ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪৩ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


দেখতে দেখতে আরো এক মাস কেটে গেলো।তিশাও নিজেকে অফিসে সেট করার চেস্টা করছে।পুরো না পাড়লেও অনেকটাই বুঝে গিয়েছে ওকে কি করতে হবে।আর কোনও সমস্যা হলে কাকাতলীয় হলেও নিলয় ও সোমকে সর্বদা ওর আশেপাশে পেয়েছে।এই ব্যাপারটা তিশার কাছে একটু ঝটলা লাগলেও কিছুই বলতো না।

                     ----যেমন সে দিনেরই কথা,তিশা নিজের কেবিনে বসে একটা ফাইল চেক করছিলো,হঠাৎ অনুমতি না নিয়েই অর্ক কেবিনে প্রবেশ করে।

'হ্যালো মিসেস তিশা, হাউ আর ইউ।'

"কারো কন্ঠ শুনে তিশা সামনের দিকে তাকায়।অর্ককে নিজের কেবিনে দেখে তিশার গলা কেনো জানি শুকিয়ে গেলো।কিন্তু ও নিজেকে অর্কের সামনে দূর্বল কিছুতেই দেখাতে চায় না।তাই মনে সাহস সঞ্চয় করে অর্কের প্রশ্নের কড়া জবাব দিলো।

----ফাইন মিস্টার এ কে।
বাট আই থিংক আপনি মেনারস ভুলে গিয়েছেন।কারো কেবিনে প্রবেশ করার আগে যে তার অনুমতিটা নিতে হয়,তা কি এখন আপনাকে বলে দিতে হবে।

"তিশার কথায় অর্ক শুধু একটা বাকা আসি দিলো,আর একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো,ঠিক তিশার সামনে।

ওয়াও আই এম ইমপ্রেস মিসেস তিশা।তোমার তেজ দেখি সেই আগের মতোই আছে।তবে সত্য বলতে কি জানো, তোমার এই তেজই তো ঘায়েল করেছিলো সেদিন আমায়।আজও কি করতে চাও।"

---অর্কের এধরনের কথায় তিশার গা জ্বলে যাচ্ছে।

"আচানক অর্ক টেবিলের দু'দিকে হাত রেখে তিশার দিকে ঝুকে বললো--আফসোস! এখন কিন্তু তোমার সেই বডিগার্ড নেই,যে তোমাকে গার্ড করতো সবসময়।
ইউ নো দেট তিশা, ভাগ্য সবসময় যে সাথে দিবে এমনতো নয়।এমন হলে তো কখনো কারো সাথে খারাপ কিছু হতোই না।তাই না মাই বেবি।
হুজ নো কাল কি হবে।"

                ----অর্ক হঠাৎ এতো সামনে আসায় তিশা এমনেই ভয় পেয়ে গেলো,তার উপর আবার এসব কথা।
তিশা এতোটা বোকা নয় যে ও অর্কের কথার পিছনে যে ওয়ার্নিং তা বুঝতে পাড়বে না।
তিশার না চাওয়া সত্যেও ভয় তিশার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।

-"আর এই ভয়টাই তো অর্ক দেখতে চেয়েছিলো।আর তাই হলো।অর্ক খুব ভালো করেই জানে তিশা জাস্ট ওর সামনে নিজেকে ব্রেভ প্রমাণিত করতে চায়,কিন্তু তিশা কতোটা কি অর্কও ভালো করে জানে।"

---ভয়ে তিশার মুখে সেদিন কোনও কথাই বের হচ্ছিলো না।অর্ক চেয়ার ছেড়ে তিশার দিকে এগোতে নিলে,হঠাৎ কেবিনে নিলয় প্রবেশ করে।

                           '-অর্ককে দেখে নিলয়ের মেঝাজ গরম হয়ে যায় তাও আবার তিশার সাথে।নিলয়ের চোখ তিশার উপর পড়লো।তিশার ভয়ে মাখা মুখখানি দেখেই নিলয়ের যা বুঝার বুঝে নিলো।'

--অর্কের সামনে গিয়ে নিলয় জিঙ্গেস করলো,এনি প্রোবলেম এ কে।
আর আপনি এখানে কি করছেন।কোনও প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে আসতেন।যেহেতু আপনার প্রজেক্ট এর সব দায়িত্ব আমার উপর।'

"অর্ক এবার একটু বাকা হেসে--তেমন কিছু না মিস্টার নিলয়।আমি প্রজেক্ট এর ব্যাপারে কথা বলতে আসি নিই।আমি তো এসেছিলাম মিসেস তিশার সাথে পুরানো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে।
তাই না মিসেস তিশা।আমার আবার খুব বেড হেবিট আছে,আমি আবার কিছু বাকি রাখি না।উপকার হোক বা অপকার হোক।শোধ নিয়ে থাকি বা শোধ করেদিই।সেটাই বলছিলাম।
আসলে মিসেস তিশার সাথে পুরানো কিছু হিসাব ছিলো তো।তা কিভাবে শোধ করবো এই বিষয় নিয়েই আর কি।"

--নিলয় একবার তিশার দিকে তাকালো।তিশা ভয়ে কেমন কুঁকড়িয়ে গিয়েছে।

'ও রিয়েলি!ডোন্ট ওয়ারি এ কে। যদি মিসেস তিশার সাথে আপনার পুরানো কোনও হিসাব থেকেও থাকে তাহলে আমি তা চুকিয়ে দেবো,কেমন।
এর জন্য মিসেস তিশাকে বিরক্ত না করলেও চলবে।আফটার অল ইউ আর পার্টনার,আই মিন বিজনেস পার্টনার।

"অর্ক এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিলয়ের দিকে নিক্ষেপ করে বললো,উইল সিউ ইউ সুন মিস্টার নিলয়।"

--ডেফিনেটলি মিস্টার এ কে।
অর্ক চলে যাওয়ার পর নিলয় তিশার কাছে আসে।আর ইউ ওকে তিশা।

'তিশা কোনও রকম মাথাটা নাড়িয়ে হা বললো।'

--নিলয় তিশাকে একগ্লাশ পানি এগিয়ে দিলো।
"তিশা পানিটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।খুব দরকার ছিলো পানিটা এসময়,গলাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো।"

--দেখো তিশা, আমি জানি মিস্টার এ কে এর সাথে তোমার খুব খারাপ একটা অতীত জড়িত।কিন্তু তুমি যদি ওকে দেখে এখনো এভাবে ভয় পাও তাহলে,ওর সাহস আরো বেড়ে যাবে।তাই তোমাকে এসব কিছু সাহসের সাথে ডিল করতে হবে।ভয় পেলে চলবে না।
ওকে,,,

"তিশা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মাথাটা নেড়ে হা বললো।"

               ---সোমের ডাকে তিশা ফিরে এলো বর্তমানে।
'আমাকে ডেকেছেন ম্যাম।'

-হুম।আচ্ছা সোম ভাইয়া,আপনি এ কে কম্পানির ডিলটার সম্পর্কে কিছু জানেন।মানে জিসান যেনে বুঝে এই প্রজেক্ট টা হাতে নিবে,এটা ইম্পসিবল।তাহলে!

"একচুয়েলি ম্যাম,এই প্রজেক্টার জন্য আমাদের তেমন কিছু করতেই হয় নিই।আমাদের রাইবেল কম্পানিগুলো অনেক চেষ্টা করা সত্যেও পায় নিই।তবে এতোগুলো কম্পানির মধ্যে এ কে কম্পানির মালিক আমাদের চুজ করেছেন।ডিলটা সাইন করতে এ কে স্যারের ভাই আর পি এ এসেছিলো।মূলত তারাই প্রজেক্ট টা হেনডেল করছিলো।কারণ এ কে নাকি বিজি থাকেন, তাই স্যারের এ ব্যাপারে ধারনা ছিলো না বলে মনে হয়, আই হোপ।"

---হঠাৎ নিলয় হন্তদন্ত হয়ে তিশার কেবিনে প্রবেশ করলো।কিছু ফাইল সোমের দিকে ছুড়ে মেরে হুংকার দিয়ে বলে,২৪ঘন্টা সময় তোমাকে দিলাম সোম,খবর নিয়ে জানাও কে এই ব্যক্তি।

"নিলয়কে এমন রাগতে দেখে তিশা জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে, নিলয়। (বিজনেস পার্টনার হবার কারনে নিলয়ই তিশাকে নাম ধরে ডাকতে বলেছে।)"

---আমাদের ৩০%শেয়ার কেউ উঁচু দামে কিনে নিয়েছে।আর বাকি শেয়ার হোল্ডারদেরও নাকি অফার করছে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে।

"বাট এটা কে করছে আর কেনো।"

---সেটাই তো বলতে পাড়ছি না,সম্পূর্ণ গোপনে কাজটা করা হচ্ছে।এতো বড় একটা খবর গোপন রাখার পিছনে কার হাত বুঝতে পাড়ছি না।

"তিশা কিছুক্ষণ ভেবে,অর্ক করেনি তো।"

---না, এটার পিছনে এ কের কোনও হাত নেই।
সামওয়ান!বাট হু?

"আবার নতুন কোন শত্রু উদিত হলো আল্লাহই জানে।
তিশা নিজের চেয়ারে বসে হাত দুটোতে থুতনি রেখে সোমকে প্রশ্ন করলো।আচ্ছা সোম ভাইয়া সত্যি করে বলুন তো আপনার স্যার অফিস চালাতো নাকি কোনও গ্যাং।তার যাওয়ার পর সবাই আমার উপর হামলা করছে কেনো।আমি কার ক্ষেতের ধান চুড়ি করছি বলুনতো।"

---সোম আর নিলয় দুজনই খুব অবাক হলো তিশার কথা শুনে।

সোম কিছু না বলে চলে যেতে নিলে,তিশার ডাকে থেমে যায়।
"আমি আপনাকে একটা কাজ দিয়েছিলাম, করেছেন।"

'জি ম্যাম, আইজি সাহেব আজই আসবে আপনার সাথে দেখা করতে।'

"ওকে,আপনি আসতে পারেন।(তিশা)"

---নিলয় তিশাকে প্রশ্ন করে আইজি কেনো আসবে।

"পক্ষান্তরে তিশা নিলয় কে বললো--জিসানের কেসটা রিওপেন করতে চাই।আমার বিশ্বাস এটা কোনও এক্সিডেন্ট কেস না,মার্ডার। আর আমার ডাউট হচ্ছে অর্কের উপর।"

--নিলয় মুগ্ধ হয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,কি আশ্চর্য!
 যে মেয়ে একমাস আগে সবার সাথে কথা বলতেও ভয় পেতো,ডিপ্রেশনে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলো।আজ সে কতোটা কনফিডেন্স হয়ে গিয়েছে।আর চিন্তা ধারণারও অনেকটা উন্নত হয়েছে।জিসান হয়তো তিশার এই রুপটাই দেখতে চেয়েছিলো।

                      ---কলেজ মাঠে বসে আছে নিশি আর নিলু।নিশিকে চুপ থাকতে দেখে নিলুই বলে উঠলো, তিশা কেমন আছে রে,কলেজেও আসে না কেনো এখন।

---ওকে অফিসে যেতে হয়,তাই ক্লাশ করতে আসতে পারেনা।তবে পরীক্ষার সময় আসবে।

'অফিস,তাও আবার তিশা।কিভাবে।'

---নিশি তারপর খুলে সব বললো।

"হুম বুঝতে পাড়ছি।কি আশ্চর্য তাই না,জিসান ভাইয়া যাওয়ার পর থেকে সব কিছু কেমন উলোটপালট হয়ে গিয়েছে তাই না।তিশার লাইফটাই চেন্জ হয়ে গিয়েছে।কতো ভালোবাসা ছিলো দু'জনের মধ্যে তাই না।জিসান ভাইয়ের মতো ভালোবাসা কি কেউ দিতে পারবে তিশাকে আর।"

---নিশিও ভাবছে,সত্যিই তো। কিন্তু তিশা কি ভাইয়ার জায়গা কাউকে দিতে পারবে।এতো কি সহয সব কিছু।

'নিশি চল এবার যাওয়া যাক।'(নিলু)

---হুম....।নিশি ও নিলু গেটের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিশির হাতের ফোনটা পড়ে যায়।নিশি বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলে,কোন ফাজিলরে চোখে দেখতে পাস না।

'ছেলেটি নিশির ফোনটা তুলে নিশিকে সরি বলতে গিয়ে থমকে যায়।'

---ছেলেটিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ছেলেটির হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিয়ে গেটের বাহিরে দিকে হাটা ধরলো নিলুর সাথে।

"পিছন থেকে ছেলেটি নিশিকে কুহু বলে ডাক দেয়।"

---কিন্তু নিশি নিলুর সাথে কথা বলতে বলতে চলে যায়।

"ছেলেটি আনমনে বলে উঠে,কুহু তুমি এখানে।আর আমি তোমাকে কোথায় না খুঁজেছি।এবার আর যেতে দেবো না,দেখে নিও।সব রাগ ভাঙ্গিয়ে ছাড়বো।"
  
                 
                --- বাসায় যাওয়ার জন্য তিশা অফিস থেকে বের হলে,অফিসের বাহিরে নিবিড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
তিশা কিছুটা অবাক হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না,কারন আজকাল তিশার সাথে অবাক করার মতো এমন কিছুনা কিছু ঘটতেই থাকে।
---------যেমন কিছুুদিন আগের কথা তিশা অফিস শেষ করে বাসায় যাচ্ছিলো।হঠাৎ রাস্তায় দু'টো মাইকো তিশাদের গাড়ীর সামনে এসে দাঁড় করালে,ড্রাইভারকে না চাওয়া সত্যেও গাড়ী থামাতে হলো।

"হঠাৎ ব্রেক মারায় তিশা কিছুটা ঘাবড়িয়ে যায়।ড্রাইভার রফিক কে জিঙ্গেস করে সমস্যা কি।"

'ভাবি আমাদের গাড়ীর সামনে আচানক দুটো মাইকো দাঁড় করিয়েছে কেউ।'

"আমি গাড়ীর সামনের কাচের দিকে তাকিয়ে দেখি,মাইকো থেকে প্রায় সাত আটজন গুন্ডা টাইপের ছেলে নেমে আমাদের গাড়ীর চারপাশে গেরো করে দাঁড়িয়ে আছে।আমারতো এদের দেখেই রুহ কেপে উঠলো।আমরা গাড়ীতে মাত্র তিনজন।আমি, রফিক আর সোম।তবে সোমকে দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম।কারণ এসবের কোনও রিয়েকশন দেখতে পেলাম না ওর চেহারায়।
তাই আমিই কাপাকাপা গলায় সোমকে জিঙ্গেস করলাম এরা কে?আর আমাদের এভাবে আটকিয়েছে কেনো ভাইয়া।"

---ম্যাম প্লিজ রিলেক্স।কিছু হবে না।জাস্ট একটু ওয়েট করুন।

"এমন সময় সোমের এমন কথা শুনে আমি তো মনে হয় সপ্তম আসমান থেকে নিচে পড়েছি।ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বার বার ড্রাইভার কে ইশারা করছে গাড়ীর লক খুলতে, আর নেমে আসতে।"

'কিন্তু রফিকও কি সুন্দর করে আড়ামে বসে আছে।কোনও চিন্তার 'চ' ও নেই এই দুজন ব্যক্তির মাঝে।'

"আসলে আমি পরে বুঝতে পারলাম,গাড়ীটা বুলেটপ্রুফ।হাজার চেস্টা করেও ওরা কিছুই করতে পাড়বে না,যে পর্যন্ত আমরা লক না খুলবো।"

                    "কিছুক্ষণ পর হুরমুর করে প্রায় দশ বারটা হুন্ডা এসে থামলো আমাদের গাড়ীর সামনে।আমারতো এবার জান যায় যায় অবস্থা এরা আবার কে?
কিন্তু আশ্চর্য এদের দেখে সোম গাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।হচ্ছে টা কি এসব!
ওদের মাঝে কি কথা চলছে আল্লাহই জানে,তবে কিছু যে ভালো না তা বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ যা দেখলান তা দেখার অবস্থায় ছিলাম না আমি,সোম তার কোমড় থেকে একটা রিভেলবার বের করে মাইকো করে আসা ছেলেদের গায়ে গুলি করে দিলো।আমি এসব দেখে সত্যি বিশ্বাস করতে পাড়ছি না কিছুই।হুন্ডাতে আসা ছেলেদের কিছু একটা বুঝিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো সোম।"

----আমি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলাম,এসব কি সোম ভাইয়া,আপনি এদের মেরে ফেললেন কেনো,আর আপনার কাছে পিস্তল আছে।কিন্তু কেনো?

'সোম ড্রাইভারকে ইশারা করলো গাড়ী স্ট্যাট দেওয়ার জন্য।আর আমাকে বললো,
ম্যাম রিলেক্স, আমার পিস্তল লাইসেন্স করা।আর জিসান স্যারই দিয়েছে আমায়।আমি উনার পি এ কাম বডিগার্ড ছিলাম।আর এখন আপনার।আপনাকে সুরক্ষা করা আমার দায়িত্ব।আর এর জন্য সব কিছুই করতে পারি।আপনি এ বিষয় নিয়ে তেমন ভাববেন না।এসব আপনার জন্য হয়তো নতুন।কিন্তু আমাদের জন্য না।'

"আমি সত্যি সেদিন দ্বিতীয়বার আবার ভাবতে শুরু করেছিলাম,আমি কি সত্যিই জিসানকে চিনতাম।"

              ---নিবিড় ভাইয়ের ডাকে আমি ফিরে এলাম বর্তমানে,আরে ভাইয়া আপনি এখানে।

"হুম!তোমার তো দেখাই মিলে না বাসায় গেলে,তাই এখানেই চলে আসলাম।এবার বলো কেমন আছো।"

"এই তো বেঁচে আছি,কোনও রকম।"

--এসব কেনো বলছো তিশা।সামনে তোমার পুরো জীবনটা পরে আছে।তাই যা হয়েছে তা ভুলে অতীত থেকে ফিরে আসো।

"আমার অতীতই আমার বর্তমান,আর ভবিষ্যৎ ও।তাই ভোলা সম্ভব না।"

--ওকে,আচ্ছা বাদ দেও।চলো তোমাকে আজ আমি বাড়ী দিয়ে আসি।

"কিন্তু!"

--কোনও কিন্তু না,আজ আর কিছু শুনতে চাই না,প্লিজ চলো।

"ওকে,চলুন।তিশা নিবিড়ের গাড়ীতে উঠতে নিলে,হঠাৎ সোম সামনে এসে দাঁড়ায়।সরি ম্যাম,আপনি নিজের গাড়ী ছাড়া কারো সাথে যেতে পারবেন না।"

--ওয়াটদা!এখন কি তোমার পারমিশন নিতে হবে। তিশা কোথায় যাবে আর কার সাথে যাবে।নিবিড় দাঁতেদাঁত চেপে।

          ---সোম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ নিলয় এসে বললো,ইয়েস ডক্তর নিবিড়।তিশাকে আমাকে বা সোমকে বলে যেতে হবে।কারণ তিশার সুরক্ষার পুরো ভার জিসান আমাদের উপর দিয়ে গিয়েছে।তাই আমাদের তো টেনশড করাই জায়েজ তাই না।
আর আপনার তিশার সাথে কোনও কথা থাকলে আপনি বাসায় গিয়ে কথা বলতে পারেন।বাট অফিস আওয়ার শেষে তিশাকে বাড়ী পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব,তাই আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
তিশা আমার সাথে চলো,আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।

"তিশাও যানে এখানে ওর আর কিছু বলার নেই।কারণ জিসান ওর চারপাশে এক অদৃশ্য জাল করে রেখে গিয়ছে,যা তিশা অনুভোব করতে পারে,কিন্তু দেখতে পায় না।আর এখানে একা চলার সাহস করলে ক্ষতি শুধু তিশারই হবে।"

--আহমেদ ভিলার সামনে তিশাকে নামিয়ে দিলো নিলয়।কাল নাকি আবার একটা বিজনেস পার্টি আছে।কোন আরিয়ান জোভান ইনভাইট করেছে দেশের সব বিজনেসম্যানদের।বিজনেস এর সুবাদে আমাকেও যেতে হবে।দেখা যাক।

next day...
       
                         " রেডিসন ব্লু-ঢাকার ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে দাঁড়িয়ে আছি।চারদিকে যেনো লালের বাহার।থিম পার্টি বলে কথা।মেয়েদের লাল এবং ছেলেদের ব্লাক পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে।সাথে আবার পছন্দ মতো মাস্কও।
এধরনের পার্টিগুলোতে এমনেই আমার তেমন ইন্টেরেস্ট কম,তবুও আসতে হলো।তাও আবার জিসানকে ছাড়া।"

---নিলয় অন্য বিজনেসম্যানদের সাথে কিছু একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

"আমার খুব বোরিং লাগছে তাই একটু হাটাহাটি করছি।
হঠাৎ সামনে বার সেকশনে অর্ককে দেখতে পেলাম।এটাকে দেখলেই মেঝাজ গরম হয়ে যায়।শয়তান লোক একটা।
আমাকে দেখার আগেই আমি সরে গেলান।হঠাৎ কানে আসলো,স্টেজ এর দিকে কিছু একটা এনাউসমেন্ট করা হচ্ছে--কাছে গিয়ে দেখলাম নামকরা সংগীত শিল্পী তাপসী কবির গান গাইবেন এখন।তাকে দেখেই চারদিকে করতালি বেজে উঠলো।"

---তাপসী মাইকটা নিয়ে বললো,অবশ্যই আমি গাইবো।কিন্তু আমার সাথে তাল মিলাতে হবে মাই ফ্রেন্ড আরিয়ানকেও।

'সবাই একসাথে আবারও করতালি দিতে লাগলো।'

"নিলয়ও এতোক্ষণে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
তাপসীর সাথে স্টেজে একটা ছেলে মাস্ক পড়ে আমাদের দিকে পিঠ করে বসে আছে।যথাসম্ভব এটাই মিস্টার আরিয়ান।উনি হাতে গিটার নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো---

           আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
             হেসে আলতো চোখে চোখে।
               তোর জন্য এসেছি আমি
                 ভালোবাসতে যে তোকে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।

             আসে পাশে কোনো দেশে
               চেনা অচেনা ভোরে।
                   চোখে চোখে দেখি তোকে
                     অচেনা স্বপ্নের ঘোরে।

তোকে ঘিরে খুব ভিড়ে
রয়েছে রাতের তারা।
আনমনে গোপনে
ভেঙেছে রাতের পাহারা।

             মন বলেছে এবার তুই এলে
               যাবো আমরা নিরুদ্দেশে।
                  তোর জন্য যত পাগলামি
                    চল হাওয়ায় যাই ভেসে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।

" হঠাৎ সবার করতালিতে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।কি অদ্ভুত! কতো পরিচিত সুর মনে হচ্ছে।মিস্টার আরিয়ান এর কন্ঠ এতোটা টানছে কেনো আমায়।কে সে?আমি তাকে দেখার চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।"

----ঠিক তখনি আরিয়ান নিজের মাস্কটা খুলে সামনে ঘুড়লো।

"মুহুর্তে তিশার দুনিয়াটা মনে হয় ঘুড়তে লাগলো।এতো বড় শোকড নাকি খুশি যেটাই হোক তিশা হজম করতে পাড়লো না।মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে পড়লো "জিসান"।

'তিশা নিজের জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।সবাই কিছুটা অবাক হলো, কি হলো।'

---শুধু তিশা না,নিলয়ও শোকড!কেমন রিয়েক্ট করার দরকার বুঝতে পাড়ছে না।
কিন্তু এখন আগে তিশাকে সামলাতে চলে গেলো।
আর অর্ক সেতো আরিয়ানকে দেখে পার্টি ছেড়েই চলে গেলো সাথে সাথে।

"আরিয়ান আশেপাশের ভিড় ঢেল সামনে এসে দেখে একটা মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে আছে।
আরিয়ান এসে ধরতে নিলে কেউ আারিয়ানের হাতটা ধরে ফেলে।"
.
.
.
চলবে................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp