অতিরিক্ত চাওয়া - পর্ব ৪৫ - সিজন ২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


পারফিউম হাতে বেলী দাঁড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে। 
তার সরলতম চোখ জোড়া বারংবার দরজার দিক যাচ্ছে। তৃষ্ণা যেকোনো সময় চলে আসতে পারে৷ তৃষ্ণা আসবে ভাবতেও বেলীর হৃদয় ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠছে৷ হঠাৎ ধুমধাম শব্দে খুব সাবলীল ভঙ্গিতে, তৃষ্ণা রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিয়েছে। ওপাশ থেকে আবিদের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে৷ 
- এই ভাই!! এটা মোটেও ঠিক না। 
আয়ুশ রাগী কন্ঠে দরজায় আঘাত করে চলেছে,
- কী প্রমিজ করেছিলে? কার্ড না দিলে কিন্তু ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি ভাই৷ 
তৃষ্ণার শান্ত কন্ঠ, 
- তোদের আমার হাড়েহাড়ে চেনা আছে৷ কার্ড নিয়েও আমাকে ডিস্টার্ব করবি৷ কাল পেয়ে যাবি কার্ড, বিরক্ত না করলে৷ 
- ভাইইইইইইই!!
এদিকে শক্ত এবং নিথর দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেলী আঁড়চোখে হাতের পারফিউমের দিক তাকালো। এটা হঠাৎ পরে গিয়েছিল ড্রেসিংটেবিল থেকে। খানিকক্ষণ যাবত লক্ষ্য করেছে পারফিউমের বোতল খানা। তৃষ্ণা আসছে না দেখে, সে ভাবলো দ্রুত উঠিয়ে রেখে আবার দ্রুত নিজ যায়গায় চলে আসবে। তাতে তৃষ্ণার সামনে পড়তে হবেনা৷ কিন্তু কে জানতো যে, সে পারফিউম তুলতে গেলেই তৃষ্ণা চলে আসবে। এসেছে , এসেছে সাথে নিয়ে এসেছে একদল বিড়াল৷ এদের মিউমিউ তো থামবে বলে মনে হয়না৷ কী লজ্জাজনক!! 
তৃষ্ণা বেলীর দিক তখন ডান ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে। বেলী তৎক্ষণাৎ আরও শক্ত হয়ে গেলো যেমন। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলল,
- গরম লাগছেনা প্রচন্ড?
বলতে বলতে সে পাঞ্জাবি খুলে ফেললো। যেমন পৃথিবীর সব গরম তার একার৷ তারপর পারফিউমটা বেলীর হাত থেকে নিয়ে, বেলীর সামনে ধপ মেরে সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়লো। তারপর তার সকল ধ্যান বেলীর দিক৷ এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি'তে বেলী নেতিয়ে। ভয়ংকর ভাবে তার হাটু কাঁপুনি দিচ্ছে। হৃদয় তীব্রতায় ধুকপুক করছে। এই অনুভূতি এতটাই গভীর যে সে, কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আঁড়চোখে তাকানোর সাহসও অবশিষ্ট নেই। অনুভব করতে পারছে তৃষ্ণা তার বরাবর আসছে। তাড়াহুড়োয় নয় বরং খুব ধীরে৷ যেমন ইচ্ছেকৃত ভাবে বেলীকে দেখিয়ে আসছে। বেলী অজান্তেই কিছুটা পেছালো। তার পা জোড়া আজ নিজ গতি অবলম্বন করছে। হঠাৎ থুতনিতে স্পর্শ পেয়ে চোখ জোড়া শক্ত করে বুঝে ফেললো। অনুভব করতে পারছে তৃষ্ণার ক্রমাগত গরম নিশ্বাস৷ পরপরই তৃষ্ণার ঠোঁটের ছোঁয়া পেলো তার নাকের বাম পাশে। নাকফুলের উপর। চোখ জোড়া বড়সড় করে খুলল বেলী৷ মুহুর্তেই তার চোখ তৃষ্ণার চোখে আঁটকে গেলো। তৃষ্ণার ঠোঁট জোড়া তখনো বেলীর নাকফুল ছুঁয়ে। এদিকে বেলী না পারছে চোখ ফেরাতে না পারছে বন্ধ করতে আর না পারছে শ্বাস নিতে। তৃষ্ণার আঙুল বেলীর গালে৷ খুব ধীরে সে বলল,  
- অপূর্ণ সবকিছুর পূর্নতা হয়ে গেলো৷ আমার জীবন পরিপূর্ণ হয়ে গেলো বেলী৷
 তৃষ্ণার ঠোঁট জোড়া বেলীর সর্ব মুখে বিচরণ করছে দ্রুত ভঙ্গিতে। বেলী মুখ ঘোরাতে চাইলে তৃষ্ণা তার আঙুলের সাহায্যে বেলীর দুগাল আলতো চেপে নিজের দিক করে রাখে৷ তার ঠোঁট জোড়া বেলীর ঠোঁট বরাবর এসে থেমে যায়। 
- নাকফুল পরলে তোকে এতটা আমার লাগবে জানলে, বছর আগে পরিয়ে দিতাম। বউ রুপে এতো সুন্দর লাগবে জানলে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই আমার বউ বানিয়ে ফেলতাম।
এতকিছু বলে সে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছে? বেলীর যে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে তার খবর কী রাখছে লোকটা? আর যেভাবে চেপে আছে বেলী তো যেকোনো সময় হার্টএট্যাক করবে৷ নিজের সাথে হাজার লড়াই করে বেলী চোখ জোড়া পুনরায় খুলল। তার চাহনি তৃষ্ণার সাথে মিশতেই তৃষ্ণার ঠোঁট জোড়া খুব দ্রুত ভঙ্গিতে আঁকড়ে ধরে বেলীর ঠোঁট। বেলীর মাত্র সাহস করে খোলা চোখ জোড়া পুনরায় শক্ত হয়ে বন্ধ যায়৷ অনুভব করতে পারে তৃষ্ণার ঘনিষ্ঠ স্পর্শ, তার দ্রুততম শ্বাসপ্রশ্বাস এবং অস্থির আচরণ। বেলীর ঠোঁট থেকে তৃষ্ণার ঠোঁট সরতেই বেলী দ্রুত কিছুটা পেছনে চেপে দাঁড়ায়। ক্রমাগত শ্বাস নিতে গিয়ে সে অনুভব করে তার শরীর কাঁপছে৷ অথচ তৃষ্ণা তাকে সময় দিতে নারাজ যেমন, হঠাৎ করেই পাজাকোলে তুলে ফেলে। বেলী অস্পষ্ট শব্দে চেঁচাল৷ কিন্তু তৃষ্ণার জবাব নেই৷ বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করতেই বেলীর শ্বাস গলায় আটকে৷ মাথার ওড়নায় তৃষ্ণার হাত পরতেই বেলী অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে, 
--" আ..আপনি মানে আমাকে....
দেখা গেলো তৃষ্ণা বেলীর না বলা কথাগুলো বুঝে ফেলেছে৷ বুঝলেই কী? আজ আর কোনো বাঁধা সে মানবেই না৷ 
- আজ আমার বিপক্ষে কিছু বললেই চড় খাবি৷ 
বেলী চুপসে গেলো৷ লজ্জায় সে আর কিছুই বলতে পারলো না। সাহস সঞ্চয় করে তৃষ্ণার লালচে চোখ জোড়ায় নজর রাখলো৷ এমন অস্থির তৃষ্ণাকে সে আগে কখনো দেখেনি, কখনো না। তার সামনে আজ এক অন্য তৃষ্ণা, ভিন্ন তৃষ্ণা৷ তৃষ্ণার উদাসীন ঠোঁট জোড়া বেলীর গলায় চুমুর ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। তার গভীর কন্ঠ, 
- বেলী! খুব সুন্দর তুই৷ খুব........  
 তীব্র অনুভুতির এই সাগরে বেলী কিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা। দিশাহারা তার শ্বাসপ্রশ্বাস হয়ে আসছে অস্বাভাবিক দ্রুত৷  

বারান্দার পর্দাগুলো সরিয়ে দেওয়ার ফলে ভোরের আলো ঘরে প্রবেশ করছে। উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে তৃষ্ণা। তার উদোম শরীর দৃশ্যমান। অগোছালো চুলগুলো দিয়ে কপাল ঢেকে। বেলী বেশকিছুক্ষন পর ওয়াশরুম হতে বেরোলো। খুবই কষ্টে ভিন্ন একটি শাড়ি পরেছে সে। এভাবেই সারারাত ঘুমাতে পারেনি। চোখজোড়া সাংঘাতিক জ্বলছে৷ চুল মুছতে নিয়ে সে ড্রেসিংের সামনে এসে দাঁড়ালো। আয়নায় নিজেকে দেখতেও লজ্জা লাগছে৷ চুল মুছে তাওয়াল বারান্দায় মেলে দিলো। তারপর তৃষ্ণার মাথার সাইডে এসে বসলো। খুবই ক্লান্ত লাগছে তার৷ মাথাটাও ভাড় হয়ে আসছে। কিন্তু ঘুম আসছেনা। ভাবনায় ছেঁদ পরে তৃষ্ণার স্পর্শে ৷ ঘুমন্ত সে হঠাৎ করেই বেলীকে টেনে নিজের সাথে শুইয়ে দেয়। শক্ত হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে, 
-- খিদে পেয়েছে? 
বেলী অস্পষ্ট স্বরে জানালো,
-- না৷ 
 -- খিদে পায়নি কেনো?
খিদে পায়নি কেনো মানে? এখন কী বেলী সাহেবের জন্য একটা লিস্ট বানাবে কেনো খিদে পায়নি তার ? তৃষ্ণা নিভুনিভু চোখে তাকালো বেলীর দিক৷ 
-- ঘুমা।
বলতে বলতে সে বেলীকে আদুরে ভাবে নিজের বুকে টেনে নিলো। খুব ধীরে বেলীর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। আশ্চর্য ভাবে এবার সত্যিই বেলীর ঘুম আসছে। তৃষ্ণার বুকে জাদু নাকি হাতে? 

অঞ্জলির কন্ঠে বেলী লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালো। তৃষ্ণা তখনো ঘুমে৷ এদিকে দরজা খুলতে বেলীর লজ্জা লাগছে৷ লজ্জায় দরজা খুলতে যেতে পারছেনা। আবারো অঞ্জলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে৷ 
-- বেলী!! উঠেছ? 
নিজেকে পরিপাটি করে বেলী দরজা খুললো দ্রুত। অঞ্জলি দাঁড়িয়ে। তার হাতে নতুন একটি শাড়ি। শাড়িটি বেলীর হাতে দিয়ে, বেলীকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
-- খারাপ লাগছেনা তো? 
লজ্জিত বেলী কোনোরকমে মাথা নাড়াল৷ অঞ্জলি হাসছে, 
-- ওই বেয়াদব ঘুমাচ্ছে যে?
-- জি। 
-- ও উঠতে উঠতে দুপুর বুঝলে? এখন তো মাত্র আটটা। বাই দা ওয়ে, খুব সুন্দর করে শাড়ি পরেছ দেখছি৷ মাশাআল্লাহ৷ তাহলে এই শাড়িটা রেখে দাও, দুপুরে পরিও৷ আমার রুমে চলো, তোমার মাথা মালিশ করে দিবো দেখবে অনেকটা ভালো লাগবে। আর তোমার ভাইয়া নেই। সে আব্বুর সাথে বাজারে গিয়েছে। আজকে মেহমান আসবে বাড়িতে অনেক৷ '
 অঞ্জলির সাথে যেতে গিয়ে বেলী ভাবলো তার সামনে যেনো আজ আবিদ'রা না আসে৷ আসলে তাকে লজ্জায় মেরেই ফেলবে৷ 
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন