ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪৬ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"তিশার মুড অফ,ভীষণ মুড অফ।কেনো?কি কারণে জানা নেই।অফিসের জানালার দিকে মুখ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।দৃষ্টি তার মেঘলা আকাশটার দিকে।
আকাশটা কেমন মেঘে কালো হয়ে আছে,তাইতো সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে আজ।
তিশার মন চাইছে দূরে কোথায়ও ছুটে চলে যেতে কোনও মেঘলা আকাশে।যেখানে থাকবে না কোনও পিছু টান,থাকবে না কোনও কষ্ট।
আচ্ছা এই বৃষ্টিতো সব কিছু ধুয়ে মুছে প্রকৃতিকে অপরুপ সৌন্দর্যে সাঝায়,তাহলে কি এই বৃষ্টি পাড়বে আমার জীবনের কালো মেঘগুলোকে সরিয়ে ফেলতে।   
আজ কেনো জানি বৃষ্টি স্নান করতে মন চাইছে।নিজেকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে ফেলতে মন চাইছে।হয়তো এই বৃষ্টিই পাড়বে আমার কষ্টগুলো দূর করতে।"

---হঠাৎ দরজায় কারো নক করার শব্দে তিশার ধ্যান ভাঙ্গে।নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে বাহিরে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে ভেতরে আসতে বলে।
'কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে নিবিড়।'

---এই সময় নিবিড়কে দেখে তিশা কিছুটা চমকে যায়।
আরে নিবিড় ভাইয়া,আপনি এই সময় এখানে।

'নিবিড় একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,এখানে একটা কাজে এসেছিলাম,ভাবলাম তোমার সাথেও দেখা করে যাই।কেমন আছো তুমি এখন?'

---এই তো আছি।

'সব সময় এমন ডিপ্রেশন জড়ানো কথাবর্তা কেনো বলো তো।'

---তিশা একটু মুচকি হেসে,খুশি হবার মতো কিছু নেই যে জীবনে তাই।

'তো অফিসে সব কেমন চলছে,শুনলাম জিসানের মতো দেখতে কোনও আরিয়ান নামক ব্যক্তি এসেছে।কথাটা কি সত্য।'

---হুম,সত্য।

'তাহলে ও কি জিসান?'

---আরে না ভাইয়া,এই লোকটা একটা বদমাশ টাইপের মানুষ।আমার জিসানের চেহারাটাই মিলে শুধু আর কিছু না।

'ও!..বাট তুমি এতো কনফিডেন্স কিভাবে।'

---ভাইয়া আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন,জিসান আমার ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু ছিলো আর এখনতো আমার হাসবেন্ড ,সেই সুবাদে তাকে আমার থেকে কে ভালো করে চিনবে বলুন।এই ব্যক্তি জিসান হলে সবার আগে আমার কাছেই ধরা খেতো।

'নিবিড় মাথা নাড়িয়ে,রাইট।
মনে মনে নিবিড় একটু খুশিই হলো এটা যেনে।'

                       ---নিজের গাড়ী থেকে নেমে আরিয়ান অফিসের বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে বলতে নিজের কেবিনের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখ পরে তিশার কেবিনের দিকে।
দরজাটা হালকা খোলা ছিলো বলে,স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তিশা ও নিবিড় কিছু একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি করছে।

"নিবিড়কে দেখে আরিয়ান উরফ জিসানের রায়হানের কথাগুলো মনে পরে গেলো।আর তখনি মেঝাজটা সাথে সাথে বিগড়ে গেলো।"
'এই মেয়ে কি সত্যি সত্যি এই নিবিড়কে বিয়ে করে নিবে নি।
আরে কিভাবে বিয়ে করবে,আমি ওর স্বামী এখনো বেঁচে আছি।তাহলে কিসের বিয়ে।
কিন্তু আমি বেঁচে আছি, এটা আমি জানি।তিশাতো জানে না।আমার শ্বাশুর মশাই আমার পিচ্ছি বউটাকে ইমোশনাল ব্লাকম্যাল করে আবার বিয়েটিয়ে না দিয়ে দেয়।না না এ হতে পারেনা।তখন আমার কি হবে।
আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা।যার জন্য এতো কিছু করছি যদি সেই আমার জীবনে না থাকে তাহলে এসব করে লাভ কি?

সব কিছু জাহান্নামে যাক,আগে আমার বউকে আমার কাছে আনতে হবে,যেভাবেই হোক।
আরিয়ান ভাব,কি করবি।আরে ওয়াট আরিয়ান! আমি তো জিসান।হে আমি জিসান।উফ!আমার মাথাটা মনে হয় গেছে।
জিসান নিজের সাথে বির বির করে বলতে বলতে নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছিলো আর তখনি নিলয়ের সাথে আচানক ধাক্কা লাগে।"

---নিলয় নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে,কেমন টেনশড মনে হচ্ছে।
'আর ইউ ওকে মিস্টার আরিয়ান।'

"আরিয়ান একটু বিরক্ত চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
ইয়া, আই এম অল রাইট।আমার আবার কি হবে।"

'ওকে!বলে নিলয় একটু মুচকি হাসলো।'

---নিবিড়কে সাথে নিয়ে তিশা কেবিন থেকে মাত্র বের হলো।
নিলয় তা দেখতে পেয়ে তিশাকে একটু জোড়েই পিছন থেকে ডাক দেয় জাতে আরিয়ান শুনতে পায়।

"তিশা নামটি শুনে আরিয়ানও পিছনে তাকায়।"

---কোথায় যাচ্ছো তিশা।(নিলয়)

'এইতো নিবিড় ভাইয়ার সাথে লাঞ্চ করতে একটু বাহিরে।'
---ওকে, লাঞ্চ করে তারাতারি চলে এসো,একটা প্রজেক্ট নিয়ে কিছু ডিশকাশন করার ছিলো তোমার সাথে।

"ওকে...বলে তিশা নিবিড়ের সাথে চলে গেলো।একবার পিছনে তাকালে হয়তো বুঝতে পাড়তো একজোড়া রক্তিম চোখ ওকেই দেখছে।শুধু দেখছে না জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।"
_______________

                   --- তিশা কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছে।রাগে একপ্রকার শরীর জ্বলছে ওর।তখন নিবিড়ের সাথে লাঞ্চ করতে গিয়ে তারাতারি ফিরে আসতে হয়েছে।কারণটা ছিলো আরিয়ান।
আরিয়ান ফোন করে তিশাকে দশ মিনিটের মধ্যে অফিসে হাজির হওয়ার ফরমাশ জারি করেছে।অগত্যা তিশাকে না চাওয়া সত্যেও নিবিড়কে সরি বলে অফিসে হাজির হতে হয়েছে।তিশার খুব রাগ উঠলেও আপাততো এখন চুপ থাকাটা ভালো মনে করছে।
কারণ শুধু শুধু নতুন কোনও ঝামেলায় জড়াতে চায়না তিশা।তাই চুপচাপ নিজের কাজ করছে।
"কিছুক্ষণ পর নিলয় আর আরিয়ান তিশার কেবিনে আসে প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে।আলোচনার একপর্যায় জানা যায় ওদের ঢাকার বাহিরের ফ্যাক্টরিতে অনেকদিন ধরে কিছু সমস্যা চলছে।সমস্যা গুলো এতোদিন চোখে না পড়লেও এখন সোলভ না করে উপায় নেই।যতো তারাতারি সম্ভব কাউকে না কাউকে ওখানে যেতেই হবে।তাই তারা ডিসাইড করবে কে যাবে তখনি কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করলো নিশি।"

               --- নিশিকে দেখেই তিশা অবাক,তিশা ভাবতে লাগলো আজ কি সারপ্রাইজ দিন। সবাই দেখি সারপ্রাইজ দিতে চলে আসছে।
আরে নিশি তুই এখানে....তিশা আর বলতে পারলো না।

'নিশি এতোটাই রেগে ছিলো যে ডানেবামে না থাকিয়ে তিশার উপর চওড়া হয়ে গেলো।
-তিশা তুই আর আহমেদ ভিলায় যাবিনা।যেখানে তোর সম্মান নেই সেখানে থাকার মানে হয় না।তুই অফিস শেষ করে আমাদের বাসায় চলে আসবি।আমার ভাই বেঁচে না থাকলেও তোর ভাই কিন্তু এখনো বেঁচে আছে ভুলে যাস না।'

"নিশি রিলেক্স,তুই যা আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো এই বিষয়।"(তিশা)

---পরে কেনো,আর তোর সমস্যা টা কি বলতো।তোকে জাতে কেউ কিছু বলতে না পারে, তাইতো ভাইয়া তার সব কিছু তোকে দিয়ে গিয়েছে, তবুও কেনো তুই ওখানে পরে থেকে ওসব চিপ মানুষের কথা শুনিস।

"নিশি বড়দের সমন্ধে এসব কথা বলতে হয় না,আর তোকে এসব বলছে টা কে শুনি।"

---তুই বলবি না বলে কি,সবাই নিজের মুখে কি কুলুপ দিয়ে রাখবে মনে করেছিস।আর মামীর সাহস কি করে হলো তোকে....তিশা আর কিছু বলতে দিলো না নিশিকে টেনে কেবিনের বাহিরে নিয়ে গেলো।

'-নিলয় আর আরিয়ান দু'জন খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।নিলয় ব্যাপারটা তেমন না বুঝলেও আরিয়ানের বুঝতে বাকি রইলো না বাসায় কিছু একটা হয়েছে।
মামীরা হয়তো আবার তিশাকে কিছু একটা বলেছে,যার কারণে তিশা আবার খুব হার্ট হয়েছে।তাইতো সকাল থেকেই তিশা অনেক আপসেট ছিলো।'
" কখন কি বলতে হয় এসব কি এখন তোকে বলে দিতে হবে নিশি।"

-'কি করেছি আমি।'(নিশি)

---কেবিনে নিলয়, আরিয়ান ছিলো সেটা দেখেছিস।রাগের মাথায় কতো কিছু বলে দিলি।নিশি এটা আমাদের পরিবারের বিষয় আমি চাইনা এসব কেউ বাহিরের মানুষের কানে পৌঁছাক।(তিশা)

"সরি রে,খেয়াল করিনি।কিন্তু তুই কেনো মামীদের কথার কোনও উত্তর দিলিনা বলতো।ভাই নেই বলে এদের এতো সাহস বেড়েছে।ভাই থাকলে আহমেদ ভিলায় আসার সাহসও পেতো না। 
বড় হয়েছে তো কি হয়েছে তাই বলে কি এদের যা মন চাইবে তাই বলবে।আর মা! আমিতো খুব অবাক হলাম মা কেনো একটিবার প্রতিবাদ করলো না।আর কেউ যেহেতু কিছু বলেনি অত্যন্ত নিজের জন্য তুইতো কিছু বলতে পাড়তি চুপ না থেকে।"

---কি বলবো? তারা খারাপ কিছুতো বলেনি,এটাতো সত্যই আমি অপয়া, অলক্ষি।তাইতো বিয়ের তিন-চার মাসেই নিজের স্বামীকে খেয়ে ফেললাম।আমার কারনেই তো জিসান আজ আমাদের মাঝে নেই।সত্যি বলতে এসব কিছু আমার কারনেই হয়েছে।আমি জিসানের জীবনে একটা অভিশাপে পরিণত হয়েছিলাম।তাইতো আমার কারণে বার বার উনার লাইফে এতো ঝামেলা হতো।আমি না থাকলে জিসান হয়তো আজ আমাদের মাঝে বেঁচেও থাকতো।
আর কি বললি মায়ের কথা। খবরদার মা সম্পর্কে একটাও উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।জানিসই তো মা আগের মতো নেই।একদম চুপচাপ হয়েগিয়েছে।

'নিশির হাতটা ধরে তিশা,দেখ নিশি আমার কপালে সুখ নেই,তাইতো আমার সাথে এমন হয়েছে।নিজের দোষের বোঝা আমিতো অন্যের ঘাড়ে ফেলতে পারিনা,তাই না।'

"স্টোপ তিশা কিসব বলছিস।আরে জন্ম মৃত্য তো উপরওয়ালার হাতে এখানে তোর কি করার আছে।তাই এসব নোনসেনস্ কথাবর্তা একদম আমার সামনে করবি না।চড় মেড়ে দাঁত ফেলে দেবো।"

'কি?আমি কিন্তু তোর ভাবী হই,সম্পর্কে।ভুলে যাস না।'

---তাহলে আমি কি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি।আমিও তো সম্পর্কে তোর ভাবী হই।অবশ্যই আমার অধিকার আছে তোকে মারার।(নিশি)
"ওকে আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ,আর আমার একমাত্র ভাবী।এখন আপনি একটু শান্ত হোন।আর বাড়ীর এসব নিয়ে তোকে একদমই ভাবতে হবে না।আমি সামলিয়ে নিবো সব।তুই এখন বাসায় চলে যা আমি পড়ে তোর সাথে দেখা করবো নি। ওকে.."।

_________________

                            ---তিশা ও নিশির সব কথা জিসান আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে।আগের সেই পুরানো রাগটা আবার যেনো মাথায় চড়ে উঠলো।
কিন্তু আজ জিসানের রাগটা উঠছে এখন নিজের পরিবারের উপর।তিশাকে কেউ ওরই পরিবারের সামনে অপমান করার সাহস পেলো কিভাবে।নাকি ও বেঁচে নেই যেনে,তিশাকেও এখন তাদের আপন মনে হয় না।তাহলে কি এটাই সত্য স্বামী না থাকলে শ্বশুর বাড়ীর সাবাই ও তখন পর হয়ে যায়।আমার পরিবারও কি তিশার সাথে এমন করছে।
'-এসব ভাবণার মাঝে হঠাৎ জিসানের ফোনটা বেজে উঠলো,জিসান ফোনটা রিসিভ করে,
হ্যালো সোম বলো,কি খবর।
---------------
---------------
সোম আমার অর্ককে লাগবে না।অর্কতো হাতের মুঠায় আছে।যখন তখন ওর গলা চেপে ধরতে পাড়বো,আর এবার ওর পালাবার পথও আমি খোলা রাখবো না।
আমার তো অর্কের পিছনে লুকিয়ে থেকে আঘাত করার ঐ ব্যক্তিটি কে লাগবে যে এসব করছে।ওই অচেনা ব্যক্তিটির জন্যইতো এতো আয়োজন।আজ আমি জীবিত থেকেও সবার নিকট মৃতো। 
-------------
-------------
ওকে,কিছু জানলে আমাকে জানাবে।খুব সাবধানে কাজটা করবে।কেউ জাতে জানতে না পারে।জিসান ফোনটা কেটে পকেটে রেখে ভাবনায় ডুব দিলো,

             --- হুম,অর্কের সাথে আরো এক ব্যক্তি আছে যে লুকিয়ে থেকে আঘাত করছে।ওই ব্যক্তির ইশারাই জিসানকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে।
অর্কতো জাস্ট একটা মোহরা। কলের কাঠিতো সেই অচেনা মানুষটির হাতে।কে সে জিসান জানে না।উদ্দেশ্য কি তার।অর্ক না হয় তিশা আর আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এসব করছে।কিন্তু এই অচেনা ব্যক্তিটি কি চায়।আর কে?

"সবাই জানে তিশা চারবার সুসাইড করার চেষ্টা করেছে,কিন্তু এটা কেউ জানে না।এতো বছর পর অর্ককে নিজের সামনে দেখে তিশা নিজেকে সামলাতে পারেনি।
রায়হান নিলয় থেকে খবর পেয়ে তিশাকে দেখতে আহমেদ ভিলায় আসে। আর তিশাকে সামলানোর চেষ্টাও করেছিলো।তিশার মনে সাহস জাগাবারও চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু তিশার সাথে একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনায় তিশা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, চেষ্টা করেও সামলাতে পারছিলো না।তার উপর অর্কের প্রতি ওর ভয়টা আবার মাথায় চড়ে বসেছিলো।প্রচণ্ড ডিপ্রেশনের কারণে
সেদিন রাতে রায়হান চলে যাওয়ার পর তিশা আবার সুসাইড করার চেষ্টা করে।

"আর তখনি অন্ধকার ঘরে চাঁদের আবছা আলোয় একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পায় তিশা।নিজের ভ্রম মনে করে তেমন পাত্তা দেয়না তখন।কিন্তু যখনি ছুড়িটা হাতে চালাতে নেয় তখনি রুমের একটা ভারী ফুলদানি পড়ে ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়।তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই শব্দ শুনে ঝর্ণা রুমে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো।"

----ঝর্ণার রুমটা তিশার রুমের সাথে,তাই এতোরাতে কিছুপড়ার শব্দ পেয়ে তিশার রুমে ছুটে আসে কি হয়েছে জানতে'।
তিশা ঝর্ণাকে দেখে হাতের ছুড়িটা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করে,কিন্তু সরানোর আগেই ঝর্ণা তা দেখে ফেলে।ঝর্ণা সে বিষয় কিছু না বলে তিশাকে জিঙ্গেস করে ফুলদানিটা ভাঙ্গলো কিভাবে ভাবী।"

---তিশা মিথ্যা বলে হাত লেগে পড়ে গিয়েছে।

"ঝর্ণা বুঝতে পারে তিশা আজ আবার নরমাল বিহেভ করছে না।আর এতোরাতে জেগে থাকার কারণ এখনো হয়তো ওষুধ খায়নি তিশা।
তাই ঝর্ণা নিজের হাতে একটা ঘুমের ওষুধ নিয়ে তিশাকে খাইয়ে দেয় জোড় করে।আজকাল এই ঘুমের ওষুধই তিশার একমাত্র সঙ্গি।তিশার মাইন্ডকে ফ্রেশ রাখার জন্য,আর কোনও উল্টাপাল্টা ভাবনায় নিজেকে যাতে জোড়াতে না পারে তাই ডাক্তার ওকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে।"

----কিন্তু তিশা জানতো না,প্রতিরাত যখন ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো তখন কেউ একজন পরম যত্নে ওকে বুকে টেনে নিতো।তিশা সারারাত জিসানের বুকে মাথারেখে ঘুমিয়ে থাকতো। অথচও এই বিষয় একদমই অবগতো নয় তিশা।ভোর হলে তিশা উঠার আগেই জিসান চলে যেতো।জিসান চেয়েছিলো আড়ালে থেকে নিজের সব শত্রুদের শায়েস্তা করবে।তাইতো এতোসব প্লান।কিন্তু জিসান বুঝতে পারেনি এসবের কারণে যে তিশা এতোটা ভেঙ্গে পড়বে।

"তিশার অফিস জয়েন হবার পর যখন অর্ক সামনে আসলো,তখন কিছুক্ষণের জন্য জিসান অর্ককেই ম্যান কালপিট ভেবেছিলো।কিন্তু জিসান তার সোর্স লাগিয়ে গোপন সূত্রে জানতে পারে,অর্ক একা নয় এই খেলায়।আরো একজন আছে, কিন্তু এই আরো একজনটা কে।
জিসানের ধারনা সে ব্যক্তি অবশ্যই আমাদের চেনাজানা হবে।আর আমাদের আশেপাশেই হয়তো ঘুড়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছিনা।
'অর্কের আচানক সামনে আসা, তিশার উপর হামলা,আর তিশার বার বার সুসাইড করার কারণে জিসানকেও সামনে আসতে হয়েছে আরিয়ান হয়ে।
জিসান চেনে না ওর শত্রুকে,তাইতো আরিয়ানের পিছনে লুকিয়ে থাকা জিসানকে প্রকাশ করছে না কারো কাছে আর না বলতে পাড়ছে কাউকে ওর আসল পরিচয়।"
---এছাড়া জিসান বুঝতে পাড়ছে যে নিলয় আর রায়হান যে ওকে সন্দেহ করছে।একচুয়েলি সন্দেহ কি,ওরা উঠে পড়ে লেগেছে আরিয়ানকে জিসান প্রমান করাতে।কিন্তু রায়হান আর নিলয়কে বলার মতো সময় হয়নি এখনো।তাইতো তাদের যতোটা পাড়ছে ইগনোর করার চেস্টা করছে।অচেনা ব্যক্তিটি কে তা না জানা পর্যন্ত কাউকেই বলা যাবে না,নিজের আসল পরিচয়।এতে সবার লাইফই রিস্কের উপর থাকবে।আর ঐ আচেনা ব্যক্তিটিকেও আর ধরা যাবে না।
______________

                 ---আরিয়ান আহমেদ ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আজ অনেকদিন পর নিজের কাছের মানুষগুলো দেখতে পাবে ভেবেই চোখের কোনায় জল চলে এসেছে জিসানের।কিন্তু প্রিয়জনদের দেখে দূর্বল হলে চলবে না,তাই সানগ্লাসটা লাগিয়ে নিলো চোখের জলটাকে লুকানোর জন্য।।
দারোয়ান গেটখুলে দেওয়ায় আরিয়ান গাড়ী নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

"শোফায় বসে আছে আরিয়ান,আর তারই সামনে বসে আছে তৌফিক সাহেব ও মিসেস রাবেয়া।আরিয়ানকে দেখে জিসানের কথা মনে পড়ে গেলো সবার।
বাড়ীর সবাই আরিয়ান সম্পর্কে আগেই জেনেছিলো।তাই কেউ অতোটা রিয়েক্ট না করলেও নিজের আবেগটাকে সামলাতে পারেনি মিসেস রাবেয়া,মা বলে কথা।
'তাওহিদ কখন থেকে মাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।আরিয়ান আসবে বলে,তাওহিদও আজ হাসপাতালে যায়নি।নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখতে এই লোকটিকে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি হয়তো।"

---আরিয়ান স্থির হয়ে বসে মাকে দেখছে,খুব কষ্ট হচ্ছে ওর নিজেরও।কিন্তু এই মুহুর্তে ওকে দূর্বল হলে চলবে না।নিজের লক্ষ্যের অনেক কাছে চলে এসেছে।তাই নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো---
আন্টি আমিওতো আপনার ছেলের মতো।শুধু নামটাই আলাদা।কিন্তু আমিও মানুষ,আমাকেও আপনার মতো কোনও মাই জন্ম দিয়েছে।রাবেয়া বেগমের কাছে এসে হাটুতে ভাজ করে বসে আরিয়ান।
মনে করে নিন আমিই জিসান।হয়তো আল্লাহ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আপনার মতো মায়ের ভালোবাসা পেতে।এতে আপনিও একটা ছেলে পাবেন আর আমিও একটা মা।কি বলেন আন্টি হবেন কি আমার মা।"

'রাবেয়া বেগম নিজেকে আর সামলাতে পাড়লো না।আরিয়ান নামের পিছনে লুকানো জিসানকে বুকে টেনে নিলো রাবেয়া বেগম।এতোদিন পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে আরিয়ানের চোখেও জল এসে পড়েছে,তবে সেটা গড়িয়ে পড়ার আগেই সবার আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে।'

              ---তিশা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে এসব কিছুই দেখছিলো।আরিয়ানের লুকিয়ে ফেলা চোখের জলটাও দেখে ফেললো।আরিয়ান নামের ব্যক্তিটি তিশার জন্য কেমন জানি রহস্যে ঘেরা একটা ছায়া।
যা তিশার আশেপাশে থাকলেও তিশা তার আসল চেহারা দেখতে চাইলে দেখতে পায় না,ধরতে নিলে লুকিয়ে যায়।ছেড়ে দিলে কাছে টানতে চায়।
মিস্টার আরিয়ান আপনি আমার জন্য দিনদিন মিস্ট্রিম্যান হয়ে যাচ্ছেন।
তিশা মনে মনে এসব চিন্তা করেই যাচ্ছে।

"তিশা ও আরিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে বসলো।তিশা গাড়ীর পিছনে গিয়ে বসলে আরিয়ান লুকিং গ্লাশে তাকিয়ে তিশাকে সামনে আসতে বললো।
মিস তিশা আমি কিন্তু আপনার ড্রাইভার না।তাই প্লিজ সামনে এসে বসুন।"
---তাহলে ড্রাইভার কেনো আনলেন না শুনি।
"আমি গাড়ী নিজে চালাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাই।"
---কিন্তু আপনার সাথে যে যাবে তারও তো ভালোমন্দ বোঝা উচিৎ আপনার। তাই না।
"মিস তিশা বড্ড বেশি কথা বলেন আপনি।মিস্টার জিসান আপনাকে কিভাবে যে টলেরেট করতো আল্লাহই জানে।আপনি কি সামনে আসবেন।নাকি আমি কোলে করে আনবো।তখন কিন্তু আপনার আবার ভালো লাগবে না।"
---অসভ্য লোক কোথাকার,তিশা বির বির করে বলতে বলতে সামনে গিয়ে বসলো।আরিয়ানও বাকা হেসে গাড়ীটা স্টার্ট দিলো।
"জিসানের মনে চলছে অনেক প্লান।জান,এসে পড়েছিস আমার খাঁচায় আবার।যাবে এখন কোথায়।বন্দি তোরে এবার এমন ভাবে করবো দূরে গিয়েও কাছে থাকবি।অস্থিত্বে মিশে যাবি একেবারে।"

                          ---গাড়ী চলছে তার আপন গতিতে,লক্ষ্য তাদের খাগড়াছড়ি। কয়েকমাস আগে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়ায় একটা সুতোর ফ্যাক্টরি কিনেছিলো জিসান।আশ্চর্য বিষয় হলো এই সুতা কোনও সাধারণ সুতা নয়,কারণ এটি তৈরি হয় কলাগাছের বাকল দিয়ে।খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকা,আর তাই এখানে সারাবছর কলা উৎপাদন করা হয়।কলা নেওয়ার পর পরিত্যক্ত গাছগুলো ফেলে দেওয়া হতো।কিন্তু এখন এটাকে কাজে লাগিয়ে সুতা তৈরি করা হয়,যাকে বলে কলা সুতা।
তবে এটাতে শুধু কলার বাকলটাই ব্যবহার করা হয় আর অবশিষ্ট অংশদিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়।আমরা কাল অফিসে এই নিয়েই আলোচনা করেছিলাম।ব্যাপারটা আমার জন্য একদম নতুন ছিলো।তাইতো বলি সাহেব আমার শহর রেখে গ্রামে কেনো গেলো ফ্যাক্টরি কিনতে।
উৎপাদিত এই পণ্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরেও রফতানি করা হয়।তবে সব থেকে ভালো যা হলো--- 
এই শিল্প আর ফ্যাক্টরির কারণে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হওয়ায় বেকারত্ব অনেক কমেছে।আর এই উৎপাদিত সুতা খুব চওড়া দামে বিক্রি করা হয় এখানে।
তবে উৎপাদনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এখানকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ এর কারণে উৎপাদনে ধীর গতি চলে।আর এই সমস্যার কারণে শ্রমিকের মজুরি ও কমে যায়।কারণ প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে একজন শ্রমিক পান ১৩টাকা।প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫০কেজি সুতা উৎপাদন করতে পারে।কিন্তু লোডশেডিং এর কারণে তা সম্ভব হয় না।কোনও কোনও দিনতো একজন শ্রমিক ৩০০ টাকাও আয় করতে পারেনা।যার কারণে শ্রমিকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কাজের প্রতি।
এখানকার এসব সমস্যা গুলো সমাধান করার জন্যই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।আমাকে নিলয় একা কিছুতেই আসতে দেবে না বলে,ডিসাইড হলো আরিয়ানও যাবে আমার সাথে।সোমও নেই,হঠাৎ কি হলো কে জানে।ও আমাকে একা রেখে ছুটিতে চলে গেলো।আর নিলয় এ কের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত তাই বাধ্য হয়ে এই আরিয়ানের সাথেই আসতে হলো আমাকে।

________________

"কলেজের ক্যাম্পাসে নিশি,নিলু আর ওদের কয়েকজন ফ্রেন্ডস মিলে বসে বাদাম খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।আজ আর কোনও ক্লাশ নেই বলে।"

---ঠিক ওই সময় ভূতের মতো অচেনা ছেলেটি হাজির হয়। আর নিশির হাতটা ধরে সবার সামনে থেকে টানতে টানতে কলেজ গেটের বাহিরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
"নিশি নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করতে লাগে,আর চিল্লাতে থাকে।"
'-ওই ফাজিল ছেলে ছাড় আমায়।তোর সাহস হলো কি করে আমাকে ধরার।আরে পাবনার পাগল কতোবার বলেছি আমি তোর কুহুনা।কালা নাকি।বয়ড়ার গুষ্ঠি ছাড় আমায়।'

---নিলুও পিছন পিছন ছুটছে নিশির।

"হঠাৎ অচেনা ছেলেটির একবন্ধু এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।আশিষ কি কিরছিস ছাড় উনাকে।তোর মাথা খারাপ হয়েগিয়েছে।জানিস উনি কে?ছাড় প্লিজ ভাই।"

---সাহেদ পথ ছাড় আমার, এমনেই আমার মাথা গরম।তুই দেখিসনি ওকে কতোদিন ধরে বুঝাচ্ছি, সরিও বলেছি।কিন্তু না বারবার আমাকে ইগনোর করেই যাচ্ছে।আজ ওকে বলতেই হবে কেনো।কি দোষ আমার।

"ভাই,ও তোর কুহু না"।(সাহেদ)

'ওই বয়ড়া আমি তোর কথা কেনো শুনবো।আরে ভাই আমি তোর কুহু না।আমি নিশি।আরে বয়সে ক্লাশে তোর থেকে বড় আমি।'

---চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বললে এখানেই মেরে ফেলবো।(আশিষ) 

---ধমকটা এতো জোড়েই ছিলো যে নিশিও ভয় পেয়ে গেলো।

'সাহেদকে সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিশিকে টেনে গাড়ীতে তুলতে নিলে,কেউ একজন এসে বাধা দেয়।
আশিষ কিছু বুঝে উঠার আগেই কারো ভারী হাত আশিষের গালে পড়ে।আর আশিষ ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।'

---এতো ভালো একটা কাজ কে করেছে দেখতে নিশি পিছনে ঘুড়লে ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।কারণ সামনে স্বয়ং রায়হান দাঁড়িয়ে আছে।অগ্নি চোখে নিশির দিকে তাকালে নিশিতো ভয়ে জ্ঞান হরাবার উপক্রম।

'রায়হান এমনে খুব শান্তশিষ্ট কিন্তু রাগলে অনেকটা ভয়ংকর হয়ে যায়।ও রাগের মাথায় কিছু করেনা সহযে।কিন্তু রাগ উঠলে কাউকে ছাড়ে না।এতোক্ষণে পুরো ক্যাম্পাসে ভিড় জমে গিয়েছে।'

---খবর পেয়ে কিছু সিনিয়রও চলে আসে দেখতে,তবে রায়হানকে দেখেই চুপ হয়ে যায় সবাই।কারণ রায়হানকে ওরা খুব ভালো করে চিনে।ওদের বড়ভাইদের মুখে রায়হান এবং জিসানের অনেক কর্মকাণ্ডের কাহিনী শুনেছে।
এরা ভার্সিটি লাইফে কাউকে ভয় পেতো না।অনেক আগে এই কলেজের কয়েকটা ছেলেকে রায়হান আর জিসান মিলে অনেক মেরেছে।কিন্তু কি কারণে কেউ জানেনা।ভয়ে কেউ জিঙ্গেস করার সাহসও পায়নি সেদিন।

"রায়হান আশিষকে টেনে দাঁড় করালো।আশিষের শার্টের কলারটা ঠিক করতে করতে শান্তভাবে বললো---
আজ যা করেছো তা দ্বিতীয়বার করার সাহস করোনা।মনে রেখো আমি বারবার মাপ করিনা।
আর তুমিতো এখনো বাচ্চা আমার সামনে।তাই প্রথমবার মনে করে মাপ করেদিলাম।কিন্তু মনে রেখো বাচ্চা যখন অবাধ্য হয়ে যায়,আর বাপের সাথে বেয়াদবি করে।তখন বাচ্চাকে শিক্ষার জন্য বাপকেও অন্যপথ বেছে নিতে হয়।আর আমার অন্যপথটা তোমার জন্য মোটেও ভালো হবেনা।তাই সাবধান! আমার পুরানো রেকর্ড কিন্তু ভালো না।"

---রায়হান যে আশিষকে শান্তমাথায় হুমকি দিয়ে সাবধান করছে,তা সিনিয়ারদের বুঝতে বাকি রইলো না।তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে,সিনিয়ারদের মধ্যে একজন বলে উঠলো--
ভাই,ভিড় জমে গিয়েছে।আপনি ভাবীকে নিয়ে চলে যান।আমরা বাকিটা দেখছি।

"রায়হান একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে,নিশির হাত ধরে বাইকে বসালো।"
'নিশি ব্যাচারী এখনো ভয়ে কথা বলতে পাড়ছে না।আল্লাহই জানে এই যমরাজ আমায় বাসায় নিয়ে আজ কি করে।আল্লাহ বাঁচাও।'
.
.
.
চলবে...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp