"আকাশে ভিড় জমাচ্ছে ঘন কালো মেঘের দল।বৃষ্টিরা আসছে হওয়ার আঁচল উড়িয়ে।জলছবির আড়ালে কেউ কেউ হয়তো নিজের স্বপ্নগুলো বুনছে আপন মনে প্রিয়জনের সাথে।আর আমার স্বপ্নগুলো!দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়ে তিশা।
যাকে গিড়ে দেখিছি তাকে যে পেয়েও যেনো পেলাম না।
আমার দিনগুলো কেটে যায় উদাসীনতায়,আর নির্ঘুম রাতগুলো কাটে শুধু তারই ভাবণায়।সে কখনো আসবে না যেনে তবুও কেনো এই চোখদুটোও তাকেই খুঁজে।শেষ যেনো হয়না এই অন্তহীন খোঁজার প্রহর।গাড়ীর জানালায় মাথা ঠেকিয়ে কিসব অদ্ভুত চিন্তা গুলো ঘর বাধছে তিশার মনের কোনায় আজ।"
--- চোখদুটোতেও ঘনকালো মেঘ জমে এসেছে,যেকোনও সময় হয়তো বর্ষণ হয়ে ঝড়ে পড়বে।
জিসান লুকিং গ্লাশ দিয়ে আড়চোখে সব দেখছে।তিশার না বলা প্রতিটি কথা জিসান অনুভোব করতে পারে।তিশাকে কষ্ট পেতে দেখলে,জিসান যে নিজেও বেঁচে থেকে মরে যায়।
এই মেয়েটিকে কিভাবে বুঝাবে জিসান।ওর এই উদাসীন চেহারা,ছলছল চোখ যে আমায় ভীষণ পোড়ায়।ভীষণ ভাবে!
"তিশার মানসিক অবস্থা তেমন ভালো না,দু'দিন আগে যখন জিসান রাতে তিশার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো লুকিয়ে,তখন তিশার অবস্থা দেখে জিসান নিজেই আতকে উঠে।
কারণ তিশা ঘুমের মধ্যই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে।ঘুমের ওষুধের কারণে তিশার শরীরটা হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
কিন্তু মন!মনকে হয়তো তিশা ঘুমের মধ্যেও শান্ত করতে পারছে না।
জিসান গিয়ে সাথে সাথে তিশাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।জিসানের শরীরের উষ্ণ তাপে তিশা একদম শান্ত হয়ে যায় কিছুক্ষণ পর।
তিশার এই অবস্থা দেখে জিসানের নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে।সাথে এটা ভেবে সুখও লাগছে যে, এই মেয়েটা ওকে কতোটা ভালোবাসে।"
তিশাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিসান।
---সরি জান,অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে।আর না,আর তোকে কোনও কষ্ট পেতে দেবো না।আমি তোর সব কষ্টগুলো সুখে পরিণত করবো এবার থেকে।'
আর সেদিন জিসান নিজের সাথে নিজেই এক ওয়াদা করে তিশাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলার।
-তা না হলে দেখা যাবে নিজের শত্রুদের দমন করতে গিয়ে না আবার নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলে চিরোতরে।
তাই জিসান প্লান করলো তিশাকে এখান থেকে দূরে কোথাও কিছুুদিনের জন্য নিয়ে যাবে।
হয়তো এই সফর তিশার জীবনের সব কষ্ট দূর করে তিশাকে আবার আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য করে তুলবে।
"জিসান তাই মিথ্যা বলে তিশাকে নিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়িতে।'
-তবে সব মিথ্যা না,এখানে জিসানের একটা প্রজেক্ট আছে,তবে তার একার না।পার্টনারশিপে এই প্রজেক্টার সাথে জড়িত জিসান।
তাইতো জিসানের এখানে আসার তেমন কোনও প্রয়োজন হয় না।খুব বেশি সমস্যা হলে সোমকে পাঠিয়ে দিতো।কিন্তু এবার আসতে হলো তিশার কারণে।
---গাড়ী ছুটছে তার আপন গতিতে উদ্দেশ্য খাগড়াছড়ি ।লম্বা রাস্তা,সাথে মেঘলা আকাশ।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়া আবার শুরু করেছে।
জিসান গাড়ী চালাবার ফাঁকেফাঁকে তিশাকে বারবার দেখছে।
'মাঝেমাঝে বৃষ্টির কিছু ঝাপটা এসে তিশাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।তিশার কপালে গালে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু জলগুলো দেখে জিসানের তৃষ্ণা যেনো বেড়ে গেলো।এ যে প্রেমের তৃষ্ণা, তিশাকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা।
এখন তো বৃষ্টির উপরই রাগ বাড়ছে জিসানের।ওর প্রিয়তমাকে ছোঁয়ার অপরাধে বৃষ্টিকে আজ নির্গাত মৃত্যুদন্ড দিতো,যদি দেওয়া যেতো।
হিংসায় জিসান গাড়ীর গ্লাশগুলো সব লাগিয়ে দিলো।'
"গ্লাশগুলো লাগালেন কেনো,ভালোই তো লাগছিলো।প্লিজ খুলে দিন।"(তিশা)
---নো মিস তিশা,বৃষ্টির ঝাপটায় আপনি এমনেই অনেকটা ভিজে গিয়েছেন।তার উপর এই ঠাণ্ডা বাতাসে আপনার জ্বর চলে আসবে।
"না আমার কিছুই হবে না,আপনি খুলুন।"
---আরিয়ান লুকিং গ্লাসে তিশার দিকে তাকিয়ে শক্ত ভাবে বললো,নো মিনস নো।
এর আগে একবার বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো মনে নেই।আবার করতে চান।
"আপনি কি করে জানলেন আমি বৃষ্টিতে ভিজে--- তিশাকে আর বলতে না দিয়ে আরিয়ান বললো,
--আমি আমার আশেপাশের সবার অতীত,বর্তমান সব খবরই রাখি মিস তিশা, সো রিলেক্স।"
"কিন্তু তিশার আরিয়ানের কথা বিশ্বাস হলো না।তাই কেমন সন্দেহ নযরে তাকিয়ে রইলো।"
---তিশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,
মিস তিশা আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডশাম এন্ড এট্রাকটিভ।কিন্তু এই মুহুর্তে আপনি যদি এভাবে তাকিয়ে থাকেন তাহলে নির্গাত এক্সিডেন্ট হবে।তখন কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।
"তিশা একটু লজ্জা পেলো,আর সাথে আরিয়ানের উপর রাগও।এই লোকটি এমন কেনো,আমাকে লজ্জায় ফেলার একটা পথও ছাড়েনা।
গাড়ী আপনি চালাচ্ছেন মিস্টার আরিয়ান আমি না।তাহলে!"
---হুম,আমিই চালাচ্ছি, কিন্তু আপনার ওই চোখ দু'টো যে, কাউকে ঘায়েল করে দিতে পারে তা কি জানেন।আর এখন আপনি আমাকে ঘায়েল করছেন।ঘায়েল হয়ে গাড়ী চালাবো কি করে,তখন এক্সিডেন্ট হলে হতেও পারে। তাইনা।
"তিশা বুঝে গিয়েছে আরিয়ান সুযোগ পেয়ে আবার ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে।তাই চুপ থেকে একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।"
---দু'জনেই এখন নিরব,কিন্তু ওদের মন দু'টি এই প্রকৃতির মতোই একবিন্দু জল পেয়ে ভালোবাসার তৃষ্ণা নিবারন করতে চায়।পাবে কি একবিন্দু জল এই তৃষ্ণার্ত মনগুলো!হবে কি ওরা আবার এক।
______________
"অফিসে এসেই নিলয় ওর পিএ ডেইজিকে ডেকে আরফান শেখকে কেবিনে পাঠাতে বললো।আরাফান শেখ কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার।"
---আরাফান শেখ দরজায় নক করে, আসবো স্যার।
"জি আসুন মিস্টার শেখ।"
---জি আপনি আমায় ডেকেছেন স্যার।
"হুম,আগে বসুন এখানে।"
---জি বলুন স্যার কেনো ডেকেছেন, কোনও বিশেষ প্রয়োজন,কোনও সমস্যা হয়েছি কি?
"এতো তাড়া কিসের শেখ সাহেব।আর আপনি এতো ঘামাচ্ছেন কেনো এসির মধ্যেও।"
---কই নাতো।
"সব ঠিক আছে তো। শুনলাম বনানীতে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছেন।
গুড,কিন্তু আমার তথ্য মতে আপনার ছেলেমেয়েদের অনেক ব্যয়বহুল জায়গায় পড়াশুনা করান আপনি আর আপনি যেখানে থাকেন তাও অনেক নামীদামী ফ্ল্যাটে।আর বর্তমান বাসাটা আপনার নিজের না ভাড়ার,রাইট। আপনার যা বেতন ছেলেমেয়েদের খরচ, সংসার খরচ আর ব্যাংকের লোন শোধ করে যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে অন্তত বানানীতে ফ্ল্যাট কিনার মতো না নিশ্চয়ই।তবু কিনেছেন।
কোথায় কোন খাজানা পেয়েছেন আমাকেও একটু বলুন শেখ সাহেব।"
---স্যার আপনি ভুল বুঝছেন।আসলে হয়েছে কি ..... নিলয় আর বলতে দিলো না।
স্টোপ শেখ সাহেব।
আমাকে বোকা মনে করবেন না।আপনি যে আমাদের কোম্পানির কনফিডেন্টশিয়াল ইনফোরমেশন লিক করে যে রাতারাতি ধনী হবার প্লানিং করছেন,তা কিন্তু আমার জানা।
"আরাফান শেখ একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে---ক ককিসব ব বলছেন।কোনও প্রমান ছাড়া আমার উপর এধরনের অ্যালিগেশন লাগাতে পারেন না আপনি স্যার।"
---মিস্টার শেখ আপনি হয়তো জানেন না,আপনার ফোনকলের প্রতিটি রেকডিং আছে আমার কাছে।আপনি কি শুনতে চান।আমার কিন্তু কোনও সমস্যা নেই।আপনি এখানে শুনবেন নাকি পুলিশের সামনে।
"পুলিশের কথা শুনে আরাফান শেখ ভয় পেয়ে যায়।সাথে সাথে নিলয়ের হাত ধরে আকুতি মিনতি করতে লাগে।
Iam sorry.please don't call the police sir..."
----এমন ভুল আর দ্বিতীয় বার হবে না।
"আপনাকে এই ভুল দ্বিতীয়বার করার সুযোগটাও দেবোনা।আপনার কাছে এখন একটাই পথ খোলা,আপনি নিজের ইচ্ছায় রেজিগনেশন লেটার জমা দিন।সবাই তাহলে জানবে আপনি নিজ ইচ্ছায় জবটা ছেড়েছেন।কারণ আমি বের করলে সবাইকে সত্য কথাটা বলতে হবে,তখন আবার আপনি কোনও কোম্পানিতে চাকীরও পাবেন না।আপনার পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি আপনাকে পুলিশে দিলাম না।
এখন বলুন কি করবেন।"
---মিস্টার শেখ নিলয়ের কথামতো সব করতে রাজি হলো।
"আজ সকালে নিলয় অফিসে আসার পর সোমের ফোন আসে।আর সোমই সব ইনফোরমিশন দেয় নিলয়কে।
নিলয় আগেই বুঝতে পেরেছে সোমের এমন হঠাৎ করে উধাও হবার কারণ।এতোদিন তিশাকে গার্ড করার কারণে ওর সব ধ্যান এখানেই ছিলো।
কিন্তু এখন যেদিন থেকে আরিয়ান অফিস জয়েন করেছে,সোমও আগের মতো তিশার দিকে নযর রাখেনা।নিলয়ের কাছে তখন একটু খটকা লাগলেও পরে সব কিছু বুঝতে পারে আস্তে আস্তে।
একদিকে আরিয়ান আসায় নিলয়ের সুবিধাই হয়েছে।এতে নিলয়ও তার সব ধ্যান এ কের প্রজেক্টাতে লাগাতে পাড়ছে।আর এতে কাজের গতিবেড়ে গিয়েছে,কিছুদিনের মধ্যে প্রডাক্টটা লঞ্চ ও হয়ে যাবে সময়ের আগে।আর এতে এ কের এই কোম্পানিতে আসার সব ধরনের যোগাযোগ ও বন্ধ হয়ে যাবে।"
___________
"মাথার দুপাশে দুআঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে, মাথাটা নিচু করে অফিসের শোফায় বসে আছে অর্ক।একটু আগে শেখ ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সব।এরপর থেকেই মাথাটা অসহ্য ব্যাথা করছে।
করারি কথা একটার পর একটা প্লান ওর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।অর্ক এখন টেনশনে পড়ে গিয়েছে,এখানে এসে কোনও ভুল করে নিতো।"
---ঠিক এই সময় কেবিনের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করলো।
"অনুমতি না নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করায় অর্ক মাথাটা উপরে তুলে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না।
কারণ সামনের লোকটিকে দেখে অর্ক বুঝে গিয়েছে সিচুয়েশন এখন কোনও দিক দিয়েই ভালো না।"
---লোকটি এসেই অর্কের সামনে রাখা সিঙ্গেল শোফায় বসে পড়লো।
"ডাক্তার চুপ না থেকে কিছু সাজেশন করো।"
---কোন ব্যাপারে।(ডাক্তার)
"মাথা ব্যাথার।এর থেকে এখন নিবারণ কিভাবে পাবো।"
---অর্কের এমন আহাম্মক মারা কথা শুনে, লোকটি ভীষণ রেগে গেলো।ফাইজলামি চলছে এখানে এ.কে।খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলে,এখন তো দেখি তোমার বালেরও কোনও যোগ্যতা নেই।
"ডাক্তার মুখ সামলিয়ে কথা বলো,দেখতে তো পাচ্ছো চেষ্টাতো করছি।কিন্তু প্রত্যকবার ফ্লোপ হলে আমি কি করবো।আর আমার কথা বাদ দেও,তুমি কি করেছো।একটা কাজ দিয়েছিলাম জিসানকে মারার।
কিন্তু তাও করতে পাড়লে কিনা কে জানে।জিসান একচুয়েলি মরেছে কিনা সেটাও জানি না।এই আরিয়ানের চেহারা বা কেনো জিসানের মতো।আরিয়ান জিসান কিনা,জিসানই আরিয়ান কিনা এসব চিন্তা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।"
---লোকটি রেগে গিয়ে,সামনের ট্রি টেবিলে একটা বাড়ী মারলো,হু কেয়ারস!
আরিয়ান জিসান কিনা তা জানার আমার প্রয়োজন নেই।আমি শুধু জানি তিশাকে আমার চাই।আর ওকে পাবার পথে যারা যারা বাধা দিবে সবাইকে আমি শেষ করে দেবো।মাইন্ড ইট, বলেই চলে গেলো লোকটি।
" অর্ক ডাক্তারের যাওয়ার পথে তাকিয়ে শোফায় হেলান দিয়ে আড়ামে বসে একটা সিগেরেট ধরালো,আর বিশ্রি একটা হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে।
ও ডাক্তার আমিতো চাই তুমি সবাইকে শেষ করে দেও।আর আমার পথটা ক্লিয়ার করে দেও।এসব ভেবেই অর্ক ভুবন ফাটিয়ে হাসতে লাগলো।"
'অর্ক তার পিএ কে ফোন করে একটা হলরুম বুকিং করতে বললো,সামনে তাদের পোডাক্ট লঞ্চ পার্টির জন্য।অর্কের মাথায়ও চলছে নতুন কোনও প্লান।'
_______________
"খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পার্বত্য জেলা।ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ২৬৬ কি.মি।অসংখ্য পাহাড় আর ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে ভরপুর খাগড়াছড়ি।
প্রকৃতির সৌন্দর্য নাকি মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে শুদ্ধ করে চাঙ্গা করে তুলে।মনকে ভালো করার সবথেকে ভালো উপায় হলো নিজেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া।তাইতো জিসান এতো আয়োজন করে তিশাকে এখানে নিয়ে এসেছে।"
----এখানে ছোট্ট একটা রিসোর্ট ভাড়া করে রেখেছিলো জিসান আগেই।তাই গাড়ী সোজা রিসোর্ট এর সামনে এসে থামলো।
'তিশা গাড়ী থেকে নেমেই চমকে যায়।মনে মনে বলে,এসব কি?হোটেলে না গিয়ে এখানে কেনো এসেছে মিস্টার আরিয়ান।তিশার ভেতরে আরিয়ান নামক প্রাণীটির ভয় ডুকে গেলো।'
---একজন মধ্যবয়স্ক লোক জিসানের হাতে বাড়ীর চাবি দিয়ে চলে গেলো।আবার সকালে নাকি আসবে।এমনেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে ওদের এখানে আসতে।ওরা আসবে বলে ডিনারও নাকি রেডি করে রেখেছে লোকটি।
আরিয়ান বাড়ীর মেনডোর খুলতে যাবে তখনি বাধ সাধলো তিশা।
"ও কিছুতেই এখানে থাকবে না।আরিয়ানকে হোটেল বুক করতে বলে।"
---দেখুন মিস তিশা,এখানে আশেপাশে তেমন কোনও ভালো হোটেল নেই।আর আমরা যে কাজ করতে এসেছি তার জন্য এই জায়গাটাই বেস্ট।তাই ড্রামা না করে ভেতরে চলুন।আকাশের অবস্থা একদম ভালোনা।মনে হয় ঝড় আসবে।
"কিন্তু তিশাও কম ত্যারা না,ও একটা বাড়ীতে আরিয়ানের সাথে একা কিছুতেই থাকবে না।কেউ জানতে পারলে কি বলবে।কেউ মিস্টার আরিয়ানকে দোষারোপ করবে না।চরিত্রের দাগ তো শুধু আমার আঁচলে পড়বে।"
---বাহিরে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি বদলি হয়ে বড় বড় বিন্দুকণায় পরিণত হয়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝড় হওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।বাড়ীর বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তিশা বৃষ্টির ঝাপটাতে অনেকটা ভিজে গিয়েছে।নিজেকে এখন খুব বকতে মন চাইছে।কেনো যে গাড়ী থেকে নামতে গেলাম।নেমেই এখন ফেসাদে পড়ে গেলাম।চাবিটাও নেই গাড়ীর,আর থাকলেও বা কি হতো।যে বৃষ্টি আমি গাড়ীর সামনে যেতে যেতে আরো কাকভেজা হয়ে যেতাম।উফ কি যে করি,ঠান্ডাও লাগছে খুব।মনে হয় সত্যি সত্যি জ্বর আসবে এবার।
"জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চেক করলো তিশা বাড়ীর ভেতরে এসেছে কিনা।কিন্তু না তিশা ভেতরে আসেনি,তার মানে এতো ঝড়ের মধ্যে মেয়েটি এখনো জিদ দেখিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।মন তো চাইছে ঠাটিয়ে একটা দিতে।একবার শুধু হাতে পেয়ে নি,তোর ভীমরতি আমি এবার সব একেবারে ছুটিয়ে ছাড়বো।"
---মনেমনে জিসান এসব ভাবতে ভাবতে বাহিরে এসে দেখে,তিশা ফ্লোরে বসে ঠান্ডায় কিছুটা কাঁপছে।জিসান তারাতারি তিশার কাছে এসে বুঝতে পারে যা ভেবেছে তাই, জ্বর চলে এসেছে।আর জ্বরের কারণে কিছুটা সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে তিশা।
'জিসান আর কিছু না ভেবে তিশাকে কোলে তুলে রুমের ভেতরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।তিশার হাতপা গুলো ঠান্ডা বরফের মতো জমে গিয়েছে।কিছুক্ষণ পর পর জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টাও বকছে।সাথে তিশা কাঁপতে লাগলো।
জিসান গিয়ে বাড়ীর কেয়ারটেকার কে কল করে আশেপাশের কোনও ডাক্তার আছে কিনা জানতে।কিন্তু কেয়ারটেকারের কথা শুনে নিরাশ হয় জিসান,কারণ এতো রাতে এখানে ডাক্তার খুঁজা মানে দূর্বাঘাসে সুই খোঁজার মতো।
"জিসান মাথায় হাতদিয়ে বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।ভেজা কাপড়গুলো এখনো তিশার শরীরে।
জিসান চট করে ওর বন্ধু ডাক্তার নাঈমের কথা মনে পড়লো।সাথে সাথে কিছু না ভেবেই ফোন দিয়ে দিলো।
---হ্যালো নাঈম, আমি জিসান।
'জিসান,কোন জিসান।জিসানতো.....।(কারণ জিসানতো মরে গিয়েছে তাই)নাঈমকে বলতে না দিয়ে।'
---ওসব পড়ে বলবো।তোর একটা সাহায্যের দরকার ছিলো।
'হুম, বল।কি করতে হবে।'
---জিসান সব খুলে বললো।
'বুঝলাম,জ্বর মনে হয় শরীরে অনেক বেশি।যেহেতু কিছু নেই ওখানে।তাই ঘরোয়া ভাবে আগে ট্রাই কর,এরপরও যদি না কমে আর শরীরের উত্তাপ আরো বাড়ে তাহলে তোকেই একটু পরিশ্রম করতে হব।বুঝছিস তো আমি কি বুঝাতে চাইছি।'
---জিসান হালকা করে হুম বলে।
জিসান সোফায় বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর আগে বাড়তে কোনও সমস্যা নেই।সমস্যা তো একজায়গায়।তিশা এখনো কিছুই জানে না,সত্যিটা যে এখনো ওকে বলাই হয়নি।তাই জিসান একটু অস্বস্তি ফিল করছে।
"তিশার সুস্থ হওয়া আগে জরুরি, বাকি সব পড়ে ভাবা যাবে বলেই জিসান তিশার কাছে গিয়ে একটা একটা করে তিশার ভিজা কাপড়গুলো সব খুলে ফেলে দু'টো ব্ল্যাঙ্ককেট দিয়ে ভালো করে তিশাকে ঢেকে দিলো।ওয়াসরুম থেকে বালতি ভরে পানি এনে কপালে দিয়ে দিলো,শরীরটাও মুছে দিলো,কিন্তু তিশার অবস্থার কোনও তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করছে না জিসান।"
----জিসান তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা জ্বরের ঘোরে কাঁপছে এখনো।জিসান নিজের সব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের শার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে তিশার সাথে ব্ল্যাঙ্ককেটের ভেতর ডুকে পরে।
জ্বরের ঘোরে থাকা তিশা নিজের শরীরে কারো গভীর স্পর্শ পেয়ে,প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু জিসান এখন আর কোনও বাধা মানতে নারায।তাই তিশার হাত দু'টো বিছানায় চেপে ধরে একটু জোর করেই তিশাকে পাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।প্রিয়তমাকে এতোদিন পর কাছে পেয়ে জিসান আজ নিজের মধ্যে নেই।ও আজ হারিয়ে যাবে পুরোপুরি তিশার মাঝে।
"তিশার চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।এটা সুখের না কষ্টের কারো জানা নেই।তিশা তাকে গভীরভাবে এভাবে স্পর্শ করা ব্যক্তিটির সাথে না পেড়ে চুপ হয়ে যায়।তিশাকে শান্ত হতে দেখে জিসানও তার হাতের বাঁধন খুলে দেয়।
তিশা কিছুক্ষণ পরপর কেঁপে উঠছে। তবে এই কাঁপার কারণ হয়তো জ্বর না।তিশার শরীরে বয়ে যাওয়া জিসানের হাতের স্পর্শের কারণে।"
---বাহিরের ঝড় কমে যাওয়ায় রুমে দু'জনের গোঙ্গানি আর নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।সুখের এক শেষ সীমায় জিসান তিশাকে নিয়ে যাচ্ছে।এতে শুধু ওদের শরীরের না,রুমেরও উষ্ণতাও বেড়ে গিয়েছে।
এখন শুধু ভোর হবার পালা।নতুন সকাল তিশার জীবনে কি নিয়ে আশে তা দেখার পালা।
.
.
.
চলবে..................................................................