ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৩৭ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"আমি নিশিকে বিয়ে করতে পারবো না।রায়হানের মুখে এধরনের কথা শুনে সবাই কিছুটা অবাক হলো।
রায়হান নিশিকে ভালোবাসে সবাই জানে।আর নিশি তো আগে থেকেই রায়হানকে খুব করে চায়।
আর ওদের দুজনের এক হওয়ার পথে যে বাধাটা ছিলো তাও তো এখন আর নেই।তাহলে!"

---রুহির আসল চেহারাটা সবার সামনে এসে পড়েছে।তাই রুহিও বাধ্য হলো রায়হান কে ছাড়তে।বলাচলে জিসান বাধ্য করছে রায়হান কে ছাড়তে।

"-সমস্যা কি রায়হান, কেনো নিশিকে বিয়ে করতে চাইছিস না।তুইতো নিশিকে ভালোবাসিস বাবা।
তাহলে!
আমি তোর চোখে নিশির জন্য ভালোবাসা আর ওকে হারানোর কষ্ট দেখেছি এ কয়েকদিন।
তাহলে এখন আবার কি হলো।"

---নিশি দাঁড়িয়ে রায়হানের কথাগুলো শুনছিলো।একটু আগে রায়হানের সাথে রুহির সব সম্পর্ক শেষ হবার কারণে যে খুশিটা মনে উৎপন্ন হয়েছিলো।সে খুশিটা নিমিষে আবার শেষ হয়ে গেলো।
নিশি স্থির দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।

              "রায়হান নিশির দিকে একবার তাকিয়ে জিসানের সামনে এসে দাঁড়ালো। আম সরি ইয়ার।
আমি জানি তুই আমার উপর রাগ করবি।কিন্তু আমি খুব ভেবেই বলছি।
আসলে ভুলটা আমার।নিজের ছোট বোনের ঘরে নযর দেওয়াটা ঠিক হয়নি।আজ আমার কারণেই বিয়ের পর পরই তিশার লাইফে এতো প্রোবলেম শুরু হয়েছে।
আমার আর নিশির সম্পর্ক আমার বোনের জীবনে এফেক্ট করছে।আর আমি চাই না এমন ভবিষ্যৎ এ আবার হোক।"

--- রায়হান এমন কিছুই হবে না,তুই কি আমার উপর ভরসা করিস না।জিসান রায়হান কে আশ্বাস দেওয়ার চেস্টা করছে।

"জিসান আমি জানি তুই তিশার হাত কখনোই ছাড়বি না।কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না,আমার আর নিশির বিয়ের পর যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে বা ঝগড়া হয় বা কোনও কারণে নিশি আমার উপর আপসেট হয় তাহলে ভাই হয়ে তোরও এসব ভালো লাগবে না।
আর না চাওয়া সত্যে তিশার সাথে তোরও একটা মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে।আর তখন না তুই সইতে পাড়বি না তিশা।
আর তখন তিশার উপর একটা অভিমান জমা হবে পরিবারের সবার মনে।সম্পর্কের মধ্যেও ফাটল ধরবে।একটি সম্পর্কের জন্য আমি আমার বাকি সম্পর্ক গুলোকে নষ্ট হতে দিতে পাড়বো না।"

---ভাইয়া এসব কি বলছো।এমন কোনও কিছু হবে না।তুমি শুধু শুধু অহেতুক টেনশন করছো।
(তিশা)

"রায়হান তিসার গালে হাতটা রেখে,আমার রাগটা যে এ কয়েকদিন নিশি তোর উপর ঝাড়তো এটা কিন্তু আমার অজানা নয় বোন।
আর এটা যে ভবিষ্যৎও হবে না,তারও কোনও গ্যারান্টি নেই।তাই আমি চাই না আমার লাইফের কোনও ঝড় এসে তোকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেখ।"

---ভাইয়া প্লিজ।......... (তিশা)

"-রায়হান আর কিছুই বললো না,বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রায়হান। ও যানে এর জন্য আবার নিশি কষ্ট পাবে।কিন্তু রায়হান এবারও নিরুপায়।
আগে ও একজন ভাই পরে কারো প্রমিক।তাই নিশির কথা চিন্তা করার আগে তিশার কথা আগে ভাবতে হবে ওকে।"

               ---- নিশি বুঝতে পারলো রায়হানের এমন করার কারন কি।সেদিন পার্টি শেষ হয়ে বাসায় আসার সময় নিশি তিশার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে।ওটাই হয়তো রায়হান দেখে ফেলেছে।

'সত্যি তো আমি বিনা কারণে রায়হান ভাইয়ের সব রাগ তিশার উপর ঝেড়েছি এ কয়েকদিনে।কেনো জানি এই ঘটনার পর তিশাকে সহ্য করতে পারতাম না।রায়হান ভাইয়ের সব রাগ আমার,তিশাকে দেখলে আরো বেড়ে যেতো।
আমি এতোটা নিচ কি করে হলাম।রায়হান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক হবার আগে, আমার তিশার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো।ও তো আমার বেস্টি ছিলো।আর আমি ওকেই ভুল বুঝলাম।সত্যি আমি রায়হান ভাইয়ের যোগ্য না।উনি একদম ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।নিশিও মনে মনে এসব আওড়াতে লাগলো।

ফ্লাশব্যাক___

                  "রুহি সংসারের অভাব দেখে অনেকটা হাফিয়ে পড়েছে।কথায় বলে না,স্ত্রীর আসল ভালোবাসার প্রকাশ পায় স্বামীর অভাবের দিনে।রুহির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

'গতো পনেরও দিন সংসারের কাজ একহাতে করতে করতে এমনেই ক্লান্ত, তার উপর খাবারের কস্ট।এসব কিছুতে রুহি অনেকটা ফ্রাস্টেড হয়ে পরেছে।"

---রুহি ওর পরিবারের সবার ছোট ছিলো বলে,পরিবারের সবার আদর ভালোবাসায় বড় হয়েছে।শখের বসে রান্নাটা মাঝে মধ্যে করতো কিন্তু বাড়ীর এতো কাজ কল্পনায়ও কখনো করেনি।যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।কষ্ট কি তা জানতোই না।

                   ' রায়হানের সংসারে হঠাৎ আসা এই অভাব রুহি হজম করতে পারছে না।সবই তো ঠিক ছিলো।বিয়ের আগে রেনু বেগমের কাছে জানতে পেরেছিলো রায়হান নিজেদের জন্য গাড়ী কিনারও প্লানিং করছে।তার মানে রায়হান ভালোই স্যাটেল করে ফেলেছে নিজেকে।রায়হান কে বিয়ে করলে আমার লাইফও স্যাটেল হয়ে যাবে এ আশা ছিলো রুহির।'

---কিন্তু রায়হানের সাথে বিয়ে হবার পর রুহির কপালে শুধু নিরাশাই ঝুটেছে।প্রথমত রায়হানকে পেয়েও পেলো না।তার উপর রায়হানের অবহেলা।সাথে ঝুটেছে সংসারের অভাব।

"-রুহির শ্বাশুরীও শরীর অসুস্থ বলে সারা দিন শুয়ে বসে থাকে।রুহির এখন মনে হচ্ছে এই অভাবী সংসারে এই বাড়ীর মানুষ বিনা বেতনে একটা ঝি পেয়েছে।
এসব কি কম ছিলো।যখন শুনলো রায়হান নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার সব ছেড়ে ওরা গ্রামের বাড়ী চলে যাবে।এটা শুনার পরই রুহি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।রুম বন্ধ করে ঘরে বসে আছে আজ দুদিন।"

             --- এতে রায়হান বা ওর পরিবারের কোনও মাথা ব্যাথা নেই।তবে হঠাৎ নিজ বাসায় রুহির বাবা মাকে দেখে রায়হান একটু অবাক হলো আজ।

"রুহির বাবা মা রায়হান আর ওর মার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো তাদের আসার কথা রুহি নিশ্চয়ই বলেনি।
রুহির বাবা মা ড্রয়িংরুমে বসার কিছুক্ষণ পরই রুহিও বের হয়ে আসলো রুম থেকে।ওকে একদম স্বাভাবিক লাগছে,ওকে দেখলে কেউ বুঝাবেই না এই মেয়ে দুদিন না খেয়ে ছিলো।"
 
---রুহির বাবা মা আসার কিছুক্ষণ পরই রুহি রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বললো, রায়হান তুমি তোমার বাবা মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেও।আর তুমি আর আমি এখন থেকে আমার আব্বু আম্মুর সাথে আমাদের বাসায় থাকবো।ওখানে তোমার কোনও অসুবিধে হবে না।

"রুহির কথায় রায়হান রেগে যায়, আর ইউ মেড!
তুমি ভাবলে কি করে আমি আমার বাবা মাকে ছেড়ে তোমার সাথে তোমাদের বাড়ীতে ঘর জামাই হয়ে থাকবো।আর আংকেল আপনেরাও কি এসব বলতে এসেছেন এখানে।"

-রুহির বাবা রায়হানের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলো।আসলে তাদেরও কিছুই করার নেই, রুহি নিজের বাবা মাকেও ব্লাকম্যাল করে এখানে আসতে বাধ্য করেছে।তারা এসে রুহি আর রায়হানকে তাদের সাথে নিয়ে না গেলে আত্মহত্যা করবে রুহি।নিজের মেয়ের জিদের কাছে এবারও নতো হতে হলো তাদের।

                     ---রায়হান আমি তোমার মর্জি জানতে চাইনি,আমি আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে,সেটাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।আর এটাই ফাইনাল।
আমার কথা না মানলে জানোই তো কি হবে।রুহি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে।

"রায়হান রাগে স্থির দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। এটাতো হবারি ছিলো।রুহি কেমন মেয়ে রায়হান খুব ভালো করেই জানে। এই মেয়ে কোনও দিনও ভালো হবে না।আসলে ও একটা সাইকো।"

           --- হঠাৎ কারো ভারী কন্ঠে সবার দৃষ্টি তার দিকে।দরজায় দাঁড়িয়ে আছে জিসান।আর জিসানের ঠিক পিছনেই তিশা, নিশি আর জিসানের বাবা মাও দাঁড়িয়ে আছে।

"এই সময় মেয়ের শ্বাশুর বাড়ীর সবাইকে একসাথে দেখে তিশার মা একটু আবাক হলো।"

--বললে না রুহি, তোমার কথা না মানলে কি হবে।
জিসান রুহিকে প্রশ্ন করেই রুমের ভেতরে ডুকে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে রুহির বরাবর বসলো।

               ---রুহি জিসানের কথার জবাব না দিয়ে উল্টো রেগে গেলো,নিশিকে দেখে।এই মেয়ে এখানে কি করে রায়হান। তোমার সাহস কি করে হলো,ওকে এই বাসায় আনার।

"রায়হান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিশা জবাব দিলো,ও আমার ননদ আপু।আর এটা আমারও বাড়ী।আমার শ্বাশুর বাড়ীর মানুষের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলো।"

             --- রুহি আর রায়হানকে নিশির এখন একদমই সহ্য হয় না।তার উপর রুহির এমন আচরণে,নিশি পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
ভাইয়া তুমি আমাকে এখানে কেনো এনেছো।আমার এদের নাটক দেখার একদম ইচ্ছে নেই।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

"স্টোপ নিশি!যেখানে আছিস,চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাক।আর একটা কথাও বলবি না।
জিসানের ধমকে নিশিও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।"

"রায়হান তিশার শ্বাশুর-শ্বাশুরী কে বসতে নিমন্ত্রণ করলো।
তৌফিক সাহেবও তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বসলো,এটা জানতে কেনো জিসান তাদের এই বাড়ীতে এনেছে।"

---জিসান আবারও রুহিকে একই কথা জিঙ্গেস করল।

"রুহি এবার আরো রেগে গেলো।কি করবো,সেটা তোমাকে কেনো বলবো জিসান।তোমার গুন্ডামি অন্য কোথাও দেখাও।আমি তিশা না যে তোমার গন্ডামিকে ভয় পাবো।"

           --- আমার তিশার মতো হওয়ার যোগ্যতাও নেই রুহি তোমার।আরেকটা কথা রায়হান কোথাও যাবে না,তোমার সাথে তো আরো আগে না।সবাই এই বাড়ীতেই থাকবে,তবে তুমি থাকবে না।তোমার বিদায়ের ঘন্টা বেজে গিয়েছে।এখন তুমি বিদায় হও।

"কি যা তা বলছো জিসান।আমার মনে হয় বোনের শোকে তুমিও কিছুটা পাগল হয়ে গিয়েছো।
রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিটমিট করে, তুমি কিছু বলছো না কেনো রায়হান।আমার রাগ উঠলে পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।"

---তুমি আর কিছুই করতে পারবে না রুহি।
যে বীণ বাজিয়ে রায়হানকে তুমি তোমার ইশারায় নাচাতে সেই বীণ টা এখন আর নেই।বিশ্বাস না হলে চেক করে দেখো।

                   " জিসানের কথায় রুহির সন্দেহ হলো,তাই সাথে সাথে নিজের মোবাইলটা চেক করলো।আর চেক করতে গিয়ে রুহির মাথায় যেনো বাজ পড়লো।ভিডিওটা নেই।রুহি পুরো মোবাইল হন্ন হয়ে খুঁজলো কিন্তু কোনও ভিডিও পেলো না।এটা কি করে সম্ভব। আমার মোবাইলের পাসওয়ার্ড কেউ জানে না।আর বিনা পাসওয়ার্ড ছাড়া ফাইল থেকে ভিডিও ডিলেট করাও সম্ভব না।তাহলে!
রুহির রাগে মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে মন চাইছে।নিশ্চয়ই এটা জিসানের কাজ।কিছুতো একটা করছে এই গুন্ডাটা।"

---কি হলো রুহি,ভিডিওটা নেই।রায়হান সোফায় আরামে বসেই রুহিকে জিঙ্গেস করলো।

'আর রুহিতো রাগে একবার জিসানের দিকে একবার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে।পারে না দুজনকেই গিলে খেয়ে ফেলুক।'

---রায়হান, জিসান আর রুহির মধ্যে কি নিয়ে কথা হচ্ছে তা ড্রয়িংরুম এ বসা কেউও বুঝতে পাড়ছে না।তাই তৌফিক সাহেব নিজের উৎসুকতা ধরে রাখতে পারলো না।জিঙ্গেস করেই ফেললো কি চলছে এসব।

                         " এতেদিন পর রায়হান মুখ খুললো।আংকেল আমি বলছি।আসলে রুহি আমাকে একটা ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকম্যাল করেছে ওকে বিয়ে করতে।"

----এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই সহ রুহির বাবা মাও শোকড হলো।
রুহির বাবা-এসব কি বলছো রায়হান।আমরা তো জানি তোমরা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করছো।তাহলে!

"সরি আংকেল আমি আপনার মেয়েকে কোনও দিনও ভালোবাসিনি।আর বাসবো ও না।একটা মেয়ে হয়ে যে অন্য মেয়েকে সম্মান করেনা।সে আমার কেনো কারও ভালোবাসারি যোগ্য না।"

               -মানে!মানে কি?আর কার ভিডিও দেখিয়ে তোমাকে ব্লাকম্যাল করেছে ভাইয়া।(তিশা)

---তিশার এমন কথায় রায়হান নিশ্চুপ হয়ে গেলো।নিজের বোনের কাছে বলতেও একথা লজ্জা করছে রায়হানের।

"জিসান তিশার এককাধে হাত রেখে,তোর ভিডিও তিশা।

-আ আআমার ভিডিও।মানে বুঝলাম না।(তিশা)

                 ---জিসানও কিছুক্ষণ চুপ থেকে,বলা শুরু করলো।বিয়ের আগে এই বাড়ীতে যখন তুই ছিলি।হয়তো কোন একদিন রুহিকে রুমে রেখে তুই ওয়াসরুমে শাওয়ার করতে গিয়েছিলি।আর রুহি তখন ওর মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তা ভিডিও করে ফেলে।যাতে সুযোগ বুঝে রায়হানকে ওটা দিয়ে ব্লাকম্যাল করতে পারে।

"তিশা এ কথা শুনার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা।প্রচণ্ড ভেঙ্গে পরে,একটা মেয়ে এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে।তিশা বুঝতে পারে না।এটা যদি দূর্ঘটনা বসতো ভাইরাল হয়ে যেতো।বা অন্য কারো কাছে ভিডিওটা চলে যেতো।তখন কি হতো।ভাবতেই তিশা কেঁপে উঠলো।

অতিরিক্ত টেনশনে তিশা মাথা ঘুড়ে পরে যেতে নিলে জিসানের আগেই নিশি ধরে ফেলে।তিশার প্রতি সব রাগ যেনো নিমিষেই দূর হয়ে যায় এসব জানার পর নিশির।"

           --- কারো কিছু বলার আগেই তিশার মা রেনু, রুহির গালে ঠাস করে কয়েকটা চড় মারে।উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হলেও কেউ কিছু বলেনা।এটা হবারি কথা!
একজন মা নিজের মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলতে আসা মানুষটিকে সামনে পেলে উত্তেজিত হওয়াটা স্বাভাবিক।শামসুর রহমান নিজের স্ত্রী কে শান্ত করার চেস্টা করে।

-রুহির বাবা মা লজ্জায় মাথা নত করে বসে আছে।মেয়ে জেদি তা জানতো।কিন্তু মেয়ে যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবে নি তারা।

             "রুহি এখনো অনুতপ্ত নয় তার কর্মের জন্য,তাই সবার উদ্দেশ্যে বলে,আমি রায়হান কে পাওয়ার জন্য আর ওর বউ হবার জন্য এতোটা নিচে নেমেছি।আর আমি আমার উদ্দেশ্যে সফলও হয়েছি।তাই এখন এই ভিডিও থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না।রায়হান আমার শুধু আমার এখন।পাগলের মতো চিল্লিয়ে।"

---রুহি তোমাকে একটা যাদু দেখাই,দেখবে।জিসান বলছে রুহিকে।

"রুহি নিশ্চুপ।"

'হঠাৎ দুজন ছেলে আর টুপি পড়া দাড়িমোচে ভরপুর হুজুর টাইপ একজন ভদ্রলোক প্রবেশ করলো তিশাদের ড্রয়িংরুমে।'

---রুহি এদের দেখেই চিনে ফেলেছে।কারন এই টুপি পড়া লোকটাই রুহি আর রায়হানের বিয়ে পড়িয়েছে।আর তার পাশের দুটো ছেলে সাক্ষী হিসেবে সই দিয়েছিলো।এই দুজন রায়হানের বন্ধু।কিন্তু এরা এখানে কি করে,তা বুঝতে পারছে না।

-পরক্ষনে রুহির চোখগুলো মনে হয় এখনি বেড়িয়ে পড়বে,এটা দেখে।

-টুপি পরা ভদ্রলোকটি তার টুপি,নকল দাড়ি, মোচ খুলে সম্পূর্ণ গেটআপ চেন্জ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হান মুচকি মুচকি হাসছে।

                      "রুহির তাকানো দেখে,রায়হান নিজেই বলে উঠে,কি হলো রুহি।শোকড! 
তুমি ভাবলে কি করে তোমার মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।তুমি যখন বার বার বিয়ের জন্য ব্লাকম্যাল করা শুরু করলে তখন আমি সত্যিই খুব ভেজালের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।কিভাবে তোমার থেকে ভিডিও গুলো নিয়ে ডিলেট করবো। 
আর ভিডিওটা কি শুধু তোমার মোবাইলে আছে,নাকি অন্য কোথাও এর কপি রেখেছো সব না যেনে উত্তেজিত হয়ে কিছুই করা যাবে না।খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।তবে এর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন এতোটুকু বুঝতে পেরেছি ।"

-আর তোমাকে চোখে চোখে রাখারও।
তুমি যতোই কাছে থাকবে,ভিডিওটা ডিলেট করতে ওতোই ইজি হবে আমার।যেহেতু জিসান তখন বিডিতে ছিলো না,তাই সব আমাকেই করতে হয়।আমি আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডসদের সাথে মিলে তোমার বিয়ে করার ইচ্ছাটা পূরন করি।তবে আমরা নাটক ভেবে,আর তুমি সত্য ভেবে বিয়েটা করে ফেলো।"

---তিশার কথা চিন্তা করে আমি জিসানকেও এই ভেজালে ঝরাতে চাইনি।মাত্রই তো কয়দিন হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।আর বিয়ের পরেই এতো ভেজালে ঘিরে গেলো ওদের জীবন।
কিন্তু জিসান থেকে বেশিদিন লুকাতেও পারলাম না।কিছুুদিন আগে জিসান সব শুনে প্রচণ্ড রেগে যায়।ভাগ্য ভালো রুহি তোমার, জিসানের সামনে ছিলে না,তা না হলে ও তোমাকে সেদিনই মাটিতে পুতে ফেলতো।

'এরপর আমাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি,জাস্ট শুধু তোমার সাথে চাকরী যাওয়া,সংসারের অভাব নিয়ে নাটক করা ছাড়া।আমি তোমাকে এসবে ব্যস্ত রেখেছি,আর জিসান তার কাজ চালিয়ে গিয়েছে।
সবার প্রথমে আমরা জানতে পারি ভিডিওর কোনও এক্সট্রা কপি তুমি করোনি।
তোমার মাথায় হয়তো প্রশ্ন ঘুড়ছে কিভাবে?

---তাহলে শুনো,সেদিন যখন তুমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড টায়রার সাথে রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে গিয়েছিলে।তোমার ঠিক পিছনের টেবিলে আমাদের লোক ছিলো,যার কাজই ছিলো তোমাকে ফোলও করা।আর তোমাদের মাঝে কি নিয়ে কথাবর্তা হয় সব রেকর্ড করা।

আমরা সেদিনই সব জানতে পারি। তার মানে আমাদের টার্গেট এখন তোমার হাতের মোবাইল।আমরা খুব সাবধানে তোমার মোবাইল এক্সচেঞ্জ করে ফেলি আমাদের মোবাইলের সাথে।আর জিসানের পারসোনাল হেকার্স তোমার মোবাইলের সব সিস্টেম হ্যাক করে ডিলেট করে দেয় আমাদের সামনে, সাথে ভিডিওটাও।

তার মানে হলো রুহি, আমাদের বিয়ে হয়নি,আর 
এখন তোমার কাছে এমন কিছুই নেই যা দ্বারা আমার উপর হুকুম চালাবে।কি?বুঝলে কিছু।

            "রুহি তেড়ে গিয়ে রায়হানের কলার ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে,তুমি এটা করতে পারো না রায়হান।এতো বড় ধোঁকা কিভাবে দিলে।"

---রায়হান রুহির হাতটা নিজের কলার থেকে ছাড়িয়ে।তুমি যা করেছো,আমিও তা তোমাকে ফিরত দিয়েছি।আর কিছুই না।সো গ্যাম ইজ ওভার।
তোমার কাছে এখন দুটো রাস্তা আছে।নিজ ইচ্ছায় চলে যাও,না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।তোমার বাবা মার কথা চিন্তা করে তোমাকে এখনো আমি পুলিশে দিই নাই।

"এর পর রুহিকে এক প্রকার জোড় করেই ওর বাবা মা না চাওয়া সত্যেও নিজের সাথে নিয়ে যায়।"

---দুপরিবার যেনো এখন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এতো দিন সবার মনেই কিছু চাপা কষ্ট ছিলো,যা কেউ কাউকে বলতে পারেনি।সবাই খুশি অবশেষে এটা যেনে।রায়হান রুহিকে বিয়ে করেনি।তার মানে এখন নিশি আর রায়হানের বিয়ে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।

কিন্তু তখনি রায়হান বিয়ের জন্য না বলে চলে যায়।
.
.
.
চলবে.................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp