ভাইয়ের বন্ধু যখন বর - পর্ব ৫৫ - ইয়াসমিন তানিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিশা।কারো দিকে তাকাবারও সাহস পাচ্ছে না।হাত দু'টো একত্রিত করে কোচলাচ্ছে কখন ধরে।চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অস্থিরতা।"

---জিসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিশার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে।জিসানের এখন একটাই ভাবনা,ওকে তো আমি ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছিলাম।তাহলে ও বাহিরে বের হলো কিভাবে।আর গার্ডরাই বা বাঁধা দেয়নি কেনো।চলছে কি ওর মনে আল্লাহই জানে জিসান এসব মনে মনেই বলছে।
তিশা এই কোন বিপদে পা দিলি জান,জানি না কি হবে।আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাইনা।ভয়টা তো তোকে নিয়ে।

'-তখনি শামসুর রহমান তিশার কাছে এসে তিশার গালে একটা থাপ্পাড় মারে,কিন্তু ভাগ্যক্রমে থাপ্পরটা জিসানের গালে পড়ে।সাথে সাথে সবাই চমকিত! কি হলো এট।
আসলে তিশার বাবা যখন তিশাকে থাপ্পড় মারতে নেয় আচানক জিসান তিশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় তিশাকে প্রোটেক্ট করতে।তাই থাপ্পড়টা জিসানের গালে এসে পড়ে।'
"শামসুর রহমান নিজেও চমকে গিয়েছে কি হলো ব্যাপারটা।"

---জিসান তিশাকে নিজের পিছনে রেখে প্রোটেক্ট করছে এখনো, তা দেখে সবাই কিছুটা নারায জিসানের উপর।পাগলামির একটা সীমা থাকে কিন্তু এই মেয়ে যে সব সীমা পার করে দিচ্ছে এটা কি জিসান বুঝতে পারছে না।এভাবে চলতে থাকলে পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে একদিন।সবার মনে এখন এসবই চলছে।

"জিসান তুমি এখনো ওকে প্রোটেক্ট করছো।এই মেয়ে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছে।তা না হলে রায়হানের এমন অবস্থায় ও এমন কিছু কিভাবে করতে পারে।"

'-জিসান মুচকি হেসে,বাবা আপনি জানেন কি,আপনি শুধু আপনার মেয়েকে না আমার সন্তানকেও আঘাত করতে চেয়েছিলেন।
শামসুর রহমান স্থদ্ধ জিসানের কথা শুনে।সত্যিতো কিছুকক্ষের জন্য উনি ভুলেই গিয়েছিলো মেয়ে যে তার প্রেগন্যান্ট। 
কিন্তু তবুও নিজের দোষ স্বীকার করলো না শামসুর রহমান।তুমি যাই বলো জিসান,আমার মনে হয় ওর মাথাটা পুরো গেছে।'

---বাবা আপনি শান্ত হোন।এই সময় আপনার এতো হাইপার হওয়া আপনার শরীরের জন্য একদম ঠিক না।এখনতো আপনাকে আরো স্ট্রোং হতে হবে।রায়হানকে, নিশিকে, মাকে আপনাকেই সামলাতে হবে।তাই আপনি রিলেক্স হয়ে বসুন।জিসান শামসুর রহমানকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
আর বাবা চড়টা কিন্তু একটু ভারী ছিলো।যদি তিশার গালে লাগতো,হয়তো ও পড়ে যেতে নিজেকে সামলাতে পাড়তো না।তখন আমার সন্তানের কি হতো বলুন তো।
তাই রাগের মাথায় এমন কিছু করতে নেই জাতে করে পরবর্তীতে এর ক্ষতির পরিমান আমরা সামালাতে না পারি।

"শামসুর রহমান লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো।এই ছেলেটাকে কতো ভুল বুঝেছিলো একসময়,কিন্তু এই ছেলেটি আমার মেয়ের ভালো মন্দতে সব সময় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে।আর মেয়েটি কি প্রতিদান দিলো আজ।ভাবতেও অবাক লাগে।"

---জিসান অনেক হয়েছে, প্রত্যেকটা কিছুর একটা সহ্যের সীমা থাকে।কিন্তু তিশা আজ সেই সীমাও পার করে দিয়েছে।কি চাও তিশা তুমি।তিশার সামনে এসে তিশার দু'বাহু ধরে রাবেয়া বেগম।
সমস্যা কি তোমার।যখন থেকে আমার ছেলের জীবনে এসেছো একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থাকে।একটা রাতও শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছি না।আসলে সবাই সত্যিই বলছে তুমি একটা অলক্ষনি।
আমার ছেলেমেয়েদের জীবন তোমার কারণে এমন বেহাল দশা হয়ে পড়ছে।এখনতো মনে হচ্ছে সেদিন তুমি মরে গেলেই ভালো হতো।

"মা....চিৎকার করে। এসব কি বলছো।"(জিসান)

---ব্যাশ জিসান! আর না।এই মেয়ের ছায়াও আমি আমার পরিবারের উপর আর পড়তে দিবো না।আজ তোকে আমার কসম।দূরে থাক এই মেয়ে থেকে।একবার ভাগ্যের জোরে বেঁচে এসেছিস।কিন্তু এই মেয়ের সাথে থাকলে দ্বিতীয় বার আর বাঁচবি না তুই জিসান।বাঁচবি না।কেঁদে কথাটা বলে রাবেয়া বেগম।

'নিশি, শামসুর রহমান,তৌফিক সাহেব কারো মুখে কোনও কথা নেই।তারা কেবল রায়হানের কথাই চিন্তা করতে ব্যস্ত।এসব এদের কাছে এখন বিষাদ মনে হচ্ছে।'

"-আর তিশা সে তো যেনো রোবট হয়ে গিয়েছে।মুখে বলার মতো কিছু না থাকলেও চোখগুলো ঠিকই কষ্টটা জানিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু তিশার কষ্টটা দেখার সময় কি কারো আছে।
শ্বাশুরীর কথাগুলো তিক্ত হলেও সত্যতা আছে।তিশা নিজেও মানে, তিশা জিসানের জীবনে অভিশাপ। আর এই অভিশাপ থেকে যতো দূর থাকবে জিসান ততোই ভালো থাকবে।
আর আল্লাহ হয়তো স্বয়ং নিজেই চায়না আমি আর জিসান একসাথে থাকি।
তাইতো আমাদের মাঝের দূরত্ব দিনদিন যেনো বেড়েই চলছে।আর এবার হয়তো আমাকে আর জিসানকে আলাদা হতে কেউ আটকাতেও পাড়বে না।
মাথানিচু করে শ্বাশুরীর দেওয়া সব অপবাদ গুলো মেনে নিলো তিশা। কষ্টে চোখ দিয়ে অবিরান পানি পড়ছে।চোখের জলগুলোও আজকাল বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।প্রয়োজন অপ্রয়োজন সব জায়গায় দেখা যায়।"

---জিসান মায়ের কাছ থেকে তিশাকে সরিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়ালো।
কি সব বলছো মা তুমি।কি করে বলতে পাড়লে সব দোষ ওর।ও কি করেছে?
দোষ যদি কারো থাকে তাহলে আমার।আমার জিদের কারনে তিশা আজ আমার সাথে।আমি ওর জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়েছি।ও সেধে এসে জড়ায়নি।তাহলে কি করে বললে ও অলক্ষনি।
এই মেয়েটিকে ছাড়া যে তোমার ছেলে বাঁচবেনা তা কি জানো না।তাহলে ওর মরনের কথা কিভাবে চিন্তা করলে।আর আমার সন্তান মা।
তিশাকে রাবেয়ার সামনে এনে,দেখো মা।ওর পেটে আমার সন্তান।ওর কিছু হলে আমার সন্তানও যে চলে যাবে মা।
মা হয়ে তুমি তোমার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারো না তাহলে আমিও তো এই সন্তানের বাবা কি করে পারি সহ্য করতে।

"আমি এভাবে বলতে চাইনি জিসান,কিন্তু বাধ্য হয়েছি আজ বলতে।জিঙ্গেস কর ওকে,কেনো ও তোর নামে মিথ্যা মামলা করলো।কেনো ও মিথ্যা বলেছে পুলিশের কাছে,তুই নাকি ওকে টর্চার করতি।
এতো ভালোবাসার মূল্য এই মেয়ে এইভাবে দিলো।তুই মানলেও আমি মানতে পারবো না।আর ওর ছায়াও আর আমার সন্তানদের উপর পড়তে দেবো না।"

---আচ্ছা ঠিক আছে,ওর ছায়াও তোমাদের উপর পড়বে না আজকের পর থেকে।খুশি!
কিন্তু মা তুমি এতোটুকু মনে রেখো,ওকে কিছু বলার অধিকার আমি কাউকে দিই নাই।বউটা আমার,যদি ও অন্যায় করে তাহলে তাকে কিছু বলা এবং শাস্তি দেওয়া সব আমার অধিকার আর কারো না।
তাই এখন থেকে ওকে আর একটা কথাও কেউ বলবে না।এমনকি মা তুমিও না।যদি ছেলেকে হারাতে না চাও।

'-তিশা এতো কিছু আর নিতে পারলো না।ব্রেনে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছিলো অনেকক্ষণ ধরে।মাথার যন্ত্রনাটাও অনেক বেড়ে গিয়েছে।তবুও তিশা এতোক্ষন ধরে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু আর পারলো না।মাথা ঘুড়ে নিচে পড়ে যেতে নিলেই জিসান ধরে ফেলে।
পুলিশের দিকে তাকিয়ে,তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,আমি আমার ওয়াইফকে সেভ মতো বাড়ীতে পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত সেলেন্ডার করছি না।
আপনারা চাইলে আমাকে ফোলও করতে পারেন বলেই জিসান তিশাকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলো।
_________________

"নিলয়কে রায়হানের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জিসান তিশাকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে। 
রায়হানের জন্য পুরো হাসপাতালে গার্ডের ব্যবস্থা করতে বললো।রায়হানের বিপদ এখনো কমেনি জিসান মনে করে।"

---জিসান জানে রায়হানের অবস্থা ভালো না।বন্ধুকে শেষবার দেখতে পাবে কিনা তাও জানে না।কিন্তু রায়হানের পাশে সবাই আছে আপাততো। 
কিন্তু তিশা!
ও একলা এখন।কারো সাপোর্ট নেই।এই অবস্থায় আমি ওকে একা কিছুতেই ছাড়তে পারবো না।আর ওর কিছু হলে এই মুহুর্তে, পরে রায়হান জানতে পারলে কাউকে মাপ করবে না।যতো যাই কিছু করুক,তিশা রায়হানের কলিজা।বোনকে ও কতোটা ভালোবাসে আমার থেকে বেশি কেউ জানে না।
তার উপর ও একা না,আমাদের সন্তানও ওর সাথে সাফার করবে।বাবা হয়ে আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা।

"-তিশাকে বুকের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে বসে আছে জিসান।সোম গাড়ি চাল্লাচ্ছে।
লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে জিসানকে জিঙ্গেস করলো,কোথায় যাবো স্যার।আহমেদ ভিলা।
জিসান তিশার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে,না বললো।
সোম তার কৌতুহল ধরে রাখতে পারলো না,তাই জিঙ্গেস করেই ফেললো স্যার!

----জিসান চোখদুটো বন্ধ করে তিশাকে জড়িয়ে ধরেই গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে বসে ছিলো।
কিছু বলবে সোম।

"আপনার রাগ হয়না তিশা ম্যাডামের উপর।এমন একটা কাজ করলো।"

-জিসান হেসে দিলো,সোমের কথায়।তা দেখে সোম কিছুটা অবাক হলো।
সোম কাউকে ভালোবেসেছো কখনো নিঃস্বার্থ ভাবে।কিছু পাওয়ার আসা না করে দিনের পর দিন কারো জন্য অপেক্ষা করেছো।ভালোবাসার হারানোর ভয়ে বুকের ভেতরের চিনচিন ব্যাথাটা কখনো অনুভোব করেছো।চোখের জল লুকিয়ে মুখে কখনো নকল হাসি হেসেছো।
এসব না করলে তুমি কখনো বুঝবে না আমার কথা।যেদিন কারো প্রেমে পড়বে গভীর ভাবে তখন বুঝবে প্রিয়জনের একটি হাসির জন্য যদি ফাঁসিতে ঝুলতে হয় তাও হেসে হেসে কবুল করে নিতে মন চাইবে।

"কি বলছেন স্যার।এসবও কি সম্ভব।"

---কেনো সম্ভব না সোম।আজকাল দেখো না।কতো আত্মহত্যা বেড়ে গিয়েছে।বেশির ভাগইতো প্রেমে প্রতারণা খাওয়া আশিক।এরা কেনো আত্মহত্যা করে জানো ভালোবাসা নামক অসুখটার কারণে।
এই অসুখ ছাড়াবার ওষুধটাই যখন চলে যায় বা ধোকা দেয় তখন সেটার যন্ত্রনা সহ্য করার মতো সাহস বা ধৈর্য অনেকের থাকে না। তাইতো তখন মৃত্যুকে বেঁচে নেয় তারা।এটা জানা সত্ত্বেও আত্মহত্যা কতো গুনাহ আমাদের ধর্মে।আল্লাহ তাআলা আত্মহত্যাকারীকে কখনো ক্ষমা করেনা।

কিন্তু মজার বিষয় কি জানো,এই আত্মহত্যার পথ মেয়েরা তেমন বেছে নেয়না।কারণ তারা পরিবারের দিকে তাকিয়ে মেনে নেয় সব কিছু।
কিন্তু আমরা ছেলেরা পারিনা।না পারি মানতে,না পারি কাঁদতে।অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তির কেবল একটা পথই দেখা যায় তখন,তা হলো মৃত্যু।
আর এই মেয়েটি তো আমার পৃথিবী জুড়ে আছে।জানি না ও এমন কেনো করেছে।কিন্তু ওর জন্য ফাঁসিতে ঝুলতেও হয়তো ভাববো না একবারও।

"হুম,বুঝতে পারছি স্যার। কিন্তু এখন কি করবো।"

'-তিশার দিকে নযর রাখো।কেউতো আছে যে আমার তিশাকে দাবার গুটির মতো ব্যবহার করছে।ও মুখে যাই বলুক।ওর চোখ বলে দিচ্ছে ওর মনের পীড়া।
 আমি স্পষ্ট তা দেখেছি হাসপাতালে থাকতে।আর কে সে তাকে খুঁজে বের করো।
তিশা এতোকিছু একা কখনো করতে পারবে না।ওকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি কে বের করো।ওকে একা ছাড়বে না কখনো।ওর সকল আপডেট আমাকে জানাবে প্রতিদিন।'

---আর স্যার আপনি?আপনি চাইলে আমি কালই জামিনের ব্যবস্থা করতে পারি।

"হুম,জানি।কিন্তু একটু ওয়েট করো।আমি বলা না পর্যন্ত কিছুই করবে না।"

--- ওকে স্যার।

'তিশাকে জিসান নিলয়ের বাসায় নিয়ে এলো।ঝর্ণাকে ফোন করে এড্রেস সেন্ট করে দিয়েছিলো আগেই।তাই ঝর্ণাকে ড্রয়িংরুমেই বসে থাকতে দেখলো।
তিশাকে একটা রুমে শুয়ে দিয়ে জিসান ঝর্নার কাছে এলো জিঙ্গেস করতে কি হয়েছিলো।'

--ভাই আমি ভাবীর সাথেই ছিলাম।কিছুক্ষণের জন্য আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।বের হবার সময় দেখি ওয়াসরুমের দরজা বাহির দিয়ে লাগানো।আমার চিল্লাচিল্লিতে অনেকক্ষণ পর তানজিলা ভাবী এসে দরজা খুলে দিলো।বাহির হয়ে দেখি তিশা ভাবী নেই।তোমার ফোন ট্রাই করলাম ব্যস্ত দেখাচ্ছে।উপায় না পেয়ে নিলয়কে ফোন করে হাসপাতালে কি কি হয়েছে জানতে পারলাম।আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাই।তুমি আমাকে বারবার বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়ে যাও আর আমি প্রতিবার কোনও না কোনো ভুল করে বসি।

'জিসান বোনের মাথায় হাত রেখে,আরে কাঁদিস কেনো।আমি কি তোমাকে কিছু বলছি।আর যা হয়েছে তাতে তোমার কোনও দোষ নেই।তাই এসব ভুলে যাও।তুমি কিছুুদিন এখানেই থাকো তিশার সাথে।আপাততো তিশার জন্য আহমেদ ভিলাও সেভ না।
তাই ওকে এখানে এনেছি।তুমি কিছুদিন ওর সাথেই থাকো।
ঝর্ণাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে জিসান চলে গেলো পুলিশের সাথে।
_____________

"অপরেশন রুম থেকে ডাক্তার বের হলো।ডাক্তারকে বের হতে দেখে সবাই একসাথে ডাক্তারকে ঘিরে ধরলো।
ডাক্তার তৌফিক সাহেবকে খুব ভালো করে চিনে,তাই তৌফিক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো।

আমরা অপরেশন করে,দু'টো গুলি বের করেছি।কিন্তু আরো একটি গুলি এখনো রায়হানের শরীরের ভেতরে রয়েছে।সেটা বের করা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না।আর এইগুলিটা বের করা অত্যন্ত জরুরি,তা না হলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তখন পেশেন্ট এর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে।তাই বলছি আপনারা পেশেন্টকে ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।যতোদ্রুতো পারেন।এটার অপরেশন একমাত্র ওখানেই সম্ভব।
এখন একটু ভালো আছে পেশেন্ট ,তবুও দিন যতো যাবে পেশেন্টের অবস্থা আরো খারাপ হবে।রিস্ক আরো বাড়বে।"

---তৌফিক সাহেব সব শুনে রায়হানকে ইমার্জেন্সি ভিসায় ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলো।নিলয় রায়হানের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে ফেললো।রায়হানের সাথে সবাই একবার দেখা করতে চেয়েছে।তবে রায়হানকে দেখার অনুমতি কেবল নিশি পেলো।

"-অক্সিজেন মাস্ক লাগানো রায়হানকে দেখে নিশির বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।একবার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে।কিন্তু সব চাওয়া যে পূর্ণ হয়না মানুষের। তাই আজ নিশিরও হবেনা।তবুও নিশি রায়হানের হাতটি আলতো ধরেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো।

কি থেকে কি হয়ে গেলো।এমনতো হবার কথা ছিলো না রায়হান।সবই তো ঠিক ছিলো।আজ কতোনা স্বপ্ন দেখেছি দু'জন একসাথে।কতো না বলা কথা শেয়ার করেছি দু'জন দু'জনার সাথে।।আজকের দিনটি কতোনা সুখের ছিলো আমাদের।
 নদীর পাড়ে পা ভিজিয়ে দু'জনের বৃষ্টিতে ভেজা কি আর হবে না আমাদের।চোখে চোখে কথা বলে,মনের অনুভূতি গুলো কি শেয়ার হবে না আর।আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর ইচ্ছা কি আর পূরণ হবে না আমার।বলুন না রায়হান।
আপনি তো আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছেন।কি করে থাকবো আপনাকে ছাড়া।আমি মরেই যাবো রায়হান,আমি মরেই যাবো।
অনেক কষ্ট হচ্ছে জানেন।বুকের ভেতর কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করছে।খুব অসহনীয়। আমি সইতে পারছি না।আপনি কি বুঝতে পারছেন না।আপনার নিশি ওয়েট করছে আপনার জন্য রায়হান।আপনাকে সুস্থ হতেই হবে।আমার জন্য, আমাদের জন্য।"
________

"আশিষ নিজেই নিজের হাতে ইনজেকশন পুশ করছে নেশার।
আশিষের বন্ধু সাহেদ তা দেখে অবাকের চরম পর্যায়।এসব কি আশিষ। তুই নেশা করছিস।এতোটা অধঃপতন কবে হলো ভাই তোর।"

---আশিস হাসতে লাগলো সাহেদ এর কথা শুনে।কিসব বলছিস।অধঃপতন কই।এটাকেই তো লাইফ বলে।একবার নিলে অন্য এক জগতে চলে যাবি।সেখান থেকে আর ফিরে আসতে মন চাইবে না।সব কিছুই সুন্দর লাগবে।মন থেকে সব কষ্ট,দুঃখ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।জীবনকে অন্যভাবে উপভোগ করতে পাড়বি।নে একটা।সাহেদ এর দিকে একটা ইনজেকশন এগিয়ে দিয়ে।

'নারে ভাই,আমার এসব লাগবে না।আমিও জীবনকে উপভোগ করতে চাই তবে এভাবে না।মানুষের মতো মানুষ হয়ে।অমানুষ তো সবাই হতে পারে,কিন্তু সত্যিকারের মানুষ কতোজন হতে পারে বল।তার জন্য লাগে অসীম ধৈর্য,সহনশীলতা, দায়িত্ববোধ।'

---কিসব বলছিস।এসব আজকাল কার মধ্যে আছে।

"তাইতো সমাজটা দিনদিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।আর একে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তোর মতো কিছু যুবসমাজ।"

---মানে!

"মানে হলো,এই যে তুই নেশা করে সমাজ, দেশের নাম উজ্জ্বল করছিস।এটাই তো মানে।

'-আমি করলে আমার বাপের টাকায় করছি,তাহলে অন্য কারো কি সমস্যা হতে পারে।

---হুম, ঠিক বলছিস।কিন্তু এই টাকাটি কি তুই নেশার কাজে ব্যয় না করে,অন্য কাজে তো ব্যয় করতে পাড়তি।একজন গরীব মানুষকে সাহায্য করতে পাড়তি।একজন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পাড়তি।

"বাদ দে তো সাহেদ,আমার আর কোনও ইচ্ছা নেই ভালো হওয়ার।"

---একটা মেয়ের জন্য এভাবে নিজের জীবনটা শেষ করে দিবি।আর বন্ধু হয়ে তুই চাস আমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।

'তুই বুঝবি না,সাহেদ।ভালোবাসার নেশা হচ্ছে পৃথিবীতে সব থেকে কড়া নেশা।ওই নেশার কাছে বাকি সব নেশাই যেনো ফিকে হয়ে যায়।আমি কুহুর নেশার থেকে মুক্তি চাই কিন্তু পারছি না।তাইতো এক নেশাকে ভুলতে আরেক নেশাকে হাতিয়ার করেছি আমি।'

---সাহেদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।আর ওর কিছুই করার নেই।বন্ধু হয়ে বন্ধুকে সুপথে আনা দায়িত্ব ওর।আর সাহেদ তা খুব চেষ্টা করেছে।কিন্তু প্রত্যেকবার ব্যর্থতা পেতে হচ্ছে।
এই তোর হাত কাটছে কিভাবে।

"আশিষ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে,এক্সিডেন্ট করেছি।"

---কিভাবে?

"বাদ দে তো।"

'চুপ থাক।দেখিছিস কতো রক্ত পরেছে।তোর শার্ট টাও ভরে গিয়েছে।উঠ আমি ড্রেসিং করেদি জলদি।'

__________

"তিনদিন কেটে গেলো।এই তিনদিনে তিশা কারো সাথেই আর কোনও কথা বললো না।সারাদিন কাঁদতো।ভাইকেও একটি বার দেখতে পারেনি।কতোবার হাসপাতালে যেতে চেয়েছে কিন্তু নিলয় মানা করে দিয়েছে।কারণ ওখানে তিশাকে কেউ সহ্য করতে পারে না।তাই জিসানের নিশেধ তিশাকে হাসপাতালে জাতে যেতে না দেওয়া হয়।"

'-তিশা বাবাকে কয়েকবার ফোন করে ভাইয়ের কথা জিঙ্গেস করতে চেয়েছিলো,কিন্তু তিশার বাবা তিশার কন্ঠ শুনেই ফোনটা কেটে দিলো।এসব আর নিতে পারছে না তিশা।দিন দিন মনে হয় আবার ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।ঝর্না অনেক চেষ্টা করছে তিশাকে এসব থেকে বের করতে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।অনেকবার জানারও চেষ্টা করেছে সমস্যা কি?কেনো ও এমন করেছে কিন্তু তিশা কিছুই বলতে নারায। "

---একটু আগে রায়হানকে নিয়ে তার পরিবার ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।নিলয় নিজে তাদের এয়ার্পোটে ড্রপ করে দিয়ে সবেমাত্র বাসায় আসলো।শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।আজ অনেক ধবল গেছে ওর উপর।জিসান নেই, সোম নেই। রায়হান তো থেকেও নেই তাই সব কিছু একা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে নিলয়।শোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিলো।হঠাৎ মাথায় কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো।
নিলয় চোখ খুললো না কারণ এই তিনদিনে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এই ছোঁয়ার এখন।

"প্রতিদিন নিলয় এসে শোফায় বসলেই ঝর্ণা এসে মাথাটা টিপে দেয়।কিছুটা মালিশও করে দেয়।সত্যি বলতে নিলয়ের খুব ভালো লাগে ঝর্ণার এই ছোটছোট ভালোবাসা গুলো।নিলয়ের চোখে ঘুম এসে পড়ে।কিন্তু নিলয় জানে ঝর্ণা ওকে না খাইয়ে ঘুমাতেও দিবে না।আর তাই হলো।মেয়েটি এমনি,কিছুদিনের মধ্যেই যেনো আমার সব কিছু দখল করে ফেলেছে।"

-এই উঠুন, না খেয়ে ঘুমানো যাবেনা।একটা শাওয়ার নিয়ে আসুন দেখবেন আরো ভালো লাগবে।"

----নিলয় একটা মুচকি হেসে মাথা থেকে ঝর্ণার একটা হাত টান দিয়ে সামনে এনে চুমো দিলো।
মুহুর্তে ঝর্ণার শরীরে যেনো ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেলো।কেমন এক ভয়ংকর অনুভূতি ফিল করছে ঝর্ণা।জীবনে এই প্রথম কোনও পুরুষের স্পর্শ ঝর্ণা এতো কাছ থেকে পেয়েছে।তাইতো নিলয়ের প্রতিটি ছোঁয়ায় ঝর্ণার হার্ডটা কেমন দ্রুতোগতিতে চলে।কম্পন সৃষ্টি হয় পুরো শরীরে।এ কেমন অনুভূতি!তবে এই অনুভূতির সাগরে যে ঝর্ণা একবার হলেও ডুব দিতে চায়।

"তুমি খুব ভালো ঝর্ণা জানো।আমি তোমার মতো মেয়ে খুব কম দেখেছি। তুমি খুব সহযে সব কিছু মেনে নেও।কোনও অভিযোগও করোনা।কারো প্রতি কোনো রাগও রাখো না মনে।আমাকেও আজকাল খুব ভালো করে বুঝতে শিখে গেছো।সব কিছু এতো ভালো হলে আমি কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ে যাবো।ঝর্নার হাতটা ধরেই কথাগুলো বললো।"

---ঝর্ণা হাতটা নিলয়ের থেকে ছুটিয়ে তার মানে এখনো পরেন নি আপনি।

'-নিলয় আচানক ঝর্ণার দু'হাত ধরে একসাথে টান দিলে ঝর্ণা ঢলে পড়ে নিলয়ের মুখের উপর।এতে করে দু'জনের নাকের সাথে নাক বারি খায়।এতোটা কাছাকাছি কখনো দুজন দুজনার আসা হয়নি।ঝর্ণার হার্ডটা মনে হয় ট্রেনের গতিতে ছুটছে।পায়ের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে,মনে হয় কিছুকক্ষন পর নির্ঘাত ঢলে পড়ে যাবে।
ঝর্ণা নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিলয়ের কাছ থেকে হাতদুটো ছুটানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সব বৃথা।বরং নিলয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেনো ঝর্ণাকে আরো ঘায়েল করছে।নিশ্বাসে নিশ্বাস যেনো আজ মিশে যাচ্ছে।'

---নিলয়ও যেনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঝর্ণাকে আজ দেখছে।লজ্জায় লাল হওয়া ঝর্ণাকে দেখে আরো একটু গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে নিলয়ের।কিছু সীমা অতিক্রম করার জন্য মনটা কেমন চাতক পাখির মতো ছটফট করছে।এ কেমন অনুভূতি!আগেতো কখনো এমন অস্থিরতা আসেনি কাউকে একবার ছোঁয়ার জন্য।নিলয়ের দৃষ্টির গভীরতা যেনো আরো বেড়ে যাচ্ছে।এবার ঝর্ণা একটু ভয় পাচ্ছে নিজেদেরকে নিয়ে।সীমালঙ্ঘন এর ভয়।'

"নিলয় খুব ভালো করেই ঝর্ণার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে।তাই ঝর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,ভয় পেও না।আমি আমার সীমা জানি।বিদেশি মাটিতে বড় হলেও আমার কালচার আর ধর্ম কিছুই ভুলিনি।তাই আমি এমন কিছুই করবো না যাতে তুমি হার্ট হও।
নিলয় এসব বলেই চলে গেলো নিজের রুমে ফ্রেস হতে।"

---ঝর্ণা নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই ভাবছে,সবইতো বললেন,কিন্তু যা জানতে চাইলাম তা বাধে।
.
.
.
চলবে….................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp