অতিরিক্ত চাওয়া - পর্ব ১৩ - সিজন ২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


স্তব্ধ বেলি আশেপাশে তাকাতে ব্যাস্ত। মনে হচ্ছে কেউ তাঁর ডান গালে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে! তাঁর ছোট হৃদয়টি ধুকধুক করছে অনবরত! ঠান্ডায় না তাঁর শরীর কাঁপছে তৃষ্ণার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে! 
কোনোমতে হালকার আওয়াজ, 
~ আআ..আমি য..যাই? 
তৃষ্ণার সম্পুর্ন দৃষ্টি বেলির কালো চুলে! ঝুঁকে নিজের মাথাটি বেলির ডান ঘাড়ের চুলের মাঝে ছোঁয়ায়! হালকা কেঁপে থাকা বেলি এবার ভুমিকম্পের মতো কাঁপতে লাগল ! কিছুটা দূরে সরবার চেষ্টা করল! তৃষ্ণার বাম হাত বেলির পিছনের কোমর আঁকড়ে ধরে! যে দু'পা বেলি পিছিয়েছিল তার থেকে আরও চার'পা এগিয়ে আনে নিজের দিক! শ্বাসকষ্টের মাঝে বেলি চোখ বুঝে, ছোট-ছোট আওয়াজে বলে, 
~ ক..কেউ দেখ...
তৃষ্ণার ঠোঁট-নাক বেলির ঘাড়ে ছুঁতেই, বেলির কথা থেমে যায়, 
~ দেখলে দেখবে! যে-ই বিয়ে তোর ১৮ বয়স হলে হতো! সেটা না-হয় ১ বছর আগে হয়ে যাবে! ১৮ বয়সে বিয়ে না-হয়ে আমাদের দুটো বাচ্চা হবে! 

বেলি চোখ দু'টো আরও টাইট করে বুঝে ফেলে! বাম হাতটি তৃষ্ণার বাম হাত চেপে ধরে, যেটা দিয়ে তৃষ্ণা বেলির কোমর আঁকড়ে ধরে আছে! অস্পষ্ট স্বরে বেলি বলে, 
~ ব..বাবা মাঝ..মাঝরাত্রে উঠে! প্ল..প্লিজ! 
~ কি শ্যাম্পু ব্যবহার করিস? 
~ ডা...ডাভ! 
~ উমম! আমার নেশা লেগে যাচ্ছে! শরীর বলছে ' তোকে চেপে ধরে যা করার করে ফেলতে '! মন বলছে ' দ্রুত গাড়ি নিয়ে কেঁটে পড়তে '! আর আমার তোর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে! বাসায় গেলে ঘুমাতে পারি না, খেতে পারি না, কাজ করতে পারি না, শুধু তোর কথা মনে পড়ে! [ বেলির ঘাড়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে, ] প্রচন্ড হেল্পল্যাস লাগে নিজেকে! আমার ঘুমানোর, খাওয়ার, কাজ করার, ঔষধ আছে কিন্তু সেই ঔষধ আমি নিতে পারছি না! 
এ-তো টাকা, পাওয়ার থাকতেও আমি হেল্পল্যাস বেলি! তোর কাছে হেল্পল্যাস! আম গেটিং শিফটল্যাস ফর ইউ! আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ এনিমর! আই জাষ্ট কান্ট বেলি! আই কান্ট! ডু সামথিং! 

বুক কাঁপছে, হাত-পা ঝিমিয়ে যাচ্ছে, মাথা ধরছে, চোখ ছলছল করছে! কি করবে বেলি? মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে একটু-আধটু করে! তৃষ্ণার মাথা বেলির ঘাড় ছুঁয়ে আরো বেলিকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে! বেলি কাঁপা-কাঁপি হাত দু'টো তৃষ্ণার কোমর ছুঁয়ে দেয়! তৃষ্ণা তাঁর মাথা বেলির ঘাড় থেকে সরিয়ে, বেলির মুখের দিক তাকায়! বেলি চোখ বুঝে বড় শ্বাস ফেলে! দু'পা উঁচু করে দাঁড়াতেই তৃষ্ণা আরেকটু ঝুঁকে বেলির দিক! বেলির নরম ঠোঁটের স্পর্শ তৃষ্ণার কপাল ছুঁয়ে দিতেই, তৃষ্ণার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে! 
~ এ..এখন? 
তৃষ্ণা বাঁকা হেসে মাথা দুলায়, 
~ হুমম চলবে! 
বেলি লজ্জা পেয়ে যায়! 
~ আপনি চলে যাবেন আজই.?
~ কাল রাত্রি যাব! 
বেলি আড়চোখে দেখল তৃষ্ণা তাঁর দিক ভ্রু-উঁচু করে তাকিয়ে, 
~ কি হয়েছে? স্পিক আপ! 
~ আপনি চুল কেটেছেন.?
~ হুমম, একটু শর্ট করেছি! আম্মু বলল দেবদাস হওয়ার প্লানিং করছি নাকি! একটু পার্ট-সার্ট নিতে বলল! তাই ইউ নো, হ্যান্ডসাম হওয়ার ট্রায় করছি যাতে তুই না পালাস! 
বেলি কিটকিটিয়ে হেসে উঠল, 
~ পার্ট-সার্ট? হ্যান্ডসাম? 
~ হ্যাঁ! কেন? এভাবেই চলবে আমাকে? 
বেলির গাল দু'টো লাল হয়ে উঠতে লাগল! হালকা মাথা দুলালো! 
~ দ..দেরি হচ্ছে! 
তৃষ্ণা কিছুক্ষণ বেলির দিক তাকিয়ে থাকল, 
~ হু! 
~ যাব? 
~ হ্যাঁ! রাত হচ্ছে! যা.. 
~ শুভরাত্রি! 
~ গুড নাইট! 

বাড়িতে ফিরে বেলি আর ঘুমাতে পারে নি! চোখ বুঝতেই তৃষ্ণার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার ! বিছানায় মোড়ামুড়ি করতে করতে, ভোরের আজানের সময় হালকা করে চোখ বুঝে যায়! 

~~~~~~~~~

টাম্মিকে নিয়ে মর্নিং ওয়াক এ বেরিয়েছে বেলি! টাম্মি বেলির সাথেসাথে নেচে-কুঁদে এগোচ্ছে! বেলি কুয়াশার বুকের মাঝে দাঁড়িয়ে হালকা আওয়াজে গান ধরল, 
~ ভালবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে.. 
আমার মনের ঘরে চান্দের আলো, চুইয়া চুইয়া পড়ে... 

আনন্দ একটু পরপর উঁকি দিচ্ছে, 
~ পড়ার টেবিল থেকে উঠলেই মাইর চলবে! 
বাবলু দুষ্টু হেসে পেট ধরে বসল, 
~ মা পেট ধরেছে! বাথরুম যেতে হবে! 
খুশি মাথা নাড়ালো, 
~ হ্যাঁ দ্রুত যা! 
আনন্দ চেচিয়ে বলল, 
~ কোথাও যাওয়া চলবে না! বাহানা শুধু! 
খুশি কড়াকড়ি ভাবে জবাব দিল, 
~ এখন কি ছেলেটা বাথরুমও যাবে না? তুই যা বাবলু! 
বাবলু নেচে-কুঁদে চলে গেল! বেলি পড়ছে আর বাবা-মায়ের টুকরো ভালবাসা দেখছে! এখনো বাবা কতটা ভয় পায় তাঁর মা কে! ভাবতেই বেলির হাসি আসতে লাগল! 

স্কুল ড্রেসে নানার দোকানে বসে বেলি! টাম্মি নিচে বসে রুটি খাচ্ছে, 
~ আজ দেখি একটু বেশি খুশি দেখাচ্ছে তোকে! ব্যাপার কি? 
বেলি মাথা নাড়ালো, 
~ এভাবেই! 
~ চা খাবি রে? 
~ দাও একটু! 

চা খেতে খেতে বেলি বলল, 
~ তোমার ছেলে নাকি একটা এসেছিল? 
~ হ্যাঁ! বলল ওঁর সাথে শহরে যেতে! 
~ তো? 
~ তো কি? আমি দেশ থেকে যাচ্ছি না! আল্লাহর রহমতে বেশ আছি! আলহামদুলিল্লাহ! 
~ কিছু আনে নি তোমার জন্য? 
~ হ্যাঁ এনেছে তো ! লুঙ্গি, শার্ট, চশমা, কুর্তি, ঘড়ি! বিস্কুটের প্যাকেট, রুটির আরো হাবি-ঝাবি! 
~ মাশাল্লাহ! হঠাৎ? 
~ জানি না! আল্লাহ মেহেরবানি করেছেন হয়ত! এসে মাফ চাইল! বলল প্রতি মাসে টাকা পাঠাবে! ৩-৪ মাস পরপর দেখে যাবে! 
~ বাহ! আমার হিরোর আর কি চাই? 
~ হয়েছে হয়েছে দ্রুত চা শেষ কর! ও-ই তোর বাবা আসছে! 

শীলার অত্যাচারে বেলি ফুস হয়ে রইল! পুরো ক্লাসে তাঁকে ত্যানাত্যানা করে ফেলেছে! এক মিনিটের জন্য শান্তি দেয় নি! টুকরো টুকরো করে বেলি যতটুকু পেরেছে বুঝিয়ে দিয়েছে! 
স্কুল শেষে বেলি দ্রুত বাহিরে এলো! গাড়ি দেখে খুশি হলেও, খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না! কারণ গাড়িতে তাঁরা ৩ ভাই! আবিদ, আয়ুশ, অভি! তৃষ্ণা নেই! বেলি মনেমনে ভাবলো, ওঁদের ছাড়া তো তৃষ্ণা শহরে যায় না! তাহলে? কি পাষাণ লোক! আবিদ বেলিকে দেখতেই হাত নাড়াল, 
~ ভাবি? 
বেলি মিষ্টি হাসলো! একটু একটু করে এগিয়ে গেল, 
~ হ্যাঁ! 
অভি, আয়ুশও হাত নাড়াল, 
~ হেই বেব! 
বেলি কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো! আবিদ চোখ উল্টিয়ে বলল, 
~ ভাইয়ের সামনে বলিস ' বেব '! 
অভি ফোন টিপতে টিপতে বলল, 
~ কেন? আমাদের পাগলা কুকুর কামড়িয়েছে নাকি? 
~ কুকুর কে কুকুর কামড়ায় নাকি? 
আয়ুশ হাতের বোতল আবিদকে ছুড়ে মারে! বেলি হাসতে থাকে! আবিদ বাঁকা হেসে উঠে, 
~ কাউকে খুঁজে চলেছ?
বেলি মাথা দুলালো! 
~ আফসোস, তোমার তিনি ঘুমাতে ব্যাস্ত! 
~ ঘুমাচ্ছে? 
~ হ্যাঁ! তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে বলল! 
বেলির চোখ বড়সড় করে ফেলে, 
~ সত্যি বলছি! 

তখনই আনন্দ হাতে ব্যাগ নিয়ে স্কুল থেকে বেরোয়! আনন্দকে দেখে আবিদ, আয়ুশ, অভি এগিয়ে যায়, 
~ চাচা কেমন আছেন? 
~ এইতো ভালো বাবা! তোমরা? 
~ বিন্দাস! 
~ তৃষ্ণা কোথায়? 
আবিদ হালকা হাসলো, 
~ ভাই ঘুমোচ্ছে! বাবা বলল আপনাকে সাথে করে নিয়ে যেতে! 
~ এখন? 
~ হ্যাঁ! 
~ আমার তো একটু কাজ ছিল বাবা! 
~ পরে করে নিবেন! বাবা -মামা দুজনই আছেন বাসায় ! 
~ চল তাহলে ! 

 বেলির দিক আনন্দ ঘুরে বলল, 
~ শীলার সাথে মিলেমিশে বাড়ি চলে যাও দুই ভাইবোন ! আমি দ্রুত চলে আসবো! 
অভি বাবলুকে গাড়িতে ঠেলতে ঠেলতে বলল, 
~ চাচা ওঁদের ও নিন না ! বেলিকে তৃষা প্রচন্ড পছন্দ করেছে! দেখা করতে চাচ্ছিল ! একসাথে যাই সবাই ! 
আনন্দ হালকা হাসলো, 
~ আচ্ছা! [ বেলির দিক ফিরে ] আয় মা! 

আবিদ ডান চোখ টিপ মারল! বেলি থতমত খেয়ে গেল! সে পিছনে বাবার সাথে বসল! বাবলু আবিদের সাথে! আয়ুশ অভি পিছনে আনন্দের সাথে কথা বলতে লাগল! বেলির বুক ধুকধুক করছে! 
.
.
.
চলবে...............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন