-- পেপার লেখা কম্পলিট হয়েছে?
-- প্রায় শেষ।
-- আগামী সপ্তাহে একটা কম্পিটিশন আছে,বাইরে থেকে বেশ কজন প্রমিনেন্ট স্কলাররা আসবে,আমি চাই তুমি সেটাতে পার্টিসিপেট করো।
-- ফাইনাল তো আগামী সপ্তাহে...
-- পারবে না?
-- তুমি বলেছো আর আমি পারবো না?
-- দ্যাটস মাই গার্ল!
প্রফেসর রুদমিলা কম্পিটিশনের সব ডিটেইলস ভিনাকে বুঝিয়ে দিলেন ভালোমতো।হ্যাঁ,ভিনা তাকে তুমি বলেই সম্বোধন করে।গত মাসে তার আটচল্লিশ তম জন্মদিনে হুট করেই ভিনা হাতে বানানো কেক,কার্ড এবং খুব সুন্দর কাঠের খোদাই করা গয়না উপহার দিয়েছে।ভিনা খেয়াল করেছিলো,রুদমিলার এ ধরনের গয়নার প্রতি দূর্বলতা আছে।প্রফেসর রুদমিলার বিস্ময়ের সব সীমা ছাড়িয়েছিলো সেদিন,কারণ তার জন্মদিন কারো জানার কথা না।ভার্সিটি শেষ করে বিকেলের দিকে ভিনা এগুলো নিয়ে আসে,যেন রুদমিলা কাজে ব্যস্ত না থাকেন এবং কেউ যেন বিরক্ত না করে।
-- এসব কী মেয়ে?তুমি জানলে কীভাবে আজকে আমার জন্মদিন?
-- একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন আপনার এবং সুহৃদা আপুর জন্মদিন চারদিন আগে পরে।যেবছর সুহৃদা আপু জন্মেছিলো,সেবছর আপনার শ্রেষ্ঠ জন্মদিন ছিলো।এরপর আমি আপুর সোশ্যাল একাউন্ট স্টক করে তার জন্মদিন বের করেছিলাম।সেখান থেকে আপনার টাও জেনেছি।
-- এতকিছু!
-- তেমন কিছুই না।হাতে বানিয়ে কেক এনেছি,বাইরের কেকে বেশি খরচ করিনি।আর সামান্য গয়না।সুহৃদা আপুর গিফটের কাছে এসব কিছুই না।চেয়েছিলাম আপনার বাসায় গিয়ে চমকে দিবো,কিন্তু আমি ঠিকানা জানি না।
-- সুহৃদা আমাকে উইশ করেনি ভিনা।
ভিনা আশ্চর্য হলো,কিন্তু মুখাভঙ্গিতে প্রকাশ করলো না।চট করে বিষয় বদলে ফেললো,কোনো অজুহাত দিলো না সুহৃদাকে জাস্টিফাই করতে।কারণ প্রফেসর রুদমিলা যে ভেজা কন্ঠে এই কথাটা বলেছেন,সেটায় স্পষ্ট যে তার মেয়ে শুধু আজকের জন্মদিন না,কোনোদিনেই মাকে মনে করে না।এখন এ বিষয়ে কথা বলা মানেই,মনের ক্ষত আরো গভীর করা।
-- কেক খেয়ে দেখুন তো কেমন হয়েছে।বলেছিলাম না প্রিতি আপুর কথা?এত ভালো বেকিং পারে!তার কাছেই শিখেছি।
রুদমিলা সেদিকে খেয়াল করলেন না।আনমনে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালেন।জীবনের কত বসন্ত একা পার করেছেন শেষ সময়ে সন্তানের সাথে থাকবেন তাই,হিসাবে তো ভুল ছিলো না কোনো।মেয়েকে মানবিক শিক্ষা দিয়েই তো বড় করেছিলেন।তাহলে হিসাব কেন মিললো না?
-- আসুন না...
-- এখানে না।চলো,আমার বাসায় যাবে আজকে।
ভিনার চেহারা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠলো। জলদি প্রিতিকে ফোন দিয়ে জানালো আজকে দেরি হবে আসতে।প্রিতি চিন্তায় পরে গেলো।প্রশ্ন করতে গিয়েও আটকে গেলো গলার কাছে,মানা করতে পারলো না।ভিনা যদি ভুল বুঝে?কিন্তু এভাবে একজনের বাসায় যাওয়া কতটা নিরাপদ?কথা শেষ করে প্রিতি মেসেজ দিলো-'লোকেশন শেয়ার করে রাখিস'।
বনানীতে একটা মাঝারি আকারের ছিমছাম ফ্ল্যাটে রুদমিলা থাকেন।ঘরে ঢুকেই তিনি বারান্দার কাচের স্লাইড ডোর খুলে দিলেন,দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট হওয়ায় হুহু করে বাতাস আসতে লাগলো।ছোট হলেও বারান্দা ভর্তি নানারকম শৌখিন ফুল গাছ,ক্যাকটাস ও আছে অনেক গুলো।ভিনা খুটিয়ে খুটিয়ে সেগুলো দেখছে।প্রতিটা গাছের টবই ভীষণ সুন্দর,কোনোটার সাথে কোনোটা মিলে না।একদম কোণায় টুল রাখা আছে।নিশ্চয়ই বিষন্ন একা বিকেলগুলো রুদমিলা এখানে বসেই কাটান।
-- গাছপালা পছন্দ করো নাকি?
-- হ্যাঁ,অনেক ভালো লাগে।
-- তাহলে ড্রয়িং রুমের বড় সোফার পাশের টেবিলটা দেখো।
ভিনা বাচ্চাদের মতো দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এলো।সাইড টেবিলে বনসাই রাখা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক যত্ন নিয়ে করা।সতেজ,সবুজ এবং সত্যিকার অর্থেই পরিণত গাছের মতো দেখতে।
-- কেমন লাগলো?
-- অনেক সুন্দর!এটা কিসের বনসাই?
-- জুনিপারের।
-- কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন?
-- আমি নিজে বানিয়েছি,অনেক বছর আগে কর্মশালা করেছিলাম।
-- আপনি নিজে বানিয়েছেন!
রুদমিলা মাথা নাড়িয়ে দুই কাপ চা এবং কুকি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলেন।রাতের জন্য খাবার চড়িয়ে দিয়েছেন এর মাঝেই।
-- বনসাই আমার ব্যক্তিগত মতবাদের সাথে যায় না।প্রকৃতি বিরুদ্ধ শিল্পে যে নিজেকে জড়াবো,আমি কখনো ভাবিনি।প্রকৃত প্রকৃতি প্রেমিরা বনসাই করাকে সমর্থন করে না।
ভিনা চেয়ারে বসে চায়ের কাপ হাতে নিলো।খুব সুন্দর ঘ্রাণ আসছে।চায়ে চুমুক দিয়ে রুদমিলার কথায় মনোযোগ দিলো।
-- তাহলে?
-- সুহৃদা কলেজে ওঠার পরই অনেক খানি বদলে গিয়েছিলো।ঘরে থাকতে পছন্দ করতো না,বন্ধুদের বেশি সময় দিতো।ঘরে এসে মেহমানের মতো খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে চলে যেতো,এরপর সারারাত পড়াশোনা করতো।আমি কখনো নিজের মেয়েকে নিয়ম কানুনে বাঁধতে চাইনি।ও আমার একমাত্র সম্বল ছিলো।আমার প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করবে,এমন কিছু উচিৎ হলেও আমি করতাম না।মেয়ে আমার বড় হয়ে যেতে থাকলো,আমি আটকে রাখতে পারলাম না।
-- তখন থেকে এই বনসাই বানানো?
-- হ্যাঁ... এরপর তো বড় ই হয়ে গেলো সুহৃদা।চলে গেলো বাইরে।
ভিনা এবারো কোনো মন্তব্য করলো না এ বিষয়ে।
-- আপনার কাছে বই নিশ্চয়ই আছে?আমি বইয়ের কালেকশন দেখতে চাই।
-- আমার ঘরে আছে,এইদিকে।
ভিনা কাপ হাতেই ঘরে এলো।আলো জ্বালিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলো ঘর দেখে।বিছানা,ইজি চেয়ার, সাইড টেবিল,কেবিনেট এসবকিছু ছিমছাম।সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো ফ্লোর টু সিলিং বুক শেলফ।একদম বাছাই করা লেখকদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি দিয়ে শেলফ সাজানো।চায়ের সুঘ্রাণ এবং বইয়ের রঙিন মলাটে ভিনা হারিয়ে গেলো।
-- বই পড়লে নিতে পারো।
-- সত্যি!আপনি আমাকে দিবেন?তিনটা বই খুব পছন্দ হয়েছে।
-- কেন দিবো না?আর....আপনি করে বলো না তো।
ভিনার চোখে পানি আসলো,রুদমিলার চোখ আগে থেকেই টলমল করছিলো।যেমন মেয়ে উনি চেয়েছিলেন,ভিনা যেন সেই প্রতিরূপে এসেছে তার জীবনে।বিধাতা এত সহজে কাউকে ফেরায় না।
রাতের বেলায় মাছের কোপ্তা,মুরগি ভুনা,গরম ডাল এবং ভাত দিলেন।এত কম সময়ে এত সুস্বাদু খাবার কীভাবে বানালেন রুদমিলা,ভিনা বুঝতেই পারছে না।
-- তখন মাত্র মাছ বের করতে দেখলাম ফ্রিজ থেকে,এখন সামনে কোপ্তা!কীভাবে পারলে?
-- অভ্যাস আছে।এসবই আমার প্রিয় খাবার,প্রায়ই বানিয়ে খাই।
খাওয়া শেষে ভিনা বানিয়ে আনা কেকের উপর মোমবাতি দিয়ে সাজালো।অস্পষ্ট ভাবে ক্রিম দিয়ে লেখা 'শুভ জন্মদিন রুদমিলা ম্যাম'।কেক কাটা শেষ করে ভিনা রুদমিলার হাতে কার্ড দিলো।কার্ডে ভেতরে লেখা 'এই মা হারা মেয়ের প্রতিটি দুঃসময়ে পাশে থাকা মাতৃতূল্য মানুষের প্রতিটি জন্মদিন শুভ হোক- আপনার ভিনা'।
রুদমিলা শক্ত করে ভিনা জড়িয়ে ধরলেন।অনেকদিন পর স্নেহে খুব আপন কাউকে আলিঙ্গন করলেন।এবারের জন্মদিনে একা ছিলেন না,এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে।
ভিনা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে নয়টা বেজে গেছে,ফোন ভর্তি মিসড কল।রুদমিলার সাথে থাকার সময় যেন ফোন কলে পরিবেশ নষ্ট না হয়,তাই ভিনা সাইলেন্ট করে রেখেছিলো।ভিনা জলদিই প্রিতিকে কল ব্যাক করলো,কিন্তু প্রিতি ফোন ধরলো না।রুদমিলা ভিনাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য নিচে নেমে গাড়ি বের করতে বললেন।তখনি মেইন গেটের সামনে কোথা থেকে হুট করে প্রিতি এসে পরলো।
-- তোকে ফোন দিয়েছি ধরিস নি কেন?
-- আপু তুমি এখানে!
রুদমিলা একদম কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।প্রিতিকে ভীত অবস্থায় দেখে এগিয়ে এলেন।
-- তুমি নিশ্চয়ই প্রিতি?আমি রুদমিলা চ্যাটার্জি,ভিনার প্রফেসর।
প্রিতি রাগারাগি বন্ধ করে শান্ত হাসি দেয়ার চেষ্টা করলো।লজ্জায় পরে গেছে রুদমিলার সামনে।একটু সামলে থাকা দরকার ছিলো।
-- স্যরি ম্যাম।আসলে আমি খেয়াল করিনি...
-- ইটস এবসোলিউটলি ফাইন।আমার খুব ভালো লাগছে তোমাদের বন্ডিং দেখে।আমি এখনি ভিনাকে ওর বাসায় দিয়ে আসতাম।
-- আসলে ও ফোন ধরছিলো না তো,চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম।তাই এসে পরেছি শেয়ারড লোকেশন দেখে।
-- তোমার সিন্সিয়ারিটি দেখা মুগ্ধ হলাম।আসো না..আমার বাসায় আসো।
-- আজকে না ম্যাম,রাত হয়ে গেছে।আমার হাজবেন্ড চিন্তা করবে।
-- আমার গাড়ি আগিয়ে দেক তোমাদের?
-- না না,আমি নিয়ে এসেছি।
-- আজকে তো আসলে না,আরেকদিন কিন্তু অবশ্যই সময় নিয়ে বেড়াতে আসবো।আমার খুব ভালো লাগবে।
-- অবশ্যই! আপনিও আসবেন।
কথা শেষ করেই প্রিতি ভিনার হাত ধরে একসাথে গাড়িতে উঠলো।ভিনা যাওয়ার আগে বাচ্চাসুলভ ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো।এরপর ভেতরে যেয়েই জড়িয়ে ধরলো প্রিতিকে।
-- জানো,হুট করে মনে হচ্ছে আমার জীবনে কোনো দুঃখ নেই।কিছু মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে!
ভিনা কম্পিটিশনের ফর্ম ফিল আপ করার সময় পুরো ঘটনার স্মৃতিচারণ করলো।সব অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক খারাপ না,ঠিক একইভাবে সব কাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক সুখ দেয় না।
কাজ শেষ করে বের হতে হতে ভিনার সন্ধ্যা হয়ে গেলো।ভার্সিটি খালি হয়ে গেছে,উপরে শুধু এমবিএর ক্লাস হচ্ছে।মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে হাঁটার সময় পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো।ভিনা ভ্রু কুচকে পেছনে তাকিয়ে দেখলো-রুশান।
-- তুমি এখানে?
-- হ্যাঁ। রেজিস্ট্রেশন করতে এসেছি পরের সেমিস্টারের জন্য।
-- যাক ভালোই।
এরপর কেউই কোনো কথা বলতে পারলো না।কেমন যেন আড়ষ্টতার দেয়াল দুজনের মাঝে।একটা মাত্র সত্যি সব বদলে দিয়েছে।রুশানে ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে ভিনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।আগের রুশান হলে অবশ্যই এরকম কিছু করে ফেলতো।এখন পারবে না।আগের মতো অনুভূতি এখন আর নেই।ভিনাকে একইসাথে ভালোবাসে,আবার অসহ্য ও লাগে।প্রায়ই ছুটে যেতে ইচ্ছে করে,আবার দেখতেও ইচ্ছে করে না।ভালোবাসায় খাদ রয়েই গেলো শেষে।
ভিনা কিছু না বলে চলে যেতে থাকলো।রুশান ডাকতে পারলো না,থামাতে পারলো না।কঠিন সত্যের কাছে হেরে যেতে থাকলো কৈশরের ভালোবাসা।
••••••••••••
সোহেল নিজের শরীরের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না কোনোভাবে।বয়সের তো বটেই,কিন্তু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা উইপোকার মতো তার শরীর খেয়ে ফেলছে।এখন প্রায়ই উনার বুক ধরফর করে,অতিরিক্ত ঘাম হয়।প্রেশার কোনোভাবেই কমছে না,ঔষধ খাচ্ছেন নিয়মিত,তারপরও। মাহভিন ছোট হলেও তার চিন্তা মাহভিনকে নিয়ে না।মাহভিনের জন্ম থেকেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন থেকেছে,যেখানে জন্মই অনিশ্চিত ছিলো সেখানে সাজানো পরিবার পেয়েছে।পরবর্তী জীবনেও এরকম সৌভাগ্য থাকবে।সোহেলের চিন্তা ভিনাকে নিয়ে।ভিনার জীবনে সহজ জিনিসও জটিল হয়ে যায়,যুদ্ধ করতে হয় সামান্য ব্যাপারেও।ভিনা মাহভিন'স এর কাজ শুরু করেছিলো অনেক আগ্রহ নিয়ে,ভালো পরিচিতি ও পেয়েছিলো।হটাৎ করেই সব বন্ধ করে দিলো।তিনি সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় পরলেন যখন শুনলেন রুশান আর এ বাসায় আসবে না,বিজনেসের সাথে ইনভলভ থাকবে না।উনি অনেকবার ভেবেছেন ভিনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন,ভিনা কি সত্যি বলেছে নাকি।কিন্তু ভিনা মাহভিনকে ছুয়ে,তাকে ছুয়ে কথা দিয়েছে এ সত্য আজীবন গোপন রাখার।মরে গেলেও এ কথা বলার কথা না ভিনার।তাহলে এমন কী হলো যে ভিনা নিজে দূরে সড়ে গেলো?যেখানে উনি আশা করেছেন প্রিতির বিয়ের পর রুশান এবং ভিনার যোগাযোগ আরো বাড়বে,সেখানে বন্ধ হয়ে গেছে।কাউকে প্রশ্ন করতে পারছেন না এ বিষয়ে।প্রিতিকে জিজ্ঞেস করলে ভাবতে পারে উনি প্রিতির মাধ্যমে মেয়েকে বিদায় করার পায়তারা করছেন,ভিনাকে বললে কষ্ট পেতে পারে বিশ্বাস করা হয়নি বলে।তাহলে সোহেল যাবেন কার কাছে?কার কাছে বলবেন এসব কথা?তার আদরের মেয়ে যে চোখের সামনে নিজের জীবনের প্রাপ্য সুখগুলো বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে,কীভাবে দেখবেন এসব।শিউলির সামনে নিজের এ ব্যর্থতা নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন?তার মনে হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে প্রতারণা করছেন যেন।
মুনা চমকে গেলেন ঘরে এসে।
-- এত ঘামাচ্ছো কেন?এসি ছেড়ে দিবো?
-- না।
-- ইদানিং কী হয়েছে তোমার?খাওয়া দাওয়া করছো না ঠিকমতো। ডাক্তারের কাছে আবার যাওয়া দরকার
-- কিছু লাগবে না।
-- ভিনাকে কয়দিনের জন্য এ বাসায় নিয়ে আসো।মেয়েটা কিছুদিন থাকলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।
-- কীসব বলছো মুনা?এ বাসায় ভিনাকে আনা যাবে না কোনোভাবে।
-- ভিনা এত সহজে দূর্বল হওয়ার মেয়ে না।তুমি এত ভেবো না।
-- কখনোই না।
-- এত ভাবছো কেন?সব ঠিক হয়ে যাবে তো।
-- কিছু ঠিক হবে না।ভিনা কিছু ঠিক করতে দিবে না।
-- দেখো,বিজনেস নিয়ে কাজ তো করেছে,এখন পড়াশোনায় মন দিচ্ছে দেখে বাদ দিয়েছে সব।
-- রুশানের জন্য বাদ দিয়েছে আমি নিশ্চিত। যদি রুশান সত্যি জেনে থাকে কোনোভাবে?
-- যদি রুশান সত্যি জেনে ভিনাকে মেনে নেয় তখন?
সোহেল পরিহাসের দৃষ্টিতে তাকালেন।
-- কীসব ভাবো তুমি...এসব সম্ভব না।
-- আমার মন বলে খারাপ কিছু হবে না।
-- আমি ভিনাকে বিয়ে দিতে চাই।রুশান হলে আমি ঠিকি কয়েক বছর অপেক্ষা করতাম।কিন্তু এখন যা মনে হয় ঐ চিন্তা বাদ দিতে হবে।ভিনাকে দেখেশুনে ভালো প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।
-- প্রবাসী!নিজের মেয়েকে তুমি এতদূরে পাঠাবে?কী বলছো তুমি ভেবেছো কখনো?
-- দূরে না থাকলে ভিনা ঠিক হবে না।
সোহেল পাশ ফিরে শুয়ে পরলেন।শরীর তার একটুও ভালো যাচ্ছে না।যদি কিছু হয়ে যায়,তাহলে ভিনা এ সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিবে সব বাদ দিয়ে।ভিনার জীবন থেমে যাবে ওখানেই।ভালো জায়গায় বিয়ে করে যদি বিদেশে চলে যায় ভিনা,অতীত থেকে মুক্তি পাবে কিছুটা হলেও।সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলে,মাহভিনকে নিয়েও ভাবার সময় পাবে না।কিন্তু...মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে উনি বাঁচবেন কীভাবে?তার বাঁচার সম্বলই তো ভিনা।সোহেল মনে মনে বললেন- 'শিউলি,মেয়েটাকে দেখে রেখো'।
.
.
.
চলবে....................................................................