ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪০ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"সিলেটের জাফলং দেশের প্রকৃতির কন্যা হিসেবে পরিচিত। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলাং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভুমি।
              তাই আজ পুরো পরিবার মিলে ডিসাইড করলো সবাই আজ জাফলং ঘুড়তে যাবে।সাথে পিয়াইন নদী ভ্রমণও করবে।এমনেই আমাদের দেশে নদী ভ্রমণ মানে হচ্ছে রাস্তা ঘাটে ঘোড়া খোঁজার মতো।"

--সবাই এক সাথে জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।জাফলং যাওয়ার পথে বেশ উঁচু উঁচু পাহাড় চোখে পড়লো।যতোই আমরা কাছাকাছি চলে আসলাম বেশ কিছু ঝর্ণা ও চোখে পড়লো,যা বেশির ভাগই ভারত সীমান্তে অবস্থিত।
তবে দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের গায়ে কেউ সাদা শাড়ী বিছিয়ে রেখেছে।চোখ জুড়ানো শুভ্রতা যেনো ছেয়ে আছে সবুজের বুকে যার থেকে চোখ সরানো বড় দায়।

"-প্রায় ৩০মিনিট এর মধ্যে আমরা সবাই জাফলং এ এসে পড়লাম।এখানে এসে আমরা জীবনে প্রথম পানের বাগান দেখলাম।আমি আর নিশিতো এসব দেখে দাড়ুন এক্সাইডমেন্ট এ আছি।আসলে শহরে উঁচু উঁচু দলানগুলো ছাড়াতো কিছুই দেখা যায় না।তাই এখানে প্রকৃতির ছোট ছোট সৌন্দর্যও আমাদের মনোমুগ্ধ করে তুলছে।

-- পিছনে ঘুড়ে জিসানকে ডাকতে নিলে দেখি কি সুন্দর আমার ভাই আর জিসান নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল । 
আমি উনাদের সামনে গিয়ে,কি ব্যাপার সবাই ওখানে কি সুন্দর এন্জয় করছে আর আপনারা এখানে কি করছেন।আমার কথার পেক্ষিতে রায়হান ভাই যা বললো তাতে আমার কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে রাগে।

"তোরা যা এন্জয় কর,আমাদের দিয়ে কি করবি।আর এছাড়া সব বড়রা ওখানে তাই আমরা এখানে একটু বিড়ি ফুঁকতে এসেছি।তাছাড়া এখানে দেখার মতো আমাদের কিছুই নেই।আমি আর জিসান এখানে বহুতবার এসেছি।"

--রায়হান ভাইয়ের কথা শুনে,আমি জিসানের দিকে তাকালাম।
শালা এক হাতে বিড়ি ফুঁকছে আর অন্যহাতে মোবাইল টিপছে।উনারে আমি এই বালছাল ছাড়তে বলেছি,অথচ উনার হয়তো আমার কোনও কথা মনেই নেই।আর এখন আমি যে একজন জলজন্তু মানুষ উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি তার কোনও খবরই নেই।তোকে তো আমি পরে মঝা বুঝাবো।মনে মনে ভেবেই আমিও রাগ করে চলে আসলাম ওখান থেকে।

                      "পিয়াইন নদীর তীরে স্থরে স্থরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলং কে করেছে আরো আকর্ষণীয়।নদীতে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাথর।এখানে জল স্বচ্ছ আর অগভীর।হাটু থেকে কোমড় সমান।পানিতে নেমে কিছুটা আগালেই পায়ের নিচে মাটি নয় অন্য কিছুর ছোয়া পেলাম।
এখানে গুড়ো গুড়ো পাতরকুচি নুড়ির মতো আকারের পাথরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কোনওটা সাদা,কোনটা ফ্যাকাশে,কোনটা আবার কালো।আমি আর নিশি কিছু সুন্দর সুন্দর পাথর কুড়িয়েও নিয়ে নিলাম এই ফাঁকে।এর পর ইন্জিন চালিত একটা নৌকায় আমরা সবাই উঠে পড়লাম।অনেকক্ষণ ঘুড়ে,আমরা এপাড়ে চলে আসলাম।এখানে কিছু অস্থায়ী খাবারে দোকান আছে।আমি,নিশি,ঝর্ণাপু,মুনিয়া ও ফাতেমা ঝালমুড়ি নিয়ে খেতে লাগলাম।
এদিক দিয়ে তাওহিদ ভাই তারিন কে আইসক্রিম খাওয়াতে ব্যস্ত আর ভাবি মেয়ের কাপড় চোপড় নস্ট নিয়ে চিন্তিত।কি সুন্দর দৃশ্য একদম পার্ফেক্ট ফ্যামিলি।"

--এর ফাঁকে ফাঁকে জিসান কয়েকবার আমাকে ডেকেছে,তবে আমি পাত্তা দিলাম না।আমার থেকে বিড়ি তোর কাছে বেশি ইম্পোরটেন্ট তাই না,তো বিড়ি ফুক গিয়ে ফাজিল।

"আর নিশি সে তো রায়হান ভাইকে ছাড়া বিন্দাস ঘুড়তাছে এন্জয় করছে।ওর এমন আচরণে ব্যাচারা ভাই আমার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।
বড়রা যখন চা খেতে ব্যস্ত তখন রায়হান ভাই এই ফাকে নিশিকে নিয়ে ফুরৎ হয়ে গেলো।ঝালমুড়ির শোকে কাতর নিশি বার বার পিছন গুড়ে তাকাচ্ছে।আর বলছে আমার ঝালমুড়ি!"

--এখানে সামনেই একটা জায়গা আছে যেখানে পাথরের বুকে প্রিয়জনদের নামটি লিখিয়ে নেওয়া যায়।তাই রায়হান নিশিকে সেখানেই নিয়ে এসেছে।নিজেদের নাম এখানে লিখে যাবে আজ ওরা।পছন্দ মতো একটা পাথর খুঁজে দুজন দুজনের নাম লিখে নামটি চিরস্থায়ী করে দিলো আজ পাথরের বুকে।

                       "অনেকক্ষণ ঘুড়ে ফিরে আমরা ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরলাম।বাড়ীতে ফিরেও আমি জিসানকে এভোয়েড করতে লাগলাম।বুঝক এবার,কাউকে এভোয়েড করলে কেমন লাগে।রাতে আমরা সবাই এক সাথেই ডিনার করলাম।শরীর খুব ক্লান্ত তবুও মামীদের কাজে কিছু সাহায্য করলাম,তারা মানা করলো অনেকবার।কিন্তু নিজের বিবেক বলতেও কিছু আছে।আর ভাবীও নেই,তারিনকে ঘুম পাড়াতে চলে যেতে হয়েছে।"
_________
প্লান করলাম আজ আমরা মেয়েরা একসাথে ঘুমাবো। আর লেট নাইট জেগে গল্প করবো।যেমন কথা তেমন কাজ।নিশি,আমি,ঝর্ণাপু,মুনিয়া,ফাতেমা একসাথে বসে গল্পে মেতে উঠলাম আমরা।

              --রায়হান করিডোর এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাগে ফুসফুস করছে।ঠিক তখনি জিসান এসে,ওই আমার বউ কে দেখেছিস।
"রায়হান একটু বিরক্তে হয়ে,তোর বউ আমার বউকে নিয়ে পার্টি করছে।"

--মানে!জিসান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে। 

"মানে হলো,তোর বোনেরা আর আমার বোন মিলে প্লানিং করছে উনারা আজ একসাথে থাকবে।আর আমাদের আজ একা একা ঘুমাতে বলে গিয়েছে।আরে তোর তো বিয়ে হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো।কিন্তু আমার তো এক সপ্তাহও হয়নি ইয়ার।
আর এখনই বউকে নিয়ে চলে গেলো।আমাকে জ্বালাতে বেশ ভালোই মজা লাগছে এদের জানিস।"

                    --জিসান রায়হানের দিকে তাকিয়ে,তোর বোনটা আজ একটু বেশিই উড়ছে,বুঝলি।সকাল থেকে ওর নাটক দেখছি।সারাদিন এভোয়েড করে চলছে।একবার হাতে পাই তার পর বুঝাচ্ছি।

"-রায়হান ফোনে নিশিকে ম্যাসেজ করতে করতে বলছে।আগে পেয়েনে।আজ রাত আর কেউ ধরা দেবে না।"

--জিসান দাঁতেদাঁত কটমটিয়ে চলে গেলো।তিশাকে দেখে নিবে আজ ও।

"নিশি,তিশা,ঝর্ণা,মুনিয়া,ফাতেমা পাঁচজন মিলে তুমুল গল্পে মেতেছে।মুনিয়া আর ফাতেমার স্কুলের থাকাকালীন কি কি দুষ্টুমি করেছে এসব শুনে সবাই হাসিতে গড়াগড়ি করছে।মুনিয়া ও ফাতমা মেয়ে দুটো খুব চঞ্চল।এমন এমন কথা বলে যে না হেসে পারা যায় না।তবে ঝর্ণাপু একটু গম্ভীর প্রকৃতির। খুব কম কথা বলে।তবে না বলে পারছি না,ঝর্ণাপু দেখতে খুব সুন্দর।ঠিক পাহাড়ি ঝর্ণার মতো শুভ্রতা যেনো তার সারা মুখে বিরাজ করছে।"

                --জিসান ফাতেমা কে ম্যাসেজ করলো।ফাতেমা ম্যাসেজটা পরে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে তিশা ও নিশির কথা শুনছে। আসলে মাথায় কিছু একটা বুদ্ধি আঠছে এই মেয়ে।মুনিয়াকে চোখের ইশারায় কি বুঝালো আল্লাহই যানে,মুনিয়া কাশতে লাগলো হঠাৎ।বলাবহুল্য মেয়ে দুটো ধারুন স্ম্যাট।চোখ দিয়ে এক জন আরেক জনকে বুঝিয়ে দেয় কি করতে হবে।

"মুনিয়ার কাশি দেখে,আমি পানি দিতে গিয়ে দেখি পানি নেই জগে।"

-ঝর্ণাপু পানি আনতে বাহিরে যেতে নিলে,ফাতেমা চেঁচিয়ে উঠে।আপু তুমি কেনো যাচ্ছো। ভাবি যাবে।কি ভাবি যাবে না।

"তিশা ফাতেমার কথার কোনও আগামাথা কিছুই বুঝলো না,তাই জগটা নিয়ে রুম থেকে বের হলো পানি আনতে।"

                    --তিশা পানি নিতে কিচেনের দিকে যেতে নিলেই,হঠাৎ কেউ পিছন দিয়ে মুখটা চেপে ধরেই কানের কাছে মুখ নিয়ে হুসসস.....বলে।
একদম চুপ জান,তা না হলে বাড়ীর সবাই জেগে যাবে।আর আমাকে চোর ভাববে।

"তিশার চিন্তে আর বাকি রইলো না,এটা ওরি হাসবেন্ড।
তিশা নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে বলে,জিসান এভাবেই তিশাকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে ছাড়লো।"

--তিশা তো রেগেমেগে ফায়ার।জিসানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।

            " জিসান তিশার রাগের কোনও তোয়াক্কা না করেই,সামনে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো,
সমস্যা কি?সকাল ধরে এমন নাটক করছিস কেনো।"

--জিসানের এমন আগানোতে তিশা প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও,এখন রাগ হলো। 
কি! আমি নাটক করছি।তার মানে কি আমি নাটক বাজ।আর আপনি! আপনি কি?সকালে আমাকে যে এভোয়েড করছেন সেটা কি?আপনি করলে মহৎ আর আমি করলেই দোষী।
সরুন, আমাকে যেতে দিন।আজ আমি ওই ঘরে ঘুমাবো ওদের সাথে।
তিশা রাগ দেখিয়ে যেতে নিলে,জিসান হাতটা ধরে হেচকা টান মারে।আর তিশা গিয়ে পরে জিসানের বুকে।

"তিশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে,কি বললি তুই,এখানে এসে মনে হয় মুখটা একটু বেশি ফুটে গিয়েছে।নতুন কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি।"

                --হুম,হয়েছে তো।কেনো আপনি জানেন না।কালই তো বললাম।এমনেও নানাজান আপনার থেকে বেশি হ্যান্ডশাম,আমি তো প্লানিং........। 
জিসান তিশাকে আর কিছু বলতে দিলো না।এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দিয়ে তিশার উপর উঠে পড়লো।

-"তিশা এতোক্ষন রণচণ্ডী হয়ে কথা বললেও এখন ভয়ে চুপছে গেলো ব্যাচারী।"

--জিসান তিশাকে বিছানায় আটকে ফেলে।সাহস দেখি একটু বেশি হয়ে গিয়েছে তোর।আমার সামনে আরেকজন পুরুষের তারিফ করছিস।

"-আ আ রে ক জ জন ককই।আমি তো নানা জানের কথা বলছি।"

--তো,নানাজান কি পুরুষ না।

"-ক কি সব বলছেন।আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন।নিজের নানাকে কেউ হিংসা করে।"

--জান,নানা হোক বা দাদা,তোর মুখে আমি অন্যকোনও পুরুষের নামও শুনতে চাই না।তোর মন,প্রাণে মস্তিষ্কে শুধু এই জিসানের বসবাস হবে।আর কারো না।

"-আপনি একটা সাইকো জানেন।"

--জানি তো,তোর জন্য।এখন দেখ এই সাইকো কি করে।

"-ক ককি করবেন।(তিশা)"

--কি আবার! সারাদিন আমাকে ইগনোর করেছিস, আবার এখন আমাকে রেখে ওই রুমে ঘুমাতে গিয়েছিস।আমার থেকে দূরে থাকার প্লানিং করেছিস।তার জন্য শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না জান।

"তিশা চোখ দুটো বড় বড় করে জিসানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ডোক গিললো।
কি?"

     -- জিসান আর কিছু না বলেই,তিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে একটা কামড় দিয়ে দিলো।
"তিশা চেঁচিয়ে উঠে জিসানকে বকতে লাগলো।
তিশার চিল্লাচিল্লিতে জিসানের মেঝাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।তাই তিশার আচলটা সরিয়ে আরো কয়েকটা কামড় দিয়ে দিলো।"
___________
"রায়হান এর ম্যাসেজ পেয়ে নিশি নিজেই বোনদের রুমে ফেলে ছাদে চলে এলো।ছাদে এসে দেখে রায়হান রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।"

--নিশিও গিয়ে ঝট করে রায়হানের দুহাতের মাঝে ঢুকে গিয়ে রায়হানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

                       " কিন্তু রায়হান অভিমান করে ধরলো না নিশিকে।এখন আসার সময় হয়েছে তোর।আর আসলি কেনো।চলে যা, লাগবে না তোকে আমার।একটু রেগে।"

--নিশি রায়হানের বুকে একটা কিস করে,সরি। কি করবো,আমিতো আসতেই নিয়েছিলাম।কিন্তু তিশা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো ওর সাথে।আমি ওকে কি করে বলি,বোনরে আমাকে ছেড়ে দে।আর তোর ভাইয়ের কাছে যেতে দে।
নিশি মাথাটা উঠিয়ে,কি ভাববে ও.....।

"রায়হান এবার নিশির মুখটা নিজের দুহাতে ধরে,ভাববে ওর বান্ধবী ওর ভাইয়ের প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছে।
নিশি লজ্জায়,মুখটা নামিয়ে, ধ্যাত কি যে বলেন।"

                      --আকাশে বিশাল একটি চাঁদ।আর দূর থেকে ভেসে আসছে পানির শোঁ শোঁ শব্দ।একজোড়া নতুন কপতকপতি ছাদে দাঁড়িয়ে আজ জ্যোৎস্না বিলাস করছে।অদ্ভুত এক পরিবেশ।
দুজনের মনে যেনো প্রেম এসে সারা দিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর নিশির ঘাড়ে রায়হানের ঠোঁটের স্পর্শে শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে।দুজন নবো দম্পতী খোলা আকাশে আজ ভালোবাসায় নিজেকে মত্ত করে তুলছে। আর দূরের সেই চাঁদটাও যেনো আজ লজ্জায় মেঘের আড়াল হতে চাইছে।

"আরো দুদিন কেটে গেলো আমাদের এখানে।এই দুদিন আমরা বিছনাকান্দি,জৈন্তা রাজবাড়ী,দিঘি,খাসিয়াপারা ও সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্রে ঘুড়েছি।
আজ জিসান ওর মামাদের সাথে বের হয়েছে।আশেপাশে উনাদের সব কিছু জিসানকে ঘুড়িয়ে দেখাবার জন্য।সবার সাথে পরিচয়ও করে দিয়েছে।পরিচিত অনেকেই জিসানকে দেখে চোখদুটো ছলছল হয়ে গিয়েছিলো।অবশেষে জিসানকে ওদের পারিবারিক কবর স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো।এখানে ওর মায়ের কবরটিও আছে।জিসান সামনে যাওয়ার সাহস পেলো না।কারণ মায়ের কবরটি দেখেই দুচোখের কোনায় জল ঝমে গেলো।বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা অনুভোব করলো।তাই ও ফিরে চলে আসলো বাসায়।"

                -- এই কয়েকদিনে এই বাড়ীর সবার সাথে একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।বোনেরা তো মনো হয় চোখে হারায় জিসানকে।নানাজানও মনে হয় জিসানকে পেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছে।মায়ের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে জিসান নানার থেকে।
জিসানের মনে একটু অপসোস হলো,আরো আগে জানতে পারলে হয়তো এই পরিবারের সবাই এতো কস্ট পেতো না।

-"আজ আমরা ঢাকায় ফিরছি।তবে রায়হান ভাই ও নিশি কাল রাতেই চলে গিয়েছে কক্সবাজার।ওদের হানিমুনে।তাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসলাম ঢাকায়।তবে এ কয়েক দিনগুলো খুব সুন্দর কেটেছে।সিলেটের প্রতি কেনো জানি এক মায়া জেগে গিয়েছে।জিসান বলেছে আমরা আবার আসবো।অবশ্যই আসবো।"

                   -- সুখের দিন গুলো খুব ছোট হয় সত্যিই।দেখতে দেখতে কিভাবে যেনো আমাদের বিয়ের তিনমাস পার হয়ে গেলো।এই তিনমাসে আমার আর জিসানের ভালোবাসা কমেনি বরং আগে থেকে অনেক বেড়েছে।ছোট খাটো মান অভিমানগুলো নিজেদের ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছি দুজনে মিলে।

"এরি মধ্যে একদিন ভার্সিটি গিয়ে জানতে পারলাম, নিলুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আবির ভাইয়ের সাথে।খুশিতে আমিতো লাফিয়ে উঠলাম।বেস্টির বিয়ে বলে কথা।কিন্তু পরক্ষণে হিটলার এর কথা মনে করে মুখটা চুই হয়ে গেলো।আমার চুপছে যাওয়া মুখখানি দেখে নিশি জিঙ্গেস করলো সমস্যা কি।"

--আমি নিশির দিকে তাকিয়ে,জিসান।তোর ভাই।

"মানে।(নিশি)"

--মানে আবির ভাইয়ার নাম শুনলেই চেতে যায়।আমাকে কি বিয়েতে আসতে দেবে।মনে হয় না।

"আরে তুই বেশি চিন্তা করছিস।ভাইকে বুঝিয়ে বললেই হবে।"

--হুম, দেখি।চল এবার উঠি।

              -- রাতে ডিনার করে রুমে এসে দেখি সাহেব আমার সোফায় বসে কাজ করছে লেপটপে।কেমন যপনো চিন্তিত চিন্তিত লাগছে উনাকে।তার মুখের বিষণ্ণতা দেখেতো আমার আর সাহসই হচ্ছে না বলতে।কি করি।কিভাবে বলি।বিছানায় বসে দাঁত দিয়ে নক কাটতে কাটতে ভাবছি।

"-জিসানের চোখ লেপটপে থাকলেও,ওর আশেপাশের কে কি করছে সবই ও খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।আর তিশাও যে কোনও বিষয় নিয়ে ছটফট করছে তা জিসানের বুঝার বাকি নেই।
হঠাৎ জিসান লেপটপে চোখ রেখেই তিশাকে ধমক দিলো।কি করছিস এসব।এভাবে দাঁত দিয়ে নক কাটছিস কেনো।আর মুখটা সেই কখন ধরে পেঁচার মতো করে আছিস।সমস্যা কি?"

                    -- জিসানের ধমকে তিশার মনটা ভেঙ্গে গেলো।তাই রাগ করে চুপচাপ বিছানার অন্যপাশে শুয়ে পড়লো।বলবে না কিছু জিসানকে।

"হঠাৎ তিশার সাথে এমন আচরণ করায় জিসানও অবাক হলো।রাগ উঠছে নিজের উপর এখন।শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিলো।জিসানও লেপটপটা বন্ধ করে শুতে চলে গেলো।"

--তিশাকে হালকা জড়িয়ে ধরে,সরি জান।মাথাটা ঠিক ছিলো না।তাই হয়তো এমন করে ফেলেছি।সরি।

"ইটস ওকে,আমি কিছু মনে করেনি।ঘুমান এখন।তিশা জিসানের দিকে না তাকিয়েই কথাটা বললো।"

--জিসান তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে টেনে নিলো।রাগ না করলে এখানে ঘুমা।রাগ করে মুখ ফুলিয়ে আমার থেকে দূরে থাকার চেস্টা করলে লাভ নেই।দিন শেষে আমার বুকেই তোর জায়গা বুঝলি।

"তিশা এবার হেসে দিলো,আসলেই লোকটি পাগল।"

--এবার বলতো কি ভাবছিলি।

"আ আস লে।"

--হুম, বল।আমি শুনছি।

"নিলুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।"

--ও গ্রেট।এটাতো খুশির কথা।তাহলে তুই এতো টেনশড কেনো।

"বিয়ে আবির ভাইয়ের সাথে।"

--তা তো জানি,তো।

"আমি যাবো?"

--তাহলে যা,তকে মানা করেছে কে?সোপিং করার হলে করে ফেল,এটা বলতে এতো ভাবার কি আছে।

"তিশা মাথাটা হালাকা উঠিয়ে,জিসানের দিকে তাকালো।আমি ভেবেছিলাম,আবির ভাইয়ের কারনে আপনি আমাকে যেতে দিবেন না।"

--পাগল নিই।আবিরের চ্যাপ্টার অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে।তাহলে এসব নিয়ে আজাইরা টেনশন একদম করবি না।ঠিক আছে।

" হুম,আমিও এখন জিসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেস্টা করলাম।
আর জিসান তিশার চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।জিসান কিছু একটা নিয়ে টেনশড আছে।কি নিয়ে তা জিসানই জানে।কিন্তু এই টেনশনের ছায়া তিশার উপর পড়তে দিবে না।"
___________
--নিশি ও তিশা মিলে সোপিং করে নিলো।দুদিন পর নিলুর গায়ে হলুদ।জিসান,তিশা,রায়হান ও নিশিও গেলো গায়ে হলুদে।রায়হান ও জিসান কাউকে চিনে না বলে,তেমন আনন্দ না করতে পারলোও নিশি ও তিশা বেশ আনন্দও করছে নিশুর হলুদে।পরের দিন নিলুর ও আবিরের বিয়েটাও হয়ে গেলো।
আবির ভাই খুব পলেয়েটলি জিসানের সাথে হ্যান্ডসেক করে কথাবার্তা বললো।অবশেষে আমরা তিন বান্ধবী এখন বিবাহিত হয়ে গেলাম।

                     "এরপরও বেশ কিছুদিন ভালোই গেলো আমাদের।তবে এরি মাঝে একদিন হঠাৎ জিসান কথোগুলো পেপার এনে আমাকে বললো সাইন করতে।আমিও আর কিছু না বলে পেপারগুলো সাইন করে দিলাম।জিসান বলতে চেয়েছিলো পেপারগুলোতে কি আছে। কিন্তু আমি শুনতে চাই নিই।কি দরকার।আমি জানি জিসান বিনা কারণে কিছু করে না।এর পিছনেও কোনও কারণ আছে,যা সময় হলে আমি যেনে যাবো।আর সব থেকে বড় কথা বিশ্বাস। যা উনার প্রতি আমার আছে। "

--এভাবে আরো একমাস কেটে গেলো।হঠাৎ একদিন মোবাইলে এক অদ্ভুট ম্যাসেজ আসলো,তাও আবার প্রাইভেট নাম্বার থেকে।সিন করে দেখি----

"গল্প যেখান থেকে শুরু হয়েছে,গল্প সেখানে এসেই শেষ হবে।তবে এবার আমার মতো করে।জাস্ট ওয়েট ফর মি"।

--আমি কিছুটা অবাক হলাম।জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হলে,আপনি আমার সাথে আবার ফাইজলামি করছেন। জিসান ভ্রটা কুঁচকিয়ে,কি যা তা বলছিস।কি হয়েছে বলতো।

"-আমি ফোনটা জিসানের মুখের সামনে এনে,এই যে প্রাইভেট নাম্বার থেকে আবার ম্যাসেজ আসছে।"

--জিসান ম্যাসেজটা দেখে,এবার আমি করিনি জান।এর আগেরবার আমি ফাইজলামি করেছিলাম তোকে ভয় দেখাবার জন্য।কিন্তু এবার আমি করিনি সত্যিই ।

"-তিশা একটু টেনশড হয়ে পড়লো,তাহলে কে করছে।"

--জিসান তিশার হাতটি ধরে কাছে টেনে নিলো,এতো টেনশড নেওয়ার কিছুই নেই।হয়তো কেউ ভুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।বা কেউ ফাইজলামি করেছে। রিলেক্স!

"তিশার বড়খালা মনি কিছুদিন হলো তিশাদের বাড়ীতে এসেছে।কিন্তু সে নিশিকে দেখতেই পারে না।আসলে তার মেয়ের জন্য রায়হান কে বলেছিলো।কিন্ত রায়হান বিয়ে করে আনলো নিশিকে।
তাই আসার পর থেকেই নিশির উপর একটু শোধ উঠাতে প্রত্যেকটা কাজে খুট ধরে চলছে।
একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই অনেক কথা শুনিয়ে দেয়।রেনু বেগমও পড়েছে মহা জ্বালায়। বড় বোনকে বার বার নিশেধ করে ও চুপ করাতে পারছে না।এগুলো নিশি রায়হানের কানে যেতে না দিলেও,রায়হান যেনে যায় হঠাৎ একদিন।
প্রচণ্ড রেগে খালাকে নিজের বাসায় চলো যেতে বলে।খালা চলে যাওয়ার সময় রায়হান শুধু একটা একথাই বললো।

"খালা আমার বউ কালা হোক বা ধোলা।কাজ করতে পারুক বা না পারুক।এসব আমি বুঝবো।আর আমার যেহেতু এসবে মাথা ব্যাথা নেই,তাহলে আপনাদেরও থাকার কথা না।"

--রায়হান এর খালামনি রাগে,অপমানে চলে গেলো সেখান থেকে।আর রেণুবেগম ও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

"জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাদা শুট বুট পরে নেমে আসলো অচেনা ব্যক্তিটি।এয়ার্পোট থেকে বের হয়ে গাড়ীর সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির সাথে হাত মিলালো।"

--হ্যালো ডক্তর। কেমন আছো।(অচেনা ব্যক্তিটি)

"হ্যালো এ.কে।ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ। "

--থ্যাংকস।নাউ টেল মি, আমাদের প্লান কতো দূর।

"অলমোস্ট ডান।খুব শীঘ্রই রেজাল্ট পাবে।এবার আর কোনও ভুল হবে না।"

--রিয়েলি!এ.কে একটু বাকা হেসে।(মনে মনে ভাবছে মিসেস তিশা আহমেদ এবার আমার থেকে বেঁচে দেখিও)

"বাকি কথা গাড়ীতে উঠে বলি।(ডক্তর)"

--ইয়া।
.
.
.
চলবে...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp