"রায়হান ডাক্তার কোবরার চেম্বার থেকে বাহিরে এসে রাস্তা পাশ দিয়ে হাটছে।মনটা কিছুটা উদাসিনী।হাতে রাখা নীল রং এর ফাইলটা দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হলো।
-আসলে মানুষের সব চাওয়া কখনো পুরণ হয়না এটাই স্বাভাবিক। যদি পূর্ন হয়ে যেতো তাহলে হয়তো মানুষ কখনো আল্লাহর কাছে কিছু ভিক্ষে চাইতো না।আল্লাহকেও ভুলে যেতো।আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে জীবনে একবার হলেও পরীক্ষা নেয়।এবার হয়তো আমাদের পালা।আল্লাহ হয়তো চায়না আমরা এখন বাবা মা হই।আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষার পালা এখন।"
-কিছুক্ষন আগে
' রায়হান ডাক্তার কোবরার চেম্বারে বসে আছে।ডাক্তার নিশির রিপোর্ট গুলো ভালো করে চেক করছে।ডাক্তার কোবরা একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ।
কিছুদিন আগে নিশির প্যারা সহ্য করতে না পেরে একজন বন্ধুর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এখানে এসেছিলো রায়হান নিশিকে নিয়ে।'
--তিশার পেগনেন্ট হওয়ার খবর শুনার পর থেকে নিশিও বাচ্চা নেবার প্লানিং করছে।রায়হান নিশিকে সময় দিতে চেয়েছিলো,কমপক্ষে ওর পড়ালিখা শেষ হক তারপর।কিন্তু নিশির একটাই কথা ও মা হবে।
"গতো কয়েকমাস ধরে ট্রাই করছে ওরা,কিন্তু প্রত্যেকবার রেজাল্ট জিরো আসছে।আর এতে নিশি ভেঙ্গে পড়ছে মানসিক ভাবে।ও মনের মধ্যে ধারনা করে বসেছে ওর হয়তো কোনও বড় ধরনের সমস্যা আছে,তাই হয়তো মা হতে পারছে না।হয়তো ওর মা হওয়ার ক্ষমতাই নেই।"
---তাই নিশিকে রায়হান গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কোবরার কাছে নিয়ে আসলো।ডাক্তার সব শুনে কিছু টেস্ট দিয়েছিলো ওদের।আর আজ রায়হান সেই টেস্টের রিপোর্ট গুলো নিয়ে এসেছে ডাক্তারকে দেখাতে।
'-দেখুন মিস্টার রায়হান,আপনার ওয়াইফের শরীর এখনো মা হবার উপযোগী নয়।কিছু সমস্যা আছে তার মধ্যে,তবে তা ক্ষণস্থায়ী।আসা করি নিয়মিত ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে থেকে ওষুধ গুলো সেবন করলে ঠিক হয়ে যাবে।তবে এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন।
আপনারা প্লিজ দয়া করে ধৈর্য রাখবেন আর আল্লাহর উপর ভরসা।
'আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তবে এক্ষেত্রে আপনাদের ধৈর্যটাই বেশি কাজ করবে।আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা।
রায়হান ডাক্তারের কথায় সায় দেয়।এরপর আরও কিছুক্ষন কথাবর্তা বলে রায়হান ডাক্তার থেকে বিদায় নিয়ে কেবিন থেকে বাহিরে এসে পরে।'
---তখন থেকেই রায়হান একটা কথাই ভাবছে,আচ্ছা দাম্পত্য জীবনে একটা বাচ্চাই কি সব।হয়তো সব!সন্তান স্বামী স্ত্রীর মাঝের এক অটুট বাঁধন যাকে কোনও ক্রমে ছেড়া যায়না।কিন্তু যাদের কপালে আল্লাহ সন্তান লিখে না তাই বলে কি ওরা অসুখী।
কখনোই না।সুখ দুঃখ সব নিজেদের উপর ডিপেন্ড করে।আর ভাগ্যও মেনে নেওয়া শিখতে হয়।
পরম করুনাময় আসীম দয়ালুর মালিক আল্লাহ।সে তার বান্দার কপালে যা লিখেছে তা কখনো অমঙ্গল হতে পারেনা।যা কপালে আছে তাই হবে।
যদি কোনও দিন আমাদের সন্তান না দেয় আল্লাহ তবুও আমি কখনো নিশিকে অসুখী রাখবো না।আমার হ্রদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ওর সব কস্টগুলো দূর করে দেবো।
"রায়হান এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দূর চলে এসেছে।হঠাৎ ফোনের শব্দে রায়হান সম্বিৎ ফিরে পায়।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিশির কল।রায়হানের মুখে একচিলতি হাসি ফুটে উঠে।মনে মনে নিজেই বলে,
সব কষ্টকে আমি দূরে ফেলে দেবো।তোকে ভালোবাসায় এতোটাই পরিপূর্ণ করে দেবো যে সন্তান যদি আল্লাহ তাআলা আমাদের নাও দেয় তবুও তোর জীবনে যাতে কোনও অপূর্ণ বলতে কিছু না থাকে।রায়হান মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো,
--কোথায় আপনি।
"এইতো রাস্তায়'।
--রাস্তায় কি করেন।
"টাংকি মারি"।একটু হেসে।
--টাংকি মারেন কেনো।গামলা মারেন,জুতা মারেন।হাতের কাছে যা আছে সব মারেন।
'বাকিতো শুধু শরীরের কাপড়গুলো থাকে।ওগুলো মারলে কেমন হয় বলতো'।
--এই খবরদার।ওসব আমার।মারতে মন চাইলে আমাকে মাইরেন।
'নিশির কথা শুনে রায়হান হেসেই দিলো।
আচ্ছা বাসায় এসে মারবো নি।একটা একটা করে ঠিক আছে।এখন বল কি করছিস।'
'-কিছু না।এমনেই বসে আছি। কিছু করার নেই। আর আপনার কথা মনে পড়ছিলো তাই কল দিলাম।কিন্তু আপনি অফিসে না থেকে রাস্তায় কি করেন।'
---রায়হান একটু ভেবে,ত্রিশ মিনিট সময় দিলাম তোকে।রেডি হো তারাতারি।
"কেনো?"
'-কেনো আবার আমি আসছি তোর কাছে।আজ আবার আমরা লংড্রাইভে যাবো।এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শরীরে মেখে বৃষ্টি স্নান করবো।দুজনে একসাথে ভিজবো।কি বলিস,যাবিনা।'
"হুম।আমি এখনি রেডি হচ্ছি।"
---শুন নিশি।
"হুম"।
'শাড়ী পড়িস।লাল রং এর শাড়ী।সাথে কাচের চুড়ি।চোখে মোটা করে কাজল।আর আমি আসার সময় তোর জন্য বেলি ফুল নিয়ে আসছি।'
---সত্যিই।
"হুম।আচ্ছা রাখি।তুই রেডি হো তারাতারি।"
---এই শুনেন না।
"হুম বল আর কিছু লাগবে।"
---না।
"তাহলে"।
---ভালোবাসি।
"রায়হান সাথে সাথে মনে হয় একটা হার্ট বিট মিস করলো।হাসিমাখা মুখেই বললো আমি আসছি।"
জীবনটা দেখতে গেলে অনেক ছোট।এই ছোট জীবনে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে সুখে থাকার প্লানিং করা উচিৎ। বাকি সব চিন্তা দিয়ে কি হবে।উপরওয়ালা যা ঠিক করে রেখেছে তাই হবে। আমরা তো শুধু নিজের কাছের মানুষগুলোর সাথে কিভাবে সুখি হওয়া যায় তাই ভাববো।আর তাকে কিভাবে সুখী রাখা যায় তা নিয়েও।ভবিষ্যৎ এ কি আছে কে জানে।তাই বর্তমানের কথা চিন্তা করে জীবনটাকে একটু উপভোগ করাই ভালো।
___________
"সকাল থেকেই আকাশটা আজ মেঘলা।কিছুক্ষণ পর পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরে আবার থেমে যায়।নিলয়ের এধরনের বৃষ্টি খুবই অসহ্য লাগে।কেনো জানি বৃষ্টি জিনিসটাই বিরক্তিকর।"
---তার উপর নিলয়কে বিরক্ত করতে যোগ দিয়েছে ঢাকার এই ট্রাফিক জ্যাম।এতো কিছু ডিজিটাল হচ্ছে তবুও বাংলাদের কিছু জিনিস আজও চেন্জ করার সাধ্য কারো হয়নি।
ঢাকার এই ঐতিহাসিক জ্যামের কথা বাবার মুখ থেকে শুনেছিলো নিলয়।আর এবার বাংলাদেশে এসে দেখেও নিয়েছে স্বচোখে।মাঝে মাঝে নিলয়কে ভাবায় এই দেশের মানুষগুলো এতো ধৈর্যশীল কিভাবে।ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা অসহ্য কর।
'-দু'আঙ্গুলের ফাঁকে রাখা সিগেরেটির নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়তে ব্যস্ত নিলয়ের হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার অপজিট সাইডের একটা ফুচকা দোকানের দিকে।
একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির সাথে কথা বলছে।'
---নিলয় একটু খেয়াল করে তাকালো মেয়েটির দিকে,চেনা চেনা লাগছে।মেয়েটির শুধু একসাইড দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ মেয়েটি হাসতে হাসতে পুরো গুড়লে নিলয় কিছুটা শোকড হলো।
কারণ মেয়েটি আর কেউ না ঝর্না।
"নীল রংএর একটা জামদানি শাড়ী পড়া, হালকা ভেজা চুল গুলো খুলে রেখেছে।তবে আজ হালকা সেজেছে মেয়েটি।এই বৃষ্টির মাঝেও মেয়েটিকে কেমন সিগ্ধ লাগছে।গুড়িগুড়ি বৃষ্টিগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে ঝর্নার গাল,কপাল,ঠোঁটসহ পুরো শরীর।নিলয়ের যেনো চোখ আটকে গেলো।পলক ফেলতে ভুলে গেলো।কেমন ঘোর ঘোর লাগছে আজ ঝর্নাকে দেখে।মনে যেনো কিছু অবাধ্য চাওয়া বাসা বাধছে।
---গাড়ীর হর্ণের শব্দে নিলয় সম্বিৎ ফিরে পায়।আর তখনই নিলয়ের মাথায় সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি আছে তা হলো এতো সেজেগুজে গিয়েছিলো কোথায় এই মেয়ে।আর এই ছেলেটি বা কে।নতুন কাউকে!
না না ঝর্না এমন মেয়ে না।আর ও কাউকে পেলেই বা আমার কি?
আমি এতো ভাবছি কেনো।কিন্তু এতো তারাতারি নতুন কাউকে পেলো কোথায়।না আমার জানতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আবার চোখ গেলো ঝর্নার দিকে।কিন্তু এখন যা দেখলো তাতে নিলয়ের মাথার মগজগুলো গরম হয়ে গেলো মুহুর্তেই। "
---আসলে ঝর্না ফুচকা খেতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে খেয়ালি করেনি ওর শাড়ীর আচলটা যে মাটিতে ছুঁইছুঁই করছে।কারন আচলটা বেশ বড় করে রাখা ছিলো।
ঝর্নার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি আচলটা উঠিয়ে ঝর্নার কাধে রাখে।
আর এটা দেখেই নিলয়ের শান্ত থাকার সব লিমিট যেনো ভেঙ্গে গেলো।সাথে সাথে ঝর্নাকে কল দেয়।
ঝর্না ফোনটা রিসিভ করে,হ্যালো আসসালামুআলাইকুম।
"অলাইকুমআসসালাম,কোথায় তুমি।"
---কে বলছেন?আসলে ঝর্না নাম্বারটি খেয়াল করেনি।
"এখন আমার নাম্বারটিও সেভ করা নেই তোমার কাছে।"
---ঝর্না কিছুক্ষণ ভেবে,নিলয়!
"থ্যাংকস গড,তাহলে মনে রেখেছো আমায়।আমিতো ভাবলাম নতুন কাউকে পেয়েছো বলে পুরানটাকে ভুলেই গিয়েছো।"
---ঝর্না বেকুব হয়ে গিয়েছে কিসব বলছে ছেলেটা।নিলয় আপনি ঠিক আছেন তো।
"ইয়াপ,আম অল রাইট।তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল।কোথায় তুমি এখন।"
--আ আমিতো একটু বাহিরে।
বাহিরে কোথায়,লোকেশন বলো।
--ঝর্না লোকেশনটা বললো।
তুমি ওখানে কি করো।
--এইতো ফ্রেন্ডসদের সাথে একটু আসছি।
ঝর্না যতোটুকু আমি জানি,তোমার এখানে কোনও ফ্রেন্ডস নেই।তাহলে ফ্রেন্ডসদের সাথে ওখানে কি করে গেলে।
--ঝর্না কি বলবে বুঝতে পাড়ছে না,আসলে কলেজের একজন সিনিয়ার ভাইয়ের সাথে আচানক রাস্তায় দেখা হয়ে যায়।একসময় ছেলেটি কলেজে থাকাকালীন ঝর্নাকে অনেক সাহায্যও করেছে।তাই কথা না বলে থাকতে পারলো না।ঝর্নার সাথে ফুচকার দোকানেই দেখা হয় যায়।তাই দুজনই খেতে খেতে কথা বলছিলো।আর তখনই হয়তো নিলয়ের গাড়ীটিও ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।
কিন্তু নিলয়কে এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ঝর্ণা।তাই চুপ হয়ে শুনছে আর ভাবছে।এভাবে চট জলদি কি মিথ্যা বলা যায়।
'তোমার ফ্রেন্ডটার নাম কি ঝর্না।'
--ওর ন নাম এ,নাম?ঝর্না চিন্তা করছে কি বলবে।
নাহিদ,হুম নাহিদ তার নাম।
'ওয়াও। আম ইম্প্রেস!যাই বলো তোমার ফ্রেন্ড নাহিদ হ্যান্ডশাম আছে।তো কোথায় দেখা হয়েছে।আই মিন কিভাবে চেনো।'
---নিলয়ের কথা শুনে ঝর্নার বিষম উঠে গেলো।হঠাৎ খুব কাশতে লাগলো।ঝর্না বুঝে গিয়েছে এই লোক আশেপাশে থেকেই ওকে এতো জেরা করছে কিন্তু কেনো? এতো জেরা করার কারণ কি?
ঝর্নার কাশি দেখে সাথের ছেলেটি পানি আনতে ছুটে যায় দোকানের দিকে।
'ঝর্নার সামনে একবোতল পানি ধরে।ঝর্না না দেখে পানি টা নিয়েই ঘটঘট করে কয়েক ঢোক খেয়ে ফেলে।আর অজান্তেই বলে ফেলে ধন্যবাদ বাপ্পি ভাইয়া।'
---তোমার ফ্রেন্ডের নামতো নাহিদ তাহলে বাপ্পিটা আবার কে।
নিলয়ের গলা শুনে চকিতে তাকায় ঝর্না।ন ননিলয় আপনি এখানে।এ এখা নে কি করেন।
'ঝর্নাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে, পানির বোতলটা ফেলে ঝর্নার হাতটা ধরে টেনে গাড়ীতে উঠালো নিলয়।ঘটনা এতো দ্রুতোই ঘটেছে যে ঝর্না কিছুই বুঝলো না।
কি হলো।
নিলয় আপনি আমাকে এভাবে গাড়ীতে কেনো উঠালেন।আপনার জন্য আমার ফুচকাও খাওয়া হলো না।এখানকার ফুচকা খুব নামকরা জানেন।
আজই এই শহরে আমার শেষ দিন ভাবলাম আর কিছু না হোক পছন্দের ফুচকাটাতো খেয়ে জেতে পারি।তাও আপনার জন্য হলো না।'
---ঝর্নার কথায় নিলয় একটু রাগি চোখে তাকায়,যা দেখে ঝর্না চুপছে যায়।
এই লোকের আবার কি হলো।বিহেভ তো এমন করছে মনে হয় কতো জনমের প্রেমিক আমার।যতোসব!
"রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে নিলয় আর ঝর্না।আর ঝর্নার সামনের টেবিলে রাখা পাঁচ প্লেট ফুচকা।যা দেখে ঝর্না কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছে।নিলয়ের মতলোব কি কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিলয় চোখ দিয়ে ইশারা করে খেতে।"
---না আমার লাগবে না।আমার পেট ভরা।
'তা বললে তো হবে না।যে ফুচকার জন্য এতো সেজেগুজে শাড়ী পড়ে রাস্তায় ছেলেদের সাথে ডেটিং করছিলে।সেই ফুচকা তো তোমায় খেতেই হবে।
নিলয় নিজেই ঝর্নার মুখে একটা ফুচকা জোর করে দিয়ে দিলো।'
---ফুচকার ঝালে ঝর্নার বেহাল দশা।ছুটে চলে গেলো লেডিস ওয়াসরুমের দিকে।নিলয়ও ঝর্নার পিছনে ওয়াসরুমের দিকে ছুটে আসলো।
এখানে এসেই ঝর্নার বমি করার মতো অবস্থা কিন্তু বমি করতে পারছে না বরং আরো কস্ট হচ্ছে।
বমি করতে কস্ট হচ্ছিলো বলে নিলয় হঠাৎ শাড়ী নিচে থাকা ঝর্নার সাদা পেট টিতে হালকা চাপ দিলেই গরগর করে বমি করে দেয় ঝর্না।ব্যাচারী ঝর্না সারাদিন যা খেয়েছিলো সব বের করে দেয় একসাথে।
'-নিলয় পিছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবল তাকিয়ে দেখছে।ঝর্নার এমন অবস্থায় ওর কোনও রিয়েকশন নেই।
কারন ওতো ইচ্ছা করেই ফুচকাতে লাল মরিচ সহ আরো কিছু দিয়েছে যাতে করে ঝর্না এতোক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যা গিলছে সব যেনো বের করে দেয়।
ঝর্নার এমন বেহাল দশায় অদ্ভুত শান্তি লাগছে মনে।খুব শখ না সেজেগুজে ছেলেদের সাথে ডেটিং এ যাওয়া।এবার বুঝো কেমন মজা লাগে।'
"ঝর্নার কিছুটা রাগ উঠে যায়,এভাবে কেউ করে।ফুচকার ভেতর লাল মরিচের গুড়া,আর কি যেনো দিয়ে রেখেছিলো।ছিঃকি বিশ্রি ওটার টেস্ট ছিলো।
তাইতো মুখে দেওয়ার সাথে সাথে ওয়াসরুমের দিকে ছুটে আসতে হলো।"
ঝর্না একটু তেরে গিয়ে, এই মিয়া সমস্যা কি আপনার।কোন জনমের বদলা নিলেন এমন করে আমার উপর।আপনার কোন ক্ষেতের ধান চুড়ি করেছি আমি।কি হলো কথা বলছেন না কেনো।"
---নিলয় কিছু বলবে তখনি ঝর্নার ফোনটা বেজে উঠে।ফোনটা সিনের উপর রাখা ছিলো।ঝর্নার হাতদু'টো এখনো ভিজা বলে,নিলয় গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দিয়ে দেয়।ইশারা করে ঝর্ণাকে কথা বলতে।
"হ্যালো ঝর্না,মা বলছি।"
--হে মা বলো।
"কাল তুই আসছিস।"
হুম, কালই ছেড়ে যাবো এখানকার সব কিছু।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে।
"শুননা,একটা কথা ছিলো।"
--বলো কি বলবে।
তোর জন্য একটা ভালো সমোন্ধ এসেছে।খুব ভালো জায়গা থেকে।তুই যদি বলিস।
'মা তোমরা যা ভালো মনে করো কর।আমার কোনও সম... ঝর্না আর বলতে পারলো না।নিলয় ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো।'
---ঝর্না তো শোকড!পারেনা এখনি কান্না করে দিক।এই আপনি এটা কি করলেন।আমার ফোন কেনো ভেঙ্গেছেন।
এই আপনি ঠিক আছেন তো।নাকি আবার কিছু খেয়েটেয়ে এসেছেন।কখন ধরে অদ্ভুত বিহেভ করছেন।সত্যি করে বলেন তো সমস্যা কি?
"সেটআপ! জাস্ট সেটআপ!নিলয় চিৎকার করে।
ঝর্নার দু'বাহু ধরে,কোথাও যাবিনা তুই।বুঝলি।কোথাও না।খবর দে তোর বাবা মাকে।তিনদিন পর আমার গার্ডিয়ান আসছে।তুই শুধু আমার সাথে যাবি প্যারিস।বুঝলি।
তাই চুপচাপ এখন বাসায় যাবি।বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তোকে যেনো বাড়ীর বাহিরে না দেখি আমি।তাহলে কিন্তু খুন করে ফেলবে।জড়াতে চেয়েছিস না আমার জীবনে,তাহলে এখন থেকে তোকে আমার মতো চলতেও হবে।
তোকে জাতে আমি কোনও ছেলের আশেপাশেও না দেখি।ফ্রেন্ড হয়,কাজিন হয়,প্রতিবেশী লাগে এসব সম্পর্ক শেষ এখন থেকে।
আমার কথার বাহিরে কাজ করলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।বুঝলি!মাথায় ডুকিয়েনে ভালো করে।"
---নিলয় ঝর্নার আরো একটু কাছে আসে।এতে ঝর্নার মুখে নিলয়ের প্রতিটি নিশ্বাস বারি খাচ্ছে।
আমাকে ভদ্র ভাবা ছিলো তোর জন্য ভুল।আমি কিন্ত মোটেও ভদ্র না।আমার অত্যাচার সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে যা।
'-নিলয়ের এমন শান্তশিষ্ট চেহারার পিছনে এমন ভিলেনমার্কা রুপ দেখে ঝর্না ভীষন ভয় পেয়ে গেলো।শুকনো একটা ঢোক গিলে,মনে মনে ভাবছে।
না রে ভাই,তুই আমার টাইপের না।আমিতো তোকে আম ভেবেছিলাম।কিন্তু এতো কাঁঠাল।পুরো কাটা দিয়ে ভরা।হাত দিতে গেলে প্রতিবার আমাকেই ব্যাথা পেতে হবে।
না না তার চেয়ে আমি একাই ভালো।কালই চলে যাবো।ঝর্না নিজের ভাবনায় একদম মশগুল।'
---কিন্তু হঠাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে সম্বিৎ ফিরে পেলো।তাকিয়ে দেখে নিলয় একদম ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে।এক ইঞ্চি ফাঁকও নেই ওদের মাঝে।তার উপর নিলয়ের হাত ঝর্নার পেটে পড়ায় ব্যাচারী শিহরিত হয়ে উঠলো।
-কোমড়টা খুব সেক্সি তোমার।আর বডিটা তো আরো হট।প্রথম দিনেই আমি খেয়াল করেছিলাম।কি খেয়ে এমন আকর্ষন করে তুলেছো বলতো কন্ট্রোল করতে মুশকিল হয়।
"ঝর্না এবার মনে হয় পাগল হয়ে যাবে,কিসব বলছে এই লোকে।একে আমি ভালো মনে করেছিলাম।কিন্তু এই ব্যাটা দেখি এক নাম্বারের লুইচ্ছা।
ঝর্না ঝটপট নিলয়ের হাতটা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে বলছে দূরে সরেন আমার থেকে।আপনি মানুষ সুবিধার না।আ আমারি ভুল হয়েছে।ছ ছা ড়ুন প্লিজ।
আমিতো আপনাকে ভদ্রচোর ভেবেছিলাম।কিন্তু এখন দেখি আপনি একটা বাজে লোক।সরুন আমার কাছ থেকে।"
---নিলয় একহাত দিয়ে ঝর্নার পেট চেপে ধরে,আরেক হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে একদম নিজের কাছে টেনে নেয়।
বাজে হই আর যাই হই।এখনতো এই বাজে ছেলেটার সাথেই থাকতে হবে।
আর হে ভুলতো করেছিস।আমার এতোবছরের ব্যাচেলার জীবনে নিজেকে যে সংযোত করে রেখেছিলাম।তার রেকর্ড তুই ভেঙ্গে দিয়েছিস।তাই এখন তোকে আমার কাছে আসতেই হবে।
আর নিজের যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিস সবই আমায় সপে দিতে হবে।তা না হলে আমি লুট করে নিয়ে যাবো।
ঝর্না কিছুক্ষন চুপ থেকে কাপাকাপা কন্ঠে বললো,
ভা লোবাসেন আমায়।
"জানি না,কিন্তু এতোটুকু জানি তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে পারবো না।তোমার মনে আর শরীরে শুধু এই নিলয়ের বিচরণ হবে।আর কেউ না।"
_____________
"ডাইনিং টেবিলে বসে তিশা জুশ খাচ্ছে আর জিসান তিশার জন্য কিছু ফল কাটতে ব্যস্ত।
কিন্তু তিশার ধ্যান এখন ড্রয়িংরুমে বসে থাকা মেয়েটির উপর।
বারবার আড় চোখে তিশা ড্রয়িংরুমে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটিও যে বারবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে তা তিশা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না মেয়েটি কাকে দেখছে এদিকে তাকিয়ে।"
---আচ্ছা ওই মেয়েটি কে?
'জিসান শুনেও না শুনার ভান করে,নিজের হাতে কাটা ফলগুলো থেকে একপিস নিয়ে তিশার মুখের কাছে এনে বললো,হা কর।'
---আমার না খেতে ভালো লাগছেনা।
'একদম কোনও কথা না,খেতে বলছি খেতে হবে।মন না চাইলেও খেতে হবে।কথা কম বলে হা কর।'
---তিশা মুখে নিয়ে আবার জিঙ্গেস করলো কে সে?
রোজ, তানজিলা ভাবীর কাজিন।
---আপনি চিনেন।না মানে আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি আপনার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।
'-হুম,তিশার মুখে খাবার দিতে দিতে।আমরা একই ভার্সিটিতে ছিলাম।আর...
"আর কি?তিশা সন্দেহ নযরে তাকিয়ে"
'জিসান মনে মনে ভাবছে,তিশা ইদানীং আমাকে নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ হয়ে গিয়েছে।সামান্য বিষয়ও অনেক রাগ করে।ওকে বলা যাবে না,রোজ যে একসময় আমার পিছে অনেক ঘুড়েছে।জানলে হয়তো আজও আবার ও ভাইলেন্ট হয়ে যাবে।তাই জিসান কথা কাটানোর জন্য, আর ও আমার জুনিয়ার ছিলো ভার্সিটিতে।তাই কিছুটা চিনা জানা ছিলো।
আর তাওহিদ ভাইয়ের বিয়ের পর জানতে পারলাম রোজ তানজিলা ভাবীর কাজিন।ব্যাস আর কিছু না।'
---ও! তিশা লম্বা একটা 'ও 'বলে আবার মেয়েটির দিকে তাকালো।জরজেটের একটা পাতলা শাড়ী পড়া মেয়েটির স্লিম বডির সেপ প্রায়ই লক্ষণীয়।ব্যাপারটা তিশার একদম ভালো লাগেনি।
'জিসান যখন তিশাকে সব ফলগুলো খাওয়াতে ব্যস্ত ঠিক তখনি এক চেনা কন্ঠে কেউ বলে,
কেমন আছো জিসান।'
-কন্ঠ শুনে জিসান না তাকালেও তিশা ঘুড়ে তাকায় মেয়েটির দিকে।তিশা কিছুটা অবাক,জিসানকে এই মেয়ে তুমি বলে সম্ভোন্ধন করছে।কিন্তু কেনো!
মেয়েটি তো জিসানের জুনিয়ার ছিলো।তিশার এই ব্যাপারটাও ভালো লাগেনি।
'আলহামদুলিল্লাহ রোজ।তুমি কেমন আছো।'
-আছি কোনও রকম।শুনলাম বিয়ে করেছো।তো তোমার বউয়ের সাথে পরিচয় করাবে না।
'-অবশ্যই। তিশা ও হলো রোজ।ভাবীর বোন।আর আমার জুনিয়ার আমরা একই কলেজে পড়তাম।তোকে তো একটু আগে বললামই।
আর রোজ ও হলো আমার তিশা।আমার স্ত্রী। জীবনসঙ্গী, আমার অর্ধাঙ্গিনী।'
---তিশা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।এভাবে কেউ পরিচয় দেয়,ওর জানা ছিলো না।কি অদ্ভুত ছেলেটা।
আজকাল তিশা যতোই দেখে জিসানকে মনে হয় প্রতিবার নতুন করে প্রেমে পড়ে।
'রোজ একটু বিরক্ত হলো,জিসানের বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে।ওর কাছে এসবই ন্যাকামি মনে হয়।তবুও কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে,তো কি করা হচ্ছে বউয়ের সেবা।
---হুম,আমি সেবা করছি আর আমার বিবি সেবা গ্রহণ করছে।এইতো!
তিশা হেসে দিলো জিসানের কথায়।
---তিশা শুয়ে আছে আর জিসান তিশার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ জিসানের মনে হলো তিশার একটা ওষুধ এখনো বাকি।ওষুধটা নিয়ে তিশাকে জাগাতে যাবে,তখনই মনে পড়লো মেয়েটি আজ তেমন কিছু খেতেই পারেনি।
আর যা একটু খেয়েছিলো তাও বমি করে ফেলে দিয়েছে।আজকাল তিশা পেটে কিছুই রাখতে পারেনা।প্রচুর বমি হয়।যার কারনে ও খুব ক্লান্তও হয়ে পড়ে অল্পতেই।
পেটতো এখন প্রায় খালি।খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক হবে না।
তাই জিসান রুম থেকে বের হলো,তিশার জন্য একগ্লাশ দুধ আনতে।সাথে একটু চকলেট পাউডার দিয়ে দিতে হবে তাহলে আর খেতে সমস্যা হবে না ওর।এসব ভাবতে ভাবতে সিড়ির দিকে যাচ্ছিলো।
"কিন্তু হঠাৎ জিসানকে টান দিয়ে নিজের রুমের ভেতরে নিয়ে এসেই জড়িয়ে ধরে রোজ।
জিসানের ব্যাপারটা বুঝতে একসেকেন্ড সময় লাগে।সাথে সাথে রোজকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।"
---কি করছো কি রোজ তুমি।এসবের মানে কি।
'আই লাভ ইউ জিসান।তুমি খুব ভালো করেই জানো।'
"প্লিজ রোজ স্টোপ।তোমাকে আগেও বলেছি,আই ডোন্ট লাভ ইউ।আমি শুধু তিশাকে ভালোবাসি।আর কাউকে না।
জিসান চলে যেতে নিলে রোজ আবার জিসানের হাতটি ধরে ফেলে,প্লিজ জিসান ডোন্ট লিভ মি।"
-আর তখনি রোজের গালে ঠাস করে একটা চড় পরে।ঘটনা আকস্মিক হওয়ায় জিসান ও রোজ দুজনই বুঝে উঠতে পারেনি কি হয়েছে।
"রোজ থেকে জিসানের হাতটি ছুটিয়ে তিশা,
সাহস কি করে হলো আমার হাসবেন্ডকে স্পর্শ করার।ফাজিল মেয়ে আসার পর থেকেই আমি দেখছি জিসানের আগেপিছে কেমন ঘুরঘুর করছিস।আমার তো তখনি সন্দেহ হয়েছিলো।কিন্তু ভাবীর বোন বলে,কিছু বলেনি।তা না হলে তোর মুখ ভেঙ্গে দিতাম এতোক্ষনে।"
---তিশার চিল্লাচিল্লিতে বাড়ীর সবাই রুম থেকে বের হয়ে আসে।
তানজিলা ঘটনা না জেনে তিশার উপর রেগে গেলো।সমস্যা কি তিশা।এতোরাতে চিল্লাচ্ছো কেনো ওর সাথে।ও এ বাড়ীর মেহমান ভুলে গেলে চলবে না।
'ভাবী আমি সরি,কিন্তু তোমার এই বোনকে বলো,আমার স্বামী থেকে দূরে থাকতে।তা না হলে ভালো হবেনা।
---কিসব বলছো তিশা।
"-কি আর বলবে আপু,ওতো একটা পাগল।আর পাগলে কিনা বলে একটা কথা আছেনা।এধরনের পাগলকে তোমরা বাড়ীতে ছেড়ে রেখেছো কেনো।ওকে তো রুমে আটকে.... আর কিছুই বলতে পারলো না।তার আগেই একটা ভারী হাত এসে পড়লো রোজের গালে।
'হাউ ডেয়ার ইউ।আমার বউকে পাগল বলার আগে তোমার দশবার ভাবা উচিৎ ছিলো।ভাবীর বোন বলে,না হলে এতোক্ষনে জেন্ত পুতে ফেলতাম।
আর ভাবী শুনো তোমার বোন কি করেছে।জিসান সব বলে।
সব শুনে তানজিলা ভীষণ লজ্জিত হয়ে বোনের দিকে রেগে তাকায়।জিসান আর কিছু না বলেই তিশার হাত ধরে রুমে চলে আসে।
----জিসান বিছানায় বসে তিশাকে দেখছে।মেয়েটি কখন ধরে এদিকওদিক পায়চারী করছে।আর বিড়বিড় করে যেনো কিসব বলছে।নির্গাত রোজকে বকছে।
জিসান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,ম্যাডাম ভীষণ রেগে আছে।আজ কপালে আমার কি আছে আল্লাহই জানে ।
"জান,কি করছিস।তোর শরীরটা এমনেই ভালো না।একটু হাটাচলা করলেই ক্লান্ত লাগে।তার উপর কখন ধরে এভাবে পায়চারী করছিস।প্লিজ স্টোপ। এখানে এসে একটু বস রেস্ট নিবি।"
-'তিশা রেগে জিসানের দিকে তাকালো,আপনি আগেই জানতেন এই মেয়েটি এমন তাইনা।তবুও আমায় বলেন নি।
আপনি অনেক খারাপ জিসান। তিশা ক্লান্ত হয়ে সোফায়,বসে পরে বলে।
---জিসান তিশার সামনে গিয়ে হাটুগেরে বসে,জান ওটা অনেক আগের কথা।তখন আমি ভার্সিটিতে পরতাম।আর রোজ আমায় তখন অনেকভাবে প্রপোজ করেছিলো।কিন্তু এতো বছর পরও যে রোজ এমন করবে তা আমি বুঝতে পারিনি।
আমিতো তোর জন্য একগ্লাশ দুধ আনতে কিচেনের দিকে যাচ্ছিলাম।আর তখনি এই মেয়ে ঝড়ের গতিতে কোথা থেকে এসে আমাকে টান দিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে।আমি সত্যি এমন কিছু আশা করিনি।
"কি...? তিশা চিৎকার করে উঠলো।"
"-আধ ঘন্টা ধরে তিশা জিসানকে খালি গায়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।আর সবান দিয়ে জিসানের পুরো শরীরটাকে ঘষছে। রোজের কোনও স্পর্শ জিসানের গায়ে থাকতে দেবে না তিশা।জিসানের শরীর জুড়ে শুধু তিশার ছোঁয়া থাকবে,এখানে অন্যকাউকে একদম সহ্য করবে না তিশা।"
---জিসান শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে তিশার পাগলামি গুলো দেখছে।তিশাকে কোনও রকম বাধাও দিচ্ছে না।শরীরের কিছু অংশ রীতিমতো লাল হয়ে গিয়েছে,তবুও জিসান শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তিশার দিকে।
"কি দেখছেন এভাবে।চেয়ে আছেন কেনো।আপনি একটা খারাপ লোক জানেন।ওই মেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছে,আর আপনি ওকে একটা চড় মারলেন না কেনো।আপনি বলতে পারলেন না কেনো,আপনার এই শরীর,মন সব আমার। আর আমার জিনিসে রোজের ছোঁয়া কেনো লেগে থাকবে।আমি দেবো না থাকতে।"
---জিসান খেয়াল করলো তিশা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।তাই তিশাকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো।জান আমাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধর দেখবি তোর স্পর্শ, ছোঁয়ায় রোজেরটা দূর হয়ে যাবে।
"সত্যিই।"
---একদম সত্যি জান।তোর একটু পরশই যথেষ্ট আমার ভেতরে তোলপাড় করতে।আমার সকালটাকে সিগ্ধ করতে।তোর ছোঁয়ায় আমার প্রতিটি রাত যেনো পবিত্র হয়ে যায়।আমার চেতনাজুড়ে শুধু তুই আছিস তাইতো আমার ভাবণাটাও যে তোমাতে মেতে থাকতে চায় বারবার।
_______________
"হাসপাতালের করিডোরে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে জিসান।পাশেই নিলয় ও সোমও আছে।দুজনই চুপ কারো মুখে কোনও কথা নেই।কিছুক্ষণ আগে নিশিও এসে পড়েছে ওর শ্বাসুর শ্বাশুরী কে নিয়ে।
কান্না করতে করতে নিশির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ছে।রাবেয়া বেগম কিছুতেই নিশির কান্না বন্ধ করতে পারছে না।
শামসুর রহমান যেনো পাথর হয়ে গিয়েছে।বারবার তার সন্তানদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুব গভীরভাবে আঘাত করছে তাকে।মিসেস রেনু তো ডাক্তারদের কথা শুনেই বেহুঁশই হয়ে গিয়েছে।পাশের একটা কেবিনে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।"
একটুআগে,
----তিশাকে ঘুম পাড়িয়ে জিসান লেপটপ নিয়ে বসেছিলো অফিসের কিছু কাজ করার জন্য।আর তখনই সোমের ফোন আসে।ফোনে ঘটনা শুনার পর জিসান আর এক মুহুর্তও দেরি করিনি।ঝর্নাকে ডেকে সব বুঝিয়ে জিসান চলে আসে হাসপাতালে।
'হাসপাতালে এসে ডাক্তারের কথাশুনে জিসানের পায়ের নিচের জমি মনে হয় সরে গেলো।
এটা কি করে হতে পারে,রায়হানকে কেউ গুলি করেছে,তাও আবার একটা নয় তিন তিনটে।'
---ডাক্তার কোনও রকম আশা না করতে বলে গিয়েছে।রোগীর অবস্থাও তেমন ভালো না।
এটা শুনার পর থেকেই জিসানের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে যা ও কাউকে দেখাতে পারছে না।
নিজেকে শক্ত করে পরিবারের সবাইকে খবরটা দিলো,শুধু তিশাকে ছাড়া।
"-জিসানের ভাবনা এখন রায়হানের কিছু হলে,নিশির কি হবে।আর তিশা?ও সহ্য করতে পারবে না।
হে আল্লাহ এ কেমন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেললে।তোমার কাছে আমার বন্ধুর জীবনটা ভিক্ষে চাইছি আল্লাহ।ও অনেক ভালো একটা ছেলে।দয়া করো আল্লাহ আমাদের উপর।"
---সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে, কারো মুখে কোনও কথা নেই।সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন ডাক্তার অপরেশন রুম থেকে বের হবে।
"ঠিক ওই সময় কয়েকজন পুলিশ এসে হাজির হলো।পুলিশদের দেখে তৌফিক সাহেব এগিয়ে গেলো।এটা পুলিশ কেস,তাই পুলিশ আসাটাও সবার কাছে স্বাভাবিকই লাগলো।
---কিন্তু পুলিশের কথাশুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
মিস্টার জিসান আমরা আপনাকে এরেস্ট করতে এসেছি।আপনাকে আমাদের সাথে থানায় জেতে হবে এখনই।"
---ওয়াট!কিসব রাবিশ বলছেন।আর আমাকে কেনো গ্রেপতার করবেন।কিসের ভিত্তিতে!কেস কি?
'মিস্টার জিসান, আপনি মিস্টার রায়হানকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন।আপনার নামে মামলা করা হয়েছে।'
---কিসব আজেবাজে বলছেন।জানেন আপনি কি বলছেন।রায়হান আমার বন্ধু,একমাত্র বোনের স্বামী।আর আমার ওয়াইফের ভাই হয়।আর আপনি বলছেন আমি ওকে মার্ডার করার চেষ্টা করেছি।কিসের ভিত্তিতে এসব বলছেন।প্রমাণ কি?আর কে সে আমার নামে মামলা করছে।"
"হুম,অবশ্যই।স্বাক্ষী প্রমাণ ছাড়া আমরা কিছুই করিনা।"
---কে সে?
'আপনার ওয়াইফ মিসেস তিশা আহমেদ।উনি আপনার নামে মামলা করেছে।আপনি নাকি রাগের মাথায় রায়হানের উপর হামলা করেছেন।'
--সবাই শোকড!সাথে জিসানও!
.
.
.
চলবে................................................................