ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৪৯ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে গিয়ে,২০বছরের তরুণী নিজের বন্ধুদের ধারাই ধর্ষনের শিকার হয়েছে।শুধু তাই না নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য ধর্ষনের পরে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়েছে।কিন্তু মেয়েটি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।"

---পত্রিকায় শিরোনামটি পড়ে শামসুর রহমান আর পুরোটা পড়তে পাড়লো না।পত্রিকা পড়ার সময় এধরনের ঘটনাগুলো যখনি সামনে আসে,তখনি শামসুর রহমানের তিশার সাথে ঘটে যাওয়া অতিতের সেই জগন্য ঘটনাটির কথা মনে পড়ে যায়।
সেদিন তিশাও ভাগ্য ক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো তা না হলে তিশাও কোনো না কোন পত্রিকার হেডলাইন হয়ে যেতো।হয়তো মেয়েকে সারা জীবনের জন্য হারিয়েও ফেলতে হতো।

'ছোটকাল থেকেই মেয়েটা আমার ভুগছে,প্রথমে এমন একটা জগন্য ঘটনা,তারপর এতো ছোটবয়সে বিয়ে,আর এখন!
এখন যখন মেয়েটার ভাগ্যে কিছুটা সুখ ধরা দিয়েছিলো,আর তখনি এতো অল্প বয়সে বিধবার দাগও লেগে গেলো জীবনে।
মেয়ের কথা চিন্তা হতেই শামসুর রহমানের চোখ দু'টো না চাওয়া সত্যেও ছলছল করে উঠলো।'

---রেনু বেগম চা হাতে স্বামীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করছে সমস্যাটা কোথায়।এরপর
 ট্রি টেবিলে চা টা রেখে স্বামীর পাশে এসে বসলো।স্বামীর লুকানো চোখের জলটা তার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি।এতোবছরের সংসার, কি করে পাড়বে।
স্বামীর কাধে হাত রেখে, 
তিশার কথা ভাবছেন।

"শামসুর রহমান,চোখের চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দিলো,উত্তরে কিছুই বললো না।"

'কিছুক্ষণ পর নিরবতা কেটে,
                     জানো রেনু, আজ মনে হচ্ছে আমার ডিশিসনটাই ঠিক ছিলো।জিসানের সাথে তিশাকে আমার দেওয়া উচিৎ হয়নি।আজ যদি জিসানের সাথে তিশার বিয়েটা না হতো,তাহলে তিশাকেও সারা জীবনের জন্য এমন একটা কষ্ট বহন করতে হতো না।তখন যদি একটু কঠোর হতে পাড়তাম,তাহলে হয়তো মেয়েটি কিছুদিনের জন্য কষ্ট পেতো।কিন্তু বেঁচেতো থাকতো।এখন তো জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছে।'

---এতো ধৈর্য হারালে কিভাবে হবে বলুন,মেয়ের ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।বাবা মা হিসেবে আমাদের যতোটুকু করার করেছি,বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
আর আমরা হাজার চেষ্টা করে মেয়ের কপালতো পাল্টাতে পাড়বো না।
একটা কথা আছে না,আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।
হয়তো এতেও তিশার জন্য ভালো কিছু লিখা আছে,আপনি এসব ভেবে নিজের শরীর অসুস্থ করবেন না।

'হঠাৎ দু'জনের কথার মাঝে কাজের মেয়ে পলি এসে বলে,আম্মা দেহেনতো কেডা আইছে।'

---রেনু বেগম তাকিয়ে দেখে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।

আরে নিবিড় বাবা,কেমন আছো।দাঁড়িয়ে আছো কেনো। এসো ভেতরে এসো,বসো।
তোমাকে তো আজকাল দেখাই যায় না।এই মামা মামীর কথা ভুলেই গিয়েছো মনে হয়।

'নিবিড় রুমে প্রবেশ করেই প্রথমে সালাম দিলো দু'জনকে।এরপর সিঙ্গেল শোফাটায় বসে জবাব দিলো,
কর্মটাই এমন মামী,না চাওয়া সত্যেও ব্যস্ত থাকতে হয়।কিন্তু আপনাদের ভুলে গিয়েছি,এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।শুধু সময় বের করতে পারিনা।'

---আচ্ছা বুঝতে পারছি,তুমি তোমার মামার সাথে গল্প করো, আমি চা পাঠাচ্ছি তোমার জন্য।

রেনু বেগম যাওয়ার পর নিবিড়ও শামসুর রহমানের সাথে আলাপ করতে লাগলো।তাদের আলাপে তিশার কথা উঠলে,নিবিড় শামসুর রহমানকে সাজেশন দেয় তিশাকে এই বাড়ীতে নিয়ে আসতে।

"কিন্তু নিবিড় তিশা কি আসবে।"

---আসবে না কেনো মামা,ওই বাড়ীতে ওর আপন বলতে আছে কে আর।স্বামী না থাকলে শ্বশুর বাড়ীতে মেয়েদের যে দাম নেই তা জানেন না।
মুখে যতোই মেয়ে বলুক,কিন্তু সময় হলে সবার আসল রুপ দেখাবে।
আর তাছাড়া যার জন্য তিশার ওই বাড়ীতে যাওয়া,এখন যেহেতু সে ব্যক্তিটিই বেঁচে নেই তাহলে তিশা ওখানে কোন অধিকারে আছে।
তাই বলছি কি মামা,উনারা তিশাকে বের করে দেওয়ার আগে আপনি তিশাকে এখানে নিয়ে আসুন।আর তাছাড়া তিশা ও বাড়ীতে যতোদিন থাকবে জিসানকে কোনো দিনও ভুলতে পাড়বে না।এভাবে তো জীবন চলে না।এখন ওর বয়সটা বা কতো।

"শামসুর রহমান খুব গম্ভীর হয়ে কথাগুলো শুনলেন।মনে মনে তিনিও কিছু আওড়াতে লাগলেন।নিবিড়ের কোনও কথা তার কাছে রং বলে মনে হলো না।ঠিকই তো বলেছে নিবিড়,সময় হয়ে গিয়েছে মেয়েকে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসার।"
_________

"জিসান তিশাকে নিজের উপর উঠিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।পাড়লো না জিসান কঠিন হতে,তিশাকে শাস্তি দিতে।
কিভাবে দেবে এই মেয়েটিকে শাস্তি জিসান,মেয়েটিতো ওরই কারণে বারবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।কতোটা ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষ এমন করতে পারে।তিশার এই অবিরাম ভালোবাসা দেখে জিসানের কঠিন মনটা নিমিষে গলে গেলো।"

                            ---অনেক কষ্ট পেয়েছে,অনেক শাস্তিও পেয়েছে আর না।আমি আর কোনও কষ্ট তোর ধারের কাছে আসতে দেবো না।কষ্ট তোকে ছোঁয়ার আগে আমাকে ছুঁতে হবে।এখন থেকে শুধু ভালোবাসা হবে।আমার এই প্রাণপাখীটাকে অনেক ভালোবাসবো।আর ভালোবাসা দিয়েই ওর সব কষ্ট দূর করে দেবো।জিসান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে এসব ভেবেই যাচ্ছে।

"জিসানের বুকে মাথা রেখে তিশা চুপচাপ ছোট বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে।এখানে তিশা যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভোব করছে।এতো শান্তি তিশা এ কয়েকমাসে হয়তো আর পায়নি।ভাবতেই তিশার চোখের একফোটা জল গড়িয়ে জিসানের বুকের উপর পড়লো।"

---জিসান বুঝতে পারে,তিশা আবার কাঁদছে,তাই তিশাকে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নেয়।
'জান' প্লিজ স্টোপ।তোর চোখের জল আমার বুকের ভেতরের জ্বালাটা কিন্তু বাড়িয়ে দেয়।

"তিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে,চোখ দুটো বন্ধ করে বললো,
আমিতো আপনার এই বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদতে চাই।যাতে আজ আমার ভেতরের সব কষ্ট গুলো দূর হয়ে যায়।
আমি তো আপনার বুকে মাথা রেখো চিৎকার করে কাঁদতে চাই।যাতে আপনি বুঝতে পারেন, আপনাকে ছাড়া আমি কি দহনে জ্বলেছি।
আমার প্রতিটি চোখের পানি যাতে আপনাকে মনে করিয়ে দেয়,আপনাকে ছাড়া বাঁচা এই জীবনে আর সম্ভব না।"

---অবশেষে এখন আপনাকে কাছে পেয়ে আপনার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে চাই পরম শান্তিতে আমি।আপনি হয়তো জানেন না আমার প্রত্যেকটা দিন শুরু হতো আপনাকে ভেবে,আর প্রত্যেক রাতে আপনাকে ভেবেই পাড় হতো।কিন্তু আজ আমার সব কষ্ট সুখে পরিণত হয়েছে আপনাকে পেয়ে।
আমি আর কিছুই চাই না।শুধু কথা দিন আমাকে এভাবে একা ছেড়ে কোথাও যাবেন না,বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো,আর মরণ এলেও যেনো দু'জনকে একসাথে নিয়ে যায় আল্লাহ।

"জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে তিশা,আর এসব কিছুর মধ্যে আমার 'তুইটা' সবচেয়ে বেশি দামী।তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একসময় কতো না পাগলামী করেছিলাম,দেখ সেই ভালোবাসায় আজ তুইও পাগলামী করছিস।
অবশেষে বলা যায় আমার তিশা আমার রঙ্গে নিজেকে সম্পূর্ণ রাঙ্গিয়ে নিয়েছে।জিসানের ঠোঁটে ফুটে উঠে এক চিলতি হাসি।খুশিতে আজ মনের বাগানের প্রতিটি ফুল যেনো ফুটে উঠেছে।"

---তিশাও জিসানের বুকে একটা কিস করে,জিসানকে জিঙ্গেস করে,
আচ্ছা এখন বলেনতো কোথায় ছিলেন আপনি এতোদিন,কেনো আমাদের বলেননি?আর এভাবে আরিয়ান সাজার মানেটা কি?
কি হয়েছিলো?

'জিসান তিশার কপালের উপর চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বললো,
সব বলবো,একটু ওয়েট কর 'জান।'

"ওকে,কিন্তু আমাকে এভাবে এতোদিন কষ্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু দিতে হবে।"

---তাই নাকি,আমার সব সম্পত্তি তো তোর নামে আগেই লিখে দিয়েছি,আর আছে এই জীবনটা! তাও তোর নামে।আর কি চাই।

"তিশা জিসানের কানেকানে ফিসফিসিয়ে বললো,আপনার অস্থিত্ব চাই আমার মাঝে।আপনার আর আমার মিলনের একটা অংশ চাই আমি।"

তিশার ইচ্ছাটা শুনে আজ জিসানের চোখদু'টোতে আনন্দের একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরে,
আল্লাহ চাইলে তোর এই ইচ্ছা খুব শীঘ্রই পূরণ হবে জান।এখন চুপ করে শুয়ে থাক।নড়াচড়া করবি না।আমি ঘুমাবো একটু।
তিশাও খুশি হয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
___________

"আজ ১৫দিন পর জিসান আর তিশা ফিরে এলো ঢাকায়।পরিবারের কাউকে এখনো কিছু বলতে না করে,তিশাকে আহমেদ ভিলায় পৌছে দিয়ে জিসান চলে গেলো এখান থেকে ডায়রেক্ট অফিসে।"

----তিশাকে আপাততো কিছুুদিনের জন্য অফিসে আসতে আর বাড়ী থেকে বের হতেও নিশেধ করে দিলো জিসান।কারণ হঠাৎ করে তিশা এতোদিন গায়ব থাকায় নিশ্চয়ই অর্ক খুঁজছে ওকে হারিক্যান নিয়ে।
এতোদিনে অর্ক কিছুনা কিছু নতুন প্লানতো অবশ্যই করেছে।তাই তিশাকে এখন এসব থেকে যতেটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করবে জিসান।

'অফিসে গিয়ে জিসান সর্বপ্রথম নিলয়ের সাথে দেখা করলো।এতোদিনের কাজের সব প্রোগ্রেস রিপোর্ট যেনে দু'জনে ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।পোডাক্ট ডেলিভারির টাইম এসে পড়ছে।তাই লাস্ট মুহুর্তে অর্ক যাতে কোনও ঝামেলা করতে না পারে সে বিষয় নিলয় ও জিসান পুরো খেয়াল রাখছে।'
___________

                        ---শাওয়ারের গরম জলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।পিঠের দিক থেকে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত অর্ক।নিজের প্লান গুলো একের পর এক ফ্লোফ হওয়ায় টেনশনের কোনও কমতি নেই ওর।তার উপর তিশার হঠাৎ করে গায়ব হয়ে যাওয়া।এসব কিছু চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে অর্ক কে।

হঠাৎ রুম থেকে একটি মেয়েলী কন্ঠ কানে আসলে অর্ক শাওয়ারটা বন্ধ করে একটা তোয়াল পেছিয়ে ওয়াসরুম থেকে বাহির হয়ে আসলো।

'ওয়াসরুমে এতোক্ষন কি করো এ কে।শাওয়ার নিতে 
নিতে আবার তিশার কথা মনে করছিলে নাতো।বলেই মেয়েটি হেসে দিলো।'

---অর্কও ছাড়ার পাত্র না,তাই নিজের ড্রেসটা পড়তে পড়তে বললো,
যদি ভেবেও থাকি তাহলে তোমার সমস্যা কি লাবণি।আমার মনে হয়না বেড পার্টনার ছাড়া আমাদের মধ্যে এমন কোনও রিলেশন আছে যার জন্য তুমি জেলাস ফিল করবে।রাইট।

'হু,জেলাস! তাও আবার আমি তোমাকে নিয়ে!নো চান্স এ কে।'

---আই নো ডিয়ার।(এ কে)

'আমি বুঝিনা এ কে ওই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য আজকাল ওর আশিকের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে দিন দিন।'

---অর্ক শ্যাম্পেইনে ভরা একটা গ্লাশ হাতে নিয়ে শোফায় আয়েশ করে বসে লাবনিকে বললো,
কিছুতো একটা আছে লাবণি ওই মেয়ের মধ্যে।যার জন্য ওকে ভিড়ের মাঝেও সবার থেকে আলাদা লাগে।

'লাবণি রাগান্বিত হয়ে অর্ককে জিঙ্গেস করলো,কি আছে এক্সট্রা ওর মাঝে যা আমার মধ্যে নেই।'

---অর্ক নিজের শ্যাম্পেইনর গ্লাশে চুমুক দিয়ে,
                   জানোতো লাবণি আসমানে অনেক তারা আছে,কিন্তু এতো তারাও চাঁদের জায়গাটা নিতে পারেনা।চাঁদ কিন্তু একটি।চাঁদ একটি বলেই সবাই চাঁদকেই পেতে চায়,ছুঁয়ে দেখতে চায়।

'নিজের হাতের রাখা শ্যাম্পেইন এর খালি গ্লাশটা স্বজোরে আছাড় মারে ফ্লোরে লাবণি।
তার মানে তুমি বলতে চাইছো, আমি আসমানের অগণিত তারাগুলোর মধ্যে একটি।যার কোনও ভেলু নেই।'

---না!আমি বলছি,আকাশের হাজার তারা মিলেও রাতের ঘন অন্ধকারকে দূর করতে পারেনা,যা একটি মাত্র চাঁদ পারে।আর জানোই তো সহযে যা পাওয়া যায়,সে বস্তু পাওয়ার আগ্রহ কমে যায়।তুমি হচ্ছো লাবণি তেমনি।
দেখোনা খুব সহযে তুমি আমার বেড পার্টনার হয়ে গেলে,তোমাকে আমার বিছানায় আনতে তেমন কাঠ কয়লা পুড়াতে হয়নি।কিন্তু তিশা সে তো দূর্লভ বস্তু।সহযে ধরাই যায় না।
তোমার স্পর্শে শরীরে শীতলতা বয়ে যায়,কিন্তু তিশা! তাকে ধরতে গেলেই কয়েকশো ভোল্টেজ ঝটকা আগে খেতে হবে।
আর এসব কথাই বাদ দিলাম,তোমার জিসানকেই দেখো।এতো হ্যান্ডশাম, গুডলুকিং একটা ছেলে।মেয়েরা ওকে একটু কাছে পাওয়ার কতোনা চেষ্টা করেছে।আর ও শুধু তিশার জন্য নিজের চাওয়া পাওয়া সব দূরে ঢেলে দিয়েছে বারবার।
এই মেয়েকে পাওয়ার জন্য তোমার জিসানকেও অনেক কাঠকয়লা পুড়াতে হয়েছে।যেখানে তুমি জিসানকে নিজের রুপ,শরীর দিয়েও বশ করতে পারোনি,সেখানে ওই মেয়েটির সাদাসিধে মুখটা করে দিয়েছে।

"অর্ক নিজের গ্লাশটা টেবিলে রেখে,এবার লাবণির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
আর একটা কথা, 
হয়তো তোমার খারাপ লাগবে শুনে,কিন্তু সত্য।ছেলেরা বাহিরে যাই করুক না কেনো,নিজে যতোটা নিচু হোক না কেনো।তবুও বিয়ে করার সময় এমন সাদাসিধে মেয়েই খুঁজে।যেসব মেয়েরা সহযে নিজেকে যার তার সাথে বিলিয়ে দেয়,তাদের একদিনের জন্য বেড পার্টনার করা যায়।জীবন সঙ্গী না।

'তার মানে, তুমি কি তিশাকে বিয়ে করতে চাও।'

---অর্ক তার খালি গ্লাশটি আবার ভরতে ব্যস্ত হয়ে বললো,
আরে দূর,তেমন কিছু না।বিয়ে শাদী আমার জন্য না।আমি ব্যাচেলারি ভালো আছি।আমিতো জিসানের থেকে একটু বদলা নিতে চাই।জিসান আমাকে তিশার পাশে দেখলেই ছটফট করে।আর ওর ওই ছটফটানিতে আমি শান্তি খুঁজে পাই।
আচ্ছা এখন ওসব বাদ দেও,আগে এটা বলো তুমি কি করে বুঝলে, আরিয়ানই জিসান।

'তুমি খবর নিতে না পাড়লেও,আমার লোক কিন্তু সব খবর দিয়েছে আমাকে প্রতিনিয়তো।
আরিয়ান আর তিশা এতোদিন খাগড়াছড়ি ছিলো।আজই নাকি ঢাকায় ফিরেছে।আর ওরা হোটেলে না গিয়ে ওখানকার একটা রিসোর্টে উঠেছিলো।দু'জনের রোমাঞ্চের অনেক পিক আমার কাছে এসেছে,এতে আমি বুঝে গিয়েছে। 
তিশা তো আবার ভদ্র মেয়ে,আর জিসানকে অনেক ভালোবাসে।তাই জিসান ব্যতিত কারো সাথে এমন ঘনিষ্ঠ হবে না কখনো।তাইতো বুঝতে সমস্যা হয়নি তেমন।'

---হুম,বুঝতে পাড়ছি।এখন নেক্সট প্লান কি তোমার।কিছু ভেবেছো।

'লাবণি বিস্ময়কর একটা হাসি দিয়ে,যে মেয়েকে নিয়ে এতো সমস্যা সেই যদি না থাকে তাহলে!'

---লাবণি আই হোপ তুমি ভেবে বলছো তো,কারণ আরিয়ানই যদি জিসান হয়ে থাকে,আর তোমার প্লান সম্পর্কে সামন্যতম যদি ও জানতে পারে,তাহলে তোমার অবস্থা যে জিসান কি করবে তা হয়তো কল্পনায়ও করতে পাড়বে না।
_______________

                          "ড্রয়িংরুমে বসে তিশা তারিনের সাথে খেলার ছলে দুষ্টমিও করছে।তারিন তা দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে।ছোট তারিনের ফাকা দাঁতের হাসি দেখে সাথে তিশাও খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।
ড্রয়িংরুম থেকে আসা হাসির শব্দ শুনে রাবেয়া আর তৌফিক সাহেব দেখতে আসে,এতোদিন পর এ বাড়ীতে কার মধুর হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।"

---তিশাকে এভাবে তারিনের সাথে হাসতে দেখে তৌফিক সাহেব অনেক খুশী হয়ে গেলেন।এতোদিন পর যে মেয়েটি একটু স্বাভাবিক আচরণ করছে এটাই অনেক।
তৌফিক সাহেব তিশার মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে বললো,এভাবেই সব সময় হাসি খুশি দেখতে চাই তোমাকে।আর কখনো তোমার গোমড়া মুখটা আমি দেখতে চাইনা।ঠিক আছে।

"তিশাও মাথা নাড়িয়ে হা বললো।তিশা একবার বলতে চেয়েছিলো,
বাবা যার জন্য মুখটা গোমড়া থাকতো,সেই মানুষটি স্বয়ং এসে পড়েছে,আমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।তাহলে আমি কেনো গোমড়া হয়ে থাকবো।এখনতো আমার নাচতে মন চাইছে,গাইতে মন চাইছে।আর চিৎকার করে বলতে মন চাইছে আমার জিসান আমার কাছে এসে পড়েছে,আবার তার ভালোবাসার চাদরে আমাকে জড়াতে।"

---তিশার এই হাসিখুশি মুখটা দেখে,রাবেয়ার একদম পছন্দ হলো না।তিশার উপর একটা চাপা ক্ষোভ জন্মাতে লাগলো মনে।
স্বামী মরেছে এখনো ছয়মাসও হয়নি,অথচ এখনি সব ভুলে গিয়েছে এই মেয়েটি।
এই মেয়েকে দেখলে এখন কে বলবে,কয়েকমাস আগে ওর স্বামী মরে গিয়েছে।এখন তো মনে হয় রুমি,রোকসানা ঠিকই ছিলো।এই মেয়ে সম্পর্কে হয়তো ওদের ধারণাই ঠিক।
_______________

"হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে নিলয়।একটু আগের ঘটনা।নিলয় জিসানকে ফ্যাক্টরিতে রেখে অফিসের দিকে যাচ্ছিলো।হঠাৎ কোথা থেকে একটি মেয়ে নিলয়ের গাড়ীর সামনে আচানক এসে পড়লো।নিলয় সাথে সাথে ব্রেক মারে।খুব বড় এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেলো আজ।"

---গাড়ীটি থামিয়ে কিছুক্ষণ জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো নিলয়,খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।পরক্ষণে মেঝাজ আবার বিগড়ে গেলো।কোন আজাইরা পাবলিক ছিলো।মরার জন্য কি আমার গাড়ীই পেলো।এসব ভাবতে ভাবতে নিলয় গাড়ী থেকে নামে।মেয়েটিকে কিছু কথা শুনাবে বলে।

'এদের কোন কাজ নেই।আরে মরার জন্য অন্য পথও তো বেছে নিতে পাড়তো, না!আমার গাড়ীর সামনেই আসতে হলো।'

---গাড়ীর সামনে এসে দেখে মেয়েটি নিচে পড়ে আছে।ইনজুরি হয়নি তো আবার এসব ভেবে নিলয় মেয়েটিকে চেক করতে নিলে দেখে এতো পরিচিত পাবলিক।মানে এতো ঝর্ণা। জিসানের কাজিন।এখানে কি করছিলো মেয়েটি।আর আমার গাড়ীর সামনেই বা হঠাৎ কোথা থেকে এলো।

'নিলয় দেখলো ঝর্ণার কোনও বহিরাগত ইনজুরি হয়নি, হয়তো ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।
তাই আর অন্য কিছু না ভেবে রাস্তায় ভিড় জমার আগেই নিলয়,কোলে করে ঝর্ণাকে সাবধানে গাড়ীতে বসালো। আর গাড়ী স্টার্ট দিলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।'

---গাড়ী চালাবার সময় ঝর্ণার মাথাটা নিজের কাধে রেখে একহাত দিয়ে হালকা করে জরিয়ে ধরে।

হঠাৎ নিলয়ের চোখ পড়ে,ঝর্নার ওড়নাটা দিকে।যা নিচে পড়ে যাচ্ছে।তাই গাড়ী সাইড করে ওড়নাটা তুলে ঝর্ণার শরীরে দিতে নিলে,একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে যায় নিলয়ের।
সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে।এভাবে বেহুশ অবস্থায় কোনও নারীকে দেখা তাও আবার এ অবস্থায় এটা কোনও রকম ভদ্রতা না।

"কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হাসপাতালে পৌছে যায়।ডাক্তার ঝর্ণাকে দেখে যায় একটু আগে।পেসার লো হয়ে গিয়েছে,সাথে আবার ভয় পাওয়ার কারনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে বলে ডাক্তার চলে গেলো।"

'নিলয় জিসানকে ফোন করে সব বলে।জিসান তিশাকে পাঠাতে চাইলে নিলয় না করে দেয়।কারণ
আজ সকালেই নিলয় জানতে পারে আরিয়ানের আসল পরিচয়।আর ওর মতেও তিশাকে এখন বাড়ী থেকে বের না হওয়াই ভালো।তাই জিসানকে বললো,ঝর্ণার জ্ঞান ফিরলে ও নিজেই বাসায় ড্রোপ করে দিয়ে আসবে।'

---নিলয় কেবিনে প্রবেশ করে একবার ঝর্ণাকে দেখতে,
মেয়েটিকে আজ প্রথম নিলয় খুব খুটিয়ে দেখছে।এর আগেও মেয়েটিকে কয়েকবার আহমেদ ভিলায় দেখেছে।কিন্তু কখনো এভাবে দেখা হয়নি।
তিশা ঠিকই বলেছিলো,মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।দুধেআলতা গায়ে রং।পাহাড়ী অঞ্চলের মেয়ে বলে,শুভ্রতা যেনো ওর চেহারা জুড়ে বিরাজ করছে।কেনো জানি নিলয় চোখ ফেরাতে পাড়ছে না।তিশার পর আজ প্রথম কোনও নারীকে নিয়ে নিলয় এতো ভাবছে।
.
.
.
চলবে...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp