ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪৪ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


      " জীবনে কিছু কিছু প্রশ্ন থাকে যার উত্তর কখনও মিলেনা,কিছু কিছু ভুল থাকে তা শোধরানো যায়না,
আর কিছু কিছু কষ্ট থাকে যা কাউকে বলা যায়না।"
                                                  ' হূমায়ূন আহমেদ। '

'তিশার জীবনটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ।সময়ের স্রোত বয়ে চলছে,অথচ যতোদূর চোখ যায় শুধু ধোঁয়াশা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না।জীবনের কঠিনতম সময়ের সম্মুখীন হতে চলছে তিশা।কিন্তু তার সম্মুখীন হওয়ার সাহস বা শক্তি কোনটাই তিশার মধ্যে নেই এখন।'
----অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝিয়েছে,মানিয়েছে জিসান আর নেই।চলে গিয়েছে ওকে এই পৃথীবীর ভিড়ে একা ফেলে।তিশার মন না মানলেও তিশা নিজেকে এসব বলেই বুঝ দিয়েছিলো।
----কিন্তু এখন! এখন তিশা নিজেকে কিভাবে সামলাবে।জিসানের মতো দেখতে এই লোকটি যাকে সবাই আরিয়ান নামে চিনে আবার তার মুখোমুখি হলে তিশা কি করবে।কিভাবে নিজেকে মানাবে এটা যে ওর জিসান না।

"সেদিন পার্টি থেকে আসার পরের দিনই সোমকে দিয়ে আরিয়ান জোবান এর পুরো ডিটেলস কালেক্ট করে তিশা।
আর ডিটেলস জানার পর তিশার মনে যে সুপ্ত আশাটুকু ছিলো যে, হয়তো জিসান বেঁচে আছে।তাও শেষ হয়ে যায়।"
---আরিয়ান জোবান,একজন কানাডার অধিবাসী।বাবা কামাল শেখ,মা কৃষমি।বাবা একজন বাংলাদেশি হলেও মা কানাডার অধিবেশী।আরিয়ান ছোট থেকেই কানাডায় বড় হয়েছে। 
বিজনেসম্যান হিসেবে তুখড় মাইন্ডের মানুষ।তাইতো খুব অল্প সময় বিভিন্ন দেশে নিজের ব্যবসার বিস্তার করেছে।এবার আরিয়ান এর নযর বাংলাদেশের উপর পড়েছে।নিজের পছন্দ মতো কোম্পানি চয়েজ করে নেয় প্রথমে।হোক সেটা যতো ছোট বা বড়।তারপর সেই কোম্পানি নিজের করে ছাড়ে আস্তে আস্তে।এটাই আরিয়ান এর বিজনেস ট্রিক।
"সবথেকে বড় যে ব্যাপারটা যেনে তিশা হতাশ,তা হলো আরিয়ান জোবানের মেয়েদের সাথে রিলেশন তেমন একটা ভালো না।কোনও মেয়ে তার লাইফে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে নি।
এসব জানার পর তিশা মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে নেয় এটা ওর জিসান না।এটা জিসান হতেই পারেনা।অসম্ভব!"

-------সেদিন পার্টি থেকে এসে অর্কের ও মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।জিসান নামের প্যারাটা যে ওর জীবনে কতোটা ভয়ংকর ছিলো ও সেটা ভালো করেই জানে।হাতের গ্লাসে রাখা ড্রিংকস এক ঢোকে শেষ করে গ্লাসটি সামনের দেওয়ালে ছুড়ে মারলো।রাগে অর্কের মাথার রগগুলো ফুলে গেলো।
কি করে সম্ভব, এটা!
জিসান মরেও বেঁচে আসলো কিভাবে।আমাকে সত্য জানতে হবে।কে এই আরিয়ান!আমার প্লান আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না এবার,কিছুইতেই না।

অফিস টাইম
    
                               " আজ দু'দিন পর তিশা অফিসে আসলো,আজও আসতে চায়নি।কিন্তু নিলয় সকাল সকাল তিশার বাসায় হামলা করে।
কারণ আজ নতুন শেয়ার হোল্ডার আসবে অফিসে,তাই খুব জরুরী একটা মিটিং আছে।তিশাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।অনেক বুঝিয়ে তিশাকে অফিসে আসতে রাজি করে নিলয়।"

---আজকাল নিলয় যখনই বাসায় আসে ঝর্ণা নিলয়ের চারপাশে ঘুরাঘুরি করে।একটু যদি তাকায়।কিন্তু নিলয়ের ভাবলাশহীন ভাব ঝর্ণাকে ভীষণ পোড়ায়।
কিসে এতো মগ্ন যে একবার তাকানোও যায় না আমার দিকে।অবশেষে ঝর্ণা নিজে এসেই সেধে নিলয়কে চা কফি অফার করে।
নিলয় একবার ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে,মিস্টি একটা হাসি দিয়ে--
"থ্যাংকস,বাট আই ডোন্ট নিড এনিথিং।"
নিলয়ের এতোটুকু হাসিতেই ঝর্ণার গাডেন ফুলে ফুলে যেনো ভরে গেলো।কি সুন্দর এই হাসি।একদম বুকে গিয়ে লাগে।

               "মিটিংরুমে সবাই অপেক্ষা করছে নতুন বোর্ড মেম্বারের জন্য।সবাই এসে পড়েছে।কিন্তু যার আসার কথা সেই আসেনি এখনো।তিশা বিরক্ত হয়ে সোমকে কিছু বলবে তার আগেই কেবিনে নতুন কারো উপস্থিত ট্যার পেয়ে তিশা সামনে তাকালো।সামনের ব্যক্তিটিকে তিশা মোটেও আশা করেনি।এতো আরিয়ান জোবান।"

---আরিয়ান ফুল আটিটিউড নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো।আরিয়ানকে দেখে সবার মুখ হা হয়ে গেলো।কেউ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পাড়ছে না।কিন্তু আরিয়ান সব কিছু একটা ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে উপেক্ষা করলো।
"বোর্ড মেম্বার থেকেতো একজন বলেই ফেললো,মিস্টার জিসান,আপনি বেঁচে আছেন।"
আরিয়ান একটা বাকা হাসি দিয়ে, সামনে বসা তিশার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো।আমি আরিয়ান।আরিয়ান জোবান।কানাডা থেকে এসেছি।আর এখন এই কোম্পানির একজন বোর্ড মেম্বার।"

--আরও একটা ইন্টেরেসটিং ব্যাপার ঘটেছে এই অফিসে এসে। আজই আমি জানতে পারলাম।আমি একা নই এই চেহারার মালিক।আমারই ডুবলিকেট আরো একজন এই শহরে ছিলো।আফসোস তাকে চোখে দেখতে পারলাম না।আমি মন থেকে দুঃখিত মিস্টার জিসান আহমেদ এর জন্য।"

---সবাই কিছুটা অবাক হলো।এমনও কি হয় বাস্তবে,এসব তো নাটক সিনেমায় দেখা যায়।বা গল্পে শোনা যায়।

"আারিয়ানের কারো কথা শোনার যেনো কোনও ইন্টেরেস্টই নেই।তাই নিজের দৃষ্টি তিশার দিকে স্থির করেই আবার বললো।মিস তিশা জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির এম ডি রাইট'।"

"-তিশা শান্ত চোখে তাকালো আরিয়ানের দিকে,তার পর মাথা নেড়ে হা বললো।"

---ওকে,আমি এই অফিসে আমার একটা নিজস্ব কেবিন চাই,নিশ্চয়ই এতে আপনার কোনও আপত্তি হবে না।তাছাড়া কোম্পানির ভারী শেয়ার আমার হাতে।তাই এতুটুকু আমি এমনেই পাই,রাইট মিস তিশা।

"তিশা নিলয়ের দিকে তাকালে, নিলয় ইশারায় হা বলে,আর সোমকে আরিয়ানের কেবিন রেডি করতে বলে।'
আরো কিছু বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করে মিটিং শেষ করা হয়,এরপর যে যার কাজে চলে যায়। "
 
                  --ফাঁকা কেবিনে টেবিলের একপাশে বসে আছে তিশা আরেক পাশে আরিয়ান।তিশা ভেবেছিলো আরিয়ানও চলে যাবে।কিন্তু আরিয়ান যায়নি এখনো বসে আছে।তিশার খুব অস্বস্তি লাগছে আরিয়ানের সাথে এক রুমে থাকতে।
তাই নিজেই চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে নিলে আচানক আরিয়ান সামনে এসে দাঁড়ায়।
হঠাৎ আরিয়ানের এভাবে সামনে আসায় তিশা কিছুটা হচকিয়ে যায়।'

"মিস্টার আরিয়ান এটা কি ধরনের আচরণ।"

---আচ্ছা খারাপ বুঝি,ওকে!বাট ওটা নিয়ে পরে ডিসকাশন করবো নিই।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন মিস তিশা।

"পথ ছাড়ুন,আর আমি আপনার কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।"

---অবেয়েসলি আপনি বাধ্য।আপনার কোম্পানির ইনভেস্টার আমি,জানার অবশ্যই রাইট আছে আমার।

'তিশা একটু বিরক্ত হয়ে, ওকে ফাইন বলুন কি জানতে চান।'

---আপনার বয়স কতো।

"ওয়াট দা...এটা কেমন প্রশ্ন।তিশা একটু রেগে।এই প্রশ্নের সাথে কোম্পানির কি সম্পর্ক মিস্টার আরিয়ান।"

---আছে বলেই তো জিঙ্গেস করলাম।

"কি?"(তিশা)

---এতো বড় একটা কোম্পানি একটা পিচ্ছি মেয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কারন।

'কোম্পানি আমার হাসবেন্ড জিসান আহমেদ এর।দু'মাস হলো উনি আমাদের ছেড়ে পরকালে চলে গিয়েছেন।তাই উনার অবর্তমানে কোম্পানির ভার আমার কাঁধে এসে পড়েছে।আর আমি চেস্টা করছি সেটা সামলাতে।আপনার আর কোনও প্রশ্ন না থাকলে, সাইড প্লিজ।'
"আর হে আরেকটা কথা,ডোন্ট কল মি "মিস"।
জাস্ট কল মি 'মিসেস তিশা আহমেদ।"

---তিশা চলে যেতে নিলে,আরিয়ান আবার বলে উঠে,
বাট আমিতো আপনাকে মিস তিশাই বলবো।
"তিশা এবার খানিকটা রেগে তাকায় আরিয়ান এর দিকে।"

তিশার এমন তাকানো দেখে আরিয়ান বাকা হেসে বলে--------

"কেউ ভালোবাসার জন্য পাগল মিস তিশা,আর কেউ ভালোবাসা হারিয়ে তার বেদনায় পাগল।"
আপনার নামটিও কি সেই পাগলের দলে সম্মুখীন করতে চান।যার জন্য মিসেস হয়েছেন, যখন সেই নেই তাহলে তো আপনি আবার মিসই হয়ে গেলেন।রাইট।"

---তিশা কিছু বলতে নিবে,তখনই কেবিনে নিলয় এসে হাজির।
'মিস্টার আরিয়ান আপনার কেবিন রেডি।সোম আপনাকে দেখিয়ে দিবে।আই হোপ আপনার পছন্দ হবে।'
"আরিয়ান হেসে মাথা নাড়ালো।ওকে"

--তিশাও রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।মেঝাজ প্রচুর গরম ওর।এই লোকটির সামনে এমনেই থাকা আমার জন্য কতোটা কস্টকর,তা এই লোকটি কখনো বুঝতে পারবে না।
না চাওয়া সত্যেও বার বার আমার চোখ তার উপর পরে।আর এখনতো এই অফিসেই থাকবে।সারাদিন আমার চোখের সামনে থেকে আমার বুকের ব্যাথাটা আরো পাড়াবে।তার উপর এই লোকের অদ্ভুত কথাবর্তা।আর তার শান্ত দৃষ্টির চাওনি।আমাকে একদিন পাগল করে দিবে।
কি মতলোবে এই কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে আল্লাহই জানে।"
___________
                     --- রায়হান বসে আছে নিলয়ের কেবিনে।ও জানতে পাড়ছে আরিয়ান আজ অফিসে জয়েন হয়েছে।মূলত জিসানের চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আরিয়ানকে দেখতে এসেছে।
সবাই যখন আরিয়ানের কথা বলেছে,রায়হানের একদম বিশ্বাস হয়নি।তাইতো নিজ চোখে দেখতে এসেছে।
কিছু কাজের বাহানায় নিলয় আরিয়ানকে নিজের কেবিনে এনে রায়হানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।আরিয়ান খুব পলেয়েটলি রায়হানের সাথে হাত মিলিয়ে সাধারণ কথাবার্তা বলে চলো গেলো।
আর রায়হান এখনো আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কি আশ্চর্য! এটা কোইন্সিডেন্ট নাকি অন্য কিছু।
জিসান চলে যাওয়ার পর জিসানের মতো দেখতে এই ব্যক্তি এখানে আসার কারণ কি?এমনেই কতো কষ্টে তিশাকে সামলিয়েছি।এখন কি হবে,তিশা আবার না ডিপ্রেশনে চলে যায়।আমার এখন তিশাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে।একদিকে অর্ক আরেক দিকে আরিয়ান।কি আছে আমার বোনটির কপালে।বিধাতা কেনো ওর এতো পরীক্ষা নিচ্ছে।

----ভার্সিটির ক্লাশ শেষ করে নিশি, নিলুর সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো,এমন সময় ঝড়ের বেগে একটি ছেলে এসে ওদের পথ আটকালো।ঘটনাটি হঠাৎ হওয়ায় নিশি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলিয়ে ফেলে।
সামনে তাকিয়ে দেখে সেদিনের সেই ছেলেটি,যার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিশির ফোনটা পড়ে গিয়েছিলো।
নিশি কিছুটা বিরক্ত হয়ে,সমস্যা কি?আর এটা কোন ধরনের বিহেভিয়ার।
"কুহু তুমি এমন করছো কেনো।দেখো আমি সব কিছুর জন্য সরি বলছি।প্লিজ মাপ করে দেও।এই দেখো কানও ধরছি।আর চলো এখন আমার সাথে।তোমার সাথে অনেক কথা আছে।"
---ছেলেটি নিশির হাত ধরতে নিলে,নিশি কিছুটা পিছিয়ে যায়।
আরে রে করছেনটা কি।আর কে কুহু?আমি নিশি।
কে আপনি?

'তোমাকে তো আগে দেখেনি।নতুন এসেছো,কোন ইয়ার।(নিলু)'

-ইয়া,ফাস্ট ইয়ার।(ছেলেটি)

'নাম কি?'(নিলু)

"ছেলেটি বিরক্ত হয়ে-কেনো তোমার বান্ধবী বলেনি।কুহু এসব কি,তোমার ফ্রেন্ডসদের কিছু বলোনি আমাদের সম্পর্কে।"

---ওয়াট!কি যা তা বলছো।পাগল নিই।আর তুমি জানো না,সিনিয়ারদের সাথে ভালো করে কথা বলতে হয়।আমরা তোমার সিনিয়ার হই।আর আমি কুহু না,নিশি। মাথার মগজে ডুকিয়ে রাখো।
নিলু চলতো,যতোসব আজাইরা পাবলিক আমার কপালে পরে।"
'নিশি ছেলেটাকে বকতে বকতে কলেজ গেটের বাহির এসে দেখে রায়হান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রায়হানকে দেখে নিশির সব রাগ যেনো হাওয়ায় উড়ে গেলো।
আজ অনেকদিন পর রায়হানের বাইকে বসে আবার শহর গুড়া হবে।ক্লান্ত দুপুরে বাইকে চড়ে রায়হানের পিঠে মাথা রেখে ভালোবাসার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরা যাবে।'
"সুখ নামের পাখিটির জন্য মানুষকে সুদূর যেতে হয় না।প্রিয়জনের সাথে কাটানো ছোট ছোট মুহুর্তগুলোই আপনাকে সুখী করে তুলবে।এটাই সুখী থাকার মন্ত্র।" 

"-কিন্তু দূর থেকে দুটো চোখের মালিকের ব্যাপারটা একদমই সহ্য হলো না।রাগে নিজের হাতের কলমটাকে দু'ভাগ করে ফেললো।
ইটস নট ফেয়ার কুহু।আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার কারণটা তাহলে এটা।এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।মাইন্ড ইট।"
____________
                    ----ষ্টোর রুমের ধূলোবালিতে ফাইল খুঁজতে গিয়ে বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছে তিশা।এতো ফাইলের মাঝে ওর কাজের ফাইলটি কি আজও খুঁজে পাবে কিনা সন্দেহ।
'তিশা আবারো চেষ্টা করলো,কিন্ত ব্যর্থ হলো।'
হঠাৎ ষ্টোর রুমের দরজা লাগাবার শব্দে তিশা আতকে উঠলো।দেখতে যাবে কে এলো এসময় ষ্টোর রুমে, তখনই পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো।
প্রথমে ষ্টোর রুমের দরজাবন্ধ হয়ে যাওয়া,এখন আবার রুমের লাইট নিভে যাওয়ায় তিশার ভয়ে সারা শরীর মনে হয় কাঁপছে। 
কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিঙ্গেস করছে, ক কে?কে আছে এখানে।"

---হাতে করে নিজের মোবাইলটাও আনে নিই,তাহলে তো ফ্লাশলাইট ওন করে দেখতে পারতো আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
'অন্ধকারে তিশার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তবুও হাতড়িয়ে রুমের দরজা খুঁজার চেষ্টা করছে।'
"-হঠাৎ নিজের খুব কাছে কারো উপস্থিতির আভাষ পেলো তিশা।এতে তিশা আরো ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিলে,অচেনা ব্যক্তিটি তিশার মুখ চেপে দেওয়ালের সাথে আটকিয়ে ফেলে।'
"অচেনা ব্যক্তিটি হয়ত অর্ক ভেবে তিশা নিজেকে ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু এতো ধস্তাধস্তি করার পরও অচেনা ব্যক্তিটিকে একচুলও সরাতে পারলো না।"
---একসময় তিশা শান্ত হয়ে যায়,অচেনা ব্যক্তিটি তিশার মুখ চেপে দেওয়ালের সাথে এমন ভাবে আটকে ধরছে যে তিশা কোনও রকম নাড়াচাড়া করতে পারছে না।
"হঠাৎ তিশা নিজের মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস অনুভোব করলো।
তিশার ভয়ে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।তিশার চোখের পানি অচেনা ব্যক্তিটির হাত স্পর্শ করলে,অচেনা তিশার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেলে।"

                         ----তিশা সুযোগ পেয়ে চিৎকার দিতে চাইলে,অচেনা তিশার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠের মাঝে নিয়ে নেয়।আর খুব সোফ্টলি তিশাকে চুমো দিতে থাকে।
"অন্ধকারে তিশা কিছু না দেখলেও,অচেনা ব্যক্তিটির এমন আচরণ মোটেও আসা করেনি।তিশার চোখগুলো বড় হয়ে গেলো।চোখের কোনাদিয়ে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে।অচেনা ব্যক্তিটি তিশার সেই জলটাও খুব যত্নে শুষে নিয়ে নেয়।"
---তিশার মাথাটা হ্যাং করছে,বুঝতে পাড়ছে না কি করে ছুটাবে নিজেকে।
জিসান ছাড়া কাউকে তিশা নিজের কাছেও ঘেষতে দেয়নি কখনো।কিন্তু আজ সেই তিশার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটায় তিশার শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।তিশার অবস্থা বুঝে 'অচেনা 'তিশাকে ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে দুকদম পিছে চলে যায়।

"ছাড়া পেয়ে তিশা দেওয়াল ঘেষে নিচে বসে নিড়বে কাঁদতে থাকে।হঠাৎ ষ্টোর রুমের দরজা খুলার শব্দ পেয়ে তিশা উঠে দেখতে যায়,কে ছিলো এতোক্ষণ এই রুমে।কিন্তু আফসোস তিশা কাউকে দেখতে পেলো না।
তিশা এখনো খুব শোকড এর মধ্য আছে,কে করলো আমার সাথে এমন জগন্য একটা কাজ।কে?

----হঠাৎ তিশার খেয়াল হলো অচেনা ব্যক্তিটি কিছু একটা দিয়েছিলো ওকে।কিন্তু কি?
তাই ষ্টোর রুমে আবার গিয়ে খুঁজতে থাকে, কিন্তু কিছু না পেয়ে কাঁধে হাত দিতে নেয় ব্যাথা করছে বলে।তখনি কাঁধে একটা রুমাল পায়।রুমালটা দেখে তিশা চমকে যায়।আরে এটাই মনে হয়! কিন্তু এখানে কিছু লিখাও আছে---

"এরপর থেকে কোথায়ও একা যেতে দশবার ভাববে।না ভাবলে সমস্যা নেই,আজ যা হলো তা আবার হবে।তবে এবারের থেকে আরো বেশি।তাই মনে থাকে যেনো।আমি এক কথা বারবার বলি না।তোমার ভালোর জন্যই বলছি।প্লিজ সোনা, কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করো।একা একা কোথাও যেওনা।"

---তিশা লিখাটা পড়ে হতোভম্ভ হয়ে গেলো।কে হতে পারে।এমন ভাবে একমাত্র জিসানই আমাকে বলে।তার কথায় যেমন রাগ থাকে তেমন ভালোবাসা, দুটোই থাকে।
এই লিখাটাও এমন।তাহলে কি জিসান!না এটা কিভাবে সম্ভব।চোখে জল আসলেও মুখে কেনো জানি একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে তিশার।
"জিসান আপনি আমার রুহে মিশে আছেন। তাইতো আমার নামটাই যথেষ্ট আমার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য।প্লিজ কাম ব্যাক জিসান।প্লিজ।
তা না হলে আমাকেও নিয়ে যান আপনার দুনিয়ায়।আমি যে আজও আপনাতে মত্ত হতে চাই।
.
.
.
চলবে....................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp