বিছানায় শুয়ে বন্ধ হয়ে থাকা ফ্যানের দিক একধ্যানে তাকিয়ে বেলি। ফজরের আজান শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ হবে। পাশে বিমান একটু পরপর বাথরুম যাচ্ছে আর এসে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। হয়তো পেট খারাপ হয়েছে। খুশির উঠান ঝাড়ু দেওয়ার আওয়াজ আসছে খুকখুক করে। সাথে খুশির বড় আওয়াজের চিল্লানীও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। বেলি ধীরে চোখ বুঝে ফেলল। হঠাৎ, তাঁর নিস্পাপ পৃথিবীটা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল। অদ্ভুত অনুভূতির শিকার হচ্ছে সে। যে-ই অনুভূতি দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। বেলি শুধু হ্যাল্পলেসলি অনুভব করে যাচ্ছে। সে যে বেড়ে যাওয়া অনুভূতির কিছুই করতে পারছে না।
চোখ বুঝলে সে শুধু, তৃষ্ণার বাঁকা হাসি, রাগী ভঙ্গিতা , চোখ রাঙানো, চুল উঁচু করা, নাক স্লাইড করা, এগুলো দেখতে পাচ্ছে। হুটহাট একেক ভঙ্গিমা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বেলির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। আবার তৃষ্ণার হঠাৎ ' উধাও ' হয়ে যাওয়া নিয়ে, ভাবতেই তাঁর চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে! মাথাটা জানালার সাথে লাগিয়ে বেলির হালকা আওয়াজ,
' কবে ফিরবেন অসভ্য। '
মুখে ঠান্ডা কিছু ছুঁয়ে দিতেই, লাফ দিয়ে উঠে বসল বেলি। তৃষ্ণাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে মনেই নেই। মুখে হাত দিয়ে দেখল লা-লা লেগে আছে। জানালার দিক তাকিয়ে চোখ রাঙালো। টাম্মি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে। এবং সে-ই ঘুমন্ত বেলির মুখ চেটে দিয়েছে। কিন্তু, বেলি টাম্মিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই তাঁর বিচলিত প্রশ্ন,
' কিরে, কিরে? তোর শরীরের সোয়েটার কোথায় টাম্মি? '
আনন্দ দাত ব্রাশ করছে কলপাড়ে। সেখান থেকে মেয়ের বিচলিত আওয়াজ শুনে চেঁচালো,
' তোমার আম্মু খুলে নিয়েছে ধোয়ার জন্য। নোংরা হয়েছে সোয়েটার টা। বাবলু একটা সোয়েটার রেখেছে ,ওটা পড়িয়ে দাও। '
বেলি বিছানা থেকে দ্রুত নেমে গেল। ততক্ষণে টাম্মি উঠানের আটটা সিঁড়ি বেয়ে ঘরে চলে এসেছে। বেলি ছোট কাপড় দিয়ে টাম্মির পা মুছিয়ে দিল। পেছনের শোকেস থেকে, সোয়েটার এনে ধীরে সুস্থে টাম্মিকে পড়িয়ে দিল। মুচকি হেসে টাম্মির মুখ দু-হাতে চেপে ধরলো। তারপর বড় করে একটা চুমু খেলো,
' এখন শাকিবখান দেখাচ্ছে। নদীতে গোসল করানোর পর একদম সালমান খান দেখাবে। '
কথাগুলো বলতে বলতে নিজের সাথে টাম্মিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ঘুমের বাবলু ঢুলুঢুলু আওয়াজে বলল,
' ভালো হয়েছে। এখন আর তোর জন্য কষ্ট করে ছেলে খুঁজতে হচ্ছে না। কারণ তোর পছন্দের সালমান খান চলে আসবে টাম্মিকে গোসল করালেই। বাবাকে খবরটা দিতে হচ্ছে। '
বেলি টাম্মির দিক তাকিয়ে চোখ পিটপিট করলো,
' উঁহু। আমার সালমান খান আছে। অরিজিনাল সালমান খানকে বাকিদের জন্য রেখে দিয়েছি। জানিসই তো, তোর বোনের মন কতটা বিশাল। '
বাবলু সকল দাঁত দেখিয়ে দিলো,
' তৃষ্ণা ভাই নাকি? হুম হুম? '
বেলির মুখটা ' ও ' হয়ে গেল। দ্রুত উঠে গিয়ে বাবলুর মাথায় টোকা দিলো,
' চুপ বিয়াদপ। যা ঘুমা। '
' জয় কুফা-সামছু টাকা দেবে বাচ্চু। '
কথাটা বলেই বাবলু ল্যাপ মুড়িয়ে অন্যপাশ ফিরে সোজা ঘুম। কনফিউজড বেলি দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো বাবলুর কথার মানে টা কি?
টাম্মিও হয়তো বোঝেনি। অবুঝ সে বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে বেলির পিঁছু লেগে দাঁড়ালো।
আজ শেষ পরিক্ষা বেলির। কিছুক্ষণ আগে টেবিল ছেড়ে, আপাতত স্কুল যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। পড়তে পড়তে কোমর আর নেই তাঁর। বাবলুর সমাপনী পরীক্ষা কাল শেষ হয়েছে। এইকয়দিনের মানসিক টর্চার থেকে মুক্তি পেয়েছে। তা-ই সে আবারও আরামসে ঘুমোচ্ছে। বেনী করতে করতে বেলি, উঠানের বিছানায় পেট ধরে সাপের মতো মোচড়া-মুচড়ি করা বিমানের দিক এগিয়ে আসলো,
' স্যালাইন আনতে বলবো আব্বুকে? '
' হ্যাঁ। মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে। ঘুমুতে পারি নি আমি সারারাত। '
' আচ্ছা।'
বলতে দেরি কিন্তু বিমানের আবারও দৌড়ে বাথরুম যেতে দেরি হয়নি।
ক্ষেতের মাঠে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছিল আনন্দ। মেয়ের ডাকে তাঁর সাথের লোকজনদের বিদায় জানাল। এগিয়ে যেতেই,
' আব্বু আপুর পেট খারাপ হয়েছে। '
' আচ্ছা? কখন? '
' মাঝরাত থেকে। '
আনন্দ আর অপেক্ষা না করে বিমানকে দেখতে যাচ্ছে। বেলি বাড়িতে ঢোকার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো। পেছনে ফিরে দেখল শীলা বেশ সুন্দর ভাবে স্কুল ড্রেসে হাজির। আজ কেমন অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে শীলাকে। মুখে লেগে থাকা হাসিটা ফুটে উঠছে।
' দ্রুত জুতো পড় বেলীফুল। '
বেলি হালকা হেসে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করলো।
শীলা আনন্দকে সালাম জানিয়ে, রান্নাঘরে নাস্তা বানানো খুশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। খুশি হাতের কাজ বাদ দিয়ে শীলার দিক ঘুরে বসলো,
' রুটি বানিয়েছি সাথে আলুভাজি। খাবি? '
' অবশ্যই অবশ্যই। '
' আচ্ছা টেবিলে গিয়ে বস। একসাথে খেয়ে যাবি। '
টেবিলে খেতে বসে হঠাৎ বেলির চোখ যায় খুশির হাতের দিক। কিন্তু বেলি কিছু বলার আগেই আনন্দ তাড়াতাড়ি টেবিল ছেড়ে খুশির দিক এগিয়ে যাচ্ছে। রুটি দিতে গিয়ে থেমে গেলো খুশি। কারণ তাঁর হাত শক্ত করে ধরেছে আনন্দ,
' হাত পুড়েছে কিভাবে? '
' ও-ই তো ভাত গড় দিতে গিয়ে। '
' মেডিসিন লাগাবে না। চল। '
আনন্দ টেনে নিয়ে যাচ্ছে খুশিকে,
' আরে নাস্তা তো করো? '
আনন্দ জবাব না দিয়ে খুশিকে পেছনের রুমে নিতে ব্যাস্ত।
বেলি মিষ্টি হেসে খেতে লাগলো। শীলা ভালোলাগার ছোঁয়া নিয়ে সামনে যাওয়া আনন্দ ও খুশির দিক তাকিয়ে।
আনন্দের দুপাশে বেলি শীলা কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে। টমটমে উঠার সময় মাহফুজের আওয়াজে বেলি আনন্দকে একমিনিট দেখিয়ে, নানার দোকানের দিক দৌড় লাগলো,
' হ্যাঁ বল না। '
একটি নতুন বিস্কুটের প্যাকেট এসেছে। মাহফুজ সেখান থেকে একটা বিস্কিটের প্যাকেট বেলির দিক এগিয়ে দিলো,
' এটা নে। আর, ভালো ভাবে পরিক্ষা দিস। '
বেলি হেসে ফেলল। কিছুকিছু মানুষ রক্তের না হয়েও বেশ আপন।
' আচ্ছা। দোয়া তো করছ। তাও আরও বেশি করবা। '
' হ্যাঁ হ্যাঁ পাকনি। এখন যা তোর আব্বু দাঁড়িয়ে। '
বেলি দ্রুত চলল টমটমে বসে থাকা আনন্দ ও শীলার দিক।
পরিক্ষা দিয়ে বেরিয়ে হাত ঘোরাচ্ছে বেলি বারবার। লিখতে লিখতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে৷ কেমন চিনচিন করছে। কলমের কালির ফোঁটা ফোঁটা দাগ ডান হাত জুড়ে। পাশে দাঁড়ানো শীলার দিক সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকাল। হঠাৎ এতো খুশির কারণ কি জানার জন্য বেলির কৌতূহল সকাল থেকে বেড়ে চলেছে। মাঠের কোণায় পৌঁছাতেই বেলি'র সন্দেহ জনক প্রশ্ন,
' কি ব্যাপার বলতো? '
শীলা বেলি'র কথায় আরও দশ'গুন লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে,
' জানিস ওঁ আমায় কাল প্রপোজ করেছে। '
ব্যাস। বেলির কৌতূহল আকাশের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে।
' সত্যি? কিভাবে? কখন? '
' সন্ধ্যার দিক কোচিং-এর সামনে এসেছিল। তাঁর বাইকে করে ওপারে নিয়ে গিয়ে, ফুল দিয়ে প্রপোজ করে। '
বেলির চোখ মুখে আনন্দের ছোঁয়া,
' তারপর? '
' তারপর আর কি? ওখানকার একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়িতে দিয়ে যায়। '
' অতি রোমান্টিক। '
' জানিস? তোর সাথে ওঁ দেখা করতে চায়। প্রা-ই বলে বেলিকে নিয়ে আসতে। '
বেলি মুখ দিয়ে ' ফুসসসস ' আওয়াজ বের করে চোখ পিটপিট করলো,
' আমার চাচাতো, কাকাতো, মামাতো যত ভাই আছে? তাঁদের সাথে দেখলেও বলেছে পা কেঁটে ফেলবে। '
বেলির কথা শুনে শীলা কিটকিটিয়ে হেসে ফেলল। বেলি আড়চোখে হালকা হাসলো মনেমনে। তাঁর প্রেমটা কেমন? না প্রপোজ আর প্রেম নিবেদন। অবশ্য প্রেম নিবেদন তৃষ্ণাকে একদম যাবে না। বেলি হাসতে হাসতে সেখানে কাত হয়ে যাবে। দেখা যাবে প্রেম নিবেদনের যায়গায় বলবে, ' থাপ্পড় খাবি? '।
হসপিটাল থেকে তৃষ্ণার রিলিজ-ডেটের এখনও ১৬ দিন বাকি। অথচ আবির এক প্রকার বাধ্য হয়ে তৃষ্ণার আর্জেন্ট রিলিজ করাচ্ছে। হসপিটালের ডাক্তার মিজানুর বারবার রিকোয়েস্ট করেছেন যে এখন রিলিজ করানোটা পেসেন্টের জন্য ঠিক না। তাও আবির বা আমিদের কিছুই করার নেই। ছেলের ' আজকেই ফিরবো ' কথায় আমিদও কিছুই করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে সবাই আজই রওনা হচ্ছে কৃষ্ণপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে। আমিদ ফোনের মাধ্যমে বাড়ির ডাক্তারকে এখনই তৃষ্ণার ফিরার কথা জানিয়ে দিয়েছে। যাতে তৃষ্ণার বাকি চিকিৎসা বাড়িতেই করানো যায়।
গাড়ির ব্যাকসাইডে হাত-পা মেলে সিটে মাথা হেলান দিয়ে তৃষ্ণা। তাঁর পাশে আয়েশা এবং আয়েশার কোলে বসে তৃষ্ণার মোবাইল টিপছে তৃষা। গাড়ি চালাচ্ছে আবির। আবিরের পাশে অঞ্জলি। আবির বারবার ফ্রন্ট মিররের মাধ্যমে আয়েশার দিক তাকাচ্ছে,
' আজিব। সামনে কি হয়েছে যে? পেছনে বসতেই হবে মানে কি? '
আবিরের হঠাৎ ঝাড়ি তে আয়েশা চোখ রাঙাল,
' বাচ্চা আছে। কাহিনী করবেন না আবির। '
' কাহিনী মানে? সামনে বসলে তোমার সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? '
অঞ্জলি মুখ টিপে হাসছে,
' মামী তুমি সামনে কেন চলে আসছ না। তুমি না আসলে মামা থামবে না। '
' আমি পেছনেই বসব। ওঁর জেদ আমি আর ঠেলতাম না। '
আবির আড়চোখে আয়েশাকে চোখ রাঙাল।
' পড়ে দেখছি তোমায়। '
আবিরের পাশে আরেকটি সাদা গাড়ি এসে থেমেছে। ড্রাইভার সিট থেকে সোলাইমানের আওয়াজ,
' অঞ্জলি শপিং লাগবে তোমার? সামনে মল আছে। মামীর লাগবে? '
অঞ্জলি মাথা নাড়ালো,
' লাগবে না। '
আয়েশা ও বলল ' লাগবে না '।
ব্যাক সাইড থেকে আবিদ মাথা বের করে উঁকি দিলো,
' ভাইয়ের সমস্যা হচ্ছে না তো? মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে নাকি? ঘুমের টেবলেট লাগবে? '
আবিদের চিন্তিত প্রশ্নে আয়েশা মিষ্টি করে হাসলো ,
' চিন্তা করিস না আবিদ। আমরা আছি তো। '
' না মানে জিজ্ঞেস করলাম আর কি। '
আয়েশা খেয়াল করলো তৃষ্ণা চোখ খোলার চেষ্টা করছে।
' কি হয়েছে? মাথা যন্ত্রণা করছে? '
তৃষ্ণা পা একটু নাড়িয়ে সোজা হয়ে বসল,
' না। ইট'স ওকে। [ একটু থেমে ] আচ্ছা, পিচ্চি মেয়েদের গিফট কি পছন্দ হয়? '
অঞ্জলি ভ্রু-উঁচু করলো,
' কিসের জন্য? '
' আ বার্থডে গিফট। '
আয়েশার প্রশ্ন,
' বেলির বার্থডে ? '
তৃষ্ণা ছোট শ্বাস ফেলল,
' হ্যাঁ ছিলো। ৬ দিন হচ্ছে চলে গেছে। আমিও উঈশ করি নি। ফোনে উঈশ করলে দেখা যেতো আরও কাঁদছে। বাই দা ওয়ে, এখন কি কেক কাঁটা যাবে?'
আবির গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,
' সুস্থ হয়ে রেস্টুরেন্টে কেক একটা কেঁটে নিস। এখন গিফট দিতে পারিস। '
' কি দেবো? '
তৃষা চেঁচিয়ে উঠলো,
' একটা ভাবি সাইজের টেডিবিয়ার। '
গাড়ির সবাই হো হো করে হেসে ফেলল। অঞ্জলি হাসি কোনো ভাবে থামিয়ে বলল,
' ভাবি সাইজ টেডিবিয়ারের জন্য অর্ডার করতে হবে। বা পাওয়াও যেতে পারে। কিন্তু ওটা দিয়ে বেলি কি করবে? ঘরে নিলে তো চাচা-চাচি ওঁকে প্রশ্ন করবে। '
আয়েশা সহমত হলো,
' হ্যাঁ ঠিক। আপাতত রিং নিতে পারিস বেলির জন্য। কেউ তেমন খেয়াল করবে না। সিম্পল আঙুলে থাকবে। '
অঞ্জলি ও সহমত হলো,
' রিং পারফেক্ট হবে। '
তৃষ্ণা মানিব্যাগ বের করে কার্ড আয়েশার হাতে দিয়ে দিলো,
' সামনে জুয়েলারি মল আছে। পছন্দ মতো চ্যুজ করে নিয়। '
আয়েশা, অঞ্জলি, তৃষা তাঁদের সাথে আবিরও গেলো মলে। রিং কিনতে কিনতে দেখা গেল, এক ঘন্টা সেখানেই শেষ।
আমিদের গাড়ি গ্রামে পৌঁছাতেই তাঁর চিন্তিত প্রশ্ন,
' আবিরের গাড়ি কোথায়? এতক্ষণে তো পৌঁছানোর কথা। আবিদ কল দে। '
আবিদ চারপাশে তাকিয়ে গাড়ি দেখতে না পেয়ে, আবিরের নাম্বারে কল লাগাল।
বিকেল দিকে ওপারে ঘুড়তে বেরিয়েছে বিমান শীলা। বেলিকেও সেধেছিল, কিন্তু বেলি গেল না। আসলে তার মন চাচ্ছে না যেতে। সব বিরক্তিকর লাগছে। রাস্তায় বের হলেই তার বেহায়া চোখ বারবার আশেপাশে তাকাতেই থাকে তৃষ্ণার খোঁজে। পরিক্ষা শেষ হয়ে ভালোই হয়েছে। বেলি বাড়ি থেকে বেরও হবে না আর চোখ তৃষ্ণাকে খুঁজবেও না। কিন্তু মন? সেটাকে কিভাবে আটকাবে? সেটা তো সারাদিন তৃষ্ণাকে খুঁজতে থাকে। বালিশ দিয়ে মাথা চেপে ঘুমানোর চেষ্টায় লেগে গেলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। তৃষ্ণার কথা মনে পড়ছে ।
' ইয়া আল্লাহ। এ-ই কোথায় ফেঁসে গেলাম আমি। '
বেলির আওয়াজে খুশি অন্যরুম থেকে ডাক লাগালো,
' বেলি? '
' জ্বী মা। '
' বিছানার নিচ থেকে ঝাড়ু টা নিয়ে আয়। আর তোর বাবার চেয়ারে রাখা কাপড়চোপড় সাথে নিয়ে আয়। '
হাতের ফোনটা বালিশের নিচে রেখে মায়ের কথা মতো কাজ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আবার এসে ফোন হাতে নিতেই দেখল আবিদ কল দিচ্ছে। চোখ পিটপিট করে, দ্রুত কল রিসিভ করলো,
' হ্যাল...
বেলির হ্যালো বলা বন্ধ হয়ে যায় আবিদের কথা শুনে,
' বেলি তোমাদের বাড়ির পেছনের রোডে আসো ত। '
বেলির সারাশব্দ না পেয়ে আবিদ একটু উঁচু আওয়াজে বলল,
' বেলি? '
চাপা স্বরে বেলির জবাব,
' ক..কেন?
' আসো না। '
' সে.. এসেছে? '
' কি জানি। তুমি আসলে না জানবে। '
বেলি দ্রুত ফোন কেঁটে দিলো। তাঁর হাত-পা কাঁপছে। সত্যি এসেছে?
কোনোমতে শরীরে ওড়না পেঁচিয়ে বেলি দৌঁড় লাগালো। ধীরে ধীরে রোডে পৌঁছাতেই দেখল আবিদ তার দিক ফিরে মিষ্টি হাসছে। বেলি আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। জীপগাড়ি তো নেই। তাহলে কি তৃষ্ণা আসে নি?
.
.
.
চলবে............................