ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৫১ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"গভীর রাতের সাথে বিরাজ করছে চারদিকে একটা থমথমে পরিবেশ।মিটিমিটি জোনাকির সাথে দূর আকাশের তারাগুলোও আজ জলে উঠছে চুপি চুপি।
হালকা হালকা ঠান্ডা পড়ায় আকাশটা কেমন কুয়াশার চাদরে ঢেকে পড়ছে।
সুইমিংপুলের পানিটাও কেমন হীম শীতল হয়ে পড়ছে।আর এই হীম শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে আইস্ক্রিম খাচ্ছে নিশি ও তিশা। আর ওদের কম্পানি দিতে পাশে বসে আছে ঝর্ণা।"
---ঝর্ণাতো ভেবেই পাচ্ছে না ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে আইস্ক্রিম কিভাবে খায় মানুষ।

"'হঠাৎ নিশিই ঝর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললো,ঝর্ণাপু তোমার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছি।"
-ঝর্ণা মাথা নাড়িয়ে হা বলছে,কিন্তু মুখে না।

"ও রিলেক্স ঝর্ণাপু। এতো টেনশন নিও না।একবার তুমিও ট্রাই করে দেখো,দেখবে সারা জীবন মনে রাখবে।ঠান্ডার দিনে ঠান্ডা খাওয়ার মজাই আলাদা।"

---ও তাই নাকি, তাহলে আমারও একবার ট্রাই করতে হয়, কি বলিস।আমিও একবার দেখি কি মঝা এতে।

'হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে তিনজনেই চমকে পিছনে তাকায় দেখার জন্য কে?।আরে যা!ভাই এখানে কি করে।
এরা এখনো যায়নি।'

-তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে,সাহেবের ড্রেস চেন্জ তার মানে আজ এরা প্লান করেই এসেছে এখানে থাকার।

---জিসান ওদের সামনে এসে নিশিকে সাইড দিতে বললে নিশি একটু সরে বসে।আর জিসান গিয়ে নিশি ও তিশার মাঝখানে বসে পড়েই তিশার হাতের আইস্ক্রিমটা নিয়ে নেয়।
এই রাতে আইস্ক্রিম, তার উপর ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে বসা।ওয়াও ফিলিং খুব জোশ তাইনা।তিশার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে জিসান।
"যা দেখে তিশা সাথে সাথে সামনে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।"

'এমন সময় রায়হান আর নিলয় ও এসে হাজির হলো সুইমিংপুলের সামনে।ওই হারামি আমাদের রুমে একা রেখে এখানে তোর প্রেমলীলা হচ্ছে।'

---প্রেমলীলা না দোস্ত!দেখ,তোর গুণধর বউ আর বোন কি করছে।
"রায়হানও গিয়ে নিশির পাশে বসে পড়লো।হুম তাইতো দেখছি।সমস্যা নেই ইয়ার এবার এরা ঠান্ডা জ্বরে ভুগলে ওষুধের পরিবর্তে ডাক্তারকে মোটা মোটা দু'টো সুই দিয়ে দিতে বলবো।"
-সুইয়ের কথা শুনেই নিশি বিষম খেলো,সাথে কাশতেও লাগলো।
হঠাৎ কিছু একটা মনে করে পানি থেকে পা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।সুই জিনিটার কথা শুনলেই নিশির গলা শুকিয়ে যায়।ওষুধ খেয়ে মরতে রাজি তবুও সুই দিতে রাজি না নিশি।সুই জিনিসটাকে এতোটাই ভয় পায় ও।

'তিশা চোখের ইশারায় জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে।'

---আমার ঠান্ডা লাগছে আমি ঘুমাবো বলে বাড়ীর ভেতরে জেতে লাগলো।
রায়হানও নিশির পিছনে ছুটে গিয়ে নিশিকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ইশারা করলো,
সুইটহার্ট কি হলো ঠান্ডা লাগছে,ভেতরে চল,তোকে পুরো গরম করে দেবো আজ।নিশিকে এক প্রকার ঢেলে ভেতরে নিয়ে গেলো রায়হান।
"নিশিতো শোকড!এই লোকের মোতলব ভালোনা,দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আজ আমার সাথে কি করে আল্লাহই জানে।"

"এসবের মাঝে তিশা খেয়াল করলো নিলয় আর ঝর্ণা নিজেদের মতোই কথা বলছে।ব্যাপারটা দেখে তিশা মনে মনে খুশিই হলো।নিলয়ের চোখে তিশা নিজের জন্য কিছুটা ফিলিংস দেখেছে,তবে নিলয় একজন জেনটেলম্যান এর মতো কখনো নিজের লিমিট ক্রস করিনি।সব সময় তিশাকে প্রোটেক্ট করেছে,তবে কখনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেনি।
তাছাড়া ঝর্ণা যে নিলয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে ওটাও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তিশা।তাই ও চায় ওদের মধ্যে কিছু একটা হোক।"

---এদিক দিয়ে রায়হান আর নিশিকে চলে যেতে দেখে নিলয়ও ঝর্ণাকে ইশারা করে বললো,অনেকরাত হয়ে গিয়েছে এখন আমাদেরও যাওয়া দরকার।কি বলো ঝর্ণা, তোমার ঘুম পায়নি।
'ঝর্ণা নিলয়ের ইশারা বুঝে নিলয়ের সাথে বাড়ীর ভেতরে চলে গেলো,তিশা ও জিসানকে একা রেখে।ওরা যাতে একান্ত কিছু সময় কাটাতে পারে।'

"তিশা নিজের ভাবণায় এতোই ডুবে ছিলো যে জিসান কখন ওর একদম কাছে এসে বসেছে বুঝতেও পারেনি।"
-কিন্তু হঠাৎ কোমড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে তিশা চমকে তাকায় জিসানের দিকে।

---আর জিসানও একটা ডেবিলমার্কা স্মাইল দিয়ে বললো,আর ইউ রেডি জান?

"তিশা ভ্রুকুচকে জিসানের দিকে তাকিয়ে মানে বুঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান সুইমিংপুলের এই হিম শীতল পানিতে নেমে গেলো আচানক।
তিশা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিশাকেও একটান দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো।পানি কম থাকায় আজ তিশা ডুবলো না।কিন্তু এই শীতে পানিতে নামা মানে পাগলামি ছাড়া কিছুই না।"

"আ.. আর ইউ মেড!ককি ক করেছেন এটা।তিশা কাপতে শুরু করে দিয়েছে।ঠান্ডায় একপ্রকার জমে যাচ্ছে।মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।"

---জিসান নিজের চুলগুলো নিজের আঙ্গুলের সাহায্যে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে বললো,বলেছিলাম না শাস্তি কঠিন হবে।
'তাই বলে এভাবে কেউ করে।'(তিশা)

"আমি করি বলেই,জিসান নিজের পড়নের সার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে,তিশার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।"

"তিশা তা দেখে সুইমিংপুল থেকে উঠে চলে যেতে নিলে,জিসান হাতটা ধরে হেচকা টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।দু'হাত দিয়ে তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পানির মধ্যেই।"

---কি করছেন জিসান।কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে।প্লিজ ছাড়ুন।এখনো সবাই জানে না।

"শশশশ,চুপ! একদম চুপ।কেউ দেখলে দেখুক আই ডোন্ট কেয়ার, বলেই তিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো।
সাহস কি করে হয় তোর আমাকে এভোয়েড করার।"

-ম মা...! তিশাকে আর বলতে দেয়না জিসান।

---সে যেই হোক,আমি কখনো তোর এভোয়েডনেস মেনে নিতে পাড়বো না।আমাকে এভোয়েড করার শাস্তি কিন্ত তোর জন্য ভয়ানক থেকে ভয়ানক হবে বলে দিলাম।এরপর এমন করার চেষ্টাও করবি না।

"তিশা কাপাকাপা শরীরেরই জিসানের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।কি ডেন্জেরেস মানুষ উনি।আমাকে এতো ভালোবাসে তবুও আমার একটুআধটু ভুলে শাস্তি দিতে উনার একটুও কষ্ট হয়না।কি পাষাণ আপনি জিসান।অনেক পাষাণ!"

---তিশার কাপাকাপা ঠোঁট,সূর্যের ললাটের মতো লাল হয়ে যাওয়া মুখখানি দেখে জিসান কোনও ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।নিজেকে নিজেই বলে ফেললো,আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ। 
তিশাকে আর কিছুই বলতে দিলো না জিসান,তিশা কাঁপছে বলে ওকে কোলে করে ছাদের দিকে হাটা ধরলো।
সুইমিংপুলের পেছনের দিকে একটা সিঁড়ি দিয়ে সোজা ছাদে যাওয়া যায়।আর ওখান থেকে তিশা আর জিসানের রুমটাও কাছে তাই।
জিসান হাটতে হাটতে বলতে লাগলো,ঠান্ডা লাগছে জান।
"উঁহু, না! ভীষন গরম লাগছে,দেখেন না কিভাবে কাপছি গরমে।"
----তাই নাকি,এই কাপানিটা আরো একটু বাড়িয়ে দিই জান।

"মানে!"

---আজ চাদর হবো তোর,তোর গরমের কারণ হবো।
তোর শরীরে লেপ্টে গিয়ে তোকে ঢেকে ফেলবো।আজ তোর কোম্বল হয়ে তোকে জড়িয়ে রাখবো নিজের সাথে একদম।
__________

"লেপটপে বসে কালকের শিডিউল গুলো চেক করছিলো অর্ক।সাথে পোডাক্ট লঞের পার্টির আয়োজন কতোটুকু এগিয়েছে তার ডিটেলসও চেক করছে।আর তখনি একটা ইমেল আসলো মেল বক্সে।
হয়তো ইম্পোরটেন্ট হবে মনে করে অর্ক ইমেলটা ওপেন করলো।ইমেল ওপেন করার পর অর্ক যা দেখলো এতে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।রাগে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।ঠাস করে লেপটপটা বন্ধ করে দিলো।দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
তাহলে এ ছিলো মনে তোমার।আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে ভালো করনি।এর মুল্য তোমাকে কড়ায় গন্ডায় দিতে হবে মিস।"

---তখন ইমেল ওপেন করে অর্ক দেখতে পেয়েছিলো ওর বিশ্বস্ত কর্মচারী আর পি এ রাজ একজন মেয়ের সাথে কফি শফে বসে আছে।আর ওই মেয়েটিকে কিছু ফাইলদিয়ে তার থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে।এছাড়া রাজ ও ওই মেয়েটার একটা ভয়েজ রেকর্ডিংও শুনেছে অর্ক,যেখানে রাজ মেয়েটিকে অর্কের সব ডিটেলস বলছে।আর অর্ক মেয়েটার কন্ঠ শুনেই চিনে ফেলেছে কে এটা।

'ইমেলটা চেক করার পর অর্ক কাউকে ফোন করে বললো,রাজ যাতে কাল সকালের সূর্য দেখতে না পায়।অর্ক বিশ্বাস ঘাতকদের মাপ করে না।এছাড়া রাজ আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে।আমার এসব ব্যবসা ছাড়াও যে কয়েকটা অবৈধ ব্যবসা আছে,তা রাজ ছাড়া কেউ জানে না।তাই রাজকে বাঁচিয়ে রাখলে আমাকে ফাশতে হবে।আর ও এখন বেঈমান হয়ে গিয়েছে,তাই ওর পৃথীতে থাকা আমার জন্য সেফ না'।

---ফোনের ও পাশের লোকটি, ওকে বস বলে ফোনটা কেটে দিলো।

খেলা এখন জমবে কেউ মরবে,কেউ ফাঁসবে। অবশেষে দেখা যাবে খেলায় কে জিতবে।
__________

"দেখতে দেখতে আরো একসপ্তাহ কেটে গেলো।পোডাক্ট লঞ্চের পার্টি আজ।কম্পানির মালিক হবার ধরুন তিশাকেও আজ প্রডাক্ট লঞ্চের পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে।
পার্টির জন্য যে হলরুম বুক করা হয়েছে তা শহর থেকে কিছুটা দূরে।আর গেস্টদের সুবিধার জন্য হোটেল রুমগুলোও বুক করা হয়েছে।"

-লঞ্চ পার্টির জন্য জিসান,নিলয়,আর তিশা সকাল সকালই এসে পড়েছে হোটেলে।আর হোটেলে ঢুকার সাথে সাথে তিশার সামনে অর্ক এসে দাঁড়িয়েছে।তিশা খেয়াল করলো ওর আশেপাশের জিসান বা নিলয় কেউ নেই।
'জিসান কিছুটা দূরে কাউন্টারে রুমের ব্যাপারে কথা বলছে।আর নিলয়ের একটা ফোনকল আসায় কথা বলতে বলতে কোথাও চলে গিয়েছে।'

---তিশা নিজেকে সামলে নিলো একটু।তারমানে এই অর্কের সাথে এখন ওর নিজেকেই ডিল করতে হবে।এখন তো আমার জিসানও আছে,তাই একে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।

"সো মিস তিশা,কেমন আছো।তোমাকে তো আজ কাল দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না।নতুন কাউকে পেয়েছো মনে হয়।তাইতো আজকাল একটু বেশিই ব্যস্ত থাকো মনে হয়।"(অর্ক)

who are you tell me all this?Do your own thing.And stop thinking about me.It will be good for you...A.K..

----তিশার এতো কনফিডেন্স দেখে অর্ক একটা বাকা হাসি দিলো।কিন্তু তিশা সেই হাসি তোয়াক্কা না করেই অর্ককে পাশ কেটে চলে যেতে নিলো।
তখনি অর্ক পিছন থেকে বলে উঠলো -অলদা বেস্ট তিশা।

'তিশা ভ্রুকুচকে অর্কের দিকে তাকালো।'

-অর্ক এর কারণ বুঝতে পেরে,তিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আজ তোমার এটার খুব প্রয়োজন পড়বে।এরপর বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে অর্ক চলে গেলো।

---আর তিশা অর্কের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আজ এখানে এসে কোনো ভুল করিনিতো।
হঠাৎ জিসানের ডাকে তিশার ধ্যান ভাঙ্গে।

"কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।কোনও সমস্যা।"

---তিশা জিসানকে এসব বলে,টেনশনে ফেলতে চায় না তাই মাথা নাড়িয়ে না বলে।
জিসান তিশাকে নিজের রুম দেখিয়ে দিলো।

"অপরিচিত যেই আসুক,তিশাকে দরজা খুলতে মানা করে সব কিছু বুঝিয়ে বলে দিলো।তিশাকে বিশ্রাম নিতে বলে,জিসানও চলে গেলো।দুপুরে লাঞ্চ টাইমে দেখা হবে আবার।

-তিশাও লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।খুব ক্লান্ত লাগছে কেনো জানি।এমনতো নয় তিশা আগে জার্নি করেনি বা জার্নি করার অভ্যাস নেই।তাহলে কেনো এমন লাগছে।আজ যেনো রাজ্যের ঘুমও চোখে ঢেলে পড়েছে।এতো ঘুম কোথা থেকে আসছে।
তিশা এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের দেশে তলিয়ে পড়লো খবরই নেই।

---এদিক দিয়ে চলছে এক ভয়ানক প্লানিং সবার অগচরে।যার সমন্ধে হয়তো জিসানও জানে না।জানলে হয়তো এমন একটা সময় কখনো আসতেই দিতো না।

"লাবণি তুমি সিউর,আজই করবে।"

---ইয়ায়!আজকের মতো সুযোগ আর কখনো পাবো না।আর কেউ জানতেও পাড়বে না কে করেছে।

"কিন্তু লাবণি তুমি হয়তো একজনকে ভুলে গিয়েছো।ও জানে সব।তাই সবার আগে ও তোমাকেই সন্দেহ করবে।আর তখন কিন্তু জিসানের আগে ও তোমাকে শেষ করে দিবে।ইউ নো ভেরি ওয়েল,হি ইজ এ মেড লাভার।"

---উফ!অর্ক ভয় দেখিও না।ডোন্ট ওয়ারি আমি সবই সামলিয়ে নেবো।

ওকে,দেখি তুমি কি করো।(অর্ক)
_____________

"পুরো হলরুম আলোকসজ্জায় সজ্জিত।চারদিকে ছোটবড় লাইট আর তাজা ফুল দিয়ে হলরুমটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দেশের অনেক ছোটবড় বিজনেস ম্যানদের সাথে মিডিয়ারাও ভিড় জমিয়েছে পার্টিতে।"

---পার্টি শুরু হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো,তিশা নিলয়ের সাথে পার্টিতে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। কিন্তু জিসানের খবর নেই।নিলয়ও নাকি জানে না জিসান কোথায়।এই লোকটি পার্টি রেখে গায়ব হলো কোথায় আল্লাহই জানে।

"-পার্টিতে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত, কিন্তু আমার চোখ তো শুধু একজনকেই খুঁজছে।হঠাৎ চোখ গেলো হলরুমের দরজার দিকে-
 রায়হান ভাই ও নিশি দাঁড়িয়ে আছে।তাদের সাথে ঝর্ণাপু আছে।আমি আবাক হলাম ওদের দেখে,ওরা আসবে তাতো জানতামই না।তারমানে এসব আমার উনার কারসাজি। 
তাদের পিছনেই জিসান রায়হান কে সাথে করে হল রুমে প্রবেশ করলো।আমার চোখ দু'টো হঠাৎ যেনো আজ একটু বেশি বেহায়া হয়ে গেলো।জিসানের থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পরেছে।
কেমন ভয়ংকর হেন্ডস্যাম লাগছে ছেলেটাকে।আজ জানি কাকে খুন করার উদ্দেশ্যে এমন গেটআপ নিয়ে এসেছে।উফ!আজতো খেয়ে ফেলতে মন চাইছে।"

"ইচ্ছেতো করছে সারাক্ষণ পাশে থাকি আপনার,একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসি কারণে অকারণে। না হয় একটু পাশে বসে গল্প করে পার করেদি আজ।আপনার সমস্ত কথা গুলো আজ শুনি আনমনে।
আপনার চোখের পলকগুলো দেখেও যেনো আজ আমি হচ্ছি দিশেহারা।এ কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে মনে, উড়ে জেতে মন চাইছে ডানা মেলে।"

---হঠাৎ জিসান ক্লাইনদের সাথে কথা বলার ফাকে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুটা উঠিয়ে ইশারা করলো কোনও সমস্যা।
আমি কেনো জানি মুখে কিছুই বলতে পারলাম, শুধু মাথা নেড়ে ইশারা করলাম কিছুনা।
কি করে বলি জিসান, আপনাকে দেখে আজ আবার আমার প্রেম প্রেম ফিলিং আসছে।

                         'এই ধরনের বিজনেস পার্টিগুলোতে বিজনেস রিলেটেড কথাবর্তা গুলোই বেশি হয়।জিসান নিলয়ও সবার সাথে আলাপে আর মিডিয়ার লোকদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।এসবের মাঝে জিসান তিশার কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছে।'

