প্রহেলিকা - পর্ব ১০ - আশফি শেহরীন চিত্রা - ধারাবাহিক গল্প


ইনশিতা পরীক্ষার প্রস্তুতি ধুমসে নিচ্ছে। তার মধ্যে প্রতিটাদিন যে জেহের কতবার খোঁজ নেয় তার ইয়ত্তা নেই। একসময় তো ইনশিতা বিরক্ত হয়ে ফোনটাই সুইচ অফ করে দিয়েছিল। তার কিছুক্ষণ বাদে দেখা গেছে জেহের বাসায় হাজির। এলোমেলো চুল, শার্টের হাতা একটা গুটানো, বোতাম খোলা, একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থায়। জেহের এসেই ইনশিতার গাল চেপে ধরে বলে, ‘তোমাকে বলেছিলাম না আমি ফোন করলে এক সেকেন্ডও যাতে দেরি না হয়, তাহলে কেন সুইচ অফ করলে? কোন সাহসে? আমার কেমন লাগছিল তুমি জানো? তোমার ফোন বন্ধ দেখে আমার-আমার পাগল পাগল লাগছিল। মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল তুমি হারিয়ে গেছ। আর কখনো এমন করবে না রোজ। কখনোই না, তাহলে বিয়ে ছাড়াই তুলে নিয়ে যাবো।’ জেহেরের এমন হুমকি ধামকিতে মাঝেমধ্যে ইনশিতা মিটমিটিয়ে হাসে। এই পাগলটাকে নিয়ে যে সে কোথায় যাবে! ইনশিতার খুব ভালো লাগে যখন জেহের তাকে রোজ বলে ডাকে। তবে ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে ইনশিতা। 

এই বিয়ে হওয়ায় তার বাবাকে এই প্রথম অনেক হাসিখুশি দেখল সে। তার বাবা হঠাৎ হঠাৎ রুমে এসে ইনশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে ধরা গলায় বলেন, ‘আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে। সেই ছোট্ট মেয়েটার কয়েকদিন বাদে বিয়ে। দেখিস, তুই ওই বাড়িতে সুখে থাকবি। জানিস, জেহের ছেলেটা এত ভালো! আমার ব্যবসার সবকিছু সে নিজে বহন করে। দোকানে লোক রেখেছে যাতে আমার কোনো কষ্ট না হয়, আর সব খরচ জেহের সামলিয়ে নেয়। তোর মাকে কত নতুন নতুন শাড়ী গহনা কিনে দিয়েছে। আমি তো বিয়ের এত বছর পরও কিছুই দিতে পারিনি তোর মাকে। তোর মা তো খুশিতে কেঁদে দিয়েছে। আর বলেছে, আমার মেয়েটা শেষ পর্যন্ত সুখের দেখা পেল। এবার তোর কোনো কষ্ট হবে না রে মা। বিকেলে টিউশনি করে দোকানের হিসাব নিয়েও তোর বসতে হবে না। এখন আর সবসময় ডাল ভাত খেতে হবে না। আর বিয়ের খরচ নিয়ে যে আমার কত চিন্তা ছিল। জেহের বলে, 'শশুরমশাই, আপনি চিন্তা নেবেন না। শুধু মেয়ের বিয়েতে আনন্দ করুন। আমি তো আপনার ছেলের মতোই।' তুই খুব ভাগ্য করে এমন একটা ছেলে পেয়েছিস ইতু। দেখবি, জেহের তোকে খুব সুখে রাখবে।’এসব বলে ইনশিতার বাবা দ্রুত রুম থেকে চলে যান, তিনি মেয়ের সামনে কেঁদে দুর্বল হতে চান না। 

ইনশিতা আড়ালে কাঁদে। বাবা মায়ের খুশিতে তারও যে সুখের কান্না পায়। সে ভেবেছে, এই বিয়েতে যেহেতু তার বাবা মা এত খুশি সেহেতু সে জেহেরকেই বিয়ে করবে। আর এমনিতেও জেহের যখন সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে তাহলে তার পরিবারের সকল কষ্ট দুর হবে। যেটা এতকাল ইনশিতা নিজে করতে চাইছিলো সেটা যখন জেহেরই করে দিচ্ছে তাতে সমস্যাই বা কী! সে নিজেও জেহেরকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে। জেহেরের কথা মতো চললে তো জেহের আর এমন পাগলামী করবে না। ইনশিতা কাছে থাকলে জেহেরের পাগলামী বন্ধ হবে এটা ইনশিতার ধারণা। এছাড়া তো জেহেরকে নিয়ে আর কোনো সমস্যাই নেই। তবে হুটহাট করে কিছু আজগুবি চিন্তা তার মাথায় কড়া নাড়ে। যেমন, জেহেরকে কী সে ভালোবাসতে পারবে? জেহেরের অসুস্থ ভালোবাসার কারণে তো তাকে বন্দিনী হয়ে থাকতে হবে আজীবন। তাহলে জেহেরকে কীভাবে ভালোবাসবে সে? এই ধরনের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেলেও ইনশিতা সেগুলো আড়ালে রেখে দেয়। তার বাবা মা এই বিয়েতে খুশি মানে সেও খুশি। এরচেয়ে বেশি আর কি চাই! 

ইনশিতা যখন কলেজ যায় তখন তার মনে হয় তার উপর কেউ নজর রাখছে। আশেপাশে তাকিয়েও বুঝতে পারল না। তবে রাস্তায় একেক সাইডে বেশ কয়েকজন মহিলা দেখতে পায়। দারোগাদের মতো দেখতে। দেখলে মনে হয়, তারা গার্ডসদের মতো ট্রেইনিং প্রাপ্ত। একদিন সে ফুচকার দোকানে ফুচকা খেতে গিয়েছিল আর তখন সেই মহিলাদের একজন তড়িঘড়ি করে এসে বলে,

-“ম্যাম, আপনি এখানে দাঁড়াতে পারবেন না। আপনাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।”

ইনশিতা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“কেন? কে আপনি? আমি এখানে দাঁড়াবো কী দাঁড়াবো না সেটা আপনি বলার কে?”

-“প্লিজ ম্যাম, আপনি এক্ষুনি বাসায় চলে যান। প্লিজ।” 

মহিলাটিকে দেখে মনে হলো সে ভয় পেয়ে আছে। কপলে বিন্দু বিন্দু ঘাম, চোখেমুখে আতঙ্ক। ইনশিতার এবার সন্দেহ হলো। চেপে ধরল তাকে, 

-“আপনাকে কে পাঠিয়েছে? বলুন।” 

- ...

-“আপনি না বললে আমি এখান থেকে এক পাও নড়ব না।” 

-“আ-আসলে ম্যাম, আমাদের স-স্যার বলেছেন আপনার উপর নজর রাখতে। আপনি কোথায় যান কী করেন। আর বলেছে আপনি যাতে কলেজ থেকে সোজা বাসায় চলে যান কোথাও না দাঁড়িয়ে, সেই খেয়াল রাখতে। নাহলে স্যার আমাদের চাকরি থেকে বের করে দেবে।”

-“কোন স্যার? নাম কী আপনাদের স্যারের?” 

-“জেহের চৌধুরী।”

ইনশিতা চমকে উঠল। তার মানে এতদিন জেহের এদের মাধ্যমেই তার খোঁজ নেয়! ইনশিতা সেদিন ভেবেছিল জেহেরকে কথা শুনিয়ে দেবে। তার উপর এত নজরদারি কেন? যত্তসব! কিন্তু জেহেরকে বলার পর জেহের এত জোরে ধমকানি দিলো যে তার মনে হলো তার অন্তরাত্মা বেরিয়ে গেছে। আর জেহের লেডি বডিগার্ড ইচ্ছে করেই রেখেছিল। সে চায়নি কোনো পুরুষ বডিগার্ড সবসময় ইনশিতাকে দেখুক। 

জিহাদ ব্যস্ত সময় পার করছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই ভেবে যে ইনশিতা কীভাবে থাকবে তার সাইকো ভাইয়ের কাছে? সেদিন ইনশিতার বাবাকে জিহাদই নিয়ে এসেছিল বাড়িতে। আর ইনশিতার বাবাকে অনেক বুঝিয়েছেও জেহেরের হাত থেকে ইনশিতাকে ছাড়াতে। কিন্তু কী হলো শেষে? উল্টো বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। সে কোনোভাবেই চায় না এভাবে চোখের সামনে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হওয়া দেখতে। 

ইনশিতার পরীক্ষার প্রতিটা দিনেই জেহের দিয়ে আসে আর নিয়ে আসে। জেহেরের সাথে সে যতক্ষণ থাকে তখন মনে হয় তাকে তীক্ষ্ণ নজরে কেউ দেখছে। কিন্তু জেহের থাকাকালীন সময়ে তো লেডিগার্ডরা থাকেনা। তাহলে এমন কেন লাগে তার কাছে? 

ইনশিতার বাবা মিজান হোসেন কয়েকদিন যাবত খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ তিনি ইনশিতার বিয়ে প্রথমেই ঠিক করে রেখেছিলেন রাফিদের সাথে। এই কথাটা সম্পর্কে শুধুমাত্র তিনি, তার স্ত্রী আর রাফিদের বাবা মা-ই অবগত। কিন্তু সেদিন জেহেরের সাথে ইনশিতার বিয়ে নিয়ে এতটাই বেখেয়ালী ছিলেন যে রাফিদের বিষয়টা মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। হুট করেই আজকে তার মাথায় আসলো কথাটা। রাফিদ ছেলে হিসেবে খারাপ না। তার বাবা মাকে কথাও দিয়ে ফেলেছেন। এদিকে জেহের বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিচ্ছে। এখন কীভাবে তিনি রাফিদের বাবা মায়ের সামনে দাঁড়াবেন? কী মুখ নিয়ে দাঁড়াবেন? এতসব চিন্তায় তিনি ঘুমোতে পারেন না। ইনশিতার মা বলল, 

-“তুমি একবার গিয়ে কথা বলে নাও রাফিদের বাবা মায়ের সাথে। দেখো, কোনো সমাধান হয় কি না।”

-“আমি এখন কী মুখ নিয়ে যাব তাদের সামনে? মেয়ের আনন্দে এতটাই বিভোর ছিলাম যে, রাফিদের কথাটা একদম ভুলেই গিয়েছি।”

-“একবার যাও না গো। না গিয়েই সমাধান করবেই বা কীভাবে?”

.
ইনশিতার বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে রাফিদের বাবা মায়ের সামনে। 

-“কী হয়েছে মিজান? তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?” 

ইনশিতার বাবা হঠাৎ রাফিদের বাবার হাত ধরে ফেললেন। ধরা গলায় বললেন, 
-“আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই, আমি কথার খেলাপ করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দে...”

-“কী হয়েছে সেটা তো বলবি?”

তারপর ইনশিতার বাবা জেহের সাথে বিয়ের কথা সব খুলে বলল। সব শুনে রাফিদের মা রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলেন। তার অনেক ইচ্ছা ছিল ইনশিতাকে নিজের ঘরের বৌ করবেন। মেয়েটাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। রাফিদের বাবা কিছু বললেন না, তিনি নিজেও এই কথা শুনে বিস্মিত। তবে সম্পর্ক খারাপ করতে চান না। তাই তিনি মিজানকে বললেন, 

-“এখন যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। তুই এসব নিয়ে চিন্তা না করে বরং মেয়ের বিয়েতে খুশি থাক। তবে রাফিদের কানে ওর আর ইনশিতার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথাটা তুলবি না।” 

.

.

বিয়ের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। রাতে ইনশিতার বাবা ঘরে ঢুকেই ধাম করে সোফায় বসে পড়লেন। ইনশিতার মা দৌড়ে এলেন, 
-“কী হয়েছে? কী গো? শরীর খারাপ করল নাকি?”

ইনশিতা মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে নিচে এলো। বাবার এই অবস্থা দেখেই আঁতকে উঠল সে। ফ্যান বাড়িয়ে দিলো। পানি এনে বাবাকে খাওয়াল। ইনশিতার বাবা উঠে বসে মৃদু আওয়াজে বলল, 

-“কিচ্ছু হয়নি আমার। গরমে মাথাটা ঘুরে উঠল শুধু। চিন্তিত হবার কিছুই নেই।”

ইনশিতার মা আর ইনশিতা কোনো কথা না শুনে ধরাধরি করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। রাতে ইনশিতা তার বাবার রুমে গিয়ে দেখল তার বাবা ইজি চেয়ারে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে। সে বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসল। 

-“বাবা!”

ইনশিতার বাবা চকিতে তাকালেন। 
-“কি রে ইতু! তুই এখনো ঘুমোসনি?” 

-“বাবা, আমি জানি তুমি কিছু একটা নিয়ে অনেক টেনশনে আছ। তোমার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর সেই কারণে তোমার আজ শরীর খারাপ করল। কী কারণে এত টেনশনে আছ তুমি? কী নিয়ে এত চিন্তা করছো? আমাকে বলো না বাবা।”

ইনশিতার বাবা একবার বিরস মুখে তাকালেন। অবসাদগ্রস্ত সুরে বললেন, 
-“আজ জেহেরের সাথে একটা জরুরী বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম।”

-“কী এমন জরুরী কথা?”

-“বিয়ে নিয়ে?”

-“বাবা, তুমি প্লিজ আমাকে সবটা পরিস্কার করে বলো।”

ইনশিতার বাবা চিন্তিত বদনে একবার বাহিরে তাকালেন। সেখানে দৃষ্টি রেখেই শুরু থেকে বলতে লাগলেন, 

-“আমি একটু আগে জেহেরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। হোটেলে বসেছিলাম আমরা। জেহেরকে আমি তখন জরুরী একটা কথা বলার জন্যই ডেকেছিলাম। বলেছিলাম, তোর সাথে এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে।”

-“কিহ! জেহের কী বলেছিল? আর তুমি তো এই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলে।”

-“সেই খুশির থেকেও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারো কাছে কথা রাখার দায়বদ্ধতা।”

-“কি কথা?”

-“বলছি। জেহেরকে যখন বলেছি এই বিয়েটা ভাঙতে তখন জেহের কী রাগটাই না দেখাল। এই প্রথম ওকে এতটা রেগে যেতে দেখলাম। হোটেলের সব চেয়ার টেবিল ভাঙতে শুরু করল। আর খালি কি যেন বিড়বিড় করছিল। হোটেলের ম্যানেজার ওকে থামাতে এলে গ্লাস ছুঁড়ে মারে জেহের। আমার কলার টেনে ধরে বলে, ‘আমার থেকে আমার রোজকে দূরে সরার চিন্তা মাথাতেও আনবেন না। নাহলে আপনাকে আমার রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতেও সময় লাগবে না।’এটা বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আর এটা নিয়েই আমি এত টেনশনে ছিলাম, যে এই ছেলেটাকে তো তখন আমি অনেক শান্ত দেখেছিলাম, তাহলে এখন এত রেগে গেল কেন! আর ভাবছি, ওর সাথে কী সত্যিই তুই সুখে থাকতে পারবি? আমরা কী তোকে ওর হাতে তুলে দিয়ে অনেক বড় ভুল করবো?” 

ইনশিতা অবাক হয়ে এতক্ষণ কথাগুলো শ্রবণ করছিল। শেষ পর্যন্ত তার বাবাও জেহেরের আসল রূপ দেখে ফেলেছে তাহলে! তবে এটা ভেবে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল যে, জেহের তার বাবাকে মারার হুমকি দিয়েছে। 

-“আচ্ছা বাবা! তুমি বিয়েটা ভাঙতে চাইলে কেন?” 

-“তোর সাথে অন্য একজনের বিয়ে ঠিক করেছিলাম অনেক আগে। জেহেরের সাথে বিয়ের কথা শুনে তখন সেই বিষয়টা মাথা থেকেই চলে গিয়েছিল। হঠাৎই মাথায় আসলো ব্যাপারটা। তাই ভেবেছিলাম, জেহেরের সাথে বিয়েটা ভেঙে ঠিক করা মানুষটার সাথেই বিয়ে দেব। যতই হোক, আমি কথা দিয়েছিলাম তো, কথা না রাখতে পেরে নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হয়।” 

-“কে সে?”

ইনশিতার বাবা উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল, 
-“এখন আমি কী করব রে ইতু মা? জেহেরের সাথে বিয়ে দিলে তো তোকে জেনেশুনে সিংহের গুহায় ঠেলে দেওয়া।”

-“চাইলেও কিছু করার নেই বাবা। এখন বিয়ে না করতে চাইলে উনি কোনো না কোনো অঘটন নিশ্চিত ঘটাবেন। আর কোনো অঘটন হোক সেটা আমি চাই না।”

ইনশিতা উঠে রুমে চলে গেল। রাগে তার শরীর রি রি করছে। গিয়েই ধুপ করে বিছানায় বসে পড়ল। আজ এ কারণেই জেহের কোনো খোঁজ নেয়নি তাহলে! নাহলে তো মিনিটে মিনিটে খোঁজ না নিলে তার চলেইই না। ইনশিতা কল করল জেহেরের নাম্বারে। অনেকবার কল হওয়ার পরও জেহের রিসিভ করল না। ইনশিতা মনে মনে রেগে বলল, এই শেষবার। আর কল করব না তোকে, উজবুক কোথাকার। শেষবার কল করতেই ওপাশ থেকে জেবার কন্ঠ শোনা গেল। 

-“হ্যালো। ইনশিতা!”

জেবার কন্ঠস্বর ভয় মিশ্রিত। জেহের তো কখনো তার মোবাইল অন্য কাউকেই দেয় না, তাহলে জেবা ফোন ধরল কেন? আর এতটাই বা ভয় পেয়ে আছে কেন? এতকিছু না ভেবে ইনশিতা বলল, 

-“তোমার ভাই কোথায়? ওনাকে দেও।” 

জেবা নিচু কন্ঠে বলে, 
-“ইনশিতা, ভাইয়ের যেন কী হয়েছে। সন্ধ্যায় বাসায় আসার পর থেকেই রুমের সবকিছু তছনছ করা শুরু করেছে। আর বারবার বলছে, ‘যে আমার আর রোজের মাঝে আসবে তাকে আমি মেরে ফেলব। ছাড়বো না ওনাকে, একদম মেরেই ফেলব।’আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ইনশিতা। হঠাৎ কী হলো ভাইয়ের! মোবাইল অনেক্ষণ ধরে বাজছিল, তাই আমি তুললাম।”

ইনশিতা তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলো। এখন জেহেরের সাথে কথা বলা মোটেই সুবিধার না। তারচেয়ে বরং জেহের শান্ত হলে কাল দেখে নেওয়া যাবে। মোবাইলটা বেড সাইডের টেবিলের উপর রেখে খাটে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল সে। দু’হাতে কপাল চেপে বলল, 

-“আমার কপালেই এত ঝামেলা লেখা থাকে কেন? এই ঝামেলার শেষ কবে হবে? উফ! ভাল্লাগেনা।”
.
.
.
চলবে.............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন