আগে এইসব কাজ পারতো না।কিন্তু এখন সে পাক্কা রাঁধুনী হয়ে গেছে।
নয়না অনেক কষ্টে মুখে হাসি ফুটিয়ে, মাথা নাড়লো।
দুপুরে আয়ান বলেছিল প্রাপ্তিকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হতে লাগলো এখনো তো নয়নার সাথেই বসে বকবক করছে।আজ হসপিটাল যাবে না, নাকি? কিযে করি? মানুষটাকে বুঝিনা আমি।কখন কি করে তার নাই ঠিক।
আয়ান উঠে এসে, কী হলো কী ভাবছো দাঁড়িয়ে একা একা?
প্রাপ্তি গম্ভীর গলায় বলল,কিছু না।
-আমার কাছে লুকাবে তুমি? সেটা কী পারো?
প্রাপ্তি কিছু বললো না। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান আর কথা বাড়ালো না।আচ্ছা চলো।তুমি না হসপিটাল যাবে?
কিন্তু একটা কথা ওইখানে গিয়ে বেশি ইমোশনাল হয়ে যেও না।তোমার ইমোশনালের সুযোগ নিতে তোমার মায়ের সময় লাগবে না।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে একবার করুণার চোখে তাকিয়ে আর কিছু না বলে নিলিমা বেগমের রুমে চলে গেল।
কয়েকদিন আর সে এই বাড়িতে আসবে না। যতদিন না আয়ান তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে।
প্রাপ্তি আর আয়ান বেরিয়ে গেল,সাথে নয়নাও।
আশেক মাহমুদ নয়না আসতে দেরি দেখে ইয়াসমিন বেগমকে ডেকে বললেন,তোমার মেয়ে তো জনমভর আমার মানইজ্জত কিভাবে নষ্ট করা যায় সেই চিন্তা নিয়েই সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়।দেশে আসলো কয়েকটা দিন হলো না।এখন আবার কোন প্ল্যান নিয়ে ঘুরে বেড়ায়? নয়নার মা, আমি এই শেষ বারের মতো বলে দিলাম কিন্তু।এইবার যদি নতুন করে কোনো অঘটন ঘটায় আমি এর বরদাস্ত করবো না।বার বার আয়ান নামের কেউ ওর বাচ্চার বাবা হতে আসবে না।নিহাত ছেলেটা ভালো ছিল তাই বলে এতো সহজে সব কিছু মেনে নিয়েছে। এখন তোমার মেয়ে দেশে এসে যা শুরু করেছে আমার তো মতিগতি ভালো ঠিকছেনা।
ইয়াসমিন বেগম চুপ করে রান্নাঘর থেকে সব শুনছেন।আশেক মাহমুদ আস্তে কথা বলেন না যা ড্রইংরুম থেকে এইখানে শুনা যাবে না।মেয়েটা যে তার স্বামীকে একেবারে ছেড়ে এসেছে এটাও তো এখন বলা যাবে না।নয়তো আশেক মাহমুদ মেয়েকে এই বাড়ি থেকে এখুনি বের করে দিবেন।কিন্তু কথা তো সত্য! মেয়েটা যে কোথায় গেল সেই সকাল সকাল এখনো বাড়ি ফিরে এলো না।
ইয়াসমিন বেগম ভাবনা শেষ না করতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে আশেক মাহমুদই দরজা খুলে গম্ভীরমুখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন।
নয়না এইসবের কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই আশেক মাহমুদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
আশেক মাহমুদ দরজাটা জোরে শব্দ করে আটকিয়ে সোফায় এসে বসেছেন।একটা মাত্র মেয়ে কিছু বলতেও পারছেনা।যাদের মনে হয় একটাই সন্তান তাদের মনে হয় আমার মতোই বুকে শতকের কাছাকাছি জ্বালা নিয়ে জীবিত অবস্থায়ই বেঁচে আছে।
ইয়াসমিন বেগম রান্নাঘর থেকে হাতে করে চায়ের কাপ নিয়ে এসে আশেক মাহমুদের সামনে ধরলেন।
কিছুক্ষণ ইয়াসমিন বেগমের দিকে তাকিয়ে থেকে,চায়ের কাপটা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল,তুমি আর তোমার মেয়ে খাও।আমার খাওয়া নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।আমি মরে গেলে তো তোমরা মা মেয়ে অনেক খুশি। কারণ কুলখানিতে বড়বড় গরু-মহিষ খাইয়ে নাম করবে।ফুটানি চেটাইবা,তাইনা? আমি বেঁচে থাকতে কোনো দিন তা হতে দিমু না।দরকার প্রয়োজনে সব টাকা এতিমদের দিয়া যামু তবু তোমাদের মা মেয়েকে এক কানাকড়িও দিবো না।
ইয়াসমিন বেগম ঝাঁঝালো গলায় বলল,আমরা কী তোমার টাকা খাওয়ার জন্য বসে আছি? জীবনেও না।
কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন।
আশেক মাহমুদ, বিষন্ন স্বরে বলল, অসহ্য!
পারভীন বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান,প্রাপ্তি,সুমনা,মিনু।
আয়ানের ইশারায় সুমনা আর মিনু বাহিরে চলে গেল।
পারভীন বেগম কিছুক্ষণ করুণার চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে,ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে কাছে যেতে বলল।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে,পারভীন বেগমের কাছে দৌড়ে চলে গেল।পারভীন বেগমের পাশে বসে কান্না করতে লাগলো।মেয়েকে দেখে তিনিও যেন প্রান ফিরে ফেলেন।নিরব কান্নায় নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন তিনি।প্রাপ্তি চোখের পানি মুছে,মা! তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।আমার এইরকম করাটা একদম উচিত হয়নি।
পারভীন বেগম মেয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে,মারে,অন্যায় তো আমি করেছি তোর সাথে তুই কেনো ক্ষমা চাইছিস?
-না মা, তুমি কোনো অন্যায় করোনি।তুমি তোমার জায়গা থেকে ঠিক ছিলে, প্রতিটি মা তার সন্তানের জন্য সর্বচ্ছ দিয়ে চেষ্টা করে তার সন্তান ভালো থাকুক।সারাটা জীবন সুখে-শান্তিতে থাকে এই দোয়াই প্রতিটি বাবা মাই করে।কিন্তু আমরা সন্তানেরা না জেনে বুঝে মা বাবাদের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলি।মা,আমারও সেদিন উচিত ছিল তোমাকে নিয়ে ভাবার।আমি চলে গেলে আমার মা কীভাবে থাকবে? কিন্তু আমি ভাবিনি। আমি শুধু নিজের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়ে ছিলাম।
পারভীন বেগম মেয়ের কথা শুনে আনন্দে মন ভরে গেল।আয়ানের দিকে তাকিয়ে, তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোটো করবো না বাবা।সেইদিন তোমাদের একা ভুল ছিল না।আমারও ভুল ছিল।সেইদিন আমি অর্থ সম্পদের কারণে অন্ধ হয়েছিলাম।বুজতে পারিনি মেয়ের মনের কথা।আজ তুমি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছো এটাতেই আমি অনেক খুশী হয়েছি।
-ছিঃ ছিঃ আপনি এইসব কেনো বলছেন। প্রাপ্তি ঠিক বলেছে অন্যায় আমাদেরও ছিল।আর সেইদিক থেকে আমিই আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সুমনা ফোন দিয়ে রাফিকে আসতে বলেছে।এতো সুন্দর একটা দৃশ্য রাফি না থাকলে হয়? তাই সে আর মিনু আড়ালে থেকে সব কথাই শুনছিল।সেইখান থেকে এসেই রাফিকে ফোন দিয়েছে।
পুরোটা রুম আবার নিস্তব্ধ হয়ে আছে।কিছুটা সময় পরেই রাফি এসেছে।পারভীন বেগম রাফিকে দেখে কিছুটা লজ্জিত চোখে তাকে জিজ্ঞেস করলো,কেমন আছ রাফি?
রাফি মুচকি হাসি দিয়ে,জ্বি চাচী ভালো।
আপনার এখন কী অবস্থা?
আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।আর আয়ান আমাকে যেভাবে ট্রিটমেন্ট করেছে আমি কী ভালো না থাকতে পারি?
-হুম ঠিক বলেছেন।
আয়ান রাফির দিকে ভ্রু নাচিয়ে, নিজের হসপিটালের ডিউটি রেখে এইখানে কী? কে খবর দিয়েছে তোকে?
সুমনা পাশে এসে দাঁড়িয়ে, স্যার আমি।এইরকম একটা সুস্পষ্ট সময় রাফি যদি না থাকে তাহলে কী ভালো দেখায়।কারণ অস্পষ্ট সময় যে থাকে সে যদি সুস্পষ্ট সময়ে না থাকে তাহলে এইটা কী ঠিক কাজ বলে মনে হবে?
আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট, তাই কাজটা তো আমারই করা উচিত তাই না?
আয়ান কোমরে হাত দিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে চলো এইবার। আমার রোগী সব বসে অপেক্ষা করছে নিচে।
আর হে, মিসেস সুমনা এইটা হসপিটাল আর আপনি কিন্তু ডিউটিতে আছেন।তাই রাফিকে রাফি না বলে স্যার বলে ফরমালিটি বজায় রাখুন।কথাটা বলেই দরজার দিকে ফিরে রাফিকে চোখ মেরে চলে গেল। বেচারা সুমনা রাফির দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে, স্যরি স্যার।
কথাটা শুনে রাফি হেসে বলল,তুমিও না!
আয়ান সবগুলো রোগী দেখে শেষ করে বাড়ি ফিরে নিলিমা বেগমের সাথে বিয়ে নিয়ে আলাপ করলো।
তিনিও এক কথায় রাজি হয়ে বললেন,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটাকে ঘরে নিয়ে আয়।আমি চাইনা আমার ছেলের বউ বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গিয়ে থাকুক। পরের বাড়িতে আর কয়দিন থাকবে? তবে আয়ান জানিস,আমার কী ইচ্ছে করে? জানি সেটা পূর্ণ হবার নয় তবুও বলছি।
-মা,তুমি বোকার মতো কথা বলো কেনো? তুমি তোমার ছেলের কাছে কিছু চেয়েছো আর সে সেটা দিবে না তা কখনো হয়েছে? আর আমার মায়ের ইচ্ছা আর সেটা আমি অপূর্ণ করে রাখবো?মা তুমি বলো তোমার ইচ্ছেটা কী? শুধু একবার বলো আয়ান তার প্রান দিয়ে চেষ্টা করবে।
কথাটা শুনে নিলামা বেগম কান্নায় যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠলো।আয়ান পাগলের মতো হয়ে মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, মা তুমি কাঁদছো? মা তুমি বলো না কী ইচ্ছে তোমার।প্লিজ,,, মা! বলো না?
অনেক করুণ স্বরে আয়ান কথাগুলো বলে নিজের চোখের পানিগুলোকে সামলাতে পারলো না।
নিলিমা বেগম চোখমুখ মুছে, এই পাগল ছেলে তুই কেনো কান্না করছিস? তুই তো সবরকম চেষ্টা করেছিস তোর এই মায়ের জন্য।তাই না?
-মা প্লিজ তুমি বলো, কী তোমার ইচ্ছা?
নিলিমা বেগম পাশে ফিরে বলল,প্রাপ্তিকে হেঁটে গিয়ে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসার।আমার মেয়েটাকে আমি নিজে বরণ করে তোর রুমে দিয়ে আসার।
কিন্তু সেইসব তো আর হবে না।আসলে আমিও না! খালি খালি তোকে কষ্ট দিই।
-মা,,,,,
আয়ানের আর কোনো কথা মুখ দিয়ে বের হয়নি। গলাটা ভারি হয়ে গেছে। নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।মায়ের কোলে মাথা রেখে সারাটা রাত কাটিয়ে দিলো।নিলিমা বেগম বার বার বলেছে, কথাটা বলে আয়ানকে সে কষ্ট না দিলেও পারতো।কিন্তু ছেলেটার জেদের কাছে হার মেনে হয়তো বলেছে।নিলিমা বেগম এমন কিছু বললেই আয়ান ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তার ধারণা মেডিকেল সাইন্স সব তার জীবনে বৃথা।যে নিজের মাকেই ভালো করতে পারেনা সে আবার কিসের ডাক্তার? যে নিজের মায়ের পা দুটো ভালো করতে পারেনা সে কীভাবে এতো বড় বিখ্যাত ডাক্তার হলো? তার এইসব বোকা বোকা প্রশ্নতে সে প্রায়ই সমকক্ষহীন হয়।সে ভালো করেই জানে তার মা আর ভালো হবে না।আগের মতো সুস্থ হবে না।কিন্তু তবুও তার মনে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে।
.
.
.
চলবে.....................................