---অনেকক্ষণ পর জিসানের খেয়াল হলো তিশাকে আশেপাশে দেখছে না কোথাও।জিসানের কেনো জানি অস্বস্তি হতে লাগলো।ও পার্টি ছেড়েই তিশাকে খুঁজতে লাগলো।
নিশি,ঝর্নার কাছে এসে জানতে পাড়লো তিশা ওয়াসরুমের দিকে গিয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে,কিন্তু এখনো আসেনি।

'জিসান কিছু না ভেবেই লেডিস ওয়াসরুমের দিকে অগ্রসর হলো।পুরো ওয়াসরুম চেক করেও তিশাকে পেলে না।এতোক্ষন সবার কানে কথাটা পৌঁছে গিয়েছে।রায়হান,নিশি,নিলয় ও ঝর্ণা মিলে পুরো হোটেলে খুঁজতে লাগলো।'
এই সময় হোটলের পিছনের গেটের দিকে তিশার একটা জুতো দেখে ঝর্ণা চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাক দিলো।
ঝর্নার গলার শব্দে সবাই হোটলের পিছনে ছুটতে লাগে।
ঝর্ণা জুতোটা সবাইকে দেখিয়ে বলে,এটা তিশার জুতো।কিন্তু এখানে কেনো।আর ও এভাবে জুতো ছাড়া কোথায় যাবে।'

---জিসান জুতোটা হাতে নিয়ে ঝর্ণাকে জিঙ্গেস করে,আর ইউ সিউর এটা তিশার।
'হুম,ভাই।আমি নিজে আজ সকালে ওর ব্যাগে এটা রেখেছি।'

"জিসান বুঝে গিয়েছে তিশার সাথে কিছু একটা হয়েছে।ও এভাবে না বলে কোথাও যাওয়ার মেয়ে না।অর্ক আবার ওর সাথে....জিসান ভেবেই আতকে উঠে।বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যাথাটা যেনো বেড়ে যাচ্ছে তিশার কোনও অঘটন ঘটার কথা চিন্তা করে।
নিজেকে এখন সব থেকে বেশি দোষী মনে হচ্ছে জিসানের।বিপদ যেনোও কেনো তিশাকে নিজের সাথে রাখলো না।নিজের এই ভুলের জন্য তিশাকে না আবার হারাতে হয়।"
______________

"অন্ধকার একটা রুমে তিশাকে ফেলে রেখেছে হাতপা বেধে।রুমটা হয়তো অনেকদিন বন্ধ ছিলো,তাই কেমন বিদঘুটে একটা গন্ধ আসছে তিশার নাকে।তিশার গা গুলিয়ে বমি আসছে।কিন্তু বমিটাও এখন করতে পারবে না কারণ ওর মুখটাও বাধা।"

---দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করা ব্যক্তিটিকে দেখে তিশা কিছুটা শোকড!এতোই শোকড!যে তিশা কিছু জিঙ্গেস করতেই পারেনি।
"লাবণি কেমন বিশ্রী ভাবে হাসছে।লাবণির চেহারাটা আজ ভয়ানক লাগছে।
লাবণি হাসতে হাসতে বললো,কি মিসেস আহমেদ ভয় পেয়ে গিয়েছেন এতো তারাতারি।এখনও তো কিছুই করলাম।আর করলে কেমন লাগবে।আমাকে রিজেক্টক করার ফল এবার জিসান কড়ায় গন্ডায় বুঝতে পারবে বলে,তিশার মাথায় স্বজোরে একটা বাড়ী মারে।"

"মুহুর্তেই তিশার কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।চোখের পলকে সবকিছু কেমন গোলাটে দেখা যাচ্ছে।তিশা বসার চেয়ারসহ মাটিতে পড়ে গেলো।ফ্লোরটা রক্তে কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে।

তিশা নিভুনিভু চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে।অবশেষে থেমে গেলো গেলো সব।
.
.
.
চলবে…...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp