ভালোবাসবো যে তোকে - পর্ব ০৫ - সিজন ২ - সারা মেহেক - ধারাবাহিক গল্প


রাহাতের হাত কে মুচড়ে ধরেছে এটা দেখার জন্য মৌ চোখ তুলে তাকালো।সে আয়ানকে দেখতে পেলো।আয়ানের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। এদিকে রাহাত ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।।কারন আয়ান রাহাতের হাতটা বেশ জোরে করেই ধরেছে।

রাহাত বললো,

"আয়ান আমার হাত এভাবে কেনো ধরেছিস??ব্যাথা লাগছে তো।ছেড়ে দে আমার হাতটা।"

আয়ান রাগে বললো,

"তোর হাত কেনো ধরেছি সেটা জানিস না তুই??"

"না বললে জানবো কিভাবে??আর আগে প্লিজ তুই আমার হাতটা ছাড়।"

"তুই মৌ এর হাত এভাবে ধরেছিস কেনো??"

রাহাত আমতা আমতা করে বললো,

"সেটা তোর জানতে হবে না। আমি ওর সাথে কথা বলছিলাম। আর ওর সাথে আমার কিছু কাজ ও ছিলো তাই।"

"ওহ,তাই। কি এমন কথা আর কাজ আছে যার জন্য তোকে ওর হাত এভাবে ধরতে হলো??বল?"

এবার রাহাত বলেই দিলো,

"আমি মৌ কে ভালোবাসি।এটা বলতে এসেছিলাম।"

এ কথা শুনে যেনো আয়ানের রাগ আরো বেড়ে গেলো।সে রাহাতের মুখ বরাবর একটা ঘুষি মেরে দিলো।এতে রাহাত পরে গেলো।তার ঠোটের কাছে দিয়ে একটু রক্তও বের হলো। মৌ রাহাতকে মারা দেখে আয়ানকে থামাতে গেলো। আয়ান থেমেও যেতো কিন্তু রাহাত রেগে উঠে আয়ানকেও একটা ঘুষি মারলো।এতে আয়ান ভড়কে গেলো।রীতিমত ছোটোখাটো মারামারি শুরু হয়ে গেলো। মৌ থামাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। রাহাত আর আয়ানের মারামারি দেখে আশেপাশের লোকজন চলে এলো।তারাই শেষপর্যন্ত মারামারি থামালো। সবাই তে আয়ান আর রাহাতকে পুলিশে দিতে চাইলো। কিন্তু মৌ এর অনেকবার রিকুয়েস্ট করায় দিলো না।

রাহাত তো সেখান থেকে চলে গেলো। কিন্তু মনে নিয়ে গেলো অজস্র রাগ আর প্রতিশোধ। 

মৌ কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যেতে নিলো।কিন্তু আয়ান পথ আটকে দাড়াঁলো।

"মৌ তোমার সাথে কিছু কথা বলার আছে।"

মৌ হাটতে হাটতে বলে,

"কিন্তু আপনার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা নেই আমার।"

"প্লিজ মৌ শুনো একবার আমার কথাগুলো।"

মৌ আর কিছু না বলে চলার পথে যে রিকশা পায় তাতে উঠে পরে। আয়ান আর কিছু বলতে পারে না। কারন সে জানে মৌ হয়তো এখন তার কোনো কথাই শুনবে না।

🍁
🍁

দুদিন পরে আয়ান মৌ এর বাসায় আসে মৌ এর সাথে কথা বলার জন্য। সুযোগ বেশ ভালো পায়। কারন বাসায় জান্নাগ আর মৌ ছাড়া কেউ ছিলোনা।
আয়ানকে দেখে জান্নাত জিজ্ঞাসা করে,

"আয়ান ভাইয়া আপনি হঠাৎ??"

"কেনো ভাবি আসা কি মানা নাকি?"

"আরে না।তেমন কিছু না।আসলে মাহতাব তে বাসায় নেই।"

"ওহ।তাহলে আমি ওর জন্য ওয়েট করছি।"

"ঠিক আছে ভাইয়া। আপনি বসুন।"

জান্নাতকে আয়ান বলে যে সে মাহতাব এর সাথে দেখা করতে এসেছে।কিন্তু আসলে তো সে মৌ এর সাথে দেখা করতে এসেছে।

জান্নাত রান্নাঘরে গেলে আয়ান পা বাড়ায় মৌ এর রুমের দিকে।সে গিয়ে দেখে,মৌ বিছানায় বসে বসে ফোন টিপছে।
আয়ান গিয়ে মৌ এর সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছু বলে না। 
নিজের সামনে কে দাঁড়ীয়ে আছে সেটা দেখার জন্য মৌ চোখ তুলে।আয়ানকে তার সামনে দেখতে পেয়ে সে তো অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আয়ানকে বলে,

"আপনি এখানে কিভাবে??আর কেনো এসেছেন??"

আয়ান ভাব নিয়ে বলে,

"কিভাবে আসবে আবার। অবশ্যই পা দিয়ে হেঁটে এসেছি।আর কেনো এসেছি তার জবাব হলো,তোমার সাথে সেদিন কথা হয়নি,তাই সেটা বলার জন্য এসেছি।"

"আপনি প্লিজ চলে যান এখান থেকে।আপনার সাথে আমার কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।"

"কেনো??আমি কি করেছি??"

"সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে। আপনি এখান থেকে যান প্লিজ। ভাবি যদি জানতে পারে যে আপনি আমার রুমে তাহলে অনেক বড় কান্ড হয়ে যাবে।"

আয়ান মৌ এর দিকে এগুতে এগুতে বলে,

"হোক বড় কান্ড।আজকে আমি আমার কথা বলেই যাবো এখান থেকে।"

🍁🍁🍁

মৌ বিরক্তি নিয়ে বললো,
"যা বলার প্লিজ তাড়াতাড়ি বলুন।আমি চাচ্ছি না যে কোনো সমস্যা হোক।"

আয়ান আর কিছু না বলে মৌ এর সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,

"আই লাভ ইউ মৌ।আই রিয়েলি লাভ ইউ।
তোমাকে যে আমি এতো কম সময়ের মধ্যে এভাবে ভালোবেসে ফেলবো তা আমি নিজেও বুঝি নি।আমার তোমাকে চাই,খুব করে চাই। একদিন, দুদিনের জন্য নয়,সারাজীবনের জন্য চাই। কেউ যে কারোর প্রেমে এতোটা বিভোর হতে পারে জানা ছিলো না। কেউ যে কাউকে এতো ভালোবাসতে পারে তা জানা ছিলো না আমার।"

আয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই মৌ মুখ বাকিয়ে বললো, 

"কেউ যে এতোটাও নাটক করতে পারে এটা জানা ছিলো না আমার।"

মৌ এর কথায় আয়ান অবাক হয়ে যায়। সে সোজা হয়ে দাড়ীঁয়ে বলে,

"নাটক!!এখানে নাটকের কি দেখলে তুমি??"

"নাটক নয়তো কি।আপনি আমাকে ভালোবাসেন!!
হাসালেন আমাকে।আপনার মতো মেয়েদের নিয়ে খেলা ছেলেরা কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারেনা। তারা পারে শুধু মন নিয়ে খেলতে।"

আয়ান যেনো অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। মৌ যে এভাবে তাকে বলবে সে ভাবেনি।সে বলল,

"বিশ্বাস করো মৌ আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালেবাসি। এটা মিথ্যা না।মানলাম আমি অনেক মেয়ের মন নিয়ে খেলেছি।কিন্তু ওগুলো যাস্ট টাইম পাস। আমি এখন মোটেও ওমন নেই।আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।"

"এসব বাদ দিন প্লিজ।আপনার এই 'ভালোবাসি ভালোবাসি 'শুনতে শুনতে আমার কান ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।আপনি যে সত্যিই আমাকো ভালোবাসেন তার প্রমাণ কি?এমনও তো হতে পারে যে আপনার দুদিনের গার্লফ্রেন্ডদের মতো আমাকেও ছেড়ে দিলেন।আমাকেও আর ভালো লাগলো না। "

আয়ান করুন স্বরে বললো,

"মৌ বিশ্বাস করো,আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।আমি কখনো তোমার সাথে এমন করবো না। কারন আমি তোমাকো সত্যি ভালোবাসি।তুমি ওসব মেয়েদের মতো নও। তাই তোমাকে ভালোবাসি। 
আচ্ছা কি করলে তুমি আমার কথায় বিশ্বাস করবে??"

"আপনাকে কিছুই করতে হবে না। কারন যাই করুন না কেনো,আপনার কোনো কথায় বিশ্বাস হবে ন আমার। মোট কথা আপনার মতো ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই। আজকে এক মেয়ে তো কালকে আরেক মেয়ে। আপনার মতো মানুষেরা বিয়ের পরেও শুধরায় না। বিয়ের পরেও পরকিয়ার মতো জঘন্য কাজ করে।"

এবার আয়ানের রাগ উঠে যায়। সে এতোক্ষন অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু এখন আর পারছে না। সে রেগে মৌ এর কাছে গিয়ে মৌ এর হাত শক্ত করে চেপে ধরে। এতোক্ষন মৌ শক্ত থাকলেও এখন সে ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আয়ানের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে মৌ এর হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে বলে,

"তোমাকে সেই কখন থেকে বুঝাচ্ছি কিন্তু তুমি বুঝতেই চাচ্ছো না। এতো কিসের জেদ শুনি??"

মৌ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

"এটা কোনো জেদ না। যা সত্যিই তাই বলছি। আপনার মতো ছেলেরা ভালেবাসতে জানে না। কোনো মেয়েই আপনাকে ভালেবাসবে না। আর আপনিও কাউকে ভালেবাসবেন না।"

আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

"তুমি কি জানো আমার পিছনে কতো মেয়ে পরে থাকে??কতো মেয়ে চায় যে আমি তাকে আমার গার্লফ্রেন্ড বানাই??কিন্তু আমি সবাইকে পাত্তা দেইনা।তোমাকে ভালোবাসি বলে স্বীকার করলাম।,আর তুমি আমাকে এভাবে অপমান করছো!!কি কারনে হুম??"

আয়ান মৌ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবারো বললো,

"এই তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো না তো?? ঐ রাহাতকে আবার ভালোবাসো না তো?"

এবার মৌ বলে,

"আমি কাউকে ভালোবাসি কি না, এটা আপনাকে বলতে যাবো কেনো??আমি যদি কাউকে ভালোবেসেই থাকি আপনাকে তো বলবো না।"

এবার আয়ানের রাগ যেনো চড়ে বসে। সে মৌ এর হাত এতো জোরে চেপে ধরে যে, মৌ এর মনে হচ্ছে আয়ানের আঙ্গুল গুলো তার হাতের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।মৌ এর চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে। কিন্তু আয়ান এর এদিকে খেয়াল নেই।

আয়ান এবার রাগের মাথায় মৌ এর সাথে তুই করে কথা বলা শুরু করে দেয়,

"খবরদার অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা মুখে আনবি না। তুই শুধু আমাকে ভালোবাসবি, অন্য কাউকে না। এ মুখে শুধু আমার নাম থাকবে। যদি অন্য কাউকে ভালোবেসেই থাকিস তাহলে মনে রাখিস,সে শেষ। আমার হাত থেকে তাকে বাঁচানো অনেক কষ্টকরই হয়ে যাবে। 
তোকে তো কিছু করবো না। কারন তোকে তো আমি ভালোবাসি।"

আয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই জান্নাত চলে আসে মৌ এর রুমে। আয়ান আর মৌ কে এভাবে দেখে তো জান্নাত পুরো থ বনে যায়।তার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে যে আয়ান আর মৌ এখানে এভাবে কেনো??
পরক্ষনে তার মনে আসে যে কিছুক্ষন পর তো মাহতাব চলে আসবে। সে যদি এভাবে তাদের দুজনকে দেখে তাহলে না জানি কি হুলস্থুল কান্ড না বাধিয়ে ফেলে।
সে তাড়াতাড়ি আয়ানকে বলে,

"ভাইয়া,আপনি এখনি চলে যান প্লিজ।কিছুক্ষণের মধ্যেই মাহতাব চলে আসবে। আপনাকে মৌ এর সাথে এভাবে দেখে ফেললে বিপদ হয়ে যাবে।"

জান্নাতের কথায় মনে হলো হুঁশ ফেরে আয়ানের। সে মৌ কে তাড়াতাড়ি ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়।আর মৌ সেখানেই ঠায় দাড়ীঁয়ে রইলো।আয়ানকে সে মূহুর্তে তার কাছে প্রচন্ড ভয়ংকর লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো হয়তো এখনি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।

এদিকে জান্নাত তো শকের মধ্যে আছে। যদিও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বুঝিয়েছে যে আয়ান আর মৌ একে অপরকে পছন্দ করে। কিন্তু সমস্যা হলো মা বাবা মেনে নিবে তো?আর মাহতাব?সে কি চাইবে যে তার বন্ধুর সাথে তার একমাত্র বোনের বিয়ে হোক??কিছুই বুঝতে পারছে না জান্নাত। তাই সে ভাবলো মৌ এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে।কিন্তু তার আগেই মৌ করুন স্বরে বললো,

"ভাবি, তুমি এখন যাবে দয়া করে? আমি একা থাকতে চাচ্ছি কিছুক্ষন। তোমার সাথে পরে কথা বলি??"

মৌ এর কথা শুনে জান্নাত হতাশ ভঙ্গিতে বললো,

"ঠিক আছে।আমি যাচ্ছি তাহলে।"  
বলে জান্নাত চলে গেলো। আর মৌ রুমের দরজা আটকে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে শাওয়ার অন করে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিলো।তার মন এখন শান্ত নেই। মনে হচ্ছে এক প্রকার ঝড় বয়ে গিয়েছে তার মনের উপর দিয়ে।সে আর পারছে না নিতে। কারন তার মনে আয়ানের জন্য একটু হলেও ফিলিংস আছে,যা সে চাইলে নিজের কাছে অস্বীকার করতে পারবে না। 
মৌ জানে না যে সে আয়ানকে ভালোবাসে কি না। কিন্তু এটুকু বুঝতে পেরেছে যে আয়ানের জন্য তার মনে কিছু ফিলিংস আছে।অবশ্য সে চাচ্ছে না যে এই অনুভূতিটা থাকুক। কারন সে পারবে না কষ্ট সইতে।আয়ান যদি তাকে কখনো ধোঁকা দেয় তখন!!!সে কি করে পারবে সইতে??কতো মেয়ের কাছে শুনেছে সে, যে প্রথমে ভালোবাসার মানুষটা ঠিক থাকে।কিন্তু ধীরে ধীরে সে একপ্রকার রূপ বদলায়। এজন্য কতো মেয়ে কষ্ট পেয়েছে। সে চায় না যে সে ও এই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাক।কারন এতোটা কষ্টা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। তার কেনো যেনো আয়ানের উপর ভরসা করতে ইচ্ছা করছে না।
 তার মনটাও বেশ খারাপ একটা জিনিস। কখনো একদিকে তো কখনো অন্যদিকে। কখনো সে সায় দিচ্ছে আয়ানকে বিশ্বাস করো।তো কখনো সে সায় দিচ্ছে আয়ানকে বিশ্বাস করো না। 
কিন্তু আজকে আয়ানকে দেখে মৌ এর মনে হলো যে আয়ান সত্যিই তাকে ভালোবাসে।হয়তো সে নিজেও আয়ানকেও ভালোবাসে।কিন্তু সে চায়না যে এই ভালোবাসাটা বাড়ুক। এতে তার নিজেরই কষ্ট। কোনো একটা উপায় লাগবে এটা থেকে বের হতে।
নাহ আর পারছে না চিন্তা করতে। মাথা হ্যাং হয়ে গেলো মনে হয়। কান্না পাচ্ছে খুব। ইচ্ছা করছে জোরে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে। শেষ পর্যন্ত মনের সাথে তাল মিলিয়ে সে কান্না করলো। ইচ্ছামতো কান্না করলো।

রাতে খাবার খেতে সবাই ডাইনিং একত্রিত হলো। 
সব নিজ নিজ মতো খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ মৌ এর আব্বু বলে উঠলেন,

"তোদের সাথে কিছু বিষয় ডিসকাস করার ছিলো। মৌ এর বিয়ের বিষয়ে।"

আব্বুর মুখে বিয়ের কথা শুনে মৌ এর গলায় ভাত আটকে গেলো।ফলে কাশি শুরু হশে গেলো তার। পরে পানি খেয়ে অবশ্য ঠিক হয়ে যায়।মৌ এর এমন অবস্থা দেখে তার আব্বু বলে,

"আচ্ছা তোরা খেয়ে নে তারপর এ নিয়ে কথা বলবো।"

খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই ড্রইংরুমে বসলো।আব্বু বলা শুরু করলো,

"মাহতাব,আমি আর তোর আম্ম মিলে মৌ এর বিয়ে ঠিক করেছি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে। ইফাত কে তো তুই চিনিস ই।ঐ ছেলেটাই। অনেক ভদ্র আর ফ্যামিলিও খুব ভালো। ছেলে ভালো পোস্টে জব করে।আর কি চাই।"

এসব শুনে মৌ এর মনের অবস্থা যে কি হচ্ছে তা সে নিজেই টের পাচ্ছে।

মৌ এর আব্বু আবারো বললো,

"বিয়েটা কয়েক সপ্তােহর মধ্যেই সারতে হবে। এর পিছনে অবশ্য একটা বড় কারন আছে। আজকে সকালে আমি বাজার করে ফেরার সময় বেশ কয়েকজনের কাছে শুনলাম যে দুদিন আগে দুটো ছেলে মারামারি করছিলো।এবং সেখানে মৌ ও ছিলো। এখন সবাই বলাবলি করছে যে মৌ এর জন্য নাকি সে মারামারি হয়েছে।"

আব্বুর মুখে এ কথা শুনে মৌ দৌড়ে তার আব্বুর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দিলো।
মেয়ের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলেন মৌ এর মা বাবা অবাক হয়ে গেলেন।মৌ এর আব্বু মৌ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

"কি রে মা, কি হয়েছে?এভাবে কান্না করছিস কেনো?"

জবাবে মৌ কিছুই বলে না। শুধু কান্না করতেই থাকে।আব্বু বারবার জিজ্ঞাসা করছে।কিন্তু মৌ কিছুই বলে না।বেশ কিছুক্ষন পর সে কান্না থামায়।
এবার আব্বু বলে,

"আচ্ছা তুই কি বিয়েতে রাজি??"

মৌ কিছুই বলে না। সে ভাবতে পারছে না।কি বলবে সে। রাজি কি হবে??

মৌ এর আব্বু বললো,

"দেখ মা।একটু ভেবে চিন্তে জবাব দিস।কারন এর সাথে আমার মান সম্মান জড়িয়ে আছে।কারন তোর বিয়েটা দিতে পারলে সেদিনকার ঘটনা নিয়ে কেউ আর কিছু বলবে না।"

মৌ এখন পরেছে এক সংকটে।তার মন বলছে মানা করে দিতে।কারন আয়ানকে সে হয়তো ভালোবাসে।যদি আয়ানকে সে ভালোই বাসে তাহলে তো এ বিয়ে করে সে কখনো সুখি হতে পারবে না। কিন্তু সবসময় নিজের সুখ দেখলে চলে না।এখানে তার পরিবারের সম্মানের ব্যাপার আছে।এ বিয়ে করলে সবার সম্মান রক্ষা পাবে। আবার এ বিয়ে করলে আয়ানের প্রতি সব অনুভূতি শেষ হয়ে যাবে। সে তো চাচ্ছিলো এটাই যে এই অনুভূতিটা যাতে আর না বেড়ে যায়। কারন এ অনুভুতিটা তাকে হয়তো ভবিষ্যতে শেষ করে দিবে।
আর কোনো কথা না ভেবে মৌ বললো,

"আমি বিয়েতে রাজি আব্বু।"

এ কথা শুনে সবাই খুব খুশি হলো।কিন্তু জান্নাতের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
.
.
.
চলবে........................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন