ভালোবাসবো যে তোকে - পর্ব ০২ - সারা মেহেক - ধারাবাহিক গল্প


আয়ান চলে যাওয়ার পর আয়ানের আম্মু হাটু গেড়ে বসে কান্না করতে থাকে।অহনা আর মৌ উনার পাশে বসে আছে। অহনা কি বলবে কি বুঝতে পারছে না।তার ভাইয়া যে এমন কিছু করবে সে আশাও করতে পারেনি।
আয়ানের আম্মু মৌ কে উদ্দেশ্য করে বলে,"দেখ না মৌ কি থেকে কি হয়ে গেলো।আমি তো আমার ছেলেকে এমন শিক্ষা দেইনি। তাহলে এমন ব্যবহার কেনো করলো ও?"

"আন্টী,আপনি প্লিজ এতো স্ট্রেস নিবেন না।আপনার বিপি লো হয়ে গেলে সমস্যা হবে।"

"হ্যা আম্মু প্লিজ শান্ত হও।"

"আন্টী,একটা কথা।এই বিষয়টা প্লিজ আংকেল কে বলবেন না। উনি জানতে পারলে আয়ান ভাইয়ার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।আর আন্টী তুমি এখন থেকে চিন্তা বাদ দেও।আয়ান ভাইয়াকে আমি সোজা করবো।উনার মাথা থেকে যদি ঐ মনার ভূত না নামিয়েছি তবে আমার নাম মৌ না।হুহ।"

আয়ানের আম্মু চোখের পানি মুছে হালকা হেসে বললো, "ইনশাল্লাহ তুই পারবি।আমি আর অহনা তোকে সবরকমভাবে সাহায্য করবো।"

মৌ আয়ানের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললো,"এই না হলে আমার আন্টী।"

আয়ানের আম্মু হঠাৎ করে মৌ এর মাথা হালকা মেরে বলে,"এই মেয়ে তোর তো সাহস কম না। "

মৌ অবাক হয়ে বললো,"কি করলাম আমি!!"

"এই বোকা মেয়ে,কখনো কি শুনোছিস যে আম্মুকে আন্টী বলো? হুম??"

 "ওওও এবার বুঝলাম।আচ্ছা সরি।এখন থেকে আম্মু বলে ডাকবো।" এ বলেই মৌ আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।
মৌ খেয়াল করলো অহনা বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
"কি রে তোর কি হলো??"

" কি আর হবে।আমাকে কেউ ভালোবাসে নাকি।আমি তো বসে বসে শুধু শ্বাশুড়ী আর বউমার ভালোবাসা দেখবো।হুহ।"

"ওরে আমার অহনা রে।বাবুটা রাগ করেছে আসো আসো।..."
তারপর অহনা গিয়ে তার আম্মুকে আর মৌ কে জড়িয়ে ধরলো।

এদিকে আয়ান তো রুমে এসে প্রচুর রেগে আছে।সে শাওয়ার নিয়ে বসে আছে, মৌ এর জন্য ওয়েট করছে।কখন সে আসবে রুমে আর সে একটু ঝাড়ি দিবে তাকে।

মৌ রুমের দরজা খুলে যেই না ভিতরে ঢুকলো অমনি আয়ান তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মৌ এ দেখে মনে হয় কলিজা শুকিয়ে এলো।সে মনে মনে বলছে,
"আরে তুই না সেই ডায়লোগ মারলি আর এখন এই আয়নার নজর দেখেই ভয় পেয়ে গেলি!! না না, এটা হতে দেওয়া যায় না। বি ব্রেভো।"

আয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে রুমের দরজা আটকালো আর মৌ কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।এদিকে মৌ এর অবস্থা তো নাজেহাল।তার ভয়ে রিতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।সে মনে মনে বলছে,"আল্লাহ বাঁচাও... আমি কিভাবে এই মানুষটাকে লাইনে আনবো!!!যে আমার কাছে আসলে আমার অবস্থা ১২টা বেজে যায়।"
এদিকে মৌ এর অন্য একধরনের ভালো লাগা।এই প্রথম আয়ান তার এতো কাছে এসেছে।যদিও ঝারি দেওয়ার জন্য কিন্তু সে তো আর জানে না।

আয়ান এতোক্ষন ধরে মৌ কে পর্যবেক্ষণ করছিলো।মৌ এর কাছে এসে তারও আজব একধরনের অনুভুতি কাজ করছে।মৌ এর ভয়ে কাঁপাকাঁপি দেখে সে আনমনে হেসে দেয়। সে যে মৌ কে বকা দিবে সে কথাও বেমালুম ভুলে গিয়েছে সে।সে তো এখন মৌ কে দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ আয়ানের ফোন বেজে উঠে।সে কিছুটা চমকে উঠে আর মৌ কে ছেড়ে দেয়।বলে যে,
"তোকে আমি পরে দেখে নিবো মৌ।"

মৌ তো হাফ ছেরে বাঁচলো।
"উফফ বাঁচলাম বাবা।।এতোক্ষন যে কি ভয় যে লাগছিলো.. কিন্তু এই আয়না আমাকে এভাবে ধরেছিলো কেনো?? কি করতে চাচ্ছিলো সে??" একথা বলতে বলতে তার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হলো।

এদিকে আয়ান যে রেডি হয়ে কখন রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে তাও জানা নেই তার।মৌ তো ভাবনার জগতে থাকতে সেই ভালোবাসে। এটা তার খুব পছন্দ।

ব্রেকফাস্ট করার পর মৌ আর অহনা রুমে গিয়ে বসলো।উদ্দেশ্য তাদের সব ভুলে গিয়ে গল্প করা।এই দুজন প্রচুর গল্প করতে পারে।
মৌ আর অহনা গল্প করছে।এর মধ্যে হঠাৎ মৌ এর ফোনে ফোন আসলো।তার ভাইয়া ফোন করেছে।

"আসসালামু আলাইকুম,আমার ছোটোমনি।কেমন আছিস? "

"ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো ভাইয়া?"

"আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।।আচ্ছা সব ঠিকঠাক আছে তো?মানে আয়ান ভালো ব্যবহার করছে তো?"

না চাইতেও মৌ তার ভাইয়াকে মিথ্যা বললো।সে তার ভাইয়ার কাছে মোটামুটি সব শেয়ার করে।সে যে আয়ানকে পছন্দ করতো এটা তার ভাইয়া কিছুটা জানতো।

"হুম ভাইয়া সব ঠিক।আচ্ছা আব্বু আম্মু কি এখনো আমার উপর রেগে আছে?"

"অল্প একটু।ধীরে ধীরে রাগ কমে যাবে। তুই টেনশন করিস না।"

মৌ আর মাহতাব বেশকিছুক্ষন কথা বলার পর ফোন রাখলো।

এদিকে মৌ এর হাত পা কেমন যেন ব্যাথা করছে কিছুক্ষণ আগে থেকে।বিকালের দিকেও তার ব্যাথা ছিলো।কিন্তু সে গুরুত্ব দেয়নি।

সন্ধ্যার পর ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো।সে অনুভব করছে যে তার গা বেশ গরম হয়ে গিয়েছে।
এদিকে অহনা মৌ আর আয়ানের রুমে আসলো মৌ এর সাথে আড্ডা দিবে বলে।কিন্তু সে এসে দেখে মৌ হাত পা গুছিয়ে শুয়ে আছে। অহনা কিছুটা অবাক হলো এমন দেখে।সে গিয়ে মৌ এর গায়ে যেই না হাত রাখলো অনুভব করলো যে মৌ এর গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে। সে সাথে সাথে গিয়ে তার আম্মুকে ডেকে আনলো। তিনি অবস্থা বুঝতে পেরে জলপট্টি এর ব্যবস্থা করলেন।এতো জলপট্টি করেও মৌ এর জ্বর কমানো যাচ্ছে না।আয়ানের আম্মু মৌ এর জন্য কাবার আনতে গেলো।খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিবে। কিন্তু মৌ কোনোমতেই ওষুধ খাবে না। অতিকষ্টে তাকে কাবার খাওয়ানো গেলেও ওষুধ খাওনোতে সম্পূর্ণ বিফল হলো।

অহনা সেই সন্ধ্যা থেকে মৌ এর পাশে বসে আছে।যদি কিছু লাগে।...
রাত ৯টার দিকে আয়ান অফিস থেকে ফিরলো। সে এসে দেখলো অহনা বসে বসে ঝিমছে আর মৌ ঘুমিয়ে আছে।সে গিয়ে অহনা কে হালকা ধাক্কা দিলো। এতে অহনা জেগে উঠলো।
" কি রে এখানে এভাবে কেনো ঘুমাচ্ছিস তুই। যা নিজের রুমে যা।"

"আরে ভাইয়া দেখো না।মৌ এর সে কি জ্বর।সেই সন্ধ্যা থেকে এমন অবস্থা। "

আয়ানের মুখ কিছুটা চিন্তিত দেখালো।সে কিছুক্ষণ ভেবে বললো," তুই রুমে গিয়ে ঘুমা তো। আমি দেখবোনে।"

অহনা কিছুটা অবাক হলো।বললো,"শিওর তো ভাইয়া?"

"আরে হ্যা শিওর।"

"আর শোনো ভাইয়া।মৌ কিন্তু ওষুধ খায়নি।পারলে ওষুধ খাইয়ে দিস ওকে।"

"হুম।"

অহনা চলে যেতেই আয়ান ফ্রেশ হয়ে মৌ এর পাশে বসলো। মাথায় হাত রাখতেই সে কিছুটা ভয় পেলো।কারন মৌ এর শরীর খুব গরম হয়ে আছে জ্বরের জন্য।
আয়ান মৌ কে জোড় করে উঠালো ওষুধ খাওয়ানোর জন্য।অনেক কষ্টে সে ওষুধ খাওয়ালো।এদিকে মৌ না ঘুমিয়ে আজব আজব কথা বলছে জ্বরের ঘোরে।যা শুনে আয়ান না চাইতেও হেসে দিলো।

"অহনা রে শোন না।।তোর ভাইয়া এমন কেনো রে। খুবই পঁচা একটা মানুষ।"

আয়ান এতোক্ষনে বুঝতে পারলো মৌ সবকিছু তাকে অহনা ভেবে বলছিলো।

"ওই অহনা কথ বলিস না কেনো রে?? দেখ না তোর ভাইয়া এমন মেরেছ আমাকে যে জ্বর এসে গিয়েছে।
.
.
.
চলবে.......................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন