___রাফিকে থামিয়ে আয়ান বলল, প্রাপ্তিকে ডাকুন।আমি শুধু ওকে একটা কথা জিজ্ঞেস করে এইখান থেকে চলে যাব।আর কোনোদিন আসবো না কোনো অধিকার নিয়ে।
পারভীন বেগম বললেন,ও এইখানে আসবে না।তোমার মতো ছোটো লোকের বাচ্চার সাথে সে দেখা করবে না। ও নিজেই আমাকে বলেছে।আমি আজ ভালো ভালোই বলে দিচ্ছি।আর কখনো ওর সাথে যোগাযোগ করবে না।
রাফি ঝাঁঝালো গলায় বলল,যোগাযোগ করবে না মানে? তারা দুজন দুনকে ভালোবাসে,এবং কি তারা বি,,,,আয়ান রাফিকে থামিয়ে দিলো।
পারভীন বেগম রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,তোমার সাথে আমি কথা বলছি না।তোমার বাবাকে বলে তোমার ব্যবস্থা করব।তারপর আয়ানের দিকে ফিরে,আমার মেয়ের বিয়ে সামনের মাসেই। আমি চাই না তোমাদের জন্য আমার মেয়ের বিয়েতে কোনো ঝামেলা হোক।
-বিয়ে মানে? কার হুকুমে আপনি ওকে বিয়ে দিচ্ছেন?
-তোমার কাছে আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্যগত নয়।আমার মেয়ের যেখানে রাজি হয়েছে সেখানে আমি বাহিরের মানুষের কথা শুনতে রাজি না।
-প্রাপ্তি রাজি?
আয়ান বেশ অবাক হয়েই কথাটা জিজ্ঞেস করলো।কীভাবে করতে পারলে প্রাপ্তি তুমি আমার সাথে এইটা? আয়ানের চোখ জোড়া প্রাপ্তিকে খুঁজতে খুবি ব্যস্ত।
পারভীন বেগম এইবার গম্ভীর হয়ে বললেন,আশা করি আমার কথাগুলো তোমার মাথায় ঢুকেছে।এখন আসতে পারো।আয়ান আর কিছুই বলল না।এই মহিলাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হবে না।কিন্তু আমি যে প্রাপ্তির সাথে দেখা করতে চাই?
প্রাপ্তি সেখান থেকে সরে গেল।আয়ান এইদিক সেদিক তাকিয়ে প্রাপ্তিকে খুঁজছে। প্রাপ্তি দরজার পিছনে লুকিয়ে দেখছে।আয়ান তো চলে যাচ্ছেনা যাওয়ার সময় যে আত্মাকেও নিয়ে যাচ্ছে।বাহিরের বৃষ্টিতে আয়ান ভিজে ভিজে ধীরে ধীরে হাঁটছে আর পিছনে ফিরে বার বার তাকাচ্ছে।প্রাপ্তি দৌড়ে বারান্দায় চলে গেল।এটাই কী আয়ানের সাথে আমার শেষ দেখা? আয়ানও একি কথা ভাবছে।প্রাপ্তি তোমাকে কী আমার আর দেখা হলো না? আয়ান হাঁটতে পারছেনা।পুরোটা শরীর যেন থরথর করে কাঁপছে।রাফি কোনোরকম আয়ানকে বাড়িতে নিয়ে গেল।আয়ানের প্রচন্ড জ্বর।জ্বরের ঘরে আবল তাবল বকে যাচ্ছে, বেশির ভাগ এক কথায় বার বার বলছে,প্রাপ্তি আমাকে ছেড়ে যেও না।প্রাপ্তি তুমি ছাড়া আমার পুরোটা জীবন অন্ধকার।
রাফির মা আর রাফি সারাটা রাত আয়ানের পাশেই বসেছিল।
এইদিকে প্রাপ্তির এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি।শরীরও জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।ডাক্তার এসে দেখে হসপিটাল নিয়ে যেতে বলেছে।কিন্তু পারভীন বেগম বললেন,বাঁচলে বাড়িতে মরলেও বাড়িতে।কাজের মেয়ে শিখা বসে আছে প্রাপ্তির পাশে।
রাফির মা আয়ানকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে রাফিকে বলল,কাল ওর মাকে খবর দিয়ে আসতে বলবি।ছেলেটার কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না।মেয়েটাকে কতোটা ভালোবাসলে একটা ছেলে এতোটাই উন্মাদ হতে পারে।
পরের দিন দুপুরের আগেই আয়ানের মা এলো।আয়ানের গায়ে জ্বর রাতের থেকে একটু কমেছে।আয়ানের মা সব শুনে নিজেই রাফির মাকে নিয়ে পারভীন বেগমের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলেন।পথের মধ্যেই দেখা হয়ে গেল তাদের।পারভীন বেগম মেয়েকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছেন।রাফির মা'ই গাড়ি দেখে চিনতে পেরে দাঁড় করালেন।
নিলিমা বেগম সালাম দিয়ে,আমি আয়ানের মা।আপনি যদি আমাকে একটু সময় দিন খুবি উপকৃত হতো।
পারভীন বেগম হাত উঠিয়ে নিলিমা বেগমকে চুপ করতে বললেন।তারপর বললেন,আপনি একজন মা।মা হয়ে লজ্জা করে না ছেলের হয়ে উকালতি করতে আসছেন? একটা কথা আপনাকে বলে রাখি আমি মেয়েকে কেঁটে টুকরো করে কুকুর বিড়ালকে খাওয়াবো।তবুও আপনাদের মতো ছোটো লোকের বাচ্চার কাছে দিবো না।আয়ানের মা হাত জোড় করে কিছু বলতে যাবে তখন পারভীন বেগম ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই তিনি পড়ে যান।পারভীন বেগম চলে গেলেন।কিন্তু পিছনে ফিরে একবার তাকালেন না।
আয়ানের মা ধাক্কাটা ঠিক সামলাতে পারলেন না।রাস্তা মাঝে পড়ে যেতেই হঠাৎই একটা ট্রাক এসে দুটো পাই পিষে দিয়ে গেল।
ছয় মাস পর,,,
হঠাৎই আয়ানের ফোন।ক্লাসে ছিল বলে রিসিভ করতে পারিনি সে।ক্লাস শেষ করে আয়ানই ফোন দিলো।ওপর পাশের নিরবতা দেখে আয়ানের বুঝতে বাকী নেই প্রাপ্তিই।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দটা আরও গাঢ় হতে লাগলো।
আয়ান নিরবতা ভেঙে বলল,কেমন আছো?
-কী করে বুজলে আমি?
আয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে, জানি না।ভালো আছো?
-হুম অনেক ভালো।
-তোমার হ্যাজবেন্ড কী তোমায় আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে?
প্রাপ্তি কাঁদার শব্দ আরও বেড়ে গিয়ে,অনেক অনেক।
-হুম।
তোমার মা সেইদিন আমার জীবনকে এইভাবে শেষ না করলেও পারতো।তোমার মায়ের ক্ষতি তো আমি করেছিলাম, তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে।কিন্তু আমার মা! আমার মা তো কিছু করেনি।তাহলে কোন পাপের শাস্তি আমার মাকে দিয়েছে তোমার মা?
-কী হয়েছে? এইভাবে বলছো কেনো?
আয়ান তখন সব বলতেই প্রাপ্তি ফোন কেটে দিলো।কোন মুখ নিয়ে কথা বলবে সে?
প্রাপ্তি নিজে কান্না করছে যে কান্নার কোনো রঙ নেই,আঁকার নেই।কাউকে বলার মতো ভাষাও নেই।
সেইদিনই পারভীন বেগমের সাথে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে তার গরিব বাবার কাছে।
বাবার কাছে দুই বছর না কাটাতেই বাবাও তাকে রেখে চলে গেলেন না ফিরার দেশে। তারপর রুবিনা বেগমই তাকে নিয়ে যান নিজের কাছে।
ছেলেমেয়েদের মতোই ভালোবাসে তাকে।
পরিবেশটা যেন থমকে আছে।সকালের সূর্যের আলোটা বেশ চকচকে করছে চারদিক।লাল হলুদ আভা হসপিটালের জানালা দিয়ে দেওয়ালে লেপ্টে আছে। প্রাপ্তির সাথে এই সকালটা দেখবে আয়ান কখনোই ভাবেনি।সুমনা সব শুনে চুপচাপ হয়ে আছে।আয়ান প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে,স্যরি।
প্রাপ্তি আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে, কেনো?
এতোকিছুর জন্য।আমি তোমার কোনো খবর নিইনি তাই।তুমি আমার জন্য এতোকষ্ট সহ্য করেছো আর আমি ভেবেছিলাম তুমি সুখে সংসার করছো।
প্লিজ প্রাপ্তি আমাকে ক্ষমা করে দাও
-ডাক্তার সাহেব এইটা হসপিটাল। আপনার রোগীরা এইসব দেখলে কী ভাববে বলুন তো?
প্রাপ্তির কথা শুনে,আয়ান রাফি সবাই হেসে দিয়ে,
সুমনা তুমি রাফির সাথে বাসায় যাও।আমি প্রাপ্তির মাকে একবার দেখে বাসায় চলে যাচ্ছি।
-স্যার ওনি তো এখন আপনাকে দেখে চিনে যাবে।
আয়ান সুমনাকে বলল,ভুল ভাবছো সুমনা।সেইদিনের আয়ান আজকের আয়ান অনেক চেইঞ্জ।
কথাটা বলে আয়ান পারভীন বেগমের কেবিনে গিয়ে,রুবিনা বেগমকে দেখে,মুচকি হাসলেন।
রুবিনা বেগম আয়ানকে দেখে,আপনি অপারেশন করিয়েছেন?
আয়ান ফাইলগুলো দেখে,মিনু আমি বাসায় যাচ্ছি।তুমি তো আছোই।
আয়ান চলে যেতেই রুবিনা বেগমের উত্তরটা মিনু দিয়ে দিলো।পারভীন বেগমের ঘুম ভেঙেছে।সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে।রুবিনাকে বললেন,ডাক্তার এসেছিল নাকি রুবিনা?
-হুম আপা,এখুনি তো গেল।
-উনার সাথে আমার এখানো দেখা হয়নি।কিন্তু শুনেছি আমার নাকি খেয়াল রাখার জন্য নিজেই এই সিস্টারকে রেখেছেন।এইরকম ডাক্তার প্রথম দেখলাম।রোগীদের সেবা এতো মনপ্রাণ দিয়ে করে যায়।
আয়ান বাড়ি যাওয়ার সময় প্রাপ্তিকে যেতে বলল কিন্তু সে গেল না।রুবিনা বেগমের সাথেই বাড়ি গেলেন। আরিয়া আয়ানকে দেখেই,বাবাই' তুমি মাকে নিয়ে চলে গেলে আর এখন ফিরে এলে।তুমি এখন আর আমাকে ভালোবাসো না বাবা?
আয়ান আরিয়াকে কোলে নিয়ে,ছিঃ মা এইসব বলে না
ঠিক আছে আজ যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যাব হসপিটাল। অনেক ঘুরেফিরে বাহিরে খেয়ে তারপর বাসায় আসবো কেমন?
কথাটা শুনেই আরিয়া খুশী হয়ে, কথাটা তাহলে দাদীকে জানিয়ে আসি?
-হুম যাও।বাবা ফ্রেশ হয়ে আসি।আর শিরিনকে বলো তোমাকেও রেডি করিয়ে দিতে।
.
.
.
চলবে....................................