"গভীর চিন্তিতো মুখ নিয়ে দু'জন ব্যক্তি কখন থেকে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।অথচ আজই তার লেট হবার কথা ছিলো।নিশি ও তিশা বসে আছে অফিসের সামনের কোনও এক রেস্টুরেন্ট এ।কাল রাতে আরিয়ানের পাঠানো ভিডিও দেখে তিশার তো ঘুমই হারাম হয়ে গিয়েছে।"
'আর নিশি সে তো নক কামড়াচ্ছে, আর ভাবছে।গভীর ভাবে ভাবছে।মনে হয় সারাজীবন এর ভাবণা আজই সব ভেবে শেষ করে ফেলবে।"
---শয়তান মাইয়া,আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে কি ভাবছিস এখন তুই।তোর কারণে আমি এতোবড় সমস্যায় পড়েছি।এখন বল কি করি।(তিশা)
"নিশি তিশার দিকে তাকিয়ে ---দেখ তিশা,আমার আইডিয়াতে কোনও সমস্যা ছিলো না।আর আমি কি জানতাম ওই আরিয়ান ব্যাটা এতো চালাক।মনে হয় আমাদের জন্যই জাল ফেলে বসেছিলো।কখন তার জালে আটকাবো সেই অপেক্ষায় ছিলো। তাহলে বল এখানে আমার দোষ কি।"
----হারামি তোর আইডিয়ার কারণই এসব হয়েছে।আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো এই আরিয়ান সোজা মানুষ না,একদম ত্যারা প্রকৃতির লোক।তাই আজকের পর থেকে আর কোন উল্টাপাল্টা আইডিয়া দিবি না আমায়,তোর আইডিয়াগুলো তোর কাছেই রাখ।ভবিষ্যৎ এ কাজে লাগবে তোর।এবার যা করার আমিই করবো।
"ওকে।বাট ওই আরিয়ান জোবান এখনো আসছে না কেনো রে।"(নিশি)
---কে জানে,আমি কি তার পি এ নাকি।যে তার সব খবর আমার কাছে থাকবে।আমিতো টেনশনে বাঁচতাছি না,এই আরিয়ান জোবান এর উদ্দেশ্য কি।অফিস ছেড়ে আমাকে এখানে কেনো আসতে বললো।
'দেখা যাক কি হয়,আরে এতো ভয় পাস কেনো।আমি আছি না,আমি আর তুই মিলে কতোজনকে সাইজ করেছি আর এতো কোনও ব্যাপার না।সো ডার্লিং চিল।'
"কিন্তু তিশার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ চিন্তা।কারণ এ কয়েকদিনে তিশা বুঝে গিয়েছে আরিয়ান কি জিনিস।"
ফ্লাশ ব্যাক----
"সেদিন স্টোর রুমের ঘটনার পর থেকেই তিশার ভেতরে একটা সন্দেহ নামক রোগ জন্ম হয়।আর তিশার সন্দেহের তালিকায় যার নামটি ছিলো সে আর কেউ না মিস্টার আরিয়ান।"
---আরিয়ানের অদ্ভুত চাওনি আর তিশার প্রতি অতিরিক্ত কনসারনিং তিশাকে ভীষণ ভাবাতো।অফিসের কোন মেল কর্মচারীর সাথে তিশার কথাবর্তা একদম পছন্দ করতো না আরিয়ান।
তাই একদিন সবাইকে নাকি নিজের কেবিনে ডেকে ওয়ার্নিং ও দিয়েছে।
যার ফলে অফিসের কোন মেল কর্মচারী আমার আশেপাশেও থাকতো না।আমাকে দেখলেই মাথাটা নিচু করে ফেলতো।
শুধু কি তাই আরিয়ান অফিসে আসার পর থেকে অর্ক আমার কেবিনের সামনেও আসতে পারেনি।অনেকবার চেষ্টা করেছে আমার সাথে দেখা করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরত যেতে হয়েছে।এসব কিছু শুধু মাত্র কোইন্সিডেন্ট হতে পারে না।তাহলে!
"এমনেই আরিয়ানকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হতো।এসব জানার পর থেকে সন্দেহের বীজটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।
কেনো জানি মন বলতো আরিয়ানের নামের পিছনে লুকিয়ে থাকা লোকটি আর কেউ না আমার জিসানই।কিন্তু তার দলিল আর লিখিতো প্রমাণ আমাকে কনফিউজড করতো।"
----মন বলতো এটাই জিসান আর প্রমাণ আর দলিল বলতো না এটা জিসান না আরিয়ান।যখন কনফিউজড এ মাথা ঘুড়াচ্ছিলো তখন নিশি একটা আইডিয়া দিলো।
-'নিশির ভাষ্যমতে যদি এই ব্যক্তি জিসান হয় তার স্বভাবগুলোই বলে দিবে সব।কারণ মানুষ চেহারা পাল্টাতে পারে,নামটাও পাল্টাতে পারে কিন্তু স্বভাব বা অভ্যাস বদলাতে পারেনা।'
--তাই আমি নিশির কথামতো ডিটেকটিভ মিশন চালু করলাম।আরিয়ান জোবান এর ছোটখাটো বিষয় গুলো খেয়াল করতে লাগলাম।তার খাবার খাওয়ার স্টাইল, কথা বলার ভঙ্গিমা, সে আর কি কি করে সবই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলাম।
বাট আফসোস তেমন কিছুই পেলাম না।এসব কিছুর চক্করে আমি আরিয়ানের আগে পিছেও কয়েকদিন ঘুরেছি। এই লোকটি মনে মনে আমাকে কেমন মেয়ে ভাবছে আল্লাহই জানে।
"কিন্তু এই লোকটি যে আমার থেকেও দশকদম আগে চলে,তা ভাবতেও পারনি।আমি ভাবলাম শুধু আমি তাকে ফোলও করছি।কিন্তু না! এই ব্যক্তিও আমার গতিবিধি নযরে রেখেছে।কি সাংঘাতিক। "
---আর তা আমি আজকে জানতে পারলাম।আজ অফিস শেষ করে যখন লিফটে উঠে বাটন ক্লিক করতে নিবো আর তখনি ঝড়ের বেগে আরিয়ান কোথা থেকে এসে লিফটে ডুকে গেলো।উনার এহেম কান্ডে আমি কিছুটা শোকড হওয়ার সাথে ভয়ও পেলাম ।
"লিফটে এখন শুধু আমি আর আরিয়ান আছি। আমি আগে আর আরিয়ান আমার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি পিছনে না তাকালেও এতোটুকু বুঝতে পাড়ছি,আরিয়ান যে আমার দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমার আবার খুব অস্বস্তি লাগছে।"
---আরিয়ান এককদম সামনে বেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।আমার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করলো..
"-তো মিস তিশা আমার সম্পর্কে এতো তারাতারি জানা শেষ।নাকি এখনো কিছু বাকি আছে।"
---আমি তড়িৎগতিতে আরিয়ানের দিকে তাকালাম।তার মানে এই লোকদেখি সব জানে।আমি যে এতেদিন তাকে ফোলও করছিলাম।
কিন্তু এর সামনে কিছু প্রকাশ করা যাবে না।তিশা কেমন জাসুস তুই,ভান্ডাফাশ হয়ে গেলো এতো তারাতারি।উফ!গর্দভ কোথাকার।
"তাই আমি যেনেও না জানার ভান করে বললাম,ক ককি জানা শেষ।কি সব বলছেন।"
--- এবার আরিয়ান তিশার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো।আর তিশা সাথে সাথে দু'কদম পিছে চলে গেলো।যার কারণে লিফট এর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো ওর।
"মিস্টার আরিয়ান এ কেমন আচরণ।"
---আরিয়ান আরো দু'কদম তিশার দিকে এগিয়ে তিশার ঠিক কাছে এসে দাঁড়ায়।
"আরিয়ান এতো কাছে আশায় তিশা এখন আরো বেশি অস্বস্তিবোধ করতে লাগে, সাথে খুব বিরক্তও হচ্ছে লিফটা এখনো খুলছে না বলে।এতো সময় তো লাগার কথা না।"
'-কি হলো মিস তিশা কিছু বলছেন না যে।'
"কল মি মিসেস তিশা আহমেদ। আমি আগেও বলেছি।আর আপনি কিসব বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।"
---আজকাল মিস্টার জিসানকে মনে হয় একটু বেশিই মনে করছেন।(আরিয়ান)
"ইভেন ইফ ইউ ডোন্ট নো ইট মিস্টার আরিয়ান।"
সবই তো আমার, তাহলে জানার অধিকারও আমার আছে তাই না।"
"মানে!"(তিশা)
---আরিয়ান একটু বাকা হেসে,আপনি একটু বেশিই বোকা।আসলে বয়সের দোষ।তাইতো আজকাল আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন।শুধু কি চোখে দেখেই মন জুড়াবেন।
আরিয়ান তিশার দু'পাশে হাত রেখে একটু ঝুকে বললো,আপনি চাইলে আমি পুরোটাই আপনার হতে পারি মিস তিশা।আমার কোনও সমস্যা নেই।আমি ওল ওয়েজ ফ্রি আপনার জন্য।
"মিস্টার আরিয়ান আপনি কি জানেন,আপনি যে একটা চিপ মাইন্ডের লোক।আর আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এসব কথা বলার।"
---আরিয়ান এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে...বাহরে! আপনি লুকিয়ে দেখলে দোষ নেই।আর আমি বললেই সমস্যা।
"তিশা কিছু বলতে নিবে আর তখনি লিফট এর দরজা খুলে যায়।তিশা আরিয়ানকে ক্রস করে লিফট থেকে বের হয়ে চলে যেতে নিলে,আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে,-
""মিস তিশা আপনি রাগ করে যখন এভাবে দ্রুতো হাটা ধরেন তখন আপনার সেক্সি কোমড়টা কিন্তু বেশ এট্রাকটিভ লাগে।সেটা কিন্তু আমাকে প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে চুম্বকের মতো।তা কি জানেন""
---আরিয়ানের এমন লাগাম ছাড়া কথায় তিশার মাথাটা গরম হয়ে যায়।ভয়ংকর দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় তিশা।
করিডোরে সাজানো কৃত্রিম একটা ফুলদানি ছিলো সেটা আরিয়ানের ঠিক সামনে আছাড় মারে।
তার মানে হলো,তিশারও মন চাইছে আরিয়ানকে এভাবে আছাড় মারতে।ভাগ্যিস এই পাহাড়ের মতো মানুষটিকে তিশা তুলতে পারবে না বলে বেঁচে গেলো আরিয়ান এই যাত্রায় ।
"তিশা চলে যাওয়ার পর,আরিয়ানও বাকা হেসে শিষ বাজাতে বাজাতে হাটা ধরে পার্কিং এর দিকে।আরিয়ানের কন্ঠে ছিলো ---
""আমি যে কে তোমার
তুমি তা বুঝে নাও,
আমি চিরদিন তোমারি তো থাকবো
তুমি আমার আমি তোমার""
---সেদিন অফিস থেকে আসার পর নিশিকে ফোন করে সব খুলে বলে তিশা।
"নিশিও কিছুটা অবাক!
আরে যাই বলিস না কেনো তিশা, এই আরিয়ান, জিসান ভাই থেকে কিন্তু কোনও অংশে কম না।আমি সেদিন অফিসে দেখেছিলাম তাকে।"
'নিলয় ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।তার আমার সাথে এতো সুন্দর করে কথা বলা।আমাকে বোন বলে ডাকা,এসব দেখে আমার সত্যিই মনে হয় এটাই জিসান ভাইয়া।আর এই পর্যন্ত যা উনি তোর সাথে করেছে,একটু ভেবে দেখ ভাইয়া ছাড়া তোর সাথে এমন করার সাহস কার আছে তাও আবার ভাইয়ার অফিসে।'
---কিন্তু নিশি উনি যদি জিসান হতো তাহলে কেনো এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।আমাকে অন্তত বলতে পারতো।
"তা জানি না,কিন্তু আমাদের সত্যটা জানতে হবে।
---কিভাবে?(তিশা)
"এই আরিয়ান জোবান এর বাড়ী কোথায় রে ।"
---জানি না,কিন্তু অফিসে পেয়ে যাবো ঠিকানা।
"তাহলে ঠিক আছে,কাল উনার বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে সোজা আমার কলেজের সামনে এসে পড়বি।আমরা তার বাড়ী গিয়ে তালাশ করবো।আই হোপ কিছুনা কিছু ক্লু পেয়ে যাবো।
---সত্যিই!কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগছে নিশি।
"আরে আমি আছি না।তুই টেনশন করিস না।ঘুমা এখন।আর আমাকেও ঘুমাতে দে।"
---আর পরের দিন নিশির প্লানিং অনুযায়ী যখন তিশা আর নিশি আরিয়ানের বাড়ীতে লুকিয়ে ঢুকেছিলো।তখন বাড়ীতে লাগানো সি সি টিভি ক্যামেরাতে দুজন ক্যাপচার হয়ে যায়।আর তারই একটা ভিডিও রেকডিং কাল আরিয়ান তিশাকে পাঠায়।যা দেখে তিশার মাথায় বাঁশ পড়ে।
_________
রেস্টুরেন্টে তিশা ও নিশির অপর পাশে বসে আছে আরিয়ান।তিশার দিকে না তাকিয়ে নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-নিশি আপনি এখানে কি করছেন।আমি তো মিস তিশাকে আসতে বলেছি,আপনাকে ইনভাইট করেছি বলে মনে হয় না।
"একচুয়েলি ভাইয়া,হয়েছে কি...।"
---লেট মি ফিনিশ নিশি,আমার কাছে কিন্তু মিস্টার রায়হানের নাম্বারও আছে,আপনি চাইলে ভিডিওটি উনাকে পাঠাতে পারি।উনি মাস্ট বি খুব গর্বিত হবে,উনার বউ আর বোন চোরিচুপি কারো বাড়ীতে প্রবেশ করেছে তা যেনে।
"রায়হানকে ফোন করার কথা শুনে, নিশি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়।আসলে ভাইয়া আমার কিছু জরুরী কাজ আছে,আমি অন্যকোনও দিন আপনাদের সাথে আবার জয়েন হবো কেমন।আজ আসি।"
---নিশি চলে যেতে নিলে তিশা নিশির ব্যাগটা ধরে ফেলে,চোখের ইশারায় নিশিকে বুঝায় বোনরে আমাকে এই দানবটার কাছে একা ফেলে চলে যাস না, প্লিজ।
"নিশিও চোখের ইশারায় বলে,নিজে সামলাবি বলেছিলিনা এখন সামলা।আমি এসবে নেই।বায়।"
---তিশা অসহায় দৃষ্টিতে নিশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
"হঠা আরিয়ানের কর্কশ কন্ঠে তিশা চমকিয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ওরই দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।তিশা সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে,আরিয়ানকে জিঙ্গেস করে এখানে ডাকার কারণ।"
---কিন্তু আরিয়ান কিছু বলতে যেনো নারায,শুধু ওয়েটারকে ডেকে লাঞ্চ অর্ডার করে।
"মিস্টার আরিয়ান কথা বলছেন না কেনো।আমাকে এখানে কেনো ডেকেছেন।"
---আরিয়ান স্থির দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে, লাঞ্চ করার জন্য।
" মানে!মানে কি।আপনি আমাকে লাঞ্চ করার জন্য এখানে এভাবে ডেকেছেন।"
---হুম,কেনো! কোনও সমস্যা।
"অবশ্যই সমস্যা,আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার সাথে বসে লাঞ্চ করবো।নো! নেভার।"
---তিশা উঠে চলে যেতে নিলে,আরিয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,আপনার ভিডিওটা কিন্তু ধারুন হয়েছে মিস তিশা।এটা ভাইরাল হলে রাতারাতি আপনি ফেমাস হয়ে যাবেন।মিডিয়াতো ঝাঁপিয়ে পড়বে।পত্রিকায়,টেলিভিশনে শুধু আপনার খবরই প্রচার করা হবে।জিসান আহমেদ এর ওয়াইফ বলে কথা।
"তিশা রেগে আরিয়ান এর দিকে তাকায়,আপনি আমাকে ব্লাকম্যাল করছেন।"
---যদি আপনি আমার কথা এখন না শুনেন,তাহলে ব্লাকম্যালই। আপনি যা খুশি মনে করতে পারেন।তবে তার আগে বসুন এবং লাঞ্চ করুন।বাকি কথা পড়ে হবে।
"তিশাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান একটু ধমকের সুরে তিশাকে বসতে বললে,তিশাও ভয়ে চুপচাপ বসে পড়ে।
রাগে তিশার গা জ্বলে যাচ্ছে,তাই বির বির করে বলে দুনিয়ার সব হিটলার কি আমার কপালেই পড়ে।"
____________
-----"ক্লাবে আরিয়ানের পাশে বসে আছে অর্ক।হাতে তার ওয়াইন এর গ্লাস।কিন্তু নিজের হাতের গ্লাসের চেয়ে অর্কের আরিয়ানের উপর ধ্যান এখন বেশি।অর্কের হচকচ দেখে নিরবতা ভেঙ্গে আরিয়ানই বলা শুরু করলো,
কিছু বলবেন মিস্টার এ কে।"
'আপনি কি করে জানলেন আমি কিছু বলবো।'
"আরিয়ানে মুখের বাকা হাসিটা এ কে হয়তো খেয়াল করেনি। তাই এসব বলছে।
আমি বোকা নই এ কে।আমার চোখ সামনে থাকলেও আমার আশেপাশে কে কি করছে সবই আমি জানি।কি! বিশ্বাস হচ্ছে না।"
'আমার পিছনে তাকিয়ে দেখুন,একজন বস তার অফিসে কর্মরত একজন সাধারণ কর্মচারীকে কোন এক কারণে বকছে আর মদ গিলছে।আর ব্যাচারা কর্মচারী মাথানত করে সব শুনছে।'
"আমার রাইট সাইডে তাকিয়ে দেখুন কয়েকজন ফ্রেন্ডস মিলে সেলিব্রেশন করছে,তাদের মধ্যে একজন আজ বাবা হয়েছে বলে।আর আপনি তো আমার এতো কাছে বাম সাইডে বসে আছেন।আপনার মানিব্যাগে এখন কেশ কতো টাকা আছে তাও আমার জানা।"
---এ কে একটু ভয় পেলো,এদেখি জিসান থেকে বিপদজনক।
"আপনি বিনা সংকোচে বলতে পারেন এ কে, কি বলতে চান।"
'আপনি অসলেই স্মার্ট মিস্টার আরিয়ান।না বলে পাড়ছি না।আচ্ছা এতো কোম্পানি রেখে আপনার নযর জিসান ইন্ডাস্ট্রির উপরই কেনো পড়লো।যতোটুকু আমি জেনেছি মিস্টার জিসান মারা যাওয়ার পর কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক নেমে গিয়েছিলো।কোম্পানির অবস্থায়ও তেমন ভালোছিলো না।কোম্পানিতে তো তালাই লেগে যেতো যদি না মিঃনিলায় এসে সামলাতো।এমন একটা কোম্পানিতে আপনার এতো ইন্টেরেস্ট কেনো একটু বলবেন।'
---আরিয়ান এবার নিজের হাতের গ্লাসটি টেবিলে রেখে,এ কের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন।
তাহলেতো বলতে হয় এ কে,আমার মতো আপনিও বোকা।আপনার এই ডিলটা অনেক কোম্পানি নিতে চেয়েছিলো,কিন্তু আপনি ওই সব কোম্পানি ছেড়ে এই কোম্পানিকে কেনো চুজ করলেন বলেন তো।
"আমারতো কিছু পারসোনাল রিজেন ছিলো তাই।"
---মিসেস তিশা আহমেদ, রাইট।(আরিয়ান)
এ কে বিষম খেলো,আরিয়ানের কথায়।আপনি কি করে জানেন।
"আরিয়ান এবার এ কের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,জানিতো আমি আরো অনেক কিছু এ কে।বাট আমার আবার আপনার পারসোনাল রিজেন জানার কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।তাই বাদ দিলাম।
কিন্তু আমার একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন।কোম্পানি তো আজ না হয় কাল আমার হয়েই যাবে।কিন্তু এবার মজার বিষয় কি হয়েছে জানেন,কোম্পানির সাথে সাথে কোম্পানির এম ডি কেও এখন আমার চাই।
আর এই আরিয়ান যখন কোনও জিনিসের উপর হাত দেয়,সেই মুহুর্ত থেকে ঐ জিনিসের মালিক হয়ে যায়।তাই আমার জিনিসে নযর দেওয়ার ফল আপনার জন্য হয়তো ভালো হবে না এ কে।আমি জিসান না যে, আপনাকে আরো একটা সুযোগ দিবো।"
---এ কে ভড়কে যায়।আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন মিঃআরিয়ান।
"আমি আপনাকে সাবধান করছি।"
"এ কে রেগে ওখান থেকে চলে যায়।ভেবেছিলো আরিয়ানকে ব্যবহার করবে নিজের কাজ উদ্ধার করতে।কিন্তু এই আরিয়ান দেখি আশিক হয়ে গিয়েছে তিশার।দিনদিন এই মেয়েটার পাল্লা এতো ভারি হয়ে যাচ্ছে যে,ওকে শাস্তি দেওয়ার আশা ছাড়তে হবে ভবিষ্যৎ এ।"
___________
----হঠাৎ আরিয়ানের কাধে হাত রাখলো কেউ।আরিয়ান দেখার আগেই দুজন ব্যক্তি আরিয়ানের দুপাশে বসে পড়লো।
রায়হান আর নিলয়কে দেখে আরিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
"হ্যালো আরিয়ান,কেমন আছেন।"(রায়হান)
---আরিয়ান নিজেকে সামলিয়ে,হাসিমুখে জবাব দিলো, সে ভালো আছে।
'নিলয় দুজনের জন্য ড্রিংকস অর্ডার করতে নিলে,রায়হান বাধা দেয়।'
---সরি নিলয়, আমার জন্য ওনলি সোপ্ট ড্রিংকস চলবে।
'আর ইউ কিডিং মি,তুই বারে বসে সোপ্ট ড্রিংকস খাবি।'
---ভাই তোরতো বউ নেই,তাই জ্বালা বুঝিস না।অকারণে ড্রিংকস করে বাসায় গেলে,বউ খাটে জায়গা দিবে না আজ।একটা ড্রিংকস এর কারনে আমাকে নিশি সাতদিন বিছানায় জায়গা দেয় নি,জানিস।সোফায় ঘুমাতে হয়েছে।
"রায়হানের কথা শুনে নিলয় হাসিতে গড়াগড়ি।"
---আরিয়ানেরও ভীষণ হাসি পেলো,বাট তা প্রকাশ করলো না।"
'সো রায়হান বাড়ীর সবাই কেমন আছে,ভালোতো।'
---হুম,আপাততো ভালো।তবে বাবা খুব টেনশনে থাকে আজকাল।
'কেনো কি হয়েছে।'(নিলয়)
---কি আবার!তিশা!
যার একমাত্র মেয়ে এতো অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গিয়েছে, সে মেয়ের বাবার মনের পরিস্থিতি কেমন হওয়া উচিৎ বলতো।তার উপর তিশার জিসানের কথা মনে পড়লেই যখন তখন ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার কারণে বাবা তিশাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছে।
"হুম, বুঝতে পাড়ছি।কিন্তু কি করার আছে, সবই ভাগ্য।এটার সোলুশন তো কিছুই দেখছি না।"(নিলয়)
---বাবা অনেক ভেবে একটা সোলুশন বের করেছে।এতে তিশা হয়তো জিসানকেও ভুলে যাবে আর তিশার লাইফের গাড়ীও আবার চলে উঠবে।
"রায়হানের এমন কথায় আরিয়ান এবার বিষম খায়,আর চকিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করে।সোলুশন! কি এমন সোলুশন বের করেছেন আপনার বাবা।"
---ও মিস্টার আরিয়ান! আমি আসলে খেয়াল করেনি ,সরি।আসলে আপনি যেখানে বসে আছেন ওটা জিসানের পছন্দের জায়গা।তাই কিছুক্ষণের জন্য তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি জিসান না আরিয়ান।আসলে আপনার আর জিসানের সব কিছু একতো তাই।
"ইটস্ ওকে!এখন বলুন।"
---কি?(রায়হান)
"মিস তিশার জন্য এমন কি সোলুশন বের করা হয়েছে যে, সব ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন।"
---ও ওটা!ওটা তেমন কিছু না।(রায়হান)
"তবুও আমি জানতে চাই।"
---কিন্তু কেনো?ওটা আপনি যেনে কি করবেন।(রায়হান)
"আরিয়ান এবার রাগি কন্ঠে রায়হান কে জিঙ্গেস করলো,রায়হান বলুন প্লিজ।"
---আসলে,বাবা তিশার আবার বিয়ের চিন্তা করছে।বাবার মতে তিশা একবার অন্যকাউকে বিয়ে করলে নিজের অতীত থেকে বের হতে সহয হবে।
নতুন স্বামীর ভালোবাসায় পুরোনও স্বামীকে হারানোর বেদনা ভুলে যাবে।আমার মতে এটাই ঠিক।
"ওয়াট"!(আরিয়ান)
---হুম,এমনকি বাবাতো ছেলেও খুঁজে রেডি করে রেখেছে।তিশার সাথেও খুব শীঘ্রই এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে।আমি আশা করছি তিশা বাবার কথা ফেলবে না এবার।
"ও আচ্ছা এতোতারাতারি ছেলেও রেডি করা হয়ে গিয়েছে।বাহ ভালোতো।বিয়ে আবার!বিয়ে করার স্বাদ একদম মিটিয়ে দেবো ফাজিল মেয়ের।আরিয়ান দাঁতেদাঁত চেপে মনে মনে বলছে।
---তাই নাকি,হলেতো ভালোই হবে।তো ছেলেটা কে শুনি।(নিলয়)
"কে আবার।ডাক্তার নিবিড়।উনিতো এক পায়ে রাজি তিশাকে বিয়ে করতে।মিস্টার আরিয়ান হয়তো নিবিড়কে চিন্তে পারছেন না।না চেনারি কথা।নিবিড় আমার দূর সম্পর্কের ফুফুর ছেলে।ডাক্তার মানুষ, ছেলে হিসেবেও ভালো।আর কি চাই।"
---রাগে আরিয়ানের চেহারা কেমন শক্ত হয়ে গিয়েছে,হাতে রাখা গ্লাশটিকেও চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে।যার ফলে সাথে সাথে আরিয়ানের হাতদিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়ে যায়।
'রায়হান আর নিলয় ব্যাপারটা বুঝেও অবুঝের মতো প্রশ্ন করে,কি হলো মিস্টার আরিয়ান।এনি প্রোবলেম!'
----নো,আই এম পার্ফেক্টলি অলরাইট। আমার কিছু কাজ আছে,আমি আসি।আরিয়ান চলে গেলো।
"আরিয়ান যাওয়ার পর নিলয় আর রায়হান হো হো করে হেসে দিলো।"
---যা বলিস রায়হান, একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস।ব্যাচারার আজ রাতের ঘুম হারাম।
"হুম,নিজেকে খুব চালাক মনে করে শ্যালা।ও যে কলেজের হেডমাস্টার, আমিও ওই একই কলেজের প্রফেসার হয়তো ভুলে গিয়েছে সব ও।
ওর রগে রগে চেনা আমার,আর আমাকেই বোকা বানাতে চেয়েছে।
তাইতো ওর সবচেয়ে দূর্বল জায়গাটাই আঘাত" করেছি,রিয়েকশন না করে যাবে কোথায়।"
---কিন্তু তোর কি মনে হয় ও এখনো শিকার করবে ও আরিয়ান না।
'ও করবে ওর ঘাড়ও করবে।একা একা হিরো সাঝতে চায়,ভুলে গিয়েছে এই গল্পে আমরাও আছি।'
---হুম,তাইতো...এখন কি করবে ও জানিস।
"কি আর করবে,মনে আজ আগুন লেগে গিয়েছে,নিভাতে হলে প্রিয়তমার কাছে এবার ধরা দিতেই হবে।"
---নিলয় আর রায়হান আবার একসাথে হেসে উঠলো।কারণ ওরা যেনে গিয়েছে আরিয়ানই জিসান।তাইতো তিশার বিয়ের মিথ্যা কথা বলে,জিসানকে একটু শায়েস্তা করলো দুবন্ধু মিলে।কারণ ওরা জানে জিসান নিজেকে যতোই শক্তিশালী দাবি করুক না কেনো,এই একটি জায়গায় এসে ও দূর্বল হয়ে যায়।আর আজও হলো।
.
.
.
চলবে.................................................................