"সাঝের আধার রাতে আমাকে একলা করে কোথায় চলে গেলেন জিসান।ওই আকাশের তারাগুলোর মাঝে আমি খুঁজি আপনাকে,সেই আকাশের কোথায় লুকিয়ে আছেন।আমার মনকে ফাঁকি দিয়ে চলে তো গেলেন,কিন্তু বলেও গেলেন না কি নিয়ে থাকবো আমি।
"আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে শুধু তোমায় ভালোবেসে।"
আমার এই অস্থির হ্রদয় আর অপেক্ষা করতে পাড়ছে না,আপনাকে ভেবে।তৃষ্ণায় যেনো বুকটা ফেটে যাচ্ছে,নিবারণ যে কিছুতেই হচ্ছে না।একবারতো বলুন জিসান ভালোবাসি তিশা ভালোবাসি তোকে।"
আজ প্রায় এক মাস হলো
------ জিসান চলে গিয়েছে।আস্তে আস্তে পরিবারের সবাই মেনে নিলেও একজন এখনো মেনে নিতে পারেনি।আর সে হলো তিশা।
তিশার ক্লান্ত আখি দুটে তৃষ্ণার্ত হয়ে এখনো যেনো জিসানকে খুঁজে। সারাদিন পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে না পারলেও দিন শেষে যখন রাত নামে।তিশার ভেতরের চেপে রাখা আর্তনাদ গুলো বাহির হয়ে যায়।রুমে বসে তিশা সারা রাত চিৎকার করে কাঁদে।কখনো কখনো তো কাঁদতে কাঁদতে তিশা ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরে।
দিনগুলো যেনো এক অভিশাপের মতো কাটছে আজকাল।রাতগুলোতো আরো বিষাদময়।
তিশা নিজেকে একদম লোকোচরের আড়াল করে রেখেছে।
কারো সাথে দেখা না,কথাও বলে না।
--ডাক্তার নিবিড়ও কয়েকবার এসেছিলো তিশার সাথে দেখা করতে কিন্তু তিশা করেনি।তাই নিবিড়কে নিরাশা নিয়েই ফিরতে হয়।তিশা এখনো ডিপ্রেশন থেকে বের হতে পারেনি।
"সেদিন হসপিটালে তিশার জ্ঞান ফিরার পরও তিশার অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না।অনেকদিন না খেয়ে থাকার কারনে কোনও খাবার খেয়ে পেটে রাখতে পারতো না তিশা।বমি করে ফেলে দিতো।
হসপিটালের পুরো সময় নিলয় পাশে থেকে তিশাকে সুস্থ হতে সাহায্য করেছে।"
কিন্তু তিশা এর পরও আরো দুবার আত্মহত্যা করার চেস্টা করেছিলো।কিন্তু প্রত্যেকবার কেউ না কেউ বাঁচিয়ে ফেলেছে ভাগ্যক্রমে।"
---ডাক্তার কনফার্ম করেছে,তিশা প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ভুগছে। যার কারনে বার বার আত্মহত্যা করার চেস্টা করছে।
তিশাকে যতোটা সম্ভব হাসিখুশি রাখার চেস্টা করতে হবে।ওকে একা না ছাড়াই ভালো এখন।বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে।তা না হলে তিশার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকবে।
-"তিশার এমন অবস্থার কথা শুনে সিলেট থেকে জিসানের কাজিন ঝর্ণা ঢাকায় এসে পরেছে। একমাত্র তিশার দেখাশুনার জন্য।তিশাকে বাসায় আনার পর থেকে ঝর্ণা চেস্টা করছে বিভিন্ন ভাবে তিশাকে ব্যস্ত রাখতে।"
এভাবে কেটে গেলো এক মাস।
"জিসানকে ছাড়া চলতে কস্ট হলেও চলছে, জীবনতো কারো জন্য থেমে থাকে না।সে তার মতো চলতেই থাকে।কিন্তু চলে যাওয়া মানুষগুলো যদি দেখতে পারতো তার চলে যাওয়াটা তার প্রিয়জন মেনে নিতে পাড়ছে না।সেতো মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে,কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষগুলো বাঁচতে বাঁচতে মরছে।"
___________
"ড্রয়িংরুমে বসে আছে তিশা।ওর সামনে আহমেদ বাড়ীর সবাই সহ নিলয় আর রায়হানও আছে।কিছু জরুরী কথাবর্তা বলবে বলে তিশাকে ডাকা হলো ড্রয়িংরুম এ।
---প্রথমে তিশা এক কথায় মানা করে দেয়,কারণ জিসান যাওয়ার পর তিশা কারো সামনে তেমন যায় না খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া।এমনকি ওর পরিবারের মানুষও এখন ওকে দেখতে পায় না।তিশার পুরো দুনিয়াটা বলতে এখন ওর আর জিসানের এই বেডরুমটাই।
কিন্তু আলোচনার বিষয় নাকি জিসানের শেষ ইচ্ছাটা, আর তা জানতেই তিশা ড্রয়িংরুম এ উপস্থিত হলো।"
---বোনকে এতোদিন পর দেখে রায়হানের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো,কি অবস্থা করে ফেলেছে নিজেকে।একমাসেই চেহারার লাবণ্যতা আর নেই।আগের থেকে অনেক শুকিয়েও গিয়েছে তিশা।চোখের নিচের কালো দাগগুলো চিৎকার করে বলছে তিশার রাতে জেগে থাকার কথা।
"সবাইকে চুপ থাকতে দেখে,তিশা নিজেই জিঙ্গেস করলো সমস্যা কি?"
----'তিশার কথায় নিলয় একটু নড়ে চড়ে বসলো,আর সোমের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে তিশাকে দিলো।
"তিশা ফাইলটা হাতে নিয়ে চেক করার আগেই প্রশ্ন করলো।কি এটা।"
--নিলয় ফাইলটা চেক করতে ইশারা করলো আগে।
"তিশা ফাইলটা পড়ে,বুঝতে পাড়ছে না কি বলবে।কি এসব!আমি তো এসব কখনো চাইনি। আর আমি কি করবো এসব দিয়ে।"
---বাড়ীর কেউ কিছু বুঝে উঠতে পাড়ছে না কি আছে এই ফাইলে।তাই তৌফিক সাহেবই প্রথম প্রশ্ন করে।
"আংকেল আমি বলছি,আসলে জিসান তার সব সম্পত্তি তিশার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছে।শুধু তাই না এখন থেকে অফিসের নতুন এম ডি তিশা।জিসানের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তিশাকে অফিস জয়েন হতে হবে,আর জিসানের নিজের হাতে গোড়ানো সব কিছু সামলাতে হবে এখন থেকে।তিশা এতে না বলতে পারবে না।
কারণ এটা জিসানের শেষ ইচ্ছা ছিলো।আর তিশাও জিসানের শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ করবে আর ফাইলে লিখা সব শর্ত পূরণ করবে বলে সিগনেচারও করে দিয়েছে।
এই ফাইলে তিশা আর জিসানের দুজনেরই সিগনেচার আছে।এই সিগনেচার তোমার।আম আই রাইট তিশা।"
-----তিশা মুখে কিছুই বললো না,শুধু মাথা নাড়ালো।তিশা এখন বুঝতে পাড়ছে জিসান সেদিন এই পেপারগুলোতেই ওর সিগনেচার নিয়েছিলো।তবে সেদিন তিশা পেপারগুলো চেক করেনি,করলে হয়তো এমন ধরনের কোনও পেপার সিগনেচার করতো না কখনোই।
--সবাই কিছুটা অবাক হলো,এমন একটা স্ট্যাপ জিসান নিলো,অথচ কারো সাথে শলাপরামর্শ ও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন কেনো।
"-তিশা নিজের কপালে দুআঙ্গুল চেপে ধরে, মনে মনে ভাবছে।
আমি এসব চাই নি জিসান।এগুলো দিয়ে কি করবো আমি।যাকে দরকার, যখন সেই নেই,তাহলে তার সম্পত্তি দিয়ে কি করবো।
আর অফিস!কি বুঝে জিসান এমন একটা ডিসিশন নিলো।আমি কি করবো অফিসে।উফঃ আর ভালো লাগছে না মাথাটা ধরছে এখন।"
---তিশার মনে কি চলছে এখন,নিলয় তা স্পষ্ট বুঝতে পাড়ছে,তাই শান্ত হয়ে তিশাকে বুঝাবার চেস্টা করছে।দেখো তিশা আমি জানি তুমি খুব কনফিউজড এন্ড টেনশড!
যে জিসান এমন একটা শর্ত কেনো রেখেছে।তাই না।
"তিশা নিলয়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।"
--নিলয় আবার বলতে শুরু করলো,জিসান যাই করে অনেক বুঝে শুনে করে।সেটা তুমিও ভালো করে যানো।ও যদি যাওয়ার আগে এটা চেয়েছিলো,তাহলে এটাই সই।
"কিন্তু তাই বলে অফিস।অফিসে আমি কি করবো।আমার এসব সম্পর্কে কোনও আইডিয়াই নেই।"
---তুমি চিন্তা করো না।আমি তো আছিই।তার উপর সোম তোমার সাথে সর্বক্ষণ থাকবে।তোমাকে কি কি করতে হবে বুঝিয়ে দেবে।
নিলয় উঠে দাঁড়িয়ে বললো, জিসানের অনেক ভরসা করে তোমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে।ও চায় তুমি এতোটা শক্ত হও,জাতে কেউ ইচ্ছা করলেই তোমাকে ভাঙ্গতে না পারে।আর তোমাকে জাতে কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয়।এমনকি তোমার বাবা মা,ভাইয়ের উপরও না।
নিলয় যেতে নিয়ে আবার থেমে বলে উঠলো,কাল খুব জরুরি একটা মিটিং আছে অফিসে,সব বোর্ড মেম্বার্সরা উপস্থিত থাকবে।কম্পানির এম ডি হবার কারণে তোমাকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।মাস্ট বি।
তাহলে আজ আসি কাল দেখা হচ্ছে আমাদের অফিসে।
---তিশা নিশ্চুপ।
"তিশার সাথে কথা বলে চলে যাওয়ার জন্য ঘুড়তে নিলেই,সামনে দিয়ে আসা ঝর্ণার সাথে আচানক ধাক্কা খায় নিলয়।ঝর্ণার হাতের ট্রেতে থাকা কিছু কফি নিলয়ের কোটে পরে যায়।"
-'ঝর্ণা সাথে সাথে করুন কন্ঠে সরি বলতে গিয়ে নিলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।কারণ নিলয়ের নীলাভ আখি দু'টি।
এই নীল চোখের গভীরে যেনো ভেসে যাবে ঝর্ণা আজ।
---মিস ওয়াসরুম টা কোথায়, নিলয় জিঙ্গেস করছে।
"ঝর্ণার কোনও হেলদোল না দেখে,নিলয় রায়হান এর দিকে তাকালো।"
--এসব দেখে রায়হান এগিয়ে হলো।চল আমি নিয়ে যাচ্ছি তোকে ওয়াসরুমে।
"কিন্তু ব্যাচারী ঝর্ণা এখনো নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ঝর্ণাকে এমন উদাসীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাওহিদ একটা ধমক দিলো,কিরে আজ কি কফি পাবো, নাকি দূর থেকে দেখেই হজম করতে হবে।"
--- তাওহিদ এর ধমকে ঝর্ণা চকিতে তাকায়,নিজের এহেম কান্ডে কিছুটা লজ্জাও পায়।সবাইকে কফি দিয়ে ঝর্না আড় চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে,
গল্পে সিনেমায় শুনেছি এমন হ্যান্ডশাম,সুন্দর হিরোদের কথা।বাস্তবেও এমন কাউকে দেখতে পাবো তাতো ধারণাই ছিলো না।সবথেকে সুন্দর তার ওই নীল চোখ দুটি।জীবনে এতো ছেলে দেখলাম,কিন্তু নীল চোখওয়ালা মানুষ এই প্রথম দেখলাম।আর দেখার সাথে সাথে মনে কেমন ঘন্টা বেজে উঠলো।একেই কি লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে।
'আর এদিক দিয়ে নিলয় রায়হান এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলো গেলো।'
---বেডরুমের দেয়ালে টাঙ্গানো জিসানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিশা।মনে আজ ওর হাজার প্রশ্ন জমা হয়েছে,কিন্তু আফসোস জবাব দেওয়ার মানুষটি নেই।তিশার ছোট মাথায় জিসানের এসব করার কারণ কিছুতেই ঢুকছে না।
কি মনে করে জিসান এমন সিদ্ধান্ত নিলো।জিসান ভালো করেই জানতো আমি বাহিরের জগৎ সম্পর্কে অবগত নই।তাহলে কেনো চায় উনি আমি অফিসে যাই।বলুন জিসান কি চলছিলো আপনার মনে।
আপনি জানতেন পাঁচ বছর আগে আমার সাথে ওই জগন্য ঘটনাটা হবার পর থেকে বাহিরের জগৎ আর অপরিচিত মানুষগুলো থেকে নিজেকে অনেকটা ঘুটিয়ে ফেলে ছিলাম।বাহিরের লোকজনের সাথে তেমন মেশা হয়নি কখনো।তাহলে এখন আমি! কিভাবে এসব সামলাবো।
যেখানে আমাকেই সামলানোর জন্য কাউকে না কাউকে আসতে হয় সর্বক্ষণ।
__________
"---জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রি।সকাল ১১টায় বোর্ড মেম্বার্সদের সাথে মিটিং হবে।এখন বাজে ঘড়িতে ১০:৩০।অথচ তিশা এখনো অফিসে আসেনি।
নিলয় টেনশনে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর ওর পি এ ডেইজি এসে বলে গিয়েছে,কিছুক্ষণ এর মধ্যে মিটিং শুরু হবে,কারণ বোর্ড মেম্বার্সরা সবাই এসে পরেছে।নিলয় হতাস হয়ে উঠে দাঁড়ালো।মনে মনে ভেবেই নিলো তিশা আর আসবে না।
"কেবিন থেকে বের হতে নিলেই সামনের ব্যক্তিটার সাথে অল্পের জন্য ধাক্কা লাগা থেকে বেঁচে গেলো।নিলয়ের এমনেই মেঝাঝ গরম,তার উপর এখন এমন ঘটনা।রাগে কিছু বলার জন্য সামনে তাকাতেই নিলয় বাকরুদ্ধ,
কারণ নিলয়ের সামনে তিশা দাঁড়িয়ে আছে।তাও আবার হিজাব পড়ে, নিজেকে আপাদমস্তক সম্পূর্ণ ডাকা এমন একটি পোশাক পরেছে যে কোনও ব্যক্তি চাইলেও তিশাকে চোখে মাপতে পারবে না।তবুও অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।"
--নিলয়কে দেখে তিশা বলে উঠলো,আম সরি, লেট হওয়ার জন্য।আসলে রাস্তায়....
"তিশাকে থামিয়ে দিলো নিলয় আর নিজেকে সামলিয়ে,ইটস্ ওকে তিশা।মিটিং এখনো শুরু হয়নি।চলো আমার সাথে।এরপর নিলয়,তিশা এবং সোম মিটিং রুমে প্রবেশ করলো।"
"-- তিশা নিজেকে খুব কষ্টে রাজি করালো অফিসে আসার জন্য।প্রথমে ভয় পেলেও পরে বোর্ড মেম্বার্সদের আন্তরিকতায় তা দূর হয়ে গেলো।আসার সময় সোমও গাড়ীতে বসে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলো।তাই তিশার নার্ভাসনেসটা অনেকটা কমে গেলো।কিন্তু তিশা জানতো না আগে কি আছে,জানলে হয়তো এখানে কখনো আসতোই না।"
---বোর্ড মেম্বার্সদের মধ্যে মিস্টার রাকিব জিঙ্গেস করলো,আমাদের সবথেকে বড় ডিলটার কি খবর।এ কে কম্পানির সাথে রাইট!
"সোম মাথা নেড়ে হা বললো।"
---মিঃজিসান ছিলেন যখন তখন আমাদের কোনও টেনশন ছিলো না,কিন্তু এখন একটু টেনশড লাগছে।আর তাছাড়া আমরা এখনো এ কে কম্পানির মালিক এর সাথে মিট করতেও পারলাম না।কেনো,কারণ কি?সে কি আসবে না।আমাদের আজকের মিটিং এর প্রধান কারণই তো এটা তাই না।
"-জি স্যার।আমার উনার পি এ এর সাথে কথা হয়েছে, উনারা রাস্তায়,যে কোনও সময় এসে পড়বে।আজ এ কে কম্পানির মালিক নিজে আসবে।কম্পানির নতুন এম ডির সাথে দেখা করতে।"
--ওকে...।(রাকিব)
"তিশা সোমের দিকে তাকিয়ে,এই এ কে কম্পানির মালিকের এর নাম কি।আর আপনি তাকে মিটিং এর টাইম বলে দেননি।এতো লেট করার মানে কি।সময়ের দেখি কোনও কদরই নেই।"
' --জি ম্যাম আমি বলে দিয়েছি,কিন্তু তবুও কেনো এতো লেট করলো বুঝতে পাড়ছি না।আর মালিক এর পুরো নাম জানি না,তবে সবাই উনাকে এ কে বলেই ডাকে।'
"ও...!তিশা সোমের সাথে যখন কথায় বলায় ব্যস্ত ঠিক তখনি,কেবিনের ডোর খুলে প্রবেশ করলো এ কে।
আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,গুড মর্নিং এবরিওয়ান।
আই এম আসফিন অর্ক খান।শোর্ট নেম এ কে।
------------কারো ভারী চেনা কন্ঠ কানে আসার সাথে সাথে তিশা চকিতে ডোর এর দিকে তাকালো।সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে তিশা যেনো স্থদ্ধ হয়ে গেলো,এসি রুমের ভেতরও তিশা ঘামতে লাগলো।শরীরটা হঠাৎ কাঁপতে লাগলো।
এতো বছর পর এই লোক এখানে কি করে তাও আবার যখন জিসান নেই।এটা কি জাস্ট একটা কোইন্সিডেন্ড নাকি অন্য কিছু।তিশার মাথা যেনো ঘুরছে।
"সবাই এ কের সাথে এক এক করে হাত মিলালো, কম্পানির এম ডি হবার কারণে তিশাকেও অর্কের সাথে হাত মিলাতে হবে,তাই অর্ক তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো তিশার দিকে।কিন্তু তিশা যেনো সাহসী পাচ্ছে না নিজের হাতটা বাড়াতে।"
--বিষয়টা নিলয় আন্দাজ করতে পেরে নিজের হাতটা বাড়িয়ে অর্কের সাথে হ্যান্ডশেখ করতে লাগলো।
হ্যালো,মিস্টার এ কে।আমি নিলয়।জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রিরতে মরহুম জিসানের বিজনেস পার্টনার।
আর মিসেস তিশা, আই মিন আমাদের এম ডি একটু অন্যরকম।
I hope you understand what I mean..
-------অর্ক একটু বাকা হেসে তিশাকে একবার উপর থেকে নিচ বরাবর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে নিলয়ের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,ইয়া আই আন্ডার্স্টান্ড..।
''তিশা নিজের হাতদুটো কচলাচ্ছে, অর্কের দিকে তাকাবারও সাহস হচ্ছে না।অর্কের দিকে না তাকিয়েই তিশা বুঝতে পাড়ছে, অর্ক যে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আর এই চোখের চাওনি যে কতোটা অস্বস্তিকর তা শুধু তিশাই জানে।আজ নিজেকে কতোটা অসহায় লাগছে।তা তিশা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।"
-----মিটিং শুরু হলো,অনেকে অনেক কিছু বললো,আর তিশার পক্ষ থেকে নিলয় আর সোম সব প্রেজেন্টেশন করলো।
" -হঠাৎ অর্ক বলে উঠলো--হুম সবই বুঝলাম।কিন্তু যার বলার সেই তো কিছু বললো না।অর্কের কথা বুঝে সবাই তিশার দিকে তাকালো।"
----সবার হঠাৎ তাকানো দেখে, তিশা আরোও নার্ভাস হয়ে গেলো।
'নিলয় কিছু বলতে নিবে তার আগেই অর্ক বলে উঠলো,মিস্টার নিলয় আমি মিসেস তিশার থেকে জানতে চাই,তাই উনাকেই বলতে দিন।তিশার দিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা হেসে।'
"--তিশা বুঝতে পারছে,অর্ক যেনে বুঝেই তিশাকে এমন একটা সিচুয়েশনে ফেলতে চাইছে,তাই তিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো।
মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
" আপনারা সবাই জানেন আমি এখানে নতুন,তাছাড়া আপনাদের সবার থেকে আমার অভিজ্ঞাতা আর বয়সও কম।কম্পানির হিতের জন্য আপনারা মিলে যে ডিশিসন নিবেন,আমি জানি তা ভালোই হবে।
এছাড়া এ কে কম্পানির ডিলটা সম্পূর্ণ দেখছেন মিস্টার নিলয়।তাই ডিল সম্পর্কে তার থেকে বেশি কেউ বলতে পাড়বে না।আর আমি আস্তে আস্তে আপনাদের সহযোগিতায় সব গুছিয়ে নেওয়ার চেস্টা করবো।আশা করি আপনারা আমাকে সহযোগীতা করবেন।"
--মিটিং রুমে হঠাৎ করতালি বেজে উঠলো।সবাই খুশি তিশার চেস্টা দেখে।"
"সবাই খুশি হলেও একমাত্র একজন ব্যক্তি খুশি হতে পারেনি,আর সে হলো অর্ক।তিশার এমন রুপ অর্কের একদম পছন্দ না,ও তো চায় তিশা ওকে ভয় পাক ভীষণ ভয়।"
--তিশা নিলয়কে বলে, মিটিং রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর এক মুহুর্তেও তিশা এখানে থাকতে পারবে না।সম্ভব না ওর জন্য।অতিতের কালো ছায়াগুলো আবার কেনো সামনে এলো।এখন তো জিসানও নেই আমার পাশে।এদের থেকে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো জিসান।কেনো চলে গেলেন,আমাকে এমন বিপদে ফেলে।কেনো?
.
.
.
চলবে............................................................