অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম
তোমার মন।
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে আমার আপনজন
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
ড্রয়িংরুম এর বিশাল বড় এলসিডি টিভিতে গানটি বাজছে।তাও আবার জিসানের নিজের কন্ঠে।আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তিশা ও জিসানের পুরো পরিবার।সাথে আছে ডক্তর নিড়ব।কারো অপেক্ষা করছে ওরা।সবার দৃষ্টি সিঁড়ির দিকে।
-"টিভির ভলিউম টা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হলো।যাতে করে উপরের রুমের দরজা ভেদ করে শব্দটি সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির কানে গিয়ে পৌছায়।"
কিছুক্ষণ পর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি সিঁড়ি ধরে নিচে নামছে।
---সবার মুখে এক অদ্ভুত আনন্দের সাথে কষ্টও ভেসে উঠছে।
ব্যক্তিটির পড়নে এখনো চারদিন আগের পোশাক।চোখেমুখে শরীরের ক্লান্ত প্রকাশ পাচ্ছে।গানের শব্দে ব্যক্তিটি আস্তে আস্তে নেমে টিভির সামনে দাঁড়ালো।শান্ত চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিভির স্কিনে।
বিধাতা আমাকে তোমার জন্য
গড়েছে আপন হাতে
জীবনে-মরনে, আধারে-আলোতে
থাকবো তোমার সাথে।।
তুমি বুকে টেনে নেওনা প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি,ভালোবাসি।
ভালোবাসি তোমাকে।।
এক চিলতি হাসি ফুটে উঠেছে তিশার মুখে।টিভির স্কিনে জিসানের হাস্যজল ছবিগুলো ভেসে উঠছে এক এক করে।জিসানের সিঙ্গেল ছবিসহ ওদের বিয়ের,হানিমুনের সব ছবি।সাথে জিসানের কন্ঠে গাওয়া গানটিও বাজছে।তিশা এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে টিভির স্কিনে ভেসে উঠা জিসানের ছবিটি কাপাকাপা হাতে স্পর্শ করছে।
যাবেনা কখনও ফুরিয়ে যাবেনা
আমার ভালোবাসা
তোমাকে পেয়েছি, পেয়েছি
আবারো বাঁচার
নতুন আশা।।
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
.........................................
"তিশা মুহুর্তে সব কিছু ভুলে গিয়ে হাসতে লাগলো।খুশিতে চোখ দুটো ছলছল করছে।"
---কিন্তু মুহুর্তেই অবার সব কিছু বদলে গেলো।যখন গানটি বন্ধ হয়ে গেলো,আর হঠাৎ টিভির স্কিনে যখন দেখতে পেলো,একজন লোক টিভিতে মাইক হাতে নিয়ে কিছু একটা বলছে।তার পাশেও জিসানের একটি ছবি আসছে।
টিভির স্কিন থেকে দু'কদম পিছে চলে গেলো তিশা।লোকটির কোনও কথা তিশার কানে না আসলেও ব্রেকিং নিউজে বড় বড় করে লিখাটি তিশা ঝাপসা চোখেও ঝটপট পড়ে ফেললো।
""বিশিষ্ট শিল্পপতি তৌফিক আহমেদ এর ছোট ছেলে জিসান আহমেদ এর কার এক্সিডেন্ট এ অকাল মৃত্যু।""
খবরটা পড়ার সাথে সাথে তিশার হাতের সামনে থাকা বড় ফুলদানিটি ছুড়ে মারলো টিভির দিকে।নিমিষে টিভির কাচ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।এতেও তিশার রাগ কমছে না।
ও চিৎকার করতে লাগলো।হাতের কাছে যা পেলো সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছে।
আড়ালো দাঁড়িয়ে পরিবারের সবাই শুধু দেখছে চেয়ে।কিন্তু তিশা এতোই ভাইলেন্ট হয়ে গিয়েছে যে তার সামনে কেউ যেতেও পাড়ছে না।
"ক্লান্ত তিশা হঠাৎ মাটিতে বসে চিৎকার করে জি...সান.........বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।"
---চিৎকার করে বলতে লাগলো,
আই হেট ইউ জিসান আই হেট ইউ।আপনি আপনার কথা রাখেন নি।আপনি বলেছিলেন আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।আপনি কথা রাখেন নি জিসান।জি....সা.......ন....।
প্লিজ কাম বেক।তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো। প্লিজ.......।
আমি কি নিয়ে থাকবো।কিভাবে বাঁচবো।
জিসান প্লিজ কাম......চিৎকার করে বলতে লাগলো।তিশার আর্তনাদ কান্না পুরো আহমেদ ভিলায় ছেঁয়ে গিয়েছে।
---তিশাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য রায়হান, নিবিড়সহ সবাই এগিয়ে আসতে নিলে,তিশা চিৎকার দিয়ে উঠে।
আসবে না__। কেউ আমার কাছে আসবে না তোমরা।কেউ আসবে না।
আমার কাউকে লাগবে না বলেই তিশা মাটিতে পড়ে থাকা এক টুকরা কাচ নিয়ে নিজের হাতের রগটি কেটে ফেললো।সাথে সাথে গড় গড়িয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।ঘটনা এতোই দ্রুতো ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই তিশা এমন একটা স্টেপ নিয়ে নিলো।
---' তিশা এমনেই ক্লান্ত।তার উপর আজ চারদিনের উপর তিশা একবিন্দু পানিও মুখে দেয়নি।চারদিন আগে যখন জিসানের এক্সিডেন্ট এ স্পোট ডেথ হবার কথা শুনেছে।তখন মুখ দিয়ে একটা সাউন্ড ও বের করেনি তিশা।চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে ছিলো।
কেউ তিশাকে রুম থেকে বের করতে পারিনি,না পেরেছে কিছু মুখে দিতে।
"সবাই অবাক তিশা কাঁদছে না বলে,যার সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছে সে কিভাবে না কেঁদে থাকতে পারে।কেউ কিছুই বুঝতে পারছিলো না।"
"কেমন অনুভূতি শুন্য মানুষ হয়ে গিয়েছে তিশা।ঠিক একটি রোবটস এর মতো।যার ভেতর কোনও অনুভূতির ছিটেফোঁটাও নেই।এলোমেলো চুল,বিষণ্ণ মুখ আর চেহারায় একরাশ ক্লান্ত নিয়ে চারদিন ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছিলো।ও চুপ থাকলেও ওর চোখ দুটো যেনো কিছু একটা খুঁজছিলো।
ক্লান্ত চোখগুলোও এ কয়েকদিনে এক মুহুর্তের জন্যও বিশ্রাম নেওয়া হয়নি।"
-- জিসানের মৃত্যুর কথা শুনে ডক্তর নিবিড় তিশার সাথে দেখা করতে এসে এসব শুনে বুঝতে পারে, তিশা ট্রোমার মধ্যে চলে গিয়েছে।
যেভাবেই হোক তিশাকে এই ট্রোমা থেকে বের করে আনতে হবে।তার জন্য তিশাকে আগে কাঁদাতে হবে।তার ভেতরের ইমোশনাল গুলো জাগাতে হবে।তাই নিড়ব, রায়হান আর তাওহিদ মিলে অনেক ভেবে এই প্লানিং করলো।
"তিশাকে একমাত্র জিসানই রুম থেকে বের করতে পারবে।আর কেউ না।তাই জিসানের নিজের কন্ঠে রেকর্ড করা একটি গান ড্রয়িংরুম এ বাজালো।
ওরা সিউর ছিলো জিসানের কন্ঠ শুনে তিশা নিজেকে আর রুমে বন্দি রাখতে পারবে না।আর তাই হলো।তিশা রুম থেকে বের তো হলো,তবে তিশা এমন কিছু করবে তা তাদের ধারণার বাহিরে ছিলো।"
-- রক্ত যাবার কারণে তিশার শরীর ঢলে পড়ছে আর চলছে না।পড়ে যেতে নিলে,রায়হান আর নিড়ব এগিয়ে আসার আগেই দুটো শক্ত হাত তিশাকে ধরে ফেলে।
সবাই তাকিয়ে তাকে সেই ব্যক্তিটির দিকে।কেউ চিনতে পারছে না কে সে।
-"রায়হানের মুখে অস্ফুটভাবে বেরিয়ে এলো নিলয়।"
"তিশু গেট আপ,তিশু।গেট আপ--ডেম ইট।তাকিয়ে দেখো আমি নিল।তিশু.....।নিলয় তিশার মুখে হালকা চাপড় মেরে উঠাবার চেস্টা করছে।কিন্তু তিশার কোনও রিয়েকশন নেই।"
--স্যার ব্লাড পরছে অনেক, আগে ব্লাড বন্ধ করতে হবে।পিছন থেকে সোম বলে উঠলো।মূলত সোমই খবর দিয়েছে নিলয়কে।খবর পেয়ে নিলয় আর্জেন্ট টিকিট কনফার্ম করে চলে এসেছে এখানে।
--"নিলয় কিছু করবে তার আগেই তাওহিদ এসে কোনও রকম আগে তিশার ব্লাড বন্ধ করার ব্যবস্থা করে।"
-নিলয়কে তাওহিদ চিনে না,তবে এই মুহুর্তে চেনাটা ইম্পোরটেন্ট নয়।তাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে, ওকে হসপিটালে নিতে হবে।ওর অবস্থা ভালো না।
তাওহিদ এর কথা শুনার সাথে সাথে নিলয় তিশাকে কোলো তুলে নিলো।
"নিবিড় নিরব দর্শক হয়ে দেখছে।ব্যাপারটা ওর একদমই হজম হচ্ছে না।"
--হসপিটালের করিডারে দাঁড়িয়ে আছে নিলয়।চোখে মুখে ক্লান্তি আর বিষণ্ণতা তারও বিরাজ করছে।কারণ প্যারিস থেকে সোজা এখানে এসে পরেছে,দীর্ঘ জার্নিতে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও পায়নি ও।
পাশে এসে সোম দাঁড়ালে,কোনও রকম ভণিতা ছাড়াই নিলয় সোমকে সব বলতে বললো।
"সোমের ভাষ্যমতে,'গতো কয়েকদিন জিসান স্যার একটু ডিস্টার্ব ছিলো।কি নিয়ে জানি না।এই প্রথম স্যার আমার থেকে কথা লুকিয়ে ছিলো।তার মাইন্ডে কিছু চলছিলো।কিন্তু কি বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু এতোটুকু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম স্যারের উপর হামলার ব্যাপারটা নিয়েই চিন্তিত।"
--নিলয় কিঞ্চিত ভ্রুটা কুঁচকিয়ে, মানে।ক্লিয়ার করে বলো সোম।
"স্যারের উপর পর পর দুবার হামলা করা হয়েছে।ভাগ্য ভালোছিলো বলে দুবার বেঁচে গেলেও তৃতীয় বারের হামলায় স্যার নিজেকে বাঁচাতে পারেনি।"
--নিলয় রাগে সোমকে ঠাস করে একটা থাপ্পাড় মেরে দেয়।হাউ কুড ইউ সোম।কি করে পারলে।ওয়াই!
--সরি নিলয় স্যার।জিসান স্যার আমাকে মানা করেছে আপনাকে কিছু না বলতে।এমনকি তার পরিবারের কেউ এই বিষয় কিছু জানে না।এমনকি রায়হান স্যার ও না।
"নিলয় নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার জন্য,এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের সাহায্যে গুছানোর চেস্টা করছে।
নিজেকে কিছুটা শান্ত করে,
সোম তুমি আগে আমার আন্ডারে কাজ করতে।অনেক ভরসা করি আমি তোমাকে।তাইতো জিসানের সাথে তোমাকে থাকতে বলেছি যাতে কোনও সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতে পারো।ওর শত্রুর অভাব নেই।যদি তখনই বলতে হয়তো জিসান.....।বাকিটা নিলয় বলতে পারলো না।"
--বাই দা ওয়ে,কি হয়েছিলো।আই মিন ওর ডেথ কিভাবে হলো।
"কার এক্সিডেন্ট স্যার,স্পোট ডেথ।(সোম)"
--লাশ দেখেছো।(নিলয়)
"লাশ পুড়ে ছাড়খার হয়ে গিয়েছে।(সোম)"
--তাহলে নিশ্চিত হলে কি করে।
"গাড়ীতে স্যার এর ঘড়ি,আংটি পাওয়া গিয়েছে।(সোম)"
--হুম।ওকে।কে করতে পারে,এনি ডাউট।
"কাছের কেউ,জিসান স্যারের সন্দেহ।(সোম)"
-কবে কবে হয়েছিলো ওর উপর হামলা।
"হানিমুন থেকে আসার পর একদিন অফিসের লিফট এর তার ছিঁড়ে নিচে পরে যায়।সেই সময় স্যার লিফট এ একা ছিলো।কিন্তু স্যার সেদিন বেঁচে যায় কোনও রকম।"
---এর পর সিলেট থেকে ফ্যামিলি ট্যুর করে আসার পর স্যারের গাড়ীর ব্রেকফেল হয়ে যায়।স্যার সেদিনও নিজেকে বাঁচিয়ে ফেলে।পর পর দুবার এমন ইন্সিডেন্ট হবার পর জিসান স্যারের সন্দেহ হয়।তাই ব্যাপারটা গোপনে তদন্ত করা শুরু করে।তদন্ত করে জানতে পারে,লিফটের তার ইচ্ছা করে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।আর গাড়ীর ব্রেকফেলটাও কারো প্লানিং।এর পর আমরা আমাদের পুরো সোর্স লাগিয়ে দিই খোঁজ নিতে এটা কার কাজ।কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে আমাদের।
"নিলয় চুপ,কিছু একটা ভাবছে।বলাবহুল্য জিসান আর নিলয় কিছুটা ক্রিমিনাল মাইন্ডের লোক।খুব সুক্ষ্ম বিষয়ও ওদের চোখের আড়ালে যেতে পারেনা।তাহলে জিসান কেনো ওর শত্রুদের খুঁজতে পারলো না,ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে নিলয় কে।"
নিলয়কে এমন নিস্তদ্ব থাকতে দেখে,সোম হাতের একটা ফাইল নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।
নিলয় ভাবণা থেকে বের হয়ে, সোমের থেকে ফাইলটা নিয়ে চেক করতে করতে জিঙ্গেস করলো কি এটা।
---নিলয় ফাইলটা চেক করে অবাক।কি এটা!এই ছেলেটা আসলেই পাগল।
মরার আগেও নিজের থেকে বেশি তিশার চিন্তা করতো।তাইতো তিশার লাইফ সিকিউরড করে রেখে গিয়েছে।কিভাবে পারে কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে।নিলয়ের চিন্তার বাহিরে এখন জিসান।
কবে করেছে জিসান এটা,সোমকে জিঙ্গেস করলো নিলয়।
--এইতো স্যার কয়েকদিন আগে।আমি জিসান স্যারকে জিঙ্গেসও করেছিলাম এসব করার কি দরকার এখন।আর ম্যাম কি এসব সামলাতে পারবে।
"নিলয় সোমের হাতে ফাইলটা দিয়ে।তো কি বললো জিসান।"
--সময় হলে নাকি জানতে পারবো।
"নিলয় একটা বাকা হাসি দিলো।"
--সোম একটু চিন্তিত হয়ে নিলয় কে জিঙ্গেস করলো।এখন কি করবো স্যার আমরা।
"নিলয় নিজের কোটটা খুলে সোমের হাতে দিয়ে,জিসান তার আমানতের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে আমাদের উপর, তার খেয়ানত কি করে করি বলো।৪০৩ নাম্বর রুমে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা ওই মেয়েটি জিসানের সবচেয়ে বড় আমানত।আর ওকে এখন পুরোপুরি সুস্থ করা আমাদের দায়িত্ব।আর ওকে প্রটেক্ট করাও।তোমাকে কি বলতে হবে এরপর কি করতে হবে।"
--সোম মাথা নাড়িয়ে না বলে,এর পর চলে যায় ও ওর কাজ করতে।
এই দুজন ব্যক্তিকে সোম কখনোই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না।একজনতো চলে গিয়েছে,ফাইলে কিছু উদ্ভট শর্ত রেখে।এসব শর্তের মানে কি।আর অন্যদিকে এখন নিলয় স্যার, সে তো আরো ভেজাল মানুষ।জিসান স্যারের মনে তবুও কিছু দয়া মায়া আছে।এর ভেতরে তো তাও নেই।আল্লাহই জানে কি হবে,যেদিন জিসান স্যারের মার্ডারারদের হাতে পাবেন কি করবে।
---"রায়হান হসপিটালের একটা বেঞ্চে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে।ওর শরীরটাও ক্লান্ত।জিগরী বন্ধুর মৃত্যুর শোকও ঠিকমতো পালন করতে পারিনি।কারণ দুটো পরিবারকে সামলাতে হয়েছে।জিসান যপনো সাথে করে সবার সুখ কেড়ে নিয়ে গিয়েছে।তাইতো সবাই হাসতে ভুলে গিয়েছে।
চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো।কি করবে রায়হান কাকে কাকে সামলাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।কিন্তু তার যে কাঁদা নিশেধ। দূর্বল হলে চলবে না।তাহলে দুপরিবারের কেউ বাঁচবে না।এই শোক থেকে কখনো মুক্তি পাবে না।"
নিলয়ও হঠাৎ রায়হানের পাশে এসে বসে পড়লো।রায়হান তখনো চোখ খুললো না,বন্ধ রেখেই বলতে শুরু করলো।
---"থ্যাংকস নিলয়।খুব প্রয়োজন ছিলো তোর।হাফিয়ে উঠছিলাম সব কিছু সামলাতে সামলাতে।জিসান থাকলে এমন হতো না।জানিস ওর কাছে না একটা যাদুর ছড়ি আছে যা দিয়ে খুব সহযে সব প্রবলেম দূর করে ফেলতে পারতো।"
"হুম,জানি।চার বছর ওর সাথে থেকেছি ওর ভালোমন্দ সবই জানি।এখন বল,পরিবারের সবাই কেমন আছে।"
---"ভালো নেই রে,কেউ ভালো নেই।দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে, জিসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওর নানা দিলওয়ার চৌধুরী স্টোক করে মারা যান।আর জিসানের মা..উনার অবস্থায়ও তেমন ভালো না।তাওহিদ ভাই,ভাবি আর আংকেল তাকে সামলাচ্ছে।
আর আমার মা তিশার এতো অল্প বয়সে বিধবা হওয়া আর জিসানের চলে যাওয়াটা সেও মেনে নিতে পারছে না।তাই নিশিকেই ভাইয়ের যাওয়ার শোক ভুলে সব সামলাতে হচ্ছে ওদিকে।
কেউ ভালো নেই।এমনটা কি হওয়া খুব জরুরী ছিলো।না হলে কি হতো বলতো।জানিস মনে হয়," জিসান এখনি এসে বলবে,আরে শালা কাঁদিস কেনো,আমি এখনো মরিনি।মরার পর মরা কান্দাকাদিস।"
রায়হান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।ডুকরে এবার কেঁদেই দিলো।
নিলয় একহাতে জড়িয়ে সান্তনা দেওয়ার চেস্টা করছে রায়হান কে।ওর চোখ দুটোও জ্বলে ছলছল করছে।
রাত ১২টা
--- হসপিটালের করিডোরের উল্টো পাশের বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছে তিশা।এখানকার বারান্দা গুলো সব খোলা।
স্থির দৃষ্টি তার নিচের দিকে,যেখানে কিছুক্ষণ পর পর কিছু লোক হেটে যাওয়া আসা করছে।
জিসানের সাথে শেষ কিছু কথা হঠাৎ মনে পরে গেলো তিশার।
"তিশা তিশা.....জিসান বেডরুম থেকে চিৎকার করে ডাকছিলো তিশাকে।তিশা সেদিন খুবই বিরক্ত হয়ে জিসানকে অনেক কথা বলেছিলো।তিশার প্রতি উত্তরে জিসান শুধু এতোটুকু বলেছিলো,যেদিন তোকে ডাকা বন্ধ করে দিবো,সেদিন বুঝবি।আমার ডাকার মাঝেও কতো ভালোবাসা ছিলো।সেদিন জিসান তিশার কপালে একটা চুমো দিয়ে যাওয়ার সময় আবার বলে গেলো,মিস করবি তো আমায়।"
তিশার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে গেলো,আর কিছু ভাবতে পারছে না।হঠাৎ রেলিং এর উপর উঠতে নিলে কেউ পিছন থেকে হাতটা টান দিয়ে জড়ে একটা থাপ্পাড় মারে তিশাকে।
---ঢাল সামলাতে না পেরে তিশা ফ্লোরে পরে যায়।আর ছলছল চোখে সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।তিশার সামনে দাঁতমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান।রাগে মনে হয় ওর শরীরটাও কাঁপছে।
কি করতে চাইছিলি তুই।পাগল হয়ে গিয়েছিস।নাকি আমাদের সবাইকে পাগল করে ছাড়বি।এককাজ কর,তুই একা মরবি কেনো।আমরা সবাই একসাথে মরে যাই।কাহিনীই খতম।তখন তো শান্তি লাগবে তোর তাই না।
"ভাইয়ের এমন বিহেভিয়ার এ তিশা ডুকরে আবার কেঁদে উঠে।"
----তিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রায়হান শান্ত হয়ে যায় মুহুর্তেই, বোনকে বুকে জড়িয়ে নেয়।আম সরি বোন,আমি মারতে চাইনি তোকে।
মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছে।কেনো করতে গেলি এমন, একবার কি আমাদের কথা তোর চিন্তা হয়না।বল,আমরা কি তোকে ভালোবাসি না।
"ভাই আমার জিসানকে চাই,ভাই।প্লিজ এনে দেওনা ভাই, প্লিজ।তুমি যা বলবে সব শুনবো। কিন্তু আমার জিসানকে এনে দেও।আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,মরে যাবো।মরে যাবো আমি।আস্তে আস্তে তিশার কন্ঠের সুর নরম হয়ে থেমে গেলো।তিশা আবারও জ্ঞান হারালো"।
-- যদি পারতাম তাহলে এনে দিতাম রে বোন।এনে দিতাম তোর জিসানকে।যেখান থেকেই পারতাম এনে দিতাম।যদি একটুও আসা থাকতো ওর ফিরে আসার তাহলে আসমান জমিন এক করে দিতাম ওকে খুজঁতে।কিন্তু এখন এটা আর কিছুতেই সম্ভব নারে বোন,সম্ভব না।রায়হান ও কাঁদছে আজ ভীষণ ভাবে কাঁদছে।
.
.
.
চলবে................................................................