"আজ সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিলো।তাইতো বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছিলো।সারারাত ধরে চলেছে আকাশের এই বৃষ্টি খেলা।আকাশটা একটু বেশিই গাম্ভীর্যতার রুপ ধারণ করে বসে আছে।"
----রাত বাজে এখন ৩.৩০।কিছুক্ষণ পর রাতের তীব্রতা কমে ভোড়ের আলোয় ছেঁয়ে যাবে আকাশ।আর এই আধো অন্ধকার আধো আলোয় পূর্ণ সকাল দেখতে বেশ লাগছে আজ।আজকের সকালটাকেও একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে জিসানের।
বালকানিতে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বিদায় দিচ্ছে তুষ্ট এই রাতকে।বৃষ্টি ঝড়া এই রাতে কিছু প্রাপ্তির সুখ জিসানের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।মন থেকে আজ অনেক খুশি।আজ কতোদিন পর তিশাকে এতোটা কাছে পেয়েছে জিসান।
হয়তো তিশার প্রতি একটু অন্যায় করে ফেলেছে।কিন্তু আজ নিজের প্রতি নিজেরি কেনো কন্ট্রোল ছিলোনা জিসানের।তিশাকে পাওয়ার লোভটা কিছুতেই সামলাতে পারেনি।এখন শুধু অপেক্ষা তিশার ঘুম ভাঙ্গার।
তিশাকে সামলানো এতো সহয হবে না জিসানের।
তবুও জিসানের কোনও চিন্তা নেই,শুধু মুখে একটা বিস্ময়কর হাসি।যার কারণ হয়তো তিশা জেগে থাকলে, তিশাও বুঝতে পারতো না।
_______
"দূরের আকাশে আযানের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে,তার সাথে পাল্লা দিয়ে এলার্মটাও বেজে উঠলো।এলার্মের শব্দে রায়হানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
একহাত দিয়ে কষ্ট করে এলার্মটি বন্ধ করলো।কারন আরেক হাত দিয়ে নিশিকে জড়িয়ে ধরে আছে।ঘুমন্ত নিশির কপালে একটা চুমো দিয়ে চাদরটা দিয়ে ভালো করে ডেকে দিয়ে রায়হান ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।"
---শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে রায়হান নিশিকেও ডাক দিলো,নামায পড়ার জন্য।নিশি আড়মোড়া দিয়ে একবার,আবার অপরপাশ শুয়ে পড়লো।
"রায়হান নিজের কাপড়চোপড় গুলো বের করতে করতে নিশিকে একটা ছোটখাটো ওয়ার্নিং দিয়ে দিলো।"
---যা শুনে নিশি লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
"দশ মিনিট টাইম আছে তোর কাছে তারাতারি শাওয়ার নিয়ে বের হবি।নামায কাযা হলে তোর কপালে কিন্তু খারাপি আছে।"(রায়হান)
---নিশি চাদরটা দিয়ে নিজেকে আরো ভালো করে ঢেকে নিয়ে মনে মনে বললো,
শয়তান ব্যাটা রাতে কাছে টানে,আর দিনে ওয়ার্নিং।একদম দ্বিমুখী সাপ।যখন তখন রুপ বদলায়।এখন এই ঠাণ্ডার মধ্যেও আমাকে গোসল করতে হবে।উফ!
"কি হলো এখনো বসে আছিস কেনো।ধমক দিয়ে রায়হান।"
---নিশিও মুখ ভেঙ্গচিয়ে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
ঠান্ডা যতোদিন থাকবে আপনি আর আমার কাছে ঘেষবেন না,মনে থাকে যেনো।
"নিশি চলে যেতে নিলেই রায়হান নিশির হাতটা ধরে ফেলে।
কি বললি আবার বলতো।"
---ক ককই, নাতো কিছুই বলি নেই,আমি কি কিছু বলতে পারি।দেখুন আমাকে দেখে কি আপনার এমন মনে হয়।
একদম ইনোসেন্ট একটা চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে নিশি।মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টিয়ে খেতে পারেনা এই মেয়ে।
"হয়েছে এতে নাটক করতে হবে না,তোর নাটকের সব সিনস্ আমার জানা।"(রায়হান)
---নিশি ছাড়া পেয়ে যেনো বেঁচে গেলো,ওয়াসরুমের দরজার সামনে যেতেই রায়হান বললো---
"আর হে আমার যখন ইচ্ছে হবে তোর কাছে আসবো,এতে যদি তোর গোশল করতে করতে নিউমোনিয়াও হয়ে যায়।তবুও ছাড় নেই।দরকার পড়লে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুলবো।তবুও আমার থেকে মুক্তি নেই।"
'নিশি রায়হানের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর একটা গালি দিলো।খুবই ভয়ংকর! '
---রায়হান যদি শুনতে পারতো নিশি কি বলেছে,তাহলে আজ রায়হানের মাইর থেকে নিশিকে কেউ বাঁচাতে পারতো না।
__________
"আকাশে এখন একদম মেঘ নেই,রোদের তীব্রতাও হালকা হালকা করে বাড়ছে।চারপাশের পরিবেশটা সূর্যের আলোতে অনেকটা জ্বলমল করছে।
ঋতুটাই এখন এমন,হালকা ঠান্ডা হালকা গরম।রাতে শীত অনুভোব হলেও দিনে সূর্যের তাপ যেনো সব শুষে নেয়।"
---চারপাশ খোলামেলা একটা বালকানিতে দাঁড়িয়ে জিসান কারো সাথে কথা বলছিলো।হঠাৎ ছাদের ফ্লোরে চোখ পড়লো।
কারো ছায়ার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।যা আস্তে আস্তে জিসানের দিকে আসছে।প্রতিবিম্বটির হাতে কিছু একটা আছে।
জিসান নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো,ছায়াটির সাথে লড়াইয়ের জন্য।
"হঠাৎ ছায়াটি আক্রমণ করলে জিসান আচানক সরে যায়।কিন্তু ছায়ার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রটি একটু লেগে জিসানের বাহুটি কেটে যায় অল্প।
জিসান আক্রান্ত করা ব্যক্তিটিকে দেখে শোকড!কারন এ আর অন্য কেউ না তিশা।"
---জিসান জানতো তিশা ঘুম থেকে উঠে পাগলামো করবে, হয়তো কান্নাকাটি। কিন্তু তিশা যে অগ্নেগিরি রুপ ধারণ করবে তা তো জিসান স্বপ্নেও ভাবিনি।
"তিশা আবার জিসানের উপর হামলা করতে নিলে,জিসান তিশার দু'হাত ধরে ফেলে।"
'কি করছিস তিশা,পাগল হয়ে গিয়েছিস।'(জিসান)
---শয়তান,অসভ্য লোক।আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুই একটা ক্যারেক্টারলেস বেহুদা মানুষ।আমার সর্বনাশ করার জন্যই হোটেল রেখে এই নির্জন কোটেজে নিয়ে এসেছিস।আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়েছিস।
তোর সাহস করি করে হলো আমাকে স্পর্শ করার।আজ আমি তোকে জানে মেরেই ফেলবো।তোদের মতো কুলাঙ্গারদের কারনেই তো নারীরা সেভ থাকে না।নারী দেখলেই শুধু তোদের ভোগ করতে মন চায়।আজ আমি তোকে মেরে ফেলবো শয়তান।
"তিশার এমন তুইতোকারি করে কথা বলা আর গালাগালি শুনে জিসানের মেঝাজ ৪২০ ভোল্টেজ উঠে গেলো।
তিশার হাতটা শক্ত করে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে তিশার হাত থেকে ধারালো ছুড়িটা পড়ে গেলো নিচে।জিসান টান দিয়ে তিশাকে একদম নিজের বুকের সাথে এমন ভাবে চেপে ধরলো যে তিশা ইচ্ছা করলেও কিছু করতে পারবে না আর।"
---তিশার মুখের সামনে নিজের মুখ এনে দাঁতেদাঁত চেপে বললো,কালকের ডুশটা মনে হয় কম ছিলো।সমস্যা নেই সব সুদে আসলে আজ আবার উসুল করে দেবো।জাস্ট রাতটার জন্য একটু অপেক্ষা করো।
"এ কথা বলেই জিসান তিশাকে একটু ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে একটু দূরে সরিয়ে দেয়।কারণ কাটা জায়গা থেকে ব্লাড বের হচ্ছে।
জিসান শরীরের তোয়ালটা দিয়ে জায়গাটা চেপে ধরে,রক্ত পড়াটা বন্ধ হলে ড্রেসিং করে নিবে।"
----তিশা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে।বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আবার যেনো শেষ হয়ে গেলো তিশার মধ্যে।তিশার মন দেহ শুধু নিজের স্বামী জিসানের জন্য।এখানে আর কারো জন্য সামান্যতম জায়গা তিশা রাখেনি।আর আজ আরিয়ান সব শেষ করে দিলো।
নিজেকে তিশার আজ খুব অপবিত্র মনে হচ্ছে।
'সাদা কাপড়ে দাগ লাগলে যেমন আগের মতো হয় না,ঠিক তেমনি নারী চরিত্রটাও।'
একবার কলঙ্কিত হলে,সেই কলঙ্কের দাগ আর মুছা যায় না।আমি একটা নষ্টা মেয়ে এটা শুনার আগেই আমার মরে যাওয়ার উচিৎ।তিশার ভাবতে দেরি কিন্তু স্টেপ নিতে দেরি হয়নি।
বালকানির রেলিং এ দাঁড়িয়ে লাফ দিতে নিলে,কেউ একজন ধরে হেচকা টান দিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারে।তিশা ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ে।"
---আরিয়ানের(জিসানের) এরুপ কান্ডে তিশা ক্রোধে আরো ফেটে উঠে।
আমার সব কিছু শেষ করে এখন আবার আমাকে মরতেও দিচ্ছেন না কেনো!আর কি চাই।একবার ভোগ করে কি শান্তি হয়নি।নাকি মনে আরো বাসনা জেগেছে আপনার।
"জিসানের মাথা এবার পুরো বিগড়ে গেলো,তিশাকে ধরে দাঁড় করিয়ে টানতে টানতে বাড়ীর পিছনের সুইমিংপুলে তিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেদিলো।"
---তিশা সাঁতার জানে না,তাই বার বার বাঁচার জন্য চেষ্টা করছে।কিন্তু তবুও আরিয়ানকে ডাকছে না।
আর জিসান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিশার কান্ডগুলো দেখছে।জিসান ভাবতে লাগলো,
এই মেয়ে এতোটা জিদ্দি কি করে হলো।ভাঙ্গবে তবুও মোচরাবে না।মারবে তবুও সাহায্যের জন্য ডাকবে না।
'কিছুক্ষণ পর জিসান সুইমিংপুলে নেমে আস্তে আস্তে করে তিশার সামনে এসে তিশাকে নিজের কাছে টেনে আনে।'
"জিসানকে আরিয়ান ভেবে তিশা আরিয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।"
---আমি ছেড়ে দিলে পানিতে ডুবে যাবে।
"ডুবলে ডুববো,তার পরও আপনার সাহায্য নিতে চাইনা না।খবরদার আপনি আমাকে একদম ছুঁবেন না।আপনার ছোঁয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।"
---জিসান আর কোনও আকাশপাতাল না ভেবে তিশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তিশার ওষ্ঠগুলো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।তিশাকে শান্ত করার জন্য।
তিশা যতো ছটফট করতে লাগলো,জিসান তিশাকে ওতো বেশি কাছে টেনে নিলো।
'কিছুক্ষণ পর জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালো।'
"তিশা শান্ততো হলো কিন্তু এই শান্তি আবার তুফান আসার বার্তা নয়তো।
রাগে পুরো শরীর কাঁপছে তিশার।ধবধবে সাদা মুখখানি লাল হয়ে গিয়েছে।জিসানের দিকে এমন ভাবে চেয়ে আছে যে,আজ ছাড়া পেলে হয়তো জিসানকে খুন না করেই ঘুমাবে না তিশা।"
---জিসান তিশার এমন রুপ দেখে হেসে দিলো।তিশার কপালে নিজের ভিজা ওষ্ঠগুলো ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
"জান,এভাবে তাকাস না,আমি যে ঘায়েল হয়ে যাবো।একবার মৃত্যুর সাথে লড়াই করে এসেছি তোর জন্য,এবার গেলে কিন্তু মৃত্যুও আমাকে ছাড়বে না।"
"মুহুর্তে তিশার চেহারার রং বদলে গেলো,চোখ দু'টো ছলছল করতে লাগলো।
তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান তিশাকে কোলে করে সুইমিংপুল থেকে বাহির করে আনলো।
তিশা ছলছল চোখে জিসানের সামনে এসে একবার জিসানকে স্পর্শ করতে নিলে জিসান সরে যায়।"
---তুই আমাকে হার্ড করেছিস।তাই আমাকে ছোঁয়ার কোনও অধিকার নেই তোর।
"তিশা এবার ডুকরে কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে জিসানের পায়ের সামনে বসে পড়ে।
আমার সাথে কেনো এমন করছেন,একটি বার আমাকে ছুঁয়ে দেখতে দিন,প্লিজ জিসান।
এরপর যা শাস্তি দিতে মন চায় দিয়েন।আমি কিছুই বলবো না।প্লিজ।"
---জিসান তিশার প্রতি যতোটা দূর্বল,তার থেকেও বেশি কঠোর তিশার সব কিছুর ব্যাপারে।তবে তিশাকে নিজের এই কঠোরতার রুপ কখনো দেখাতো না।কিন্তু তিশার বার বার আত্মহত্যা জিসানকে খুব বেশি কষ্ট দিয়েছে এবার।জিসান এটা ভাবলেও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়,যদি তিশার কিছু হয়ে যেতো তখন।
'তাই এবার তিশাকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।জীবনটা এতো সহয না,যে বললেই শেষ হয়ে যাবে।জীবন একটাই, আর এই একজীবনে আমাদের কাছের মানুষগুলোর প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে।তাই আমাদের সকলকে না চাওয়া সত্যেও জীবনের সাথে লড়াই করে নিজের দায়িত্ব গুলো সুন্দর ভাবে পূরণ করতে হবে।
আর আত্মহত্যা সে তো মানব জীবনে সবথেকে জগন্যতম একটা কাজ।না আছে ইহকাল না আছে পরকাল তার ভাগে।
তাহলে কেনো!কেনো তিশা এই জগন্য কাজ করতে গেলো।তাই জিসান একটু নারায।খুব নারায তিশার উপর।'
---তোয়াল দিয়ে তিশার ভেজাচুলগুলো মুছে দিলো জিসান,কিন্তু তিশাকে স্পর্শ করতে দেয়নি নিজেকে।
ভেতরে গিয়ে তারাতারি ভেজাকাপড় চেন্জ করে ফেল।তা না হলে কালকের মতো আজও জ্বর চলে আসবে।
'তিশাকে ওভাবেই বসে থেকে কাঁদতে দেখে জিসান এবার জোরে একটা ধমক দিলো।
জিসানের ধমকে তিশা একটু কেঁপে উঠলো।সাথে সাথে রুমের দিকে দৌঁড় দিলো।'
---ওয়াসরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে বসে তিশা কাঁদছে।কেনো এতো কান্না আসছে তিশা আজ নিজেও জানে না।কিন্তু কান্নার কারণে আজ মনটা হালকা হয়ে যাচ্ছে।ভাড়ী একটা পাথর মনে হয় এতোদিন জমে ছিলো মনে,যা আজ চোখের পলকে গায়ব হয়ে গেলো।
"-জিসান এসে দেখে তিশা এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হয়নি,তাই ওয়াসরুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
জিসানের বার বার দরজায় ধাক্কানোর কারণে তিশা ওয়াসরুমের দরজাটা খুলে দেয়।"
'জিসান তাকিয়ে দেখে তিশা একটা তোয়াল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর চুল দিয়ে এখন আবার পানি পড়ছে।তার মানে তিশা আবার শাওয়ার নিয়েছে। জিসানের রাগ উঠলেও নিজেকে শান্ত করে তিশাকে ওয়াসরুম থেকে বের করে ডেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে চুলের পানিগুলো ভালো করে আবার মুছে দেয়।তারপর হেয়ারড্রাই মেশিন দিয়ে চুলগুলো ভালো করে শুকিয়ে দেয়।
---এরপর ব্যাগ থেকে একটা শাড়ী বের করে তিশার হাতে দিয়ে, তুই পড়বি নাকি আমি পড়িয়ে দেবো।(জিসান)
'তিশা শাড়ীটা হাতে নিয়ে,আমিই পড়তে পারবো।'
"গুড....বলে জিসান রুম থেকে বাহিরে চলে যায় তিশার জন্য কিছু খাবার আনতে।
জিসান খাবার এনে তিশাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।চোখদু'টো দিয়ে এখনো পানি পড়ছে তিশার তবুও কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয় জিসানের হাতে।
সবসময় কষ্ট পেলেই যে কান্না পায় এমন না মাঝেমাঝে সুখ দেখেও কাঁদতে মন চায়।
---জিসানও জানে এই চোখের পানি আজ কষ্টের না অনাঙ্কাকিত কিছু পাওয়ার তাইতো নিজের হাতদিয়েই বারবার চোখের পানি গুলো মুছে দিচ্ছে।
খাবার খাওয়ার পর তিশাকে ওষুধ খাইয়ে দেয় কারণ এখন আবার জ্বর আসছে তিশার শরীরে।
তিশাকে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে বলে জিসান চলে যেতে নিলে তিশা জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।"
তিশা হাত ধরায় জিসান তিশার দিকে এমন ভাবে তাকায়,মনে হয় এখনি তিশাকে জ্বালিয়ে দিবে।জিসানের এমন তাকানো দেখে ভয়ে তিশা হাতটি ছেড়ে দেয় সাথে সাথে।
__________
"নামায শেষ করে রায়হান ছাদে চলে এসেছে আজকের সিগ্ধ সকালটাকে দেখতে।সূর্যের আলো মাত্র ভূমিষ্ঠে পড়তে শুরু করছে।
নিশিকেও দু'কাপ কপি নিয়ে ছাদে চলে আসতে বললো,কিছু কথা আছে বলে।"
---নিশি একটু ভয় পেলো,কারণ কালকের কলেজের ঘটনার পর রায়হান এই বিষয় এখনো কিছু নিশিকে জিঙ্গেস করেনি।তাহলে কি এখন জিঙ্গেস করবে।
এমন হাজার আকাশ কুসুম চিন্তা করতে করতে নিশি দু'মগ কফি নিয়ে হাজির হলো ছাদে।
"রায়হান একটা নিয়ে নিশিকেও খেতে বললো।"
---কিন্তু রায়হান কি বলবে এটা ভেবে নিশির গলা দিয়ে আজ আর কফি ডুকছে না।
"রায়হান কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,তোর হাতের কফিটা চমৎকার।"
---নিশি কিঞ্চিত একটা হাসি দিলো।
'কিছুক্ষণ পর রায়হান বলা শুরু করলো,
আশিষ একজন মানসিক রোগী।ওর থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখিস নিশি।'
---মানে পাগল!তাইতো বলি এমন উদ্ভট কথাবার্তা বলে কেনো ছেলেটি।(নিশি)
"পাগল না ও তো,তবে মানসিক সমস্যা আছে কিছুটা।"
---কিন্তু পাগল হলো কি করে।(নিশি)
"নিশি কারো অসুস্থতার মজা নিতে নেই।ছেলেটা কিন্তু খারাপ না,পড়ালেখায় কিন্তু বেশ ব্রিলিয়েন্ট।"
---এতো ব্রিলিয়েন্ট ছেলের এমন অবস্থা কি করে হলো পড়ালিখা করে।(নিশি)
'রায়হান একটা দীর্গ শ্বাস ফেলে,না!ভালোবেসে!'
---ভালোবেসে!মানে।
"রায়হান নিশিকে নিজের কাছে টেনে এনে নিশির পিঠ নিজের বুকে ঠেকিয়ে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
ভালোবাসা এমন একটি রোগ যার থেকে মুক্তি পেতে হয়তো বড় বড় ডাক্তারও কিছু করতে পারেনা।কোনও ডাক্তারের কাছে এই রোগের ওষুধ নেই।
ভালোবাসার রোগকে কেবল ভালোবাসা দিয়েই পরাজয় করা।
আশিষ একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো,মেয়েটির নাম কুহু ছিলো।কিন্তু ছয়মাস আগে মেয়েটি একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়।মেয়েটির মৃত্যু আশিষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না।
সারা দিনরাত মেয়েটির কবরে গিয়ে পড়ে থাকতো।আর কুহু কুহু বলে কাঁদতে থাকতো।মাঝেমাঝে বাড়ী থেকে কোথাও চলে যেতো,কোথায় যেতো বলে যেতো না।মাঝেমাঝে রাস্তাঘাটে নাকি পড়ে থাকতে দেখা যেতো।
আশিষের বাবা মা ছেলের এই অবস্থা দেখে অনেকটা ভেঙ্গে পরেছিলো।অবশেষে ডাক্তার সাজেশন করে।আশিষকে মেন্টেলহাসপাতালে পাঠানোর।তানা হলে আশিষ যেকোনও সময় একটা অঘটন গঠিয়ে দিতে পারে নিজের সাথে।
ডাক্তারের সাজেশনে আশিষের বাবা মা আশিষকে ওখানে রেখে আসে।একমাস আগে আশিষ সুস্থ হয়ে বাসায় আসে।তোদের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল আশিষের বাবার বন্ধু বলে,বছরের এইসময় আশিষকে কলেজে ভর্তি করে নেয়।'
---ও,সো স্যাড!কিন্তু আশিষ আমাকে কুহু বলে কেনো।
"কারণ তোর চেহারা কিছুটা কুহুর সাথে মিলে।প্রথম দেখায় সবাই এটা বলবে,তুই কুহু।কিন্তু একটু খেয়াল করলে তফাত বুঝা যাবে।"
---আপনি এতোকিছু জানলেন কি করে।(নিশি)
"রায়হান কথা কাটানোর জন্য,তোর ভেজাচুল থেকে মাতাল করা ঘ্রান আসছে।আমি কিন্তু এবার পাগল হয়ে যাবো।"
---কথা কাটাতে চাইছেন।(নিশি)
"উঁহু, যতেটুকু তোর জানার বলেছি।এরপর বাড়তি কোনও কথার জবাব আমি দিতে পারবো না।শুধু বলবো আমি তোর ভাগ কাউকে দিতে রাজি না,তাই দূরে থাকবি ওই ছেলে থেকে।"
---কিন্তু আপনিইতো বললেন ও অসুস্থ।
"হুম,ও অসুস্থ! কিন্তু ওর সুস্থ হওয়ার ওষুধ তোর হওয়ার লাগবে না।
তুই শুধু আমার ওষুধ। যার ভাগ আমি কাউকে দিতে রাজি না।"
_____________
"আহমেদ ভিলায় আজ আবার জিসানের দু'মামী রুমি এবং রোকসানা বেগমের আগমণ ঘটেছে।আজকাল জিসানদের বাসায় তাদের আনাগোনা একটু বেশিই বেড়ে গিয়েছে।
এতোদিন জিসানের জন্য আসতে পারেনি,কিন্তু এখনতো কোনও বাধা নেই।"
---আর এসেই মিসেস রাবেয়া বেগমকে কানপোড়া দেওয়া শুরু করেছে তিশার বিরুদ্ধে।যে মেয়ের জন্য একদিন জিসান তাদের অপমান করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলো,সেই মেয়েকেও তারা অপমান করে বাড়ী থেকে বের না করা পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে না।
তাইতো সেই দিন তিশাকে অনেক অপমান জনক কথাবার্তা বলে,যাতে তিশা বাড়ী ছেড়ে নিজেই চলে যায়।কিন্তু তিশা তাদের কথার কোনও রিয়েক্ট না করায়।মামী দু'জন যেনো আরো তেলে বেগুনে রেগে যায়।
'তাই আজ আবার এসেছে আহমেদ ভিলায়।
এবার নিজেদের প্রতিশোধ রাবেয়া বেগমের মাধ্যমেই নিবে বলে স্থির করলো।'
---জিসানের মৃত্যুর পর রাবেয়া বেগমের এমনেই কোনও কিছুর খবর থাকে না।চিন্তাচেতনাও দিনদিন লোপ পাচ্ছে মনে হয়।সংসারের সব কিছু থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে।
'এই সুযোগে তিশার প্রতি রাবেয়া বেগমের মনে একধরণের বিষ ঢেলে দিলো রুমি এবং রোকসানা।'
---জিসানের মৃত্যুর জন্য একমাত্র তিশাদায়ী।তিশা না থাকলে তাদের ছেলে আজ তাদের সাথেই থাকতো।জিসান তিশার কারণেই সব এধরণের ঝামেলায় জড়ায়।তাই ছেলের এমন অকাল মৃত্যু তিশার জন্যই হয়েছে।অপয়া মেয়ে বলে কথা।এসব নানা ধরনের কথাবর্তা বলে রাবেয়া বেগমের ব্রেন ওয়াশ করে ফেলে।
ছেলের মৃত্যুর শোক এখনো কাটতে না পারা রাবেয়ার মনে তিশার জন্য সামান্য হলেও তিক্ততা এসেছে।
এখন দেখার পালা এর পরিনিতি কি ঘটে।
.
.
.
চলবে.................................................................