ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৩৯ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"আহমেদ বাড়ী আজ নতুন আমেজে মেতে আছে।পুরো বাড়ীটি সিম্পল এর মধ্যে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।কাল থেকে নিকট আত্নীয় স্বজন এসে বাড়ীটিতে ভিড় জমিয়েছে।
রাবেয়া বেগমও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অতীতিদের আপ্যায়নে।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।আশা ছিলো অনেক ধুমধামে মেয়েকে বিয়ে দিবে।
কিন্তু রায়হান এসব চায় না।ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়।"

---'নিশির আত্মহত্যার পর রায়হান আর কোনও রিস্ক নিতে রাজি না।ওর নিজের প্রাণটা লুকিয়ে আছে এই মেয়েটার মধ্যে,কিন্তু এই মেয়েটা যে কখন আবার কি করে বসে আল্লাহই জানে।তবে এই মেয়েটিকে ছাড়া যে রায়হান নিশ্বাস নেওয়ার কথা ভাবতে পারে না।তাই নিজের জন্য হলেও এই মেয়েকে যতো তারাতারি সম্ভব নিজের করে ফেলা।যাতে কেউ ওদের মাঝে আর আসতে না পারে,আর ওর পাখিটি যাতে আর উড়াল দিতেও না পারে।'

"তবে এই বিয়েতে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ যে খুশি না,তা কিছু মানুষের মুখ দেখেই বুঝে গেলেন রাবেয়া।কিন্তু এতে তার কিছু যায় আসে না।
ধন-দৌলত দিয়ে উনি কখনো কাউকে যাচাই করেন নিই।তাইতো ছেলে সাধারণ ঘরের মেয়ে পছন্দ করায় কোনও আপত্তি ছিলো না তার।
                    আর রায়হান, তাকে তো সেই ছোট থেকে দেখে এসেছে।ধন সম্পদ কম হলেও ছেলেটি যে কোনও হীরার চেয়ে কম না।আর এমন একটি হীরাই খুঁজছিলো রাবেয়া নিজের মেয়ের জন্য।আর আজ পেয়েও গেলো।"
 
---সকাল থেকে তিশাও ব্যস্ত,একমাত্র ননদের বিয়ে বলে কথা।হিসেবে একমাত্র ভাইয়েরও বিয়ে।তাইতো কাল সারা দিন নিজের বাড়ীর সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে, আজ আবার শ্বশুর বাড়ীর দায়িত্বও পালন করছে।একটু কস্ট হলেও দুবাড়ীই সামলাচ্ছে খুব সুন্দর করে।তবে এসবে কষ্ট না হলেও কিছু আত্মীয় স্বজনের খোঁচা মারা কথাগুলো কেমন যেনো সুই এর মতো বিধছে তিশার গায়ে।তবুও নিজেকে এই মুহুর্তে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।কারন একটাই জিসান।জানতে পারলে বিয়ে বাড়ীতে হুলুস্থুল লাগিয়ে দেবে এই লোকটি।

"তিশা রেডি হচ্ছে,কারন ওকে এখন আবার যেতে হবে ভাইকে হলুদ ছোঁয়াতে।আর সেই হলুদ আবার নিশির জন্যও নিয়ে আসতে হবে।একদিনে সব আয়োজন হওয়ায় একটু বেশিই পেরেশানিতে পড়তে হয়েছে ওকে।"

           ---হঠাৎ জিসান পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তিশাকে।
তিশা একটু বিরক্ত হয়ে--উফ জিসান ছাড়ুন তো।আমাকে রেডি হতে দিন,এমনেই লেট হয়ে গিয়েছে।

"জিসান তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,নিজের সাথে চেপে ধরলো।
মিসেস তিশা।আপনি হয়তো নিজের এই স্বামীটাকে ভুলে গিয়েছেন।তাইতো দেখছি কাল থেকে কেমন এভোয়েড করছেন।সমস্যা কি।ভ্রু একটা উঠিয়ে।"

---আরে আমি কোথায় এভোয়েড করেছি।বিয়ে বাড়ী,কতো কাজ থাকে জানেন। 
ব্যস্ততার কারনে হয়তো আপনার এমন লাগছে।আর যাই হোক আপনার সব অপবাদ পরে শুনবো এখন আমাকে রেডি হতে দিন,ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

"ওকে, এবারের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।বাট ঘুষ দিতে হবে।"

---ঘুষ! কিসের ঘুষ।তিশা একটু চিল্লিয়ে।

"সেটা তুই ভেবে নে,এমন কিছু যা পেলে খুশিতে আমি ছেড়ে দেবো তোকে।"

---তিশা কিছুক্ষণ মুচড়া মুচড়ি করেও যখন ছুটতে পারলো না।তখন ক্লান্ত হয়ে জিসানের দিকে অসহায় চোখে তাকালো।

"কিন্তু জিসানের সে দিকে কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।সে তো নিচের দিকে তাকিয়ো ভাবছে তিশা কি করবে।"

---হঠাৎ তিশা জিসানে মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে দুগালে দুটো কিস করে দিলো।
প্লি জ---এবারতো ছাড়ুন।

"জিসানও একটু মুচকি হেসে তিশার কপালে একটা আদর করে ছেড়ে দিলো।
আমি নিচে গাড়ীতে অপেক্ষা করছি তোর জন্য তারাতারি আস।"

---আপনি যাবেন আমার সাথে।(তিশা)

"জিসান যেতে যেতে তিশাকে বললো,তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস আজ আমার জিগারীর গায়ে হলুদ।আর আমি ওকে হলুদ ছোঁয়াব না,এতো হতেই পারে না।"

---তিশা একটু মুচকি হেসে তারাতারি রেডি হয়ে জিসানের সাথে রওনা দিলো।
___________

"রায়হান সাদা একটা সেন্ড গ্যান্জী আর সাদা লুঙ্গী পরে পিড়িতে বসে আছে।অপেক্ষা তার ছোট বোনের।বোনের আগে কেউ হলুদ লাগাবার পারমিশন পাইনি এখনো।"

          ---তিশা এসেই দেখে এ অবস্থা, তাই তারাতারি ভাইয়ের কাছে এসে এক কানে ধরে সরি বললো আগে অপেক্ষা করাবার জন্য।
এরপর তিশা ও জিসান মিলে এক সাথে রায়হান কে হলুদ ছোঁয়ালো।সেই হলুদের কিছু পিক তুলে গোপনে নিজের হবু ভাবি মানে নিশিকেও পাঠিয়ে দিলো তিশা।

'এরপর রায়হানের ছোঁয়া হলুদ থেকে অর্ধেক হলুদ নিয়ে আবার আহমেদ ভিলায় ছুটলো তিশা।'

          --- নিশিকেও রায়হানের বাসা থেকে আসা হলুদ একে একে সবাই দিয়ে দিলো।ব্যাচারী নিশি হলুদে পুরো হলুদ পরী হয়ে গেলো।আর রায়হান ভিডিওতে বসে বসে সব দেখছে আর হাসছে।যা তিশাই করেছে,কারণ রায়হানই আসার আগে বোনের কানে কানে নিশির হলুদের সময় ভিডিও কল দিতে বলে দিয়ে ছিলো।

'বিয়ের কাজ শুরু হবে আসরের নামাযের পর।এরি মধ্যে নিশিকে মেহেদি দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিতে বললো সবাই।'

            --- আসরের নামাযের পর পরই রায়হান ওর পুরো পরিবার এবং কয়েকজন নিকট আত্মীয়স্বজন নিয়ে এসে পড়লো তার প্রিয়তমাকে নিতে।
এতোদিন রায়হান এই বাড়ীতে দুটো পরিচয়ে আসতো।প্রথমত জিসানের বন্ধু হয়ে,পরে তিশার ভাই হয়ে।ফাইনালি আজ এই বাড়ীর একমাত্র মেয়ের জামাই হয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করলো।তাই এবার রায়হানের খাতিরও আগের থেকে বেড়ে গেলো।
যারা বিয়েটা মানতে পারছিলো না তারাও রায়হানের আপ্যায়ন নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেয়ে বাড়ী বলে কথা।
অবশেষে রায়হান ও নিশির বিয়েটা হয়ে গেলো।আজ থেকে রায়হানও হয়ে গেলো জিসানের বোনের বর।

'নিশিকে বিদায় দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।
কিছু আত্মীয় চলে গেলো,আর যারা দূরের তারা কাল সকালে চলে যাবে।'

                --- তিশাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তিশা রায়হানের সাথে যেতে চেয়েছিলো,কিন্তু রায়হান মানা করে দিলো।কারন সারাদিন খুব ধবল গিয়েছে বোনটির উপর,তা বোনের চেহারা দেখেই বুঝে গিয়েছে।
তার উপর নিশির বিদায়ের কারনে জিসান আজ খুব আপসেট থাকবে,তাই এই মুহুর্তে তিশার জিসানের পাশে থাকা প্রয়োজন মনে করলো রায়হান।
তিশা ডিভাইন এর কাউচে শুয়ে আছে।জিসান এখনো আসেনি।

"তাওহিদ জিসান মিলে মায়ের কাছে বসে আছে।একমাত্র মেয়ে চলে যাওয়ায় মা প্রচণ্ড আপসেট তাইতো মাকে সান্তনা দিতে দুভাই চলে গেলো।"

            ---ক্লান্তিতে কখন চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারলাম না।হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।ঘুমের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছি না।তবুও চোখ খুলে যা ভেবেছি তাই।জিসান আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
লোকটি অদ্ভুত!
আর অদ্ভুত তার ভালোবাসা।নিজে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে তবুও তার রেশ আমার ধারের কাছেও আসতে দিবে না।আমাকে কাউচের থেকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়েছে,অথচ আমার ঘুম যাতে নষ্ট না হয় তাই ডাকও দিলো না।খুব চিৎকার করে বলতে মন চায় জিসান,আপনি আমার নিশ্বাসে মিশে গিয়েছেন।
এই দেহে প্রাণ যতোদিন থাকবে,রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসবো।বিধাতার কাছে প্রার্থনা করবো নিতে হলে আগে আমাকে নিয়ে যাক।কারন আমি যে সইতে পারবো না আপনাকে হারানোর বেদনা।
___________

"নিশি ও রায়হান বালকানিতে বসে আছে।রাতের আকাশে উঠা এক ফালি চাঁদটা যেনো আজ একটু বেশিই আলোকিত করে তুলেছে পৃথীবিটাকে।চাঁদটিকে ঘিরে তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলে চাঁদকে আরো সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর করে তুলছে।
রায়হানও আজ তার নিজের চাঁদটিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভোব করছে আজ।"

---নিশিও রায়হানের বুকে মাথা রেখে রায়হান কে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখদুটো বন্ধ করে রায়হানের হ্রদপিন্ডের ধুপধুপ শব্দগুলো গুনছে।

-হঠাৎ রায়হান নিশির মাথায় নিজের উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসার এক পরশ দিয়ে দিলো।

              " নিশিও চোখ বন্ধ করেই তা অনুভোব করলো।নিশির মনটাও আজ শান্তি বিরাজ করছে,কিছু পাওয়ার,কিছু অনুভূতির।
কিছুক্ষণ পর নিশি রায়হান কে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো।

আচ্ছা আপনার কাছে
            "ভালোবাসার মানে কি"।

---রায়হান কিছুক্ষন নিশির দিকে তাকিয়ে থেকে, দৃষ্ট সরিয়ে রাতের তারাময় আকাশের দিকে তাকালো।

                                'ভালোবাসা মানে এক অসাধারণ ফিলিং,যাকে ধরতে চাইলে ধরা যায় না,আবার ছাড়তে চাইলে ছাড়াও যায় না।কারো কাছে ধোয়াশা,কারো কাছে নেশা।
ভালোবাসার মানুষটির কপালে হালকা করে একটা চুম্বন দিয়ে,তাকে আই লাভ ইউ বলা এটি হলো পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর তিনটি ওয়ার্ড।অনেকে তার প্রিয়জনের মুখে এই তিনটি ওয়ার্ড শুনার জন্য জন্মজন্মান্তরও অপেক্ষা করতে রাজি হয়ে পরে।কারণ একটাই "ভালোবাসা"
আর যখন সেই মানুষটি কোনও কারনে অভিমান করে,তার ছোট ছেট অভিমান গুলো পরম যত্নে ভাঙ্গনোর নামই ভালোবাসা।
তাকে একদিন না দেখলে যদি মনটা উদাসীন হয়ে পরে,তাকে একটি বার দেখার জন্য মনটা যদি ছটফট করে,তাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা যদি আকড়ে ধরে।তাহলে বুঝে নিবি এসবই সেই মানুষটির প্রতি নিজের ভালোবাসা।
তবে মাঝে মাঝে দূরে থাকার নামও ভালোবাসা হয়,মাঝে মাঝে প্রিয়জনটির মুখের হাসির জন্য তার ভালোর জন্য দূরে চলে যাওয়ার নামও ভালোবাসা।ভালোবাসার সংঙ্গা একেক জনের কাছে একেক রকম।কিন্তু অনুভূতিগুলো সবার একই।"

---হঠাৎ রায়হান নিশিকে কোলে তুলে নিলো,আর আস্তে আস্তে রুমের ভেতর প্রবেশ করতে লাগলো।

"আজ আমিও পেতে চাই,পুরো নয় একটু খানি ভালোবাসতে চাই।
আরো কাছ থেকে দেখতে চাই তোকে,
বহুদিনের লুকানো ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে চাই।
মনের সাধ মিটিয়ে তোকে আজ কাছে পেতে চাই।
জেগে থাকতে চাই আজ এই পূর্ণিমা রাতে,
আর ভালোবেসে আজ তোকে পূর্ণ করতে চাই।
হবি কি আমার।
একটুনা।
পুরোটা আমি তোকে চাই।"

---রায়হানের না বলা কথাগুলে ভালোবাসার ছন্দে নিশিকে বুঝিয়ে দিলো,আর নিশিও বুঝতে পেরে লজ্জায় রায়হানের বুকে মুখ লুকালো।
আজকের রাতে ওদের ভালোবাসা ও পূর্ণতা পেলো অবশেষে ।
__________

দুদিন পর..

"সিলেটের বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে জিসান এবং তিশার পুরো পরিবার।জিসান পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন দেওয়ার আগেই দুটো প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে।"

---একজন অল্প বয়সের ছেলে গাড়ী থেকে হন্তদন্ত হয়ে নেমেই জিসানের সামনে দাঁড়ালো। 
-জিসান স্যার।(ছেলেটি)

'জিসান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে মাথা নাড়লো।'

-সাথে সাথে ছেলেটি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে,জিসান হাত ধরে ছেলেটিকে দাঁড় করায়।আরে কি করছো।

-স্যার আপনারে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।বড় সাহেবের মুখে আপনার এতো কথা শুনেছি যে।আমি তো নামায পইড়া দোয়াও করছি,আপনি জাতে একবার হইলেও এইহানে আহেন।

'বড় সাহেব!বড় সাহেব আবার কে?জিসান ছেলেটিকে জিঙ্গেস করলো।'

-বড় সাহেব,আরে আপনার নানাজান।দিলওয়ার চৌধুরী। সবাই এক নামে চেনে উনারে।আর আমি হলাম উনার চোখ, কান।মানে উনিতো বিছানা থেকে উঠতে পারেনা তাই সব কিছুর খবর উনি আমার থেকে নেন।আমাকে খুবই বিশ্বাস করে সাহেবে।

'ওও,আচ্ছা তোমার নাম কি?'

-আমার নাম মোকলেস ভাইজান।

'মোকলেস!নিশি বলেই হেসে উঠলো।'

--কিন্তু জিসানের চোখ রাঙ্গানো দেখে ব্যাচারীর হাসিটা বন্ধ হয়ে গেলো।এবং রায়হানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
কারো নাম নিয়ে ফাইজলামি বা হাসাহাসি কোনটাই করতে নেই।জিসান কথাটা গম্ভীর কন্ঠেই বললো নিশিকে।

'রায়হান চোখের ইশারায় সরি বলতে বললে,নিশিও মাথা নেড়ে সরি বলে,মোকলেস কে।'

-ও কিছু না ভাইজান, আমার নামটাই এমন।না চাইতেও হাসি এসে পরে।আপনি হুধাহুধি আপাজান কে বইকেন না তো।আপাজান আমি কিছুই মনে করি নাই।

'এটা ঠিক না মোকলেস। যাই হোক শুনো আর কখনো পায়ে ধরে সালাম করবে না।আমাদের ধর্মে পায়ে ধরে সালাম করার কোনও রীতি নেই।মুখের সালামই যথেষ্ট। মনে থাকবে।'

-জে ভাইজান।থাকবে।

এবার চলো,সবাই গাড়ীতে উঠি।(জিসান)

"দুটো মাইকোর মধ্যে একটাতে তিশা ও জিসানের বাবা মা সাথে তাওহিদ ও তানজিলাও বসেছে তারিনকে সাথে নিয়ে।
আরেক টাতে জিসান, তিশা,রায়হান ও নিশি বসেছে। আর সামনে ড্রাইভার এর সাথে মোকলেস বসে আছে।"

---গাড়ীটি শো শো করে ছুটে চলছে পানতুমাই গ্রামের পথে।এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পরে সবার লাক্কাতুরা ও মালনিছরা চা বাগান।

                   "পানতুমাই যাওয়ার জন্য আগে যেতে হবে গোয়াইনঘাটের সালুটিকরে।এই রাস্তা ধরেই সালুটিকর হয়ে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে হাদারপার বাজার যেতে।
তবে এই দেড় ঘন্টায় প্রকৃতি দেখিয়ে দেবে তার অপরুপ সৌন্দর্য্য। 
কারন হাদারপার বাজারে যাওয়ার আগেই মেঘালয়ে দেওয়ালের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু সারিবদ্ধ পাহাড় গুলোও স্বাগতম জানাতে থাকবে সবাইকে।গাড়ীতে বসেই দেখতে পাওয়া যাবে,পাহারের বুক চিড়ে বয়ে আসা ঝর্না গুলো। যা প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে নিজের কাছে আসতে।
দূর থেকে আসা শাঁ শাঁ শব্দ শুভ্র জলের এক নতুন অনুভূতিতে নিয়ে যাবে।দেখলে মনে হয়, জলধারাগুলো যেনো লেপ্টে আছে সবুজ পাহারের গায়ে।"

--পাহারী আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে গায়ের মেঠো পথ,বাশ বাগান,হাটু জলের নদী পার হয়ে আসে পতাপ্পুর গ্রাম।আর এই গ্রামের পরের গ্রামই পানতুমাই গ্রাম।
পানতুমাই চোখ জুরানো একটি গ্রাম।একে অনেকে পাংথুমাই ও বলে।
প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে কখন যে ওরা চৌধুরী ভিলার সামনে এসে পড়লো টেরই পেলো না।

"চৌধুরী ভিলা,বাড়ীটি অনেকটা পুরাতন জমিদার বাড়ীর মতো তবে বিশাল জায়গা জুড়ে।হয়তো কিছুুদিন আগে বাড়ীটিতে নতুন রং করা হয়েছে,যার কারণে বাতাসে নতুন রং এর ঘ্রাণটাও নাকে এসে সাড়া দিচ্ছে।"

         --- মায়ের জন্মস্থানে এই প্রথম জিসানের পদধূলি পড়লো।এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে মনে,যা আগে কখনো হয়নি।
জিসানের আসার কথা শুনে বাড়ীর সবাই বাহিরে এসে পরে।হঠাৎ দুজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে জিসানকে জড়িয়ে ধরে।তারা যে কাঁদছে তা জিসান স্পষ্ট বুঝতে পারে।তবে এই মুহুর্তে জিসানের কি বলা উচিৎ তাই জানে না।

"তৌফিক সাহেব এসে জিসানকে বয়স্ক ব্যক্তি দুজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জিসান উনি হলো তোমার বড় মামা রুহুল আমিন চৌধুরী,আর ছোট মামা রশিদ চৌধুরী। 
আর ভাইজান এ হলো আপনাদের ছেলে জিসান।"

            ---আমিন এবং রশিদ চৌধুরী তৌফিক সাহেবকেও জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানায় জিসানকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।  

"দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিন জন মেয়েকে রশিদ চৌধুরী ইশারা করলো সামনে আসতে।"

---মেয়ে তিনটিও দৌঁড়ে সামনে আসলো,মনে হয় ওরা এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
 
"আমিন চৌধুরী জিসানকে সামনে দাঁড় করিয়ে মেয়েগুলোকে বলে,
ভাই চাই, ভাই চাই বলে এতো বছর মাথাটাতো খারাপ করে ফেলেছিলে।এই দেখো ভাই এসে পরেছে।এই হলো তোমাদের ভাই জিসান।
-আর জিসান ও সবার বড় ঝর্ণা আমার মেয়ে। এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছে।আর এই যে সেম চেহারা দুজনকে দেখছো।এরা হলো তোমার ছোট মামার মেয়ে মুনিয়া এবং ফাতেমা।ওরা এবার ইন্টারে উঠেছে।মুনিয়া ও ফাতেমা যমজ বোন।"

---ঝর্ণা, মুনিয়া ও ফাতেমা জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে,আসলে ওরা যে জিসানকে দেখে কতোটা খুশি তা ওদের মুখই বলে দিচ্ছে।
মুনিয়া আর ফাতেমা তো জিসান কে বলেই দিলো,
ভাই কান ইউ হাগ ইউ।প্লিজ।

"বোনদের এ ধরনের আবদার শুনে জিসান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।সাথে বোনদের জন্য কষ্টও হলো।সাথে সাথে জিসান হাত বাড়ালো বোনদের দিকে।মুনিয়া ফাতেমা খুশি হয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরলো।
-সবার ছোট ফাতেমা তো কেঁদেই দিলো।এতো লেট করে কেনো এসেছো ভাই।জানো তোমার জন্য কতো অপেক্ষা করছি।"

---জিসান বোনের মাথায় হাত দিয়ে,সরি সিস্টার। ভুল হয়ে গিয়েছে।যদি জানতাম আমার এমন সুইট লিটল বোনেরা এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাহলে আরও আগেই চলে আসতাম। 

" মুনিয়া ঝর্নাকে বলছে,আপু এখন আমাদেরও একটা ভাই আছে,আমরাও সবাইকে বলবো।আমাদের মাথাও একটা ছায়া আছে।

জিসান মুনিয়ার মাথায় হাত দিয়ে,একটা না তোমরা একসাথে দুটো ভাই পেয়েছো আজ।"

---জিসান তাওহিদকে ইশারা করলো সামনে আসতে।তাওহিদকে দেখিয়ে ঝর্ণা, মুনিয়া ও ফাতেমাকে বললো।এই দেখো এ হলো আমার বড় ভাই,তাহলে তো তোমাদের ভাই তাই না।

'ফাতেমা খুশি হয়ে তাওহিদের একহাত জড়িয়ে ধরে বললো,ওয়াও আমরা এক সাথে দুটো ভাই পেয়ে গেলাম।
ঠিক যেমন টুথপেস্ট এর সাথে ব্রাশ ফ্রি পাওয়া যায়।'

---জিসান ও তাওহিদ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে জোড়ে হেসে দিলো।
জিসান দিস এই টু মাচ।নিশি কি কম ছিলো।সাথে আল্লাহ আরেক জনকে পাঠিয়ে দিলো নিশির সাথী হিসেবে।

" নিশি দুভাইয়ের কথা শুনে চেঁচিয়ে সামনে আসলো, কি বললে ভাই,আর এসব বলার মনে কি।"

---জিসান ফাতেমাকে ইশারা করে নিশিকে দেখিয়ে বললো,ও হলো আমার বোন আর তোমার সাথী।ছোটবেলায় নিশিও এমন আজগুবি আজগুবি কথা বলতো।ঠিক তোমার মতো।

"পরিবারের সবাই দূর থেকেই ভাইবোনের খুনশুটি দেখে মনে মনেই এক শান্তি অনুভোব করছে এতোবছর পর।"

---জিসান রাবেয়া বেগমের হাতটি ধরে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো।রাবেয়া বেগম ছেলের এমন কান্ডে খুশিতে চোখে জল এসে পড়লো।
রাবেয়াকে আয়েশা নিজের জায়গাটা দিয়েছিলো বলে বোনের প্রতি রাগের সাথে সাথে রাবেয়ার প্রতিও এই বাড়ীর মানুষ যে কিছুটা অভিমান জমে আছে তা কেউ না বললেও জিসান নিজ থেকে বুঝে নিয়েছে।
কিন্তু রাবেয়া কখনো কোনও কিছুর প্রভাব জিসানের উপর পড়তে দেয়নি।
তাই আজ মাকে সাথে নিয়েই এই বাড়ীর দরজায় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।আর সবাইকে বুঝিয়ে দিলো,জিসান তার মায়ের কোনও প্রকার অপমান কিন্তু সহ্য করবে না।জিসানের মুখের না বলা কথাগুলো সবাই বুঝে নিলো।তাই সদরে জিসানসহ পুরো পরিবারকে চৌধুরী বাড়ীর সাবাই গ্রহণ করে নিলো।

           "জিসান এখন বসে আছে দিলওয়ার চৌধুরীর রুমে।নানাজানের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বললো।
-দিলওয়ার চৌধুরীও তৌফিক আহমেদ ও রাবেয়া বেগমের কাছে ক্ষমা চাইলো।আর চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো রাবেয়ার কাছে।এমন মা পাওয়া সত্যি বিরল,যে কিনা নিজের সতীনের ছেলেকে এতো আদর যত্নে বড় করে তুলেছে।
---জিসান না জানলেও দিলওয়ার চৌধুরী তার মেয়ের একমাত্র নিশানির খোঁজখবর সব সময় নিয়েছে।আর এ ও জানতে পেরেছে জিসানের প্রতি রাবেয়ার অবিরাম ভালোবাসার কথা।তাই এতো বছর দিলওয়ার চৌধুরী জিসানের সামনে আসেনি।
উনি চায়নি মা ছেলের এই ভালোবাসায় কোনও ব্যাঘাত ঘটুক। কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায় নিজের নাতিকে একবার দেখার ইচ্ছা জেগেছে তার মনে।আর সব থেকে বড় কথা উনি চায় তার নাতিও একবার এসে তার মায়ের সুন্দর স্মৃতিগুলো অনুভোব করুক।

                    "জিসান তিশাকে ইশারা করলে তিশাও দিলওয়ার চৌধুরীর সামনে এসে সালাম করে।দিলওয়ার তিশাকে ইশারা করে নিজের কাছে এসে বসতে।তিশাও গিয়ে নানাজানের পাশে গিয়ে বসে পরে।

--দিলওয়ার তিশার হাতটা ধরে,ধন্যবাদ ডিয়ার।আমি জানি আমার নাতির এখানে আসার পিছনে তোমারই অবদান আছে।
আমি কিন্তু সবই জানি তোমাদের সম্পর্কে।আমার নাতিটা নাকি তোমায় বলতে পাগল।তো এই পাগলের সাথে সংসার করো কিভাবে।রাগ কিন্তু একদম ওর মায়ের মতো।"

---তিশা একবার আড় চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে,জিসান নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি আসছে।
তিশাও একটু হেসে নানাজানকে বললো, 
পাগলের ডাক্তার হয়ে আছি,আর ভালো করার চেস্টা করছি।যদি ভালো না হয় তাহলে এই হ্যান্ডশাম বুড়োটা তো আছে, এসে পড়বো আপনার কাছে।নানাজান কে এক চোখ টিপ মেরে জিসানের দিকে তাকালো।তিশার কথায় নানাজান হাসতে লাগলো।কিন্তু!

---জিসানতো চোখ দিয়ে ইশারা করে তিশাকে হুমকি দিচ্ছে…আচ্ছা এই প্লানিং। একবার পেয়ে নি একা,তারপর তোকে বুঝাবো আমার থেকে দূরে যাওয়ার মঝা।

'তিশাও মনে মনে বলে কি সাংঘাতিক লোক নিজের নানাজান কেই হিংসা করে।'

---জিসান আবার ইশারা করে বলে আমি তোকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।
নো মিনস নো।
.
.
.
চলবে...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp